দৈনিক বেদবাণী


এই সমগ্র সংসার নিরোগ এবং শুভচিন্তা যুক্ত হোক । যজুর্বেদ ১৬.৪                    সূর্য-এর আলোয় স্বয়ং আলোহীন চাঁদ আলোকিত হয় । ঋগ্বেদ ৫.৪০.৫                    প্রশংসনীয় সংস্কৃতি, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও মাতৃভূমি— এই ত্রয়ী সুখ-সমৃদ্ধি প্রদান করে। ঋগ্বেদ ১.১৩.৯                    উত্তম জীবন লাভের জন্য আমাদের জ্ঞানীদের সাহচর্যে চলা উচিৎ। ঋগ্বেদ ১.১২.১৬                    যে ব্যক্তি সম্পদ বা সুখ বা জ্ঞান নিঃস্বার্থভাবে দান করে, সে-ই প্রকৃত মিত্র। ঋগ্বেদ ২.৩০.৭                    মানুষ কর্ম দ্বারাই জগতে মহত্ত্ব ও প্রসিদ্ধি লাভ করে। ঋগ্বেদ ৩.৩৬.১                    হে পতি! তোমার স্ত্রীই গৃহ, স্ত্রীই সন্তানের আশ্রয়। ঋগ্বেদ ৩.৫৩.৪                    পরমাত্মার নিয়ম বিনষ্ট হয় না; তা অটুট, অচল ও অপরিবর্তনীয়। ঋগ্বেদ ৩.৫৪.১৮                    এই ধর্মের মার্গই সনাতন, এই পথে চলেই মানবগণ উন্নতি লাভ করে। ঋগ্বেদ ৪.১৮.১                    পরমাত্মার নিকট কোনো মানুষই বড় বা ছোট নয়। সকল মানুষই সমান এবং পরস্পরের ভ্রাতৃস্বরূপ। ঋগ্বেদ ৫.৬০.৫                    যে ব্যক্তি অকারণে অন্যের নিন্দা করে, সে নিজেও নিন্দার পাত্র হয়। ঋগ্বেদ ৫.২.৬                    নিশ্চিতরূপে এই চতুর্বেদ কল্যাণপ্রদায়িনী এবং মানবকে জ্ঞান প্রদান করে ধারণকারিণী। ঋগ্বেদ ৫.৪৭.৪                    বীর মানবের জন্য পর্বতও সুগম হয়ে যায়। ঋগ্বেদ ৬.২৪.৮                    আমরা অন্যের সঞ্চিত পাপের কর্মফল ভোগ করি না। ঋগ্বেদ ৬.৫১.৭                    হে মিত্রগণ! ওঠো— উদ্যমী হও, সাবধান হও এবং এই সংসাররূপী নদীকে অতিক্রম করো। ঋগ্বেদ ১০.৫৩.৮







বর্তমান যুগে বেদের কী দরকার ?

