বেদে অর্থ - ধন - সম্পদ উপার্জন ও দান বিষয়ে কী বলা হয়েছে ? - অগ্নিবীর

বেদে অর্থ - ধন - সম্পদ উপার্জন ও দান বিষয়ে কী বলা হয়েছে ?

Share This


বেদে অসংখ্য মন্ত্র রয়েছে ধন বিষয়ে । নিঘণ্টুতে [২।১০] ধনবাচক ২০টি সমার্থক শব্দের উল্লেখ রয়েছে । যথাক্রমে -

মঘম্ । রেক্ণঃ । রিক্থম্ । বেদঃ । বরিবঃ । শ্বাত্রম্ । রত্নম্ । রয়িঃ । ক্ষত্রম্ । ভগঃ । মীচুম্ । গয়ঃ । নৃণম্ । দ্যুম্নম্ । তনা । বন্ধুঃ ইন্দ্ৰিয়ম্ । বসু । রায়ঃ । রাধঃ । ভোজনম্ । মেধা । যশঃ । ব্রহ্ম । দ্রবিণম্ । রবম সশ্রবঃ । বৃত্রম্ । বৃতম্—ইত্যষ্টাবিংশতিরেব ধননামানি ৷৷

ঋগ্বেদে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে " বয়ং স্যাম পতয়ো রয়ীনাম্ " [ ১০।১২১।১ ] = আমরা ঐশ্বর্যের অধিপতি হবো । সেই ঐশ্বর্য করে আমরা কেমন হবো তার সম্পর্কেও বেদ ভগবান বলছেন " বয়ং ভগবন্তঃ স্যাম " [ ঋ০ ৭।৪১।৫ ] = আমরা যেন ঐশ্বর্য দ্বারা সৌভাগ্যবান হই । এছাড়াও দেখা যায় -
'অগ্নে নয় সুপথা রায়ে ' [ যজু০ ৫।৩৬ ] আমরা ঐশ্বর্য লাভের জন্য সন্মার্গ গ্রহণ করবো ।'ভদ্রা রাতিঃ' [ ঋ০ ৮।১৯।১৯ ] আমাদের নিকট পবিত্র ধন হোক ।' অক্ষুধ্যা অতৃষ্যা স্ত' [ অথর্ব০ ৭।৬০।৪ ] আমরা যেন কখনো ক্ষুধার্ত- তৃষ্ণার্ত না থাকি । 'অদীনাঃ স্যাম শরদঃ শতম্' [যজু০ ৩৬।২৪ ] আমরা শত বছরের জীবনে যেন দীনহীন না হই । 'বিভূতিরস্তু সূনৃতা ' [ ঋ০ ১।৩০।৫ ] আমাদের সমৃদ্ধি সত্যের উপর স্থাপিত হোক । 'ন স্ত্রেধন্তং রয়ির্নশৎ' [ ঋ০ ৭।৩২।২১ ] অলস মানবের সম্পদ লাভ হয় না ।
এর মাধ্যমে স্পষ্ট যে ধনের মহিমা অপার । জীবনে বেঁচে থাকার জন্য আমাদের অর্থের ওপর নির্ভর করতে হয় । আমাদের চতুর্বর্গের মধ্যে ধর্ম অর্থ কাম ও মোক্ষ - অর্থকে দ্বিতীয় স্থানে রাখা হয়েছে । শাস্ত্রে বলা হয়েছে যে আমরা যে ধন বা সম্পদ উপার্জন করবো তা যেন সৎভাবে আমরা উপার্জন করি সৎ বা ভালো উদ্দেশ্যে যেন আমরা তাই ব্যয় করি । খারাপ কাজের মাধ্যমে সম্পদ হয়ত দ্রুতভাবে আমরা উপার্জন করতে পারি কিন্তু তা চিরস্থায়ী হয় না । এই কারণে বেদে স্পষ্টভাবে বা অনৈতিক ভাবে ধন বা সম্পদ উপার্জনকে অন্যায় বলে অভিহিত করেছে এবং যদি কেউ এই কাজ করে তাকে নিন্দা করা হয়েছে ।

যজুর্বেদে ' যোগক্ষেমো নঃ কল্পতাম্ ' [ ২২।২২ ] = আমাদের যোগক্ষেম প্রাপ্ত হোক । এর অর্থ হলো -

