পঞ্চমহাযজ্ঞ হলো মনুষ্যজীবনের পাঁচটি কর্ম, যার দ্বারা মানুষ উত্তম সুখলাভ করে এবং মোক্ষলাভের পন্থা অনুসরণ করা। এখন পঞ্চমহাযজ্ঞ অর্থাৎ যে যে কর্মগুলো মানুষের প্রতিদিন অবশ্য কর্তব্য, সেই বিষয়ের বিধান সংক্ষেপে লেখা হচ্ছে।
🔴 এই পঞ্চমহাযজ্ঞের মধ্যে প্রথম হলো ব্রহ্মযজ্ঞ :-
ব্রহ্মযজ্ঞ সাধন করতে হলে, সমস্ত অঙ্গের সাথে বেদশাস্ত্রের পঠন-পাঠন তথা সন্ধ্যোপাসনা অর্থাৎ প্রাতঃকালে ও সায়ংকালে ঈশ্বরের স্তুতি প্রার্থনা ও উপাসনা- মানুষ মাত্রেরই করা কর্তব্য। পঠন-পাঠনের ব্যবস্থা আমরা ইতিপূর্বে বর্ণনা করেছি, সেখানে দেখে নিবেন। সন্ধ্যোপাসনা ও অগ্নিহোত্রের মত বিষয়ের বিধান যেভাবে আমি (অর্থাৎ স্বামীজী) মৎকৃত পঞ্চমহাযজ্ঞ বিধি নামক গ্রন্থে বর্ণনা করেছি সেভাবে জানবেন। যাইহোক, আমি এখানেও ব্রহ্মযজ্ঞ ও অগ্নিহোত্রের মত বিষয়ে আরও কিছু বৈদিক প্রমাণ উদ্ধৃত করছি। যেমন:-
🔸 সমিধাগ্নিং দুবস্যত ঘৃতৈর্বোধয়তাতিথিম্।
আস্মিন্ হব্যা জুহোতন🔸
(যজুর্বেদ ৩/১)
অর্থাৎ হে মনুষ্যগণ! তোমরা বায়ু, ঔষধি ও বর্ষার জলের শুদ্ধি সম্পাদন দ্বারা সকলের কল্যাণে ঘি এর মত শুদ্ধ বস্তু ও সমিধা অর্থাৎ আম ও পলাশের মত কাঠ দ্বারা, অতিথি রূপে অগ্নিকে নিয়মিত প্রকাশিত কর (করতে থাক-অনুবাদক) এবং সেই অগ্নিতে হোমের উপযোগী পুষ্টিকারক, মধুর ও সুগন্ধিযুক্ত, দুধ, ঘি, শর্করা, গুড়, কেশর, মৃগনাভী, রোগনাশক যেমন গুরুচী ও সোমলতার মত শুদ্ধ পদার্থ দিয়ে ভালোভাবে প্রতিদিন অগ্নিহোত্র করে সকলের উপকার সাধন কর।
🔸অগ্নিং দূতং পুরো দধে হব্যবাহমুপ ব্রুবে।
দেবাং আ সাদয়াদিহ🔸
(যজুর্বেদ ২২/১৭)
অগ্নিহোত্রকারী মানুষ এরকম ইচ্ছা করবেন যে,
আমি সকল প্রাণীর কল্যাণকারী পদার্থকে পরম উচ্চ মেঘমণ্ডলে পৌঁছে দেবার জন্য, অগ্নিকে দূতরূপ সেবকের মত নিজের সামনে স্থাপন করছি, যেহেতু এই অগ্নি হব্য। অর্থাৎ হবনীয় যোগ্য বস্তুগুলোকে, দেশান্তরে পৌঁছে দেয়, এজন্য একে 'হব্যবাট্' বলে। যে এই অগ্নিহোত্র বিষয় জানতে ইচ্ছা করেন, আমি তাকে এমন উপদেশ করি যে, তিনি বায়ু ও বর্ষার জলের শুদ্ধির জন্য, ভৌতিক অগ্নিতে অগ্নিহোত্র বা হোম করে, তা সংসারে শ্রেষ্ঠ গুণ সকলকে পৌঁছে দিন।
(অর্থাৎ সংসারের কল্যাণে হোম করে বায়ু ও বৃষ্টির জলের শুদ্ধি সম্পাদন করে, সংসারের কল্যাণ সাধনে নিয়োজিত থাকুন) ।
উপরে উল্লেখিত মন্ত্রের আর এক প্রকার অর্থ হয়, তাও এখানে প্রকাশ করছি যেমন: প্রত্যেক প্রাণী সত্য উপদেশক অগ্নি নাম দ্বারা প্রসিদ্ধ (অর্থাৎ হে অগ্নি নামধারী) পরমেশ্বর। আমি আপনাকে স্বেচ্ছায় উপাসনা করার যোগ্য মনে করে থাকি (অর্থাৎ অভিলাষ করি) হে পরমেশ্বর, আপনি এমন কৃপা করুন যে, আপনাকে যারা জানতে ইচ্ছা করেন, তাদেরকে আমি যেন শুভগুণযুক্ত বিশেষ জ্ঞানদায়ক উপদেশ করি (অর্থাৎ করতে সক্ষম হই), আপনিও কৃপা করে এই সংসারে প্রত্যেক প্রাণীকে শ্রেষ্ঠগুণসমূহ প্রাপ্ত করান।
🔸সায়ংসায়ং গৃহপতির্নো অগ্নিঃ প্রাতঃ প্রাতঃ সৌমনস্য দাতা।
বসোর্বসোর্বসুদান এধি বয়ং ত্বেন্ধানাস্তন্বঽ পুষেম🔸
(অথর্ববেদ - ১৯/৭/৩)
অর্থাৎ,
প্রতিদিন ভোরে ও সন্ধ্যার সময়, শ্রেষ্ঠ উপাসকের উপযুক্ত যেমন গৃহ ও আত্মার রক্ষক স্বরূপ ভৌতিকাগ্নি তথা পরমেশ্বররূপী উভয় প্রকার অগ্নিই পরিচালিত অর্থাৎ সর্বত্র সুগন্ধীকৃত করে ও উত্তমরূপে উপাসিত হয়ে, (ভৌতিকাগ্নি গৃহ ও বাহ্য পদার্থের রক্ষক ও কতক পরিমাণে আত্মার ও রক্ষক হয়ে থাকে, কারণ শরীরের আরোগ্যের সাথে কিছুটা আত্মারও সম্বন্ধ আছে, যদিও ভৌতিকাগ্নি বিশেষরূপে সব স্থান সুবাসিত করে থাকে, কিন্তু পরমেশ্বর রূপী অগ্নি সর্ব্বশ্রেষ্ঠ ও উপাসনার যোগ্য এবং জীবাত্মার রক্ষকস্বরূপ জানবে-অনুবাদক) যেমন আরোগ্য ও আনন্দ দান করেন, তেমন (বসোর্বসো) আমরা ও রাজ্যের মত শ্রেষ্ঠ পদার্থ সকলের প্রদাতা বলে (তিনিই বসুদানঃ) প্রসিদ্ধ ও সর্বৈশ্বর্য্যদাতা স্বরূপ হন। হে পরমেশ্বর, আপনি সর্বেশ্বর্য্যপ্রদ, আপনি আমাদের রাজ্য ব্যবহার বিষয়ে ও হৃদয় মধ্যে প্রকাশিত হন। উপরে উল্লেখিত মন্ত্রে অগ্নিহোত্র করবার জন্য ভৌতিক অগ্নিরও গ্রহণ করা কর্তব্য। (বয়ং ত্বে০) হে পরমেশ্বর। যেরূপ আমি আপনাকে পূর্বে যেভাবে উল্লেখ করা হয়েছে সেভাবে উপাসনা করে নিজ শরীরের পুষ্টিসাধন করে থাকি, তেমন অগ্নিহোত্রের মত কর্ম দ্বারা ও ভৌতিকামিকে প্রজ্জ্বলিত করে সংসারের এবং নিজ দেহের পুষ্টিসাধন করে থাকি।
🔸 প্রাতঃপ্রাতগৃহপতির্নো অগ্নিঃ সায়ংসায়ং সৌমনস্য দাতা।
বসোর্বসোর্বসুদান এধীন্ধানাত্বা শতহিমা ঋধেম🔸
(অথর্ববেদ - ১৯/৭/৪)
(প্রাতঃ গৃহপতির্নো ইত্যাদি) এটার অর্থ পূর্ব্ব বৎ, কিন্তু এই মন্ত্রের বিশেষত্ব এই যে, অগ্নিহোত্র ও ঈশ্বরের উপাসনা করতে করতে আমরা যেন (শতহিমাঃ) শত হেমন্ত ঋতু বয়ে যাওয়া পর্যন্ত (অর্থাৎ শত বর্ষ পর্যন্ত যা মানুষের পূর্ণ আয়ু-অনুবাদক) ধনের মত পদার্থর দ্বারা (সহিত) (ঋষৈম) বৃদ্ধি প্রাপ্ত হই।
🔴 দ্বিতীয় দেবযজ্ঞ :
অগ্নিহোত্র করবার জন্য তামাপাত্র বা মাটির বেদী প্রস্তুত করে কাঠ, রুপা ও সোনা-নির্মিত চমস অর্থাৎ অগ্নিতে সুগন্ধযুক্ত পদার্থ ও ঘি ঢালবার হাতা ও আজ্যস্থালি অর্থাৎ ঘি রাখবার পাত্র নিয়ে বেদীতে হোমার্থ পলাশ ও আমের মত বৃক্ষের সমিধা স্থাপন করে, তাতে কপূর ইত্যাদি দিয়ে অগ্নি প্রজ্বলিত করতে, পুর্বে উল্লেখিত পদার্থ দিয়ে, ভোর এবং সন্ধ্যাবেলা অথবা তেমনভাবে শুধুমাত্র ভোরে নিত্য হোম করবে, (অর্থাৎ করা কর্তব্য-অনুবাদক)।
অথাগ্নিহোত্রে হোমকরণমন্ত্রা:-
সূর্য়ো জ্যোতির্জোতিঃ সূর্য়ঃ স্বাহা
অর্থ- যিনি চরাচরের প্রকাশস্বরূপ, যিনি আত্মা ও সূর্য্যাদি প্রকাশরূপ লোক সকলেরও প্রকাশক, যিনি সকলের প্রাণস্বরূপ, তাঁর (অর্থাৎ এমন সর্বপ্রকাশক পরমাত্মার-অনুবাদক) স্বার্থে অর্থাৎ আজ্ঞা পালন ও প্রসন্নতার নিমিত্ত, সমস্ত জগতের উপকারের জন্য একাহুতি প্রদান অর্থাৎ আমরা হোম করছি
সূর্য়ো বর্চো জ্যোতির্বচঃ স্বাহা
অর্থ- সূর্য, যাঁকে পরমেশ্বর বলা হয়, তিনি আমাদের সকল প্রকার বিদ্যাপ্রদাতা, সেই সূর্য্যরূপী পরমেশ্বর সর্ব্ববিৎ ও জ্ঞানবান্। তিনি সকল
জ্ঞানীপুরুষদের হৃদয়ে অন্তর্যামীরূপে সত্যোপদেষ্টা (হয়ে থাকেন-অনুবাদক), এরকম সর্বাত্মা পরমেশ্বরের প্রীতির জন্য ও তাঁর অনুগ্রহ বলেই, আমরা অগ্নিহোত্র করছি।
