দৈনিক বেদবাণী


এই সমগ্র সংসার নিরোগ এবং শুভচিন্তা যুক্ত হোক । যজুর্বেদ ১৬.৪                    সূর্য-এর আলোয় স্বয়ং আলোহীন চাঁদ আলোকিত হয় । ঋগ্বেদ ৫.৪০.৫                    প্রশংসনীয় সংস্কৃতি, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও মাতৃভূমি— এই ত্রয়ী সুখ-সমৃদ্ধি প্রদান করে। ঋগ্বেদ ১.১৩.৯                    উত্তম জীবন লাভের জন্য আমাদের জ্ঞানীদের সাহচর্যে চলা উচিৎ। ঋগ্বেদ ১.১২.১৬                    যে ব্যক্তি সম্পদ বা সুখ বা জ্ঞান নিঃস্বার্থভাবে দান করে, সে-ই প্রকৃত মিত্র। ঋগ্বেদ ২.৩০.৭                    মানুষ কর্ম দ্বারাই জগতে মহত্ত্ব ও প্রসিদ্ধি লাভ করে। ঋগ্বেদ ৩.৩৬.১                    হে পতি! তোমার স্ত্রীই গৃহ, স্ত্রীই সন্তানের আশ্রয়। ঋগ্বেদ ৩.৫৩.৪                    পরমাত্মার নিয়ম বিনষ্ট হয় না; তা অটুট, অচল ও অপরিবর্তনীয়। ঋগ্বেদ ৩.৫৪.১৮                    এই ধর্মের মার্গই সনাতন, এই পথে চলেই মানবগণ উন্নতি লাভ করে। ঋগ্বেদ ৪.১৮.১                    পরমাত্মার নিকট কোনো মানুষই বড় বা ছোট নয়। সকল মানুষই সমান এবং পরস্পরের ভ্রাতৃস্বরূপ। ঋগ্বেদ ৫.৬০.৫                    যে ব্যক্তি অকারণে অন্যের নিন্দা করে, সে নিজেও নিন্দার পাত্র হয়। ঋগ্বেদ ৫.২.৬                    নিশ্চিতরূপে এই চতুর্বেদ কল্যাণপ্রদায়িনী এবং মানবকে জ্ঞান প্রদান করে ধারণকারিণী। ঋগ্বেদ ৫.৪৭.৪                    বীর মানবের জন্য পর্বতও সুগম হয়ে যায়। ঋগ্বেদ ৬.২৪.৮                    আমরা অন্যের সঞ্চিত পাপের কর্মফল ভোগ করি না। ঋগ্বেদ ৬.৫১.৭                    হে মিত্রগণ! ওঠো— উদ্যমী হও, সাবধান হও এবং এই সংসাররূপী নদীকে অতিক্রম করো। ঋগ্বেদ ১০.৫৩.৮







বৈদিক ধর্ম কি?

অমৃতস্য পুত্রা
4


অগ্নিবীর দ্ব্যার্থহীন কণ্ঠে ঘোষণা করছে, আমাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে বৈদিক ধর্মকে সমগ্র মানব জাতির ধর্মে পরিণত করা । হ্যাঁ, আমাদের ধর্মান্তরিত করার মদোন্মত্তত্তা রয়েছে । আমরা চাই এই পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ বৈদিক ধর্মের প্রতি বশ্যতা ও আনুগত্য প্রদর্শন করবে ৷ আমরা বিশ্বাস করি একমাত্র বৈদিক ধর্ম গ্রহনের মাধ্যমেই পৃথিবীর মুক্তি আসবে । আমরা এও ঘোষণা করছি, বৈদিক ধর্ম ব্যতীত অন্য কোন ধর্ম ঈশ্বরের কাছে গ্রহণযোগ্য নয় । সুতরাং ইহকাল ও পরকালে শান্তি লাভের জন্য একমাত্র অবলম্বন হচ্ছে বৈদিক ধর্মের প্রতি আত্মসমর্পন করা ৷
কথা গুলো ধর্মান্তরকারীদের মত শোনাচ্ছে, তাই না ?
একেবারে ঠিক এই ভাবেই কিন্ত উন্মত্ত উদ্ধত মৌলবাদী খ্রিস্টান ও মুসলমান সম্প্রদায়ের লোকেরা বলে এবং লিখে ।
যদি আপনি বৈদিক ধর্মকে কুরান, বাইবেল, ইসলাম অথবা খ্রিস্টান এর জায়গায় বসিয়ে দেন, যেমনটি জাকির নায়েক এবং পোপেরা হাজার হাজার বছর ধরে চালিয়ে এসেছে, তাহলে এই রকমই শোনাবে । প্রশ্ন জাগতে পারে অগ্নিবীর কি তাহলে আরেকটি মৌলবাদী গোষ্ঠী নয়, যারা বিশ্বাস করে যে, একমাত্র তাদের ধর্মই সর্বশ্রেষ্ট এবং আর অন্যান্য সকল বিশ্বাসগুলোকে আস্তাকুঁড়ে ছুঁড়ে ফেলে দেয় । যেমন করে একজন মৌলবাদী খ্রিস্টান যেভাবেই হোক আর যে করেই হোক সৎ অসৎ যাই হোক না কেন বাইবেলকে সকলের কাছে তুলে ধরতে চায়, এবং কট্টর মুসলিমরাও দরকার হলে তলোয়ারের মাধ্যমে হলেও কুরানকে সবার কাছে আনতে চায়, তেমন করে অগ্নিবীরও তাদের নিজের সম্প্রদায়কে শক্তিশালী করার জন্য “বেদ” কে প্রচার করছে -অর্থাৎ আরেকটি ধর্মশ্রাস্ত্রের দাবী করছে ।

