দৈনিক বেদবাণী


এই সমগ্র সংসার নিরোগ এবং শুভচিন্তা যুক্ত হোক । যজুর্বেদ ১৬.৪                    সূর্য-এর আলোয় স্বয়ং আলোহীন চাঁদ আলোকিত হয় । ঋগ্বেদ ৫.৪০.৫                    প্রশংসনীয় সংস্কৃতি, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও মাতৃভূমি— এই ত্রয়ী সুখ-সমৃদ্ধি প্রদান করে। ঋগ্বেদ ১.১৩.৯                    উত্তম জীবন লাভের জন্য আমাদের জ্ঞানীদের সাহচর্যে চলা উচিৎ। ঋগ্বেদ ১.১২.১৬                    যে ব্যক্তি সম্পদ বা সুখ বা জ্ঞান নিঃস্বার্থভাবে দান করে, সে-ই প্রকৃত মিত্র। ঋগ্বেদ ২.৩০.৭                    মানুষ কর্ম দ্বারাই জগতে মহত্ত্ব ও প্রসিদ্ধি লাভ করে। ঋগ্বেদ ৩.৩৬.১                    হে পতি! তোমার স্ত্রীই গৃহ, স্ত্রীই সন্তানের আশ্রয়। ঋগ্বেদ ৩.৫৩.৪                    পরমাত্মার নিয়ম বিনষ্ট হয় না; তা অটুট, অচল ও অপরিবর্তনীয়। ঋগ্বেদ ৩.৫৪.১৮                    এই ধর্মের মার্গই সনাতন, এই পথে চলেই মানবগণ উন্নতি লাভ করে। ঋগ্বেদ ৪.১৮.১                    পরমাত্মার নিকট কোনো মানুষই বড় বা ছোট নয়। সকল মানুষই সমান এবং পরস্পরের ভ্রাতৃস্বরূপ। ঋগ্বেদ ৫.৬০.৫                    যে ব্যক্তি অকারণে অন্যের নিন্দা করে, সে নিজেও নিন্দার পাত্র হয়। ঋগ্বেদ ৫.২.৬                    নিশ্চিতরূপে এই চতুর্বেদ কল্যাণপ্রদায়িনী এবং মানবকে জ্ঞান প্রদান করে ধারণকারিণী। ঋগ্বেদ ৫.৪৭.৪                    বীর মানবের জন্য পর্বতও সুগম হয়ে যায়। ঋগ্বেদ ৬.২৪.৮                    আমরা অন্যের সঞ্চিত পাপের কর্মফল ভোগ করি না। ঋগ্বেদ ৬.৫১.৭                    হে মিত্রগণ! ওঠো— উদ্যমী হও, সাবধান হও এবং এই সংসাররূপী নদীকে অতিক্রম করো। ঋগ্বেদ ১০.৫৩.৮







বেদে স্নেহময়ী মায়ের বন্দনা - ২১টি বৈদিক প্রমাণ

সত্যান্বেষী
0

বেদে স্নেহময়ী মায়ের বন্দন - ২১টি বৈদিক প্রমাণ 


