দৈনিক বেদবাণী


এই সমগ্র সংসার নিরোগ এবং শুভচিন্তা যুক্ত হোক । যজুর্বেদ ১৬.৪                    সূর্য-এর আলোয় স্বয়ং আলোহীন চাঁদ আলোকিত হয় । ঋগ্বেদ ৫.৪০.৫                    প্রশংসনীয় সংস্কৃতি, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও মাতৃভূমি— এই ত্রয়ী সুখ-সমৃদ্ধি প্রদান করে। ঋগ্বেদ ১.১৩.৯                    উত্তম জীবন লাভের জন্য আমাদের জ্ঞানীদের সাহচর্যে চলা উচিৎ। ঋগ্বেদ ১.১২.১৬                    যে ব্যক্তি সম্পদ বা সুখ বা জ্ঞান নিঃস্বার্থভাবে দান করে, সে-ই প্রকৃত মিত্র। ঋগ্বেদ ২.৩০.৭                    মানুষ কর্ম দ্বারাই জগতে মহত্ত্ব ও প্রসিদ্ধি লাভ করে। ঋগ্বেদ ৩.৩৬.১                    হে পতি! তোমার স্ত্রীই গৃহ, স্ত্রীই সন্তানের আশ্রয়। ঋগ্বেদ ৩.৫৩.৪                    পরমাত্মার নিয়ম বিনষ্ট হয় না; তা অটুট, অচল ও অপরিবর্তনীয়। ঋগ্বেদ ৩.৫৪.১৮                    এই ধর্মের মার্গই সনাতন, এই পথে চলেই মানবগণ উন্নতি লাভ করে। ঋগ্বেদ ৪.১৮.১                    পরমাত্মার নিকট কোনো মানুষই বড় বা ছোট নয়। সকল মানুষই সমান এবং পরস্পরের ভ্রাতৃস্বরূপ। ঋগ্বেদ ৫.৬০.৫                    যে ব্যক্তি অকারণে অন্যের নিন্দা করে, সে নিজেও নিন্দার পাত্র হয়। ঋগ্বেদ ৫.২.৬                    নিশ্চিতরূপে এই চতুর্বেদ কল্যাণপ্রদায়িনী এবং মানবকে জ্ঞান প্রদান করে ধারণকারিণী। ঋগ্বেদ ৫.৪৭.৪                    বীর মানবের জন্য পর্বতও সুগম হয়ে যায়। ঋগ্বেদ ৬.২৪.৮                    আমরা অন্যের সঞ্চিত পাপের কর্মফল ভোগ করি না। ঋগ্বেদ ৬.৫১.৭                    হে মিত্রগণ! ওঠো— উদ্যমী হও, সাবধান হও এবং এই সংসাররূপী নদীকে অতিক্রম করো। ঋগ্বেদ ১০.৫৩.৮







পবিত্র বেদের আবির্ভাব,প্রচার, অপরিবর্তনীয়তা ও বিস্ময়কর সংরক্ষণ প্রণালী

Arindam
2

পিতৃদেব মনুষ্যাণাং বেদশ্চক্ষু সনাতনম্।
পিতা-মাতা,ঋষি,গুণীজন সকলের জন্যে বেদ ই সনাতন মার্গদর্শনের চক্ষুস্বরূপ।


ধর্মজিজ্ঞাসমাননাং প্রমাণম্ পরমম্ শ্রুতি।
ধর্মের জিজ্ঞাসায় বেদ ই সর্বোচ্চ প্রমাণ, সকল শাস্ত্রের উর্ধ্বে।

যা বেদবাহ্যাঃ স্মৃতয়ো যাশ্চ কশ্চ কুদৃষ্টয়া।
বেদভিন্ন বাকী যত শাস্ত্র আছে তার সকল ই কালের আবর্তনে বিকৃত,প্রক্ষিপ্ত হয়ে যায়।