জ্যোতিঃ সূর্য়ঃ সূর্য়ো জ্যোতিঃ স্বাহা
অর্থ- যিনি স্বয়ং প্রকাশমান্ ও সমগ্র জগৎ বা সংসারের প্রকাশকারী, এইরূপ জ্যোতিঃস্বরূপ পরমাত্মার প্রসন্নতার জন্য আমরা হোম করছি।
সজূর্দেবেন সবিত্রা সজূরুষসেন্দ্রবত্যা। জুষাণঃ সূর্য়ো বেতু স্বাহা।
অর্থ- যে পরমেশ্বর সূর্য্যাদিলোকে ব্যাপ্ত এবং বায়ু ও দিবসের সাথে ব্যাপ্ত থেকে সংসারের পরম কল্যাণকারক হয়ে থাকেন, তাঁকে আমরা জানি এবং তিনি যেন আমাদের কৃত (প্রদত্ত) হোম গ্রহণ করেন। উপরোক্ত মন্ত্র পাঠ করে চারটি আহুতি প্রদান দ্বারা ভোরেবেলায় অগ্নিহোত্রীগণ হোম করে থাকেন।
ইতি প্রাতঃকালমন্ত্রাঃ
🔹এখন সন্ধ্যাকালে অগ্নিহোত্র করার মন্ত্র বর্ণনা করছি 🔹
যথাঃ
অগ্নিজ্যোতিরগ্নিঃ স্বাহা।
অর্থাৎ অগ্নি যিনি জ্যোতিঃস্বরূপ পরমেশ্বর, (অগ্নি শব্দ "অঞ্চ" ধাতু হতে উৎপন্ন হয়েছে, যার অর্থ জ্ঞান, গতি ও পুজনীয়, অর্থাৎ সেই অগ্নি নামক পরমেশ্বর যিনি সাক্ষাৎ জ্ঞানস্বরূপ ও জ্ঞানপ্রদ তথা যিনি জ্যোতিস্মান্দিগেরও জ্যোতিঃস্বরূপ ও যিনি সকলের পতি তাকেই অগ্নি বলা হয়-পুনঃ অগ্নি শব্দে ভৌতিকাগ্নিও বুঝায়- অনুবাদক)। এইরূপ অগ্নিরূপী পরমাত্মার আজ্ঞানুসারে অর্থাৎ তাঁর প্রীত্যর্থে আমরা পরোপকার করার জন্য হোম করছি এবং উক্ত জ্ঞানস্বরূপ পরমেশ্বররূপী অগ্নির রচিত ভৌতিকাগ্নিতে সুগন্ধীযুক্ত ও পুষ্টিকারক হবনীয় পদার্থ অর্পণ করলে, উক্ত অগ্নি ঔ পদার্থ সকলকে পরমাণুতে পরিগণিত করে, বায়ু ও বর্ষার জলের সাথে মিশ্রিত হয়ে, উক্ত পদার্থদ্বয়কে শুদ্ধ করে দেয়, যা দ্বারা এই সংসারে সুখ ও আরোগ্যতা বৃদ্ধি হয়ে থাকে।
অগ্নির্বচো জ্যোতির্বচ স্বাহা
অর্থাৎ অগ্নিরূপী পরমেশ্বর (বর্জ্য) অর্থাৎ সকল প্রকার বিদ্যার প্রদাতা এবং ভৌতিকাগাগ্নিও আরোগ্যতা ও বুদ্ধির বৃদ্ধিকারক হয়ে থাকে। এজন্য আমরা হোম দ্বারা পরমেশ্বরের প্রার্থনা করছি। এইটা দ্বিতীয় আহুতির মন্ত্র
(মহর্ষি শ্রীস্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী মহাশয়, তৎকৃত পঞ্চমহাযজ্ঞ বিধি নামক পুস্তকে এই মন্ত্রের আর এক প্রকার অর্থ প্রকাশ করেছেন, যা আমি ভাষ্যের সাথে বর্ণনা এই করছি যথা:- "জ্ঞানপ্রদশ্চ জ্যোতিষাং জ্যোতিঃ পরমেশ্বরোৎস্তি তস্মৈ। (অগ্নিবচ্চো) য়ঃ পূর্বোক্তোমিরনন্তবিদ্য আত্মপ্রকাশক। সর্বপদার্থ প্রকাশকশ্চ সূর্য্যাদি দ্যোতকোৎন্তি তস্মৈ" অর্থাৎ যিনি জ্ঞানস্বরূপ এবং জ্যোতিষ্মানন্দগেরও জ্যোতিঃস্বরূপ পরমেশ্বর, তাঁরই প্রীত্যরর্থে আমরা আহুতি প্রদান করছি। যিনি অনন্তবিদ আত্মা - ও সকল পদার্থের প্রকাশক সূর্য্যাদি লোকেরও দ্যোতক তাঁরই
অগ্নিজ্যোতি রিতি মন্ত্রং মনসোচ্চার্য্য তৃতীয়াহুতির্দেয়া
তৃতীয় আহুতি প্রদানকালে প্রথম মন্ত্র মনে মনে উচ্চারণ করে, ঐ তৃতীয়াহুতি প্রদান করতে হয়।
সজুর্দেবেন সবিত্রা সজু রাত্র্যেন্দ্রবত্যা। জুষাণো অগ্নির্বেতু স্বাহা
অর্থাৎ যে অগ্নি পরমেশ্বর সূর্য্যাদি লোকে ব্যাপ্ত (প্রকাশমান) রয়েছেন, যিনি ইন্দ্রবতী অর্থাৎ বায়ু ও চন্দ্রযুক্ত রাত্রিতে বর্তমান আছেন, এইরূপ জ্ঞানস্বরূপ পরমাত্মা সম্প্রীত হয়ে, আমাদেরকে নিজকৃপায় নিত্যানন্দ বা মোক্ষসুখ প্রদান করেন। সেই পরমেশ্বরের প্রীত্যর্থেই আমরা আহুতি প্রদান করছি, (এই সকল মন্ত্রোচ্চারণ পূর্বক সন্ধ্যাবেলাঅগ্নিহোত্র করিবে-অনুবাদক)
যজুর্বেদ ৩/৯-১০
অথোভয়োঃ কালয়োগ্নিহোত্রে হোমকরণার্থাঃ সমানমন্ত্রা:-
ও৩ম্ ভূরগ্নয়ে প্রাণায় স্বাহা
অর্থাৎ যিনি প্রাণস্বরূপ এবং সমস্ত জগতের প্রাণীগনের জীবন দাতা, যিনি প্রাণ অপেক্ষাও প্রিয়তম, যিনি অগ্নি অর্থাৎ স্বপ্রকাশ ও প্রাণস্বরূপ, তাঁরই প্রীত্যর্থে আমরা হোম করছি।
ও৩ম্ ভূবর্বায়বেঽপানায় স্বাহা
অর্থাৎ যিনি মুমুক্ষু, মুক্ত, স্বসেবক ও সকল ধর্মাত্মাদের দুঃখনাশক দয়ালু ঈশ্বর, এবং যিনি বায়ু অর্থাৎ অনন্ত বলশালী, তাঁরই প্রীতির জন্য আমরা হোম করছি।
ও৩ম্ স্বরাদিত্যায় ব্যানায় স্বাহা
অর্থাৎ যিনি সর্ব বৃহৎ ব্রহ্ম তাঁরই প্রীতির জন্য আমরা হোম করছি
ও৩ম্ ভূর্ভুবঃ স্বরগ্নিবায়াদিত্যেভ্যঃ প্রাণাপানব্যানেভ্যঃ স্বাহা
অর্থাৎ যিনি ভূর্ভুবঃ ও স্বঃ স্বরূপ অর্থাৎ যিনি অগ্নি বায়ু ও আদিত্য স্বরূপ ও যিনি প্রাণ, অপান ও ব্যান স্বরূপ পরমাত্মা, আমরা তাঁরই প্রীত্যর্থে অগ্নিহোত্র করছি।
ও৩ম্ আপো জ্যোতী রসোঽমৃতং ব্রহ্ম ভূর্ভুবঃ স্বরোং স্বাহা
অর্থাৎ যিনি সর্বব্যাপক স্বপ্রকাশ রস অর্থাৎ নিত্যানন্দ ও মোক্ষরূপ ব্রহ্ম ও যিনি ভূর্ভুবঃ স্বঃ স্বরূপ তাঁরই প্রীত্যর্থে আমরা হোম করছি।
ও৩ম্ সর্ব্বং বৈ পূর্ণং স্বাহা
হে জগদীশ্বর আমরা পরোপকারারের জন্য যে সমস্ত কার্য করছি আপনার কৃপায় আমাদের সেই সকল কার্য পরোপকারে পর্যাপ্ত হোক।
ইতি সর্ব্বে মন্ত্রান্তৈত্তিরীয়োপনিষদাশয়ৈনৈকীকৃতাঃ।
প্রাতঃকালে ও সন্ধ্যাকালে সন্ধ্যোপাসনার পর যদি পূর্ববর্ণিত মন্ত্রগুলোর থেকে বেশী হোম করার ইচ্ছা হয়, তবে 'স্বাহা' শব্দ মন্ত্রের শেষে পাঠ বা উচ্চারণ করে, গায়ত্রী মন্ত্র দ্বারা হবন করা কর্তব্য। অগ্নিহোত্র এই শব্দ এইজন্য প্রয়োগ হয় যে, অগ্নি বা পরমেশ্বরের জন্য (অর্থাৎ প্রীত্যর্থে) বর্ষার জল ও বায়ুর শুদ্ধি জন্য তথা ঈশ্বরাজ্ঞা পালনের জন্য, যে হোমাদি কার্য করা হয় তাকেই অগ্নিহোত্র বলে, যেহেতু কেশর, কস্তুরী ইত্যাদি সুগন্ধীযুক্ত দ্রব্য, তথা ঘি দুধ ইত্যাদি পুষ্টিকারক পদার্থ, তথা গুড় ওশর্করাদি মিষ্ট ও বলবুদ্ধি ও ধৈর্য্যতা বর্দ্ধক ইত্যাদি শুভগুণযুক্ত দ্রব্যাদি নিয়ে হোম বা হবন করলে, বায়ু ও বর্ষার জল শুদ্ধ হয়ে থাকে এবং এজন্য পৃথিবীতে জন্ম সকল পদার্থের উত্তমতা সম্পাদন করিয়ে দেয়, এজন্য অগ্নিহোত্র সম্পাদন করলে লোকে অত্যন্ত সুখলাভ করতে সমর্থ হন। উপরোক্ত হবনকারী বেদোপযোগী ঈশ্বরাজ্ঞা পালন করে থাকেন, অতএব এইরূপ লাভ প্রাপ্তির জন্য সকলেরই যথাসময় অগ্নিহোত্র করা কর্তব্য।
ইতি অগ্নিহোত্র বিধি সমাপ্ত
🔴 তৃতীয় পিতৃযজ্ঞ :-