ও মা ! তুমি রসময়ী, স্নেহময়ী আমাদের মত সন্তানগণের হিতের জন্য নিজের সর্বস্ব উজাড় করে দাও। হে মা ! তুমি ত্যাগময়ী, দয়াময়ী, ক্ষমাময়ী, সত্যময়ী, জ্ঞানময়ী, কর্মময়ী, ধর্মময়ী। বেদ তোমাকে 'আপঃ' 'সরস্বতী', 'উষা', 'অদিতি', 'অসুনীতি', 'পৃথিবী', বিদ্যুৎ', 'অম্বা', 'দেবী', ইত্যাদি শব্দে স্মরণ করেছে। তুমি হলে স্নেহময়ী এবং পরিশুদ্ধ জলের মতো বাৎসল্যরসে পরিপূর্ণ তথা পরিশুদ্ধ হওয়ার কারণে 'সরস্বতী' হও। তুমি প্রকাশময়ী প্রাকৃতিক উষার ন্যায় বুদ্ধি-চিন্তাশক্তির স্ফুরণের কারণে দেদীপ্যমান হওয়ার কারণে 'উষা' হও। তুমি আন্তরিক তথা বাহ্য শত্রুদের দ্বারা অখণ্ডিত এবং অপরাজেয় হওয়ার কারণে 'অদিতি' হও। তুমি নিজের ও নিজের সন্তানদের শরীরে প্রশস্ত প্রাণের নয়ন করার কারণে 'অসুনীতি' হও। তুমি বিস্তীর্ণ ভূমির ন্যায় বিশাল হৃদয়বতী হওয়ার কারণে 'পৃথিবী' হও। তুমি বিদ্যুতের মতো তেজোময় হওয়ার কারণে 'বিদ্যুৎ' হও। তুমি সময়ানুসার সদুপদেশ করার কারণে 'অম্বা' হও। তুমি দিব্য গুণের সাথে প্রকাশিত হওয়ার কারণে 'দেবী' হও। হে মা ! তোমার উপর আমরা গর্বিত, তোমার মতো হওয়ার জন্য আমরা যেন প্রচেষ্টা করি, শিক্ষার দ্বারা যেন প্রভাবিত হই।
(১)
আপো অস্মান্মাতরঃ শুন্ধয়ন্তু ঘৃতেন নো ঘৃতপ্বঃ পুনন্তু ।
বিশ্বং হি রিপ্রং প্রবহন্তি দেবীরুদিদাভ্যঃ শুচিরা পূত এমি ॥
ঋ০ ১০।১৭।১০
তাৎপর্যঃ জলের মতো শুদ্ধকারী মায়েরা আমাদের অন্তঃকরণগুলোকে শুদ্ধ করুক। ঘৃত এবং তেজের দ্বারা পবিত্রতা প্রদাত্রী তাঁরা আমাদেরকে শুদ্ধ ঘৃতের আহার করিয়ে তথা স্ব-তেজস্বিতার দ্বারা আমাদেরকে পবিত্র করুক। দিব্যগুণময়ী মায়েরা সব দোষ এবং পাপকে দূর করার ক্ষমতা রাখে। এঁদের সান্নিধ্যে থেকে শুদ্ধ-পবিত্র-প্রদীপ্ত হয়ে আমি বাইরের কার্যক্ষেত্রে পদার্পণ করি।
(২)
ই॒দমা॑প॒: প্র ব॑হতাব॒দ্যং চ॒ মলং॑ চ॒ যৎ । যচ্চা॑ভিদু॒দ্রোহানৃ॑তং॒ যচ্চ॑ শে॒পে অ॑ভী॒রুণ॑ম্ ।
আপো॑ মা॒ তস্মা॒দেন॑স॒: পব॑মানশ্চ মুঞ্চতু ॥
যজু০ ৬।১৭
তাৎপর্যঃ হে চিত্তকে শুদ্ধ করা জল-তুল্য মায়েরা। ! এই যে আমার ভিতরে নিন্দনীয় এবং মলিন প্রবৃত্তিগুলি রয়েছে, তাঁকে দূরে বহিয়ে দাও। আমি যদি কারও সাথে দ্রোহ করি, অসত্য ভাষণ বা এক অসত্য আচরণ করি এবং কোনো নির্ভয় সজ্জন ব্যক্তির প্রতি অপশব্দ বলি বা তাঁকে অপমানিত করি, তাহলে সেই পাপ থেকে হে মায়েরা, তুমি এবং পবিত্রতাকারক পিতা আমাদিগকে মুক্ত করো ।