সত্যান্বেষী
0

বর্তমান যুগে বেদের কী দরকার ❓
‎বর্তমান যুগে বহুধা বিভক্তি সমাজের জন্য বেদের গুরুত্ব অনেক । বেদ ❝বাগবিবৃতাশ্চ বেদাঃ❞ অর্থাৎ বেদ ঈশ্বরের বাণী । পরমাত্মা মানব মাত্রের ❝যথেমাং বাচং কল্যানীমাবদানিজনেভ্যঃ❞ কল্যাণের নিমিত্তে বেদ জ্ঞান প্রদান করেছেন । বেদ হলো এক অমূল্য রত্নভাণ্ডার । এ এমনই এক অশেষ ধনসম্পদের আকর যেখানে যা আছে তা তো পাওয়া যায় ই , যা নেই তাও পাওয়া যায় । কথাটির তাৎপর্য হলো এই যে , বেদে বিজ্ঞান , সমাজ ও রাষ্ট্রনীতি , ধর্মনীতি , অর্থনীতি , আধ্যাত্মিক আধিদৈবিক , আধিভৌতিক মানবজীবনের সকল আচার-আচরণ সমূহের গুরুত্বপূর্ণ বর্ণনা তো পাওয়া যায় বটেই পাশাপাশি বেদে বিভিন্ন মত- মতান্তরের ব্যক্তি নিজ নিজ মতের প্রবর্তকদের ও খুঁজে পায় । অথচ বেদ চর্চা থেকে দূরে থাকার কারণে কিংবা বেদাদি শাস্ত্র সম্পর্কে অজ্ঞতা থাকার দরুণ আমার বিপথে চলে গিয়েছি ।
‎সময়ের বিবর্তনে , অজ্ঞানতার করালগ্রাসে , ঔপনিবেশিকদের চক্রান্তে , তথাকথিত ধর্মপ্রচারক তথা ধর্মব্যবসায়ীদের অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হয়ে আমরা আজ মহান বেদের পথ থেকে দূরে সরে গিয়েছি । ফলস্বরূপ আমরা আজ জাতি হিসেবে এক ক্রান্তিলগ্নে দাড়িয়ে । জ্ঞানের অভাবে অন্য ধর্মাবলম্বীদের কাছে অপমানের স্বীকার তো হতে‌হচ্ছে বটেই , এবং নিজেদের প্রতিদিনকার জীবনযাপনেও অজ্ঞতার গ্লানিবয়ে নিয়ে চলেছি নিরন্তর । আমরাতো সংকীর্ণতা দ্বারা প্রতিহত , জটিলতা দ্বারা উদ্ভ্রান্ত , খণ্ডতা দ্বারা শতধা-বিক্ষিপ্ত হয়ে আছি । বেদচর্চার অনুপস্থিতিতে দলে দলে পৌরাণিক জাতপাত , কুসংস্কারের অত্যাচারে ধর্মান্তরিত হচ্ছে লক্ষ লক্ষ সনাতনী যার দরুণ আমাদের মধ্যে একে অপরের প্রতি হিংসা , বিদ্বেষ , ক্ষোভ , ইত্যাদি বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বিভিন্ন অপসম্প্রদায়ের আবির্ভাব ঘটেছে , নানা গুরু বা নানা নিজ দাবিকৃত তথাকথিত অবতার এসেছেন , যাদের কেন্দ্র করে স্ব স্ব সম্প্রদায়ের আবির্ভাব ঘটেছে । এই সম্প্রদায়গুলোর বেশিরভাগ নিজ গুরুর প্রতি অন্ধবিশ্বাসের জন্য গুরুকেই ঈশ্বর মেনে থাকেন । নিজ গুরুকেই ঈশ্বরজ্ঞানে পূজা করেন এবং শাস্ত্রের বদলে গুরুর নির্দেশিত মতকেই গ্রহণ করেন । এসব গুরুদের অনেকেই আবার সর্বধর্ম সমন্বয়বাদী । এভাবেই সনাতনী সমাজ ভেতর থেকে দুর্বল হয়ে যাচ্ছে । একেক গুরুর একেক মন্ত্র , একেক ঈশ্বর তত্ত্ব , একেক প্রথা ও সংস্কার দেখে ২% দীক্ষিত বাদে বাকি ৯৮% সাধারণ সনাতনী নিজ ধর্ম নিয়ে চরম বিভ্রান্ত । কোন উৎসব পালন করবে ? কী খাবে ? পশুবলি কি বিহিত নাকি অবিহিত ? বর্ণ জন্মগত না কর্মগত ? কাকে ও কীভাবে উপাসনা করবে ? ঈশ্বর–জীব–প্রকৃতি তত্ত্ব ও পারস্পরিক সম্পর্ক ? কোন মন্ত্র জপ করবে সবাই ? এসব সাধারণ ব্যাপারেই তারা বিভ্রান্ত ও একক সিদ্ধান্তহীন । অথচ এসবই আমাদের তথা যে কোন ধর্মীয় সমাজের মূল ভিত্তি । যারা কিনা এসব ভিত্তিতে সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত না দিয়ে এড়িয়ে যায় বা সবই ঠিক বলে তারাই মূলত বিভ্রান্তকারী শাস্ত্রব্যবসায়ী । যারা ঐক্যের কথা বলে তারা এটাই ভুলে যায় যে যদি মূলটাই ভিন্ন হয় তবে আপাত মধুর ঐক্যের রব কেবল শুনতেই ভালো লাগবে কিন্তু তা কখনোই বাস্তবে ফলপ্রসূ নয় । যদি দশজন সনাতনীকে ডেকে ঈশ্বরের নাম জিজ্ঞেস করা যায় , কেউ হয়তো বলবে শ্রীকৃষ্ণ ঈশ্বর , শিব তার দাস । কেউ বলবে শিব ঈশ্বর কৃষ্ণ শিবের ভক্ত । কেউ বলবে মা দূর্গা বা শক্তিই ঈশ্বর , বিষ্ণু , শিব এরা সবাই মায়ের সৃষ্টি কেউ আবার নিজস্ব মতবাদের গুরুদের নাম বলবে ঈশ্বর হিসেবে ।
 
