দানের সাথে জ্ঞানের মিলন হলে সেখানে না ভয় থাকে,না ভ্রম থাকে;সাধু ফ্রান্সিস বলেছিলেন দানের মাহাত্ম্য নিয়ে এই কথা।দান মহাগুন।দান কোন দয়া নয়,দান হল ভালোবাসার আদান প্রদান।পবিত্র বেদ অনুযায়ী গরীব-দুঃখীদের দান করে একজন মানুষ তার ইহজীবনের পাঁচটি মহাঋণের মধ্যে একটি শোধকরে। পবিত্র বেদ সর্বদা ই দান করাকে উৎসাহিত করেছে। এমনকি ঋগ্বেদের দশম মণ্ডলের ১১৭ নং সূক্তটি সম্পূর্ণ ই দানের মহিমা নিয়ে দৃষ্ট যার কারনে সুক্তটির নাম “দানস্তুতি” সূক্ত।আজ আমরা এদের মধ্যে কয়েকটি মন্ত্র নিয়ে আলোচনা করব-
প্রীয়াদিন নাধমানায় তব্যান দ্রাঘিয়াসমনুপসী ইত পন্থাম।
ও হি বর্তন্তে রথ্যেব চক্রান্যমন্যমুপ তিশান্ত রায়ঃ।।
(ঋগ্বেদ ১০.১১৭.৫)
মহত্তম তিনি যিনি দরিদ্র ও অসহায়কে খাদ্য,অর্থ দিয়ে সাহায্য করেন।বিপন্নের সাহায্যকারী
জীবনের প্রতিটি ধাপেই সাহায্যপ্রাপ্ত হন।ধনীরা যেন গরীবদের সাহায্যের ব্যপারে কখনো কুণ্ঠিত না হয় কেননা রথের চাকার কন্টকসমূহ চলমান অবস্থায় একস্থান থেকে তার বিপরীত স্থানে অবতীর্ন হয়,কে
জানে হয়ত তাদের আজকের এই অবস্থাও সেই চাকার কন্টকের মতই
পাল্টে যেতে পারে!
অর্থাৎ
ধনীদের উচিত দুঃস্থদের দান করা, তাদের দুরদৃষ্টিসম্পন্ন হওয়া উচিত কেননা ধনসম্পদ হল রথের চাকার মত, এখন যা এখানে পরমূহুর্তেই তা অন্যখানে গতিশীল
হয়।
মোঘমন্নং বিন্দতে অপ্রচেতাঃ সত্যং ব্রবীমি বধ ইত স তস্য।
নার্যমণং পুষ্যতি নো সখায়ং কেবলাঘো ভবতি কেবলাদী।।
(ঋগ্বেদ ১০.১১৭.৬)
কিন্তু
অপাত্রে দান আবার ঠিক নয়। যে দান থেকে
প্রাপ্ত সম্পদের অপব্যবহার করে তার অপকর্মের দায় কিন্তু
দানকারীর ও বটে। এজন্য ই কিন্তু যোগেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ বলে গিয়েছেন-
"দান করা কর্তব্য এই চিন্তা করে, প্রতিদানের আশা না
রেখে সৎপাঅত্রে, উপযুক্তস্থানে, সঠিকসময়ে
যে দান করা হয় তাই সাত্ত্বিক(উৎকৃষ্ট) দান।"
(শ্রীমদভগবদগীতা ১৭.২০)
মহর্ষি মনু বলেছেন,
"যে ব্যক্তি পাথরের তৈরী নৌকায় চড়ে জলপথ পাড়ির চেষ্টা করেন তার সমাপ্তি যেমন সলিলসমাধিতে হয় ঠিক তেমনি অযোগ্য গ্রহীতাতে দানকারী অযোগ্য দাতাও অজ্ঞানতার গভীরে নিমজ্জিত হন”
সর্বশ্রেষ্ঠ দান কোনটি?
সর্ব্বেষামেব দানানাং ব্রহ্মদানং বিশিষ্যতে।
বার্য্যন্নগোমহীবাস্তিলকাঞ্চনসর্পিষাম্।।
(মনুসংহিতা ৪.২৩৩)
“যত ধরনের দান এই পৃথিবীতে আছে, জলদান, অন্নদান, ধেনুদান, ভূমিদান, বস্ত্রদান, তিলদান, স্বর্ণদান, এই সকল দানের মধ্যে জ্ঞান দান বা শিক্ষা দান/বেদশিক্ষা দান সর্বশ্রেষ্ঠ
দান।”
স ইদ ভোযো য়ো গৃহভে দদাত্যন্নকামায় চরতে কৃষায়া।
অরমস্ময় ভবতি য়ামহুতা উতাপারীসু ক্রুতে সখায়ম।।
(ঋগবেদ ১০.১১৭.৩)
"যারা অসহায়দের দান করে তাদের জন্য রয়েছে অনন্য পুরস্কার।তার যেমন আশীর্বাদময় দীর্ঘায়ু লাভ করে ঠিক তেমনি মৃত্যুর পর অমরত্ব লাভ করে, হ্যাঁ অমরত্ব লাভ
করে!"
দানের মাহাত্ম্য বাড়াতে অথর্ববেদের অমর বাণীটি দিয়ে শেষ করব আজ।
শত হস্ত সমাহার
সহস্র হস্ত সং কির।।
(অথর্ববেদ, ৩.৩০.৬)
“আয় করতে হাতটিকে শতটিতে বৃদ্ধি কর আর দান করতে তাকে সহস্রটিতে
রুপান্তরিত কর”