দৈনিক বেদবাণী


এই সমগ্র সংসার নিরোগ এবং শুভচিন্তা যুক্ত হোক । যজুর্বেদ ১৬.৪                    সূর্য-এর আলোয় স্বয়ং আলোহীন চাঁদ আলোকিত হয় । ঋগ্বেদ ৫.৪০.৫                    প্রশংসনীয় সংস্কৃতি, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও মাতৃভূমি— এই ত্রয়ী সুখ-সমৃদ্ধি প্রদান করে। ঋগ্বেদ ১.১৩.৯                    উত্তম জীবন লাভের জন্য আমাদের জ্ঞানীদের সাহচর্যে চলা উচিৎ। ঋগ্বেদ ১.১২.১৬                    যে ব্যক্তি সম্পদ বা সুখ বা জ্ঞান নিঃস্বার্থভাবে দান করে, সে-ই প্রকৃত মিত্র। ঋগ্বেদ ২.৩০.৭                    মানুষ কর্ম দ্বারাই জগতে মহত্ত্ব ও প্রসিদ্ধি লাভ করে। ঋগ্বেদ ৩.৩৬.১                    হে পতি! তোমার স্ত্রীই গৃহ, স্ত্রীই সন্তানের আশ্রয়। ঋগ্বেদ ৩.৫৩.৪                    পরমাত্মার নিয়ম বিনষ্ট হয় না; তা অটুট, অচল ও অপরিবর্তনীয়। ঋগ্বেদ ৩.৫৪.১৮                    এই ধর্মের মার্গই সনাতন, এই পথে চলেই মানবগণ উন্নতি লাভ করে। ঋগ্বেদ ৪.১৮.১                    পরমাত্মার নিকট কোনো মানুষই বড় বা ছোট নয়। সকল মানুষই সমান এবং পরস্পরের ভ্রাতৃস্বরূপ। ঋগ্বেদ ৫.৬০.৫                    যে ব্যক্তি অকারণে অন্যের নিন্দা করে, সে নিজেও নিন্দার পাত্র হয়। ঋগ্বেদ ৫.২.৬                    নিশ্চিতরূপে এই চতুর্বেদ কল্যাণপ্রদায়িনী এবং মানবকে জ্ঞান প্রদান করে ধারণকারিণী। ঋগ্বেদ ৫.৪৭.৪                    বীর মানবের জন্য পর্বতও সুগম হয়ে যায়। ঋগ্বেদ ৬.২৪.৮                    আমরা অন্যের সঞ্চিত পাপের কর্মফল ভোগ করি না। ঋগ্বেদ ৬.৫১.৭                    হে মিত্রগণ! ওঠো— উদ্যমী হও, সাবধান হও এবং এই সংসাররূপী নদীকে অতিক্রম করো। ঋগ্বেদ ১০.৫৩.৮







বেদে অনাথ শিশুদের জন্য করণীয় বিষয়ে নির্দেশ

অমৃতস্য পুত্রা
0




ধর্ম যতক্ষণ থাকবে সেটা নিয়ে প্রশ্ন আসাটা স্বাভাবিক। সনাতন ধর্ম নিয়ে ভিন্ন মতাবলম্বীদের জিজ্ঞাসা থাকবে কেননা আমাকে কিংবা অআপনাকে কৌশলে ধর্মান্তরিত করার সহজ উপায় হলো আমার বা আপনার অজানা বিষয় গুলি নিয়ে বেশি জিজ্ঞাসা করা।

▶ অনাথ বলতে আমরা সাধারণত বুঝি যাদের পিতামাতা তথা আপন বলতে কেউ থাকেনা। মানবিক দিয়ে বিবেচনা করলে একটা জিনিস দেখতে পাবেন যে অনাথদের যেসমস্ত ধনদৌলত থাকে সেসব রক্ষা করা এবং তাদের অন্যান্য সাধারণ মৌলিক অধিকার ও স্নেহ-মমতা দিয়ে সুশিক্ষিত নাগরিক সর্বোপরি আদর্শ মানুষ করে গড়ে তোলা  সমাজ কিংবা রাষ্ট্রের বিভিন্ন আদর্শিক ব্যক্তিদের ও রাষ্ট্রপ্রধানদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। 

 🐍 যারা সবকিছুতে সনাতন ধর্মের ত্রুটির তথ্য খোজে তাদের বলতে শুনবেন ধর্ম কি ততোটা মানবিক? যে অনাথদের ধনদৌলত রক্ষা কিংবা তাদের ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত  করার কথা বলবে?