বর্তমান যুগ বিজ্ঞানের যুগ । আধুনিক এই যুগে এসে অনেক জ্ঞানপাপী সনাতনী নিজেরদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ থেকে বিচ্যুত তাদের উক্তি হলো এইরকম যে , বিজ্ঞানের যুগে বেদ অচল । কিন্তু বেদ যে সকল বিদ্যার ভাণ্ডার সেটা সম্পর্কে তারা অবগত নয় । অথচ বেদে নানাবিধ সমস্যার সমাধান দেওয়া আছে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক বিষয় নিয়ে আলোচনা রয়েছে বরং এই যুগে বেদের বেশি আবশ্যকতা রয়েছে । বেদ পাঠের মাধ্যমে আমরা জানতে পারবো -
 
‎সৃষ্টি উৎপত্তি সম্পর্কিত বিদ্যা , পৃথিবী , চন্দ্র , সূর্য গ্রহ-নক্ষত্র-উপগ্রহ তথা মহাবিশ্ব সংক্রান্ত । পৃথিবীর আকার । জ্যোতিষ শাস্ত্র সম্পর্কিত বিদ্যা , ‎নৌ- বিমানাদি বিদ্যা । সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ , স্পেস ডাইমেনসন । সৌরশক্তি দ্বারা যান ও যন্ত্র চালানো । মহাকর্ষ ও অভিকর্ষ বল আলোক বিদ্যা । বিদ্যুৎ সম্পর্কীয় । পদার্থবিদ্যা ও রসায়ন বিষয়ক । বস্তুকনা রক্ত সংবহনতন্ত্র , সালোকসংশ্লেষণ ও শ্বসন , গনিত বিদ্যা , জলচক্র , ভ্রূণবিদ্যা , কঙ্কালতন্ত্র লিঙ্গ নির্ধারন , সমাজবিজ্ঞান রাজনীতি , অর্থনীতি , পরিবেশবাদ , দেশ , রাষ্ট সমাজ সংক্রান্ত মনোবিজ্ঞান , জীববিজ্ঞান সংক্রান্ত । ফিজিকাল , মেটাফিজিকাল এবং স্পিরিচুয়াল ক্রিয়া- প্রতিক্রিয়া , চিকিৎসা বিদ্যা । 
 
