হিন্দু ধর্মে ৩৩ কোটি দেবতা এই কথা আমরা কে না শুনেছি?যে হিন্দু কখনো ধর্মকর্মের আশেপাশে যায়নি বা যে অহিন্দু হিন্দু শব্দটির বানান ও হয়তো ঠিকমত করতে পারবেনা তার কাছেও এই ৩৩ কোটি দেবতা আলোচনার বস্তু।লক্ষ লক্ষ নবী বা মিলিয়ন মিলিয়ন পীর-পয়গম্বর সমস্যা না হলেও দেবতার সংখ্যা কেন ৩৩ কোটি হবে তা নিয়ে এদের চিন্তার শেষ নেই।অথচ বাস্তবতা হচ্ছে বৈদিক ধর্ম ই পৃথিবীর প্রাচীনতম একেশ্বরবাদী ধর্ম এবং এখনো পর্যন্ত একমাত্র; হ্যাঁ একমাত্র নিরাকারবাদি একেশ্বরভিত্তিক ধর্ম।অনেক ধর্ম নিজেদের স্রস্টাকে নিরাকার বলে দাবী করলেও,তার কোন ছবি আঁকা নিয়ে হাস্যকর দাঙ্গাহাঙ্গামা করলেও তাদের স্রস্টা নাকি বসে থাকে সাত আসমানে আরশের উপরে,তাদের স্রস্টা তাদের অবতারদের সাথে দেখা করেন,কথা বলেন,মৃত্যুর পড় নাকি তিনি সিংহাসনে বসে সবার বিচারও করবেন।অর্থাৎ অত্যন্ত সাকার এই ধর্মসমূহের স্রস্টা।
অপরদিকে হতাশাজনক হলেও সত্যি যে হিন্দুধর্ম নিয়ে হিন্দু ও অহিন্দু উভয় অংশের ই সবচেয়ে ভ্রান্তধারনা ই হল এই ৩৩ কোটি দেবতার ধারনা,সাকার ঈশ্বরের ধারনা।৩৩ সংখ্যাটির পরে ৭ টি শুন্য,কেউ কি একবার ভেবে দেখেছেন কি বিশাল এই সংখ্যাটি!ভারতবর্ষের বিভিন্ন এলাকা,প্রদেশ ভেদে হিন্দুরা ভিন্ন ভিন্ন লৌকিক এবং পৌরাণিক দেবদেবীর পুজা করেন বটে কিন্তু সেটার সংখ্যা ৩৩ কোটি হওয়া আদৌ সম্ভব?একটু খোঁজখবর নিয়ে গুনতে বসুন তো আপনি সর্বসাকুল্যে ৩৩০০ টা ই গুনে বের করতে পারেন কিনা!
এই শতবর্ষ ধরে চলে আসা আশ্চর্য ভ্রান্তি নিয়ে আলোচনার্থে কোটি এবং দেবতা শব্দ দুটি আপনাদের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করব।
বাংলা ভাষায় কোটি শব্দটি সংখ্যাবাচক হলেও সংস্কৃত ভাষায় আসলে সবসময় তা নয়।সংস্কৃতে কোটি শব্দের অর্থ অন্ত,চরম,ধরন,অসীম কল্পনা অথবা কোন রুপক হিসেবে বেছে নেয়া।দুঃখের বিষয় হল ৩৩ কোটি দেবতা মানে ৩৩০০ মিলিয়ন দেবতা নয়,৩৩ ধরনের দেবতা যা রুপক হিসেবে নির্বাচিত তা আমাদের প্রায় কেউ ই জানিনা,যে অতি কতিপয় এ তত্ত্ব জানেন তাদের মধ্যেও অতি কতিপয় ই তা অন্যদের জানানোর চেষ্টা করেন।
অপরদিকে দেবতা শব্দের অর্থ কি তাও আমাদের সংস্কৃত ব্যাকরণ এর বিচারে আলোকপাত করতে হবে।দেবতা মানে হাত-পা ওয়ালা,তীর ধনুক সজ্জিত কোন আশীর্বাদকর্তা নন,দেবতা শব্দটি সংস্কৃত মূল দেব হতে আগত যার অর্থ উপকারী শক্তি।