যোগ = অপ্রাপ্যের প্রাপ্তি বা অর্থাগম

ক্ষেম = প্রাপ্ত ধনের সুরক্ষা বা সুরক্ষার ব্যবস্থা করা ।

একই তাৎপর্য বোঝাতে ' রায়স্পোষ ' ও ' শং যোঃ ' শব্দসমূহও প্রযুক্ত হয় ।

নিজের ও পরিবারে প্রয়োজন পূর্তির জন্য ধন সংগ্রহ করো [ যজু০ ৪।৮ ] । ধন সম্পর্কে একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলা হয়েছে [ অথর্ব০ ৩।২৪।৫ ] যে শত হাতে উপার্জন কর এবং হাজার হাতে দান করো । পরমাত্মা সকল মানুষকে সৎ বুদ্ধি এবং মস্তিষ্ক রুপী মহান কোষ প্রদান করেছেন যাতে ১০০ ধরনের সৎগুণ রয়েছে মাধ্যমে আমাদের অনন্ত ধন-সম্পদ লাভ করার চেষ্টা করতে হবে [ অথর্ব০ ৭।১১৫।৩ ] । পবিত্র ধন সম্পদকেই আমাদের গৃহে আমরা স্থান দেব অপবিত্রকে নয় [ অথর্ব০ ৭।১১৫।৪ ] । আমরা দিন-হীন এবং যাদের ধন-সম্পদ নেই তাদের প্রয়োজন মেটানোর জন্য দান করব [ঋ০ ১০।১১৭।৫] । এছাড়াও নানা বিপত্তি থেকে রক্ষার জন্যও আমরা ধন সংগ্রহ করবো [ ঋ০ ৩।১।১৯ ] ।

  • বেদ থেকে নির্বাচিত অমৃতবিন্দুসমূহ -

মা বাং রাতিরুপ দসৎকদা চনাস্মদ্রাতিঃ কদা চন
ঋগ্বেদ ১.১৩৯.৫
হে মানবজাতি! তোমাদের দেওয়া দান কখনো নষ্ট হয় না, কখনো কমে যায় না অর্থাৎ দান করলে ধন হ্রাস হয় না।

দসনাভ্যঃ বৃহৎ
ঋগ্বেদ ৩.৩.১১
কর্ম (পরিশ্রম) করার মাধ্যমেই মানুষ ধন-সম্পদ লাভ করে।

দাশুষে ভজতি সূনরং বসু
ঋগ্বেদ ৫.৩৪.৭
যে মানব দান করে, তাকে পরমাত্মাও উত্তম ধন দান করেন।

অন্যমন্যমুপ তিষ্ঠন্ত রায়ঃ
ঋগ্বেদ ১০.১১৭.৫
ধন-সম্পদ কখনো একজনের কাছে স্থির থাকে না।

উতো রয়িঃ পৃণতো নোপ দস্যতি
ঋগ্বেদ ১০.১১৭.১
দানশীল ব্যক্তির ধন-সম্পদ কখনো হ্রাস পায় না।

পরিষদ্যং হ্যরণস্য রেক্ণঃ
ঋগ্বেদ ৭.৪.৭
ঋণরহিত ধনই পর্যাপ্ত।

স্বৈঃ ষ এবৈর্মুমুরৎ
ঋগ্বেদ ৮.৯৭.৩
মানুষ দুষ্কর্মের দ্বারা নিজের সন্তান ও ধন বিনষ্ট করে।

ভদ্রা ভদ্রস্য রাতয়ঃ
ঋগ্বেদ ১.১৩২.২
পবিত্র ব্যক্তির ধন-সম্পদও পবিত্র হয়।

উতাধীতং বি নশ্যতি
ঋগ্বেদ ১.১৭০.১
প্রাপ্ত ধন-সম্পদও নষ্ট হয়ে যায় অর্থাৎ ধন চিরস্থায়ী নয়।

অধ স্বপ্নস্য নির্বিদেঽভুঞ্জতশ্চ রেবতঃ... নশ্যতঃ
ঋগ্বেদ ১.১২০.১২
অকর্মণ্য এবং দানহীনের ধন-সম্পদ নষ্ট হয়ে যায়।

যো মা দদাতি স ইদেবম্ আবৎ
সামবেদ ৫৯৪
যে ঈশ্বরের প্রতি সমর্পণ করে, সে নিজের ধন-সম্পদের রক্ষা করে।

মা গৃধঃ কস্যস্বিদ্ ধনম্।
যজুর্বেদ ৪০.১
হে মানব ! অপরের ধন-সম্পদের প্রতি লোভ কোরো না।

দ্বিভাগধনমাদায় প্র ক্ষিণাত্যবর্ত্যা।
অথর্ববেদ ১২.২.৩৫
দুরাচারী জ্যেষ্ঠ সহোদরদের সম্পদ হরণ করেও সুখী হতে পারে না ।

নূ চিদ্ধি রত্নং সসতামিবাবিদৎ।
অথর্ববেদ ২০.২১.১
অকর্মণ্য মানবের ধন পুরুষার্থী কর্মঠ মানবগণ লাভ করেন ।