‎‎এছাড়াও নৈতিকতা যুদ্ধ বিদ্যা , সঙ্গীত বিদ্যা থেকে পার্থিব অপার্থিব আধ্যাত্মিক , আধিভৌতিক ও আধিদৈবিক সকল কিছু বেদ থেকে জানা যাবে । নিজের আত্মতত্ত্বকে জানে যাবে , শরীরকে সুস্থ রাখা । নিজের আচার-আচরণ ব্যবহার কর্তব্য-অকর্তব্য । পরিবার , সমাজ , রাষ্ট , দেশ , পৃথিবী ইত্যাদি
‎আজকের সামাজিক পরিস্থিতিতে বেদ চর্চার অনুপস্থিতিতে বৈদিক সংস্কৃতি , সভ্যতা , রীতি-নীতি , পরম্পরা আদি লুপ্তপ্রায় হয়ে গিয়েছে । এর বিপরীত কেবল ভোগবাদী এবং অর্থবাদী অন্ধ বিশ্বাস এবং কুসংস্কার পরম্পরার অত্যধিক প্রচার এবং প্রসার হচ্ছে । শাস্ত্রীয় সিদ্ধান্ত কে প্রধান্য‌ না দিয়ে গুরুবাদ এবং কোনো ব্যক্তির মতামতকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে যার ফলস্বরূপ ধর্মান্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে সমাজের ক্ষতি হচ্ছে ।
 
যেমন নারীদের "ভোগ্য বস্তু" হিসেবে দেখা হয় অথচ বেদে নারীদের পবিত্রকারি , বিদুষী ইত্যাদি বলে সম্বোধন করা হয়েছে ।
১. অঘ্ন্যা (যজু০ ৮ ।৪৩ ) = আঘাত না করার যোগ্য ।
২. অজুর্যা (ঋ০ ২।৩।৫ ) = রোগ রহিত ।
৩. অদিতি: (যজু০ ৮।৪৩ ) = অসীম ক্ষমতাবান ।
৪. অরণ্যানী (ঋ০১০।১৪৬।১) = সন্ন্যাসাশ্রম প্রাপ্ত ।
৫. অশ্বসূনৃতা (সা০পূ০ ১৭৪১ ) = প্রিয় শব্দকারী ।
৬. ইডা (যজু০ ৮।৪৩ ) = প্রশংসনীয় গুণযুক্ত ।
৭. ইন্দ্রাণী ইত্যাদি (অথর্ব০ ৭ । ৪৯ । ২) = ঐশ্বর্যশালী
৮.রাকা (অথর্ব০ ৭।৪৮ । ১) = পৌর্ণমাসীর [ পূর্ণিমা ] ন্যায় শোভায়মান ।
৯. রাত্রিঃ (ঋ০ ১০ । ১২৭ । ১) = রাত্রির ন্যায় শান্তিপ্রদাত্রী নারী ।
১০.অশ্বাজনী (যজু০ ২৯।৫০)= অশ্বের প্রশিক্ষক নারী ।
ইত্যাদি শব্দে সম্বোধন করা হয়েছে । বেদে নারীর অবস্থান অত্যন্ত গৌরবান্বিত ভাবে বর্ণনা করা হয়েছে । বেদে নারীকে এভাবে দেখানো হয়েছে যে সে দেবী , বিদুষী , প্রকাশ দ্বারা পরিপূর্ণ , সে বীরাঙ্গনা , বীরের জননী , আদর্শ মাতা , কর্তব্যনিষ্ঠ , ধর্মপত্নি , সদ্গৃহিনী সম্রাজ্ঞী । সন্তানের প্রথম শিক্ষকা তিনি । অধ্যাপিকা হয়ে তিনি কণ্যাদের সদাচার এবং জ্ঞান-বিজ্ঞানের শিক্ষাদি দান করেন । উপদেষ্টা হয়ে সকলকে সঠিক পথ দেখান ।
 
