বৈদ্যিক সনাতন ধর্মে
যতগুলি শাস্ত্রীয় গ্রন্থ আছে তাদের মধ্যে সবচেয়ে বিতর্কিত হলো মনু স্মৃতি। এর
কারন বিবিধ তবে সারমর্মে বলা যায় তথাকথিত ধর্ম ব্যাবসায়ী ও যবনদের দ্বারা বিকৃত
ও স্বার্থসিদ্ধির জন্য নিজের মত করে অপব্যাখ্যা সৃষ্টি করাই এর প্রধান কারন। সেই সত্য
আমি আমার পরবর্তীতে প্রতিটি লেখাতে তুলে ধরার চেষ্টা করবো প্রকৃত মনু স্মৃতির
আলোকে। আজ আলোচনা করবো নারী সম্পর্কে মনু স্মৃতির ভাবনা। অনেক অপপ্রচার কথিত আছে
যে মনু ছিলেন নারী বিদ্বেষী এবং বিভিন্ন ভাবে নারীদের হেয় করেছেন। তাহলে আমরা
দেখে নেই কিভাবে মিথ্যা ভণ্ড প্রচারকরা মনু স্মৃতিকে হেয় করেছে।
যদি আমরা প্রকৃত অবিকৃত
মনু স্মৃতি পর্যালোচনা করি তাহলে যে কেউই গর্বের সাথে বলতে পারবে যে পৃথিবীর অন্য
যে কোন ধর্মীয় শাস্ত্রের চাইতে (অবশ্যই বেদের পরে) মনু স্মৃতিতে নারীকে অধিকতর
উঁচু মর্যাদা দিয়েছে। এমনকি আধুনিক যুগে নারীবাদীদের গ্রন্থগুলোকে পুনঃ সংকলন
করার প্রয়োজন পরে যাবে মনু স্মৃতির সমকক্ষ হওয়ার জন্য।
মনু স্মৃতিতে
দ্বের্থহীন কণ্ঠে ঘোষণা করে যে নারী সমাজের কল্যানের ভিত্তি গড়ে দেয়।
यत्र नार्यस्तु पूज्यन्ते रमन्ते तत्र देवताः ।
यत्रैतास्तु न पूज्यन्ते सर्वास्तत्राफलाः क्रियाः ॥
৩.৫৬
যে সমাজ নারীকে সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে সে সমাজ মর্যাদা ও সমৃদ্ধি বৃদ্ধি লাভ করবে। এবং যে সমাজ নারীকে এই রূপ উঁচু স্তম্ভমূলে আসন দেয়নি সে সমাজ যতই উদার ও মহান কর্ম করুক না কেন সে সমাজকে দুঃখ, দূর্দশা ও ব্যার্থতার সম্মুখীন হতেই হবে।
যে সমাজ নারীকে সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে সে সমাজ মর্যাদা ও সমৃদ্ধি বৃদ্ধি লাভ করবে। এবং যে সমাজ নারীকে এই রূপ উঁচু স্তম্ভমূলে আসন দেয়নি সে সমাজ যতই উদার ও মহান কর্ম করুক না কেন সে সমাজকে দুঃখ, দূর্দশা ও ব্যার্থতার সম্মুখীন হতেই হবে।
এটা নারীজাতির জন্য
তোষামোদি কোন বক্তব্য নয়। এটা চিরন্তন সত্য আর এই সত্য তাদের জন্য কঠোর ও ঝাঁঝালো
হবে যারা নারীদের হেয় প্রতিপন্ন করে। কিন্তু যারা মাতৃ শক্তিকে স্তুতি করে, গুন কীর্তিন করে, পূজা করে তাদের জন্য তা
সুমিষ্ট অমৃত। প্রকৃতির এই নিয়ম প্রতিটি পরিবার, সমাজ, সম্প্রদায়, দেশ, জাতি অথবা পুরো মানব
সমাজের জন্য প্রযোজ্য।আমাদের প্রচুর ধন সম্পত্তি, শক্তি, সামর্থ থাকা সত্ত্বেও
