সনাতনধর্মে এই জগতকে একটি চক্রের মত দেখা হয়। যা বারবার সৃষ্টি হয় ও বারবার ধ্বংস হয়।
"পরমাত্মা এই জগত বারবার রচনা করেন "
- (যজুর্বেদ ৩১/৪)
" প্রকৃতির নিয়মে এই জগত পুণঃ পুণঃ সৃষ্টি হয় এবং ধ্বংস হয়। "
-(ভগবদগীতা ৯/১০)
তাই Big Bang থেকে যদি এই জগতের সৃষ্টি হয়েও থাকে তাহলে সেই Big Bang যে কেবল একবার হয়েছিল তা না। Big Bang অসংখ্যবার সংঘটিত হয়েছে এবং অামাদের মহাবিশ্বের মত অারো অসংখ্য মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়েছিল যা একসময় ধ্বংস হয়ে গিয়েছে।
♦অামার এক নাস্তিক বন্ধু একবার অামায় বলছিল,
" দোস্ত! অাসলে ধর্মীয় সৃষ্টিতত্ত্ব মানেই হল এই জগত সৃষ্টির পূর্বে একজন সৃষ্টিকর্তা ছিল অার কিছুই ছিল না। এরপর তিনি যাদু দিয়ে শূন্য থেকেই এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি করে ফেলেছেন। এই Concept টা অনেকটা একজন কাঠমিস্ত্রি শূন্য থেকে অর্থ্যাৎ কোন কাঠ ছাড়াই চেয়ার তৈরি করে ফেলার মত শোনায়।"
অামি অামার প্রতিউত্তর শুরু করি একটা বড় হাসি দিয়ে,
- না দোস্ত পৃথিবীর সবধর্মেত না। সনাতনধর্মের সৃষ্টিতত্ত্বে এরকম কোন অসম্পূর্ণতা নাই।
- মানে?
- অচ্ছা তুই বল। যদি অামি বলি একটা কাঠ নীজে নীজে চেয়ার হয়ে গিয়েছে তুই বিশ্বাস করবি।
- না। এটাত অসম্ভব।
- Exactly. অার এই অসম্পূর্ণ Concept টা দিস তোরা নাস্তিকরা। ভেবে দেখ একটা কাঠ থেকে যদি নীজে নীজে সামান্য চেয়ার সৃষ্টি হতে না পারে। তাহলে কোন সৃষ্টিকর্তা ছাড়াই কেবল Singularity থেকে এত বিশাল সুশৃঙ্খল মহাবিশ্ব কীভাবে তৈরি হয়ে গেল। সুতরাং মহাবিশ্ব সহ যেকোন কিছু সৃষ্টি করতে দুটো সত্তা পূর্ব থেকেই বিদ্যমান থাকা অাবশ্যক।তেমনি অামাদের মহাবিশ্ব সৃষ্টিতেও দুটো সত্তা পূর্ব থেকে বিদ্যমান থাকা অাবশ্যক। এগুলো হল যিনি এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি করবেন অার যা দ্বারা এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি করা হবে তা।
♦ এজন্যই সনাতনধর্ম বলছে,
প্রকৃতি ও পুরুষ( ঈশ্বর) উভয় অনাদি।
- ভগবদগীতা 13.19
.
সনাতনধর্মে অারো একটি সত্তাকে অনাদি বলা অাছে তা হল জীবাত্মা।( ঋগ্বেদ ১/১৬৪/৩৮)
.
এখন প্রশ্ন অাসে যে প্রকৃতিটা কি?
ঈশ্বর ও জীবাত্মা ব্যতিত এই মহাবিশ্বে যা কিছু অাছে তা সব কিছু মিলেই প্রকৃতি।
এই সম্পর্কে পবিত্র বেদ বলছে,
★ অদিতি (প্রকৃতি) অাকাশ, মাঝের সব স্থান। অদিতি মাতা, পিতা এবং পুত্র (জগতের)।জগতের সকল দেবতা, পাঁচ শ্রোণির মানুষ অদিতি। যা জন্মেছে সবি অদিতি এবং যা জন্মাবে তাও অদিতি।
- অথর্ববেদ ৭/৬/১
★ প্রকৃতি অনাদি। এর কখনো সৃষ্টি বা ধ্বংস হয় না। অামাদের এই সমগ্র জগত প্রকৃতি দিয়েই গঠিত।কিন্তু জগত বারবার সৃষ্টি বা ধ্বংস হলেও প্রকৃতি কখনো নতুন করে সৃষ্টি বা নতুন করে ধ্বংস হয় না। প্রতি জগত সৃষ্টি হওয়ার পূর্বে এই প্রকৃতি এমন এক অবস্থায় থাকে যখন কোন কিছুরই অস্তিত্ব থাকে না। পরবর্তীতে সর্বশক্তিমান ঈশ্বর সেই অব্যাক্ত প্রকৃতি হতে নতুন জগত সৃষ্টি করে এবং প্রলয়ের সময় যখন জগত ধ্বংস হয়ে যায় তখন প্রকৃতি পুনরায় এমন এক অবস্থায় চলে যায় যখন সেখানে অার কোন কিছু, কোন পদার্থেরই অস্তিত্ব থাকে না এবং প্রকৃতির সেই অবস্থা থেকে সৃষ্টি হয় অারেকটি নতুন জগত।
সনাতনী শাস্ত্রে এই সম্পর্কে বলা হচ্ছে,
.