এখন তৃতীয় পিত্যজ্ঞ দুই প্রকার-প্রথম তর্পণ ও দ্বিতীয় শ্রাদ্ধ। যে কর্ম দ্বারা বিদ্বান ব্যক্তি, ঋষি ও পিতৃগণের তৃপ্তি সাধন হয়, তাকেই তর্পণ বলে। আর যে কর্ম দ্বারা বিদ্বান ব্যক্তি, সকল ঋষিগণ এবং পিতৃগণের শ্রদ্ধাপূর্বক সেবা করা যায়, তাকেই শ্রাদ্ধ বলে। জীবিত ও প্রত্যক্ষ বিদ্বান, ঋষিও পিতৃগণের সেবা করবে। মৃত বিদ্বান, ঋষি অথবা পিতৃগণের তর্পণ বা শ্রাদ্ধ করা কখনই বিধেয় বা যুক্তিযুক্ত নয়। বলতে কি তাঁদের সন্নিকর্ষের অভাবের কারণে তাঁদের সেবা কখনো সম্ভব হতে পারে না। বিশেষতঃ মৃত ব্যক্তির উদ্দেশ্যে শ্রাদ্ধাদি যা কিছু কার্য করা যায়, সেইসকল মৃত ব্যক্তির অপ্রাপ্তির কারণে নিষ্ফল হয়ে থাকে। অতএব শ্রাদ্ধ ও তর্পণ জীবিত এবং প্রত্যক্ষ বিদ্বান, ঋষি ও পিতৃগণের তৃপ্তি এবং সেবার জন্যই বেদে উপদিষ্ট হয়েছে। বিশেষতঃ সেবা করার উপযুক্ত পাত্র এবং সেবকও প্রত্যক্ষ থাকায় এমন কার্যই সম্ভব হয়ে থাকে, অর্থাৎ সেব্য ও সেবকের সন্নিকর্ষ থাকলেই শ্রাদ্ধ ও তর্পণ সম্ভব হতে পারে, নায়তো অন্যভাবে কখনোই সম্ভব হতে পারে না। দেব অর্থাৎ বিদ্বানগণ, ঋষিগণ এবং পিতৃগণই সৎকার যোগ্য এবং এঁদেরই সেবা করা কর্তব্য। এখন দেব, ঋষি ও পিতর কাকে বলে, সেই বিষয় প্রমাণ লিখছি যথা:-
পুনন্তু মা দেবজনাঃ পুনন্তু মনসা ধিয়ঃ। পুনন্তু বিশ্বা ভূতানি জাতবেদঃ পুনীহি মা
যজুর্বেদ ১৯/৩৯
অর্থাৎ হে জাতবেদ পরমেশ্বর। আপনি আমাকে সর্বপ্রকারে পবিত্র করুন, এবং যে সকল নিষ্ঠাবান উপাসক আপনার আজ্ঞা পালন করুন, (দেবজনাঃ) অথবা যাঁরা বিদ্বান ও জ্ঞানীপুরুষ বলে কথিত হন, তাদের বিদ্যাদান দ্বারা আমাকে (পুনন্ত) পবিত্র করুন। তথা (পুনন্ত্র মনসা) আপনার প্রদত্ত বিজ্ঞান অর্থাৎ বিশেষ জ্ঞান ও সেই বিষয়ে ধ্যান দ্বারা আমার (আমাদের) বুদ্ধি সকল পবিত্র হোক। (পুনন্ত বিশ্বা ভূতানি) আপনার কৃপা বলে সংসারস্থ প্রাণীরাই পবিত্র ও আনন্দযুক্ত হয়ে আমাদেরও সুখ ও আনন্দদায়ক হোক।
দ্বয়ং বা ইদং ন তৃতীয়মস্তি। সত্যং চৈবানৃতং চ সত্যমেব দেবা অনৃতং মনুষ্যা ইদমহমনৃতাৎ সত্যমুপৈমীতি তন্মনুষ্যেভ্যো দেবানুপৈতি। স বৈ সত্যমেব বদেৎ। এতদ্ধ বৈ দেবা ব্রতং চরন্তি যৎসত্যম্। তস্মাৎ তে য়শো য়শো হ ভবতি য় এবং বিদ্বান্ সত্যং বদতি
(শতপথ ব্রাহ্মণ ১/১/১/৪-৫)
দুই প্রকার লক্ষণ অনুসারে মানুষকে দুই প্রকার সংজ্ঞা দেওয়া যায় যথা: দেব ও মনুষ্য। সত্য ও মিথ্যা গুণকর্মস্বভাবের কারণে মানুষকে ঐ দুই ভাগে বিভাগ করা হয়েছে। (সত্যমেব) যাঁরা সত্যকারী, সত্যবাদী ও সত্যমানী তাদেরকেই দেব, এবং যারা মিথ্যাবাদী মিথ্যামানী ও মিথ্যাচারী অর্থাৎ যারা সর্বদা মিথ্যাকার্যের অনুষ্ঠানে রত থাকেন, তাদেরকেই মানুষ বলা হয়। (মিথ্যা পরিত্যাগ পূর্বক যিনি সত্যেরই সেবা করেন, তিনি দেবজাতির মধ্যে পরিগণিত, আর যিনি সত্য পরিত্যাগ করে মিথ্যার সেবন করেন, তিনিই মানুষ বলে গণ্য হন-অনুবাদক)। এজন্য মিথ্যা পরিত্যাগ করে সত্যকে প্রাপ্ত হওয়া অর্থাৎ সত্যাচরণে রত থাকা সকলেরই কর্তব্য। অতএব বুদ্ধিমানেরা নিরন্তর সত্যেরই অবলম্বন করে থাকেন যেহেতু দেবগণই সত্যব্রত আচরণ করে কীর্তিমান্ বা যশস্বীগণের মধ্যেও কীর্তিমান্ অর্থাৎ যশোভাগী হয়ে সদা আনন্দে অবস্থিতি করেন। কিন্তু তার বিপরীত আচরণকারী মানুষেরা দুঃখ প্রাপ্ত হয়ে সর্বদা পীড়িত বা দুঃখিত থাকেন।
বিদ্বাংসো হি দেবাঃ
(শতপথ ব্রাহ্মণ ৩/৭/৬/১৯)
এই কারণেই বিদ্বানদেরকেই দেবতা বলা হয়
অথর্ষিপ্রমানম :-
তং য়জ্ঞং বর্হিষি প্রৌক্ষণ্ পুরুষং জাতমগ্রতঃ। তেন দেবা অয়জন্ত সাধ্যা ঋষয়শ্চ য়ে
(যজুর্বেদ ৩৭/৯)
মন্ত্রটি ঋষিদের প্রমাণ বিষয়ে লিখিত হয়েছে, কিন্তু এর ভাষ্য ও ভাবার্থ পূর্বে সৃষ্টি বিদ্যা বিষয়ে বর্ণন করেছি, এজন্য এখানে পুনরায় উল্লেখ করলাম না, সেখানে দেখে নিবেন
অথ য়দেবানুব্রুবীত। তেনর্ষিভ্য ঋণং জায়তে তদ্ধ্যেভ্য এতৎ করোত্যৃষীণাং নিধিগোপ ইতি হ্যনুচানমাহুঃ
(শতপথ ব্রাহ্মণ ১/৭/৫)
পুনশ্চ ঋষি কাকে বলে, তারই প্রমাণ দিতেছেন-
যিনি প্রথমে পূর্ণরূপে সমস্ত বিদ্যা পাঠ করে, (সেই বিষয়ে সমস্ত জ্ঞান লাভ করে-অনুবাদক) অপরকে পাঠ বা সেই বিষয়ে উপদেশ করাকে ঋষিকর্ম বলে, (অর্থাৎ মানুষ পূর্ব বয়সে ব্রহ্মচর্যাশ্রম পালনকালে সমস্ত বিদ্যা ও শাস্ত্র অধ্যয়ন করার পর তিনি যে কার্য করেন, তাকে আর্য্যকর্ম বলে-অনুবাদক) এবং মানুষের ঋষিদের প্রতি যে পরিমাণে ঋণ থাকে, সেই সকল ঐ ঋষিদের সেবা দ্বারা নিবৃত্তি পায়। এজন্য নিত্য ঋষিদের নিকট হতে বিদ্যা গ্রহণ করা ও তাদের সেবা করা অর্থাৎ সেবায় রত থাকা মানুষের কর্তব্য, এবং বিদ্যা দান গ্রহণ ও তার পরিবর্তে ঋষিদের সেবা রূপ কার্য (বিদ্যাদাতা ও গ্রহীতা) উভয়েই আনন্দদায়ক হয়ে থাকে, এবং এরকম ব্যবহারই (নিধিগোপ) বিদ্যাকোষের রক্ষক স্বরূপ বলা হয়।
অথার্ষেয়ং প্রবৃণীতে। ঋষিভ্যশ্চৈবৈনমেতদ্দেবেভ্যশ্চ নিবেদয়ত্যয়ং মহাবীর্যো য়ো য়জ্ঞং প্রাপদিতি তস্মাদার্ষেয়ং প্রবৃণীতে
(শতপথ - ১/৪/৫)
অর্থাৎ যে সকল ঋষি এবং দেবগণ সর্বপ্রকার বিদ্যাধ্যয়ন করে নিজের কার্য করেন, তাদেরকে প্রিয়বস্তু দ্বারা সেবা করে মানুষ বিদ্বান্ ও মহাবীর্য্যশালী হয়ে বিশেষ জ্ঞান প্রাপ্ত হন। ঋষিগণ বিদ্যার্থীগণকে সর্ববিদ্যায় বিশারদ করে দেন। বিদ্বান্ ও বিদ্যার্থী এই উভয়কেই ঋষি বলা হয়। অতএব এই আর্যকর্ম অথবা মানুষ মাত্রেরই স্বীকার করা কর্তব্য
এখন পিতৃগণ বিষয়ে বেদ প্রমাণ দেওয়া হচ্ছে। যথা:-
ঊর্জং বহন্তীরমৃতং ঘৃতং পয়ঃ কীলালং পরিশ্রুতম্।
স্বধা স্থ তপয়ত মে পিতৃন্
(যজুর্বেদ ২/৩৪)
অর্থাৎ ঈশ্বর সকলের প্রতি এমন আজ্ঞা দিয়েছেন যে, হে মনুষ্যগণ! তোমরা পুত্র, পৌত্র, স্ত্রী ও এ্যতৃবর্গের প্রতি এরূপ আদান প্রদান বা উপদেশ করবে যে, হে পুত্র, পৌত্র, স্ত্রী এবং ভ্রাতৃবর্গ। তোমরা সকলে আমার মাননীয় পিতা, পিতামহ, মাতা, মাতামহ ও আচার্য্যগণকে তথা অপরাপর বিদ্বানগণ যারা বয়সে জেষ্ঠ্য ও মান্যের উপযুক্ত, এরূপ জেষ্ঠ ও জ্ঞানী মনুষ্যকে সেবা দ্বারা সর্বদা সন্তুষ্ট কর, অর্থাৎ উত্তমোত্তম সুগন্ধি ও হৃদ্য জল দ্বারা (অমৃতং) অমৃতাত্মক অনেক প্রকার রস ও ঘৃত, (পয়ঃ) দুগ্ধ ও (কীলালং) অনেক প্রকার সংস্কার দ্বারা সম্পাদিত রোগনাশক অন্ন মাক্ষিক মধু (পরিশ্রুতং) ও সুপক্ক ফলাদি দ্বারা পিতা, পিতামহ ও আচার্যদেরকে নিত্য প্রসন্ন করবে, যা দ্বারা তাহারা প্রসন্ন ও তৃপ্ত হইয়া, তোমাদেরকে সত্যবিদ্যা দান করবেন। তোমরাও এভাবে সত্যবিদ্যা প্রাপ্ত হয়ে সদা প্রসন্ন থাকবে। (স্বধা স্থ) তোমরা এরূপ বিনয়ী হয়ে প্রার্থনা করবে যে, পূর্বোক্ত পিতরগণ! আপনারা আমার অমৃতরূপী পদার্থ সকলের ভোগ দ্বারা তৃপ্ত হন, এবং আমরা যে সকল পদার্থ আপনাদেরকে ইচ্ছানুকূল দিতে সমর্থ হই, তা দিতে আজ্ঞা করুন। যেহেতু আমরা শরীর, বচন ও কর্ম দ্বারা দ্বারা আপনাদেরকে সুখী করতে স্থিত (উপস্থিত) আছি, কোন প্রকার কষ্ট পাবেন না। কারণ যেভাবে আপনারা আমাদেরকে ছোটোবেলায় ও ব্রহ্মচর্যাশ্রম কালে সর্ব প্রকারে সুখী করেছেন, এজন্য তাঁর প্রত্যুপকার করা আমাদের অবশ্য কর্তব্য, যা দ্বারা আমরা কৃতঘ্নতা রূপ দোষ প্রাপ্ত বা দোষযুক্ত না হই।
