India is the cradle of human race, the birthplace of human speech, the mother of history, the grandmother of legend and the great grandmother of tradition. The most valuable and most instructive materials in the history of man are treasured up in India only." — Mark Twain
মানব ইতিহাসের গৌরবের প্রতিটি শাখা ই মহান আর্য সভ্যতার সাথে জড়িত। তাই এটি অতি স্বাভাবিক যেজ্ঞানের অন্যান্য প্রতিটি শাখারমত চিকিৎসাবিদ্যাও এই গৌরবময় আর্যাবর্ত থেকেই উদ্ভূত হয়েছে।চিকিৎসা বিজ্ঞানে আর্য সভ্যতার ইতিহাস অত্যন্ত চমকপ্রদ। সার্জারি(সুশ্রুত সংহিতা) থেকে মেডিসিন(চরক সংহিতা),পেডিয়াট্রিকস (কৌমারভৃত্য) থেকে ফরেনসিক টক্সিকোলজি(অগদতন্ত্র),সে এক সুবিশাল পথযাত্রা।আর চিকিৎসা বিজ্ঞানের সবচেয়ে প্রাচীনতম একটি শাখা হল এনাটমি বা অঙ্গসংস্থানবিদ্যা।আজ আমরা আলোচনা করব তার ই ক্ষুদ্র একটি শাখার ক্ষুদ্রতম একটি অংশ নিয়ে; মানবদেহের কঙ্কালতন্ত্র।
মানবদেহের অঙ্গসংস্থান নিয়ে প্রচুর পরিমাণ তথ্যাদি প্রাচীন সংস্কৃত শাস্ত্র সমূহে পাওয়া যায়।এই সুবিশাল ভাণ্ডারের বর্ণনা দেয়া হয়ত ১০০ টি প্রবন্ধেও সম্ভব নয়।তাই আমরা এখানে শুধুমাত্র পবিত্র বেদ ও উপনিষদসমূহে পাওয়া যায় এমন কিছু বিস্ময়কর মন্ত্রের উপর ই আলোকপাত করব।
মস্তক(Head)
চিকিৎসা বিজ্ঞানে আমাদের মস্তিস্কের বাহ্যগঠনকে প্রধানত দুইভাগে ভাগ করা হয়-১)ক্রেনিয়াল বা খুলির অস্থি এবং২)ফেসিয়াল বা মুখমণ্ডলের অস্থি।খুলির প্রধান অংশ গঠিত হয় চারটিবড় অস্থি দিয়ে-
একটি ফ্রন্টাল,একটি অক্সিপিটাল ও দুটি প্যারাইটাল অস্থি।এছাড়া টেম্পোরাল নামক দুই পাশে দুটি
ছোট অস্থি রয়েছে।
আর মুখমণ্ডলের অস্থির মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল চোয়াল এর অস্থি যার নাম ম্যান্ডিবল।
মস্তিস্কম্ অস্য ললাটম্ ককাটিকাম্ প্রথমো যঃ কপালম্...
(অথর্ববেদ ১০.২.৮)
অর্থাৎ মস্তক কে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে-মস্তিস্ক(ব্রেন),ককাটিকাম(ফেসিয়াল বোনস বা মুখমণ্ডলের অস্থি) এবং কপালম বা ক্রেনিয়াল বোনস বা মস্তকের অস্থি।
সাংখ্য আরণ্যক ২.২ অনুযায়ী এই কপালম বা
মস্তিস্কের অস্থি প্রধানত ৪ টি(যা মেডিকেল সায়েন্সের ভাষায় ফ্রন্টাল, অক্সিপিটাল, টেম্পোরাল ও
প্যারাইটাল বোনস)।
এছাড়াও অথর্ববেদ ১০.২.৭-৮ এ একটি গুরুত্বপূর্ণ ফেসিয়াল বোন এর কথা বলা হয়েছে যেটির নাম হনু(ম্যান্ডিবল-চোয়াল এর অস্থি)।একে
বলা হয়েছে হন্বোর্হি মদধা ও হন্বো দিবাম্ অর্থাৎ হনু বা ম্যান্ডিবল মূলত দুইটি অংশের মিলনের ফলে
গঠিত।এই ব্যাপারটি খুব
লক্ষণীয়।আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান অনুযায়ীও ম্যান্ডিবল নামক অস্থিটি কিন্তু গর্ভাবস্থায় রাইট ও লেফট প্রসেস(ডান
ও বাম অংশ) নামক আলাদা দুটি অস্থি হিসেবেই থাকে যা
পরবর্তীতে জোড়া লাগার ফলে
পূর্ণাঙ্গ অস্থি ম্যান্ডিবল গঠিত হয় যা
ম্যান্ডিবুলার সিমফাইসিস(Symphysi Menti) নামক সরু
একটি দাগ এর
মাধ্যমে মানবদেহে সারাজীবন চিহ্নিত থাকে!