স্বভাবতই অগ্নিবীর তর্ক করতে পারে, কেন শুধুমাত্র খ্রিস্টান এবং ইসলামিক মৌলবাদীদের, তাদের ধর্মশ্রাস্ত্রকে সর্বশ্রেষ্ট ঘোষণা করার এক চেটিয়া অধিকার থাকবে ? যদি তারা যেকোন ভাবে কুরান এবং বাইবেলকে প্রচার করতে পারে তাহলে কেন এত কথা ওঠবে, যখন অগ্নিবীরও ঐ একই ভাবে বেদকে প্রচার করে ? যদি অগ্নিবীর ঘোষণা দেয়, একমাত্র বৈদিক ধর্মই হচ্ছে মানব জাতির ধর্ম, আর এটা যদি ঔদ্ধত্য প্রকাশ হয়ে থাকে, তাহলে পৃথিবীর সকল সম্প্রদায়ও (Cults) একই দোষে দুষ্ট ।

সে যাই হোক, এই লেখাটির মূল উদ্দেশ্য এই তর্কের জন্য বীণা বাজানো নয় এবং অগ্নবীরের অবস্থানকে সমর্থন করাও এর উদ্দেশ্য নয় । তার পরিবর্তে বরং এই আর্টিক্যালে ব্যাখ্যা করা হবে আসলে বৈদিক ধর্ম কি এবং কেন এই বিশ্বমাতার বুকে অগ্নিবীর, বৈদিক ধর্মের জন্য বেঁচে থাকা এবং প্রয়োজনে অকাতরে জীবন দান করা হাজার হাজার মহাত্মাদের এই দীর্ঘ প্রজন্মের মাঝে প্রথম নয় ৷ এই আর্টিক্যালে আরো ব্যাখ্যা করা হবে কেন বেদের নামে শপথ করা আর বাইবেল, কুরান ও অন্যান্য তথাকথিত ধর্মশ্রাস্ত্রের নামে শপথ করা এক নয় ।

আমরা চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি যদি আপনি এখনো বৈদিক ধর্মকে স্বীকার না করে থাকেন, তাহলে এই আর্টিক্যালটি পড়ার পরে বৈদিক ধর্মকে স্বীকার করে নিতে আপনি বাধ্য হবেন । মূলত আমাদের মাঝে প্রায় প্রত্যেকেই ইতিমধ্যে বৈদিক ধর্মের প্রতি অনুগত আছে, তা আমরা পরিষ্কার ভাষায় স্বীকার করি আর নাই বা করি । এই পুরো আর্টিক্যালটি অনস্বীকার্যকে অস্বীকার করার পরিবর্তে আপনার ভেতরের সত্যের সাথে সাংঘর্ষিকহীন ভাবে মিলন ঘটিয়ে দিতে আপনাকে প্রেরণা দেবে ।

ধর্ম (Religion) কি ?

