আগে আমরা বেদে গাছের জীবন নিয়ে আলোচনা করেছি। আজ চলুন জানি বৈদিক শাস্ত্র কি বলে এ বিষয়ে -
মনুসংহিতার ১ম অধ্যায়ের ৪৯ শ্লোকে বলা আছে,
.
"তমসা বহুরূপেণ বেষ্টিতাঃ কর্ম্মহেতুনা।
অন্তঃসজ্ঞা ভবন্ত্যেতে সুখদুঃখসমন্বিতাঃ।। "
.
অর্থ– এই বৃক্ষাদিরা বহুবিধ পূর্ব জন্মের কৃত কর্মের ফলে তমোগুণে আছন্ন হয়ে আছে। কিন্তু এদেরও অন্তরে চেতনা বা অনুভূতি আছে; এদেরও জীবনে সুখ-দুঃখ বোধ আছে।
মহাভারত বলছে-
ভৃগুরুবাচ।
ন প্রণাশোঽস্তি জীবানাং দত্তস্য চ কৃতস্য চ।
যাতি দেহান্তরং প্রাণী শরীরং তু বিশীর্যতে॥
ন শরীরাশ্রিতো জীবস্তস্মিন্নষ্টে প্রণশ্যতি।
যথা সমিৎসু দগ্ধাসু ন প্রণশ্যতি পাবকঃ॥
ভরদ্বাজ উবাচ।
অগ্নের্যথা সমিদ্ধস্য যদি নাশো ন বিদ্যতে।
ইন্ধনস্যোপয়োগান্তে স চাগ্নির্নোপলভ্যতে॥
নশ্যতীত্যেব জানামি শান্তমগ্নিমনিন্ধনম্।
মতির্যস্য প্রমাণং বা সংস্থানং বা ন দৃশ্যতে॥
ভৃগুরুবাচ।
জীবস্য চেন্ধনাগ্নেশ্চ সদা নাশো ন বিদ্যতে।'
সমিধামুপয়োগান্তে সন্নেবাগ্নির্ন দৃশ্যতে।
আকাশানুগতৎবাদ্ধি দুর্গ্রহঃ স নিরাশ্রয়ঃ॥
তথা শরীরসংত্যাগে জীবো হ্যাকাশমাশ্রিতঃ।
ন গৃহ্যতে তু সূক্ষ্মৎবাদ্যথা জ্যোতিরনিন্ধনম্॥
প্রাণান্ধারয়তে যোঽগ্নিঃ স জীব উপধার্যতাম্।
বায়ুসংধারণো হ্যগ্নির্নশ্যত্যুচ্ছ্বাসনিগ্রহাৎ॥
তস্মিন্নষ্টে শরীরাগ্নৌ শরীরং তদচেতনম্।
পতিতং যাতি ভূমিৎবময়নং তস্য হি ক্ষিতিঃ॥
জঙ্গমানাং হি সর্বেষাং স্থাবরাণাং তথৈব চ।
আকাশং পবনোঽন্বেতি জ্যোতিস্তমনুগচ্ছতি।
তেষাং ত্রয়াণামেকৎবং দ্বয়ং ভূমৌ প্রতিষ্ঠিতম্॥
যত্র খং তত্র পবনস্তত্রাগ্নির্যত্র মারুতঃ।
অমূর্তয়স্তে বিজ্ঞেয়া আপো মূর্তাস্তথা ক্ষিতিঃ॥
ভরদ্বাজ উবাচ।
যদ্যগ্নিমারুতৌ ভূমিঃ খমাপশ্চ শরীরিষু।
জীবঃ কিংলক্ষণস্তত্রেত্যেতদাচক্ষ্ব মেঽনঘ॥
পঞ্চাত্মকে পঞ্চরতৌ পঞ্চবিজ্ঞানসংয়ুতে।
শরীরে প্রাণিনাং জীবং বেত্তুমিচ্ছামি যাদৃশম্॥
মাংসশোণিতসংঘাতে মেদঃ স্নায়্বস্থিসংচয়ে।
ভিদ্যমানে শরীরে তু জীবো নৈবোপলভ্যতে॥
যদ্যজীবং শরীরং তু পঞ্চভূতসমন্বিতম্।
শারীরে মানসে দুঃখে কস্তাং বেদয়তে রুজম্॥
শৃণোতি কথিতং জীবঃ কর্ণাভ্যাং ন শৃণোতি তৎ।
