১) অধিকাংশ মানুষ মনে কর ধর্ম হচ্ছে কিছু বিশ্বাসের সমষ্টিমাত্র।
২) নাস্তিকদের মতে ধর্ম হচ্ছে সেকেলে একটি জিনিস, যা শেখায় কেবল অন্ধবিশ্বাস আর কুসংস্কার। যত কিছু খারাপ তার সবের উৎপত্তি নাকি ধর্ম থেকে!
ধর্ম একটি সংস্কৃত শব্দ, যার উৎপত্তি সংস্কৃত ধাতু ‘ধৃ’ হতে যার অর্থ ধারণ করা। অর্থাৎ যে বস্তু যে বৈশিষ্ট্য ধারণ করে তাই ঐ বস্তুর ধর্ম। যেমন: আগুনের ধর্ম তাপ, বরফের ধর্ম শৈত্য ইত্যাদি। তেমনি মানুষের ধর্ম মনুষ্যত্ব। এই মনুষ্যত্বের মাঝে কী কোনো অন্ধবিশ্বাস আছে?
বৈশেষিক দর্শনে কণাদ মুনি ধর্মের সঙ্গা দিয়েছেন এভাবে,
‘য়তো অভ্যুদয় নিঃশ্রেয়সসিদ্ধিঃ স ধর্ম’
বৈশেষিক দর্শন ১ম অধ্যায়, ১ম আহ্নিক, ২য় সূত্র
বৈশেষিক দর্শন ১ম অধ্যায়, ১ম আহ্নিক, ২য় সূত্র
অর্থাৎ যা দ্বারা যথার্থ উন্নতি এবং পরম কল্যাণ লাভ হয় তাই ধর্ম।
তাহলে আপনারা দেখতেই পাচ্ছেন ধর্মের দ্বারা কেবল আমাদের উন্নতি নয়, জগতের কল্যাণও নিহিত আছে ধর্মের মাঝে। ধর্ম কোনো বিশ্বাস, অপবিশ্বাস বা অন্ধবিশ্বাসের সমষ্টি নয়। আমরা যদি ধর্মের লক্ষণগুলো দেখি তবে তা আরো স্পষ্ট হবে।
মনুস্মৃতির ৬ষ্ঠ অধ্যায়ের ৯২তম শ্লোকে ধর্মের লক্ষণ বর্ণিত আছে,
ধৃতিঃ ক্ষমা দমোস্তেয় শৌচমিন্দ্রিয়নিগ্রহঃ
ধীর্বিদ্যা সত্যমক্রোধো দশকং ধর্মলক্ষণম্।
অর্থাৎ, ধৃতি(যা পেয়েছ তাতেই সন্তুষ্ট থাকা), ক্ষমা, দম(আত্ম নিয়ন্ত্রণ), অস্তেয়(অনৈতিক বিষয় হতে বিরত থাকা), শুচিতা, ইন্দ্রিয় নিগ্রহ(ইন্দ্রিয়সমূহকে লোভ্য বস্তু থেকে বিরত রাখা), ধী(বুদ্ধি), বিদ্যা, সততা, অক্রোধ(রাগ বা ক্রোধ না থাকা) এই দশটি হচ্ছে ধর্মের লক্ষণ।
এখানে কোনো অন্ধবিশ্বাস বা কুসংস্কার পেয়েছেন কেও। বরং এই দশটি লক্ষণ অর্জন করলে আপনি প্রকৃত মানুষ হয়ে উঠবেন। তবেই আপনার ও জগতের পরম কল্যাণ ও উন্নতি সাধিত হবে।
তাই যারা ঘুম থেকে উঠে ঘুমুতে যাবার আগ পর্যন্ত কেবল ধর্মকে গালাগাল করে তারা জানেই না ধর্ম কী! তাই বলি আগে জানুন ধর্মকে। ধর্ম ছাড়া এ জগতের কল্যাণ বা উন্নতি সম্ভব নয়।
ঈশ্বর সকলের মঙ্গল করুন
ওঁ শান্তি! শান্তি!! শান্তি!!!
ধর্ম আর অধর্ম বাস্তবে কি?
ReplyDeleteএবং বৈশিষ্ট্য বা প্রথা পরম্পরা বা কিতাব গ্রন্থ আইন শৃঙ্খলা ইত্যাদি কি?