👉  হ্যাঁ,  অবশ্যই ধর্ম ততোটাই মানবিক। কিন্তু কোন মত ততোটা মানবিক তা জানিনা, তবে সনাতন ধর্ম এই দিক থেকে যথেষ্ট মানবিক।

বেদে নির্দেশ করা হয়েছে নিম্নোক্তরূপে -

 1⃣.
আ নূনমশ্বিনা যুবং বৎসস্য গন্তমবসে ।
প্রাস্মৈ যচ্ছতমবৃকং পৃথু চ্ছর্দির্যুয়ুতং যা অরাতয়ঃ।। 
ঋগ্বেদ ৮।৯।০১

মন্ত্রবিষয়ঃ
অনাথানাং মাতাপিতৃবিহীনানাং শিশূনাং নিমিত্তং রাজভির্বাধকরহিতং বিস্তীর্ণং গৃহং নির্মায়যিতব্যমিতি রাজকর্তব্যমুপদিশত্যনয়া।
➡ অনাথ এবং মাতাপিতৃবিহীন বালকগণের  নিমিত্তে রাজাগণের  উচিত হ বাধকরহিত, বিস্তীর্ণ গৃহ তৈরী, এখন রাজকর্ত্তব্যের উপদেশ করা হচ্ছে  ।

ভাষার্থঃ হে অশ্বিনা=অশ্বিনী চ অশ্বী চেত্যশ্বিনৌ রাজানৌ। রাজ্ঞী চ রাজেত্যর্থঃ। যুবম্=যুবাম্। বৎসস্য=অনুকম্পনীয়স্য শিশোঃ। অবসে=রক্ষণায়। জাতাবেকবচনম্। অনুকম্পনীয়ানাং শিশূনাং রক্ষায়ৈ নূনমবশ্যম্। আগন্তমাগচ্ছতম্। স্বগৃহমপি ত্যক্ত্বা অনাথানাং রক্ষায়ৈ সহ পত্ন্যা ৎবয়া তত্র তত্রাগন্তব্যমিত্যর্থঃ। আগত্য চ। অস্মৈ=বৎসায়। অবৃকম্=বাধকরহিতং দুষ্টবিবর্জিতম্। পৃথু=বিস্তীর্ণম্। ছর্দির্গৃহমাপ্রয়চ্ছতম্=দত্তম্। অপি চ। যাস্তত্র অরাতয়ঃ=অদানশীলাঃ শত্রুভূতাঃ প্রজাঃ। তা যুয়ুতম্=পৃথক্ কুরুতম্ ॥

অনুবাদঃ (অশ্বিনা) হে অশ্বযুক্ত রাজা এবং রাজ্ঞী ! (যুবম্) আপনার উভয়েই (বৎসস্য) কৃপাপাত্র অনাথ বালকগণের (অবসে) রক্ষার জন্য  (নূনম্) অবশ্যই (আ+গন্তম্) আগমন করুন অর্থাৎ আপনারা স্বগৃহকে অব্দি ত্যাগ করে অনাথগণের  রক্ষার জন্য ইতস্ততঃ স্বপত্নীর সাথে গমন করুন এবং গিয়ে (অস্মৈ) এই অনাথ শিশুগণের জন্য (অবৃকম্) বাধকরহিত দুষ্টবিবর্জিত (পৃথু) বিস্তীর্ণ (ছর্দিঃ) গৃহ (প্র+যচ্ছতম্) নির্মাণ করে দিন এবং সেখানে (যাঃ) যে (অরাতয়ঃ) অদানশীল শত্রুভূত প্রজাসমূহ রয়েছে , সেখান থেকে তাদের (যুয়ুতম্) পৃথক্ করে দেবেন । কেননা অদানী তথা কৃপণগণ থাকার কারণে অনাথ শিশুগণের যথাযথ  রক্ষণাবেক্ষণ হবেনা । 

[ ভাষ্যঃ পণ্ডিত শ্রী শিবশঙ্কর শর্ম্মা কাব্যতীর্থ,  আর্যসমাজ ]

2⃣.
যাভিঃ পক্থমবথো যাভিরধ্রিগুং যাভির্বভ্রুং বিজোষসম্ ।
তাভির্নো মক্ষূ তূয়মশ্বিনা গতং ভিষজ্যতং যদাতুরম্ ॥
ঋগ্বেদ ৮।২২।১০

