প্রতিবছর
একটি বিশেষ সময় আসলে বাংলাদেশের এক শ্রেণির সনাতনী পশুবলি নিয়ে বেশ
তোড়জোড় আরম্ভ করেন। বেদবিরোধী এই পশু হত্যাকে সমর্থন করার জন্য তারা
শাস্ত্র বিকৃতি, কুযুক্তি প্রয়োগ এহেন অপচেষ্টা নেই যে যা করেন না। তেমন
একটি কুযুক্তি হলো: অস্ত্র হাতে নিরীহ পশুকে বলি দিলে ও সেই রক্ত দেখলেই
সনাতনীদের কল্যাণ হবে, একতা আসবে। সব হিন্দু নির্যাতন, দমন-পীড়নের একমাত্র
সমাধান হলো বেশি বেশি করে পাঁঠাবলি দেয়া। নিরামিষাশীরা দুর্বল, সেক্যুলার
ও সবসময় বিধর্মীদের নির্যাতনের স্বীকার হয়ে অসহায়। আজ আমরা এই যুক্তির
পর্দাফাঁস করব।
ভারতের আদমশুমারি অনুযায়ী মোট হিন্দুর সংখ্যা প্রায় ৮০ ভাগ, ইসলাম ১৪.২, খ্রিস্টধর্ম ২.৩, শিখ ১.৭, বৌদ্ধ .৭, জৈন .৪।
মুসলিম,
খ্রিস্টানদের ভেতর নিরামিষাহারের পরিমাণ নগণ্য, শিখদের ভেতর ৬০%, জৈনদের
ভেতর প্রায় ৯০%। উপরোক্ত ছবি অনুযায়ী মোট ভারতীয়র ২৯ ভাগ নিরামিষাশী,
কাজেই সনাতনীদের ভেতর নিরামিষাহারের হার হবে প্রায় ৩৫ ভাগ।
এছাড়া পিউ রিসার্চ অর্গানাইজেশনের মত হলো প্রায় ৩৯ ভাগ ভারতীয় নিরামিষাশী এবং সনাতনীদের ভেতর এই হার ৪৪ ভাগ।
রাজ্যভিত্তিক
পরিসংখ্যান বিবেচনা করলে সবচেয়ে বেশি নিরামিষাশী রয়েছে রাজস্থানে (৭৫%),
হরিয়াণা, পাঞ্জাব, গুজরাটেও এই হার ৬০% এর ওপরে। হিমাচল প্রদেশ ৫৩% ও
উত্তর প্রদেশ ৪৭%, মধ্যপ্রদেশ ৫১% ও মহারাষ্ট্রে এই হার ৪০%।
প্রতি রাজ্যে গড়ে ১০% মুসলিম ধরলেও সনাতনীদের মাঝে নিরামিষাহারের হার হবে আরো ১.১১১১ গুণ।
এই
রাজ্যগুলোর ভেতরে প্রায় সবগুলিই হিন্দুত্ববাদের আঁতুড়ঘর বলে বিবেচিত।
হরিয়াণা, রাজস্থান, গুজরাট, উত্তর প্রদেশের হিন্দু একতা সর্বদাই অনুকরণীয়
ও প্রশংসনীয়। এছাড়া মুসলিম জনসংখ্যা বাদ দিলে জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যেও
বেশিরভাগ সনাতনীই নিরামিষাশী [যারা ডোগরা নামে খ্যাত] বলেই দেখা যাচ্ছে।
আবার, এই রাজ্যগুলির বাসিন্দারাই মূলত বীর হিসেবে খ্যাত ও ভারতীয়
সেনাবাহিনীর বেশিরভাগ জাতি ভিত্তিক রেজিমেন্ট এদের নিয়েই তৈরি, যেমন শিখ,
কাশ্মীরি ডোগরা, রাজপুত, পাঞ্জাবি জাঠ।
অন্যদিকে
যেসব সনাতনী অধ্যুষিত রাজ্যে নিরামিষাহারের হার কম, যেমন: পশ্চিমবঙ্গ,
তামিলনাডু, অন্ধ্র, কেরালা, তেলেঙ্গানা প্রতিটি রাজ্যই মূলত সনাতনীদের
বিরোধী সেক্যুলার, নাস্তিক, বিধর্মী অপশক্তির গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি বলে
বিবেচিত। অন্ধ্রে মিশনারিদের কর্মকাণ্ড, তামিলনাড়ুতে তথাকথিত দ্রাবিড়বাদী
কিংবা কেরালা-পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থীদের কর্মকাণ্ড সনাতনীদের মাঝে বিভেদ
সৃষ্টির জন্য দায়ী।
এর
সাথে আহারের কোনো সম্পর্কই নেই। আহার দ্বারা কখনো বীরত্ব নির্ধারিত হয়
না। বীরত্ব অর্জন করতে চাইলে শরীরচর্চা, ব্যায়াম, জিম এগুলোর প্রসার
বাড়াতে হবে। ব্রিটিশ বিরোধী বিপ্লবীরা নানা জায়গায় ব্যায়ামাগার ও
সমিতির মাধ্যমেই বিপ্লবী আদর্শ প্রসার করেছেন, নিজেদের শক্তি অর্জন
করেছেন। বিপ্লবীরা হাজার হাজার, লাখ লাখ পাঠা কেটে ব্রিটিশদের তাড়িয়েছেন,
এমন মোটেও না। কাজেই এসব কুযুক্তি ও বিকৃত রুচির মানসিকতা বন্ধ করা উচিত।
কেবল আহারের কারণে জীবিত, মৃত ব্যক্তিকে নিয়ে মজা ও কটূক্তি করা সুস্থ
মানুষের পরিচায়ক না।
© বাংলাদেশ অগ্নিবীর