ঈশ্বরীয়
জ্ঞান
আমরা পূর্বে লিখেছি যে আদি
সৃষ্টিতে পরমেশ্বরের জ্ঞানের আবির্ভাবের প্রতি অবিশ্বাস অথবা আজ সেই জ্ঞানকে
অনুপযোগী মানা- এই সব বিবেচনা হল ঈশ্বরের জ্ঞান-কর্ম-র সঙ্গতিকে না মেনে নেওয়ার
পরিণাম।
বৈদিক
ধর্মের মান্যতা হল যে পরমেশ্বর আদি সৃষ্টিতে জ্ঞানের প্রকাশ চারজন ঋষিদের হৃদয়রূপী
গুহাতে (cave-like heart) করেছেন।
বেদ স্বয়ং বলছেন—
“বৃহস্পতে
প্রথমং বাচো অগ্রং যৎপ্রৈরত নামধেয়ং দধানাঃ ।
যদেষাং
শ্রেষ্ঠং যদরিপ্রমাসীৎপ্রেনা তদেষাং নিহিতং গুহাবিঃ ।।
(ঋগ্বেদ
১০/৭১/১।।)
[বেদের
প্রকাশ হয়েছে, বেদ অবতরিত হয়নি ]
মত মতান্তরবাদীরা ঈশ্বরকে একদেশী
বলে স্বীকার করে। অতঃ তাঁরা জ্ঞানের প্রকাশের জায়গার ঈশ্বরীয় বাণীকে নাজিল অর্থাৎ
উপর থেকে এসেছে, অবতরিত হয়েছে বলে মনে করে। খ্রীষ্টান
এবং মুসলমানভাই ঈশ্বরকে চতুর্থ বা সপ্তম আকাশে বিরাজমান বলে ভাবে। এইজন্য এটা
স্বাভাবিক যে তাঁরা জ্ঞানকে উপর থেকে অবতরিত মনে করে। তাঁরা এটাও মানে যে
আল্লাহ্ নিজের নবীদেরকে (পয়গম্বর) নিজের দূতসমূহের দ্বারা জ্ঞান পৌছান।
বেদ ঈশ্বরকে সর্বব্যাপক মানে । এই জন্য বৈদিক মান্যতানুসার ঈশ্বর কোন
দূতের সহায়তা না নিয়েই ঋষিদের হৃদয়-গুহাতে জ্ঞানের প্রকাশ করেন।
[পয়গম্বরবাদ
এবং ঈশ্বরীয় জ্ঞান ]
ইসলামের আদি
মতগুলির পয়গম্বরবাদও ঈশ্বরকে একদেশী মানার কারণে প্রাদুর্ভূত হয়েছে ।
পয়গম্বর শব্দের অর্থ হল সুন্দর সংবাদ নিয়ে আসে যে । সংবাদ তো দূর থেকেই
আসে বা আনা হয়। নিকটবর্তীকে কিছু বলা বা বোঝানোর জন্য সংবাদ পাঠানোর কি
আবশ্যকতা ? এ থেকে স্পষ্ট যে পয়গম্বরবাদের ভিত্তি
ঈশ্বরের সর্বব্যাপকতাতে অবিশ্বাস অথবা এমন বলুন যে জগৎ থেকে প্রভুর দূরত্বের উপর
স্থাপিত করা হয়েছে ।
[ সৃষ্টি
নিয়ম এবং ঈশ্বরীয় জ্ঞান ]
কিছু কিছু লোক আদি
সৃষ্টিতে ঈশ্বরীয় জ্ঞানের প্রাপ্ত হওয়ার উপরে শংকা জাহির করেন । আমাদের
উত্তর হল যে সৃষ্টি ঈশ্বরের কর্ম। বেদ হল তাঁর জ্ঞান। সৃষ্টি রচনার
নিয়মই এটি সিদ্ধ করে যে ঈশ্বরীয় জ্ঞানের প্রকাশ আদি সৃষ্টিতেই হওয়া উচিৎ ।
মনুষ্যের নিয়ম হল Necessity is the mother of invention
অর্থাৎ আবশ্যকতা হলো আবিষ্কারের জননী । সৃষ্টি নিয়ম হল
এঁর বিপরীত । আবশ্যকতার পূর্বেই পরমেশ্বর তাঁর পূর্তির সাধন প্রদান করেছেন।
যেমন—
মনুষ্য পরে জন্ম নিয়েছে ; প্রথমে ধরতী,
পান করার জল, শ্বাস নেওয়ার জন্য
বায়ু, খাওয়া-দাওয়ার জন্য অন্ন, বনস্পতি, দুধালু পশুকে ভগবান তৈরি করেছেন ।