আমরা দাসে পরিণত হব যদি আমরা মহা ঋষির এই উপদেশকে উপেক্ষা করি। শত্রুদের আক্রমণের
পরে শতাব্দীর পর শতাব্দী তাঁর উপদেশ আমরা অমান্য করেছি এবং সেজন্য আমাদের অবস্থা
মন্দ থেকে মন্দতর হয়েছিল। উনিশ শতকের শেষে এসে আমরা বৈদিক বার্তাটিকে গভীর ভাবে
চিন্তা করতে শুরু করি এবং সেই কারনে আমরা অবস্থার কিছুটা উন্নতি দেখতে পারছি।
সেজন্য রাজা রাম মোহন রায়, ঈশ্বর
চন্দ্র বিদ্যাসাগর, এবং
স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতীর মত সমাজ সংস্কারকদের তাদের প্রচেষ্টার জন্য আন্তরিক ভাবে
ধন্যবাদ ও প্রণাম জানাই।
অতীতে ইউরোপেও যুগের পর
যুগ নারী সম্পর্কিত হাস্যকর ও ক্ষতিকারক বাইবেলীয় মতবাদ অনুসরণ করেছিল এবং
সেজন্যই পৃথিবীর সব চেয়ে কুসংস্কারপূর্ন স্থান গুলোর মধ্যে ইউরোপ ছিল। পরবর্তীতে
অবস্থার পরিবর্তন ঘটে এবং কঠোর ভাবে বাইবেলকে থামানো হয় সেজন্য ধন্যবাদ সংস্কার
যুগকে। এর ফল স্বরূপ দ্রুত অগ্রসর হতে পেরেছিল তারা। কিন্তু এখন নারী বলতে সেই ধরা
বাঁধা ভোগের সামগ্রী ইন্দ্রিয় সুখের উপকরণ হিসেবে দেখা হয় সম্মানপূর্ন মাতৃ
শক্তি রূপে দেখা হয় না। এবং সেজন্য বৈষয়িক বিষয়ে তারা অনেক অধিকতর ও ব্যাপক
উন্নতি লাভ করার পরেও পশ্চিমা বিশ্ব আজ অনিরাপত্তা এবং মনের শান্তির অভাব দ্বারা
আক্রান্ত।
আসুন মনু স্মৃতির আরও
কিছু শ্লোক পর্যালোচনা করি এবং আমাদের সমাজে সেগুলোকে প্রয়োগ করার উদ্যোগ নেইঃ
সুখী নারীর গুরুত্বঃ
-------------------
पितृभिर्भ्रातृभिश्चैताः पतिभिर्देवरैस्तथा ।पूज्या भूषयितव्याश्च बहुकल्याणमीप्सुभिः ॥
৩.৫৫
=>>পিতা, ভ্রাতা, স্বামী অবশ্যই তাদের
কন্যা, ভগ্নি, স্ত্রী অথবা পরিবারের
অন্যন্যা নারী সদস্যকে সুখে শান্তিতে রাখবে এবং মিষ্ট বাক্য, সম্মানসূচক আচরণ, উপহার ইত্যাদির মাধ্যমে
তাদের খুশী করবে। যারা পরিবারের সমৃদ্ধি ও সুখ শান্তি প্রত্যাশী তাদেরকে অবশ্যই
পরিবারের নারী সদস্যদের সুখ শান্তি নিশ্চিত করতে হবে এবং তারা যেন কোন দুঃখ দুর্দশাগ্রস্থের
মুখোমুখি না হয়।न शोचन्ति तु यत्रैता वर्धते तद्धि सर्वदा ॥
৩.৫৭
=>>যে পরিবারে
পুরুষের অপকর্মের জন্য নারীরা অসুখী হয় সেই পরিবার ধ্বংস হয়ে যেতে বাধ্য। এবং যে
পরিবারে নারী সদস্যরা সুখী সে পরিবারের সবর্দা সুখ ও সমৃদ্ধি হতে বাধ্য।
तानि कृत्याहतानीव विनश्यन्ति समन्ततः ॥
৩.৫৮
