অনেক বিধর্মীরাই সনাতনীদের এই প্রশ্ন করে থাকেন।
যেহেতু গরু, মহিষ দুগ্ধ প্রদান করে এবং চাষাবাদে ব্যবহৃত হয়, গৃহপালিত প্রাণী, সর্বদা মানুষের বন্ধুর ন্যায় এবং পরিবারের ন্যায় একসাথে বসবাস করে তাই পবিত্র বেদে সকল প্রাণীহত্যা নিষেধের পাশাপাশি বারংবার গোরক্ষা করতে বলা হয়েছে, গোহত্যা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ঠিক যেমনি মাতা আমাদের দুগ্ধপান করান ও পিতা খাদ্যযোগান দেন ঠিক তেমনি গোরু আমাদের দুগ্ধপ্রদান করে এবং ষাঁড়/মহিষ এরা সেচে সাহায্য করে খাদ্যের যোগান দেয়। তাই সনাতন সংস্কৃতিতে এদের খুব আদরের চোখে দেখা হয় এবং জীবিত অবস্থায় এদের সর্বাত্মক যত্ন করা হয়। গৃহপালিত একটি গোরুর সাথে তার পালকের কত আত্মিক সম্পর্ক থাকে তা গ্রামগ
ঞ্জে গেলেই বুঝা যায়। শরৎচন্দ্রের মহেশ গল্পে তো তা মহাকাব্যিকভাবে ফুটে উঠেছে।
সনাতন ধর্মের প্রধান ধর্মগ্রন্থ পবিত্র বেদের অসংখ্য স্থানে প্রাণীটিকে হত্যা করতে নিষেধ করা হয়েছে। যেমন: ঋগ্বেদ- ৮/১০১/১৫, যজুর্বেদ- ১৩/৪৯, অথর্ববেদ- ১০/১/২৯; ইত্যাদি।
আবার সনাতন ধর্মে কিছু বিষয় সর্বদা শুদ্ধতার স্থানে রাখা হয়েছে। যেমন: দাঁত অশুদ্ধ, কিন্তু হাতীর দাঁত শুদ্ধ। চামড়া অশুদ্ধ, কিন্তু হরিণের চামড়া শুদ্ধ (গীতা: ৬/১১)। একটি হরিণের মৃত্যুর পর তার চামড়া ব্যবহার করা হতো। ঠিক তেমনি গোহত্যা নিষিদ্ধ হলেও স্বাভাবিক মৃত্যুর পর যদি তার চামড়া সমাজ কল্যাণে কাজে আসে তখন স্বয়ং সেটা শুচির স্থান লাভ করে। সনাতন ধর্মের মাহাত্ম্য এখানেই। তবে মনে রাখতে হবে যেকোন ধর্মীয় কাজে যেমন যজ্ঞে যে কোন পশুর চামড়ার তৈরী যে কোন দ্রব্য ব্যবহার নিষিদ্ধ। প্রাচীনকালে বৈদিক যুগে এজন্যেই আমরা দেখি সনাতনীরা কাঠের খড়ম বা জুতো ব্যবহার করতেন, চামড়ার কিছু ব্যবহার করতেন না। অপরদিকে সনাতন ধর্মের অন্যতম প্রাণপুরুষ যোগেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ ছিলেন একজন রাখাল বালক। তিনিও আজীবন গোরক্ষা করেছেন, এজন্য তাঁর আরেক নাম গোপাল।
অপরদিকে একইভাবে প্রশ্ন করা যায় শুকরের চর্বি দিয়ে অধিকাংশ ক্যাপসুলের কাভার তৈরি করা হয়, সেই কাভার যদি ঔষধ হিসেবে খেতে পারে, তাহলে বিধর্মীরা শুকরের মাংস খায়না কেন?
শূকরের হাড় ও চামড়া থেকে পাওয়া জেলাটিন প্রায় ৩১% বিভিন্ন ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্যে (ক্যাপসুলের শেল, সাপোজিটর, ট্যাবলেট ফিল্মিং বা আবরণ হিসাবে, সাসটেইনডরিলিজ ঔষধ তৈরিতে এনক্যাপসুলেশনে, বাইন্ডার হিসাবে, বিটা-ক্যারোটিনকে জলীয় দ্রবণে রাখতে ইত্যাদি ক্ষেত্রে), প্রায় ৫৯% খাদ্যদ্রব্যে {জ্যাম, জেলি, চিউয়িং গাম, সস, চাইনিজ স্যুপ, থিকেনার বা গাঢ়কারী উপাদান হিসেবে, সস, আইসক্রিম, ফ্রুট জুস (বিটা ক্যারোটিন সমৃদ্ধ হলুদ রঙের জুসে বিশেষ করে), এনার্জি ড্রিংক, মানুষ বাদে গবাদিপশুর খাদ্য তৈরিতে}, কসমেটিকস (শ্যাম্পু, কন্ডিশনার, শাওয়ার জেল, ফেস মাস্ক, হেয়ার স্প্রে, এ্যান্টি এজিং ক্রিম, বডি লোশন, লিপস্টিক, মেকআপ কিটের কিছু জিনিসে) ব্যবহার করা হয়।
(১) বিশ্বে উৎপাদিত মোট জেলাটিনের ৪৪% শূকরের চামড়া থেকে তৈরি হয় যা বিধমীদের জন্য হারাম।
(২) আবার মোট উৎপাদনের ২৮% জেলাটিন উৎপাদিত হয় গরুর চামড়া থেকে। কিন্তু জেলাটিন উৎপাদনকারী ৮০-৯০% দেশ অন্য রিলিজিয়ন সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হওয়ায় সেখানে হালাল উপায়ে গোরু জবাই করা হয় না।
সুতরাং গোরু হালাল হলেও জবাইয়ের সময় হালালভাবে জবাই না করায় কিংবা আদৌ জবাই না করে গুলি করে বধ করার কারণে এসব জেলাটিনও হালাল হিসাবে গ্রহণযোগ্য নয়।
(৩) জেলাটিনের বিশ্ব উৎপাদনের ২৭% পশুর হাড় থেকে তৈরী হয়। এখানে পশু বলতে শূকর ও গরুকেই মূলত বোঝানো হয়ে থাকে।
যেসব কারখানায় হাড় থেকে জেলাটিন বানায় তারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সকল ধরনের হাড়কেই একসাথে প্রসেস করে।
ফলে শূকরের সাথে গরুর হাড় মিশে যায়। সুতরাং এসকল পণ্য সব ই হারাম।
আবার হাতির দাঁত, শামুক-ঝিনুকের খোলস, সাপের বিষ, গুইসাপ ও বাঘের চামড়া দিয়েও বহু শৌখিন জিনিস তৈরি হয়। কিন্তু বিধর্মীরা শূকর, হাতি, সাপ, শামুক-ঝিনুক, গুইসাপ ও বাঘের মাংস খায় কি? খায়না। তাহলে কেন তারা এইসব দ্রব্য ব্যবহার করে?
অর্থাৎ মাংস খাওনা কিন্তু দেহের অন্য অংশ দিয়ে তৈরীকৃত পণ্য কেন ব্যবহার করো এই প্রশ্ন করলে তাদেরও ওষুধ থেকে শুরু করে সিংহভাগ পণ্য ব্যবহার বন্ধ হয়ে যাবে। তাই সর্বদা সনাতন ধর্মকে নিয়ে পড়ে না থেকে নিজ নিজ রিলিজিয়নে মনোযোগ দেয়াই উত্তম।
বাংলাদেশ অগ্নিবীর
সত্য প্রকাশে নির্ভীক সৈনিক