বাচ্চা জন্মের পরে কাঁদছে এবং পরে মায়ের স্থানে দুধ এসেছে এরকম আমরা
দেখছি না । দুধ আসার পরে বাচ্চা এসেছে । সৃষ্টির নিয়ম হল যে
ভগবান প্রয়োজনের পূর্বেই তাঁর পূর্ত্তির জিনিষপত্র উৎপন্ন করে দেন। এতে কোন
পরিবর্তন বা অপবাদ নেই । এই সৃষ্টি নিয়মের অনুসারে পরমেশ্বর চক্ষু তৈরি করার
পূর্বেই সূর্য তৈরি করে রেখেছেন । এই নিয়মের অন্তর্গত ভগবান যখন বুদ্ধি
দিয়েছেন তখন বুদ্ধির জন্য জ্ঞানের প্রকাশও আদিসৃষ্টিতে দিয়েছেন ।
আপনি বাজার থেকে
কাপড় ধোয়ার মেশিন বা ইলেক্ট্রিকের ইস্ত্রি কিনবেন, তাঁর
সাথে আপনাকে কোম্পানীর তরফ থেকে একটি Instruction book (নির্দেশনা পুস্তিকা) প্রাপ্ত হয়। এটি কি করে সম্ভব হতে পারে যে পরমাত্মা এতবড় বিশাল সৃষ্টির
রচনা কো করে দিলেন পরন্তু এর উপযোগ, প্রয়োগ উপভোগের
বিধি বলার জন্য নিজের নির্দেশ পুস্তকই দিলেন না ।
[ দৈনন্দিন
জীবনে জ্ঞান প্রথমে, কর্ম পরে ]
হঠতা, জিদ
এবং দুরাগ্রহে গ্রসিত কেউ মানুক বা না মানুক, মন এবং
মস্তিষ্ক সবাইয়ের এইটাই মানতে বাধ্য যে প্রথমে জ্ঞান, পরে
কর্ম। ইংরেজী এবং অন্যান্য ভাষাতেও লোকোক্তি রয়েছে— Look
before you leap — অর্থাৎ যে
কর্মের পূর্বে জ্ঞান আবশ্যক । একটি লোকোক্তি রয়েছে —Think before you speak
—
অর্থাৎ প্রথমে ভাবো তারপর বল । এই দুইটি বাক্য মানব
সমাজের মধ্যে বৈদিক সিদ্ধান্তের প্রতি স্বাভাবিক অচল বিশ্বাসকে ব্যক্ত করছে ।
বৈদিক সিদ্ধান্ত এটাই যে, মানব যখন সৃষ্টিতে
জন্ম নিয়েছে তখন তাঁদের মার্গ দর্শন এবং কল্যাণের জন্য ঈশ্বর
বেদ-জ্ঞান দিয়েছেন ।
কিছু লোক
বিকাশবাদের দোহাই দিয়ে বলে থাকে যে মানব ধীরে ধীরে উন্নতি করেছে এবং উন্নতি করতে
করতে ধীরে ধীরে জ্ঞানপ্রাপ্ত করে নিয়েছে। কেমন উল্টা কথাবার্তা !!
আমরা বলছি যে উন্নতির জন্য জ্ঞান একান্ত প্রয়োজন । এঁরা বলছে উন্নতি
করে জ্ঞান প্রাপ্ত করেছে। মনোবিজ্ঞান (Psychology)
বৈদিক সিদ্ধান্তকে স্বীকার করে । মনোবিজ্ঞান এটা মানে
যে, প্রত্যেক মানসিক কার্য্যে তিনটি বস্তু কাজ
করে— ১) Cognition (জ্ঞান)
২) Affection (অনুভূতি) ৩) Conation
(ক্রিয়া) মনোবিজ্ঞানের এই সিদ্ধান্ত সমস্ত বিশ্বের বিচারকদের
কাছে মান্য। এই সিদ্ধান্তের অনুসারে ক্রিয়ার পূর্বে অনুভূতি এবং অনুভূতির
পূর্বে জ্ঞান হল আবশ্যক । যখন ক্রিয়ার পূর্বে অনুভূতি এবং অনুভূতির পূর্বে
জ্ঞান হল অনিবার্য তাহলে বিনা জ্ঞানে মানব উন্নতি কি করে করল ?