দেবো দানাদ্বা দীপনাদ্বা দ্যোতনাদ্বা দ্যঃস্থানো ভবোতীতি বাঃ
(নিরুক্ত ৭.১৫)
অর্থাৎ যা দাতা,প্রদীপক,দ্যোতক ও দুঃস্থানীয় তাই দেব।ঈশ্বর প্রদীপক,দাতা তাই বেদের অনেক জায়গায় তাঁকে দেব বলে অভিহিত করা হয়েছে।আবার দুঃস্থানীয় অর্থাৎ আমাদের এই মহাজগতের যেসমস্ত পদার্থ বা শক্তি আমাদের উপকার করে সেগুলোকেও দেব বলা চলে।
যেমন ধরুন উপনিষদ বলছে আমাদের জঠরাগ্নি(পাকস্থলী, Stomach) একটি দেবতা!অবাক হয়ে ভাবছেন কেন?যখন ই আমাদের দেহে জ্বালানী তথা খাদ্যের প্রয়োজন পড়ে তখন ই পাকস্থলীর স্নায়ুজালিকা মস্তিস্কে তথ্য প্রেরণ করে এই বলে যে আমাদের খাদ্যের প্রয়োজন আর তাই আমাদের ক্ষুধা লাগে যা আমাদের খাদ্য গ্রহনে প্রবৃত্ত করে।যদি পাকস্থলী আমাদের মস্তিস্কে এই তথ্য প্রেরণ করত তাহলে আমরা খাদ্য গ্রহন করতাম না এবং খাদ্যাভাবে মৃত্যুবরণ করতাম।তাহলে বলুন,পাকস্থলী তথা জঠরাগ্নি কি উপকারী শক্তি তথা দেবতা নয়!
এরুপে মহবিশ্বে আমাদের উপকারী শক্তি তথা ঈশ্বর এর বিভূতির সংখ্যা অসীম হলেও প্রধানত এই শক্তিগুলোকে শাস্ত্রে ৩৩ টি প্রধান ভাগে ভাগ করা হয়েছে যাকে আমরা বলছি ৩৩ কোটি বা ৩৩ ধরনের দেবতা!
বঙ্কিমচন্দ্র ৩৩ কোটি দেবতা প্রসঙ্গে এজন্য বলেছিলেন-
বঙ্কিমচন্দ্র ৩৩ কোটি দেবতা প্রসঙ্গে এজন্য বলেছিলেন-
“বাঙ্গালার চাউল কলার উপর তাঁহাদের আর যে দাবি দাওয়া থাকে থাকুক, বেদ-কর্ত্তা ঋষিদিগের কাছে তাঁহারা সনদ পান নাই, ইহা নিশ্চিত। এখন দেবত্র বাজেয়াপ্ত করা যাইবে কি?
বাজেয়াপ্ত করিলে, অনেক বেচারা দেবতা মারা যায়। হিন্দুর মুখে ত শুনি, হিন্দুর দেবতা তেত্রিশ কোটি।
কিন্তু দেখি, বেদে আছে, দেবতা মোটে তেত্রিশটি!”
(দেবতত্ত্ব ও হিন্দুধর্ম,অন্যান্য রচনাবলী)
আর এই ৩৩ শব্দটি লোকমুখের,জনশ্রুতির অত্যাচারে আজ ৩৩ কোটি তে উপনীত হয়েছে!স্রেফ সাতটা শুন্যের ই তো ব্যাপার!এই উপমহাদেশের আকালে পড়ে তা যোগ হতে আর ক্লেশ ই বা কিসের!কথা বলতে পারারা সুখ্যাতি তো আমাদের জগতজোড়া!বিদ্যাসুন্দরের ভাটের কথায়-
“এক মে হাজার লাখ মেয় কহা বনায়কে।”
আমরা মুখের ক্ষমতায় এক কে হাজার বানাতে পারি,আর লাখ পেলে তো অসীমেও আমাদের ক্লান্তি নেই!