কত সুন্দর এই পৃথিবী! ঈশ্বর আমাদের জন্য প্রয়োজনীয় সকল-সুবিধা সমেত এই পৃথিবী উপহার দিয়েছেন প্রাণীকূলের বসবাসের জন্য । বায়ু , জল, মাটি ইত্যাদি সকল কিছুই আমাদের জীবনে গুরুত্ব বহন করে । কিন্তু আমরা এতটাই অধম যে যতদিনে এসবের গুরুত্ব বুঝতে শুরু করি ততদিনে হয়তো সবই শেষ হওয়ার পথে । বৃক্ষ নিধন তথা বনাঞ্চল উজার , নদী-নালা দূষণ , মাটিতে পলিথিনের মতো অপচনশীল দ্রব্যাদি নিক্ষেপ , অধিক পরিমাণে গ্রীণ হাউজ গ্যাস উদগীরণ ইত্যাদি খামখেয়ালিপনার কারণেই নানারকম রোগ-ব্যাধি , প্রাকৃতিক বিপর্যয় , মানবিক বিপর্যয় , করোনা ভাইরাসের মতো প্রাণঘাতী ভাইরাসরা বারবার আমাদের আঘাত করছে । বৈদিক যুগে কিন্তু অবস্থা এমন ছিলো না । আমরা জানি পবিত্র বেদ সংসারের পূর্ণাঙ্গ বিধান আর তাই পরিবেশ রক্ষার বিধানাবলীও বর্ণিত হয়েছে পবিত্র বেদে । সেই কালে সকলে পবিত্র বেদ অনুসরণ করতো ও নিয়মিত যজ্ঞাদি অনুষ্ঠান করতো , পবিত্র বেদের নির্দেশ সবাই মেনে চলতো ।
 
ও৩ম্ মাপো মৌষধীর্হিংসীর্ধাম্নো ধাম্নো রাজঁস্ততো বরুন নো মুঞ্চ । যদাহুরঘ্ন্যাऽইয়ি বরুণেতি শপামহে ততো বরুণ নো মুঞ্চ । সুমিত্রিয়া নऽআপऽওষধয়ঃ সন্তু দুর্মিত্রিয়াস্তস্মৌ সন্তু যৌऽস্মান্ দ্বেষ্টি যং চ বয়ং দ্বিষ্মঃ ॥
যজুর্বেদ ৬।২২
ভাবার্থঃ হে প্রজাগণের প্রতিপালক , জলকে কখনও দূষিত করো না , বৃক্ষ এবং বনভূমি কখনও ধ্বংস করো না । পানীয় এবং পুষ্টিবর্ধক উপাদানসমূহ সর্বদা সর্বত্র সহজলভ্য হোক । হে ন্যায়ের প্রতিপালক! পানীয় , বৃক্ষ ও বনভূমি এবং গাভীসমূহ পবিত্র । তাহাদেরকে নষ্ট করো না । তোমার অনুগ্রহে পানীয় এবং বৃক্ষসমূহ আমাদের মিত্রের ন্যায় সুখদায়ক হোক । কিন্তু যারা আমাদের উপর আঘাত হানে এবং আমাদের পবিত্রতাকে বিনষ্ট করে সেইসকল শত্রুদের নিকট বৃক্ষ এবং জল শত্রুবৎ প্রকটিত হোক ।
 
কাকংবীরমদ্বৃহ বনস্পতিমশস্তীর্বি হি নীনশঃ। মোত সূরো অহ এবা চন গ্রীবা আদধতে বেঃ।। ঋগ্বেদ ৬।৪৮।১৭
অনুবাদ- হে পুরবাসী! তোমরা জ্ঞানবান । বৃক্ষ উৎপাটন করোনা- তারা বিভিন্ন পক্ষীকে আশ্রয় দান করে । হ্যাঁ , নিশ্চিতভাবে তোমরা অপকারী এবং মনুষ্য সমাজে অপ্রয়োজনীয় ঝাড় এবং আগাছা থেকে মুক্তি পেতে পারো এবং উপরন্তু , পক্ষীদের শিকার ও হত্যা করো না । বৃক্ষের মতই তারা আমাদের টিকে থাকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ! 
 