ভাষার্থঃ হে অশ্বিনৌ=রাজানৌ ! যাভিরূতিভিঃ=রক্ষাভিঃ। যুবাম্। পক্বম্=শস্ত্রেষু ব্যবহারাদিষু চ পরিপক্বং নিপুণং নরম্। অবথঃ=রক্ষথঃ। যাভী রক্ষাভিঃ। অধ্রিগুম্=অধৃতগমনং পঙ্গুম্। অবথঃ। যাভী রক্ষাভিঃ। বভ্রুম্=অনাথভর্তারম্। অবথঃ। তথা। বিজোষসম্= অবিশেষেণ প্রীতিসম্পন্নং পুরুষম্। অবথঃ। তাভিরূতিভিঃ। নোঽস্মান্ রক্ষিতুং। মক্ষু=শীঘ্রম্। তূয়ম্=শীঘ্রমেব। আগতম্=আগচ্ছতম্। তথা। যদ্ যদি কশ্চিদাতুরো রোগী তমাতুরম্। ভিষজ্যতম্=চিকিৎসতম্। 

অনুবাদঃ (অশ্বিনা) হে রাজন্ তথা মন্ত্রী ! (যাভিঃ) যে রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে আপনারা (পক্বম্) শাস্ত্রসমূহের তথা ব্যবহারে পরিপক্ব এবং নিপুণ মনুষ্যের (অবথঃ) রক্ষা করে থাকেন , (যাভিঃ) যে রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে(অধ্রিগুম্) চলনে অসমর্থ পঙ্গুকে রক্ষা করে থাকেন , (যাভিঃ) যে রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে (বভ্রুম্) অনাথগণের  ভরণ-পোষণকারী তথা (বিজোষসম্) বিশেষপ্রীতিসম্পন্ন মনুষ্যগণের রক্ষা করে থাকেন , (তাভিঃ) সেই রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে (নঃ) আমাদের রক্ষা করার জন্য (মক্ষু) শীঘ্র (তূয়ম্) শীঘ্রই (আগতম্) আগমন করুন তথা (যদ্) যদি কোন রোগী থাকে , তবে সেই (আতুরম্) আতুর পুরুষকে (ভিষজ্যতম্) সেবা শুশ্রূষা করুন। 

 ভাবার্থঃ মহামাত্য রাজা সবধরনের  মনুষ্য=অন্ধ, বধির, পঙ্গু,অনাথ ইত্যাদিগণকে এবং প্রাণিসমূহের রক্ষা করবে ও অন্যকে দিয়ে করাবে তথা সর্বত্র ঔষধালয় স্থাপিত করে রোগীগণের চিকিৎসার ব্যবস্থা করবেন । 

[  ঋগ্বেদ ভাষ্য - পণ্ডিত শিবশঙ্কর শর্ম্মা  , আর্যসমাজ ] 

3⃣.
 যন্নাসত্যা ভুরণ্যথো যদ্বা দেব ভিষজ্যথঃ ।
অয়ং বাং বৎসো মতিভির্ন বিন্ধতে হবিষ্মন্তং হি গচ্ছথঃ ॥
ঋগ্বেদ ৮।৯।০৬

ভাষার্থঃ হে নাসত্যা=নাসত্যৌ=হে সত্যস্বভাবৌ রাজানৌ ! যদ্=যৌ যুবাম্। ভুরণ্যথঃ=সর্বান্ মনুষ্যান্ পোষয়থঃ। ভুরণ্ ধারণপোষণয়োঃ। হে দেবা=দেবৌ। যদ্বা=যৌ চ যুবাম্। ভিষজ্যথঃ=মনুষ্যজাতে রোগোপশমনং কুরুথঃ। ভিষজ্ চিকিৎসায়াম্। তৌ=বাম্। অয়ং বৎসঃ পালনীয়ঃ শিশুঃ। মতিভির্বুদ্ধিভির্দ্বারভূতাভিঃ। ন বিন্ধতে=ন বিন্দতে=ন লভ্যতে। বর্ণবিকারশ্ছান্দসঃ। কুত ইতি চেদুচ্যতে। হি=যস্মাৎ। যুবাম্। হবিষ্মন্তং ক্রিয়াবন্তং পুরুষং গচ্ছথঃ। ন কেবলং জ্ঞানবন্তম্ ॥