[ পরিবর্তনশীল
জগতের নিয়ম হল অটল ]
মতবাদী আক্ষেপ করে থাকে যে পরিবর্তনশীল সংসারে পথচলার নিয়ম অর্থাৎ ঈশ্বরীয়
জ্ঞানেরও সময়ে সময়ে পরিবর্তন হওয়া উচিৎ । এই ধরণের বিচারশীল-বন্ধু ভুলে যান
যে কেবলমাত্র মনুষ্যের নিয়মই বদলায় । এঁর কারণ হল যে, জীব হল অল্পজ্ঞ । সর্বজ্ঞ ঈশ্বরের প্রবর্তিত নিয়ম বদলায় না ।
আজ পর্যন্ত একটিও সৃষ্টি-নিয়ম বদলায় নি । সত্য না মরে না জন্ম নেয়।
সত্য তো সত্যই। সবাই মানে যে Truth never dies
অর্থাৎ সত্য কখনও মরে না ।
বেদ জ্ঞান হল অনাদি এবং দেশ, কালের বন্ধনের মধ্যে
বাঁধা নয়। বেদ সবাইয়ের জন্য এবং সব যুগের জন্য । ইংরেজিতে ব্যাকরণের
নিয়ম হল যে Direct থেকে indirect
করার সময় যদি কোন বাক্যে নিত্য সত্য বলা হয়েছে তাহলে সেই বাক্যের Tense
(কাল) পরিবর্তন হয় না । সেই বাক্য সর্বদা বর্তমান কালেই থাকবে
। যথা Two and two makes four. The earth moves round the sun. Unity
is strength ইত্যাদি ইত্যাদি । যদি
জিজ্ঞাসা করা হয় এই কালকে কেন বদলানো হয় না ? উত্তর
পাওয়া যায়— এ সব হল Eternal Truth
(চিরন্তন সত্য)। সত্য কালের সাথে বদলায় না । সে হল
নিত্য নূতন। অথর্ববেদের ১০/৮/২৩ মন্ত্রে এই সিদ্ধান্তকেই প্রস্তুত করে বেদ
ভগবান বলেছেন—
“সনাতন
মেনাহুরুতাদ্য স্যাদ পুনর্ণবঃ।
অহোরাত্রে
প্র জায়েতে অন্যো অন্যস্য রূপয়োঃ ।।
অর্থাৎ তাকে সনাতন বলা হয় যে আজও পুনঃ
নূতনের মতো হয়। দিনরাত দুই একে অন্যের রূপে উৎপাদিত হয় । প্রত্যেক
সোমবার নূতন । প্রত্যেকটি দিন নূতন পরন্তু এই দিনরাতের ব্যাপারটা কত পুরানো— তা সত্ত্বেও নূতন। কারণ ? এটি
হল অটল নিয়ম।
[ সত্য
হল নিত্য, নুতনও বটে ]
প্রসিদ্ধ কবি Byronও উক্ত দার্শনিক সত্যকে ব্যক্ত করে লিখেছেন—
“It is strange but true ;
for truth is always strange ; stranger than fiction.” অর্থাৎ
ভাব হল যে সত্য পুরাতন হওয়ার পরেও সদৈব নূতন থাকে । একে সবাই মানে ।
বৈদিক ধর্ম হল পুরাতন, সনাতন, এটি ঠিক পরন্তু মানব কল্যাণে এটাই রাস্তা । যে নিত্য বদলায় তা
সত্য নয়, যা সত্য নয় তা মান্য নয়, হিতকর নয় । মানবজাতির কল্যাণ এতেই যে আমরা অসত্যকে
ত্যাগ করে সত্যকে গ্রহণ করি ।
[ বাইবেলে বেদের মহিমা ]
এ হল ১৯৬৮ খ্রীষ্টাব্দের
কথা। পাঞ্জাবের কপূর থলা শহরের আর্য বন্ধু শ্রী সুলক্ষণ কুমারের সাথে আমাকে
কেরলে বৈদিক ধর্ম প্রচারের জন্য যেতে হয়েছিল। চৈঙ্গবন্নম্ এ আমরা Seventh day Adventist
church-র পাদ্রী শ্রীযুক্ত চাকোর (K.V. Chako)
ঘরে গেলাম। শ্রী পণ্ডিত নরেন্দ্রভূষণজী তথা পণ্ডিত
গোবিন্দভূষণজী সাথেই ছিলেন। শ্রী নরেন্দ্র চাকোর সাথে পরিচয় করালেন। ধার্মীক
চর্চা আরম্ভ হল। শ্রী পাদ্রী মহোদয় একদম প্রশ্ন করে বললেন— Do
you Believe in a living God ? অর্থাৎ আপনারা
কি জীবিত পরমেশ্বরে বিশ্বাস করেন ? আমি তৎপরতার সাথে
উত্তর দিলাম—Yes. But not in an absentee— অর্থাৎ
আর্য লোকেরা জীবিত পরমেশ্বর (অজর, অমর, অজন্মা, নিত্য, অনাদি,
সৎ, চিৎ ও আনন্দস্বরূপ )— এ বিশ্বাস করে পরন্তু আমাদের ঈশ্বর অনুপস্থিত থাকে না । কোথাও
কোন আকাশে পাতালে, জল -পর্বতে,
কোন আসন বা সিংহাসনে বসে নেই। এই উত্তরে পাদ্রী
মহাশয় কিছুটা ঝাঁকানি খেলেন। আমি বললাম—
“যদি আপনি আজ্ঞা দেন তো আমি একটি প্রশ্ন আপনাকে জিজ্ঞাসা করি ? পাদ্রী বললেন— জিজ্ঞাসা করুন” আমি বললাম— বাইবেলে লেখা আছে - “In the begining was the
word and the word was with God and the word was God” (St. Jhon. New jestament.