"পুনরায় কল্পা-রম্ভে প্রকৃতির দ্বারা আমি তাদের সৃষ্টি করি।"
- (ভগবদগীতা ৯/৮)
" অামি সেই শাস্বত পরমাত্মার উপাসনা করি যিনি প্রকৃতির শাস্বত গর্ভ হতে এই বহুসংখ্যক অস্তিত্বের নির্মাণ করেছেন। যাকে অামাদের পিতা ও পিতামহ উপাসনা করেছেন।
- (ঋগ্বেদ ১/৩০/৯)
.
" সত্ব, রজঃও তমগুণযুক্ত অনাদি প্রকৃতি তার ন্যায় (অর্থ্যাৎ ত্রিগুণযুক্ত) বহুসংখ্যক জীবের রচনা করে এবং অনাদি অাত্মা তাতে যু্ক্ত হয়ে তা ভোগ করে।
- (শেতাশ্বতর উপনিষদ ৪/৫)
অামাদের এই জগত কীভাবে সৃষ্টি হয়েছিল এবং কীভাবে ধ্বংস হবে সেই সম্পর্কেও পবিত্র বেদে বলা অাছে। যা অনেকাংশেই অাধুনিক বিজ্ঞানের সৃষ্টিতত্বের সাথে মিলে।.
অাধুনিক বিজ্ঞানুসারে ১৩.৭৫ বিলিয়ন বছর অাগে Big Bang সংঘটিত হওয়ার পূর্বে অামাদের এই বিশাল মহাবিশ্বের কোন অস্তিত্ব ছিল না। Time, Space কিছুই ছিল না। ছিল না কোন পদার্থ এমনকি একটা সামন্য পরমাণুও ছিল না।
ঋগ্বেদের নাসাদীয় সুক্তে একই কথা বলা হচ্ছে,
★সেই সময় কোন অস্তিত্ব বা অনস্তিত্ব ছিল না। পর
মাণু পূর্ণ অন্তরিক্ষ ছিল না, তার পরে অাকাশ ছিল না।
- (ঋগ্বেদ ১০/১২৯/১)
.
★তখন মৃত্যু ছিল না, (তাই) অমরত্বও ছিল না। দিন ও রাত্রির কোন পার্থক্য ছিল না। সেই এক(ঈশ্বর) বায়ুর সাহায্য ছাড়াই নিঃশ্বাস নিচ্ছিল তার নীজ শক্তির সাহায্যে (যেহেতু ঈশ্বরের জীবের ন্যায় বেঁচে থাকতে বায়ুর প্রয়জন নাই) ।
তিনি ব্যতিত অার কিছুই ছিল না।
- (ঋগ্বেদ ১০/১২৯/২)
.
সেই সময় কোন অস্তিত্ব ছিল না অর্থ্যাৎ মহাবিশ্ব সৃষ্টির পূর্বে একেবারে কোনকিছুরই অস্তিত্ব ছিল না।
অাবার বলা হচ্ছে অনস্তিত্ব ছিল না অর্থ্যাৎ একেবারেই যে কোন কিছুর অস্তিত্ব ছিল না তাও না। কেননা তখনো শক্তি বিদ্যমান ছিল, Singularity ছিল। এবং সনাতনধর্মানুসারে তখনও শাশ্বত প্রকৃতি বর্তমান ছিল কিন্তু অব্যাক্ত অবস্থায়।
অপরদিকে দিন ও রাত্রি হয় নক্ষত্রের অালো ও গ্রহের অাবর্তনের কারণে যেহেতু তখন কোন গ্রহ-নক্ষত্র ছিল না তাই দিন ও রাত্রির কোন পার্থক্য ছিল না।
.
