দৈনিক বেদবাণী


এই সমগ্র সংসার নিরোগ এবং শুভচিন্তা যুক্ত হোক । যজুর্বেদ ১৬.৪                    সূর্য-এর আলোয় স্বয়ং আলোহীন চাঁদ আলোকিত হয় । ঋগ্বেদ ৫.৪০.৫                    প্রশংসনীয় সংস্কৃতি, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও মাতৃভূমি— এই ত্রয়ী সুখ-সমৃদ্ধি প্রদান করে। ঋগ্বেদ ১.১৩.৯                    উত্তম জীবন লাভের জন্য আমাদের জ্ঞানীদের সাহচর্যে চলা উচিৎ। ঋগ্বেদ ১.১২.১৬                    যে ব্যক্তি সম্পদ বা সুখ বা জ্ঞান নিঃস্বার্থভাবে দান করে, সে-ই প্রকৃত মিত্র। ঋগ্বেদ ২.৩০.৭                    মানুষ কর্ম দ্বারাই জগতে মহত্ত্ব ও প্রসিদ্ধি লাভ করে। ঋগ্বেদ ৩.৩৬.১                    হে পতি! তোমার স্ত্রীই গৃহ, স্ত্রীই সন্তানের আশ্রয়। ঋগ্বেদ ৩.৫৩.৪                    পরমাত্মার নিয়ম বিনষ্ট হয় না; তা অটুট, অচল ও অপরিবর্তনীয়। ঋগ্বেদ ৩.৫৪.১৮                    এই ধর্মের মার্গই সনাতন, এই পথে চলেই মানবগণ উন্নতি লাভ করে। ঋগ্বেদ ৪.১৮.১                    পরমাত্মার নিকট কোনো মানুষই বড় বা ছোট নয়। সকল মানুষই সমান এবং পরস্পরের ভ্রাতৃস্বরূপ। ঋগ্বেদ ৫.৬০.৫                    যে ব্যক্তি অকারণে অন্যের নিন্দা করে, সে নিজেও নিন্দার পাত্র হয়। ঋগ্বেদ ৫.২.৬                    নিশ্চিতরূপে এই চতুর্বেদ কল্যাণপ্রদায়িনী এবং মানবকে জ্ঞান প্রদান করে ধারণকারিণী। ঋগ্বেদ ৫.৪৭.৪                    বীর মানবের জন্য পর্বতও সুগম হয়ে যায়। ঋগ্বেদ ৬.২৪.৮                    আমরা অন্যের সঞ্চিত পাপের কর্মফল ভোগ করি না। ঋগ্বেদ ৬.৫১.৭                    হে মিত্রগণ! ওঠো— উদ্যমী হও, সাবধান হও এবং এই সংসাররূপী নদীকে অতিক্রম করো। ঋগ্বেদ ১০.৫৩.৮







দেবলোকের যৌনজীবনঃ অতুল সুর দ্বারা বেদাদি শাস্ত্র বিকৃতকরণের জবাব

অমৃতস্য পুত্রা
0




পণ্ডিত অতুল সুর একটি বই লিখেছিলেন । নাম "দেবলোকের যৌন জীবন " । বইটির বিষয়বস্তু ও নামকরণ লক্ষ্যণীয় । লেফটিস্ট ও মুসলিম তোষণকর্তাদের একজন এবং আরবীয় পেট্রোডলারের সদ্ব্যবহারের প্রকৃষ্ট নমুনা । শত বলে কয়েও এদের দিয়ে অন্য মতবাদের বিরুদ্ধে কিছু বলাতে পারবেন না । সস্তা সেকুলারবাদ এবং  ভোটব্যাংক যে তবে মাঠে মারা যাবে । সে যাই হোক,  তিনি দেহ রেখেছেন বহু বছর । কিন্তু তাঁর এই কর্ম (নাকি দুষ্কর্ম ? পাঠকের ইচ্ছা ) বঙ্গীয় অনলাইন ছাগু কাঠমোল্লাদের টনিক হিসেবে বেশ কাজের । সেই টনিককে গরল না বানাতে পারলে অগ্নিবীরের "সত্য প্রকাশে নির্ভীক সৈনিক " পরিচয়ের কি দাম রইল  ! চলুন পড়ে দেখি তাঁর মস্তিষ্ক কি মহান তথ্য প্রসব করেছে এই বই রচনার ক্ষেত্রে -


শঙ্কা ১ : অথর্ববেদে (৮/৬/৭ ) পিতা-পুত্রী ও ভ্রাতা-ভগিনীর মধ্যে যৌনমিলনের উল্লেখ আছে। নহুষ তার ‘পিতৃকন্যা’ বিরজাকে বিবাহ করেছিল ও তার গর্ভে ছয়টি সন্তান উৎপাদন করেছিল।