(৩)
মনো॑ মে তর্পয়ত॒ বাচং॑ মে তর্পয়ত প্রা॒ণং মে॑ তর্পয়ত॒ চক্ষু॑র্মে তর্পয়ত॒ শ্রোত্রং॑ মে তর্পয়তা॒ত্মানং॑ মে তর্পয়ত প্র॒জাং মে॑ তর্পয়ত প॒শূন্মে॑ তর্পয়ত গ॒ণান্মে॑ তর্পয়ত গ॒ণা মে॒ মা বিতৃ॑ষন্ ॥
যজু০ ৬।৩১
তাৎপর্যঃহে জলের মতো তৃপ্তিদায়ক মাতাগণ। আমার মনকে উত্তম সংকল্পে তৃপ্ত করো, আমার বাণীকে সত্য এবং মাধুর্যের দ্বারা তৃপ্ত করো, আমার প্রাণকে প্রাণন-শক্তিতে তৃপ্ত করো, আমার চক্ষুকে ভদ্রদর্শনের দ্বারা তৃপ্ত করো, আমার কানকে ভদ্র শ্রবণের দ্বারা তৃপ্ত করো, আমার আত্মাকে আত্ম-বলের দ্বারা তৃপ্ত করো, আমার প্রজাগণকে সদ্গুণের দ্বারা তৃপ্ত করো, আমার পশুগুলিকে পুষ্টির দ্বারা তৃপ্ত করো, আমার পরিবার এবং সমাজের সদস্যগণকে পারস্পরিক সৌহার্দের দ্বারা তৃপ্ত করো - আমার পারিপার্শ্বিক সকলে যেন কোনো মতেই অতৃপ্ত না থাকে।
(৪)
ইদং ব আপো হৃদয়ময়ং বৎস ঋতাবরীঃ ।
ইহেত্থমেত শক্বরীর্যত্রেদং বেশয়ামি বঃ ॥
অথর্ব০ ৩।১৩।৭
তাৎপর্যঃ হে সত্যাচরণময়ী এবং জলের সমান স্নেহময়ী মাতাগণ ! তোমার হৃদয় অত্যন্ত পবিত্র, আমি হলাম তোমার সন্তান। হে শক্তিময়ী মাতাগণ ! আমি তোমার হৃদয়কে আমার নিজের দিকে প্রেরিত করছি, সেখানে তুমি পৌঁছাও এবং স্বস্নেহ প্রদান করোঁ।
(৫)
উত স্যা নঃ সরস্বতী ঘোরা হিরণ্যবর্তনিঃ ।
বৃত্রঘ্নী বষ্টি সুষ্টুতিম্ ॥
ঋ০ ৬।৬১।৭
তাৎপর্যঃ দুষ্টতা, অবিদ্যা, দুর্ব্যসন, দুরাচার ইত্যাদির প্রতি ভয়ভীত যে থাকে, আকাশে স্বর্ণিম রেখা টানা বিদ্যুতের সমান সোনালী চরিত্রের আভাকে যে বিকীর্ণ করে দেয়, যে পাপের নাশ এমনভাবে করে যেমনভাবে বিদ্যুৎ মেঘের হনন করে, সেই প্রেম রসময়ী বীরাঙ্গনা মা আমাদের কাছে এই আশা করে, যে আমাদের উৎকৃষ্ট স্তুতি হোক, আমাদের সর্বত্র যশোগান হোক।
(৬)
শিবা নঃ শন্তমা ভব সুমৃডীকা সরস্বতি ।
মা তে যুয়োম সন্দৃশঃ ॥
অথর্ব০ ৭।৬৮।২
তাৎপর্যঃ হে প্রেমরসময়ী মা ! তুমি আমাদের জন্য মঙ্গলকারিণী হও, তুমি আমাদের জন্য শান্তিবর্ষিকা হও, তুমি আমাদের জন্য উৎকৃষ্ট সুখপ্রদাত্রী হও। আমরা যেন তোমার কৃপা দৃষ্টি থেকে কখনও বঞ্চিত না হই।