Chapter -1 ) অর্থাৎ শুরুতে শব্দ ছিল এবং শব্দ ছিল
ঈশ্বরের সাথে এবং শব্দ ছিল ঈশ্বর ।
পাদ্রী মহোদয় বললেন—
হ্যাঁ, বাইবেলে এই কথা আছে। তখন আমি জিজ্ঞাসা করলাম—Word
(বাইবেলের) শব্দের এখানে অভিপ্রায় কি ?”
পাদ্রী মহোদয় বললেন শব্দের অর্থ শব্দ। পুনরায় আমি
জিজ্ঞাসা করলাম— “আরম্ভে
শব্দ ছিল— এটি বাইবেলে আছে তাহলে সৃষ্টির আদিযুক্ত
শব্দ কোথায় গেল ? বাইবেলকে তো যীশু
দিয়েছেন। সৃষ্টির আদি শব্দ কোথায় ?” পাদ্রী
মহোদয় স্পষ্টরূপে বললেন— “আমাকে
আজ পর্যন্ত কেউই এরকম প্রশ্ন করেনি । নাতো আমি কখনও এঁর উপর সংশয় করেছি। আমি
এঁর উত্তর জানিনা ।”
তখন আমি বললাম— “এর অর্থ আমি বলতে পারি ?”
পাদ্রীর আজ্ঞা পেয়ে বললাম “বাইবেলের
লেখক আর্য দর্শনের পারিভাষিক শব্দকে বোঝাতে পারেনি । বৈদিক দর্শনে বেদ -প্রমাণকে
শব্দ প্রমাণও বলা হয়। শব্দ - প্রমাণ আরও হতে পারে পরন্তু শুরুতে তো স্বতঃপ্রমাণ
বেদ-ই শব্দ প্রমাণ ছিল। অতঃ শব্দের অর্থ হল জ্ঞান। বাইবেলের এই কথন সত্য যে
সৃষ্টির আদিতে বেদের প্রকাশ হয়েছে । এটাও বিশেষ লক্ষ্য করার যোগ্য যে
বাইবেলের তিনবার word শব্দের W -কে Capital Word -এ লেখা হয়েছে ।
অতএব এই ধর্মগ্রন্থ বেদের জন্যই এসেছে ।
স্মরণযোগ্য যে শিখ
ভাইয়েরা গুরুদের বাণীকে শব্দ বলে থাকে । গুরুবাণীর পাঠকে শব্দ কীর্তন বলা
হয়। কারণ এটাই যে ঋষিদের, মুনিদের এবং
বিদ্বানদের বচন সমূহকেও শব্দ প্রমাণ বলা হয়ে থাকে । পুঃন আমি জিজ্ঞাসা করলাম
— “And the word was with God”—
এর অর্থ কি ? পাদ্রী মহোদয় সহজ
সরলভাবে আমাকেই এর রহস্য বোঝানোর জন্য বললেন। আমি বললাম— “বৈদিক দর্শন এই রহস্যকে উদ্ঘাটিত করতে পারে
। বেদের সিদ্ধান্তে ঈশ্বর হলেন নিত্য। তাঁর গুণ-কর্ম স্বভাবও নিত্য। বেদ
হল নিত্য ঈশ্বরের নিত্য জ্ঞান। ঈশ্বরের কাছ থেকে তাঁর জ্ঞানকে পৃথক করা যেতে
পারে না । গুণ থাকবে গুণীর মধ্যে এই সত্যকে সমগ্র সংসার মানে ।
এই সত্যকে নাস্তিকও মানে, আস্তিকও মানে ।
পাদ্রী মহোদয় এই উত্তর শুনে বড়ই প্রসন্ন হয়েছিলেন ।
আমি
পুনরায় জিজ্ঞাস করলাম— “And the word was God”
—
এর অভিপ্রায় কি ? পাদ্রীজী আমাকেই
রহস্য বোঝানোর জন্য আগ্রহ করলেন । আমি বললাম যে বৈদিক দর্শন এই গূঢ় কথাটিকে
অতি সরলে বুঝিয়ে দেয়। আর্য ধর্মে পরমেশ্বরকে জ্ঞান স্বরূপ বলা হয়েছে ।