বিশ্ব পরিবেশ দিবসে অঙ্গীকারবদ্ধ হই যেন আমরা পরিবেশ রক্ষার্থে এগিয়ে আসি , পবিত্র বেদের নির্দেশ মেনে চলি কারণ পরিবেশ বাঁচলেই বাঁচবে মানুষ ,
বাঁচবে এই পৃথিবী ।
দ্যাং মা লেখীরন্তরিক্ষং মা হিংসীঃ পৃথিব্যা সম্ভব ॥ অয়ং হি ত্বা স্বধিতিস্তেতিজানঃ প্রণিনায় মহতে সৌভগায়। অতস্ত্বং দেব বনস্পতে শতবলশো বিরোহ সহস্রবলশা বি বয়ং রূহেম॥
যজু ৫। ৪৩
পদার্থঃ হে মনুষ্য ! তুমি (দ্যাম্) দ্যুলোক কে (মা লেখিঃ১) বিকৃত করো না , (অন্তরিক্ষম্) অন্তরিক্ষ কে (মা লেখিঃ) বিকৃত করো না । (পৃথিব্যা সম্ভব) পৃথিবীর সাথে উত্তম পরিবেশে বাস করো । (অয়ম্ হি তেতিজানঃ স্বধিতিঃ) এই তীক্ষ্ণ কুঠার (মহতে সৌভাগায়) মহান সৌভাগ্যের জন্য । (ত্বা প্রণিনায়) তোমাকে অনুপ্রাণিত করছে (অতঃ) তাই (দেব বনস্পতে) হে হরিৎ বনস্পতি [বৃক্ষরাজি] ! (ত্বাম্) আপনি (শতবল্শঃ) শিকড় অঙ্কুরে যুক্ত হয়ে (বিরোহ) বৃদ্ধি পান । (বয়ম) আমরা (সহস্রবল্শা) সহস্র অঙ্কুরের ন্যায় (বিরুহেম) বৃদ্ধি পাই ।
 
বেদের আদেশ হলো , মানুষের উচিত শুদ্ধ বাতাসে শ্বাস নেওয়া , শুদ্ধ জল পান করা , শুদ্ধ অন্ন ভোজন করা , শুদ্ধ মাটিতে খেলা , শুদ্ধ জমিতে চাষাবাদ করা । তবেই বেদ অনুসারে তার আয়ু একশ বছর বা একশো বছরের বেশি হবে । কিন্তু আজ শুধু আমাদের দেশেই নয় , বিদেশেও দূষণ এতটাই বেড়ে গেছে যে , শুদ্ধ বাতাস বা শুদ্ধ মাটি ও শুদ্ধ ভূমি মানুষের কাছে দুর্লভ । কলকারখানা থেকে নির্গত অপদ্রব্য যুক্ত ধোঁয়া , গ্যাস, আবর্জনা , বন-জঙ্গল উজাড় করা ইত্যাদি এই পরিবেশ দূষণের কারণ । পরিবেশ দূষণ এমন অবস্থায় পৌঁছেছে যে অনেক জায়গায় অ্যাসিড বৃষ্টি হচ্ছে । কলকারখানার গ্যাস , ধোঁয়া, ড্রেনে প্রবাহিত অম্লীয় পদার্থ ইত্যাদি বায়ুমণ্ডলে মিশে আকাশে যতদূর পর্যন্ত ছড়ায় , ততদূর পর্যন্ত তাদের দ্বারা বায়ুদূষণ হয়েছে । পারমাণবিক বোমা ইত্যাদি পরিবেশকে দূষিত করছে । যদি মানুষ বেদের বাণীর প্রতি মনোযোগ না দেয় , তবে একদিন ধ্বংস নিশ্চিত । আকাশে বহমান বাতাস‌ , বৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি , বজ্রপাত , যে ঘূর্ণিঝড় উঠবে , উল্কাবৃষ্টি , সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি আসবে , সবই হবে বিষাক্ত‌ । মানুষের নিঃশ্বাসও তখন তার মৃত্যুকে আমন্ত্রণ জানাবে । কিন্তু বেদ মন্ত্র আমাদের অনুপ্রাণিত করছে যে, হে মানব! পৃথিবীকে বিকৃত করো না , অন্তরিক্ষ-বায়ুকে বিকৃত করো না । হে মানব ! তুমি বৃক্ষকে বড় করো এবং তুমি নিজেও বড় হও । তোমার , বংশ , সম্পদ , বীরত্ব , বিজয়ের বৃদ্ধি হোক । 
 