হিন্দু, মুসলিম, বোদ্ধ, খ্রিষ্টান, ইয়াজিদি,দ্রুজ, শাক্ত, ইহুদি, বাহাই, কনফুসিয়াস,ইত্যাদি ৪২০০ এরও উপরে যাহা আছে এগুলোর একটাও ধর্ম নয়।
এগুলোকে আসলে প্রথা, পরম্পরা, কিতাব, গ্রন্থ, আইন , শৃঙ্খলা, ইত্যাদি মৃতচিন্তা। তবে এই সকল প্রথা পরম্পরার ভিতর ধর্ম থাকে কিন্তু সময়ের ফ্যারে সকল প্রথা পরম্পরা ধর্ম নয়।
যেমন পাথরের ভিতর ভাস্কর্য থাকে কিন্তু সমস্ত পাথর ভাস্কর্য নয়। এবং সময়ে ফ্যারে সেই ভাস্কর্য বা মূর্তি ক্ষয়ে ও যায়। তখন সেটা আবার সংস্কার করতে হয় এবং যদি আর সংস্করণ করার উপযোগী না থাকে তাহলে আবার প্রকৃতিতই মিশে যায়।
অতএব,
বাস্তব উপলব্ধিতে সত্য হলো এটাই যে,
ধর্ম এবং সৃষ্টিকর্তা সকলের জন্য এক এবং নিরপেক্ষ এবং অবিনশ্বর। আর এই অবিনশ্বর বোঝাতে স্থান, কাল,পাত্র, ভেদে ভিন্ন শব্দ হতে পারে, কিন্তু ইন্টার মানেটা এক হতে হবে।
যেমন,
জল,পানি, ওয়াটার ইত্যাদি হাজারো শব্দ আছে যাহা দারা H₂O কেই প্রকাশ করে। এবং সেটা সকলের জন্য এক। এবং তাহা সকলের আত্মায় প্রসিদ্ধ।
তেমনি সকল কিছু অবিনশ্বর বা চিরন্তনকে আমি সনাতন বলি। এবং সনাতনের আত্মস্থ গুনকে আমি চিরন্তন বা অক্ষয় ধর্ম বলি। আর সেই সনাতন মানে চিরন্তন, যা আছে, ছিল এবং থাকবে। এবং এই সনাতনের কোন ক্ষয় নেই। শুধু রূপান্তর হয়। যেমন সনাতন নতুন পুরাতন আবার সনাতন। অর্থাৎ
সোনা(সনাতন),
প্রয়োজন ও রুচি অনুপাতে সোনার বিভিন্ন অলংকার(নতুন),
এবং কালক্রমে সেই অলংকার গুলো হয় ব্যাক ডেটেট, (বা পুরাতন)
আর সেই পুরাতন অলংকার গুলোকে গলিয়ে প্রক্রিয়াজাত করলে আবার সেই সোনা, (মানে সনাতন। )
আর এই সনাতন, নতুন, পুরাতন ও সনাতনের জন্ম গত ভিন্ন বৈশিষ্ট্য হতে যে জ্ঞান অর্জন হয়, সেই জ্ঞানকে জীব স্মৃতিতে ধারণ করে। এবং সেই ধারন কৃত স্মৃতির জ্ঞানকে জীব যে চিন্তায় স্থীর হয়ে সমস্ত দৃষ্টিকোণ বিচারে সমাজের কল্যাণ সাধন করে, সেই দৃঢ় সু-চিন্তাকে ধর্ম বলে। আর যারা এই মঙ্গলের চিন্তা মস্তিষ্কে ধারনকরে ভুল বশত ভুলগুলো শুধরে শুধরে মিলেমিশে একাত্ম হয়ে জীবন পরিচালনা করে, তারাই সাত্ত্বিক ধার্মিক।
আর জীব যখন লোভ লালসা, ভয়, অহংকার, আসক্ত বা কোন কিছুর দারা সম্মোহিত বা প্রভাবিত হয়ে হুবুহু অনুকরণ বা অনুসরণ করে এবং জাগ্রত জ্ঞানে বর্তমানের বাস্তবিক উপলব্ধিগত বিরূপ পরিস্থিতির কোন তোয়াক্কা করে না,এবং জেনে বুঝে জাগ্রত জ্ঞানে বিশ্বাসী না হয়ে অজ্ঞানতা বশত অন্ধ অনুকরণ করে অন্ধবিশ্বাসী হয় এবং হুবহু মৃতচিন্তায় আসক্ত হয়ে মৃতের ন্যায় জীবন অতিবাহিত করে অজ্ঞানতায় আন্দাজে সমাজের ভাল মন্দ সাধন করে তাঁদের কে অধার্মিক বলে।
অর্থাৎ, যে চিন্তায় জীব বিবেকবুদ্ধিকে বিসর্জন দিয়ে স্বার্থে বা মোহে বশীভূত হয়ে সকলের অমঙ্গল সাধিত করে সেই চিন্তা কেই অধর্ম বলে।
আর অজ্ঞানতায় আসক্ত হয়ে যারা এই চিন্তাকে ধারন করে সমাজের জেনে না জেনে বা বুঝে বা না বুঝে অকল্যাণ সাধন করে তারাই অধার্মিক।
এরপরও যদি না বোঝেন এবং স্বয়ং স্ব জ্ঞানে জাগ্রত না হন তাহলে বাকিটা আপনার সিদ্ধান্ত।
জলের পাত্রে পানি মেশাবেন নাকি লবন মেশাবেন। তবে হ্যা একবার সিদ্ধান্তের কার্জ সম্পন্ন হয়ে গেলে আর সেটাকে ফেরাতে পারবেনা। যেমন ফেরানো যায়না উচ্চারিত বাক্য এবং নিক্ষেপ করা তীর।
তাই
ভাবিয়া করিও, করিয়া ভাবিও না। অতএব, করিয়া না ভাবিয়া ভুল শিকার করে ক্ষমা চেয়ে বা প্রায়শ্চিত্ত করে নিজেকে শুধরে শুধরে সমষ্টিগত দৃষ্টিকোণ বিচারে সমাজ সংসারের কল্যাণ হয় এমন কার্জে দৃঢ় হই।
স্বয়ং নীরক্ষণ করে জেনে বুঝে বিচার করে উপলব্ধি করে দেখুন।
ধর্মের সূত্র অসাধারণ লেগেছে।ব্যুৎপত্তি নির্ণয় করে যেভাবে বিশ্লেষণ করলেন তা লাজবাব।দারূণ! দারুণ!
ReplyDelete