পবিত্র বেদাদি শাস্ত্র হতে আমরা এই ৩৩ কোটির গুঢ় অর্থটা একটু দেখে নেব।
যস্য ত্রয়স্ত্রিংশদ্দেবা অঙ্গে সর্বে সমাহিতাঃ।
স্কম্ভং তং ব্রুহি কতমঃ স্বিদেব স্বঃ।।
(অথর্ববেদ ১০.৭.১৩)
অনুবাদ-কার মহিমায় এই তেত্রিশ দেব সমাহিত?কে তা জানে?স্কম্ভ,সকলকে ধারনকারী পরমাত্মাতেই সেই সকল কিছু সমাহিত হয়ে আছে।
“ত্রয়স্ত্রিং শতাস্তুবত ভুতান্য শাম্যন্ প্রজাপতিঃ।
পরমেষ্ঠ্যধিপতিরাসীত্।।”
পরমেষ্ঠ্যধিপতিরাসীত্।।”
যজুর্বেদ ১৪.৩১
অনুবাদ:- যাঁহার প্রভাবে গতিশীল প্রকৃতি নিয়ন্ত্রিত হয়, প্রজার পালক, সর্বব্যপক ,অন্তরীক্ষে ব্যপ্ত, তাঁহার মহাভূতের তেত্রিশ প্রকার গুনের স্তুতি কর।
এখন কি এই তেত্রিশ ধরনের দেবতা বা দিব্য শক্তি?শতপথ ব্রাহ্মন ১৪.৫ এ যাজ্ঞবল্ক্য ঋষি শাকল্যকে বলছেন-দেব ৩৩টি যা পরমেশ্বরের মহিমার প্রকাশক।
আর সেই তেত্রিশ দেবতা হল ৮ বসু,১১রুদ্র,১২ আদিত্য,ইন্দ্র,প্রজাপতি।
মনুসংহিতা ও বৃহদারন্যক উপনিষদ এ এর বিস্তারিত বর্ননা দেয়া আছে।
বৃহদারন্যক উপনিষদ এ ঋষি যাজ্ঞবল্ক্য কে শাকল্য প্রশ্ন করছেন,
“কতি এব দেবা ইতিঃ”
অর্থাৎ দেবতা কয়টি?
যাজ্ঞবল্ক্য উত্তর দিলেন,
“ত্রয়ত্রিংশৎ ইতি”
অর্থাৎ দেবতা ৩৩ টি।
তখন শাকল্য আবার বললেন,
উত্তম,কিন্তু দেবতা কয়টি?
যাজ্ঞবল্ক্য উত্তর দিলেন-
“ষট্” অর্থাৎ ৬ টি
শাকল্য বললেন,
উত্তম,কিন্তু দেবতা কয়টি?
যাজ্ঞবল্ক্য বললেন,
“ত্রয়” অর্থাৎ ৩ টি।
শাকল্য পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন,
উত্তম,কিন্তু দেবতা কয়টি?
যাজ্ঞবল্ক্য বললেন,
“দ্বৌ” অর্থাৎ দুইটি।
আবার শাকল্য বললেন,
উত্তম,কিন্তু দেবতা কয়টি?
যাজ্ঞবল্ক্য জবাব দিলেন,
“অধ্যর্ধ” অর্থাৎ দেড়টি।“
শেষবারের মত শাকল্য প্রশ্ন করলেন,
উত্তম,কিন্তু দেবতা কয়টি?
যাজ্ঞবল্ক্য উত্তর দিলেন,
এক!