মহর্ষি মনুর এই কথাগুলোর তাৎপর্য কি তা জানতে হলে আমাদের জানতে হবে কেন পৃথিবীর সকল ধর্মগ্রন্থ একদিকে আর বেদ অন্য দিকে তার আপন মর্যাদায়।কিভাবে সেই প্রাচীনকাল থেকে অসামান্য গাণিতিক কৌশলে একে রাখা হয়েছে সম্পূর্ণ শুদ্ধ, অপরিবর্তিত। 

আমাদের অনেকেই হয়তো জানেন না কিভাবে বেদ এসেছিল,এর সময়কাল কি,কে বা কারা এটি প্রাপ্ত হন এবং কিভাবে এর প্রচার ও সংরক্ষণ হয়।বেদ
আধুনিক মানব সভ্যতার শুরুতে মানবজাতির কল্যাণ হেতু ঈশ্বর কর্তৃক প্রদত্ত পবিত্র জ্ঞানআমরা জানি যে সৃষ্টিচক্র মানবন্তর এ বিভক্ত। প্রতি মানবন্তরের সভ্যতার শুরুতে মানবজাতির প্রতি শুদ্ধ জ্ঞান প্রদানের উদ্দেশ্যে একজন মহান শাসক তথা রাজা মনু নামে খ্যাত হন।এই মনুর নাম অনুসারেই আমরা মান নামে পরিচিত। বর্তমান মানবন্তরের  মনুর নাম বৈবস্বত মনু।বৈবস্বত মনুর স্ত্রীর নাম ছিল শ্রদ্ধাদেবী।এছাড়া মনুর পাশাপাশি ছিলেন ১০ জন মহর্ষি প্রজাপতিতাঁরা হলেন-



অঙ্গিরা,অত্রি,বশিষ্ঠ,ভৃগু,, জমদগ্নি,মরীচি,পুলস্ত্য,পুলহ,প্রচেতা,নারদ।
(মনুসংহিতা ১.৩৫)


যে চারজন মহাঋষি প্রথম চতুর্বেদ মন্ত্র দর্শন করেন তাঁরা ছিলেন-
বায়ু,আদিত্য,অঙ্গিরা,অগ্নি।
(শতপথ ব্রাহ্মণ ১১.৫.৮.৩, ১১.৫.৬.৭)


এরপর পবিত্র বেদের অন্যান্য  ঋষিগণ বেদজ্ঞান দর্শন করেন।পরবর্তীকালে  মনু ও তাঁর বংশধর কর্তৃক এবং ঋষিদের গোত্রসমূহের মাধ্যমে তা প্রচারিত ও সংরক্ষিত হয়।যেমন ঋষি 
অঙ্গিরা এর গোত্রের নাম অঙ্গিরাসা,মহর্ষি অথর্বন এর গোত্রের নাম অথর্বনা প্রভৃতি।মহাত্মা গৌতম বুদ্ধ নিজেও অঙ্গিরস গোত্রের বংশধর ছিলেন।
[The life of Buddha as legend and history by Edward Joseph Thomas]


এজন্যই বলা হয়েছে
"
ঋষি ষ্যতি প্রপ্নোতি সর্বম মন্ত্রং জ্ঞানেন পশ্যতি"
অর্থাত্‍ ঋষিরা ধ্যনের মাধ্যমে পবিত্র মন্ত্ররুপ সকল জ্ঞান অর্জন করেন।


বেদের সংরক্ষন ও প্রচারের জন্য ঋষিদের পরিবার ও বংশধরদের ১১৩১টি শাখা ছিল যারা বেদ মুখস্থ করত অসাধারন কিছু Scientific&Mathematical উপায়েবেদ হচ্ছে শ্রুতি গ্রন্থ। অর্থাৎ বেদ এক ঋষি হতে আরেক ঋষিতে বাক্য আকারে প্রবাহিত হতো। কিন্তু আমাদের মধ্যে প্রশ্ন জাগতে পারে বেদে মোট মন্ত্র রয়েছে ২০৩৭৯ টি। এত সংখ্যক মন্ত্র কিভাবে নির্ভুলভাবে মনে রাখা হতো? এটি আমাদের কাছেও একটি বড় আশ্চর্যের বিষয় যে, সেই প্রাচীন কাল থেকেই বেদ রয়েছে অবিকৃত৷ বেদ যে অবিকৃত তার প্রমাণ পাওয়া যায়, বেদের বিভিন্ন শাখায় প্রাপ্ত মন্ত্রসমূহ সব সমান। শুধুমাত্র মন্ত্রসমূহের সজ্জায় ভিন্নতা রয়েছে।
.