♦ অাধুনিক বিজ্ঞান বলে সেইসময় ছিল কেবল একটি বিন্দু। অত্যন্ত ঘন ও উত্তপ্ত একটি বিন্দু (Dimensionless Singularity) । এরপর অর্থ্যাৎ অাজ থেকে প্রায় ১৩.৭৫ বিলিয়ন বছর অাগে Big Bang বা এক মহাবিস্ফোরণ সংঘটিত হয় এবং সেই Singularity থেকে সবকিছু সম্প্রসারিত হতে থাকে এবং সৃষ্টি হয় Time,Space, ধীরে ধীরে তাপমাত্রা কমতে থাকে, সৃষ্টি হয় প্রোটন, নিউট্রন তারপর নিউক্লিয়াস ও তার চারপাশে ইলেকট্রন। এভাবে অামাদের মহাবিশ্বের সর্বপ্রথম পদার্থ হিলিয়াম সৃষ্টি হয়, সৃষ্টি হয় একে একে অন্য সকল মৌল। তারপর গ্যালাক্সি। এবং একসময় সেখানে সৃষ্টি হয় প্রাণের স্পন্দন।
মহাবিশ্বের এই সম্প্রসারণ প্রতিনিয়তই চলছে।
(বিস্তারিত পড়ুন https://en.m.wikipedia.org/wiki/Expansion_of_the_universe)
.
কিন্তু একসময় এই দ্রুত সম্প্রসারণ থেমে যাবে শুরু হবে সংকোচন।
অামাদের এই মহাবিশ্ব দ্রুত সংকুচিত হতে শুরু করবে। এবং সেই সংকোচনের ফলে সবকিছিই ধ্বংস হয়ে যাবে । অামাদের এই বিশাল মহাবিশ্ব সংকুচিত হয়ে অাবারও সেই বিন্দুতে (Singularity) মিলিত হবে যেই বিন্দু থেকে শুরু হয়েছিল অামাদের এই মহাবিশ্বের যাত্রা। বিজ্ঞানের ভাষায় একে Big Crunch এবং সনাতনধর্মে একে প্রলয় বলা হয়েছে।
.
পরবর্তীতে সেই বিন্দু থেকে পুনরায় Big Bang সংঘটিত হবে, শুরু হবে পুনরায় সম্প্রসারণ এবং সৃষ্টি হবে অারেকটি নতুন মহাবিশ্বের যেভাবে সৃষ্টি হয়েছিল অামাদের এই মহাবিশ্ব।
(Big Crunch সম্পর্কে বিস্তারিত পড়ুন https://en.m.wikipedia.org/wiki/Big_Crunch
.
♦ পবিত্র বেদে কেবল এক বাক্যেই এই Big Bang ও Big Crunch সম্পর্কে বলে দেওয়া হয়েছে।
.
★ वेनस्तत्पश्यत्रिहितं गुहा सद्यत्रविश्वं भवत्येकनीडम्।
तस्मित्रिदं सं च वि चैति सर्वं स अोतः पोनश्च विभुः प्रजासु।।
- (যজুর্বেদ ৩২/৮)
.
" জ্ঞানি ব্যাক্তিরা সেই পরমাত্মাকে জ্ঞান দৃষ্টিতে দর্শন করেন যার মধ্যে এই সমগ্র জগত অাশ্রয় গ্রহণ করেছে। তার মধ্যেই এই সমগ্র জগত একত্রে মিলিত হয় এবং তার মধ্যেই তা বিছিন্ন হয়।"
.
তার মধ্যেই এই সমগ্র জগত একত্রে মিলিত হয় অর্থ্যাৎ প্রলয়ের সময় সমগ্র মহাবিশ্ব সংকুচিত হয়ে সেই একটি বিন্দুতে মিলিত হয়। যা স্পষ্টভাবেই Big Crunch সম্পর্কে বলছে।
অারো বলা হচ্ছে,
" তার মধ্যেই তা বিচ্ছিন্ন হয় " অর্থ্যাৎ সেই ঘন ও উত্তপ্ত বিন্দু(Singularity) থেকে পুনরায় অাবার মহাবিস্ফোরণের মাধ্যমে সবকিছু বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। যা Big Bang সম্পর্কে বলছে।
এবং মন্ত্রে বাক্যটি Present Indifinite Tense এ বলা হচ্ছে।
এর কারণ অামি পূর্বেই বলেছি যে অামাদের জগতকে সনাতনধর্মে একটি চক্রের মত দেখা হয় যা বার-বার সৃষ্টি ও ধ্বংস হচ্ছে।
.
অবশ্য মহাবিশ্বের Ultimate Fate নিয়ে Big Crunch ছাড়াও অারো অসংখ্য তত্ব বিজ্ঞানমহলে প্রচলিত অাছে
(বিস্তারিত পড়ুন -https://en.m.wikipedia.org/wi…/Ultimate_fate_of_the_universe)
তবে সনাতনধর্মানুসারে Big Crunch ওই সঠিক এবং বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানি Stephen Hawkinsও তার A Brief History Of Time গ্রন্থটিতে Big Crunch কেই মহাবিশ্বের Ultimate Fate বা শেষ পরিণতি বলে রায় দিয়েয়ছেন।
★ ওঁম্ তৎ সৎ ★