আয়ন্তু নঃ পিতরঃ সোম্যাসোঽগ্নিস্বাত্তাঃ পথিভির্দেবয়ানৈঃ। অস্মিন্ যজ্ঞে স্বধয়া মদন্তোঽধি ব্রু বন্তু ত্যেঽবস্তুস্মান্
(যজুর্বেদ ১৯/৫৮)
পিতৃ শব্দে সকলের রক্ষক, শ্রেষ্ঠ স্বভাবযুক্ত জ্ঞানী জনকে গ্রহণ করা হয়। কারণ মানুষ সুশিক্ষা ও বিদ্যাবলে যেমন রক্ষা করতে সমর্থ হয়, অন্য কোন উপায় দ্বারা তেমন করতে সমর্থ হয় না। এজন্য যে সকল বিদ্বান পুরুষ মানুষকে জ্ঞানচক্ষু প্রদান পূর্বক তাঁর অবিদ্যারূপী অন্ধকারের নাশকারী হন, তাঁদেরকে পিতর সংজ্ঞা দেওয়া হয়। এইরূপ পিতরগণের সৎকারের জন্য ঈশ্বরের এইরূপ আজ্ঞা আছে যে, পিতরগণ গৃহীত বাটীতে আসলেই তাঁকে দেখা মাত্রই অভ্যুত্থান অর্থাৎ দণ্ডায়মান হয়ে প্রীতিপূর্বক বলবেন, আসুন। বসুন। আসন গ্রহণ করুন। কিছু জলযোগ করুন এবং কিরূপ আহারাদি হবে সে বিষয়ে আজ্ঞা প্রদান করুন। যে যে বিষয় উপদেশ যোগ্য হবে, তা প্রীতিপূর্বক বুঝিয়ে দিন, যা দ্বারা আমরাও সত্যবিদ্যাযুক্ত হয়ে সকল মানুষের পিতর সংজ্ঞা প্রাপ্ত হতে পারি ও সদা এরূপ প্রার্থনা করি যে, হে পরমেশ্বর। আপনার অনুগ্রহে (সোম্যাসঃ) যে সকল শীলস্বভাব ও সকলের সুখদাতা বিদ্বানগণ, যারা পরমেশ্বর রূপী অগ্নিবিষয় এবং বিদ্যুৎরূপী বিদ্যাবিষয় যথাবৎ জ্ঞাত আছেন, তারা বিদ্যা ও সেবাদিরূপ যজ্ঞ দ্বারা (তাবন্ত্রস্থান) নিজ শিক্ষিত বিদ্যা প্রদান ও প্রকাশ দ্বারা অত্যন্ত হর্ষিত হয়ে আমাদের সদা রক্ষা করুন। পুনশ্চ ঐ সকল বিদ্যার্থীগণ ও সেবকের জন্যও ঈশ্বর এইরূপ আজ্ঞা দিয়েছেন যে, যখন ঐ সকল বিদ্বান পুরুষেরা বাড়িতে আগমন করবেন, তখন তাঁদেরকে দেখা মাত্র অভ্যর্থনা, নমস্কার ও প্রিয় বচন প্রয়োগ ইত্যাদি দ্বারা সন্তুষ্ট করবেন। পুনরায় তাঁরাও (বিদ্বানেরাও) নিজ নিজ সত্যভাষণ, নির্বৈরতা ও অনুগ্রহাদিরূপ সদগুণ দ্বারা মনুষ্যগণকে ঐরূপ উত্তম মার্গে চালাবেন ও নিজেও দৃঢ়তার সাথে ঐরূপ মার্গে পরিচালনা করবেন। এইরূপে সকল প্রকার ছল ও লোভ ইত্যাদি রহিত হয়ে পরোপকারার্থ আপনাপন সত্য ব্যবহার রাখবেন (রক্ষা করবেন- অনুবাদক)।
উপরোক্ত মন্ত্র দ্বারা বিদ্বানগণের মধ্যে যে দুই প্রকার পথ আছে তা জানা যায় যথা-১ম দেবযান ও দ্বিতীয় পিতৃযান। অর্থাৎ যা বিদ্যমার্গ তাই দেবযান, এবং যা কর্মোপাসনা মার্গ তাই পিতৃযান নামে অবহিত হয়। সকলের এই দুই প্রকার পুরুষার্থে (পুরুষাকারে) সদা রত থাকা কর্তব্য।
অত্র পিতরো মাদয়ধ্বং যথাভাগমাবৃষায়ধ্বম্।
অমীমদন্ত পিতরো যথাভাগমাবৃষায়িষত।
হে পিতরগণ! আপনারা আমার স্থানে (আশ্রম বা বাটীতে) আনন্দে অবস্থান করুন। (যথাভাগমার্চ) নিজ ইচ্ছানুকূল ভোজন ও বস্ত্রাদি ভোগ দ্বারা আনন্দিত হন। (অমীমদন্ত পিতরং) আপনি এই স্থানে বিদ্যা প্রচার দ্বারা সকলকে আনন্দযুক্ত করুন। (যথাভাগমা০) আমাদের দ্বারা যথাযোগ্য সৎকার প্রাপ্ত হয়ে, নিজ প্রসন্নতা প্রকাশ করে আমাকেও আনন্দিত করুন।
নমো বঃ পিতরো রসায় নমো বঃ পিতরঃ শোষায় নমো বঃ পিতরো জীবায় নমো বঃ পিতরঃ স্বধায়ৈ নমো বঃ পিতরো ঘোরায় নমো বঃ পিতরো মন্যবে নমো বঃ পিতরঃ পিতরো নমো বো গৃহান্নঃ পিতরো দত্ত সতো বঃ পিতরোদেষ্মৈদ্ব পিতরো বাসঃ।
হে পিতরগণ! আমরা আপনাদেরকে এইজন্য নমস্কার করছি যে আপনাদের দ্বারা আমি বিদ্যানন্দ, ওষধি ও জল বিদ্যা বিষয় যথাবৎ জ্ঞান প্রাপ্ত হই, তথা (নমো ব০) শোধ অর্থাৎ অগ্নি ও বায়ু বিষয়ক বিদ্যা দ্বারা ঔষধি ও জল শুষ্ক হয়ে যায়, সেই বিষয়ের বোধারথে আমি আপনাকে নমস্কার করছি (আপনি কৃপাপূর্বক আমাকে উক্ত বিষয়ের জ্ঞান প্রদান করুন-অনুবাদক)। (নমো ব০) হে পিতরগণ! ঘোর বিপদে অর্থাৎ আপৎকালে কীভাবে নির্বাহ করতে হয়, সেই বিষয়ক বিদ্যা জ্ঞাত হয়ে, দুঃখ হলে উত্তীর্ণ হবার জন্য আমরা আপনার সেবা করছি। (নমো ব০) হে পিতরগণ! যা দ্বারা দুষ্ট লোক ও দুষ্ট কর্মে সদা অপ্রীতি থাকে, সেই বিষয়ক বিদ্যা শিক্ষার্থে আমি আপনাদেরকে নমস্কার করছি। (নমো ব০) আমি আপনাদেরকে বারবার এইজন্য নমস্কার করছি যে, গৃহাশ্রম পালন করার জন্য যে যে বিদ্যা জ্ঞাত হওয়া আবশ্যক, সেই সকল আপনারা আমাকে প্রদান করুন (শিক্ষা দিন)। (সতো ব০) হে পিতরগণ। আপনি সর্বপ্রকার গুণের ও সাংসারিক সুখের প্রদাতা, এজন্য আমরা আপনাদেরকে উত্তমোত্তম পদার্থ অর্পণ করছি, তা আপনারা প্রীতিপূর্বক গ্রহণ করুন। এবং প্রতিষ্ঠা জন্য উত্তমোত্তম বস্ত্রাদিও প্রদান করছি, এই সমস্তকেও আপনারা ধারণ করুন, এবং প্রসন্ন লাভ করে সকলের সুখের জন্য সত্যবিদ্যা প্রচার করতে থাকুন।
আধত্ত পিতরো গর্ভং কুমারং পুষ্করস্রজম্। য়থেহ পুরুষোঽসৎ
(যজুর্বেদ ২/৩১-৩৩)
হে বিদ্যাদাতা পিতরগণ। এই কুমার ব্রহ্মচারীকে নিজগর্ভে (সমীপে) রক্ষা করে উত্তম বিদ্যা প্রদান করুন, যা দ্বারা ঐ ব্রহ্মচারী বিদ্বান হয়ে (পুষ্করস্র০) যেভাবে পুরুষেরা মালা ধারণ করে শোভা প্রাপ্ত হয়, সেভাবে বিদ্যালাভ করে সুন্দরতাযুক্ত হয়ে শোভা প্রাপ্ত হোক। (য়থেহপুরুষোৎসৎ) অর্থাৎ যেভাবে এই সংসারে মনুষ্যগণ বিদ্যাদি শুভগুণ দ্বারা উত্তম কীর্তিযুক্ত হয়ে সুখ প্রাপ্ত হতে পারেন, সেভাবে আপনারা সদা প্রযত্ন করুন। উপরোক্ত আজ্ঞা ঈশ্বর বিদ্বানজনের প্রতি (বেদাদি শাস্ত্রে) প্রদান করেছেন। এজন্য সকল মানুষেরই সদা এই আজ্ঞা পালনে রত থাকা কর্তব্য।
যে সমানাঃ সমনসো জীবা জীবেষু মামকাঃ। তেষাংশ্রীময়ি কল্পতামস্মিল্লোকে শতংসমাঃ
(যজুর্বেদ ১৯/৪৬)
যে আচার্য্য (জীবাঃ) জীবিত অবস্থায়, (সমনসঃ) ধর্ম, ঈশ্বর ও সকল মানুষের কল্যাণ সাধন করতে সদা উদ্যত, যিনি (সমানাঃ) সত্যবিদ্যাদি শুভগুণ সকলের প্রচার বিষয়ে যথার্থরূপে বিচার ও (জীবেষু) সত্যোপদেশ করণে যোগ্য, যিনি ছল কপটাদি রহিত হয়ে শিষ্যদিগকে বিদ্যাদান করেন, এইভাবে আচার্য্যগণের (তেষাং) যে শ্রী অর্থাৎ সত্যবিদ্যাদি শ্রেষ্ঠগুণযুক্ত শোভা ও রাজ্যলক্ষ্মী বিদ্যমান আছে, তা আমার জন্য (অস্মিংল্লোকে শতং সমাঃ) এই সংসারে একশত বর্ষ পর্যন্ত (অর্থাৎ আজীবন - অনুবাদক) স্থির, থাকুক, যা দ্বারা আমরা নিত্য সুখযুক্ত হয়ে, ধৰ্ম্মযুক্ত পুরুষাকারে রত থাকতে পারি।