অনুবাদঃ (নাসত্যা) হে সত্যস্বভাব রাজা এবং অমাত্যবর্গ ! (যৎ) যা আপনারা উভয়েই (ভুরণ্যথঃ) সব মনুষ্যগণকে পোষণ করেন ( যদ্বা দেবা) হে দেব ! দেব=দাতা (যৎ) যিনি আপনি (ভিষজ্যথঃ) মনুষ্যগণের  চিকিৎসা তথা শুশ্রূষা  করেন ও  করান,  সেই আপনাকে  (অয়ম্+বাম্+বৎসঃ) এই অনাথ বালক (মতিভিঃ) মতির দ্বারা (ন+বিন্ধতে) পায় না (হি) কেননা আপনা উভয়েই (হবিষ্মন্তম্) ক্রিয়াবান্ পুরুষের নিকটেই (গচ্ছথঃ) গিয়ে থাকেন। 

 ভাবার্থঃ রাজা রাজ্যে সর্বত্র ভবন স্থাপিত করে অসমর্থগণকে ভোজনাদি দ্বারা রক্ষা এবং ক্রিয়াবান্ মনুষ্যগণকে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য সাহায্য করবেন। 

[  ঋগ্বেদ ভাষ্য - পণ্ডিত শিবশঙ্কর শর্ম্মা , আর্যসমাজ ] 

4⃣.
 অত্রেরিব শৃণুতং পূর্ব্যস্তুতিং শ্যাবাশ্বস্য সুন্বতো মদচ্যুতা ।
সজোষসা উষসা সূর্যেণ চাশ্বিনা তিরোঅহ্ন্যম্ ॥
ঋগ্বেদ ৮।০৩৫।১৯

ভাষার্থঃ হে অশ্বিনৌ=পুণ্যকৃতরাজানৌ ! যুবাং খলু। অত্রেরিব=যথা অত্রেঃ ন ত্রয়ো মাতাপিতৃভ্রাতরো যস্য সোঽত্রির্মাতাপিতৃভ্রাতৃবিহীনোঽনাথঃ পুরুষঃ। তস্য স্তুতিং শৃণুতম্। তথৈব। সুন্বতঃ=শুভকর্মসু আসক্তস্য। শ্যাবাশ্বস্য শ্যাবা=মলিনা রোগৈঃ পীডিতা অশ্বা ইন্দ্রিয়লক্ষণং যস্য স শ্যাবাশ্বঃ পাপরোগপীডিতো জনঃ। তস্য পূর্ব্যস্তুতিং করুণাপূর্ণাং স্তুতিম্। শৃণুতম্। হে মদচ্যুতা=মদানামানন্দানাং চ্যোতিতারৌ বর্ষিতারৌ। তিরো অহ্ন্যম্=অহনি দিবসে তিরোহিতে অন্তর্হিতে সতি রাত্রৌ। যুবাম্। সর্বান্ জনান্ রক্ষতমিত্যর্থঃ। 

অনুবাদঃ (অশ্বিনা) হে পুণ্যকৃত রাজন্ তথা মন্ত্রীদল ! আপনারা উভয়েই (অত্রেঃ+ইব) যেভাবে মাতা পিতা ভ্রাতা এই ত্রয় বিহীন অনাথ ব্যক্তির প্রার্থনা শ্রবণ করেন , তদ্বৎ (সুন্বতঃ) শুভকর্ম করার মাধ্যমে (শ্যাবাশ্বস্য) রোগের জন্য  মলিনেন্দ্রিয় অর্থাৎ রোগী ব্যক্তির (পূর্ব্যস্তুতিম্) করুণাযুক্ত স্তুতি (শৃণুতম্) শুনুন । (মদচ্যুতা) হে আনন্দবর্ষিতা উভয়বর্গ ! (তিরো+অহ্ন্যম্) দিনের অন্তর্হিত হওয়ার পর রাত্রিতে সব মনুষ্যগণের রক্ষা করুন। 

[  ঋগ্বেদ ভাষ্য - পণ্ডিত শিবশঙ্কর শর্ম্মা , আর্যসমাজ ] 

5⃣.
শ্যাবাশ্বস্য সুন্বতোঽত্রীণাং শৃণুতং হবম্ ।
ইন্দ্রাগ্নী সোমপীতয়ে।
ঋগ্বেদ ৮।৩৮।৮

 ভাষার্থঃ হে ইন্দ্রাগ্নী ! যুবাম্। সুন্বতঃ=কর্মাণি কুর্বতঃ। শ্যাবাশ্বস্য=রুগ্ণেন্দ্রিয়স্য। অত্রীণাম্=অনাথানাঞ্চ। হবম্=আহ্বানম্। শৃণুতম্। তথা সোমপীতয়ে। আগচ্ছতম্। 