জবাব : ডাহা মিথ্যা কথা । ঐ মন্ত্রে এমন কিছুই নেই ।

হে বরবর্ণিনী! যে পুরুষ তোমার ভাই অথবা পিতার রূপে এসে নিদ্রার সময় নিচ ভাব দ্বারা তোমার নিকটে আসে, সেই সমস্ত দুষ্টভাব পূর্ণ নপুংসক এবং উন্মার্গামী/ বক্রপথ গামী/ কুপথগামী পুরুষ কে স্বয়ংবৃত উত্তম তেজস্বী পুরুষ পরাজিত করবে এবং কণ্যাকে সুখের সহিত বিবাহ করবে।
অথর্ববেদে ৮.৬.৭ 

শঙ্কা ২ : 2.পুরুরবা ও উর্বশীর মিলনের সবচেয়ে প্রাচীনতম উল্লেখ পাওয়া যায় ঋগ্বেদের সংবাদসুক্তে ( ১০।১৫ ) । সেখানে যে আখ্যান আছে, সে আখ্যান অনুযায়ী উর্বশী চার বছর পুরুরবার সঙ্গে ছিলেন, এবং গর্ভবতী হবার পর তিনি অন্তর্হিতা হন। ঋগ্বেদের সংবাদসুক্তে (১০|১৫) উল্লিখিত এক অস্পষ্ট আভাষ থেকে আমরা জানতে পারি যে পূর্বজন্মে উৰ্বশী ছিল ঊষা ও পুরুরবা সূৰ্য ।



জবাব : সম্পূর্ণ সূক্তটি পড়ুন এটি একটি রূপক কাহিনী মাত্র

হযে জাযে মনসা তিষ্ঠ ঘোরে বচাংসি মিশ্রা কৃণবাবহৈ নু ৷
ন নৌ মন্ত্রা অনুদিতাস এতে মযস্করন্পরতরে চনাহন্ ॥ ১

পদার্থঃ (হযে) হে (ঘোরে) ঘোর (জাযে) জাযমান বিদ্যুৎ ! (মনসা) মনের ন্যায় বেগে যুক্ত থাকা তুমি (তিষ্ঠ) দাড়াও,
(ব চাংসি) পরষ্পর একে অপরকে কথাবার্তা অথবা মাধ্যমিক স্থানীয় শব্দকে
(মিশ্রা) আদান প্রদানের মাধ্যমে মিশ্রিত অর্থাৎ উক্তি প্রত্যুক্তির মাধ্যমে মিশ্রিত (কৃণবাব হৈ নু) করো, এরকম না করলে (নো) আমাদের বিষয়ের (মন্ত্রাঃ) রহস্য (অনুদিতাসঃ) চুপচাপ রয়ে যাবে আর (এতে) এমন অবস্থাতে (পরতরে) অন্যটি (পহন বন) দিনে (মযঃ) সুখ (ম) না (করন) করতে পার ।

ভাবার্থঃ এই মেঘে উৎপন্ন হওয়া ঘোর বিদ্যুৎ যা মনের সমান বেগে যুক্ত সেটি স্থির হবে ৷ মেঘ আর বিদ্যুৎ এর যে গর্জন আর বাজ সেটি পরষ্পর সম্পর্কিত ৷ এমন না হলে মেঘ আর বিদ্যুৎ সম্পর্কিত রহস্য অনুদঘাটিত থেকে যাবে অতঃপর এই উক্তি প্রযুক্তি দ্বারা বোঝানো যাবে ৷




কিমেতা বাচা কৃণবা তবাহং প্রাকমিষমুষসামগ্রিযে­ব ৷
পুরূরবঃ পুনরস্তং পরেহি দুরাপনা বাতইবাহমস্মি ॥ ২

পদার্থঃ ঊর্বশীর উত্তর-(এতা) এই (বাচা) বাণি অর্থাৎ কথোপকথনে (কিম) কি (কৃণ) আমরা দুইজন করব কারনা এখন বিদ্যুৎ এর ঝলকানির পরে সেটি তৎক্ষনাৎ সমাপ্ত হয়ে যায় আর সমাপ্ত হওয়ার পর পুনরায় মেঘের সাথে সম্পর্ক হয় না ৷ অতএব আমরা দুইজন মিলতে তো পারব না, (তব) তোমার কাছ থেকে (অহম) আমি (উষসাম) ঊষার পূর্বে হওয়া (অগ্রিমা) পূর্ববর্তী ঊষার (ইব) সমান (প্রাকমিষম্) অতিক্রান্ত হয়ে, অতঃ (পুরূরবঃ) হে পুরূরব= মেঘ তুমি (অস্তম্) আপনার ঘর বা স্থান কে, (পুনঃ) পুনরায় (পরা ইহি) যেটি (অহম) আমি (বাতঃ) বায়ুর (ইব) সমাম (দুরাপনা) ধরা যায় না এমন (অস্মি) হই ।