(৭)
ক্ষত্রায় ত্বং শ্রবসে ত্বং মহীয়া ইষ্টয়ে ত্বমর্থমিব ত্বমিত্যৈ ।
বিসদৃশা জীবিতাভিপ্রচক্ষ উষা অজীগর্ভুবনানি বিশ্বা ॥
ঋ০ ১।১১৩।৬
তাৎপর্যঃ হে উষার ন্যায় প্রবোধদায়িনী মা ! তুমি তোমার প্রিয় সন্তানগণকে, তাঁদের রুচি এবং প্রবৃত্তি অনুসারে পৃথক-পৃথক গঠনপ্রক্রিয়ায় নাও । কাউকে তুমি ক্ষত্রিয়ত্বের শিক্ষা দাও, কাউকে অন্ন উৎপাদনের, ধনোপার্জনের আদি বৈশ্যকর্মের শিক্ষা দাও। কাউকে তুমি যজ্ঞ করা-করানো আদি ব্রাহ্মণোচিত কর্মের পাঠ দান করো, কাউকে তুমি ইতস্ততঃ সঞ্চারণ করা মানে সেবকের কর্ম শেখাও। এই প্রকারে বিভিন্ন রুচিযুক্ত মানবগণকে তাঁদের নিজ নিজ যোগ্যতা অনুযায়ী জ্ঞান দেওয়ার জন্য তুমি উপদেশ প্রদান করে থাকো।
(৮)
মাতা দেবানামদিতেরনীকং যজ্ঞস্য কেতুর্বৃহতী বি ভাহি ।
প্রশস্তিকৃদ্ব্রহ্মণে নো ব্যুচ্ছা নো জনে জনয় বিশ্ববারে ॥
ঋ০ ১।১১৩।১৯
তাৎপর্যঃ হে উষার মতো প্রাণদায়িনী মাতা। তুমি বিদ্বান সন্তানদের মাতা হও, সৈনিকদের ন্যায় রাষ্ট্রভূমির রক্ষক হও; দেবপূজা, দান এবং সংগঠনের কার্যের পতাকা হও। এরকমই মহা মহিমাময়ী তুমি সর্বত্র কীর্তির দ্বারা প্রকাশিত হও। আমাদেরকে প্রশস্তি প্রদান করো, জ্ঞান-প্রকাশের জন্য অন্ধকার থেকে আমাদের উদ্ধার করো। হে সবার বরণ করে নিজের শরণে নেওয়া মা ! মানবের মাঝে তুমি আমাদেরকে বিশেষ গুণের দ্বারা প্রসিদ্ধ করো ।
(৯)
মহে নো অদ্য সুবিতায় বোধ্যুষো মহে সৌভগায় প্র যন্ধি ।
চিত্রং রয়িং যশসং ধেহ্যস্মে দেবি মর্তেষু মানুষি শ্রবস্যুম্ ॥
ঋ০ ৭।৭৫।২
তাৎপর্যঃ হে উষার মতো তেজস্বিনী মা ! আজ তুমি আমাদেরকে মহান সম্মার্গে চলার জন্য প্রবুদ্ধ করো। তুমি আমাদেরকে মহান সৌভাগ্যের জন্য নিয়ম-পরায়ণ করো । আমাদেরকে যশোময় অদ্ভুত ঐশ্বর্য প্রদান করো। হে দিব্যগুণময়ী মানুষী মা। তুমি মরণধর্মা মনুষ্যগণের মধ্যে আমাদেরকে কীর্তির ইচ্ছুক করে তোলো।
(১০)
অন্তিবামা দূরে অমিত্রমুচ্ছোর্বীং গব্যূতিমভয়ং কৃধী নঃ ।
যাবয় দ্বেষ আ ভরা বসূনি চোদয় রাধো গৃণতে মঘোনি ॥
ঋ০ ৭।৭৭।৪