প্রথমেই আমরা জেনে নেই আসলে Religion কি । প্রথাগত ও প্রচলিত ধারণা হচ্ছে, Religion হলো একটি বিশ্বাস বা একটি নির্দিষ্ট বিশ্বাস ব্যাবস্থা যা বিপুল সংখ্যক মানুষ পালন করে, এবং যে বিশ্বাসে জন্ম, মৃত্যু, ইহকাল, পরকাল, নবী রাসুল, অবতার, দেবদেবী ও এই সংক্রান্ত বিষয়াদি যুক্ত রয়েছে ৷ এটাই যদি ধর্ম বা Religion এর সংজ্ঞা হয় তাহলে বৈদিক ধর্ম বরং অন্য কিছু হবে, কিন্তু ধর্ম (Religion) হবেনা ।
সে যাই হোক, যদি আমরা ব্যুৎপত্তিগত ভাবে “religion” শব্দের মানে খোঁজার চেষ্টা করি তাহলে আমরা পাই, শব্দটি দুটো শব্দ দ্বারা গঠিত, “Re” এবং “Legion”। “Re” এর অর্থ হচ্ছে “again” অর্থাৎ "আবার" এবং “Legion” এর অর্থ হচ্ছে “joining or connecting” বা “সংযুক্ত” ৷ সুতরাং Religion এর অর্থ দাঁড়ায়, যা মূল উৎসের সাথে যোগ বা সংযুক্ত করার পদ্ধতি বা উপায় বা পন্থা ৷ এই অর্থটির সাথে “যোগ” শব্দটির খুবই কাছাকাছি মিল রয়েছে ! আমরা দেখাব Religin বা ধর্মের অর্থ যদি এটাই হয়ে থাকে, তাহলে বৈদিক ধর্ম বা Vedic Religion হচ্ছে নিশ্চিত রূপে একটি আসল ধর্ম । Religion বা ধর্ম শব্দটির অর্থ নিয়ে বিরুদ্ধবাদীদের ভিন্ন ব্যাখ্যা ও দৃষ্টি ভঙ্গি থাকতে পারে সেটা আমি তাদের ওপরই ছেড়ে দিলাম ৷ আমি সেই বিষয়ে কোন মন্তব্য করব না । এই লেখাটি কেবল বৈদিক ধর্মকে বোঝা এবং এর উপায়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখব এবং একই সাথে সাংঘর্ষিকহীন ভাবে আপনাকে বৈদিক ধর্মের প্রবক্তায় রূপান্তরিত করবো ।

(বিঃদ্রঃ ভাষাবিদগণ হয়তো তর্ক করতে পারেন যে, ব্যুৎপত্তিগতভাবে “Religion” শব্দটির ভিন্ন অর্থ রয়েছে । কিন্তু সেটা আমাদের মনোযোগের বিষয় নয় ৷ আমাদের আনুগত্য শব্দের প্রতি নয় বরং এর সার বা ভাবের প্রতি । আপনি চাইলে একে ভিন্ন শব্দ দ্বারা উপস্থাপন করতে পারেন । আমরা “Religion” শব্দটা ব্যাবহার করেছি কারন এটাই বহুল প্রচলিত এবং সকলেই এ শব্দটা সহজে বুজতে পারে । আর যারা ভারতীয় সংস্কৃতির সাথে পরিচিত তাদের কাছে “ধর্ম” শব্দটি যর্থাথ বিষয়টিকে উপস্থাপিত করা জন্য । ধর্ম শব্দের অর্থ হচ্ছে সহজাত গুণাবলি বা বৈশিষ্ট্য । আমরা এই বিষয়টিকে নিয়ে পরবর্তীতে আলোচনা করবো ।)

বৈদিক ধর্ম বলতে কি বোঝায় ?

আসুন কিছু বহুল প্রচলিত ভুল উত্তর দিয়ে শুরু করি ।
উত্তর ১: বৈদিক ধর্ম হচ্ছে হিন্দুত্ববাদ ।
উত্তর ২: বৈদিক ধর্ম হচ্ছে চারটি বেদকে প্রবিত্র ধর্মগ্রন্থ বলে বিবেচনা করা যেমন করে মুসলিমগন কুরানকে এবং খ্রিস্টানগন বাইবেলকে বিবেচনা করে ।
উত্তর ৩: বৈদিক ধর্ম অর্থ হচ্ছে চার বেদকে অনুসরণ করা যেমন করে মুসলিমরা কুরানের প্রতিটি অক্ষর
এবং খ্রিস্টানরা বাইবেলের প্রতিটি অক্ষর পালন করার চেষ্টা করে ।
উত্তর ৪: বৈদিক ধর্ম হচ্ছে আর্য সমাজকে অনুসরণ করা ।
উত্তর ৫: বৈদিক ধর্ম হচ্ছে সান্ধ্যকৃত, যজ্ঞ ইত্যাদি করা ।

সঠিক উত্তরটি হলোঃ
"সত্য ন্যায়নিষ্ঠ ভাবে সর্বোচ্চ সামর্থ ও প্রচেষ্টা দিয়ে প্রতিটি মুহুর্তে অবিশ্রান্ত প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে মিথ্যাকে বর্জন করে সত্যকে স্বীকার করাই হচ্ছে বৈদিক ধর্ম।"