উদীরতামবরঽপরাসঽউন্মধ্যমাঃ পিতরঃ সোম্যাসঃ। অসুং যঽঈযুরবৃকাহঋতজ্ঞান্তে নোবন্তু পিতরো হবেষু
যে সকল বিদ্বান্ পুরুষ (অবরে) কনিষ্ঠ, (উন্মধ্যমাঃ) মধ্যম ও (উৎপরাসঃ) উত্তম, (পিতরঃ সোম্যাসঃ) অর্থাৎ চাঁদ যেমন সকল প্রজাগণের আনন্দকারী সেইরকম সৌম্যগুণযুক্ত (অসুং য ঈয়ুঃ) প্রাণবিদ্যানিধান, (অবুকাঃ) শত্রু রহিত অর্থাৎ যিনি সকলের প্রিয় ও পক্ষপাত পরিত্যাগ করে সত্যমার্গে বিচরণ করে থাকেন, তথা (ঋতজ্ঞাঃ) অর্থাৎ যিনি ব্রহ্ম ও যথার্থ সত্যধর্মবিষয়াভিজ্ঞ, (তে নোেবন্ত পিতরো হবেষু) এইরকম পিতরগণ, যুদ্ধাদি ব্যবহার বিষয়ে আমার সাহায্যকারী হয়ে অথবা তাঁদের বিদ্যা আমাকে শিক্ষা করিয়ে, আমাদেরকে রক্ষা করুন
অঙ্গিরসো নঃ পিতরো নবগ্বাঽঅথর্বাণো ভৃগবঃ সোম্যাসঃ। তেষাং বয়ং সুমতৌ য়জ্ঞিয়ানামপি ভদ্রে সৌমনসে স্যাম
(যজুর্বেদ ১৯/৪৯-৫০)
যিনি সমগ্র ব্রহ্মাণ্ডের পৃথিব্যাদিরূপ অঙ্গের মর্মবিষয় অবগত, অথবা যিনি পরমেশ্বর বিষয় জ্ঞাত আছেন, (নবম্বা) যিনি স্বয়ং নতুন নতুন বিদ্যা গ্রহণ করেন ও অপরকে গ্রহণ করিয়ে থাকেন, যিনি (অথর্বাণঃ) অথর্ববেদীয় আয়ুর্বেদ ও ধনুর্বেদাদি বিদ্যা বিষয়ে পারদর্শী এবং যিনি দুষ্ট শত্রুকে দমন তথা নিজ দোষ নিবারণ করণে প্রবীণ বা নিপুণ, যিনি (ভূগবঃ) পরিপক্ক অর্থাৎ পূর্ণজ্ঞানী ও তেজস্বী, (সোভ্যাসঃ) যিনি পরমেশ্বরের উপাসনা ও নিজ বিদ্যাবলে শান্তস্বভাব সম্পন্ন এবং (তেষাং বয়.. সুমতৌ০) যিনি যজ্ঞবিষয় সম্যক জ্ঞাত ও অনুষ্ঠানশালী, (পিতর) এমন পিতরগণ, যে সকল কল্যাণকারী বিদ্যাবলে তাদের (নিজ নিজ) সুমতি, (ভদ্রে) কল্যাণও (সোমনসে) ও মনের শুদ্ধি সম্পাদনে সমর্থ হন, তা দ্বারা আমরাও যেন চিত্ত স্থির করতে সমর্থ হই, অর্থাৎ উপরোক্ত বিদ্যা সম্যক জ্ঞাত হয়ে, আমরাও যেন ব্যবহারিক ও পারমার্থিক উভয়প্রকার সুখ প্রাপ্তি করে পরমানন্দে অবস্থান করতে সমর্থ হই।
যে সমানাঃ সমনসঃ পিতরো যমরাজ্যে। তেষাং লোকঃ স্বধা নমো য়জ্ঞো দেবেষু কল্পতাম্
(যজুর্বেদ ১৯/৪৫)
যে সকল পিতর অর্থাৎ বিদ্বান পুরুষেরা, (য়মরাজ্যে) অর্থাৎ পরমেশ্বরের এই রাজ্য (সৃষ্টি) মধ্যে সভাসদ বা ন্যায়াধীশ হয়ে, ন্যায়কারী ও সৃষ্টির হিতকারী কার্যে সমান বুদ্ধিযুক্ত হন, (অর্থাৎ যাঁরা পক্ষপাত রহিত হয়ে, সকলের প্রতি সমদৃষ্টি রাখেন ও কখনো ধর্মাচরণ হতে বিচলিত হন না-অনুবাদক)। (তেষাং লোকঃ স্বধা) যাঁর সত্য (ব্যবহার) ও ন্যায়পরতা দ্বারা লোক অর্থাৎ সমগ্র দেশ মধ্যে সুখপ্রাপ্তি হয়ে থাকে, (নমঃ) তাঁকে আমরা নমস্কার করছি। যেহেতু তিনি পক্ষপাত রহিত হয়ে সত্য ব্যবস্থানুসারে চলে, আপন দৃষ্টান্ত দ্বারা, অপরকে ঐরূপ ন্যায়মার্গে পরিচালিত করে থাকেন। (যজ্ঞো দেবেষু কল্পতাং) এমন (অর্থাৎ উপরোক্ত প্রকার) সত্যধর্ম সম্বন্ধীয় প্রজাপালনরূপ যে অশ্বমেধ যজ্ঞ, তা পরমাত্মার কৃপায় বিদ্বান পুরুষের মধ্যে সত্য ব্যবহার উন্নতির জন্য সদা সমর্থ অর্থাৎ প্রকাশমান থাকুক
যে নঃ পূর্বে পিতরঃ সোম্যাসোঽনূহিরে সোমপীথং বসিষ্ঠাঃ। তেভির্য়মঃ সংররাণো হবীংয়্যুশন্নুশদ্ভিঃ প্রতিকামমত্তু
যাঁরা আমার পূর্ব পিতর অর্থাৎ আমার পিতা, পিতামহ ও অধ্যাপকগণ, শান্তাত্মা এবং (অনুহিরে সোমপীথং বসিষ্ঠাঃ) স্বয়ং যাঁরা সোমপান করতে ও অপরকে করাতে বসিষ্ঠ বা বিশারদ অর্থাৎ সমস্তপ্রকার বিদ্যায় রমণ করতে সমর্থ, (তে ভি য়মঃ সার) এইরূপ মহাত্মাদের সাথে সমাগম করে, বিদ্যালাভ পূর্বক যম অর্থাৎ ন্যায়কারী অন্তর্যামী পরমেশ্বরকে নিঃসন্দেহে জানতে সমর্থ হওয়া যায়। (হবি০) যেজন সত্য ভক্তি আদি পদার্থের কামনা করেন, (উশদ্ভিঃ প্রতিকা০) এবং যিনি সর্বকর্মেই সত্যের সেবনকারী ও যার আধার একমাত্র পরমেশ্বর হন। হে মনুষ্যগণ। এইরূপ ধর্মাত্মা পুরুষদের সৎসঙ্গ দ্বারা তোমরাও উক্ত বিদ্বান্ পিতরগণের ন্যায় পরমেশ্বরের আনন্দে আনন্দিত হতে সমর্থ হও। এ বিষয়ের প্রমাণ নিরুক্ত গ্রন্থে, অ০ ১১ খং ১৯ (অঙ্গিরসো নবগতর ইত্যাদি পদে) লিখিত আছে, যদি ইচ্ছা হয় সেখানে দেখে নিবেন
বর্হিষদঃ পিতরঽঊত্যর্বাগিমা বৌ হব্যা চকৃমা জুষধ্বম্। তআ গতাবসা শংতমেনাথা নঃ শং য়োররপো দধাত ।
যাঁরা ব্রহ্ম এবং সত্যবিদ্যায় স্থিত পিতরগণ, তাঁরা আমার রক্ষার্থে যেন সদা তৎপর থাকেন। তাঁদের আমরা নিম্নলিখিত প্রকারে সেবা করব এবং তাঁরাও আমাদেরকে প্রীতিপূর্বক বিদ্যাদি দান করে প্রসন্ন করবেন। (ত অগতাবসা০) হে পিতরগণ। আমি এইরূপ আকাঙ্খা বা ইচ্ছা করতেছি, যে যখন আমি আপনার অথবা আপনি আমার নিকট আসবেন বা অন্যত্র গমন করবেন, তখন (ইমাহব্যা০) আমরা উত্তমোত্তম পদার্থ সকল দ্বারা আপনাদের সেবা করব, এবং আপনারাও (কৃপাপূর্বক) উহা গ্রহণ করবেন। (অবৃঃ) আমরা অন্নাদি পদার্থ দ্বারা ও আপনারা (শন্ত০) আমার কল্যাণকারী শুভগুণ সকলের উপদেশ (অথা নঃ শংয়োঃ) তথা আমার কল্যাণকারী বিধান দ্বারা (অরপঃ) যাহাতে আমরা পাপে পতিত না হই, তাহা ধারণ করতে আদেশ করুন।
আহং পিতৃনৎ সুবিদত্রাঁ। ২। অবিৎসি নপাতং চ বিক্রমণং চ বিষ্ণোঃ। বর্হিষদো য়ে স্বধয়া সুতস্য ভজন্ত পিতৃস্তঽইহাগমিষ্ঠাঃ
(যজুর্বেদ ১৯/৫১,৫৫,৫৬)
আমি জ্ঞাত আছি যে পিতরগণ নিজ নিজ উত্তম বিদ্যা ও উপদেশ দ্বারা আমার সুখকারী হয়ে থাকেন। (নপাতং চ বিক্রমণং ন বিষ্ণোঃ) সেই সর্বব্যাপক বিষ্ণুরূপী পরমেশ্বর বিক্রমণ অর্থাৎ সৃষ্টির রচনা ও নপাৎ, অর্থাৎ তাহার অবিনাশী পদ বা অবস্থার বিষয় যাহা সম্যক জ্ঞাত আছে, (বর্হিষদো যে০) উপরোক্ত জ্ঞান আমি উক্ত পিতরগণের কৃপাবলেই জ্ঞাত হতে সমর্থ হয়েছি, যাকে দেবযান সংজ্ঞা প্রদান করা যায় ও যার প্রাপ্তি হলে পুনরআয় কেউ কখনো দুঃখে পতিত হন না। এইরূপ যা দ্বারা পূর্ণ সুখ প্রাপ্ত হওয়া যায়, ঐ দুইটি মার্গও আমি বিদ্বানদিগের সঙ্গ দ্বারাই জানতে সক্ষম হয়েছি। (স্বধা) এজন্য যে সকল বিদ্বান আপনাদের অমৃতরূপী উপদেশ সকলকে পুত্রবৎ স্নেহ করে প্রদান করেন ও যাঁরা নিজে আনন্দে মগ্ন থেকে সংসারের সুখপ্রদাতা হন, এইরূপ সর্বহিতকারী সমাগম আমাদের সর্বদাই প্রার্থনীয়, যা দ্বারা আমরা নিত্যজ্ঞান লাভ করে উন্নতি প্রাপ্ত হতে সমর্থ হই।
উপহূতাঃ পিতরঃ সোম্যাসো বর্হিষ্যেষু নিধিষু প্রিয়েষু। তঽআ গমন্ত্র তইহ শ্রুবন্ত্বধি ব্রুবন্তু তেঽবন্ত্বস্মান্।