এই সজ্জায় ভিন্নতা হওয়ার কারণ হচ্ছে বিভিন্ন শাখার ঋষিগণ বেদকে অবিকৃত, শুদ্ধ ও মনে রাখার সুবিধার্থে বিভিন্ন কৌশলে মুখস্থ করতেন। তাঁদের এই উপায়গুলো ছিলো বিস্ময়কর ভাবে কার্যকরী। ঋষিদের বেদ মুখস্থ রাখার এসব কৌশলকে বলা হয়, বেদের পাঠ পদ্ধতি।
.
বেদকে বিশুদ্ধ ও মনে রাখার জন্য প্রাচীন কালে ঋষিগণ ১১ প্রকার পাঠ পদ্ধতি ব্যবহার করেছিলেন। এই ১১ প্রকার পাঠ পদ্ধতি বা রীতি গুলো হলো: সংহিতা পাঠ, পদ পাঠ, ক্রম পাঠ, জটা পাঠ, মালা পাঠ, শিখা পাঠ, লেখা পাঠ, ধ্বজ পাঠ, দণ্ড পাঠ, রথ পাঠ এবং ঘন পাঠ।
.
এদের মধ্যে মৌলিক পাঠ ৩ টি। সংহিতা, পদ ও ক্রম পাঠ এই তিনটি পাঠ হচ্ছে প্রকৃত পাঠ। আর বাকী ৮ টি পাঠ হচ্ছে বিকৃতি পাঠ অর্থাৎ যৌগিক পাঠ৷ এগুলো সব ক্রম পাঠের বর্ধিত রূপ৷ এজন্য এসব পাঠের নামের আগে ক্রম শব্দটি ব্যবহার করা হতো। যেমন: ক্রমজটা পাঠ, ক্রমমালা পাঠ ইত্যাদি। তবে সংক্ষেপে এদের জটা পাঠ, মালা পাঠ ইত্যাদি বলা হতো৷
.
প্রতিটি প্রণালীকে পাঠ পদ্ধতি বলা হয় এবং এদের আয়ত্তকারীদের পাঠিন বলা হয়।এদের মধ্যে ঘনপাঠ পদ্ধতি সবচেয়ে জটিলতম ও বিজ্ঞানসম্মত এবং আধুনিক ভাষাবিজ্ঞানীদের কাছে এক বিস্ময়।একজনরে দেখে নেয়া যাক কিছু নির্বাচিত পদ্ধতির সংক্ষিপ্ত বিবরণ।

পদপাঠঃ
বেদ মন্ত্রগুলোর প্রতিটি পদকে সন্ধি বিচ্ছেদ করে বা সমাসবদ্ধ পদকে বিশ্লেষণ করে পড়া হয় যে পাঠে, তাকে পদ পাঠ। পদ পাঠে প্রতিটি পদ স্পষ্ট হয় বলে পদ পাঠ অপেক্ষাকৃত সহজ। ঋষি শাকল্য ঋগ্বেদের শাকল্য শাখার স্রষ্টা এবং তিনিই প্রথম শাকল্য সংহিতায় পদ পাঠ ব্যবহার করেন। পদ পাঠ অনুসারে উক্ত মন্ত্রটি হবে:
.
অগ্নিম। ঈড়ে। পুরঃSহিতম্।
যজ্ঞস্য। দেবম্। ঋত্বিজম্।
হোতারম্। রত্নSধাতমম্।