যর্জুবেদ ১/৫ বিষয়টি আরো সুন্দর ভাবে বর্ননা করা হয়েছেঃ
“হে সর্ব শক্তিমান পৃথিবী পালনকর্তা! তুমি করেছো অপরিবর্তনীয় নিয়ম যা সর্বক্ষন সামান্যতম পরিবর্তন না হয়ে অপরিবর্তীত থাকবে । আমি যেন তোমারই কাছে প্রেরণা অন্বেষণ করি যাতে আমার জীবনের আদর্শের প্রতি অকাতর ভাবে দৃঢ় থাকতে পারি । এইরূপে আমি সংকল্প করছি আমার সর্বোচ্চ সামর্থ, অভিপ্রায় এবং প্রচেষ্টা দিয়ে প্রতিটি মুহূর্তে আমার জীবন থেকে মিথ্যাকে সরিয়ে আমি অবিচল ভাবে সত্যের সন্ধান করব । আমি যেন আমার এই মহান সিদ্ধান্তে সফল হতে পারি ।”

এটাই হলো সমস্ত বৈদিক ধর্মের মূল কথা ৷ এটা হলো শুরু । আর অন্য সকল কিছু হলো আনুষঙ্গিক অথবা উপ-সিদ্ধান্ত ৷ যদি এই অন্তরআত্মা কারো মধ্যে বর্তমান থাকে তাহলে সে বৈদিক ধর্মের অনুসারী ৷ যদি তা অনুপস্থিত থাকে কিন্তু অন্য সকল কিছু উপস্থিত থাকে তাহলেও তা বৈদিক ধর্ম হবে না ।

লক্ষ্য করুন মিথ্যার শ্বাসমূলকে বর্জন করা হচ্ছে সকল মানব জাতির মূলনীতি । আমরা এই সামর্থটি ছাড়া বাঁচতে পারব না । এই মূলনীতি আমাদেরকে হাঁটতে, কথাবলতে, শিক্ষা অন্বেষণ করতে, নতুন নতুন আবিষ্কার করতে এবং জীবনে সমৃদ্ধি ও উন্নতি অন্বেষণ করা শিখতে অনুপ্রেরণা দেয় ৷ আমরা অবচেতনভাবে তা জানি অথবা না জানি, প্রকাশ্যে স্বীকার করি আর নাইবা করি, সত্যিকার অর্থে আমরা সকলেই বেঁচে আছি কারন আমরা বৈদিক ধর্ম অনুসরণ করছি বলে ৷ ধর্ম হচ্ছে সহজাত বৈশিষ্ট্য বা গুণাবলী । বিভিন্ন Cult বা বিশ্বাসের মত ধর্ম নয় এবং তা চাপানো যায় না । এটা হচ্ছে সহজাত এবং জন্মগত । এইভাবে সত্যকে সন্ধান
করাটাই হচ্ছে আমাদের সকলের সহজাত প্রবৃত্তি এবং মূল ব্যাপারটি হচ্ছে আমাদের জীবনে আমরা পরোক্ষভাবে বৈদিক ধর্ম পালন করছি ।
সুতরাং আমরা যা বলতে চাচ্ছি তা হলো, বৈদিক ধর্ম গ্রহণ করার অর্থ হচ্ছে অস্বীকার করা বন্ধ করা, যা আপনি করছেন । শুধুমাত্র চিৎকার করা বন্ধ করুন যেখানে আপনি নিজেই গভীর নিদ্রায় আচ্ছন্ন আছেন অথচ বাস্তবতা হলো আপনি ভান করছেন আপনি ঘুমিয়ে নেই । এবং তার পরিবর্তে আপনি প্রভাত রবির কিরণের শক্তি, সাহস ও উদ্দীপনাকে স্বাগতম জানান যা আপনার মাঝেই রয়েছে!