বেদ আমাদের মানবতা এবং ও ভ্রাতৃত্ববোধের শিক্ষা দেয় , একে অপরের সঙ্গে তথা সকল প্রাণীর প্রতি মিত্র ভাব রাখার শিক্ষা দেয় , সকল মানুষকে সমান দৃষ্টিতে দেখার শিক্ষা দেয় , একে অপরের সঙ্গে মিলে মিশে থাকার শিক্ষা দেয় , অহিংসার শিক্ষা দেয় , ❝বসুধৈব কুটুম্বকম❞ আমরা এক জাতি , এক পরিবার ও এক মানবতার ধর্মের শিক্ষা দেয় । ❝যুযোধ্যস্মদ্ দ্বেষাংসি❞ [ঋগ্বেদ-২.৬.৮]‌ হে পরমেশ্বর ! আমাদের হৃদয় থেকে ঈর্ষা , দ্বেষ , বৈরী ভাবকে দূর করো । 
 
সংগচ্ছধ্বং সংবদধ্বং সংবো মনাংসি জানতাম্ ৷
দেবাভাগং যথাপূর্ব্বে সংজানানা উপাসতে ॥
ঋগ্বেদ ১০।১৯১।২
বঙ্গানুবাদঃ— হে মনুষ্য ! তোমরা একসঙ্গে চল , একসঙ্গে মিলে আলোচনা কর , তোমাদের মন উত্তম সংস্কারযুক্ত হোক ৷ পূর্ব্বকালীন জ্ঞানী পুরুষেরা যেরূপ কর্তব্য কর্ম সম্পাদন করেছেন তোমরাও সেই রূপ করো ৷ 
 
‎বেদ সম্পর্কে বিভিন্ন দার্শনিক , বিজ্ঞানী , লেখক ধর্মতত্ত্ববিদগণ বলেছেন -
‎"বেদ হচ্ছে শল্যবিদ্যা , শারীরবিদ্যা , প্রকৌশল , গণিত , সঙ্গীত , সংস্কৃতি সকল কিছুর মিলিত এক সমাবেশ , যেন এক জীবন্ত বিশ্বকোষ ! "
‎উইলিয়াম জেমস বিখ্যাত আমেরিকান দার্শনিক ।
‎আশ্চর্য! বুঝতে পারলাম যে, যত ঐশ্বরিক গ্রন্থের কথা শোনা যায় তাদের মধ্যে বেদই একমাত্র যার সকল ধারণা আধুনিক বিজ্ঞানের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ, একমাত্র এটিই জগতের ক্রমান্বয় উন্নতির পথ ঘোষণা করে। "
বিখ্যাত ফরাসি লেখক ও ধর্মতত্ত্ববিদ
Louis Jacolliot তার " Tha bible in
‎India" গ্রন্থে বলেছেন ।
‎যখন আমি বেদ পড়ি তখন এক অপ্রাকৃত আলোক যেন আমায় আলোকিত করে ,
‎এটি এমন একটি গ্রন্থ যাতে কোনো বিভেদ নেই , 
 
