উন্নত মানব সভ্যতার প্রারম্ভে আপ্তকাম মহর্ষিগন কর্তৃক ধ্যানলব্ধ হৃদয়ে প্রাপ্ত মহাবিশ্বের
সংবিধান,একটি পরিপূর্ন জীবনবিধি হল পবিত্র বেদ।মানুষ
যাতে জগতে চলার পথে তাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনাসমূহ লাভ করতে পারে তার নিমিত্তেই
ঈশ্বর এই চিরসঞ্জিব জ্ঞান আমাদের প্রদান করেছিলেন।আর সেই পবিত্র বেদ অনুসারে
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আমাদের আচরন ও কার্যবিধি কেমন হওয়া উচিত তা নিয়ে সনাতন
মানব ধর্মালম্বী ভাই ও বোনদের জন্য সংক্ষিপ্তভাবে উপস্থাপন করছি বৈদিক জীবনাচরন।
১.
বৈদিক ধর্মালম্বীর প্রথম ও প্রধান লক্ষ্য থাকা উচিত তার চারিত্রিক উন্নয়ন।
বৈদিক ধর্মালম্বীর প্রথম ও প্রধান লক্ষ্য থাকা উচিত তার চারিত্রিক উন্নয়ন।
ওঁ বিশ্বানি দেব সবিতুর্দুরিতানি পরাসুব।
যদভদ্রম তন্ন আসুব।।
যজুর্বেদ ৩০.৩
অনুবাদ- হে পরমেশ্বর,আমি যাতে আমার খারাপ গুনসমূহ বর্জন করতে পারি এবং সত্গুনসমূহকে আয়ত্ত্ব করে
নিজ চরিত্রের উন্নতি ঘটাতে পারি।
২.
মাহিরভূর্মা পৃদাকুর্নমস্ত আতানানর্বা প্রেহি
মাহিরভূর্মা পৃদাকুর্নমস্ত আতানানর্বা প্রেহি
(যজুর্বেদ ৬.১২)
অর্থাৎ হে মনুষ্য,হিংস্র বা উগ্র হয়োনা।নমনীয় ও সত্যনিষ্ঠ হও।
৩.
অনুব্রত পিতুঃ পুত্রো মাত্রা ভবতু সংমনা
অনুব্রত পিতুঃ পুত্রো মাত্রা ভবতু সংমনা
(অথর্ববেদ
৩.৩০.২)
সন্তান যেন পিতার অনুগামী হয়,মাতার বিশ্বস্ত হয়
৪.
ম ভ্রাতা ভ্রাতারম দীক্ষন্মা স্মসারমুত স্বসা
ম ভ্রাতা ভ্রাতারম দীক্ষন্মা স্মসারমুত স্বসা
(অথর্ববেদ ৩.৩০.৬)
অর্থাৎ আমরা সকলে ভাই-ভাই,এক ভাই যেন কখনো অন্য ভাইয়ের ক্ষতি করার চেষ্টা না করি।
৫.
গরীব-দুঃখী ও বিপদগ্রস্তদের সামর্থ্য অনুযায়ী দান করা বৈদিক ধর্মালম্বীর কর্তব্য।
গরীব-দুঃখী ও বিপদগ্রস্তদের সামর্থ্য অনুযায়ী দান করা বৈদিক ধর্মালম্বীর কর্তব্য।
শত হস্ত সংহারা,সহস্র হস্ত সংকীরথ।
(অথর্ববেদ ৩.২৪.৫)
অনুবাদ-আয় করতে হাতটিকে শতটিতে
বৃদ্ধি কর আর দান করতে তাকে হাজারে রুপান্তরিত কর।
প্রীয়াদিন নাধমানায় তব্যান
দ্রাঘিয়াসমনুপসী ইত পন্থাম।
ও হি বর্তন্তে রথ্যেব
চক্রান্যমন্যমুপ তিশান্ত রায়ঃ।।
(ঋগ্বেদ ১০.১১৭.৫)
"সামর্থবানদের উচিত গরীবদের দান করা।তাদের
দুরদৃষ্টিসম্পন্ন হওয়া উচিত,মনে রাখা উচিত অর্থসম্পত্তি চিরস্থায়ী নয়।আজ
যে ধনী সে ধন কাল তার নাও থাকতে পারে!