এখানে পুরোহিতম্ ও রত্নাধাতমম্ সমাস দুটিকে বিশ্লেষণ করে পুরঃSহিতম্ ও রত্নSধাতমম্ পাওয়া যায়৷ এই পদ দুটির মাঝখানে যে ব্যাসসূচক ইংরেজি S এর মতো চিহ্ন ব্যবহার করা হয়েছে, এটাকে অবগ্রহ বলে।
এ পদ্ধতিতে প্রতিটি পদকে আলাদা করে ক্রমপদ্ধতিতে উচ্চারন করে মুখস্ত করা হয়।ঠিক নিম্নলিখিত রীতিতে
কখ খগ গঘ...
এটি বেদ উচ্চারন এর দুটি মুল নিয়ম এর মধ্যে একটি(অপরটি হল সংহিতা বা বাক্যপাঠ)।
পদপাঠিনদের অধিকাংশ ই দক্ষিন ভারতের অধিবাসী।

পদ্ধতিটি ভিডিও সহ দেখুন নিচের লিংকে-
https://youtu.be/Ti4d31KGN1w

সংহিতা বা বাক্যপাঠ পদ্ধতি
একক অর্থের একাধিক পদকে সন্ধির মাধ্যমে উচ্চারন এবং মুখস্ত করা হয়।যেমন যত্‍ ইদম উপাস্যতে(যাকে লোকউপাসনা করে) এর সংহিতা বা বাক্য রুপ হল যদিদমুপাসতে।এটা বেদ উচ্চারনের দুটি সঠিক নিয়মের একটি।
সংহিতা পাঠ হচ্ছে বর্তমানে প্রচলিত বেদের পাঠ। অর্থাৎ আমরা বর্তমান বেদ মন্ত্রগুলোকে যেভাবে দেখতে পারি সেগুলো সংহিতা পাঠে লিপিবদ্ধ। সংহিতা পাঠে বেদ মন্ত্র যেভাবে লেখা থাকে, তাকে সেভাবেই পাঠ করা হয়৷ যেমন:
.

অগ্নিমীড়ে পুরোহিতং
যজ্ঞস্য দেবমৃতিজম।
হোতারং রত্নধাতমমS।।


জটাপাঠঃ
জটা পাঠকে তাঁতিদের কাপড় বোনার সাথে তুলনা করা যায়। তাঁতিদের কাপড় বুনতে যেমন টানাপোড়েন ব্যবহার হয়, এই পাঠ অনেকাংশে তেমন। এই পাঠ পদ্ধতিতে মন্ত্রের প্রথম ও শেষ পদটি তিনবার করে এবং মধ্যবর্তী পদগুলো ছয়বার করে পঠিত হয়। যেমন:
.
অগ্নিম ঈড়ে। ঈড়ে অগ্নিম। অগ্নিম ঈড়ে৷
ঈড়ে পুরোহিতং। পুরোহিতম্ ঈড়ে৷ ঈড়ে পুরোহিতম্।
পুরোহিতম্ যজ্ঞস্য। যজ্ঞস্য পুরোহিতম্। পুরোহিতং যজ্ঞস্য।
যজ্ঞস্য দেবং। দেবং যজ্ঞস্য। যজ্ঞস্য দেবম।

........এভাবে চলতে থাকবে।
 
এক্ষেত্রে প্রথম পদ পরের পদের সাথে আবার পরের পদ পুনরায় প্রথম পদের সাথে যুক্ত করে মুখস্ত করা হয়।ঠিক এভাবে-
কখ খক কখ খগ গখ খগ


ক্রম পাঠ: একটি মন্ত্রের বা ঋকের দুটি করে পদ এক একবারে গ্রহণ করা হয়। প্রথম পদ ও শেষের পদ ছাড়া মধ্যের সব পদই এই পাঠে দুবার করে পঠিত হয়। যেমন:
.