=>>একটি পরিবারে যেখানে নারী সদস্যদের অপমান অথবা অধিকার বঞ্চিত করা হয় এবং তারা পুরুষ সদস্যদের উপর অভিসম্পাত করে সেই পরিবার ধ্বংস হতে বাধ্য ঠিক যেমন করে বিষ মিশ্রিত খাদ্য এর ভক্ষনকারীকে মেরে ফেলে ঠিক সেই ভাবে।
तस्मादेताः सदा पूज्या भूषणाच्छादनाशनैः ।
भूतिकामैर्नरैर्नित्यं सत्करेषूत्सवेषु च ॥
=>>একটি পরিবারে যেখানে নারী সদস্যদের অপমান অথবা অধিকার বঞ্চিত করা হয় এবং তারা পুরুষ সদস্যদের উপর অভিসম্পাত করে সেই পরিবার ধ্বংস হতে বাধ্য ঠিক যেমন করে বিষ মিশ্রিত খাদ্য এর ভক্ষনকারীকে মেরে ফেলে ঠিক সেই ভাবে।
भूतिकामैर्नरैर्नित्यं सत्करेषूत्सवेषु च ॥
৩.৫৯
=>>যে গৌরব কামনা করে তাকে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে তার পরিবারে সে সকল নারী সদস্যদের শ্রদ্ধার আসনে রেখেছে এবং গহনা, গুনগত পোষাক, সুখাদ্য দ্বারা তাদের সুখী ও আনন্দে রাখতে পেরেছে। যেকোনো পরিস্থিতিতে নারীদের সর্বদা সম্মান প্রদর্শন করতে হবে।
स्त्रियां तु रोचमानायां सर्वं तद्रोचते कुलं ।
तस्यां त्वरोचमानायां सर्वमेव न रोचते ॥
=>>যে গৌরব কামনা করে তাকে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে তার পরিবারে সে সকল নারী সদস্যদের শ্রদ্ধার আসনে রেখেছে এবং গহনা, গুনগত পোষাক, সুখাদ্য দ্বারা তাদের সুখী ও আনন্দে রাখতে পেরেছে। যেকোনো পরিস্থিতিতে নারীদের সর্বদা সম্মান প্রদর্শন করতে হবে।
तस्यां त्वरोचमानायां सर्वमेव न रोचते ॥
৩.৬২
=>>যে ব্যাক্তি তার স্ত্রীকে সুখী রাখতে পারে না সে পুরো পরিবারের জন্য দুঃখ দুর্দশার কারন হয়। এবং যদি স্ত্রী সুখী থাকে তাহলে পুরো পরিবার সুখী পরিবার রূপে আবির্ভূত হয়।
=>>যে ব্যাক্তি তার স্ত্রীকে সুখী রাখতে পারে না সে পুরো পরিবারের জন্য দুঃখ দুর্দশার কারন হয়। এবং যদি স্ত্রী সুখী থাকে তাহলে পুরো পরিবার সুখী পরিবার রূপে আবির্ভূত হয়।
৯.২৬ নারী পরবর্তী প্রজন্মকে জন্ম দেয়। তারা ঘরকে আলোকিত করে। তারা সৌভাগ্য ও পরম সুখ বয়ে আনে। সেজন্য নারীকুল সুখ সমৃদ্ধির সমার্থক।
এই শ্লোকের উপর ভিত্তি
করেই বলা হয় যে নারী হচ্ছে ঘরের লক্ষী অর্থাৎ ঘরের সৌভাগ্যের দেবী। তা আজও
পর্যন্ত মানা হয়।
৯.২৮ নারী হচ্ছে সকল
যুগের সকল প্রকার সুখের মূল উৎস- সেটা হতে পারে শিশু জন্মদানের মাধ্যমে অথবা কোন
মহৎ উদার কর্মের মাধ্যমে অথবা দাম্পত্য সুখের মধ্যে দিয়ে অথবা বড় বয়োজেষ্ঠ্যদের
