ইদানীংকালে শালীনতা নিয়ে বেশ জোরেসোরে কথাবার্তা হওয়ার একটা প্রবণতা দেখা গিয়ে থাকে। আর মধ্যযুগীয় বিরানভূমির বর্বরদের কাছে শালীনতার সংজ্ঞা শুধু পোশাকেই সীমাবদ্ধ। তাও তাদের নজর শুধু নারীদের পোশাকে,তাদের চিন্তা নারীর চালচলনে।
নারী কি করবে,কোথায় যাবে,কি করবে তার সবকিছুর দায়িত্ব ই যেন এই ধর্মবোদ্ধাগন নিজেদের হাতে তুলে নিয়েছেন! আর কুলাঙ্গার পুরুষদের যেকোন অপকর্ম ঢাকা দিতে তো তাদের এই পোশাকতত্ত্বের জুড়ি নেই! কোন শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটলেই তারা তেড়ে আসবেন,শুরু করবেন ওই হতভাগ্য নারীটির পোশাক নিয়ে নোংরা আলোচনা। পুরুষটির যেন কোন দোষই ছিলনা! সব দোষ ওই পোশাকের! অনেক শিশুও তো স্বীকার হচ্ছে নরপশুদের,ওই শিশুদের ও কি পোশাকের দোষ ছিল?
নারী কি করবে,কোথায় যাবে,কি করবে তার সবকিছুর দায়িত্ব ই যেন এই ধর্মবোদ্ধাগন নিজেদের হাতে তুলে নিয়েছেন! আর কুলাঙ্গার পুরুষদের যেকোন অপকর্ম ঢাকা দিতে তো তাদের এই পোশাকতত্ত্বের জুড়ি নেই! কোন শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটলেই তারা তেড়ে আসবেন,শুরু করবেন ওই হতভাগ্য নারীটির পোশাক নিয়ে নোংরা আলোচনা। পুরুষটির যেন কোন দোষই ছিলনা! সব দোষ ওই পোশাকের! অনেক শিশুও তো স্বীকার হচ্ছে নরপশুদের,ওই শিশুদের ও কি পোশাকের দোষ ছিল?
এ ধরনের বিষাক্ত চিন্তাভাবনার আড়ালে আমরা ভুলে যাই শালীনতা আসলে শুধু পোশাকেই সীমাবদ্ধ নয়। চিন্তায়,চেতনায়,আচরনে,সর্বক্ষেত্রে বিনম্রতা বজায় রাখা ই শালীনতা। আর পোশাকের শালীনতায় কেন শুধু নারীদের প্রতি ই উপদেশ দেয়া হবে? পোশাকের শালীনতা বজায় রাখার দায়িত্ব পুরুষ ও নারী উভয়েরই।
পবিত্র বেদ মানবতার ও যৌক্তিকতার প্রতিমূর্তি। এটি কোন নির্দিষ্ট অযৌক্তিক নিয়ম কানুন,পোষাক-পরিচ্ছেদ নরকের আগুনের ভয় দেখিয়ে মানুষের উপর চাপিয়ে দেয়না।আবার মধ্যযুগীয় বর্বর আইনগুলোর মত এটি নারীদের পোষাক নিয়ে সারাক্ষন নোংরা গবেষনায় ব্যস্ত থাকেনা। পোষাকের ধরণ অঞ্চল,আবহাওয়া-জলবায়ুর তারতম্যভেদে পরিবর্তিত হওয়াই স্বাভাবিক। তারপরেও পোশাকজনিত ভদ্রতার গুরুত্ব একেবারে অস্বীকার করা যায়না। মহান বৈদিক সভ্যতায় তাই পোশাকের শালীনতার গুরুত্ব রয়েছে,তবে তা সীমা বজায় রেখেই-
অধঃ পশ্যস্ব মোপরি সন্তরাং পাদকৌ হর।
মা তে কশপ্লকৌ দৃষান্তস্ত্রী হি ব্রহ্মা বভুবিথ।।
(ঋগ্বেদ ৮.৩৩.১৯)
অনুবাদ- হে পুরুষ ও নারী,তোমাদের দৃষ্টি সবসময় হোক ভদ্র ও অবনত। তোমাদের চলন হোক সংযত,দেহ হোক পোষাকে আবৃত,নগ্নতা হোক পরিত্যজ্য।
অশ্লীল কথা না বলা,শোনা বা দেখা নিয়ে পবিত্র বেদ এর উপদেশ
ॐ भद्रं कर्णेभिः शर्णुयाम देवा भद्रं पश्येमाक्षभिर्यजत्राः |
सथिरैरङगैस्तुष्टुवांसस्तनूभिर्व्यशेमदेवहितं यदायुः ||
ওঁ ভদ্রং কর্ণেভি শৃণুয়াম দেবা ভদ্রং পশ্যেমাক্ষ ভির্যজত্রাঃ।
স্থিরৈরঙ্গৈস্তুস্টুবাংসস্তনুভির্ব্যশেম দেবহিতং যদায়ুঃ।।
ঋগ্বেদ ১.৮৯.৮
দেবাঃ- ঈশ্বর, যজত্রা- আরাধনা করি,কর্ণেভি- কান দিয়ে,ভদ্রম- ভদ্র বা শ্লীল কথাবার্তা, শৃণুয়াম- শুনি,অক্ষভিঃ- চোখ দিয়ে যেন,ভদ্রম- শ্লীল ,ভদ্র এবং মঙ্গলময় দৃশ্য, পশ্যেম- দেখি,স্থিরৈ- সুদৃঢ় (সৎকর্মসম্পাদনে), অঙ্গৈ-অঙ্গ, তনুভি- শরীর দ্বারা,তুষ্টুবাংস- ঈশ্বরের স্তুতি করতে,যৎ- যে, আয়ু- আয়ু, দেবহিতম্- আরাধ্যসেবায় লাগে, সস্তনুভির্ব্যবেশম- তাই যেন প্রাপ্ত হই।
অর্থাৎ, হে ঈশ্বর,আমরা যেন তোমার যজন করি,কান দিয়ে শ্লীল ও মঙ্গলময় কথাবার্তা শুনি,চোখ দিয়ে শ্লীল ও মঙ্গলময় দৃশ্য দেখি। তোমার আরাধনাতে যে আয়ুস্কাল ও সুদৃঢ় দেহ প্রয়োজন তা যেন আমরা প্রাপ্ত হই।
শালীনতা শুধু পোশাকের আলোচনায় সীমাবদ্ধ না থাক,শালীনতা হোক বাক্যে,কর্মে,চিন্তায়।
ধর্মের নামে যা অনাচার হয় তা রুখতে অবশ্যই আমাদের মাঝে ঐক্যতা গড়তে হবে।
ReplyDeleteJayo hea Dharma!
ReplyDelete