অগ্নিম ঈড়ে। ঈড়ে পুরোহিতম্৷
পুরোহিতং যজ্ঞস্য।
যজ্ঞস্য দেবম। দেবম ঋত্বিজম।
ঋত্বিজং হোতারম্।
হোতারং রত্নাধাতমম্।

.
এই পাঠে অগ্নিম এবং রত্নাধাতমম্ এই দুটি পদ ছাড়া মধ্যবর্তী সকল পদ দুই বার করে রয়েছে। আক্ষরিক প্রতীকের মাধ্যমে ক্রম পাঠকে এভাবে বুঝানো যায় -, ২-৩, ৩-৪, ৪-৫, ৫-৬ ইত্যাদি
পদ্ধতিটি দেখুন ভিডিওসহ
https://youtu.be/UKk6Z6F8tXw

ধ্বজা পাঠ: ধ্বজ পাঠ ক্রম পাঠের অনুরূপ। ঠিক ক্রম পাঠের মতো এখানেও ছয়টি পদ উচ্চারণ করে তারপর বিপরীত ক্রমের দিক থেকে সেই ছয়টি পদের পাঠ করতে হয়। যেমন:
.
অগ্নিম্ ঈড়ে৷ ঈড়ে পুরোহিতম্।
পুরোহিতম্ যজ্ঞস্য।
পুরোহিতং যজ্ঞস্য। ঈড়ে পুরোহিতম্।
অগ্নিম্ ঈড়ে।
যজ্ঞস্য দেবম্। দেবম্ ঋত্বিজম্।
ঋত্বিজং হোতারম্।
ঋত্বিজং হোতারম্।
দেবম্ ঋত্বিজম্। যজ্ঞস্য দেবম্।
.
এতে প্রথম চরণ ঠিক ক্রম পাঠ অনুযায়ী। দ্বিতীয় চরণ তার ঠিক উল্টো। তৃতীয় চরণ ক্রম পাঠ অনুযায়ী এবং চতুর্থ পাঠ উল্টো ক্রমে।
.
ধ্বজা পাঠের অক্ষর প্রতীক:
১-২, ২-৩, ৩-৪, ২-৩, ২-১, ৪-৫, ৫-৬, ৬-৭, ৫-৬, ৪-৫ ইত্যাদি।

দণ্ড পাঠ: এর সঙ্গে ক্রম পাঠের আংশিক মিল রয়েছে। ক্রম পাঠের মতো এখানেও দুটো দুটো করে পদ তিন তিনবার করে উচ্চারিত হয়। কেবল দ্বিতীয়বার বিপরীত ক্রমে পাঠ করতে হয়। যেমন:
.
অগ্নিম্ ঈড়ে। ঈড়ে অগ্নিম্।
অগ্নিম্ ঈড়ে।
ঈড়ে পুরোহিতম্। পুরোহিতম্ ঈড়ে অগ্নিম্৷
এর আক্ষরিক প্রতীক:
১-২, ২-১, ১-২,
২-৩, ৩-২-১
.
রথ পাঠ: এটি একটি মিশ্র প্রক্রিয়া৷ ক্রম পাঠের ধারা ও এর বিপরীতমুখী ধারাকে একত্রে সংমিশ্রণ করে এই পাঠের সৃষ্টি হয়েছে।
.
রথ পাঠ আবার দুই প্রকার। এদের মধ্যে এক প্রকার পাঠের উদাহরণ হলো:
.
অগ্নিম্ ঈড়ে যজ্ঞস্য দেবম্।
ঈড়ে অগ্নিম্ দেবং যজ্ঞস্য।
অগ্নিম্ ঈড়ে ঈড়ে পুরোহিতম্।
যজ্ঞস্য দেবং দেবম্ ঋত্বিজম্।
.
এর আক্ষরিক প্রতীক হচ্ছে:
১-২-৩-৫।
২-১-৫-৪।
১-২-২-৩।
৪-৫-৫-৬।