মহর্ষে মনসি ব্যগ্রে তস্মাজ্জীবো নিরর্থকঃ॥
সর্বং পশ্যতি যদ্দৃশ্যং মনোয়ুক্তেন চক্ষুষা।
মনসি ব্যাকুলে তস্মিন্পশ্যন্নপি ন পশ্যতি॥
ন পশ্যতি ন চাঘ্রাতি ন শৃণোতি ন ভাষতে।
ন চ স্পর্শরসৌ বেত্তি নিদ্রাবশগতঃ পুনঃ॥
হৃষ্যতি ক্রুধ্যতে কোঽত্র শোচত্যুদ্বিজতে চ কঃ।
ইচ্ছতি ধ্যায়তি দ্বেষ্টি বাচমীরয়তে চ কঃ॥
ভৃগুরুবাচ।
ন পঞ্চসাধারণমত্র কিংচি চ্ছরীরমেকী বহতেঽন্তরাত্মা।
স বেত্তি গন্ধাংশ্চ রসাঞ্শ্রুতীশ্চ স্পর্শং চ রূপং চ গুণাশ্চ যেঽন্যে॥
পঞ্চাত্মকে পঞ্চগুণপ্রদর্শী স সর্বগাত্রানুগতোঽন্তরাত্মা।
স বেত্তি দুঃখানি সুখানি চাত্র তদ্বিপ্রয়োগাত্তু ন বেত্তি দেহী॥
যদা ন রূপং ন স্পর্শো নোষ্মভাবশ্চ পঞ্চকে।
তদা শান্তে শরীরাগ্নৌ দেহং ত্যক্ৎবা ন নশ্যতি॥
অম্ময়ং সর্বমেবেদমাপো মূর্তিঃ শরীরিণাম্।
তত্রাত্মা মানসো ব্রহ্মা সর্ব ভূতেষু লোককৃৎ॥
[আত্মা ক্ষেত্রজ্ঞ ইত্যুক্তঃ সংয়ুক্তঃ প্রাকৃতৈর্গুণৈঃ।
তৈরেব তু বিনির্মুক্তঃ পরমাত্মেত্যুদাহৃতঃ॥]
আত্মানং তং বিজানীহি সর্বলোকবিপাচকম্।
স তস্মিন্সংশ্রিতো দেহে হ্যব্বিন্দুরিব পুষ্করে॥
ক্ষেত্রজ্ঞং তং বিজানীহি নিত্যং লোকহিতাত্মকম্।
তমো রজশ্চ সত্ৎবং চ বিদ্ধি জীবগুণানিমান্॥
) সচেতনং জীবগুণং বদন্তি স চেষ্টতে চেষ্টয়তে চ সর্বম্।
ততঃ পরং ক্ষেত্রবিদো বদন্তি প্রাবর্তয়দ্যো ভুবনানি সপ্ত॥
ন জীবনাশোঽস্তি হি দেহভেদে মিথ্যৈতদাহুর্মুত ইত্যবুদ্ধাঃ।
জীবস্তু দেহান্তরিতঃ প্রয়াতি দশার্ধতৈবাস্য শরীরভেদঃ॥
এবং সর্বেষু ভূতেষু গূঢশ্চরতি সংবৃতঃ।
দৃশ্যতে ৎবগ্র্যযা বুদ্ধ্যা সূক্ষ্ময়া তত্ৎবদর্শিভিঃ॥
তং পূর্বাপররাত্রেষু যুঞ্জানঃ সততং বুধঃ।
লধ্বাহারো বিশুদ্ধাত্মা পশ্যত্যাত্মানংমাত্মনি॥
চিত্তস্য হি প্রসাদেন হিৎবা কর্ম শুভাশুভম্।
প্রসন্নাত্মাঽত্মনি স্থিৎবা সুখমব্যযমশ্নুতে॥
মানসোঽগ্নিঃ শরীরেষু জীব ইত্যভিধীয়তে।
সৃষ্টিঃ প্রজাপতেরেষা ভূতাধ্যাত্মবিনিশ্চয়া॥ ॥
ইতি শ্রীমন্মহাভারতে শান্তিপর্বণি মোক্ষধর্মপর্বণি পঞ্চাশীত্যধিকশততমোঽধ্যায়ঃ॥
মহাভারত শান্তিপর্ব ১৮৫ অধ্যায়