‎এটি সকল দেশ , সকল জাতি , সকল কালের জন্য।, যেন জ্ঞান অর্জনের এক রাজকীয় পথ ।"
‎ হেনরী ডেভিড থরো
‎Vedas are the most rewarding and the most elevating book which can be possible in the World "
‎ Arthur Schopenhauer
‎এই পর্যন্ত বেদ এত যত্নের সাথে সংরক্ষিত হয়েছে যে আর কোন বইয়ের সাথেই তার তুলনা দেয়া যায় না , এরকম পরিবর্তিত হওয়ার ক্ষীণতম সম্ভাবণা পর্যন্ত না থাকা মানব ইতিহাসের একমাত্র দৃষ্টান্ত । "
‎আর্থার এন্থনি ম্যাকডোনেল
 
বর্তমান যুগে বেদের প্রয়োজনীয়তা
১) একটি মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত জীবনের ষোড়শ সংস্কার পবিত্র বেদে আছে ।
২) হিন্দুরা গো-হত্যা করে না ? কোথায় আছে ? আছে পবিত্র বেদে ।
৩) হিন্দুরা মৃতদেহ দাহ করে‌ । কবর দেয় না । এটা কই আছে ? আছে পবিত্র বেদে ।
৪) একজন হিন্দু দিনে কয়বার ঈশ্বরের উপাসনা করবে । কোন কোন মন্ত্র পাঠ করে ঈশ্বরের উপাসনা করবে তা সবই বেদেই আছে‌ ।
৫) অন্নগ্রহণের পূর্বে , শয়নের পূর্বে ইত্যাদি কাজ ও বিভিন্ন শুভকর্মে কি মন্ত্র পাঠ করবেন তা সবই বেদেই আছে ।
৬) যখন কোন মুসলিম প্রশ্ন করবে সনাতনধর্মে নারী অধিকার বিষয়ে কি বলা আছে ? যেই বিষয়ে শত শত বেদমন্ত্র আছে বেদে ।
৬) আধুনিক বিজ্ঞানের সাথে সেই সনাতনধর্ম কতটুকু সামঞ্জস্যপূর্ণ ? আধুনিক যুগের যুবসমাজ যখন এই প্রশ্নগুলো করবে তখন পবিত্র বেদে আধুনিক বিজ্ঞান-প্রযুক্তি নিয়ে শত শত বিস্ময়কর তথ্য আছে ।
৭) সতিদাহপ্রথা , বাল্যবিবাহ , জাতিভেদ , বহুবিবাহ।, নারীশিক্ষা ইত্যাদি হিন্দুসমাজে বর্তমান ও পূর্ববিদ্যমান কুসংস্কারের সমাধান একমাত্র বেদ থেকেই যথাযথভাবে দেওয়া সম্ভব‌ ।
৮) দেশ সমাজ রাষ্ট্র চালানোর প্রেরণা নিয়ম কানুন বেদ থেকে পাই । এক কথায় আমাদের জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় সকল কিছু বেদ থেকে প্রেরণা পাই 
 
বেদ শুধু আদি নয় । বেদ প্রধান , পরম , সর্বোচ্চ , শ্রেষ্ঠ ও মূল । বেদের অনুপস্থিতিই কোটি কোটি হিন্দুকে কনভার্টেড হইয়েছে যা অন্য কোনো গ্রন্থ বা কেউই রুখতে পারেনি । যে বাঙালী হিন্দুর কথা বলছেন তার প্রায় ৬০ ভাগ ই আজ কনভার্টেড । তাই বর্তমান সময়ে বেদের পঠন-পাঠন প্রচার প্রসার অতীব গুরুত্বপূর্ণ । পরমেশ্বর আমাদের বেদ বাণীর দান করেছে সমগ্রবিশ্বের জন্য , সমগ্র মানব জাতির কল্যাণের জন্য , বিশেষ কোন জাতি বা ধর্মের জন্য নয়‌ । বেদপাঠে সবার অধিকার রয়েছে । তাই আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ , আপনারা সত্যের পথে ধাবিত হন । বেদ অধ্যায়ন করুন , কুসংস্কার থেকে সমাজকে রক্ষা করুন ।

Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)