এরপর যাজ্ঞবল্ক্য ব্যখ্যা করলেন সেই তেত্রিশ দেবতা হল অষ্টবসু(৮),একাদশ(১১) রুদ্র,দ্বাদশ আদিত্য(১২),ইন্দ্র এবং প্রজাপতি।যাজ্ঞবল্ক্য আরও ব্যাখ্যা করলেন সবদেবতা সমূহের নাম-
এরপর যাজ্ঞবল্ক্য ব্যখ্যা করলেন সেই তেত্রিশ দেবতা হল অষ্টবসু(৮),একাদশ(১১) রুদ্র,দ্বাদশ আদিত্য(১২),ইন্দ্র এবং প্রজাপতি।যাজ্ঞবল্ক্য আরও ব্যাখ্যা করলেন সবদেবতা সমূহের নাম-
অষ্টবসু-
অগ্নি
পৃথিবী
বায়ু
অন্তরীক্ষ
আদিত্য
দ্যৌ(পৃথিবী,চন্দ্র,সূর্য ও নক্ষত্র ব্যাতিত মহাবিশ্বের বাকি সকল গ্রহ,গ্রহাণু ইত্যাদি)
চন্দ্র
নক্ষত্রসমূহ
পৃথিবী
বায়ু
অন্তরীক্ষ
আদিত্য
দ্যৌ(পৃথিবী,চন্দ্র,সূর্য ও নক্ষত্র ব্যাতিত মহাবিশ্বের বাকি সকল গ্রহ,গ্রহাণু ইত্যাদি)
চন্দ্র
নক্ষত্রসমূহ
এদের নাম বসু কারন মহাবিশ্বের যাবতীয় সকল কিছু এদের মধ্যেই বাস করে বা এদের মধ্যেই ধারিত হয়ে আছে।
একাদশ রুদ্র যা হল ৫ টি জ্ঞানেন্দ্রিয়,৫টি কর্মেন্দ্রিয় এবং আত্মা।এদের নাম রুদ্র কারন মানুষ মৃত্যুবরন করলে এই ইন্দ্রিয়সমূহ বিনষ্ট হয় এবং আত্মা দেহ ছেড়ে চলে যায় যা মৃত ব্যাক্তির স্বজনদের ‘রোদন’ করায় তাই এদের নাম ‘রুদ্র’।
দ্বাদশ আদিত্য হল্য বার মাস,এই মাসগুলো নির্দিষ্ট সময় পরপর চলে যায় অর্থাৎ ‘আদান’ হয় তাই এদের নাম ‘আদিত্য’।
দ্বাদশ আদিত্য হল্য বার মাস,এই মাসগুলো নির্দিষ্ট সময় পরপর চলে যায় অর্থাৎ ‘আদান’ হয় তাই এদের নাম ‘আদিত্য’।
ইন্দ্র কি?
বজ্র হল ইন্দ্র,যা লোকসমূহের সংহার সাধন করে তাই বজ্র অর্থাৎ ঈশ্বরের যে বিভূতির কারনে প্রাণীসমূহের মৃত্যু হয় তাই ইন্দ্র।
প্রজাপতি কি?
প্রজাপতি হল যজ্ঞ।যজ্ঞ কি?যজ্ঞ হল পশব অর্থাৎ ঈশ্বরের যে মঙ্গলময় বিভূতি প্রাণীসমূহের চালনা করছে তাই যজ্ঞ তথা প্রজাপতি।
শাকল্য আবার জিজ্ঞেস করলেন তাহলে ৬টা দেব কি কি?
তখন যাজ্ঞবল্ক্য উত্তর দিলেন,
অগ্নি,পৃথিবী, বায়ু,অন্তরীক্ষ, আদিত্য,দ্যো এই ছয়।
তখন শাকল্য বললেন তাহলে ৩টি দেব কি?
তখন যাজ্ঞবল্ক্য বললেন তিনলোক(ভ্যু,দ্যু,অন্তরীক্ষ)।
তারপর শাকল্য আবার বললেন সেই দুইটি দেব কি কি?খাদ্য এবং প্রান-উত্তর দিলেন যাজ্ঞবল্ক্য।
তখন আবার শাকল্য জিজ্ঞেস করলেন সেই দেড়টি কি?তখন যাজ্ঞবল্ক্য উত্তর দিলেন যিনি বায়ুরুপে প্রবাহিত হন তিনিই সেই অধ্যর্ধ।
তখন শাকল্য বললেন,
“লোকে বলে বায়ু এক হয়েই প্রবাহিত হয়,তাহলে সে দেড় হল কি করে?”
তখন যাজ্ঞবল্ক্য বললেন কারন তিনি প্রবাহিত হন বলেই সকল কিছু বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়(অধ্যার্ধ্নোত্) তাই এর নাম অধ্যার্ধ।
কতমঃ একঃ দেবঃ
তাহলে কে সেই এক দেব?প্রশ্ন করলেন শাকল্য।
যাজ্ঞবল্ক্য উত্তর দিলেন,
“প্রান!তিনি ব্রহ্ম!হ্যঁ প্রান(পরমাত্মা) সেই এক এবং অদ্বিতীয় দেব যাকে সবাই তত্ বলে জানে!”