মালা পাঠ: এই পাঠ বেশ কঠিন। এই পাঠের ক্ষেত্রে প্রথম এবং দ্বিতীয় পদ পাঠ করার পরে, সেই পদ থেকে ষষ্ঠ ও পঞ্চম পদ পাঠ করতে হয়। এভাবে পদ ক্রম ধীরে ধীরে কমে আসে। যেমন:
.
অগ্নিম ঈড়ে। ঋত্বিজং দেবম্।
ঈড়ে পুরোহিতং। দেবং যজ্ঞস্য।
পুরোহিতং যজ্ঞস্য। যজ্ঞস্য পুরোহিতম্।
যজ্ঞস্য দেবং। পুরোহিতম্ ঈড়ে। দেবম্ ঋত্বিজম। ঈড়ে অগ্নিম্।
.
মালা পাঠের আক্ষরিক রূপ: ১-২-৬-৫, ২-৩-৫-৪, ৩-৪-৪-৩, ৪-৫-৩-২, ৫-৬-২-১।
.
লেখা পাঠ: লেখা পাঠ অনেকটা ক্রম পাঠের মতো৷ এটিকে লেখা পাঠও বলে। এই পদ্ধতিতে পাঠ করার সময় কখনও দুটি পদ, কখনও তিনটি পদ একত্রে পাঠ করা হয়। এটি হয় যথাক্রমে এবং বিপরীত ক্রমে উভয়ভাবে। যেমন:
.
অগ্নিম ঈড়ে। ঈড়ে অগ্নিম্৷ অগ্নিম্ ঈড়ে।
ঈড়ে পুরোহিতং যজ্ঞস্য।
যজ্ঞস্য পুরোহিতম্ ঈড়ে।
ঈড়ে পুরোহিতম্। পুরোহিতং যজ্ঞস্য।
..................এভাবে চলতে থাকবে।
.
এর আক্ষরিক প্রতীক:
১-২, ২-১, ১-২।।
২-৩-৪, ৪-৩-২।।
২-৩, ৩-৪ ইত্যাদি।

শিখা পাঠ: শিখা পাঠ বেশ কঠিন। এর গঠন অনেকটা জটা পাঠের মতো। এই পঠন পদ্ধতিতে তৃতীয়, ষষ্ঠ, নবম চরণে তিনটি করে পদ থাকে৷ বাকী চরণ গুলোতে দুটি করে পদ থাকে। যেমন:।
.
অগ্নিম্ ঈড়ে৷ ঈড়ে অগ্নিম্।
অগ্নিম্ ঈড়ে পুরোহিতন্।
ঈড়ে পুরোহিতম্৷ পুরোহিতম্ ঈড়ে।
ঈড়ে পুরোহিতং যজ্ঞস্য।
পুরোহিতং যজ্ঞস্য। যজ্ঞস্য পুরোহিতম্।
পুরোহিতং যজ্ঞস্য দেবম্।
যজ্ঞস্য দেবম্। দেবং যজ্ঞস্য।
যজ্ঞস্য দেবম্ ঋত্বিজম।
.
.......এভাবে পাঠ চলতে থাকবে৷
.
এর আক্ষরিক প্রতীক :
১-২, ২-১, ১-২-৩
২-৩, ৩-২, ২-৩-৪
৩-৪, ৪-৩, ৩-৪-৫ ইত্যাদি।

ঘনপাঠঃ
ঘন পাঠের চারটি পদ দুটি দুটি করে ঠিক জটা পাঠ অনুযায়ী পাঠ করতে হয়। তারপর তিনটি করে পদ যথাক্রমে বিপরীতক্রমে এবং বিপর্যস্ত ভাবে উচ্চারণ করতে হয় । যেমন:
.
অগ্নিম্ ঈড়ে। ঈড়ে অগ্নিম।
অগ্নিম্ ঈড়ে পুরোহিতম্
পুরোহিতম্ ঈড়ে অগ্নিম।
অগ্নিম্ ঈড়ে পুরোহিতম্৷
ঈড়ে পুরোহিতম্। পুরোহিতম্ ঈড়ে।
ঈড়ে পুরোহিতম্ যজ্ঞস্য।
যজ্ঞস্য পুরোহিতম্ ঈড়ে ।
ঈড়ে পুরোহিতম্ যজ্ঞস্য।
..........এভাবে চলবে।
.
এই পাঠের আক্ষরিক প্রতীক হবে:
১-২, ২-১, ১-২-৩, ৩-২-১, ১-২-৩
২-৩, ৩-২, ২-৩-৪, ৪-৩-২, ২-৩-৪
৩-৪, ৪-৩, ৩-৪-৫, ৫-৪-৩, ৩-৪-৫ ইত্যাদি 