ভাবার্থঃ পরস্পরের বাণীকে মিলানোতে দুইজনের কি হতে পারে ৷ বিদ্যুৎ তো ঝলকানোর পরে সমাপ্ত হয়ে যায় ৷ সেই সমাপ্ত হওয়া বিদ্যুৎ পুনঃপ্রাপ্তি হতে পারে না ৷ যেভাবে বিগত ঊষাকালের পূর্ববর্তী ঊষা পুনরায় বর্তমান ঊষাকালের সাথে মিলতে পারে না তেমনি ঝলকানো বিদ্যুৎ পুনরায় মেঘের সাথে মিলতে পারে না ৷ এইটি বায়ুর বেগের ন্যায় ধরা যায় না ৷



ইষুর্ন শ্রিয ইষুধেরসনা গোষাঃ শতসা ন রংহিঃ ৷
অবীরে ক্রতৌ বি দবিদ্যুতত্তোরা মাযুং চিতযন্ত ধুনযঃ ॥৩

পদার্থ-পুরূরবার কথা-(শ্রীযে) শ্রী প্রাপ্তির জন্য (ইষুধেঃ) নিষঙ্গ= তুণীর থেকে (ইষুঃ) বাণ (অসনা) প্রক্ষেপনের জন্য (ন) না সমর্থ হয়ে থাকে, তেমনি (রহিঃ) অতি বেগবান (অহম) আমি মেঘ (শতসা) শত প্রকারের (গোষা) গর্জনকারী (ন) হয়ে নেই (অবীরে) বীর রহিত (ক্রতৌ) বর্ষা আদি কর্মে আমার সাম (ন) নেই (বিদবিদ্যুতৎ) ঝলকাচ্ছে (উরা) মহান অন্তরীক্ষে (ধুনযঃ) মেঘেরা (মাযুং) শব্দ (ন) না (চিতযন্ত) প্রকট করছে ৷

ভাবার্থঃ শ্রী প্রাপ্তির জন্য যেভাবে তীর নিক্ষেপ আবশ্যক তেমনই বিদ্যুতের মেঘ থেকে পতন বর্ষার জন্য আবশ্যক ৷ বিদ্যুতের অভাবে তার গর্জন ও বৃষ্টিকর্ম ইত্যাদি রুদ্ধ হয়ে যায় ৷ মেঘসমুহ আকাশে কোনো শব্দও করতে পারে না ৷




সা বসু দধতী শ্বশুরাযো বযো উষো যদি বষ্টযন্তিগৃহাত ৷
অস্তং ননক্ষে যস্মিঞ্চাকন্দিবা নক্তং শ্নথিতা বৈতসেন ॥ ৪

পদার্থঃ (উষঃ) হে উষস্ (সা) সেই ঊর্বশী (বসু) বাসক (বযঃ) অন্ন আদিকে (শ্বসুরায) সূর্যের জন্য (দধতী) ধারন করে (যদি) যদি (বষ্টি) মেঘরূপ পতিকে চান তাহলে (অন্তিগৃহাৎ) শ্বসুরের ঘর হতে
(অস্তম্) পতির কক্ষে (ননক্ষে) যাবে, (যস্মিন্) যেখানে (দিবা) দিন (নক্তম্) রাত (বৈতসেন) বেত থেকে (শ্নথিতা) তাড়িত হতে (চাক) চায় ।

ভাবার্থঃ হে উষস্ ! এই বিদ্যুৎ অন্নাদিকে বৃষ্টি দ্বারা উৎপন্ন করে সূর্যের জন্য ধারণ করে সূর্য মেঘের পিতা হওয়ায় তার (বিদ্যুতের) শ্বশুড় হয় ৷ যদি সে পতি অর্থাৎ মেঘেই নিহীত থেকে যায় তাহলে এসব কার্য হবে না ৷ যেভাবে পতির সম্ভোগ কামনায় স্ত্রী পতির কক্ষে যায় ৷ কিন্তু বিদ্যুৎ আর মেঘে এটি সম্ভব নয় ৷





ত্রি স্ম মাহ্নঃ শ্নথযো বৈতসেনোত স্ম মে ব্যত্যৈ পৃণাসি ৷
পুরূরবো নু তে কেতমাযং রাজা মে বীর তন্বস্তদাসীঃ ॥

পদার্থ - হে পুরূরবস্ ! তুমি (মাম) আমাকে (বৈতসেন) বেতের দন্ডে (প্রাতঃ) দিনে (ত্রিঃ) তিন বার (শ্নথযো) তাড়িত কর, (উত) আর (অব্যত্যৈ) আমার একমাত্র পত্নীকে (পৃণাসি স্ম) সকল প্রকারে পুরণ করেন, এ জন্যে (তে) তোমার (কেতম) ঘরে আমি বিদ্যুৎ (আযম) প্রাপ্ত হই অর্থাৎ বিদ্যুৎ মেঘে নিজের স্থান বানিয়ে রেখেছে (বীর) হে বীর তুমি (তত্) এ জন্যে (মে) আমার (তন্ব) বিদ্যুন্ময় গঠনের (রাজা) রাজা (আসী) হউ ।