যে সকল প্রতিষ্ঠাহাঃ (অর্থাৎ প্রতিষ্ঠার যোগ্য) পিতরগণ আছেন, তাঁদের আমি নিমন্ত্রণ করতেছি যে, যেন তাঁরা আমার গৃহে (কৃপাপূর্বক) আগমন করে, (বর্হিয্যেষু) উত্তম আসনোপরি উপবেশন করে, আমাকে বহুমূল্য ও শ্রবণপ্রিয় উপদেশ (দ্বারা কৃতার্থ) করেন। (ত আগমন্ত্র০) যখন ঐ সকল পিতরগণ আসবেন, তখন সকলে উক্ত পিতরগণের এইরূপে সম্মান করবেন যে, আপনি আসুন, উত্তম আসনে উপবেশন করুন, (ইহ শ্রুবন্তু) আমার বিদ্যা সম্বন্ধে কথা ও প্রশ্ন শ্রবণ করুন, ও (অধিক্রবস্তু০) ঐ গুলির উত্তর প্রদান করুন ও মনুষ্যদেরকে জ্ঞান প্রদান পূর্বক আমাদেরকে রক্ষা করুন।
অগ্নিস্বাত্তাঃ পিতরএহ গচ্ছত সদঃ সদঃ সদত সুপ্রণীতয়ঃ। অত্তা হবীং ষি প্রয়তানি বর্হিষ্যথা রযিংসর্ববীরং দধাতন।
হে অগ্নিবিদ্যা জ্ঞাতকারী পিতরগণ। আপনি উপদেশক হয়ে আমার গৃহে শুভাগমন করতঃ অবন্তিতি পূর্বক উপদেশ করুন। পুনশ্চ ঐ পিতরগণের কীরূপ গুণসম্পন্ন হওয়া কর্তব্য, তা লেখা হচ্ছে। (সুপ্রণীতয়ঃ) উত্তমোত্তম গুণযুক্ত (বর্হিষি০) তথা সভামধ্যে সত্য ও ন্যায়কারী, (হবিঃ) যিনি বিদ্যা দান ও গ্রহণ উভয় কার্যোই উপযুক্ত বা পটু, (রয়িৎসর্ববীর দধাতন) এইরূপ পিতরগণের বিদ্যাদিরূপ যে উত্তম ধন আছে, যা দ্বারা বীরপুরুষযুক্ত সেনা প্রাপ্ত হওয়া যায়, তাদের উপদেশ দ্বারা আমাদেরকে পুষ্ট করুন। ঐ সকল বিদ্বানদের প্রতি ঈশ্বরের এইরূপ উপদেশ লেখা আছে যে, ঐ সকল বিদ্বানেরা দেশে দেশে ও গৃহে গৃহে পরিভ্রমণ পূর্বক সকল মনুষ্যকে সত্যোপদেশ প্রদান করবেন।
য়েঽঅগ্নিস্বাত্তা যেঽঅনগ্নিস্বাত্তা মধ্যে দিবঃ স্বধয়া মাদয়ন্তে। তেভ্যঃ স্বরাডসুনীতিমেতাং য়থাবশং তন্বং কল্পয়াতি।
(যজুর্বেদ ১৯/ ৫৭,৫৯, ৬০)
যে সকল পিতরগণ অগ্নিবিদ্যা ও সোমবিদ্যা বিষয় সম্যক জ্ঞাত আছেন, তথা (মধ্যে দিবঃ স্বধয়া মাদয়ন্তে) যারা দিব অর্থাৎ বিজ্ঞানরূপ প্রকাশ মধ্যে সুখভোগ দ্বারা আনন্দিত রয়েছেন অর্থাৎ যারা বিজ্ঞান বলে নানা প্রকারে সুখী হয়ে থাকেন, (তেভ্যঃ স্বরাডসু০) তাদের কল্যাণে স্বরাট অর্থাৎ স্বপ্রকাশরূপী পরমেশ্বর (অসুনীতি) প্রাণবিদ্যা প্রকাশিত করে থাকেন। এজন্য আমরা প্রার্থনা করি যে (যথাবশং তন্বং কল্পয়াতি) হে পরমেশ্বর। আপনি নিজ কৃপাবলে তাঁদের শরীরকে সদা সুখী, তেজস্বী ও রোগরহিত করুন, যাতে আমরা উক্ত লোকদের নিকট হতে জ্ঞান প্রাপ্ত হতে থাকি।
অগ্নিস্বাত্তানৃতুমতো হবামহে নারাশংসে সোমপীথং য়আশুঃ।
তে নো বিপ্রাসঃ সুহবা ভবন্তু বয়ং স্যাম পতয়ো রয়ীণাম্।
হে মনুষ্যগণ। যেমন আমরা অগ্নিবিদ্যা ও সময়বিদ্যার সম্যক পারদর্শী পিতরগণকে সম্মানের সাথে আহ্বান করি, তেমন তোমরাও ঐ সকল পিতরগণের নিকট গমন করবে ও তাঁদের নিকট আহ্বান করবে, যা দ্বারা তোমাদের দিন দিন বিদ্যার বৃদ্ধি হতে থাকে। (নারাশসে সোমপীথং য় আশুঃ) যাঁহারা (যজ্ঞে) সোমপানাদির রস পান করে ও (অন্যান্য প্রকারে) রক্ষা করে, মনুষ্যকে শ্রেষ্ঠ (উন্নতিশীল) করে দিয়া থাকেন, তাদের নিকট হতে তোমরা সত্যবিদ্যা শিক্ষা করে আনন্দিত হও। (তে নো বিপ্রাঃ সুতবা০) ঐ সকল মেধাবী ব্রাহ্মণেরা আমাদেরকে সদা (যেন) সত্যবিদ্যা গ্রহণ করাতে থাকুন। (বয়স্যাম পতয়ো রয়ীণাম) যা দ্বারা আমরা সুবিদ্যাবলে চক্রবর্তী রাজ্যের শ্রী আদি উত্তম পদার্থ সকলকে প্রাপ্ত তথা তার রক্ষা ও উন্নতি করণে সমর্থ হই।
য়ে চেহ পিতরো য়ে চ নেহ য়াঁশ্চ বিদ্ম যাঁ২।।
উচন প্রবিদ্ম। ত্বং বেত্থ য়তি তে জাতবেদঃ স্বধাভির্য়জ্ঞং সুকৃতং জুয়স্ব।
হে জাতবেদ পরমেশ্বর। যে সকল পিতরগণ আমার সমীপে তথা দুরদেশে অবস্থিতি করতেছেন, (যাঁচ বিঘ্ন) তাঁদের মধ্যে যারা নিকটবর্তী থাকেন, তাঁদেরকে জানি, (উচন প্রবিঘ্ন) এবং দূরে অবস্থিতি করায় যাদেরকে আমরা জানি না, (যদি তে) এম্ন জ্ঞাত ও অজ্ঞাত উভয়প্রকার পিতরগণ যাঁরা এই সংসার মধ্যে বিদ্যমান আছেন, (ত্বং বেখ০) তাঁদের সকলকেই আপনি জ্ঞাত আছেন, কৃপা করে তাদের ও আমার (আমাদের) পরস্পরের সম্বন্ধ সদা কালের জন্য স্থির করে দিন। (স্বধাভিয়জ্ঞ সুকৃতং) আর আপনি নিজ ধারণাদি শক্তি দ্বারা ব্যবহারিক ও পারমার্থিক শ্রেষ্ঠ যজ্ঞ সকলকে প্রীতিপূর্বক সেবন করাবেন, যাদ্বারা আমরা সর্বপ্রকার সুখ প্রাপ্ত হতে থাকি।
ইদং পিতৃভ্যো নমোঅস্ত্বদ্য যে পূর্বাসো য় উপরাস ঈয়ুঃ।
যে পার্থিবে রজস্যা নিষত্তা যে বা নূনং সুবৃজনাসু বিক্ষু।
যজুর্বেদ ১৯/৬১,৬৭,৬৮
আমরা ঐ সকল পিতরগণকে নমস্কার করতেছি, (তাদ্য পূর্বাসো য় উ পরাস ঈয়ুঃ) যাঁরা প্রথমে স্বয়ং বিদ্বান হয়ে (বিদ্যা লাভ করিয়া) আমাদেরকেও বিদ্যা শিক্ষা দিয়ে থাকেন, অথবা যাঁরা বিরাগী ও সন্ন্যাসী হয়ে সর্বত্র বিচরণ পূর্বক সত্যোপদেশ করে বেড়ান। তথা (য়ে পার্থিবে রজস্যা নিষত্তাঃ) যারা পার্থিব অর্থাৎ ভূগর্ভবিদ্যা ও সূর্য্যাদি লোক বিষয় সম্যক জ্ঞাত আছেন, এবং (য়ে বা নূনসু) যারা নিশ্চয় করে (সর্ববিষয়ে দৃঢ় হইয়া) প্রজাদের কল্যাণে উদ্যত, উত্তম সেনাগণের মধ্যে অত্যন্ত চতুর অর্থাৎ তীক্ষ্ণবুদ্ধিশালী, উপরোক্ত পিতরগণকে আমরা নমস্কার করতেছি, কারণ তারা সদা আমাদের উন্নতিতে রত থাকেন।
উশন্তত্ত্বা নি ধীমহ্যূশন্তঃ সমিধীমহি।
উশন্নশত আ বহ পিতৃন্ হবিষে অত্তবে
যজুর্বেদ ১৯/৭০
হে অগ্নি (নামক) পরমেশ্বর! আমরা আপনার প্রাপ্তি কামনায় আপনাকে আমাদের হৃদয়ে নিহিত অর্থাৎ স্থাপিত করি, (উশন্তঃ সমিধীমহি) এবং সর্বত্র আপনাকে প্রকাশ (অর্থাৎ আপনার মহিমা প্রকাশ-অনুবাদক) করে থাকি। (উশন্নশত আবহ পিতৃন) হে ভগবন্! আপনি আমার (আমাদিগের) কল্যাণার্থে পূর্বোক্ত পিতরগণকে প্রাপ্ত করান, যা দ্বারা (হবিষে অত্তবে) আমরা উক্ত পিতরগণের সেবা করে বিদ্যাপ্রাপ্তির জন্য স্থির থাকি।
পিতৃভ্যঃ স্বধায়িভ্যঃ স্বধা নমঃ। পিতামহেভ্যঃ স্বধায়িভ্যঃ স্বধা নমঃ।
প্রপিতামহেভ্যঃ স্বধায়িভ্যঃ স্বধা নমঃ। অক্ষন্ পিতরোঽমীমদন্ত পিতরোঽতীতৃপন্ত পিতরঃ। পিতরঃ শুন্ধধ্বম্।
২৪ বছর পর্যন্ত যাঁরা ব্রহ্মচর্যাশ্রম পালন করে বিদ্যাপাঠ করতঃ সকলকে বিদ্যাদান করেন, এরূপ পিতরগণকে আমার নমস্কার। (পিতামহেভ্যঃ০) যাঁরা ৪৪ বর্ষ বয়স পর্যন্ত ব্রহ্মচর্যাশ্রম সমাপন করে, বেদাদি বিদ্যা পাঠ করতঃ সকলের হিতকারী ও অমৃতরূপী জ্ঞান প্রদানকারী হন, তথা (প্রপিতামহেভ্যঃ০) যিনি ৪৮ বছর পর্যন্ত জিতেন্দ্রিয়তার সাথে সম্পূর্ণ বিদ্যা পাঠ করে, নিজ হাতে কর্ম দ্বারা সকল প্রকার বিদ্যার সাক্ষাৎ দৃষ্টান্ত দেখাইয়া, অপরকে শিক্ষা প্রদান করতে সমর্থ হন ও যিনি সকলের সুখের জন্য সর্বদা প্রযত্ন করে থাকেন, এইরূপ পিতরগণকে সকলেরই মান্য করা কর্তব্য।