সত্য ও মিথ্যা কি?
এই প্রশ্নের উত্তর অনুসন্ধান করার পূর্বে আসুন আমরা প্রথমে জেনে নেই সত্য ও মিথ্যা বলতে আমরা কি বুঝি । এটা খুবই গুরুত্বপূর্ন কারন সকল বিশ্বাসী গোষ্ঠী “সত্য” এর কপিরাইটের এক চেটিয়া দাবী করে থাকে । কেউ কেউ আবার এই ব্যাপারে সাংঘাতিক রকমের মালিকানা সূচক আচরণ করে এবং এমনকি তাদের
সম্প্রদায়ের কেউ এই সত্যকে প্রত্যাখ্যান করলে তাদের মৃত্যু পর্যন্ত কামনা করে থাকে । শুনতে মানসিক বিকারগ্রস্থ ভূতের মত মনে হয় । আমি একটি ভৌতিক ছায়াছবি দেখেছিলাম যেখানে এক মানসিক বিকার গ্রস্থ ব্যাক্তি তার শিকারকে Option বাছাই করতে বলছে, হয় আমার হাতে মর অথবা আমার অধীনে চলে এসো!
বৈদিক সত্য হচ্ছে অধিকতর “সৎ” । “বেদ” শব্দটি গ্রহণ করা হয়েছে একটি মূল থেকে যার অর্থ হচ্ছে “জ্ঞান” । সুতরাং বৈদিক সত্য বলতে এটা বোঝায় না, আমি
যাই বলব তোমাকে সেটা বিশ্বাস করতে হবে কারন আমি সত্যের বৈধ লাইসেন্স ধারী । শুধু মাত্র একটি গ্রন্থ অথবা কোন নবী অথবা কোন অবতার অথবা কোন
জন নন্দিত ব্যাক্তি অথবা কোন টিভি চ্যানেল দাবী করেছে বলেই কোন যাচাই বাছাই না করে কোন কিছুকে সত্য বলে গ্রহণ করা কারো উচিত নয় ৷
বৈদিক সত্য বলতে বুঝায় যে আপনি কোন কিছু মেনে নেবেন ঠিক যেভাবে আসলে সেটা রয়েছে এবং পরিবর্তীতে সেই অনুযায়ী আচরণ করবেন ৷ বৈদিক সত্য মানে হচ্ছে আপনি কোন কিছু মেনে
নেবেন শুধুমাত্র তখনই যখন সেটা যুক্তিযুক্ত, নিয়মাবদ্ধ, স্ববিরোধিহীন এবং সর্বোপরি এটা আপনার অন্তঃ কণ্ঠস্বরের (Inner Voice) সাথে মিল রাখে । সত্যের নিরিখগুলো না করে যদি কেউ কোন কিছুকে সত্য বলে মেনে নেয় তাহলে তাই হবে মিথ্যা ।

উদাহরণ স্বরূপ যদি আমি দাবী করি যে আমি হচ্ছি মহান সৃষ্টিকর্তার প্রেরিত দূত এবং আমি এই আর্টিক্যালে যা কিছু লিখছি তা অন্ধের মত বিশ্বাস করার মধ্য দিয়ে মানুষ সকল প্রকার দুঃখ, দুর্দশা থেকে মুক্তি পাবে এবং স্বর্গ লাভ করবে, তাহলে আপনাকে বিভিন্ন ভাবে আমার দাবীকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পরীক্ষা করে দেখতে হবে । যেমনঃ
১। অন্য কেউ যদি এই একই রকম দাবী করে থাকে তাহলে কি হবে ? তাহলে আমি কিভাবে সিদ্ধান্ত নেবো কোনটি সঠিক আর কোনটি ভুল ৷
২। এই আর্টিক্যালে যা কিছু আছে সবই কি প্রশ্নাতীত ? এটা কি কালে এবং স্থানে কোন পরিবর্তন হয় না ?
৩। এই আর্টিক্যালটি লেখার আগে যাদের মৃত্যু ঘটেছে তাদের কি হয়েছিল ? কেন তারা বাসটি ধরতে ব্যার্থ হলো ?
৪। এই আর্টিক্যালে এমন কোন কিছু কি আছে যা ভুল ?
৫। যদি এই আর্টিক্যাল অনুসরণই একমাত্র স্বর্গে যাবার রাস্তা হয় তাহলে কেন (ঈশ্বর) আমাকে ভিন্ন মস্তিষ্ক দিলেন যা দ্বারা আমি চিন্তা করতে ও বিশ্লেষণ করতে পারি ? ইত্যাদি ইত্যাদি ।