=>>ভরদ্বাজ কহিলেন, ব্রহ্মন! কি স্থাবর, কি জঙ্গম সমুদায়। পদার্থই যদি পঞ্চভূতদ্বারা নিৰ্ম্মিত হইয়া থাকে, তাহা হইলে স্থাবরদেহে কি নিমিত্ত পঞ্চভূত লক্ষিত হয় না? দেখুন, বৃক্ষলতাদি শ্রবণ, দর্শন, আঘ্রাণ, আস্বাদন বা স্পর্শ করিতে পারে না। উহাদের শরীরেও রুধিরাদিদ্রব পদার্থ, অগ্নিস্তুপ তেজঃ, অস্থিমাংসাদিরূপ পৃথিবী, চেষ্টারূপ বায়ু ও ছিদ্ররূপ আকাশ। বিদ্যমান নাই, তবে উহারা কিরূপে পাঞ্চভৌতিক বলিয়া পরিগণিত হইতে পারে? |
ভৃগু কহিলেন, ব্রহ্মন! বৃক্ষলতাদি স্থাবরগণ নিতান্ত ঘনীভূত বলিয়া স্থূলদৃষ্টিতে উহাদের মধ্যে আকাশ লক্ষিত হয়। না বটে, কিন্তু যখন প্রতিনিয়ত উহাদের ফলপুষ্পেগম। হইতেছে, তখন বিশেষ পৰ্য্যালােচনা করিয়া দেখিলে উহাদের মধ্যে যে আকাশ আছে, তাহা অবশ্যই প্রতীয়মান হইবে। যখন উত্তাপদ্বারা উহাদের পত্র, ত্বক, ফল ও পুষ্পসমুদায় ম্লান ও বিশীর্ণ হইয়া যায়, তখন আর উহাদিগের স্পর্শজ্ঞানবিষয়ে সংশয় কি? যখন বায়ু, অগ্নি ও বজ্রের শব্দে উহাদের ফলপুষ্প বিবর্ণ হইয়া পড়ে, তখন নিশ্চয়ই বােধ করিতে হইবে যে, উহাদের | শ্রবণশক্তি বিদ্যমান রহিয়াছে। দর্শনহীন জন্তু কখনই স্বয়ং পথ চিনিয়া গমন করিতে পারে না। অতএব যখন লতাসমুদায় বৃক্ষের নিকট আগমন, উহাকে পরিবেষ্টন ও ইতস্ততঃ গমন। করে, তখন উহাদের দর্শনশক্তি অবশ্যই স্বীকার করিতে হইবে।
যখন বৃক্ষলতাদি পবিত্র ও অপবিত্র গন্ধ এবং বিবিধ ধূপদ্বারা। রােগবিহীন হইয়া পুষ্পিত হইতেছে, তখন তাহারা নিঃসন্দেহে আঘ্রাণ করিতে পারে। যখন উহারা মূলদ্বারা সলিল পান করিতে ' সমর্থ হয়, তখন নিশ্চয়ই উহাদিগের রসনেন্দ্রিয় বিদ্যমান আছে।যেমন মুখদ্বারা উৎপলনাল গ্রহণ করিয়া জল শােষণ করা যায়, তদ্রপ পাদপগণ পবনসহযােগে মূলদ্বারা সলিল পান করে। এইরূপে যখন উহাদিগকে সুখদুঃখসংযুক্ত এবং ছিন্ন হইলে | পুনরায় প্ররােহিত হইতে দেখা যায়, তখন অবশ্যই উহাদের জীবন স্বীকার করিতে হইবে। উহাদিগকে অচেতন বলিয়া নির্দেশ করা কদাপি কৰ্ত্তব্য নহে; বৃক্ষাদি স্থাবরপদার্থ মূলদ্বারা। | যে জলগ্রহণ করে, অগ্নি ও বায়ু সেই জল জীর্ণ করিয়া থাকে। | ঐ জলের পরিপাক হওয়াতেই ঐ সকল স্থাবরপদার্থ লাবণ্যবিশিষ্ট ও পরিবর্ধিত হয়।
ওঁ শান্তি শান্তি শান্তি