তাৎপর্যঃ হে উষার মতো দিব্য প্রকাশে পরিপূর্ণ মা ! তোমার কাছে অনন্ত সুন্দর গুণসমূহের ভাণ্ডার বিদ্যমান। তুমি শত্রুকে আমাদের কাছ থেকে দূর করো, বিস্তৃত কর্তব্যমার্গকে আমাদের জন্য প্রশস্ত করোঁ, আমাদেরকে অভয় প্রদান করো। বিদ্বেষ ভাবনাকে আমাদের থেকে পৃথক করো। হে প্রশস্ত ঐশ্বর্যযুক্তা মা ! আমাদের জন্য প্রশস্ত ঐশ্বর্য নিয়ে এসো, আমাদের মতো উপাসকদের জীবনে সফলতা লাভ করাও।
(১১)
অদিতির্নো দিবা পশুমদিতির্নক্তমদ্বয়াঃ ।
অদিতিঃ পাত্বংহসঃ সদাবৃধা ॥
ঋ০ ৮।১৮।৬
তাৎপর্যঃ অদীন = সমৃদ্ধশালিনী এবং বিঘ্নগুলো থেকে অক্ষত=অখণ্ডিত, মন ও কাজে এক রকম এমন মা দিনের বেলায় আমাদের দর্শন এবং বিবেককে অক্ষুন্ন রাখুন, রাত্রিতেও আমাদের দর্শন এবং বিবেককে অক্ষুন্ন রাখুন। সদা আমাদের উন্নতি করানো সেই মা আমাদেরকে বিনাশক পাপপ্রবৃত্তি থেকে বাঁচিয়ে রাখুক।
(১২)
উত স্যা নো দিবা মতিরদিতিরূত্যা গমৎ ।
সা শন্তাতি ময়স্করদপ স্রিধঃ ॥
ঋ০ ৮।১৮।৭
তাৎপর্যঃ মননশীল, অদীন, অখণ্ডিত সেই মা প্রতিদিন তাঁর রক্ষার ছত্রছায়ার সাথে আমাদেব নিকটে আসুক। সে আমাদেরকে শান্তিদায়ক সুখ প্রদান করুক, সে হিংসাবৃত্তি এবং হিংস্রকগণকে আমাদের কাছ থেকে দূর করুক।
(১৩)
অনেহো ন উরুব্রজ উরূচি বি প্রসর্তবে ।
কৃধি তোকায় জীবসে ॥
ঋ০ ৮।৬৭।১২
তাৎপর্যঃ হে বিশাল জ্ঞানরূপ গতিযুক্তা - হে মহান কর্মশীলা মা ! তুমি আমাদেরকে নিষ্পাপ করে তোলো, যার ফলে আমরা বিশিষ্ট উন্নতির দিকে অগ্রসর হতে পারি। তুমি তোমার সন্তানগণকে উৎকৃষ্ট জীবন উপভোগকারী করে তোলো।
(১৪)
বাজস্য নু প্রসবে মাতরং মহীমদিতিং নাম বচসা করামহে ।
যস্যা উপস্থ উর্বন্তরিক্ষং সা নঃ শর্ম ত্রিবরূথং নি যচ্ছাৎ॥
অথর্ব০ ৭।৬।৪
তাৎপর্যঃ জাগতিক এবং পারমার্থিক শক্তি লাভের জন্য আমরা অদীন, অখণ্ডিত, অপরাজিত, পূজনীয় মাকে নিজের কথার দ্বারা অনুকূল করছি। উন্নতির অসীম আকাশ যাঁর ক্রোড়ে বিদ্যমান, সেই মা আমাদেরকে শারীরিক, মানসিক এবং আত্মিক এই তিনটি দুঃখের নিবারণ করা নিজের শরণ প্রদান করুক এবং শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা তিন ঋতুতে সুখকর ত্রিতল ঘর প্রদান করুক।
(১৫)
অসুনীতে মনো অস্মাসু ধারয় জীবাতবে সু প্র তিরা ন আয়ুঃ ।