সেবার মধ্য দিয়ে। কথাটা অন্যভাবে বলা যায় যে নারী হচ্ছে সকল সুখের মূল কখন মা
হিসেবে, কখনো
কন্যা, কখনো
স্ত্রী আবার কখনো আধ্যাত্মিক তপস্যার সঙ্গিনী হিসেবে। তার মানে হচ্ছে যে কোন
ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক কর্মে নারীদের অংশ গ্রহন অবশ্যিক।
৯.৯৬ নারী ও পুরুষের
একে অপরের বিনা অসম্পূর্ন। তাই প্রাথমিক ধর্মীয় দ্বায়িত পালনে উভয়কেই অংশ গ্রহন
করতে হবে।
তাই যারা নারীদের বেদ
অথবা বৈদিক যজ্ঞ পালনে নারীদের দূরে রাখে তারা সনাতন ও মানবতা বিরোধী।
৪.১৮০ যিনি জ্ঞানী ও
বিচক্ষণ ব্যাক্তি তিনি কখনই মা, কন্যা এবং স্ত্রী সহ
পরিবারের কোন সদস্যদের সাথে লড়াই ও ঝগড়া করবে না।
৯.৪ যে পিতা তার
কন্যাকে সুপাত্রে পাত্রস্থ করতে ব্যার্থ হবে সে নিন্দার যোগ্য। যে স্বামী তার
স্ত্রী নূন্যতম চাহিদা পূরণ করবে না সে নিন্দার যোগ্য। যে পুত্র তার
বিধবা মায়ের সেবা করবে না সে নিন্দার যোগ্য।
বহু বিবাহ হচ্ছে পাপঃ
----------------------
৯.১০১ স্বামী ও
স্ত্রীকে মৃত্যু অবধি এক সঙ্গে থাকা উচিত। তারা অন্য সঙ্গীর সান্নিধ্য লাভের
আকাঙ্ক্ষা করবে না এবং কোন অসদাচার যৌনাচার করবে না। সার কথা হচ্ছে এটাই মানব
জাতির ধর্ম।
তাই যে সকল সমাজ ও
সম্প্রদায় বহু বিবাহ, যৌনদাসী
এবং খন্ড কালীন ( temporary marriage) বিবাহকে সমর্থন করে তারা দুঃখ দূর্দশায় জর্জরিত হবেই
কারন তারা ধর্মের অন্তঃসার মতবাদকে উপেক্ষা করেছে, অস্বীকার করেছে, অসমর্থন করেছে।
নারীর স্বায়ত্তশাসনের
অধিকারঃ
---------------------------------
৯.১১ অর্থনৈতিক
ব্যবস্থাপনায়, স্বাস্থ্যবিধি
ব্যবস্থাপনায়, আধ্যাত্মিক
ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন, পুষ্টি
এবং গৃহের সকল প্রকার ব্যবস্থাপনায় নারীদের স্বায়ত্তশাসন ও কর্তৃত্ব প্রদান করতে
হবে।
এই শ্লোকের মধ্য দিয়ে
একটি বিষয় পরিষ্কার হয়ে গেছে যে যারা মনে করত যে কোন বৈদিক ধর্মকর্ম নারীরা করতে
পারবে না তা্রা সম্পূর্ণ ভুল ও মিথ্যা ধারণা পোষণ কারী। উপরন্তু নারী পুরুষ
উভয়কেই এই ধর্মীয়নুষ্ঠান পালন করতে হবে। তাই যারা দাবী করে অথবা পরামর্শ দেয় যে
নারীদের বেদ অধ্যায়ন ও চর্চা করার অধিকার নেই তারা মনু ও বেদ বিরোধী। এই ধরনের
অন্ধ গোঁড়ারা জাতীর দুঃখ দূর্দশার কারন। তাই আমরা এই ধরনের মনোভাবকে কখনোই প্রশয়