বৃহদারন্যক উপনিষদ ৩.৯.২-১১
অসাধারন এই শৈল্পিক ও গভীর দার্শনিক কথোপকথন ব্যখ্যা করছে সেই এক এবং অদ্বিতীয় পরব্রহ্ম থেকে সবকিছু উত্পন্ন হতে শুরু করে।মহাবিশ্বের এই সকল মঙ্গলময় অস্তিত্ব তথা শক্তিসমূহকে,যারা কিনা ঈশ্বর এর বিভূতির ই প্রকাশ সেই অগ্নি,বায়ু,আদিত্য,ভু,দ্যু এবং অন্তরীক্ষলোক,সকল গ্রহ,নক্ষত্র, সবকিছুই যার সমস্তই তাঁর থেকে সৃষ্ট,তাঁর মহিমাতেই বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয় তাদেরকে ৩৩টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে বেদাদি শাস্ত্রে এবং এদেরকে বলা হয় দেব অর্থাত্ শক্তি যাকে আমরা বলী ৩৩ কোটি দেবতা।প্রকৃতপক্ষে মূলত এই সমস্ত শক্তিই এক ও অদ্বিতীয় সেই পরমাত্মার ই বিভূতি, যার হতে সকল কিছু আপাতশক্তিপ্রাপ্ত হয়।
অসাধারন এই শৈল্পিক ও গভীর দার্শনিক কথোপকথন ব্যখ্যা করছে সেই এক এবং অদ্বিতীয় পরব্রহ্ম থেকে সবকিছু উত্পন্ন হতে শুরু করে।মহাবিশ্বের এই সকল মঙ্গলময় অস্তিত্ব তথা শক্তিসমূহকে,যারা কিনা ঈশ্বর এর বিভূতির ই প্রকাশ সেই অগ্নি,বায়ু,আদিত্য,ভু,দ্যু এবং অন্তরীক্ষলোক,সকল গ্রহ,নক্ষত্র, সবকিছুই যার সমস্তই তাঁর থেকে সৃষ্ট,তাঁর মহিমাতেই বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয় তাদেরকে ৩৩টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে বেদাদি শাস্ত্রে এবং এদেরকে বলা হয় দেব অর্থাত্ শক্তি যাকে আমরা বলী ৩৩ কোটি দেবতা।প্রকৃতপক্ষে মূলত এই সমস্ত শক্তিই এক ও অদ্বিতীয় সেই পরমাত্মার ই বিভূতি, যার হতে সকল কিছু আপাতশক্তিপ্রাপ্ত হয়।
তাহলে বেদ এ ঈশ্বর কয়টি,অন্যান্য বড় বড় ধর্মগুলো যারা নিজেদের নিরাকারবাদি হিসেবে মিথ্যা দাবী করে তাদের মত বৈদিক ঈশ্বরও কি সাকার?দেখে নিই-
ঈশ্বর এক ও অদ্বিতীয়
য এক ইৎ তমু ষ্টুহি কৃষ্টীনাং বিচর্যণিঃ
পতির্জজ্ঞে বৃষক্রতুঃ।।
পতির্জজ্ঞে বৃষক্রতুঃ।।
ঋগ্বেদ ৬.৪৫.১৬
বঙ্গানুবাদঃ- যিনি এক অদ্বিতীয়, যিনি
মনুষ্যদের সর্ব্বদ্রষ্টা, যিনি সর্ব্বশক্তিমান ও
পালক একমাত্র তাঁহাকেই উপাসনা কর।
বঙ্গানুবাদঃ- যিনি এক অদ্বিতীয়, যিনি
