১. আধ্যাত্মিক দুঃখ। নিজের মনের অহংকার, হিংসা, বিদ্বেষ এসব পুষে রাখলে এসব দ্বারা মানুষ নিজেই দুঃখ-কষ্ট পায়। তাই এগুলো আধ্যাত্মিক দুঃখ।
৩. আধিভৌতিক দুঃখ। অন্যান্য প্রাণী, মানব দ্বারা আমরা যেসব দুঃখ-কষ্ট পাই সেগুলো আধিভৌতিক দুঃখ।
ভূ -অভ্যন্তরে শিলায় পীড়নের জন্যে যে শক্তির সঞ্চয় ঘটে, সে শক্তি হঠাৎ মুক্তি পেলে ভূ-পৃষ্ঠ ক্ষণিকের জন্য কেঁপে ওঠে এবং ভূ-ত্বকের কিছু অংশ আন্দোলিত হয়; এইরূপ আকস্মিক ও ক্ষণস্থায়ী কম্পনকে ভূমিকম্প বলে। সাধারণত কম্পন-তরঙ্গ থেকে যেই শক্তির সৃষ্টি হয়, তা ভূমিকম্পের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। এই তরঙ্গ ভূ-গর্ভের কোন নির্দিষ্ট অঞ্চলে উৎপন্ন হয় এবং উৎসস্থল থেকে তা চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে।
বেশিরভাগ ভূমিকম্পের কারণ হল ভূগর্ভে ফাটল ও স্তরচ্যুতি হওয়া; কিন্তু সেটা অন্যান্য কারণেও; যেমন: অগ্ন্যুৎপাত, ভূমিধস, খনিতে বিষ্ফোরণ বা ভূগর্ভস্থে নিউক্লিয়ার গবেষণায় ঘটানো আণবিক পরীক্ষা থেকেও হয়ে থাকতে পারে। ভূগর্ভে ভূমিকম্পের প্রাথমিক ফাটলকে বলে কেন্দ্র (ফোকাস) বা অধোকেন্দ্র (হাইপোসেন্টার) এবং অধোকেন্দ্র থেকে উল্লম্ব বরাবর ভূপৃষ্ঠে অবস্থিত কেন্দ্রটিকে উপকেন্দ্র (এপিসেন্টার) বলে।
পবিত্র বেদে ভূমিকম্প সম্পর্কে প্রার্থনা করা হচ্ছে -
পণ্ডিত ক্ষেমকরণ দাস ত্রিবেদী এর তাৎপর্যে বলেছেন,
দূরদর্শী মানব ভূমিকম্প, উল্কাপিণ্ড অধপতিত হওয়া, ভূমিধ্বস, রোগ যাতে গোদুগ্ধ নষ্ট হয়ে যায় ইত্যাদি বিঘ্ন থেকে রক্ষার ব্যবস্থা করে সুখী হবে।
পণ্ডিত হরিশরণ সিদ্ধান্তালঙ্কারও এসব আধিদৈবিক কষ্ট যেন আমাদের পীড়িত না করে সেই প্রার্থনা করা হয়েছে বলে ভাবার্থে উল্লেখ করেছেন।
সামবেদেও জীবকে উপদেশ দেওয়া হয়েছে যেন সে আদিদৈবিক দুঃখ থেকে নিজেকে পৃথক করে। কেননা আধিদৈবিক দুঃখ মানবকারণেও হতে পারে যেমন অধিক বৃক্ষসংহার, পার্বত্যভূমি নষ্ট করা ইত্যাদি ।
অগ্নে হেডাꣳসি দৈব্যা যুয়োধি নঃ
সামবেদ ১৬২৪
অনুবাদঃ হে উন্নতি সাধক জীব ! আমাদের দৈবিক কারণে হওয়া প্রকোপ থেকে নিজেকে রক্ষা করো ।
ভূমিকম্প যে অত্যন্ত প্রবল হতে পারে এই বিষয়েও আমরা বেদে দেখতে পাই -
মহৎসধস্থং মহতী বভূবিথ মহান্বেগ এজথুর্বেপথুষ্টে
অথর্ববেদ ১২।১।১৮
অনুবাদঃ হে ভূমিমাতা ! তুমি একত্রে বসবাসের জন্য মহান স্থান । তুমি সত্যিই বিশাল । তুমি তীব্র গতিশীল । তোমার কম্পন অর্থাৎ ভুমিকম্পও অত্যন্ত প্রবল ।

১। ভূমিকম্প হচ্ছে টের পেলে বা খবর পেলে সঙ্গে সঙ্গে ফাঁকা ও উন্মুক্ত স্থানে আশ্রয় নিন।
২। উঁচু ভবনে থাকলে এবং বের হতে না পারলে জানালা বা দেয়ালের পাশে অবস্থান না নিয়ে শক্ত কোনো বীম, টেবিলের নিচে অবস্থান নিন।
৩। হতবিহ্বল না হয়ে ধৈর্য ধরে পরিস্থিতি মোকাবেলা করুন।
বহুতল ভবনে একই জায়গায় অনেক মানুষ একসঙ্গে না থেকে ভাগ হয়ে আশ্রয় নিন।
৪। আপনার মুঠোফোনে ফায়ার সাভির্স এবং দরকারি মোবাইল নম্বরগুলো আগাম সতর্কতা হিসেবে আগেই রেখে দিন। বিপদের সময় আপনার কাজে লাগবে।
৫। দ্রুত নামার জন্য ভবন থেকে লাফিয়ে পড়বেন না।
৬। ভূমিকম্পের সময় সম্ভব হলে মাথার ওপর শক্তকরে বালিশ অথবা অন্য কোনো শক্ত বস্তু [কাঠবোর্ড, নরম কাপড় চোপড়ের কুণ্ডলি] ধরে রাখুন।
৭। গ্যাস এবং বৈদ্যুতিক সংযোগ থেকে দূরে অবস্থান নিন।
উচু ভবন থেকে দ্রুত নামার জন্য লিফট ব্যবহার করবেন না।
ভূমিকম্পের সময় গাড়িতে থাকলে গাড়ি খোলা জায়গায় থামিয়ে গাড়িতেই থাকুন।
৮। একবার ভূমিকম্পের পরপরই আরেকটা ছোট ভূমিকম্প হয় যাকে ‘আফটার শক’ বলে।
নিজেকে বিপদমুক্ত ভাবতে অন্তত একঘণ্টা সময় নিন ।
শিক্ষা ও শাস্ত্রার্থ সমন্বয়ক
বাংলাদেশ অগ্নিবীর