পিতৃগণ সর্বপ্রকার বিদ্যাতে বাস (অর্থাৎ রমণ) করার উপযুক্ত পাত্র বলেই তাঁদেরকে বসু সংজ্ঞা দেওয়া যায়। পুনশ্চ পিতামহকে রুদ্র বলা যায়, কারণ তাঁরা বসু সংজ্ঞক পিতরগণ অপেক্ষা দ্বিগুণ ও শতগুণ বিদ্যাবান ও বলবান হয়ে থাকেন। এইরূপে প্রপিতামহকে আদিত্য সংজ্ঞা দেওয়া যায়, যেহেতু তিনি সর্বপ্রকার বিদ্যায় ও অপরাপর শুভগুণে সূর্য্যের ন্যায় প্রকাশমান হয়ে, সমগ্র বিদ্যাপ্রকাশ ও সকল লোককে শিক্ষা দিয়া প্রকাশমান করে থাকেন। উপরোক্ত তিনপ্রকার পিতরগণকে বসু, রুদ্র ও আদিত্য এইজন্য বলা যায়, যে তারা মানুষের হৃদয়ে কোন প্রকার দুষ্টতা থাকতে দেন না। এ বিষয়ে (পুরুষো বাব যজ্ঞ০ ইত্যাদি) ছান্দোগ্য উপনিষদের প্রমাণ ইতিপূর্বে বর্ণন করেছি, সেখান্দ দেখে নিবেন।
হে পিতরগণ। আপনি বিদ্যারূপী যজ্ঞকে বিস্তৃত (বিস্তীর্ণ) করে সুখী হোম। তথা (অমীমদন্ত পিতরঃ) আমার সেবা দ্বারা অত্যন্ত প্রসন্ন হোন। (অতীতৃপন্ত পিতরঃ) আমার সেবা দ্বারা তৃপ্ত হয়ে আমাকেও আনন্দিত ও তৃপ্ত করতে থাকুন। এবং যে পদার্থ আপনার প্রয়োজন হয়, আমি ভ্রমবশতঃ যদি তা দ্বারা আপনার সেবা করতে ত্রুটি করি, সে বিষয়ে আপনি আমাকে শিক্ষা দিন। (পিতরঃ শুদ্ধধ্বম্) হে পিতরগণ। আপনি (আপনারা) আমাকে ধর্মোপদেশ ও সত্যবিদ্যা (দানে) শুদ্ধ করুন, যা দ্বারা আমরা আপনার সাথে মিলিত হয়ে, নিজ শুদ্ধার্থে প্রেমসহকারে সনাতন পরমাত্মার ভক্তিকরণে সমর্থ হই।
পুনন্তু মা পিতরঃ সোম্যাসঃ পুনন্তু মা পিতামহাঃ পুনন্তু প্রপিতামহাঃ পবিত্রেণ শতায়ুষা। পুনন্তু মা পিতামহাঃ পুনন্ত প্রপিতামহাঃ পবিত্রেণ শতায়ুষা বিশ্বমায়ুর্ব্যশ্নবৈ
(যজুর্বেদ ১৯/৩৬,৩৭)
যে সকল পিতরগণ শান্তাত্মা ও পরম দয়ালু, তাঁরা আমাকে বিদ্যা দান দিয়ে পবিত্র করুন। (পুনন্তু মা পিতামহাঃ) এভাবে পিতামহ ও প্রপিতামহগণ আপনারাও আমাকে উত্তম বিদ্যা ও উপদেশ দিয়ে পবিত্র করুন, যা দ্বারা আপনাদের উপদেশ শ্রবণ করতঃ, ব্রহ্মচর্য্য ধারণ করে একশত বছর পর্যন্ত আনন্দযুক্ত আয়ু লাভ করতে সমর্থ হই। এই মন্ত্র আদরার্থে কেবল দুইবার পাঠ করা হয়েছে।
অন্য মন্ত্র গুলিও এই বিষয়েরই পুষ্টিকারক মাত্র। তাদের অর্থ গুলিও উপরোক্ত প্রমাণ দ্বারা বুঝে নেওয়া কর্তব্য। পুনশ্চ যেস্থানে অমাবস্যাতে পিতৃযজ্ঞ করআর কথা লেখা আছে, সেখানেও এই অভিপ্রায়ে লেখা হয়েছে, কি যদি কখনো কেউ নিত্য জীবিত পিতরগণের সেবা করতে অক্ষম হন, তবে অন্ততঃ মাসে দুইবার করেও সেবা করা কর্তব্য এবং অমাবস্যাতে মাস্যেষ্টি হয়ে থাকে, এজন্য সে সময় তাদেরকে আহ্বান করে, তাঁদের সেবা করা উচিত।
ইতি পিতৃ যজ্ঞঃ সমাপ্ত-
🔴 চতুর্থ ভূতযজ্ঞ :-
জগতের সকল মানুষ এবং পশু পাখির মঙ্গলকামনা ও তাদের সর্বদাই যথাসাধ্য সাহায্য করাই হলো ভূতযজ্ঞ
এখন ভূতযজ্ঞ সম্পর্কে বিস্তারিত লেখা হচ্ছে
অথ বলিবৈশ্বদেববিধির্লিখ্যাতে-
য়দন্নং পক্বমক্ষারলবণং ভবেত্তেনৈব বলিবৈশ্বদেবকর্ম কার্য়্যম - বৈশ্বদেবস্য সিদ্ধস্য গৃহ্যেঽগ্নৌ বিধিপূর্বকম্। আভ্যঃ কুর্য্যাদ্ দেবতাভ্যো ব্রাহ্মণো হোমমন্বহম্
মনুস্মৃতি ৩/৮৪
অত্র বলিবৈশ্বদেব কৰ্ম্মণি প্রমাণম্ -
অহরহর্বলিমিত্তে হরন্তোঽশ্বায়েব তিষ্ঠতে ঘাসমগ্নে। রায়স্পোষেণ সমিষা মদন্তো মা তে অগ্নে প্রতিবেশা রিষাম
(অথর্ব ১৯/৭/৭)
হে পরমেশ্বর! আপনার আজ্ঞায় যারা প্রতিদিন বলিবৈশ্বদেব যজ্ঞের অনুষ্ঠান করেন, তাঁরা (রায়ষ্পোষেণ) চক্রবর্তী রাজ্যলক্ষ্মী ও ঘৃত, দুগ্ধাদি পুষ্টিকর পদার্থ প্রাপ্তি ও সম্যক শুভেচ্ছা দ্বারা, (মদন্তঃ) নিত্যানন্দ প্রাপ্ত হন, এবং মাতা, পিতা ও আচার্য্যদের প্রীতিপূর্বক উত্তমোত্তম পদার্থ দ্বারা নিত্য সেবা করেন। (অশ্বায়েব তিষ্ঠন্তে ঘাস০) যেরূপ অশ্বের সম্মুখে তার ভক্ষ্য তৃণ, লতাদি এবং পানার্থে জলাদি প্রচুর পরিমাণে সংস্থাপিত হয়, সেই রূপ পিতা, মাতা ও আচার্য্যের সেবার জন্য বহুবিধ উত্তমোত্তম পদার্থ প্রদান পূর্বক তাদের প্রসন্নতা সম্পাদন করবে। (মা তে অগ্নে প্রতিবেশরিষাম) হে পরম গুরু ঈশ্বর। আপনার আজ্ঞার বিরুদ্ধ ব্যবহারে আমরা যেন কখনোও প্রবৃত্ত না হই। অন্যায় পূর্ব্বক আমরা যেন কখনোও কোন প্রাণীকে পীড়া না দেই, পরন্ত সমস্ত জীবমাত্রকেই নিজ মিত্রবৎ ও আপনাকে সকলের মিত্রজ্ঞান করে পরস্পরের উপকার সাধনে রত থাকি। এটিই ঈশ্বর আজ্ঞা।
পুনন্তু মা দেবজনাঃ পুনন্তু মনসা ধিয়ঃ। পুনন্তু বিশ্বা ভূতানি জাতবেদঃ পুনীহি মা স্বাহা
(যজুর্বেদ ১৯/৩৯)
এই মন্ত্রের অর্থ তর্পণ বিষয়ে বর্ণন করেছি, এজন্য এস্থলে পুনর্বার বর্ণন করলাম না, তথায় দেখে নিবেন
ও৩ম্ অগ্নয়ে স্বাহা
অগ্নি শব্দের অর্থ পূর্বে বর্ণনা করেছি, অর্থাৎ জ্ঞানস্বরূপ পরমাত্মার প্রীত্যর্থে আমরা আহুতি প্রদান করছি।
ও৩ম্ সোমায় স্বাহা
সর্ব পদার্থের উৎপাদক অর্থাৎ সর্ব জগৎ উৎপাদক ও সর্বপ্রকার দুঃখনাশের হেতুস্বরূপ অর্থাৎ সর্বানন্দপ্রদ পরমাত্মার প্রীতির জন্য আমরা হোম করছি।
ও৩ম্ অগ্নীষোমাভ্যাং স্বাহা
যিনি সমস্ত প্রাণীগণের হেতুস্বরূপ প্রাণ এবং দুঃখ নাশ হেতু অপান স্বরূপ, অথবা যিনি সংসারের প্রকাশক পরমাত্মা ও বিদ্বান জন যিনি জন্মমরণাদি দুঃখ দূরকারক পরমাত্মা, যিনি জ্ঞানস্বরূপ এবং সর্বানন্দপ্রদ সর্বজগত উৎপাদক পরমেশ্বর, তাঁর প্রীতির জন্য আমরা হোম করছি।
ও৩ম্ বিশ্বেভ্যো দেবেভ্যঃ স্বাহা
বিশ্বপ্রকাশক ঈশ্বরের গুণ সকলের (প্রকাশ) অথবা ( বিদ্বানগণের প্রীত্যর্থে) আমরা হোম করছি।
ও৩ম্ ধন্বন্তরয়ে স্বাহা
জন্মমরণাদিরূপ দুঃখনাশক অথবা সর্বরোগনাশক ঈশ্বরের প্রীতির জন্য আমরা হোম করছি।
ও৩ম্ কুহৈব স্বাহা
অমাবস্যেষ্টি বা সর্বশাস্ত্র প্রতিপাদিত ঈশ্বরের চিতিশক্তির প্রীতির জন্য আমরা হোম করছি।
ও৩ম্ অনুমত্যৈ স্বাহা
পৌর্ণমাস্যেষ্টি অথবা বিদ্যা পঠনান্তর পরমেশ্বরের যে চিতিশক্তির মনন করা যায়, সেই চিতিশক্তির প্রীতির জন্য আমরা হোম করছি।
ও৩ম্ প্রজাপতয়ে স্বাহা
সর্বজগৎকর্তা ও জগতের রক্ষক স্বরূপ ঈশ্বরের প্রীতির জন্য আমরা হোম করছি।
ও৩ম্ সহ দ্যাবাপৃথিবীভ্যাং স্বাহা