সুতরাং আপনি এখানে উপসংহার টানতে পারেন, যখন এই ওয়েব সাইটটিতে অনেক গুরুত্ব পূর্ন এবং প্রয়োজনীয় তথ্য রয়েছে, তারপরেও আমাকে একজন ঈশ্বরের দূত হিসেবে মেনে নেয়াটা আপনার জন্য খুবই অপরিপক্কতার মনোভাব হবে । একজন বুদ্ধিদীপ্ত বিচক্ষণ বৈদিক ধর্মের অনুসারী হিসেবে আপনি এই ওয়েব সাইট যা কিছু ভাল তা মেনে নেবেন এবং বাকীগুলো মেনে নেবেন না । এবং যদি আপনি আরও বুদ্ধিদীপ্ত ও বিচক্ষণ হন তাহলে আপনি এই ওয়েব
সাইটে যা দাবী করেছে তা সবই প্রত্যাখান করবেন এবং যদি আপনি যুক্তি সংগত ভাবে উপসংহার টানতে পারেন অন্যান্য উৎসগুলো এই সাইট থেকে অধিকতর ভালো তাহলে অন্য উৎস থেকে জ্ঞান অন্বেষণ করবেন ৷
কিন্তু বৈদিক সত্য বলতে আবার এটাও বুঝায় না, আপনি সব কিছুর উপর মাত্রাতিরিক্ত সন্দেহ প্রবণ হবেন এবং আপনি সত্য বলে শুধু সেটাই মেনে নেবেন যা আপনি নিজে সরাসরি যাচাই করতে পারেন । কেউ যদি শুধু ইন্দ্রিয় (Sense Organ) দ্বারা সনাক্ত করা যায় এমন কিছুকেই কেবল বিশ্বাস করা শুরু করে, তাহলে তার জ্ঞান অর্জন করতে দীর্ঘ সময়ের দরকার হবে আর কেউই অত দীর্ঘদিন বেঁচে থাকে না । প্রত্যেককে অবশ্যই যুক্তি, ব্যাখ্যা, বিরুদ্ধ বিশ্লেষণ, এবং বিচার বিবেচনার অনুষদগুলো ব্যাবহার করতে হবে যা আমাদের মানুষ হিসেবে তৈরী করবে !
একটি উদাহরণ দিয়ে বলি, যদি আপনি নিয়মিত গাড়ি চালান, এবং গাড়িটি চলতি মাঝপথে থেমে যাবে না বা অকেজো হয়ে যাবে না এটা নিশ্চিত হবার জন্য আপনি যদি প্রতিবার গাড়ির ইঞ্জিন চালু করার পূর্বে প্রায় ৬ ঘণ্টা ধরে পরীক্ষা করেন, তাহলে বিষয়টি প্রবল অদক্ষতারই সামিল হবে । বরং আপনি যেটা করবেন সেটা হলো আপনি গাড়িটির অতীত ইতিহাস অর্থাৎ ট্র্যাক রেকর্ডগুলো দেখবেন, নিয়মিত সেটার রক্ষণাবেক্ষণ করবেন এবং আপনার যাত্রা উপভোগ করবেন । সেটা না করে যদি আপনি মাত্রাতিরিক্ত সন্দেহ করেন তাহলে সেটাকে paranoia অর্থাৎ মস্তিষ্ক বিকৃত বিশেষ রোগ বলা হবে ৷
বৈদিক ধর্ম চায় আমরা যেন একজন সফল কোম্পানির চটপটে তীক্ষ্ণ ব্যাবস্থাপকের মত হই, যিনি একদিকে সহজ-সরল নন যে যা বোঝাবে তাই বুঝবে আবার ঐ Pananoid রোগীর মতও নন, যারা তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়াহীন ভাবে (Proactively) কোন কিছু থেকে লাভ, উপকার, মুনাফা আশা করেন ৷ কোনো কিছু তাকে তখনই মুনাফা দেবে বা দিতে পারে যদি সে সেটার সর্বোৎকৃষ্ট বিশ্লেষণ করতে পারে এবং পূর্বে তার কোন বিচার, সিদ্ধান্ত যদি ভুল হয় তা বর্জন করার মানসিকতা থাকে ।
বৈদিক ধর্মের উপ সিদ্ধান্ত সমূহঃ
উপরে উল্লেখিত বৈদিক ধর্মের মানদণ্ড গুলো হচ্ছে স্বতঃসিদ্ধ সত্য । একবার এই স্বতঃসিদ্ধ সত্যটি উপলব্ধি করতে পারলে অন্যান্য উপ সিদ্ধান্তগুলো সময়ের সাথে সাথে আত্মভুত হতে থাকবে । বিষয়টি অনেকটা গণিত শাস্ত্রের স্বতঃসিদ্ধ সুত্রগুলোর মত ৷ একবার যদি এগুলোকে সেট করা হয় তখন অন্যান্য বিশেষ জ্ঞানগুলো (যেমনঃ পাটিগণিত, বীজগণিত, ত্রিকোনমিতি, ক্যালকুলাস) আপনা আপনি তৈরী হতে থাকবে । তাত্ত্বিক ভাবে বলা যায়, পৃথিবীর যেকোনো উৎসুক ব্যাক্তি নিজে নিজে চেষ্টা করেই গণিত শাস্ত্র সম্পর্কিত জ্ঞানার্জন করতে পারেন এবং সকল