(১) বাদঃ
“প্রমাণ, তর্ক, সাধনোপালম্ভঃ সিদ্ধান্তাবিরুদ্ধঃ পঞ্চ পঞ্চাবয়বোপপন্নঃ পক্ষ প্রতিপক্ষ পরিগ্রহো বাদঃ।”
[ন্যায় দর্শন ১।২।১]
অর্থ: যথার্থ প্রমাণ ও তর্কের মাধ্যমে নিজের পক্ষকে প্রমাণিত করা এবং বিপক্ষের যুক্তির ও প্রমাণের খণ্ডন করা, সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধ না হয়ে, পাঁচ অবয়বযুক্ত পক্ষ ও প্রতিপক্ষের গ্রহণ করে যে কথোপকথন হয় তা হলো ‘বাদ’। “প্রতিজ্ঞা হেতুদাহরণোপনয়ন”। [ন্যায় ১।১।৩২] অর্থাৎ,
১| প্রতিজ্ঞা (সাধ্য)
২| হেতু (সাধনা)
৩| উদাহরণ
৪| উপনয় (সবগুলোকে যুক্ত করা)
৫| নিগমন (সম্পূর্ণ প্রকরণের সাথে মিল করে দেয়া)
এই পাঁচটি হলো ‘বাদ’ শাস্ত্রার্থের পাঁচটি অবয়ব।
(২) জল্পঃ
“যথোক্তোপপন্নশ্ছল জাতি নিগ্রহ স্থান সাধ্নোপালম্ভো জল্পঃ”
[ন্যায় ১।২।২]
অর্থাৎ, প্রতিজ্ঞাদি যুক্ত ছল জাতি এবং নিগ্রহ স্থান দ্বারা
খণ্ডন বা মণ্ডন হলো ‘জল্প’।
‘ছল’ কি?
“বচন বিধাতোঽর্থপপত্যাছলম্” [ন্যায় ১।২।৫১]
অর্থ: বক্তার ভাব ও সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধ কল্পনা করে বক্তার পক্ষ নিয়ে আক্ষেপ করা ভুল। এটি বাক ছল, উপচার ছল ইত্যাদি প্রকারের হয়। যেমন
জাতি: “সাধর্ম্য বৈধম্যাভ্যাং প্রত্যবস্থানম্ জাতিঃ”
[ন্যায় ১।২।৫৯] অর্থাৎ বিবাদ করা এবং সমস্ত নিয়মের উপেক্ষা করা।
‘নিগ্রহস্থান’ কি?
“বিপ্রতিপত্তিরপ্রতিপত্তিশ্চ নিগ্রহ স্থানম্”
[ন্যায় দর্শন ১।২।৬০]
অর্থ: বক্তার বক্তব্যকে উল্টোভাবে বোঝা এবং তা নিয়ে বিবাদ করা হলো নিগ্রহস্থান।
জাতি এবং নিগ্রহস্থান বহু প্রকারের হয়।
হেত্বাভাস কি?
“সব্যভিচার, বিরদ্ধ, প্রকরণসম সাধ্যসম, কালতীতা হেত্বাভাস:” [ন্যায় ১।২।৪৫]
অর্থ: সব্যবিচার অর্থাৎ অনৈকান্তিক, অতিব্যাপ্তি, বিরুদ্ধ প্রকরণসম, সাধ্যসম, অতীতকাল এগুলো ‘হেত্বাভাস’।
(৩) বিতণ্ডাঃ
“স প্রতিপক্ষস্থাপনা হীতো বিতণ্ডা” [ন্যায় দর্শন ১।২।৪৪]
অর্থ: কোন প্রকার যুক্তি ছাড়া বা নিজের পক্ষ সিদ্ধ করা ছাড়া শুধুই বিবাদ করাকে ‘বিতণ্ডা’ বলে।
শাস্ত্রার্থে এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো মনে রাখা উচিত। শাস্ত্রার্থ দুই প্রকার হয়ে থাকে।
(ক) সত্যাসত্যের নির্ণয়ের জন্য
(খ) শুধু জয় পরজয়ের জন্য
আমরা নানা মতের 'পণ্ডিত'-দের মধ্যে দেখি যে তারা প্রায়সময় ছল করে, উগ্রতার মাধ্যমে, চিৎকার চেঁচামেচি করে শাস্ত্রার্থগুলোতে নিজেদের জয়ী করে। বারাণসীতে মহর্ষি দয়ানন্দের সাথে শাস্ত্রার্থে স্বামী বিশুদ্ধানন্দ এবং বাকি অন্য পৌরাণিক পণ্ডিতেরা এটাই করেছিলো। শাস্ত্রার্থে চলমান বিষয় পরিবর্তন, চিৎকার চেঁচামেচি করা এসব ব্যবহার আজ পর্যন্ত তাদের পরিবর্তন হয় নি।
শাস্ত্রার্থে এইসব হৈ-হুল্লোড়বাজ থেকে রক্ষার জন্য একটি ভালো স্বেচ্ছাসেবকের দল রাখা উচিত। শাস্ত্রার্থে কখনো উত্তেজিত হওয়া উচিত না, উত্তেজিত হলে শাস্ত্রার্থকারী পরাজিত হয়। যে সকল প্রমাণ দেয়া হবে তা সঠিক এবং নিজের দেখা গ্রন্থের হওয়া চাই, অন্যের দেখা বা শোনা নয়। অন্যের উপর নির্ভরশীলতাও পরাজয়ের একটি মূখ্য কারণ হয়। মিথ্যা প্রমাণ বা ছল কপটের কারণে নৈতিকতা নষ্ট হয়ে যায়। ধর্মোপদেশকদের কখনোই আদালতের উকিলদের মতো হওয়া উচিত না, সে জিতুক বা হারুক। নৈতিকতা এবং সত্যের যেন ক্ষতি না হয় তা খেয়াল রাখা উচিত।
বাংলাদেশ অগ্নিবীর
সত্য প্রকাশে নির্ভীক সৈনিক