অনুবাদঃ (ইন্দ্রাগ্নী) হে রাজন্ তথা হে দূত ! আপনারা উভয়ে (সুন্বতঃ) শুভকর্মসমূহে প্রবৃত্ত (শ্যাবাশ্বস্য) রোগী ব্যক্তির তথা (অত্রীণাম্) মাতা, পিতা এবং বন্ধু এই  ৩ রহিত অনাথগণের (হবম্) নিবেদন (শৃণুতম্) শ্রবণ করুন । এবং [ রোগীদের ]  (সোমপীতয়ে) সোমাদি=ঔষধী পদার্থসমূহ পানের [ ব্যবস্থা করার জন্য ] জন্য আসুন। 

 ভাবার্থঃ রোগী ও অনাথাদি সর্বপ্রথম দ্রষ্টব্য এবং পালনীয় । 

[  ঋগ্বেদ ভাষ্য - পণ্ডিত শিবশঙ্কর শর্ম্মা , আর্যসমাজ ] 

6⃣. 
ত্বমেতাঞ্জনরাজ্ঞো দ্বির্দশাবন্ধুনা সুশ্রবসোপজগ্মুষঃ । ষষ্টিং সহস্রা নবতিং নব শ্রুতো নি চক্রেণ রথ্যা দুষ্পদাবৃণক্ ॥
ঋগ্বেদ ১।০৫৩।৯

পদার্থঃ (ৎবম্) সভাদ্যধ্যক্ষঃ (এতান্) মনুষ্যাদীন্ (জনরাজ্ঞঃ) জনা ধার্মিকা রাজানো যেষাং তান্ (দ্বিঃ) দ্বিবারম্ (দশ) দশসংখ্যায়াম্ (অবন্ধুনা) অবিদ্যমানা বন্ধবো মিত্রা যস্য তেনার্থেন সহ (সুশ্রবসা) শোভনানি শ্রবাংসি শ্রবণান্যন্নানি বা যস্য তেন মিত্রেণ সহ (উপজগ্মুষঃ) য উপ সামীপ্যে গতবন্তস্তান্ (ষষ্টিম্) এতৎসংখ্যাকান্ (সহস্রা) সহস্রাণি (নবতিম্) এতৎসংখ্যাকান্ (নব) এতৎসংখ্যাপরিমিতাঞ্ছূরান্ ভৃত্যান্ (শ্রুতঃ) যঃ শ্রূয়তে সঃ (নি) নিত্যম্ (চক্রেণ) শস্ত্রসমূহেন চক্রাঙ্গয়ুক্তেন যানসমূহেন বা (রথ্যা) যো রথং বহতি তেন রথ্যেন (দুষ্পদা) দুঃখেন পত্তুং প্রাপ্তুং যোগ্যেন (অবৃণক্) বৃণক্ষি। 

অনুবাদঃ হে সভা এবং সেনাধ্যক্ষ ! যেভাবে (শ্রুতঃ) শ্রবণকারী (ৎবম্) তুমি (এতান্) এই (অবন্ধুনা) অবন্ধু অর্থাৎ মিত্ররহিত অনাথ বা (সুশ্রবসা) উত্তম শ্রবণ অন্নযুক্ত মিত্রের সাথে বর্ত্তমান (উপজগ্মুষঃ) সমীপ হওয়া (ষষ্টিম্) ষাট (নবতিম্) নব্বই (নব) নয় (দশ) (সহস্রাণি) দশ হাজার (জনরাজ্ঞঃ) ধার্মিক রাজাযুক্ত মনুষ্যাদিকে  (দুষ্পদা) দুঃখদ্বারা প্রাপ্ত যোগ্য (রথ্যা) রথকে প্রাপ্তকারী (চক্রেণ) শস্ত্র বিশেষ বা চক্রাদি অঙ্ক যুক্ত যানসমূহ দ্বারা (দ্বিঃ) দুই বেড়ী (ন্যবৃণক্) নিত্য দুঃখসমূহ  থেকে পৃথক করেন বা দুষ্টগণকে দূর করেন , সেভাবে তুমিও পাপাচরণ থেকে সদা দূরে থাকো। 

[  ঋগ্বেদ ভাষ্য - পণ্ডিত শিবশঙ্কর শর্ম্মা , আর্যসমাজ ] 