ভাবার্থঃ হে মেঘ তুমি দিনে প্রাতঃ, দুপুর আর সন্ধ্যায় যখনই থাক আমাকে তাড়িত কর এবং আমাকে সবপ্রকারে পুরিতও কর ৷ এই কারনেই আমি বিদ্যুৎ এই মেঘে নিজের স্থান তৈরী করে থাকি ৷ হে বীর তুমি আমার বিদ্যুন্ময় গঠনের রাজা হও ৷





যা সুজূর্ণিঃ শ্রেণিঃ সুম্নআপির্হৃদেচক্ষুর­্ন গ্রন্থিনী চরণ্যুঃ ।
তা অঞ্জযো রূণযো ন সস্ত্রুঃ শ্রিযে গাবো ন ধেনবোনবন্ত

পদার্থঃ পুরূরবা বলেন -(যা) যেহা (সুজূর্ণিঃ) উত্তম বেগ যুক্ত বিদ্যুৎ (শ্রেণিঃ) শ্রেণী বিদ্যুৎ, (সুম্ন আপি) তেজাদি দান কারী বিদ্যুৎ, (হৃদে চক্ষু) জলে থাকা বিদ্যুৎ (ন) আর (গ্রন্থিনী) গ্রন্থিনী
(চরণ্যুঃ) চরণশীলা বিদ্যুৎ, (তা) এ ধরনের সকল বিদ্যুৎ (ঋজয) চপলা, (অরূণযঃ) তেজোময়ী (ধেনবঃ) নব প্রসুত (গাবঃ) গো সমূহকে (ন) সমান (শ্রিযে) আশ্রয়ের জন্য (ন) না (সস্ত্রুঃ) যায় অথবা শব্দ করে ৷

ভাবার্থ— সজূর্ণি, শ্রেণী, সুম্ন, আপি, হৃদেচক্ষু, গ্রথিনী আর চরণ্যু বিদ্যুৎগুলো চপলা আর তেজযুক্ত হয় ৷ এরা কোনো বিশেষ স্থানকে প্রাপ্ত করার জন্য যায় না আর শব্দ করে ৷ যেভাবে নব প্রসূত বাছুর কোথাও যায় না আর শব্দ করে ৷



সমস্মিঞ্জাযমান আসত গ্না উতেমবর্ধন্নদ্য স্বগূর্তাঃ ।
মহে যত্ত্বা পুরূরবো রণাযাবর্ধযন্দস্যুহত্­যায দেবাঃ ॥৭

পদার্থঃ উর্বশী বলেন (অস্মিন্) এই পুরূরবার (জাযমানে) উৎপন্ন হওয়ায় (গ্না) ছন্দ, বাণী, আর দেবগনের শক্তি অর্থাৎ দেবপত্নিগন (সম্) সাথে (আসত্) সংগত হয়, (উত) আর (ইম) ইহাকে (স্বগূর্তাঃ) স্বযং গতিশীল (নদ্যঃ) অন্তরীক্ষের জলবেগ (প্রবর্ধন) বাড়ান, (পুরূরবঃ) হে পুরুরবস = মেঘ (যত্) যে (ত্ব) তোমায় (দেবঃ) দিব্য শক্তিতে অথবা সূর্য কিরণে (মহে) মহান (দস্যুহত্যায) মেঘবধরূপী (গায) যুদ্ধের জন্য (অবর্ধযৎ) অগ্রগামী করেন ।

ভাবার্থ - এই মেঘের উৎপন্ন হওয়ার পর সাথে সাথে ছন্দ, মাধ্যমিকা বাক আর দৈবী শক্তিসমূহও এর সাথে সংগত হয় ৷ আর ইহাকে স্বয়ং গতিশীল অন্তরিক্ষস্থ জল ধারাতেও বৃদ্ধি করে । সূর্য কিরণ অথবা অন্যদেব তোমার মেঘকে বৃত্র যুদ্ধরূপী সংগ্রামের জন্য বর্ধিত করেন ৷



সচা যদাশু জহতীষ্বৎকমমানুষীষু মানুষো নিষেবে ৷
স্ম মত্তরসন্তী ন ভুজ্যুস্তা অত্রসন্রথস্পৃশো নাশ্বাঃ ॥