মস্তিস্কের ফ্রন্টাল অস্থির কোটরে আমাদের চোখ অবস্থিত।সেই হিসেবে বৃহদারণ্যক উপনিষদ ২.২.২ এ দেয়া মানবচক্ষুর অসাধারণ পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনাটি দেয়া হল।এই মন্ত্রটিতে চোখকে নিম্নলিখিত অংশে ভাগ করা হয়েছে।
কালো বর্ণের কনীনকা-যাকে আধুনিক বিজ্ঞানের ভাষায় বলে পিউপিল
অক্ষ্ণ-আই বল
কৃষ্ণাংশ-আইরিশ
শুক্লাংশ-স্ক্লেরা
আপ-একুয়াস এন্ড ভিট্রিয়াস হিউমার
লোহিনীরাজি-রেটিনাল ব্লাড ভেসেলস!
বর্তন্যা-লোয়ার আই লিড
উত্তরয়া-আপার আই লিড
অর্থাৎ চোখের সুক্ষ্ম অংশসমূহের পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা রয়েছে!
গ্রীবা(Neck)
যজুর্বেদীয় শতপথ ব্রাহ্মণের কাণ্ব শাখা ১৪.২.৪.৮ অনুযায়ী গ্রীবাকে দুটি অংশে ভাগ করা হয়েছে-সম্মুখ ও পশ্চাৎ ভাগ।পশ্চাৎ ভাগে আছে গ্রীবা পঞ্চদশশ্চতুর্দশ বা এতাসাং করূকরাণি বীর্য পঞ্চদশ।
প্রখ্যাত প্রাচ্যতত্ত্ববিদ Rudolf Hoernle বলছেন এখানে সারভাইকাল স্পাইন বা করূকরণ দণ্ড ও তাদের চোদ্দটি ল্যাটেরাল প্রসেস(মোট ১৫ বা পঞ্চদশ) এর কথা বলা হচ্ছে! বর্তমান চিকিৎসা বিজ্ঞান অনুযায়ীও গ্রীবা অঞ্চলে ৭টি কশেরুকা ও তাদের প্রত্যেকের দুই পাশে একটি করে অর্থাৎ মোট ১৪ টি ল্যাটেরাল প্রসেস রয়েছে! অপরদিকে সম্মুখঅংশে রয়েছে কণ্ঠনালী(Trachea)।
প্রখ্যাত প্রাচ্যতত্ত্ববিদ Rudolf Hoernle বলছেন এখানে সারভাইকাল স্পাইন বা করূকরণ দণ্ড ও তাদের চোদ্দটি ল্যাটেরাল প্রসেস(মোট ১৫ বা পঞ্চদশ) এর কথা বলা হচ্ছে! বর্তমান চিকিৎসা বিজ্ঞান অনুযায়ীও গ্রীবা অঞ্চলে ৭টি কশেরুকা ও তাদের প্রত্যেকের দুই পাশে একটি করে অর্থাৎ মোট ১৪ টি ল্যাটেরাল প্রসেস রয়েছে! অপরদিকে সম্মুখঅংশে রয়েছে কণ্ঠনালী(Trachea)।
বক্ষ(Thorax)
আধুনিক এনাটমি অনুযায়ী আমাদের বক্ষের উভয়পাশে দুইভাগে বিভক্ত।১২ জোড়া রিবস বা পর্শুকা এবং এক জোড়া ক্ল্যাভিকল বা কণ্ঠাস্থি রয়েছে।আর মাঝখানে রয়েছে একটি স্টার্নাম বা বক্ষাস্থি।
শতপথ ব্রাহ্মণে বলা হয়েছে-
পার্শ্বে ত্রিনবঃ ত্রয়োদশন্যঃ পার্শ্বত্রয়োদশন্য।
পার্শ্বে ত্রিনবে তস্মাৎ পার্শ্বে ত্রিনবঃ।।
(শতপথ ব্রাহ্মন ১৪.২.৪.৮)
অর্থাৎ বক্ষের দুই পাশে ১৩ টি করে মোট ২৬ টি পর্শুকা রয়েছে আর বক্ষাস্থি হল ত্রিনবতম।