নিত্য নতুন তত্ত্ব উপাত্তগুলো নিজের মাঝে আত্মস্থ করতে পারেন ৷ কিন্তু এই যাত্রার পথ খুবই দীর্ঘ হবে এবং পরিশ্রম ও ক্লান্তিকরও হবে । তাছাড়া এই পুরো বিষয়টি আবার পুনরাবিষ্কার করে আত্মস্থ করে বর্তমান অবস্থায় পৌছতে তার যে সময়ের দরকার সেটা এক জীবনের আয়ুষ্কালে সম্ভব নয় ৷ তাই একজন সুবিবেচক মানুষ তার সন্তানকে স্কুলে পাঠায় যাতে সে এই স্বতঃসিদ্ধ বিষয়গুলো খুব দ্রুত শিখতে পারে । বিষয়টা ঐ কুইজ প্রতিযোগীতা বা বি.সি.এস পরীক্ষার মত নয় যেখানে একজন লোক গণিত শাস্ত্রের সমস্ত সূত্রগুলোকে ঠেসে মুখস্ত করে আর পরীক্ষার খাতায় সবটা উগড়ে দিয়ে মস্ত গণিতবিদ হয়ে যায় । হ্যাঁ এটা করে সে হয়তো পরীক্ষা পাস করতে পারে কিন্তু এটাই কিন্তু তার লক্ষ্য নয় । একজন গণিতবিদ তিনিই হবেন যিনি বুঝতে পারেন (a+b)^2 = a^2 + b^2 + 2ab এই সূত্রটিকে কিভাবে যথাযথভাবে ব্যাবহার করবেন । অধিকন্তু প্রত্যেকেরই সম্পূর্ন অধিকার রয়েছে গণিত বইয়ের কোন গাণিতিক উৎপত্তিকে ভুল প্রমাণ করা যদি সেখানে ছাপাগত বা অন্য কোন ভুল থেকে থাকে । তবে এটা করতে হলে শুধু মুখস্থ বিদ্যাই যথেষ্ট নয় এর প্রায়োগিক দক্ষতাও দরকার ৷ আর বৈদিকধর্ম ঠিক এটাই চায় ৷
এবং এই ভাবে পালন করাই হচ্ছে বৈদিক ধর্ম ৷ শিক্ষার প্রতিটি স্তরকে পরীক্ষা করুন এর সত্যতা জানার জন্য এবং সামনে এগিয়ে যান । এতে আপনি শুধু মাত্র
গনিতের প্রাথমিক বা Basic এর উপর ভাল দক্ষই হবেন না পরবর্তীতে এমনকি উন্নত ক্যালকুলাস শিখতে পারবেন!
এছাড়াও সহজেই জননন্দিতভাবে বেদ অথবা বৈদিক ধর্মকে অনুধাবন করা যায়, এই ধর্ম অনেক বিস্তৃত । আমরা বৈদিক ধর্মকে বিশ্বাস করার জন্য জোর করছি না বা বল প্রয়োগ করছি না ৷ এটা আপেক্ষিকতাবাদ এবং গতির সূত্রের মত । আপনি যেকোনো সময় এগুলোর সর্বোচ্চ যথাযথভাবে ব্যাবহার করতে পারেন কিন্তু এগুলোকে অন্ধের মত বিশ্বাস করতে পারেন না ৷ আপনি এগুলোকে প্রত্যাখান করতে পারেন বা বিরোধিতা করতে পারেন যদি আপনি সত্য সত্যই মনে করেন যে আপনার সামর্থ এবং একনিষ্টতা সর্বোৎকৃষ্ট । তারপরেও অর্থাৎ এগুলোকে প্রত্যাখান করে ও বিরোধীতা করেও আপনি বৈদিক ধর্মই পালন করছেন ।
এখানে এই সকল সংযোজিত অংশের বিভিন্ন ধাপ রয়েছে । তার মধ্যে কয়েকটি একেবারে অনস্বীকার্য এবং স্বজ্ঞানলব্ধ, কতগুলো আরও বিশ্লেষণ ও অর্ন্তদৃষ্টি প্রয়োজন, এবং কিছু কিছু আছে যেগুলো গবেষণা স্তরের বিষয়, এগুলোর ব্যাপারে বিজ্ঞজনদের মাঝে মতান্তর আছে ৷ এটা স্কুল থেকে PhD পর্যন্ত শিক্ষানীতির মত । এখন এই ধরনের কিছু সংযোজিত অংশের উদাহরণ দেয়া হলঃ
-সত্য সুখের দিকে ধাবিত করে আর মিথ্যা দুঃখ দূর্দশাই বয়ে আনে।
- মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে কেউ সুখের সন্ধান করলে পরিণামে দুঃখই পেতে হয় পাশাপাশি শাস্তিও পেতে হয় ।
-মানুষজাতি অবশ্যই পৃথিবীর জন্য প্রতিক্রিয়াহীন ভাবে সুখের অন্বেষণ করবে । সুখ ভাগাভাগির মাধ্যমেই তা বৃদ্ধি পায় ।
- কর্মের নিয়ম বা আইন অপরিবর্তীত এবং প্রতিটি মূহুর্তেই তা কার্যকর ৷ আপনার চিন্তাই বাস্তবে রূপ দেবে ৷
- আত্মা অমর এবং কর্মের নিয়মানুযায়ী এর ফল ভোগ করতে হবে ।