পদার্থঃ পুরূরবা বলেন- (যত্) যখন (সচা) সহায়ভুত পুরূরবা = মেঘ (অৎকম) নিজের রূপ কে (জহতীষুঃ) ছেড়ে (অমানুষীষু) দিব্য গুণযুক্ত (আসু) এই অপ্সরস্ = বিদ্যুৎকে (মানুষঃ) অগ্নির রেতস্ কে না দুষিত কারী "মাদুষ" মেঘ (নিষেবে) সেবন করে তবেই (তঃ) এই অপ্সরস্ = বিদ্যুৎ (মত্) আমার ঊর্বশীর কাছ থেকে (অপ অসন্) দূরে চলে যায় (ন) যেমন (তরসন্তী) মৃগকে কামনাকারী (ভুজ্যুঃ) মৃগী ব্যাধের ভয়ে পালিয়ে যায়, (ন) যেমন (রথস্পৃশ) রথে জোতা (অশ্বাঃ) ঘোড়া (অত্রসন্) দৌড়াতে থাকে ।

ভাবার্থঃ যখন সহায়ভুত পুরূরবা = মেঘ, নিজের রূপ ত্যাগকারী দিব্যগুনযুক্ত এই (অপ্সরাদেরকে) বিদ্যুৎকে (মানুষ= মাদুষ) অর্থাৎ অগ্নির বীজকে বজায় রাখা মেঘ সেবন করে তবেই এই অপ্সরাগন = বিদ্যুৎ আমার উর্বশীর কাছ থেকে দূরে চলে যায় যেভাবে ব্যাধের ভয়ে মৃগী পালিয়ে যায় আর রথে জোতা ঘোড়া দৌড়াতে থাকে ৷





যদাসু মর্তো অমৃতাসু নিস্পৃক্সং ক্ষোণীভিঃ ক্রতুভির্ন পৃঙ্ক্তে ।
তা আতযো ন তন্বঃ শুম্ভত স্বা অশ্বাসো ন ক্রীলযো দন্দশানাঃ ॥

পদার্থঃ (যৎ) যখন (আসু) এই (অমৃতাসু) অমর অপ্সরাগনে (মর্তঃ) মরণধর্মী পুরূরবা= মেঘ (নিস্পৃক্) স্পর্শ করে (ক্ষোণীভিঃ) বাণী দ্বারা (ন) আর (ক্রতুভি) কর্ম দ্বারা (পৃঙ্ক্তে) সম্পর্ক করে তো (তাঃ) এই (আতযঃ) পত্নীভূত হয়ে (স্বা) নিজের (তন্বঃ) শরীর সমূহকে (ন) না (শুম্ভত) প্রকাশিত করে যেভাবে (দন্দশানাঃ) নিজের লগামকে চাবিয়ে (ক্রীলযো) খুলতে থাকা (অশ্বাসঃ) ঘোড়া তার স্বরূপ রথীকে দেখতে দেয় না ৷

ভাবার্থ - যখন এই অমর অপ্সরাগনের সাথে মরণধর্মী মেঘ সম্পর্ক করে তো সে পত্নী হয়ে নিজের শরীরকে তার কাছে প্রকাশিত করে না, যেভাবে লাগামকে (দন্ত দ্বারা) কামড়াতে থাকা ও অত্যন্ত বেগে চলতে থাকা ঘোড়া নিজের রূপ দুই রথীকে দেখতে দেখতে দেয় না ৷



বিদ্যুন্ন যা পতন্তী দবিদ্যোদ্ভরন্তী মে অপ্যা কাম্যানি ৷
জনিষ্টো অপো নর্যঃ সুজাত প্রোর্বশী তিরত দীর্ঘমাযুঃ ॥ ১০

পদার্থঃ- (যা) যে (উর্বশী) ঋন আর ধনরূপে ব্যাপন কারী (বিদ্যুৎ) বিদ্যুৎ (ন) সম্প্রতি (পতন্তী) পদার্থের উপর পতিত হওয়া (মে) আমার মেঘকে (অপ্যা) জল সম্বন্ধী (কাম্যানি) আকাঙ্খার যোগ্য কামসমূহকে (ভরন্তী) সম্পাদিত করে (দবিদ্যোৎ) ঝলকায় (নর্যঃ) মনুষ্যের হিতকারক (সুজাত) উত্তম পুত্ররূপ (অপঃ) জলকে (জনিষ্টঃ) উৎপন্ন করেন (উর্বশী) বিদ্যুৎ জমে প্রাণবায়ু উৎপন্ন করে (দীর্ঘম্) দীর্ঘ (আযুঃ) আয়ু (প্রতিরত) প্রদান করে ৷

ভাবার্থঃ যে ঋন আর ধনের সাথে যুক্ত বিদ্যুৎ পদার্থের উপর পড়ে আমার মেঘের জল বর্ষন সম্বন্ধী কার্য সম্পাদন করে ঝলকায় ৷ মনুষ্যের উপকারী উত্তম জল উৎপন্ন করে এই উর্বশী বিদ্যুৎ জমে প্রাণবায়ুরূপে দীর্ঘ আয়ু প্রদান করে ৷