দেব না যা নারীদের হেয় করে।
৯.১২ পুরুষদের দ্বারা (
পিতা, স্বামী, পুত্র) নারীকে গৃহে
আবদ্ধ করে রাখা হলেও সে সুরক্ষিত নয়। নারীদের আবদ্ধ করে রাখা হচ্ছে বৃথা নিরর্থক।
নারীদের নিরাপত্তা শুধুমাত্র তার নিজের ক্ষমতা এবং মনোভাবের মধ্য দিয়ে আসে।
এই শ্লোকে ব্যাখ্যা
করেছে যে সুরক্ষা ও নিরাপত্তার জন্য নারীদের গৃহে বন্দী করে রাখার প্রচেষ্টা বৃথা, অনর্থক এবং অসমর্থন
যোগ্য। বরং তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য তাকে যথাযথ প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে
যাতে সে নিজেকে রক্ষা করতে পারে এবং অসৎ সঙ্গ দ্বারা ভ্রান্ত হওয়াকে (Mislead)
উপেক্ষা
বা এড়িয়ে যেতে পারে। তাই ছোট্ট গৃহে নারীকুলকে আবদ্ধ করে রাখার প্রচলিত ধারণা
হচ্ছে মনু স্মৃতি বিরোধী।
নারীর নিরাপত্তাঃ
------------------
৯.৬ এমনকি দূর্বল স্বামীকেও
তার স্ত্রীকে রক্ষা করার চেষ্টা করতে হবে।
৯.৫ নারী সর্বদা সকল
প্রকার অসচ্চরিত্রতা, অনৈতিকতা
থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখবে। কারন নারী যখন চরিত্র হারায় তখন পুরো সমাজ ধ্বংস
হয়ে যায়।
৫.১৪৯ একজন নারীকে
সর্বদা নিশ্চিত হতে হবে যে সে নিরাপদে আছে। তাকে সুরক্ষা ও নিরাপত্তা প্রদান করার
দ্বায়িত তার পিতা, স্বামী
ও পুত্রের উপর বর্তায়।
লক্ষ্য করে দেখুন এখানে
নিরাপত্তা বলতে কিন্তু বন্দী বা চার দেয়ালের মাঝে আবদ্ধ করে রাখার কথা বলা হচ্ছে
না।
৯.১২ শ্লোকে বিষয়টি
আরও স্পষ্ট করে ইংগিত দিয়েছে। যে সমাজ লম্পট, দুষ্কৃতিকারীদের হাত
থাকে তাদের নারীকূলকে রক্ষা পারে না তারা নিজের হাতে তাদের ধ্বংস হয়ে যাবার
নির্মম ভাগ্য রচনা করছে।
এই অনুপ্রেরণার ফলে
অনেক অনেক সাহসী যোদ্ধা পশ্চিমা ও আরবের বর্বরদের হাত থেকে তাদের নারীকে রক্ষা
করতে গিয়ে নিজের জীবন দিয়েছিল। আলহা উদাল ও বীর যোদ্ধা মহারানা প্রতাপের
আত্মত্যাগ আমাদের রক্তে আজও গৌরব ও অহংকারের ফিনকি বয়ে আনে।
এটা আমাদের জন্য লজ্জার
বিষয় যে আমাদের গৌরবের এমন ইতিহাসের ভিত্তি থাকা সত্ত্বেও আমাদের নারীরা চার
দেয়ালের মাঝে অত্যাচারিত হয় নয়ত লম্পটের লালসার স্বীকার হয়। আমরা যদি আমাদের মা
বোনদের সম্ভ্রম রক্ষার দ্বায়িত নেবার পরিবর্তে আমরাই যদি নারীদের উপর ঝাঁপিয়ে
পড়ি অথবা আক্রমণ কারীদের প্রতিহত না করি তাহলে আমাদের কে সাহায্য করতে আসবে!