- একজন সর্বশক্তিমান রয়েছেন যিনি এই অপরিবর্তনীয় নিয়মের মাধ্যমেই পৃথিবীকে পালন করেন ।
- চারটি বেদে রয়েছে পরম সত্য সেই ঈশ্বরের বিধান ৷
-মানুষকে অবশ্যই পুণ্য আত্মায় বিকশিত হতে হবে, ভারসাম্যহীন বৃদ্ধিতে নয়।
অনস্বীকার্য সিদ্ধান্তসুমহের যা সবর্জন বিদিত তা নিয়ে আমরা ভবিষ্যতে আরো বিশদ আলোচনা করব ।
লক্ষ্য করুন এই সকলই হচ্ছে সংযোজিত অংশ বা সম্পূরক । এগুলো বিশ্বাস না করলে কাউকে শাস্তি ভোগ করতে হবে না কারন আপনার বর্তমান জ্ঞান, অভিজ্ঞতা, অভ্যাস, এবং অনুভূতির জন্য বিষয়গুলো আপনি মেনে নিতে বা বিশ্বাস করতে পারছেন না । আপনি ঠিক তখনই এর মন্দ ফলটা ভোগ করবেন যখন আপনার কাছে এগুলো স্বজ্ঞাত ও অনস্বীকার্য হয়েছে অথচ আপনি ইচ্ছাকৃত ভাবে এই নিগুঢ় সত্যগুলোকে অস্বীকার করছেন ৷ এবং একই সাথে আপনি আরো অধিকতর জ্ঞানার্জন করতে, ভালো কিছু করতে এবং আপনার চিন্তাধারা বিকশিত করতে অস্বীকার করবেন ।
একইভাবে আপনি তখনই বৈদিক ধর্ম অনুসরণ করবেন না, যখন আপনি ইচ্ছাকৃত ভাবে জেনে শুনে অপকর্ম করছেন ৷ এতে করে আসলে আপনি আপনার বিবেককে উপেক্ষা করছেন । তার জ্বলন্ত উদাহরণ হচ্ছে একজন দূর্নীতি পরায়ণ রাজনীতিবিদ, অসাধু ব্যবসায়ী, ধর্ষক, খুনী ইত্যাদি । তারা অনেকেই জানে তারা অপকর্ম করছে কিন্তু তবু তারা নিজেকে নিরস্ত করে না ৷ আমরা যখন কাজে ও কথায় লোভ, স্বার্থপরতা, লালসা, ক্রোধের কাছে বশ্যতা স্বীকার করি, এমনকি মনে মনেও যদি তা করে থাকি তাহলেও এটি হচ্ছে অপকর্মের সত্যিকারে উদাহরণ ৷ যদিও আমরা এই অপকর্ম অন্যের কাছে লুকিয়ে রাখি, কিন্তু এটা অপকর্মই । প্রতি দিন আমাদের জীবনের বিভিন্ন স্তরে বিভিন্ন মাত্রায় আমরা বৈদিক ধর্ম পালন করি ৷ আমরা সব ক্ষেত্রেই সর্বক্ষন ১০০ নম্বর পেতে পারি না ৷ বেশীর ভাগই অনেক কম নম্বর পাই ৷ কিন্তু এই কম নাম্বার পাওয়া আমাদেরকে কম বৈদিক করে না । আমরা ততক্ষণ পর্যন্ত বৈদিক যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা হোঁচট খেয়ে পড়ে গিয়ে আবার উঠে দাঁড়াবার জন্য দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হই । হোঁচট খাওয়া কোন পাপ নয় । আমরা ব্যার্থ হই আমাদের সকল সম্মিলিত কর্ম, চিন্তাধারা, এবং অতীত অভ্যাসের দরুন ৷ আর কর্মফল অনুযায়ী এ ব্যার্থতা আমাদের প্রাপ্য ৷ কিন্তু এই মুহুর্তে আমাদের কাছে দুটি পথ খোলা আছে
-হয় ব্যার্থতাকে সাথে নিয়ে চলা নয়তো উঠে দাঁড়াবার সংকল্প করা । আপনার হয়তো আজ নিজেকে তুলে ওঠানোর সামর্থ নেই কিন্তু পথতো বন্ধ হয়ে
যায়নি । হয় আপনি নিজেকে টেনে ওঠানোর চেষ্টা থেকে বিরত থাকবেন নয়তো আরও শক্তিশালী হবার সুযোগের দিকে ধাবিত হবেন আগামীতে উঠে
দাঁড়াবার জন্য । অন্তত হাঁটুতে ভর করে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবেন এবং নিজেকে যত শীঘ্রই সম্ভব একজন শক্তিশালী মানবে রূপান্তর করবেন! স্রেফ তাহলেই আপনিও বৈদিক ধর্মের অনুসারী হবেন ।
ওঁ শান্তি শান্তি শান্তি

Post a Comment

4Comments
  1. Excellent discussion
    ��️ শান্তি শান্তি শান্তি ��

    ReplyDelete
  2. ও৩ম্ শান্তি শান্তি শান্তি

    ReplyDelete
Post a Comment