ঋগবেদ ১০/৯৫/১১
জজ্ঞিষ হত্থা গোপীথ্যায হি দধাথ তত্বুরূবো ম ওজঃ ৷
অশাসং ত্বা বিদুষী সস্মিন্নহন্ন ম আশৃণোঃ কিমভুগ্বদাসি ॥ ১১

পদার্থঃ (ইত্থা) এই ভাবে (গোপীথ্যাব হি) পৃথিবীর রক্ষার জন্য (জজ্ঞিষে) সমর্থ হয়, (পুরূরব) হে পুরূরবস্ (তৎ) সেই (ওজঃ) নিজের ওজ কে (মে) আমাতে (দধাথ) ধারন কর (সস্মিন্) সব (অহনি) দিনে (বিদুষী) তোমায় প্রাপ্তবতী (ত্বা) তোমাকে (অশাসং) কামনা করে, তুমি (মে) আমার (ন) নয় (আশৃণোঃ) শুনছো না (অমুক) না পালনকারী তুমি (কিম্) কি (বদাসি) বলতে পার ।

ভাবার্থঃ (হে মেঘ) এইভাবে পৃথিবীকে রক্ষা করার সমর্থ হও ৷ হে মেঘ সেই ওজঃ কে আমাতে ধারন কর ৷ সকল দিনে তোমাকে প্রাপ্ত হয়ে তোমাকে কামনা করি, তুমি আমার কথা শোনো না ৷ পালন না কারী তুমি কি বলতে পার ?




কদা সূনুঃ পিতরং জাত ইচ্ছাচক্রন্নাশ্রু বর্তযদ্বিজানন্ । 
কো দম্পতী সমনসা বি যুযোদধ যদগ্নিঃ শ্বশুরেষু দীদযৎ ॥ ১২ 
 পদার্থঃ পুরূরবা বলেন- (কদা) কখন (সূনুঃ) পুত্র (জাতঃ) তোমার উদর থেকে উৎপন্ন হওয়া (পিতরম্) পিতা কে (ইচ্ছাৎ) চাইবে, কখন (বিজানৎ) প্রাপ্ত হওয়া আমার পিতার (চক্রন্) ক্রন্দন করা (অশ্রু) অশ্রু (ন) না (বযৎ) বইবে, (কঃ) কোন পূত্র (সমনসা) সমান মনযুক্ত (দম্পতি) পতি পত্নী অর্থাৎ তোমার মা আর আমার পিতাকে (বি যূযোৎ) বিযুক্ত করবে, (অষ) এখন (যৎ) যে (অগ্নিঃ) অগ্নি সেটি তোমার (শ্বশুরেষু) শ্বশুরের মধ্যে (দীদযৎ) দীপ্ত হবে । 

 ভাবার্থঃ কখন পুত্র তোমার গর্ভে উৎপন্ন হয়ে পিতাকে খুঁজবে ? কখন প্রাপ্ত হওয়া আমার পিতার ক্রন্দনরত অশ্রুধারা বইবে না ? কোন পুত্র তার সমবয়স্ক মাতাপিতাকে বিযুক্ত করবে ? এই যে অগ্নি সেটি কখন তোমার শ্বশুর সূর্য আদি তে দীপ্ত হবে ৷



প্রতি ব্রবাণি বর্তযতে অশ্রু চক্রন্ন ক্রন্দদাধ্যে শিবাযৈ ৷ 
প্র তত্তে হিনবা যত্তে অস্মে পরেহ্যস্তং নহি মূর মাপ ॥ ১৩ 

পদার্থঃ হে পুরূরবস্ ! (ত্বাম্) তোমার (প্রতি) প্রতি (ব্রবাণি) আমি বলছি তোমার পুত্র (অশ্রু) অশ্রু (বর্তযতে) ঝড়ায় (আধ্যে) আকিঙ্খিত বস্তুতে (শিবাযৈ) কল্যাণ উপস্থিত থাকার পর (চক্রন্) ক্রন্দন করবে আর অশ্রু (ন) ও বইয়ে দেবে (যৎ) যে (তে) তোমার শিশু (অস্মে) আমাতে নিহীত আছে (তৎ) তাকে (তে) তোমার নিকট (অহিনব) পাঠিয়ে দেই (ত্বম্) তুমি (অস্তম্) নিজের ঘরে (পরেহি) যাও (মূরঃ) মূঢ় তুমি (মা) আমাকে (নহি) না (আপঃ) প্রাপ্ত করতে পার ৷ 

ভাবার্থঃ হে পুরূরবস্ ! তোমার প্রতি আমি বলছি ৷ তোমার পুত্র অশ্রু ঝড়ায় ৷ আকাঙ্খিত বস্তুতে কল্যাণ উপস্থিত থাকার পর সে ক্রন্দন করে ৷ তোমার যে অপত্য আমাতে নিহীত আছে তাকে আমি তোমার নিকট পাঠাব ৷ তুমি নিজের ঘরে যাও ৷ হে মূঢ় ! তুমি আমাকে পাবে না ৷