৯.৯৮ কোন অযোগ্য
ব্যক্তির কাছে জোর পূর্বক বিবাহ না দিয়ে বরং কন্যাকে অবিবাহিত রাখাই শ্রেয়।
৯.৯০-৯১ প্রাপ্ত বয়স্ক
হবার পরে নারী তার নিজের জীবন সঙ্গী নিজে পছন্দ করে বেছে নিতে পারবে। যদি তার পিতা
মাতা তার জন্য যোগ্য পাত্র সন্ধানে ব্যার্থ হয় তাহলে সে নিজেই নিজের পাত্র বেছে
নেবে।
তাই কন্যার জীবন সঙ্গী
নির্ধারন করবে তার পিতামাতা এই ধারণা মনু বিরুদ্ধ, একজন প্রাপ্ত বয়স্ক
নারীর পূর্ন অধিকার রয়েছে তার জীবন সঙ্গী বেছে নেবার। পিতামাতা বিবাহের সহায়ক
ভূমিকা পালন করবে কিন্তু চূড়ান্ত সিদ্ধান্তকারী নয়।
নারীর সম্পত্তির
আধিকারঃ
-----------------------------
৯.১৩০ একজন কন্যা একজন
পুত্রের সমতুল্য। তার বর্তমানে কিভাবে সম্পত্তির উপর তার অধিকার কেউ ছিনিয়ে নিতে
পারে।
৯.১৩১ মায়ের ব্যক্তিগত
সম্পত্তির উপর কেবল শুধুমাত্র কন্যারই অধিকার আছে।
তাহলে দেখা যাচ্ছে যে
মনুর মতে একজন কন্যার পিতার সম্পত্তির উপর তার
ভাইয়ের মত সমান অধিকার
আছে এবং তার মায়ের সম্পত্তির উপর শুধুমাত্র তারই অধিকার আছে অন্য কারো নয়। নারীর
প্রতি এই বিশেষ ব্যাবস্থার কারন হচ্ছে যাতে করে নারী কোন অবস্থায় অন্যের উপর
নির্ভর করতে না হয়। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে সুখী আলোকিত নারীকুলই সুখী সমাজের
ভিত্তি গড়ে দেয়।
৯.২১২-২১৩ যদি কোন
ব্যাক্তির স্ত্রী অথবা সন্তান না থাকে তাহলে তার সম্পত্তি তার ভাই-বোনদের মাঝে
সমান ভাগে ভাগ করে দেবে। যদি জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা তার ভাই বোনদের মাঝে প্রাপ্য অংশ
প্রদান করতে অস্বীকৃত জানায় তাহলে আইন অনুযায়ী সে শাস্তি পাওয়ার যোগ্য।
নারীর সুরক্ষা বিধান
নিশ্চিত করার জন্য মনু আরও কঠোরতর শাস্তি বিধানের পরামর্শ দিয়েছেন তাদের উপর যারা
নারীর সম্পত্তি হনন করার চেষ্টা করবে , এমনিকি সে তাহার নিকট
আত্নীয় হলেও তাকে শাস্তির আওতায় আনা হবে।
৮.২৮-২৯ যদি কোন নারী
একা হয় কারন তার কোন সন্তান নেই অথবা তার পরিবারে কোন পুরুষ সদস্য নেই যে তাকে
রক্ষা করবে অথবা সে বিধবা অথবা তার স্বামী বিদেশ গমন করেছে অথবা সে অসুস্থ, সেক্ষেত্রে তার
নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দ্বায়িত সরকার ও রাষ্ট্রের। যদি তার সম্পত্তি তার আত্মীয়
বা বন্ধু হরন করে তাহলে সরকার দোষীদের কঠোর থেকে কঠোরতর শাস্তি প্রদান করবে এবং
তার সম্পত্তি পুনুরুদ্ধার করে তাকে ফিরেয়ে দেবে।
নিষিদ্ধ পণ প্রথাঃ
-----------------
৩.৫২ যে আত্মীয়সকল
নারী অথবা তার পরিবারের ধন সম্পত্তি, জায়গা জমি, যান বাহন অথবা পোশাক
পরিচ্ছদ ছিনিয়ে নেয় বা দখল করে তারা হচ্ছে অতিশয় বন্য প্রকৃতির মানুষ। ( বন্য
প্রাণী বলতে আমরা ইতর শ্রেণীকেই বুঝি)