ঈশ্বরের প্রকৃষ্ট গুণদ্বারা উৎপাদিত দ্যুলোক ও ভূলোকের পুষ্টিকরণার্থ আমরা হোম করছি।
ও৩ম্ স্বিষ্টকৃতে স্বাহা
যিনি ইষ্ট সুখকারী সেই পরমেশ্বরের প্রীত্যর্থে আমরা হোম করছি।
উপরোক্ত দশপ্রকার মন্ত্রগুলি দ্বারা দশ প্রকার প্রয়োজন জ্ঞাত হওয়া কর্তব্য।
ইতি নিত্যশ্রাদ্ধম্।
ও৩ম্ সানুগায়েন্দ্রায় নমঃ
(ণম্ ধাতুর অর্থ প্রহ্বত্ব অর্থাৎ নম্রতা এবং শব্দ) এ দ্বারা সৎক্রিয়া পুরঃসর বিচারপূর্বক মনুষ্যের যথার্থ বিজ্ঞান লাভ হয়
ও৩ম্ সানুগায় য়মায় নমঃ
নিত্যগুণ সহ বর্তমান ও পরমৈশ্বর্য্যবান্ পরমেশ্বরকে আমরা নমস্কার করছি।
ও৩ম্ সানুগায় বরুণায় নমঃ
পক্ষপাতরহিত সত্য ও ন্যায়কারিত্বাদি গুণযুক্ত পরমাত্মাকে এবং পরমাত্মার সৃষ্টিতে সত্য ও ন্যায়কারী সভাসদগণকেও আমরা নমস্কার করছি
ও৩ম্ সানুগায় সোমায় নমঃ
পুণ্যাত্মাদেরকে আনন্দপ্রদ পরমেশ্বর এবং শান্ত্যাদিগুণযুক্ত বিদ্বান ও পুণ্যাত্মাদের (উভয়কেই) আমরা নমস্কার করছি।
ও৩ম্ মরুদ্ভ্যো নমঃ
প্রাণ বায়ু যা শরীরে অবস্থান করলে জীবন ও বহির্গত হলেই মৃত্যু বলে, এই প্রাণাদি বায়ু বা মরুদ্গণের রক্ষাকারী পরমেশ্বরকে অথবা ঈশ্বর রূপ আধারে সমস্ত জগৎকে ধারণ বা চেষ্টাযুক্তকারী মরুদ্গণকে আমরা নমস্কার করছি
ও৩ম্ ওমদভ্যো নমঃ
বিশ্বব্যাপক পরমাত্মাকে আমরা নমস্কার করছি। (এই মন্ত্রের বিস্তারিত অর্থ আমরা "শন্নোদেবী" এই মন্ত্রে বর্ণন করেছি, সেখানে দেখে নিবেন।
ও৩ম্ বনস্পতিভ্যো নমঃ
ঈশ্বরের সৃষ্ট বায়ু ও মেঘাদির রক্ষা ও পালন হেতু বর্ষা জলে যে সকল মহাবৃক্ষাদি উৎপন্ন হয় ও তা দ্বারা জগতের উপকার সাধিত হয়, তা রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য। এই মন্ত্রের আর এক প্রকার অর্থ এইরূপ যে, লোক সকলের পালনকারী ঐশ্বরিক গুণ সকল, (এখানে বহুবচন আদরার্থে ব্যবহৃত হয়েছে- অনুবাদক)। অর্থাৎ ঈশ্বরকে আমরা নমস্কার করছি অথবা পরমেশ্বরের উত্তমগুণ যোগদ্বারা ঈশ্বর কর্তৃক উৎপাদিত মহাবৃক্ষ সকল সদা আমাদের রক্ষণীয়।
ও৩ম্ শ্রিয়ৈ নমঃ
সকলের সেব্য ও রাজ্য শ্রী ও সমগ্র বিশ্বের (শ্রী) অর্থাৎ শোভা উৎপাদনকারী পরমাত্মাকে আমরা নমস্কার করছি।
ও৩ম্ ভদ্রকাল্যৈ নমঃ
কল্যাণকারিণী ঈশ্বর শক্তি বা সামর্থকেই আমরা নমস্কার করছি।
ও৩ম্ ব্রহ্মপতয়ে নমঃ
সর্বশাস্ত্রবিদ্যাযুক্ত বেদশাস্ত্র তথা ব্রহ্মাণ্ডের পতিরূপ ঈশ্বরকে আমরা নমস্কার করছি।
ও৩ম্ বাস্তুপতয়ে নমঃ
যাতে সর্বভূত বাস করে এরূপ কর্তারূপ আকাশের যে পতি পরমেশ্বর তাঁকে অথবা গৃহসম্বন্ধীয় পদার্থের পালনকারী পরমেশ্বরকে আমরা নমস্কার করছি।
ও৩ম্ বিশ্বেভ্যো দেবেভ্যো নমঃ
বিশ্বদেবগণকে আমরা নমস্কার করছি।
ও৩ম্ দিবাচরেভ্যো ভূতেভ্যো নমঃ
ও৩ম্ নক্তংচারিভ্যো নমঃ
দিবস ও রাত্রিকালে বিচরণকারী প্রাণিগণ ঈশ্বর কৃপায় আমাদের কোনরূপ বিঘ্ন করতে যেন না পারে এবং তাদের সাথে যেন আমাদের কোনরূপ বিরোধ না ঘটে, এজন্য আমরা তাদের নমস্কার করছি অর্থাৎ ঐরূপ জীব দ্বারা আমরা যা কিছু উপকার প্রাপ্ত হই, তা গ্রহণ করব ও তাদেরও যথাযোগ্য সেবাদি করব।
ও৩ম্ সর্বাত্মভূতয়ে নমঃ
সমস্ত জীবের একমাত্র আশ্রয় স্বরূপ পরমাত্মাকে আমরা নমস্কার করছি।
ও৩ম্ পিতৃভ্যঃ স্বধায়িভ্যঃ স্বধা নমঃ
পিতৃগণ ও সত্যবিদ্যা ভক্তি স্বপদার্থধারীগণ ও সত্যবিদ্যাকে আমরা নমস্কার করছি অর্থাৎ পিতা মাতা আদিকে আমরা প্রথমে ভোজনাদি করিয়ে তারপরে ভোজনাদি করি। স্বাহা শব্দের অর্থ পূর্বেই বলেছি। নিরভিমান প্রকাশার্থ অপরকে উৎকৃষ্ট মেনে, মান্য জ্ঞাপনার্থ নমঃ শব্দের প্রয়োগ হয়।
শুনাং চ পতিতানাং চ স্বপচাং পাপরোগিণাম্। বাযসানাং কৃমীণাং চ শনকৈনির্বপেদ্ ভুবি।
(শুনাং) কুকুর প্রভৃতি জন্তু, পতিত ব্যক্তি, চণ্ডাল, পাপরোগী, বয়সাদি পক্ষী ও কৃমিগণের তৃপ্তি সাধন ছয়টি পৃথক পৃথক ভাগ করে, ভুমিতে বলি অর্থাৎ খাদ্য প্রদান করবে। -মনু
ইতি ভূতযজ্ঞ : সমাপ্ত –
🔴 পঞ্চম অতিথি যজ্ঞ :- অতিথিদের যথাযথ সেবা করাই অতিথিযজ্ঞ।
এখন অতিথি যজ্ঞের বিষয় লেখা হচ্ছে-
অর্থাৎ অতিথিগণের কীরূপে যথাযোগ্য সেবা করা কর্তব্য, তদ্বিষয় লেখা হচ্ছে:- যাঁরা পূর্ণবিদ্বান, জিতেন্দ্রিয় ধর্মাত্মা, সত্যবাদী, ছল ও কপটাদি দোষরহিত ও নিত্য ভ্রমণ করে বিদ্যা ও ধর্মবিষয় উপদেশ দেন ও অবিদ্যা ও অধর্মের সদা নিবৃত্তিতে রত থাকেন, এইরূপ মনুষ্যগণই অতিথি সংজ্ঞা প্রাপ্ত হন। এ বিষয়ে অনেক বৈদিকমন্ত্র প্রমাণ স্বরূপ থাকলেও, এস্থলে সংক্ষেপতঃ দুইটি মন্ত্র লেখা হলো:-
তদ্যস্যৈবং বিদ্বান্ ব্রাত্যোঽতিথিগৃহানাগচ্ছেৎ
যাঁর গৃহে পুর্বোক্ত বিশেষণযুক্ত (ব্রাত্য) ও উত্তম গুণবিশিষ্ট ও সেবা করবার যোগ্য বিদ্বান আগমন করেন, তার ঐ মহাত্মার যথাবৎ সেবা করা কর্তব্য। এবং তাঁকে (অর্থাৎ ঐরূপ আগমনকারীকে) এই জন্য অতিথি বলা যায়, যেহেতু তাঁর গমনাগমনের কোনরূপ নির্দিষ্ট তিথি বা দিবস নাই।
স্বয়মেনমত্যুদেত্য ব্রুয়াদ ব্রাত্য ক্বাঽবাৎসীব্রাত্যোদকং ব্রাত্য তর্পয়ন্ত ব্রাত্য য়থা তে প্রিয়ং তথাস্তু ব্রাত্য য়থা তে বশস্তথাস্তু ব্রাত্যয়থা তে নিকামস্তথাস্তুিতি
(অথর্ব- ১৫/২/১১/১,২)
এইরূপে অকস্মাৎ স্বেচ্ছাক্রমে আগমন ও গমনকারী ব্যক্তি গৃহে উপস্থিত হলে, গৃহস্বামী তাঁকে দেখামাত্র অতি প্রীতিসহকারে দণ্ডায়মান হয়ে, নমস্কার পূর্বক তাঁকে উত্তম আসনে উপবেশন করিয়ে, পরে জিজ্ঞাসা করবেন যে, আপনার জল বা অন্য কোন দ্রব্যের আবশ্যক আছে কিনা, তা নিবেদন করবেন, পরে সেবা দ্বারা তাঁকে প্রসন্ন ও সুস্থচিত্ত করে এরূপ জিজ্ঞাসা করবেন, (ব্রাত্য ক্বাবাৎসীঃ) হে ব্রতধারী বা ব্রতানুষ্ঠানকারী পুরুষোত্তম। আপনি গতকাল কোথায় অবস্থান করেছিলেন? (অর্থাৎ এখন কোথা হতে আগমন করছেন- অনুবাদক)। (ব্রাত্যোদকম্) হে অতিথে। আপনি এই জলাদি গ্রহণ পূর্বক (তর্পয়ন্ত্র) আমাকে আপনার সত্যাপদেশ দ্বারা আমাদের মিত্রগণ (তপয়িত্বা) আপনাকে সেবা দ্বারা প্রসন্ন করে বিজ্ঞানযুক্ত হউক। (ব্রাত্যা যথা) হে বিদ্বান! যে যে কার্য দ্বারা আপনার প্রসন্নতা জন্মে, আমরা তাই সম্পাদন করবো। যে বস্তু আপনার প্রিয় আপনি আজ্ঞা করুন। (ব্রাত্য যথাতে) হে অতিথে। যেরূপ করলে আপনার ইচ্ছা পূর্ণ হয়, আমরা তদ্রূপেই আপনার সেবা করব। এইরূপে আমরা পরস্পর সেবা ও সৎসঙ্গ পূর্বক বিদ্যা বৃদ্ধি করে, সর্বদা আনন্দিত মনে অবস্থান করতে থাকি।
ইতি সংক্ষেপতঃ পঞ্চমহাযজ্ঞ বিষয়ঃ