৫.
পানিদূষন,বায়ুদূষন,মাটি দূষন করবেননা-
পানিদূষন,বায়ুদূষন,মাটি দূষন করবেননা-
মাপোমৌস্রাদ্ধিহিন্স্রী বরুন ন মুঞ্চ
(যজুর্বেদ৬.২২)
(যজুর্বেদ৬.২২)
অর্থাৎ জলদূষণ করোনা,বনাঞ্চল ধংস করোনা।
আপো হবিষ্মন আবিবাসতি অধ্বরো হবিষ্মাম।
(যজুর্বেদ ৬.২৩)
(যজুর্বেদ ৬.২৩)
"বায়ুতে আমরা স্বাচ্ছন্দ্যে
বেঁচে থাকি,একে দূষিত
করোনা।"
করোনা।"
পৃথ্বীম মা হিন্সিম
(যজুর্বেদ ১৩.১৮)
অর্থাৎ মাটির দূষন করোনা।
৬ .
মা গৃধ কস্য স্বিদ্ধনম
মা গৃধ কস্য স্বিদ্ধনম
(যজুর্বেদ ৪০.১)
অর্থাৎ লোভাতুর হয়োনা,পরের ধনে লোভ করোনা।
৭.
যেকোন ধরনের অশ্লীলতা বৈদিক ধর্মালম্বীদের জন্য বর্জনীয়-
যেকোন ধরনের অশ্লীলতা বৈদিক ধর্মালম্বীদের জন্য বর্জনীয়-
"হে নারী ও পুরুষ,তোমরা ভদ্র ও সংযত হও।পোশাক-পরিচ্ছেদ ও আচরনে অসংযত হওয়া বর্জন কর।"
(ঋগ্বেদ ৮.৩৩.১৯)
৮.
অশ্লীল কথা না বলা,শোনা বা দেখা নিয়ে পবিত্র বেদ এর উপদেশ
অশ্লীল কথা না বলা,শোনা বা দেখা নিয়ে পবিত্র বেদ এর উপদেশ
ওঁ ভদ্রং কর্ণেভি শৃনুয়াম
দেবা ভদ্রংপশ্যেমাক্ষ ভির্যজত্রা।
স্থিরৈরঙ্গৈস্তস্টুবাঁ সস্তনুভির্ব্যশে ম
দেবহিতং যদায়ুঃ।। (যজুর্বেদ ২৫/১১)
দেবাঃ-ঈশ্বর, যজত্রা- আরাধনা করি,কর্ণেভি-কান দিয়ে,ভদ্রম- ভদ্র বা শ্লীল কথাবার্তা, শৃনুয়াম- শুনি,অক্ষভি- চোখ দিয়ে যেন,ভদ্রম- শ্লীল ,ভদ্র এবং মঙ্গলময় দৃশ্য, পশ্যেম- দেখি,স্থিরৈ-সুদৃঢ় (সত্কর্মসম্পাদনে), অঙ্গৈ-অঙ্গ, তনুভি-শরীর দ্বারা,তষ্টুবাংস-ঈশ্বরের স্তুতি করতে,যত্-যে, আয়ু-আয়ু, দেবহিতম- আরাধ্যসেবায় লাগে, সস্তনুভির্ব্যবেশম- তাই যেন প্রাপ্ত হই।
অর্থাৎ হে ঈশ্বর,আমরা যেন তোমার যজন করি,কান দিয়ে শ্লীল ও মঙ্গলময় কথাবার্তা শুনি,চোখ দিয়ে শ্লীল ও মঙ্গলময় দৃশ্য দেখি।তোমার আরাধনাতে যে আয়ুস্কাল ও সুদৃড়
দেহ প্রয়োজন তা যেন আমরা প্রাপ্ত হই।
পবিত্র অথর্ববেদ
বলছে-
জিহ্বায়া অগ্রে মধু মে জিহ্বামূলে মধুলকম
(অথর্ববেদ ১.৩৪.২)
অর্থাৎ আমাদের জিভের
শব্দে যেন মধু লেগে থাকে,কথার ধরন যেন মধুময়
হয়।তাই বুঝতেই পারছেন সদ্ব্যবহার এর উপরে বেদ কতটা গুরুত্ব দিচ্ছে।
৯.