(এখানে ক্ল্যাভিকলকে সহ ধরা হয়েছে)
আমরা দেখতে পাচ্ছি এখানে বুকের মোট ২৭ টি (ত্রি-নব বা ৩*৯) অস্থির কথা বলা হচ্ছে।আমরা চিকিৎসাবিজ্ঞানেও বর্তমানে জানি যে বক্ষপ্রদেশে ১২ জোড়া রিবস(পর্শুকা),১ জোড়া ক্ল্যাভিকল(কণ্ঠাস্থি) ও একটি স্টার্নাম(বক্ষাস্থি) অর্থাৎ মোট ২৭ টি অস্থি রয়েছে।
আমরা বর্তমানে এও জানি যে পর্শুকাসমুহ সামনের দিকে স্টার্নাম বা বক্ষাস্থি এর সাথে কার্টিলেজ এর মাধ্যমে এবং পিছনের দিকে কশেরুকাসমূহের(ভার্টিব্রা) এর সাথে সুপিরিয়র ও ইনফেরিয়র আরটিকুলার প্রসেস নামক দুটি প্রায় গোলাকার আকৃতির খাদযুক্তঅংশ এর মাধ্যমে যুক্ত থাকে। ঠিক ই আমরা শতপথ ব্রাহ্মণের ৮.৬.২.১০ এ দেখতে পাই পর্শুকাসমুহ একদিকে উরস বা বক্ষাস্থি (স্টার্নাম) এর সাথে জত্রু(কার্টিলেজ) এবং অপরদিকে কিকস(থোরাসিক ভার্টিব্রা) বা কশেরুকা এর সাথে অণ্ডপরিশু (গোলাকার খাদযুক্ত স্থানবিশেষ) এর মাধ্যমে যুক্ত থাকে!
Vertebral Column(ভারটিব্রাল কলাম)
আমরা জানি মানুষের ভারটিব্রাল কলামে(কশেরুকা স্তম্ভ
বা মেরুদণ্ড) মোট ৩৩ টি ভারটিব্রা থাকে যা পরবর্তীতে ফিউজড(কয়েকটি
একত্রিত) হয়ে ২৬ টিতে রুপান্তরিত হয়।শতপথ ব্রাহ্মণ বলছে-
করূকরণ্যনুকম্ ত্রয়স্ত্রিংশম্
(শতপথ ব্রাহ্মণ ১৪.২.৪.৮,কাণ্ব শাখা)
.অর্থাৎ আমাদের মোট করূকর বা কশেরুকা তথা ভার্টিব্রার সংখ্যা ৩৩ টি(ত্রয়ো-ত্রিশ)!
(শতপথ ব্রাহ্মণ ১৪.২.৪.৮,কাণ্ব শাখা)
.অর্থাৎ আমাদের মোট করূকর বা কশেরুকা তথা ভার্টিব্রার সংখ্যা ৩৩ টি(ত্রয়ো-ত্রিশ)!
Upper Extremity (ঊর্ধ্ববাহু)
চিকিৎসা বিজ্ঞানে ঊর্ধ্ববাহুকে প্রধানত Shoulder এবং Arm এই দুই অংশে ভাগ করা হয়।Arm
কে আবার তিনটি অংশে ভাগ করা হয়।যথা-১)Arm(কাঁধ থেকে কনুই এর আগ পর্যন্ত)২)Forearm(কনুই থেকে কব্জি পর্যন্ত) এবং ৩)Hand(বাকী অংশটুকু)। Shoulder আবার দুটি হাড় নিয়ে গঠিত। সেই দুটি হচ্ছে ক্ল্যাভিকল(চিবুকের হাড়) এবং
স্ক্যাপুলা(পিঠের হাড়)।
অথর্ববেদ ১০.২.৪,৫ এ কাঁধকে অংসৌ নামে অভিহিত করা হয়েছে।এই অংসৌ এর দুটি অংশ সেখানে দেয়া হয়েছে-স্কন্দ(ক্ল্যাভিকল) এবং পৃষ্টী(স্ক্যাপুলা)।
১০.২.৪-৭ পর্যন্ত মন্ত্রসমূহে হাতের বর্ণনায় একে তিনভাগে ভাগ করা হয়েছে-
বাহু(Arm),দোসন(Forearm) ও পাণি(Hand)!