ঘনপাঠ হল সবচেয়ে জটিল পাঠ পদ্ধতি।বিশেষজ্ঞদের মতে এইপাঠ পদ্ধতি বেদে পরিবর্তন হওয়া তো দুরের কথাবেদ এর প্রতিটি শব্দের উচ্চারন ও স্বরগ্রাম পর্যন্ত অবিকৃত।এই পদ্ধতিতে একবার মন্ত্রটি পড়লে প্রকারান্তরে সেটি ১৩ বার পড়া হয়ে যেত।তাই একজন ঘনপাঠিন কমপক্ষে ১৩ বার বেদ পড়ে থাকেন!
 
এই অভুতপূর্ব সংরক্ষন এর কারনেই ২০০৩ সালের ৭ ই নভেম্বর UNESCO বেদ সংরক্ষন এর এই পদ্ধতিকে"Master piece of theoral and intangible heritage of humanity" হিসেবে ঘোষনা করে।

https://ich.unesco.org/en/RL/tradition-of-vedic-chanting-00062
Arthur Antony Macdonell এ সম্বন্ধে তার A History of Sanskrit Literature(Page No.50) তে বলেন-
"এত অবিস্মরণীয় সতর্কতা গ্রহণকর  হয়েছিল এই বইটির পরিবর্তন ঠেকাতে যে  এরকম পরিবর্তিত হবার ক্ষীণতম সম্ভাবনা পর্যন্ত না থাকাটা পৃথিবীর ইতিহাসের একমাত্র উদাহরণ।"



Keigi তার ঋগ্বেদভাষ্যের ভূ্মিকায় (Page 22) তে বলেন,
"এই পর্যন্ত বেদ এত যত্নের সাথে সংরক্ষিত হয়েছে যার সাথে ইতিহাসে এভাবে সংরক্ষণের জন্য অন্য কোন বই ই এর সাথে তুলনীয় নয়।"


Friedrich Maxmuller তার Origin of Literature গ্রন্থের Page 5 এ ঋগ্বেদকে নিয়ে বলেন,

" এত নিখুঁত পদ্ধতিতে এটি প্রজন্ম  হতে প্রজন্মান্তরে সংরক্ষিত হয়েছে  যে এর একটি শব্দ, এমনকি একটি উচ্চারণও  পরিবর্তিত হয়নি।" 

অবিনাশ চন্দ্র তার Rigvedic India এর Page No.5 এ বলেন,
"এই সুক্তগুলো প্যাপিরাস,তালপাতা বা আগুনে ঝলসিয়ে তৈরী মাটির ইটে লেখা হয়নি বরং প্রজন্ম হতে প্রজন্মান্তরে  মনুষ্য স্মৃতিতে  এটি এমনভাবে  চাষ করা হয়েছে বিশেষ উদ্দেশ্যে যার ফলে এর একটি শব্দ এমনকি একটি শব্দাংশও হারিয়ে যায়নি।"

আর এই পবিত্র বেদের ন্যায় অতিমানবীয়, অপৌরুষেয়,ঐশ্বরিক শাস্ত্র যার সাথে আছে তার আর কিসের ভয়।পবিত্র বেদের আলোয় জীবন গড়ুুন,এর মহিমা বিস্তার করুন সর্বত্র।


ওঁ শান্তি শান্তি শান্তি

Post a Comment

2Comments
  1. ভগবান ভক্তAugust 1, 2020 at 2:04 PM

    অপপ্রচারকারী ম্যাক্সমূলারের বক্তব্য লেখাটিতে ব্যবহার করা উচিত হয়নি। খ্রিস্টান মিশনারী ইংরেজদের বক্তব্য ব্যবহার করা উচিত নয় ভ্রাতা।

    ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।

    ReplyDelete
  2. এইটা নিয়ে একটা ভিডিও আপলোড করলে বিষয়টা আরো ক্লিয়ার হতাম। লেখা পড়ে বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে।

    ReplyDelete
Post a Comment