দেবানাম সখ্যমুপ্সেদীনাম ব্যায়াম
দেবানাম সখ্যমুপ্সেদীনাম ব্যায়াম
(ঋগ্বেদ ১.৮৯.২)
অর্থাৎ বিদ্বান ও সচ্চরিত্র লোকেদের সাথে বন্ধুত্ব কর,দুশ্চরিত্রদের বর্জন কর।
১০.
য্যায়াস্বন্তঃ চিত্তিনঃ
(অথর্ববেদ ৩.৩০.৫)
১০.
য্যায়াস্বন্তঃ চিত্তিনঃ
(অথর্ববেদ ৩.৩০.৫)
অর্থাৎ
বয়োজ্যেষ্ঠদের প্রতি সম্মানপুর্বক আচরন কর।
১১.
অয়ম মে হস্ত ভগবানস্যম মে ভগবত্তরঃ
(ঋগবেদ ১০.৬০.১২)
অয়ম মে হস্ত ভগবানস্যম মে ভগবত্তরঃ
(ঋগবেদ ১০.৬০.১২)
"হাত দুটো দিয়ে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজের ভাগ্যকে নিজে গড়ে তোল।"
১২.
যদদীব্যন্ন ঋণম কৃণম্যদাসন্নগ্র উত সংগৃণামি...
উদ্দিন্যতি সুকৃতস্য লোকম
(অথর্ববেদ ৬.১১৯.১)
অর্থাৎ তোমরা যেন ঋণ নিয়ে ঋণ পরিশোধ না করার মত কুচিন্তায় না পড়।তোমাদের যেন সেই অধম চিন্তালোক থেকে উন্নতি হয়।
বেদ আরও বলছে-
অনৃণ অস্মিন্যঋণ পরস্মিনতৃত্যে লোকে
অর্থাৎ আমরা যেন এই লোকে ও ওই লোকে ঋণ থেকে মুক্ত থাকি।
১৩.
যজ্জাগ্রতো দুরমুদৈতি দৈবম তদু সুপ্তস্য
(যজুর্বেদ ৩৪.১)
যজ্জাগ্রতো দুরমুদৈতি দৈবম তদু সুপ্তস্য
(যজুর্বেদ ৩৪.১)
"সর্বভূতের কল্যানের জন্য শুভকামনা ও কর্মে নিজের মনকে জাগ্রত কর।"
১৪.
অন্যো অন্যস্ময় বল্গু বদন্তঃ
অন্যো অন্যস্ময় বল্গু বদন্তঃ
(অথর্ববেদ ৩.৩০.৫)
অর্থাৎ সদা সত্যাশ্রয়ী ও সত্যবাদী হবে।
সত্যবাদ্ধতি ত্বম সূর্যন্তু
(অথর্ববেদ ৪.১৬.৬)
অর্থাৎ সত্যবাদীকে সূর্যের ন্যায়
বলা হয়েছে।
১৫.
একজন বৈদিক ধর্মালম্বী সর্বভূতে সমদর্শী হবে।তার জন্যে কেউ ছোট নয়,কেউ বড় নয়।সকলেই এক অমৃতের সন্তান!
একজন বৈদিক ধর্মালম্বী সর্বভূতে সমদর্শী হবে।তার জন্যে কেউ ছোট নয়,কেউ বড় নয়।সকলেই এক অমৃতের সন্তান!