সুদেবো অদ্য প্রপতেদনাবৃৎপরাবতং পরমাং গন্তবা উ ৷ 
অধা শাযীত নিঋতেরুপস্থেধৈনং বৃকা রভসাসো অদ্যুঃ ॥ ১৪ 
পদার্থঃ (সুদেবঃ) তোমার সাথে খেলাকারী পতি পূরূরবা (অদ্য) এখনই (প্রপতেৎ) ভেঙ্গে পড়ে (অনাবৃত) অসুরক্ষিত থাকা সে (পরমাম্) পরম (দূরাবতম্ উ) দূর দেশে (গন্তব) গিয়ে চলে যাবে অথবা মহাযাত্রা= মৃত্যু প্রাপ্ত হয়ে যাবে, (অষ) অথবা (নিঋতে) পৃথিবীর (উপস্থে) কোলে (শাযীত) শায়িত হবে, (অথ) অথবা (এতম্) একে (রভসাসো) বেগযুক্ত (বৃকা) নেকড়ে (অদ্যুঃ) খেয়ে ফেলবে । 
 ভাবার্থঃ হে উর্বশী=বিদ্যুৎ তোমার সাথে খেলাকারী পুরূরবা = এই মেঘ এখনই পতিত হবে, দূর্বল হয়েছে, দূর দেশে যাওয়ার জন্য প্রয়ান করে অথবা মহাপ্রয়ান করবে অথবা পৃথিবীর কোলে শায়িত হবে, অথবা একে বেগযুক্ত নেকড়ে খেয়ে ফেলবে ৷
  




যদ্বিরূপাচরং মর্তেষ্ববসং রাত্রীঃ শরদশ্চতস্ত্রঃ ৷ 
ঘৃতস্য স্তোকং সকৃদহ্ন আশ্নাং তাদেবেদং তাতৃপাণা চরামি ॥ ১৬ 
পদার্থঃ (যদ্) যখন আমি দেবরূপের বিপরীত মরণধর্মা রূপে (মর্তেষু) মরণধর্মাদের মত (আচরং) ব্যবহার করি তো আমি আবার (রাত্রীঃ) রমনদাত্রী (চতস্ত্রঃ) চার (শরদঃ) শরদ্ ঋতু পর্যন্তই (অবসম্) থাকতে পারব (ঘৃতস্য) ঘৃত বা জলের (স্তোকং) অল্পমাত্রই (অহ্নন্) দিনে আমি (সকৃৎ) এক বারই (আশ্নাং) খাই আর (তাৎ এব) তাহাতেই (ইদম্) সম্প্রতি (তাতৃপাণা) তৃপ্ত হয়ে (চরামি) বিচরণ করি । 
 ভাবার্থঃ যখন আমি দেবরূপের বিপরীত মরণধর্মাদের মত আচরণ করি তাহলে চার শরৎ ঋতু পর্যন্ত থাকতে পারি ৷ আমি (বিদ্যুৎ) জল কে অল্পমাত্র খাই ৷ আর তাতেই তৃপ্ত হয়ে বিচরণ করি ৷ (মেঘ মরণধর্মা আর বিদ্যুৎ অমরণধর্মা)  







অন্তরিক্ষপ্রাং রজসো বিমানীমুপ শিক্ষাম্যুর্বশীং বসিষ্টঃ । 
উপ ত্বা রাতিঃ সুকৃতস্য তিষ্টান্নি বর্তস্ব হৃদযং তপ্যতে মে ॥ ১৭ 
পদার্থঃ (অন্তরিক্ষপ্রাং) অন্তরিক্ষকে নিজের তেজে পূর্ণ কারী (রজসঃ) জলের (বিমানীম) নির্মাত্রী (উর্বশীম্) বিদ্যুৎকে আমি (বসিষ্টঃ) জলরূপ মেঘ (উপশিক্ষামি) আমি বশ করি । (সুকৃতস্য) উত্তম কর্মকে (রাতিঃ) দাতা পুরূরবা=মেঘ (ত্বা) তোমায় (উপতিষ্ঠাৎ) প্রাপ্ত থাকে, (মে) আমার (হৃদযম) হৃদয় (তপ্যতে) তপ্তই থাকে (নিবর্তস্ব) নিবৃত্ত হউ । 

ভাবার্থঃ অন্তরিক্ষকে নিজের তেজে পূর্ণ কারী তথা জলের নির্মাত্রী বিদ্যুৎকে আমি বশিষ্ট (জলরূপ মেঘ)ই নিয়ন্ত্রন করতে পারি ৷ উত্তম কর্মের দাতা পুরূরবা= (মেঘ) তোমায় প্রাপ্ত থাকে, আমার হৃদয় সন্তপ্ত হচ্ছে, অতএব হে উর্বশী ! তুমি এখন চুপ থাকো ৷ 