মনুষ্যদের সর্ব্বদ্রষ্টা, যিনি সর্ব্বশক্তিমান ও
পালক একমাত্র তাঁহাকেই উপাসনা কর।
ন দ্বিতীয়ো ন তৃতীয় শ্চতুর্থো নাপ্যুচ্যতে।
ন পঞ্চমো ন ষষ্ঠঃ সপ্তমো নাপ্যুচ্যতে।
নাষ্টমো ন নবমো দশমো নাপ্যুচ্যতে।
য এতং দেবমেক বৃতং বেদ।।
অথর্ববেদ ১৩.৪[২].১৫-১৮
বঙ্গানুবাদঃ- পরমাত্মা এক, তিনি
দ্বিতীয় নন, তৃতীয় নন,নন চতুর্থ বা পঞ্চম অথবা
বঙ্গানুবাদঃ- পরমাত্মা এক, তিনি
দ্বিতীয় নন, তৃতীয় নন,নন চতুর্থ বা পঞ্চম অথবা
ষষ্ঠ,সপ্তম, অষ্টম, নবম বা দশম।যিনি তাঁহাকে শুধু এক
ও অদ্বিতীয় বলিয়া জানেন তিনিই তাঁহাকে প্রাপ্ত হন।
ও অদ্বিতীয় বলিয়া জানেন তিনিই তাঁহাকে প্রাপ্ত হন।
তিনি নিরাকার হয়েও সর্বব্যাপী
যত্তদদ্রেশ্যমগ্রাহ্মমগোত্রমবর্
ণমচক্ষূঃশ্রোত্রং তদপাণিপাদম্। নিত্যং
বিভূং সর্বগতং সূসুক্ষ্মং তদব্যয়ং
যদ্ভুতয়োনিং পরিপশ্যন্তি ধীরাঃ।।
ণমচক্ষূঃশ্রোত্রং তদপাণিপাদম্। নিত্যং
বিভূং সর্বগতং সূসুক্ষ্মং তদব্যয়ং
যদ্ভুতয়োনিং পরিপশ্যন্তি ধীরাঃ।।
মুণ্ডক উপনিষদ ১.১.৬
অনুবাদঃ যিনি অদৃশ্য, অগ্রাহ্য, অগোত্র, অবর্ণ
এবং অচক্ষুঃ ও অশ্রোত্র, যিনি হস্তপদশূন্য,
নিত্য, বিভু, সর্বব্যাপী এবং অতিসূক্ষ্ম, সেই
অব্যয় এবং সর্বভূতের কারনকে ধীরগণ সর্বতঃ
দেখতে পান।
এবং অচক্ষুঃ ও অশ্রোত্র, যিনি হস্তপদশূন্য,
নিত্য, বিভু, সর্বব্যাপী এবং অতিসূক্ষ্ম, সেই
অব্যয় এবং সর্বভূতের কারনকে ধীরগণ সর্বতঃ
দেখতে পান।
অগ্নীর্মুর্ধা চক্ষূষী চন্দ্রসুর্যৌ দিশঃ
শ্রোত্রে বাগ্ বিবৃতাশ্চ বেদাঃ। বায়ূঃ
প্রাণো হৃদয়ং বিশ্বমস্য পদভ্যাং পৃথিবী
হ্যেষ সর্বভুতান্তরাত্মা।।
মুণ্ডক উপনিষদ ২.১.৪
শ্রোত্রে বাগ্ বিবৃতাশ্চ বেদাঃ। বায়ূঃ
প্রাণো হৃদয়ং বিশ্বমস্য পদভ্যাং পৃথিবী
হ্যেষ সর্বভুতান্তরাত্মা।।
মুণ্ডক উপনিষদ ২.১.৪
অনুবাদঃ অগ্নি তার মূর্ধাস্বরুপ, চন্দ্র-সূর্য
তার চক্ষূস্বরুপ, দিকসমুহ তার শ্রোত্রস্বরুপ,
বিবৃত বেদসকলই তার বাকস্বরুপ, বায়ু তার
প্রাণস্বরুপ, বিশ্ব তার হৃদয়স্বরুপ, তার পদ
থেকে এই পৃথিবী, তিনি সর্বভূতের
অন্তরাত্মা।
উপনিষদ আরও বলছে-
ন চক্ষুষা গৃহ্যতে নাপি বাচা নান্যৈর্দেবৈস্তপসা কর্মনা বা।