 🍀স্মৃতি শাস্ত্রে এই বিষয়ে বলা হয়েছে -

বালদায়াদিকং রিকৃথং তাবদ্রাজানুপালয়েৎ।
যাবৎ স স্যাৎ সমাবৃত্তো ষাবচ্চাতীতশৈশবঃ।।
মনুস্মৃতি ৮.২৭

বঙ্গানুবাদ- যদি কোন বালক বা শিশু অনাথ হয়ে যায়, রাজা তখন সেই অনাথ বালকের ধনসম্পত্তি নিজের কাছে রেখে বিশেষ ভাবে রক্ষা করবেন যতদিন না সেই বালক বেদ অধ্যয়ন করে গুরুগৃহ থেকে গৃহস্থাশ্রমে এসে সংসার ধর্মে রতি না হয় বা যতদিন সে নাবালক থেকে সাবালক হচ্ছে, রাজাকে নিশ্চিত করতে হবে এই অনাথ বালকের সম্পত্তিতে যেন কেউ হাত না দেয়।

উক্ত শ্লোক অনুসারে এটা স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে রাজা কিংবা দেশের প্রধানকে অনাথের ধনসম্পত্তি রক্ষার জন্য বলা হচ্ছে।

 ✅পরবর্তী শ্লোকে বলা হয়েছে--

বশাহপুত্রাসু চৈবং স্যাদ্রক্ষণং নিষ্কুলাসু চ।
পতিব্রতাসু চ স্ত্রীষু বিধবাস্বাতুরাসু চ।।
মনুস্মৃতি ৮.২৮

বঙ্গানুবাদ - বন্ধ্যা স্ত্রী যাহার স্বামী দারান্তর পরিগ্রহ করিয়া, গ্রাসাচ্ছাদন নির্ব্বাহোচিত ধন দিয়া রক্ষণাবেক্ষণে বিরক্ত এবং পুত্ররহিত গ্রোবিত ভর্ত্তৃকা এবং যে স্ত্রীর সপিণ্ডাদি অভিভাবক কেহহ নাই, অথচ নিজে সাধ্বী এবং বিধবা ও রোগী স্ত্রী, ইহাদিগের ধন অনাথ বালকের ধনের ন্যায় রাজা রক্ষা করিবেন।  তাৎপর্য্য, যে স্ত্রীর কেহ অভিভাবক নাই রাজা সেই অনাথের ধনরক্ষা করিবেন।

উক্ত শ্লোক থেকে বোঝা যাচ্ছে যে অনাথ নারীরও ধনসম্পত্তি রক্ষা দায়িত্ব রাজার বা দেশের প্রধানের। 

 ✅ এবার খু্ব গুরুত্বপূর্ণ কথা,  যদি অনাথ ব্যক্তির কোন আত্মীয় স্বজন এসে তাঁর সম্পত্তি রক্ষার নামে আত্মসাৎ করার চেষ্টা করে তবে কিরূপ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে আত্মসাৎকারীদের? 

👉 হ্যাঁ ,  তাদের অবশ্যই শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে, সেটা উল্লেখ আছে-

জীবন্তীনান্ত্ত তাসাং যে তদ্ধরেয়ুঃ স্ববান্ধিবাঃ।
তাঞ্জিয্যাচৌরদন্ডেন ধার্ম্মিকঃ পৃথিবীপতিঃ।।
মনুস্মৃতি ৮.২৯

বঙ্গানুবাদ-  যদি সপিণ্ডেরা, আমরাই ইহার পর ঐ ধনের অধিকারী হইবো, অামরাই এক্ষণে ঐ ধন রক্ষা করিব,ইহা করিয়া ছলে উক্ত ধন গ্রহণ করে তবে ধার্মিক রাজা তাহাদিগের চৌর্য দণ্ড-দ্বারা শাসন করিবেন।

উক্ত শ্লোক অনুসারে বোঝা যাচ্ছে যে ছলপূর্বক
করে ধন নিয়ে নিলে সেসব আত্মীয়দের দণ্ড প্রদান করতে হবে যেটা পরিমাণ হবে চুরি করার অপরাধের শাস্তি।

সন্দর্ভঃ  
১. ঋগ্বেদ ভাষ্য - ৮ম মণ্ডল - পণ্ডিত শিবশঙ্কর শর্ম্মা , অার্য প্রতিনিধি সভা, পাঞ্জাব । 
২. মনুসংহিতা - মানবেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় 

🖋 প্রস্তুতিকরণে - 

🚩 বাংলাদেশ অগ্নিবীর 🚩

Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)