শতহস্ত সমাহর সহস্রহস্ত সং কির।
অথর্ববেদ ৩.২৪.৫
শত হস্ত দিয়ে উপার্জন করো এবং সহস্র হস্তে দান করো।

সং গৃভায় পুরূ শতোভয়াহস্ত্যা বসু।
অথর্ববেদ ২০.৫৬.৪
তুমি দুই হাত দিয়ে শত-শত প্রকারের ধন-সম্পদ একত্রিত করো।

সর্বৈঃ সংস্রাবৈর্ধনং সং স্রাবয়ামসি।
অথর্ববেদ ১.১৫.৩
নদীর প্রবাহের তুল্য আমরা যেন নিরন্তর ধন প্রাপ্ত করি।

তন্মে ভূয়ো ভবতু মা কনীয়ো।
অথর্ববেদ ৩.১৫.৫
আমার ব্যবসার মূলধন সদা বর্ধিত হোক , হ্রাস না পাক ।

ঋণাদ্ ঋণমিব সংনয়ন্।
অথর্ববেদ ১৯.৪৫.১
ঋণ নিয়ে ঋণ পরিশোধ করতে হবে।

রাষ্ট্রং চ রোহ দ্রবিণং চ রোহ।
অথর্ববেদ ১৩.১.৩৪
রাষ্ট্রের উন্নতি করো এবং ধন-সম্পদ লাভ করো।

দাতা রাধাংসি শুম্ভতি
ঋগ্বেদ ১.১৭.৪
যে দান করে, সে যেন দানকৃত বস্তুরই শোভা বর্ধন করে।

তদিৎসমানমাশাতে বেনন্তা ন প্র যুচ্ছতঃ ধৃতব্রতায় দাশুষে
ঋগ্বেদ ১.২৫.৬
দানকারী ব্যক্তি দীর্ঘায়ু লাভ করেন ও মানব সমাজে অমর হন অর্থাৎ দাতা অক্ষয় কীর্তি লাভ করেন।

যো মে পৃণাদ্ যো দদদ্ যো নিবোধাৎ
ঋগ্বেদ ২.৩০.৭
যে ব্যক্তি সম্পদ বা সুখ বা জ্ঞান নিঃস্বার্থভাবে দান করে, সে-ই প্রকৃত মিত্র।

রায়ে চ নঃ স্বপত্যায় দেব দিতিং চ রাস্বাদিতিমুরুষ্য
ঋগ্বেদ ৪.২.১১
হে প্রভু! আমাদের দান করার প্রবৃত্তি প্রদান করো।

য ওজিষ্ঠ ইন্দ্র তং সু নো দা মদো বৃষন্ত্স্বভিষ্টির্দাস্বান্
ঋগ্বেদ ৬.৩৩.১
আমাদের বলবান, সুখ-প্রদ ও দানশীল সন্তান প্রাপ্তি হোক।

দক্ষিণাং বর্ম কৃণুতে বিজানন্
ঋগ্বেদ ১০.১০৭.৭
জ্ঞানী ব্যক্তি দানকেই নিজের বর্ম (রক্ষাকবচ) করে নেন।

দক্ষিণাবন্তো অমৃতং ভজন্তে
ঋগ্বেদ ১.১২৫.৬
দানশীল ব্যক্তি অমরত্ব (দীর্ঘায়ু) প্রাপ্ত করেন।

বিসৃষ্টরাতির্যাতি বাঢসৃত্বা
ঋগ্বেদ ১.১২২.১০
দানশীল বীর নির্ভয় হয়ে অগ্রগামী হন।

ন স্রেধন্তং রয়ির্নশৎ
সামবেদ ৮৬৮
অসহায়দের দান না করে তাদেরকে আঘাতকারী ব্যক্তির কখনোই প্রকৃত সম্পদ লাভ হয় না।

ভদ্রা রাতিঃ
সামবেদ ১১১, ১৫৫৯
আমাদের দ্বারা প্রদত্ত দান কল্যাণময়ী ও কল্যাণদাতা হোক।

মঘবদ্ভ্যো ধ্রুবং রয়িম্
সামবেদ ৯৭১
উদার দানকারীদের স্থায়ী ঐশ্বর্য দাও।

রদাবসো ন পাপত্বায় রাসীয়।
অথর্ববেদ ২০.৮২.১
হে প্রভু ! আমি যেন কাউকে পাপকর্ম বৃদ্ধির জন্য দান না করি।

প্রস্তুতে -

বাংলাদেশ অগ্নিবীর 
 
 

No comments:

Post a Comment

Pages