জ্ঞানপ্রসাদেন বিশুদ্ধসত্ত্বস্ততস্ত তং পশ্যতে নিষ্কলং ধ্যয়মানঃ।।
(মুন্ডকোপনিষদ ১/৩/৮)
ন চক্ষুষা-না নেত্র দ্বারা,
ন বাচা-না বানী দ্বারা,
ন অন্যৈ দেবৈ-না অন্য ইন্দ্রিয়গুলো দ্বারা,
অপি -ই,গৃহ্যতে-গৃহীত হন,তপসা-তপদ্বারা,বা-অথবা,কর্মনা-কর্মদ্বারাও,তু-কিন্তু,বিশুদ্ধসত্ত্ব,-বিশুদ্ধঅন্তঃকরনযুক্ত,
ততঃ-ওই বিশুদ্ধান্তকরনে,ধ্যয়মানঃ-ধ্যনপরায়ন হয়ে,জ্ঞানপ্রসাদেন-জ্ঞানের প্রসাদে,পশ্যতি-দেখতে পান।
অর্থাত্,ওই পরব্রহ্মকে চক্ষু বা অন্যকোন ইন্দ্রিয় দ্বারা দেখা সম্ভব নয়।কর্ম দ্বারা নয় বরং বিশুদ্ধান্তকরনে তার ধ্যন করে অবয়বরহিত(নিরাকার) ওই ব্রহ্মকে জ্ঞানপ্রসাদ দ্বারা লাভ করা যায়।
অর্থাত্ ঈশ্বর নিরাকার।তাকে দেখা সম্ভব নয়।জ্ঞানযুক্ত ধ্যন যদি বিশুদ্ধঅন্তরে করা হয় তবে তাকে পাওয়া যায়।
(মুন্ডকোপনিষদ ১/৩/৮)
ন চক্ষুষা-না নেত্র দ্বারা,
ন বাচা-না বানী দ্বারা,
ন অন্যৈ দেবৈ-না অন্য ইন্দ্রিয়গুলো দ্বারা,
অপি -ই,গৃহ্যতে-গৃহীত হন,তপসা-তপদ্বারা,বা-অথবা,কর্মনা-কর্মদ্বারাও,তু-কিন্তু,বিশুদ্ধসত্ত্ব,-বিশুদ্ধঅন্তঃকরনযুক্ত,
ততঃ-ওই বিশুদ্ধান্তকরনে,ধ্যয়মানঃ-ধ্যনপরায়ন হয়ে,জ্ঞানপ্রসাদেন-জ্ঞানের প্রসাদে,পশ্যতি-দেখতে পান।
অর্থাত্,ওই পরব্রহ্মকে চক্ষু বা অন্যকোন ইন্দ্রিয় দ্বারা দেখা সম্ভব নয়।কর্ম দ্বারা নয় বরং বিশুদ্ধান্তকরনে তার ধ্যন করে অবয়বরহিত(নিরাকার) ওই ব্রহ্মকে জ্ঞানপ্রসাদ দ্বারা লাভ করা যায়।
অর্থাত্ ঈশ্বর নিরাকার।তাকে দেখা সম্ভব নয়।জ্ঞানযুক্ত ধ্যন যদি বিশুদ্ধঅন্তরে করা হয় তবে তাকে পাওয়া যায়।
দুঃখের বিষয় হল হিন্দু ধর্মের এই মূল নিয়ম,বিশ্বাসসমূহ আমরা সাধারন হিন্দুরা জানিনা।আর ফলশ্রুতিতে অহিন্দু সুযোগসন্ধানীরা আমাদের ধর্মের নামে মিথ্যা গুজব রটিয়ে অনেক সহজসরল সনাতনীদের ধর্মান্তরিত করছে।আর পৌরাণিক ধর্মব্যাবসায়ীর দল যারা বেদের এই সকল আদি সত্য প্রচার করছে তাদের অন্য ধর্মের অনুকরনকারী বলে প্রচার করছে অথচ অন্য সব ধর্ম নিজেদের নিরাকারবাদি বললেও মূলত তারা সাকারবাদি।একমাত্র বৈদিক ধর্ম ই এক ও অনন্য নিরাকারবাদ এ বিশ্বাসী।সত্য জানুন,জানান।