রারন্ধি নঃ সূর্যস্য সন্দৃশি ঘৃতেন ত্বং তন্বং বর্ধয়স্ব ॥
ঋ০ ১০।৫৯।৫
তাৎপর্যঃ হে প্রাণদায়িনী মা! তুমি আমাদের ভেতরে মনোবলকে ধারণ করাও, উৎকৃষ্ট জীবনের জন্য আমাদের আয়ুকে অধিকাধিক বাড়াও। আমাদেরকে এমন যোগ্য করে তোলো যে আমরা সফলতার সূর্যের দর্শন করতে পারি। ঘৃত আদি পুষ্টিকর পদার্থের দ্বারা এবং তেজের দ্বারা তুমি আমাদের শরীরকে পরিপুষ্ট করো।
(১৬)
অসুনীতে পুনরস্মাসু চক্ষুঃ পুনঃ প্রাণমিহ নো ধেহি ভোগম্ ।
জ্যোক্পশ্যেম সূর্যমুচ্চরন্তমনুমতে মৃল়য়া নঃ স্বস্তি ॥
ঋ০ ১০।৫৯।৬
তাৎপর্যঃ হে প্রাণদায়িনী মা ! যদি আমাদের চক্ষু আদি ইন্দ্রিয়গুলি এবং প্রাণ-অপান আদি ক্ষীণ হয়ে গেছে, তো তুমি পুনরায় তাঁদের শক্তি আমাদেরকে প্রদান করো। পুনরায় আমাদের ভেতর উৎকৃষ্ট ভোগসমূহকে ভোগার শক্তি উৎপন্ন করো। তোমার ছত্রছায়াতে থেকে আমরা চিরকাল পর্যন্ত বিদ্যা, বিজ্ঞান ইত্যাদি সূর্যের দর্শন করতে থাকি। হে অনুকূল মতিপ্রদাত্রী মা। তুমি আমাদেরকে সুখী কর, আমাদেরকে কল্যাণ প্রদান করো।
(১৭)
স্যো॒না পৃ॑থিবি নো ভবানৃক্ষ॒রা নি॒বেশ॑নী । যচ্ছা॑ ন॒: শর্ম॑ স॒প্রথা॑: । অপ॑ ন॒: শোশু॑চদ॒ঘম্ ॥
যজু০ ৩৫।২১
তাৎপর্যঃ হে মা! তুমি হলে সাক্ষাৎ পৃথিবীস্বরূপা, পৃথিবীর সদৃশ বিস্তীর্ণহৃদয়া, উদার, ক্ষমাশীল, সমদর্শিনী, সর্বংসহা এবং পরোপকারিণী। তুমি আমাদের জন্য পৃথিবীর সমান সুখদায়িনী, অকণ্টক, ক্রুরতাদি-দোষরহিত তথা নিবাস প্রদান-কর্ত্রী হও। পৃথিবীর সমান কীর্তির দ্বারা প্রখ্যাত হয়ে তুমি আমাদেরকে সর্ববিধ কল্যাণ প্রদান কর। তুমি আমাদের পাপপ্রবৃত্তিকে জ্বালিয়ে ভস্ম করে দাও।
(১৮)
প্রাগপা॒গুদ॑গধ॒রাক্স॒র্বত॑স্ত্বা॒ দিশ॒ আধা॑বন্তু । অম্ব॒ নিষ্প॑র॒ সম॒রীর্বি॑দাম্ ॥
যজু০ ৬।৩৬
তাৎপর্যঃ হে অম্বা = হে সদুপদেশ এবং সৎ পরামর্শের দ্বারা কৃতার্থ করা মা ! পূর্ব-পশ্চিম- উত্তর-দক্ষিণ সবদিকগুলি, দিগ্‌বাসিনী প্রজাসমূহ, দৌড়ে দৌড়ে তোমার নিকটে আসুক। হে মা! তুমি সেসব প্রজাদের পালন করো, নিস্তার করো, উদ্ধার করো। তারা সবাই তোমার নির্ভয় কোলে বিশ্রাম করে তোমার প্রেমকে জানুক।
(১৯)
মা সু ভি॑ত্থা॒ মা সু রি॒ষোঽম্ব॑ ধৃ॒ষ্ণু বী॒রয়॑স্ব॒ সু । অ॒গ্নিশ্চে॒দং ক॑রিষ্যথঃ ॥