এই বিচারযুক্ত অনেক মন্ত্র বেদে পাওয়া যায়। উপনিষদেও বারবার পরমেশ্বরকে
জ্ঞান-স্বরূপ বলা হয়েছে । বাইবেলের কথাটি ঈশ্বরীয় জ্ঞানকে ইশারা করছে । এখানে স্পষ্টরূপে বলা হয়েছে যে ঈশ্বর সৃষ্টির আরম্ভে তাঁর অনাদি জ্ঞান বেদের
প্রকাশ করেছেন। বৈদিক ধর্ম থেকে বিমুখ হওয়ার ফলে, গুরু
-শিষ্য পরম্পরা সমাপ্ত হওয়ার জন্য বাইবেলের লেখক Word
-র অর্থকে বুঝতে পারেনি ; পরিণামে বাইবেলের এই
শব্দটি রহস্যময় হয়ে দাঁড়িয়েছে । যদি Word -র অর্থ
শব্দ ই হয় তাহলে খ্রীষ্টানরা বলুক যে “শুরুতে
শব্দ ছিল” —এঁর অর্থ কি ?
সেই শব্দ কোথায় গেল ? কোথায়
কেন হারিয়ে গেল ? সেই শব্দ ঈশ্বরের সাথে ছিল - এঁর
অর্থ তাহলে কি হবে ? সেই শব্দ নিরর্থক ছিল কি সার্থক ?
সেই শব্দ কা’র ছিল ?
কার জন্য ছিল? এবং কেন বলা হয়েছে ?”
নিষ্পক্ষ
বিদ্বানেরা অবশ্যই সেটাকে মানতে বাধ্য হবেন যেটি আমরা বলেছি । কেবলমাত্র
বেদ-ই সৃষ্টির আদিতে আবির্ভাবের ঘোষণা করে এবং অন্য কোন গ্রন্থকেই আদিতে আসার কথা
বলে না । যুক্তি এবং প্রমাণ বেদের পক্ষেই রয়েছে । পাদ্রী মহোদয় সহর্ষ
আমাদের পক্ষকে স্বীকার করলেন —
অনাদি বেদের
সম্বন্ধে ডা. গোকুলচন্দ্র নারঙ্গ লিখেছেন—
The Vedas
have stood like light houses of truth and wisdom though the stress and the
storms of ages and have commanded the well deserved allegiance and reverence of
hosts of the wisest and holiest of men and women. All glory to those who,
without any desire or hope of material gaindedicated their whole lives to
the study and preservation of every syllable of those monumental works in their
pristine purity” (Glorius Hinduism)— অর্থাৎ
যুগযুগের ঝঞ্ঝাবাতের মধ্যেও বেদ সত্য এবং জ্ঞানের জ্যোতি -স্তম্ভ হয়ে দাঁড়িয়ে
রয়েছে। অনেক গুণীজনের, মুনিজনের অত্যন্ত
পবিত্রাত্মা স্ত্রী -পুরুষের শ্রদ্ধা বেদের উপর প্রতিষ্ঠিত রয়েছে । যাঁরা
বেদের পঠন -পাঠন এবং তাঁর এক এক অক্ষর বা এক এক মাত্রার রক্ষা এবং তাঁর পবিত্রতা
-শুদ্ধতা কায়েম রাখার জন্য জীবন সমর্পিত করেছেন, তাঁদের
যতবেশী গুণকীর্তন করা হোক্ না কেন তা একটুখানিই হবে ।সেই সব তপস্বীরা বেদের
মধ্যে না তো মিশ্রণ হতে দিয়েছেন,না অপসারণ হতে
দিয়েছেন।
*তৃতীয় অধ্যায় সমাপ্ত