এইভাবেই মনুর পরামর্শ
অনুযায়ী যেকোনো ধরনের পণের প্রতি তীব্রভাবে না না সূচক বলা হয়েছে। তাই কেউ যেন
নারীর ধন সম্পত্তি গ্রাস করার সাহস না করে।
ঠিক পরে শ্লোকে এই
ধারণাটিকে আরও গভীরতর ভাবে প্রকাশ করেছে যে এমনকি শরীরী যে কোন বস্তুর (Tangible
items) সামান্যতম
বিনিময় ক্রয়/বিক্রয় বলে গণ্যএবং যা আর্দশ বিবাহের নৈতিক বিরুদ্ধ। এখানে মনু
পন/যৌতুক নিয়ে বিয়ে করাকে অসুরী বিবাহ বলে উল্লেখ করেছে। (অসুরী বিবাহ হচ্ছে
নিকৃষ্টতম বিবাহ)
নারী ক্ষতিসাধন করা হলে
কঠোর শাস্তিঃ
------------------------------------------
৮.৩২৩ যারা নারী অপহরণ
করবে তাদেরকে মৃত্যু দণ্ডে দণ্ডিত করতে হবে।
৯.২৩২ যারা নারী, শিশু অথবা জ্ঞানী
তপস্যিদের হত্যা করবে তাদের কঠিনতম শাস্তি প্রদান করতে হবে।
৮.৩৫২ যারা নারী ধর্ষন
অথবা উৎপীড়ন করবে অথবা যৌন হয়রানি করবে তাদেরকে কঠোরতম শাস্তি দিতে হবে যা দেখে
অন্যদের মাঝে ভয় জন্মাবে এবং এমন অপরাধ করার চিন্তাও করবে না।
বর্তমানে ভারতের বিচার
বিভাগ আশংকা জনক ভাবে বর্ধিত ধর্ষনের হার প্রতিরোধে সব চেয়ে উপযুক্ত শাস্তি
হিসেবে খোজাকরনের পরামার্শ দিয়েছে। Refer http://timesofindia.indiatimes.com/…/articleshow/8130553.cms
আমরা এই রকম আইনের
সমর্থন করি।
৮.২৭৫ যদি কেউ মা, স্ত্রী অথবা কন্যার
বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনে তাহলে তাকে শাস্তি প্রদান করতে হবে।
৮.৩৮৯ যারা কোন যুক্তি
সঙ্গত কারন ছাড়াই তাদের মা, বাবা, স্ত্রী ও সন্তানদের
পরিত্যাগ করে তাহলে কঠোর শাস্তি প্রদান করতে হবে।
নারী সর্বাগ্রে ( Ladies
First):
--------------------------------
সবার আগে নারী বা Ladies
First এই
ধারণা মনু স্মৃতি থেকেই এসেছে।
২.১৩৮ কোন যানবাহনে এক
জন পুরুষ বৃদ্ধ মানুষ, অসুস্থ
ব্যাক্তি, বোঝা
বহনকারী, বর, রাজা, ছাত্র এবং নারীকে তার
জায়গা ছেড়ে দিবে।
৩.১১৪ নববধু, কন্যা, এবং অন্তঃসত্ত্বা নারীর
খাওয়ার পরে কেউ খাদ্য গ্রহন করবে এমনি মেহমানদের আগেও।
উপরোক্ত এই আলোচনা থেকে
এই কথা সুস্পষ্ট যে মনু স্মৃতিতে নারীকে যে সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেছে তা
পৃথিবীর অন্য যে কোন গ্রন্থে (অবশ্যই বেদ বাদে কারন মনুর এই ধারণার উৎসই হলো বেদ)
তা অনুপস্থিত। এমনকি তার কাছাকাছিও নেই। আশা করি মনু স্মৃতিকে নিয়ে যে নারী
বিদ্বেষী অপবাদ আছে তা এখন থেকে অনেকের মন থেকে ঘুচে যাবে চিরতরে। পাশাপাশি আমি
আশা করবো আমরা আমাদের মা, বোন, স্ত্রী, কন্যা, বান্ধবীদের যথাযথ
সম্মান ও শ্রদ্ধা করে মাতৃ শক্তির মহিমা নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে সমাজে মঙ্গল বয়ে
আনবো।
ওঁ শান্তি শান্তি
শান্তি
অসংখ্য ধন্যবাদ।
ReplyDeleteধন্যবাদ
ReplyDelete