যজু০ ১১।৬৮
তাৎপর্যঃ হে মা! তুমি আমাদের মধ্যে বিভেদ হতে দিও না, তুমি আমাদেরকে হিংসার পাত্র হতে দিও না। তুমি আমাদের দ্বারা স্থিরতাপূর্বক বীরতার কর্ম করাও। তুমি এবং তোমার অগ্নিতুল্য সন্তান দুইজনে মিলে মহানকার্যগুলিকে পূর্ণ করবে।
(২০)
অভি নো দেবীরবসা মহঃ শর্মণা নৃপত্নীঃ ।
অচ্ছিন্নপত্রাঃ সচন্তাম্ ॥
ঋ০ ১।২২।১১
তাৎপর্যঃ কর্মকুশল, পুরুষার্থীগণের পত্নী, দিব্যগুণময়ী মাতাগণ অখণ্ডিত ডানাযুক্তা অর্থাৎ উন্নতির সমস্ত সাধনে সম্পন্ন হয়ে নিজের শুভকামনা, প্রীতি, রক্ষা, শাস্ত্র-শ্রবণ, ক্রিয়াশক্তি ইত্যাদির সাথে এবং মহান কল্যাণের সাথে আমাদের সমীপে এসে আমাদেরকে লাভান্বিত করতে থাকুক।
হে মাতাগণ ! আমরা তোমার প্রতি শ্রদ্ধাতে অবনত। তোমার ত্যাগ, তপ, বাৎসল্য, পরোপকার, সন্তান নির্মাণের চিন্তা, লক্ষ্যের প্রতি জাগ্রত চেতনা, ঈশ্বর বিশ্বাস, ধর্মপরায়ণতা, প্রশিক্ষণ-কুশলতা ইত্যাদির প্রতি নিজের কৃতজ্ঞতাকে ব্যক্ত করার জন্য আমরা শব্দ খুঁজে পাচ্ছি না। তোমার ঋণ থেকে আমরা কখনও মুক্ত হতে পারি না। আমরা তোমার চরণ-ধূলা মাথায় নেই, আমরা তোমাকে শত-শত প্রণাম অর্পণ করি। আমাদের মতো সন্তানদের জন্য বেদ ভগবানের যে নিম্নলিখিত আদেশ, তাকে আমরা সদা স্মরণে রাখব-
(২১) সীদ॒ ত্বং মা॒তুর॒স্যা উ॒পস্থে॒ বিশ্বা॑ন্যগ্নে ব॒য়ুনা॑নি বি॒দ্বান্ ।
মৈ॑নাং॒ তপ॑সা॒ মার্চিষা॒ঽভি শো॑চীর॒ন্তর॑স্যাᳪং শু॒ক্রজ্যো॑তি॒র্বি ভা॑হি ॥
যজু০ ১২।১৫
তাৎপর্যঃ ওহে মায়ের কাছ থেকে বিদ্যা, সুশিক্ষা ইত্যাদির কামনা করা সন্তান ! তুই মায়ের কাছে বস, সববিদ্যা ও বিজ্ঞানের বিদ্বান হ। তুই মাকে সন্তাপ দিয়ে এবং শোক-জ্বালা দিয়ে কখনও শোকাকুল করিস্ না। মায়ের সামীপ্যে থেকে শুদ্ধ মন এবং শুদ্ধ আচরণের জ্যোতিতে দেদীপ্যমান হ।
হে মাতাগণ! আমরা পুনরায় তোমাদেরকে প্রণাম করছি, তোমাদের বহুমূল্য আশীর্বাদকে নিজের হৃদয়ে ধারণ করছি, আমাদের কাছ থেকে তোমাদের যে আশা আকাঙ্ক্ষা রয়েছে তাকে পূর্ণ করার জন্য প্রতিজ্ঞা করছি।

© বাংলাদেশ অগ্নিবীর 




Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)