এখানেই শেষ নয়।আমরা জানি যে হাত অষ্টিওলজিকালি প্রধানত তিনটি অংশে বিভক্ত-
১)কার্পাল(Carpal)২)মেটাকার্পাল(Metacarpal)৩)ফ্যালাঞ্জেস(Phallanges)
অথর্ববেদ ১০.২.১ এ বলা হয়েছে,
“কেন আঙ্গুলি পেশানি কেন উচ্ছলঙ্খৌ মধ্যতঃ...” অর্থাৎ কে এবং কেন হাতকে উচ্ছলঙ্খৌ(Carpal),মধ্যতঃ (মধ্য অংশ বা Metacarpal) এবং আঙ্গুলি(Phallanges) অংশে বিভক্ত করেছে?
Lower Extremity (নিম্নবাহু)
Anatomically নিম্নবাহু প্রধানত দুটি অংশে বিভক্ত-হিপ এবং ফুট।ফুট আবার তিনটি অংশে বিভক্ত-
১)থাই(হাঁটুর
আগ পর্যন্ত)
২)লেগ(হাঁটু
থেকে গোড়ালি পর্যন্ত)
এবং ৩)ফুট(বাকী
অংশ)
ফুট আবার অষ্টিওলজিকালি তিনটি অংশে গঠিত-
১)টারসাল ২)মেটাটারসাল এবং ৩)ফ্যালাঞ্জেস আবার
আমাদের পায়ের গোড়ালি বলতে আমরা যা বুঝি তা ট্যালাস নামক টার্সাল অস্থি দিয়ে গঠিত।যা আবার অন্যান্য টার্সাল অস্থিসমূহের সাথে যুক্ত থাকে।
অথর্ববেদ ১০.২.১-৩ মন্ত্র তিনটি পর্যালোচনা করে যা পাওয়া যায় তা হল-নিম্নাঙ্গ দুটি অংশে গঠিত- শ্রোণী(হিপবোন) এবং পা।পাকে আবার ভাগ করা হয়েছে তিনটি অংশে-
১.উরু(থাই) ২.জঙ্ঘা(লেগ) এবং ৩.পদ(ফুট)
পদকে আবার চারটি অংশে ভাগ করা হয়েছে-১. পার্সণি(ট্যালাস)২. গুলফৌ(বাকী টারসাল অস্থিসমূহ) ৩.উচ্ছলঙ্খ(মেটাটারসাল) ৪.আঙ্গুলি(ফ্যালাঞ্জেস)!
এছাড়া আমরা জানি যে টারসাল ও মেটাটারসাল অস্থির মাঝখানে Transverse
Arch রয়েছে যা আমাদের দেহের ভারবহনে পায়ের সহায়ক হিসেবে কাজ করে।প্রখ্যাত গবেষক Dr.
V.W Karamvelkar এর মতে অথর্ববেদ ২.৩৩.৬ এ উল্লিখিত ‘প্রপদা’ নামক পায়ের অংশটি ই হল এই Transverse
Arch!!!
অথচ মরুভূমির অসুরদের আক্রমনে আমরা আমাদের এই সম্পদগুলো হারিয়ে ফেলি যার ফল আমাদের এখনো ভোগ করতে হচ্ছে। ইতিহাস তাই বলে-
“চিকিৎসা বিজ্ঞানের কলাকৌশল নালন্দা,তক্ষশীলা ও বেনারসের বিখ্যাত শিক্ষাপীঠ গুলোতে পড়ানো হত।উত্তর-পূর্ব দিক থেকে মুসলিম শাসকদের আক্রমনে ভারতবর্ষের সেই সমৃদ্ধির ধ্বস নামে তবে তারও আগে ভারতীয় চিকিৎসাবিজ্ঞান তা দান করে গিয়েছিল পশ্চিমে গ্রীক,আরব ও মিশরীয়দের ও পূর্বে চীনের হাতে।“(Davidson Gr. The dawn of
Civilization- Indian Medicine. In: Medicine through the Ages. London: Methuen
Co. Ltd.; 1968. p. 17-9.)
ওঁ শান্তি শান্তি শান্তি
তথ্যসুত্র-
1.History of science in India By Dr.
Mira Roy
2.Atharvaveda &Ayurveda By Dr. V.W
Karamvelkar
3.La Doctrine Classique de la Medicine
Indienne ses origins et ses parallels By Zean Filliozat.
4.Human
Anatomy in Atharvaveda by P V Prasad
অনেক ভালো লাগলো
ReplyDelete