অজ্যেষ্ঠাসো অকনিষ্ঠাস
এতে সং ভ্রাতারো তাবৃধুঃ
সৌভগায়
যুবা পিতা স্বপা রুদ্র
এযাং সুদুঘা পুশ্নিঃ সুদিনা
মরুদ্ভঃ ॥
(ঋগবেদ ৫.৬০.৫)
বঙ্গানুবাদ : কর্ম ও গুনভেদে কেউ ব্রাহ্মন,কেউ ক্ষত্রিয়,কেউ বৈশ্য,কেউ শুদ্র।তাদের মধ্যে কেহ বড় নয় কেহ ছোট নয়।
ইহারা ভাই ভাই । সৌভাগ্য লাভের জন্য ইহারা
প্রযত্ন করে ।ইহাদের পিতা তরুন শুভকর্ম ঈশ্বর এবং জননীরুপ প্রকৃতি। পুরুষার্থী
সন্তানই সৌভাগ্য প্রাপ্ত হন।
১৬.
সাত টি কাজ একজন বৈদিক ধর্মালম্বীর জন্যে মহাপাপ-
সাত টি কাজ একজন বৈদিক ধর্মালম্বীর জন্যে মহাপাপ-
বৈসপ্ত মর্যাদাঃ
কবয়স্তস্তক্ষুস্তাসামেকামিদভ্যয়হুরো ঘাত।।
ঋগবেদ ১০.৫.৬
"সপ্ত হল নিষেধসমূহ যা নির্দেশিত হয়েছে,জ্ঞানীগন যাকে সবসময় এড়িয়ে চলেন,যেগুলো মানুষকে সর্বদাই
বিপথগামী করে।"
কি সেই সপ্ত মহাপরাধসমূহ ? মহর্ষি যস্ক তাঁর নিরুক্ত সংহিতায় বর্ননা করেছেন,
"চুরি,অশ্লীলতা ও ব্যভিচার,হত্যা,ভ্রুননিধন,অগ্নিসংযোগ,নেশা/ মদ্যপান,অসততা।
১৭.
বৈদিক ধর্ম মানবতার ধর্ম। এখানে কোন ধরনের অস্পৃশ্যতা প্রথার কোন সুজগ নেই-
বৈদিক ধর্ম মানবতার ধর্ম। এখানে কোন ধরনের অস্পৃশ্যতা প্রথার কোন সুজগ নেই-
অথর্ববেদ ৩.৩০.৬
সমানী প্রপা সহ বোরন্নভাগঃ
সমানে যোক্তো সহ বো যুনজমি।
সমঞ্চোহগ্নিং যপর্যতারা
নাভি মিবাভিতঃ।।
বঃ-তোমাদের,পপা-পান,সমানী- একসঙ্গে একপাত্রে হউক,বঃ অন্নভাগাঃ- তোমাদের আহারও একসাথে হউক,বঃ- তোমাদিঘে,সহ- সঙ্গে,সমানে যোক্ত্রে-এক বন্ধনে,যুনজমি-যুক্ত করেছি,সম্যন্চঃ-সবাই মিলে,অগ্নিং সপর্যত- একসাথে উপাসনা কর(যজ্ঞাদি,ধ্যন),ইব- যেমন,অরাং নাভিং অভিত-যেমন করে রথচক্রের চারপাশে অর থাকে।
অর্থাৎ হে মনুষ্যগন তোমাদের ভোজন ও আহার হোক একসাথে,একপাত্রে, তোমাদের সকলকে এক পবিত্র বন্ধনে যুক্ত করেছি,তোমরা সকলে এক হয়ে পরমাত্মার উপাসনা(যজ্ঞাদি,ধ্যন) কর ঠিক যেমন করে রথচক্রের চারদিকে অর থাকে!
বৈদিক জীবনবিধি মেনে চলুন,একটি মহৎ পৃথিবী গড়ে তুলুন।
ওঁ শান্তি শান্তি শান্তি
জয় সনাতন
ReplyDeleteওঁ শান্তিঃ