ইতি ত্বা দেবা ইম আহুরৈল যথেমেতদ্ভবসি মৃত্যুবন্ধুঃ ৷ 
প্রজা তে দেবাহ্নবিষা যজাতি স্বর্গ উ ত্বমপি মাদযসে ॥ ১৮ 
পদার্থঃ হে (ঐল) পুরূরবস্ ! (ত্বা) তোমায় (ইমে দেবা) এই দেবগন (ইতি) এভাবে (আহুঃ) বলেন (মৃত্যুবন্ধুঃ) মৃত্যুর বন্ধক (যথা ইম এতৎ) যেভাবে হয় এটা এমন হবে (প্রজা) উৎপন্ন তুমি (তে) তোমার নিকট সন্মানযোগ্য (দেবান্) দেবগনকে (হবিষা) হবিতে (যজাতি) যজ্ঞ কর (ত্বম) তুমি (উ) নিশ্চয় (অপি) ও (স্বর্গ) স্বর্গে (মাদযাসে) সুখী হবে । 

ভাবার্থঃ হে ঐল পুরূরবস্ ! তোমায় এই দেবগন এমনটা বলে যে তুমি মৃত্যুর বন্ধক হবে ৷ উৎপন্ন তুমি তোমার নিকট সন্মানীয় দেবগনের জন্য যজ্ঞ কর ৷ তুমি স্বর্গে আনন্দ প্রাপ্ত হবে ৷






শঙ্কা ৩ : যে যাই হোক সংবাদসুক্তে আমরা দেখি যে পুরুরবা উর্বশীকে অনুনয় বিনয় করছে ফিরে আসবার জন্য । আর উর্বশী তা প্ৰত্যাখান করছে। উর্বশী বলছে–‘হে নির্বোধ ! ঘরে ফিরে যাও । আমাকে আর পাবে না–স্ত্রীলোকের প্রণয় স্থায়ী হয় না। স্ত্রীলোকের হৃদয়, আর বৃকের হৃদয় দুই এক প্রকার ।’
জবাবঃ বিকৃত ব্যাখ্যা ।

 ঋগবেদ ১০/৯৫/১৫
=>>হে পুরুরবা ! না মৃত্যু বরন কর, না (ভূমির) উপর পতিত হও, এবং না তোমাকে অকল্যানকারী নেকড়েরা ভক্ষন করুক ৷ অবশ্যই সেখানে স্ত্রীগনের সখ্যতা ও বন্ধুত্ব নেই, এটা তো জংলী নেকড়ের হৃদয়ের (ভাবনা) ৷

পুরূরবৌ= হে পুরুরবা ! মা= না, মৃথা= মৃত্যু বরন কর, মা= না, প্র= উপরে পপ্তো= পতিত হও, মা= না, ত্বা= তোমাকে, বৃকাসো= নেকড়েরা, অশিবাস= অকল্যানকারী, উ= এবং ক্ষন্= ভক্ষন ৷ ন= না, বৈ= অবশ্যই, স্ত্রৈণানি= স্ত্রীগনের, সখ্যানি= সখ্যতা ও বন্ধুত্ব, সন্তি= ওখানে (There are), সালাবৃকাণাং= জংলী নেকড়ের, হৃদযান্যেতা/হৃদযানি= হৃদয়ের, এতা= এটা তো ৷



শঙ্কা ৪ : ইন্দ্র একবার বৃষণশ্চ রাজার কন্যা মেনা অভিমুখী হয়েছিলেন । পরে মেনাকে প্ৰাপ্তযৌবন দেখে ইন্দ্ৰ স্বয়ং তার সাথে সহবাস অভিলাষ করেছিলেন । ( ঋগ্বেদ ১৷৫২৷১৩ সম্বন্ধে সায়ণ ভাষ্য দেখুন) ।

জবাব :   তেমন কিছুই তো নেই ।

১৩। তুমি বিস্তীর্ণ পৃথিবীর পরিমাণ স্বরূপ; তুমি দর্শনীয় দেবগণের বৃহৎ স্বর্গের পালনকারী; তুমি প্রকৃতই নিজ মহত্ত্ত দ্বারা সমস্ত অন্তরীক্ষ ব্যাপ্ত করে আছ; অতএব তোমার সদৃশ অন্য কেউ নেই।


শঙ্কা ৪ :অশ্বমেধের রান্না মাংস খাবার জন্য ঋষিদের রসনায় জল গড়াত । ঋগ্বেদের প্রথম মণ্ডলে (১।১৬২৷১১) বলা হয়েছে–‘‘হে অশ্ব ! অগ্নিতে পাক করবার সময় তোমার গা দিয়ে যে রস বেরোয় এবং যে অংশ শূলে আবদ্ধ থাকে, তা যেন মাটিতে না পড়ে ও ঘাসের সঙ্গে না মিশে যায় । দেবতারা লালায়িত হয়েছেন, তাঁদের দেওয়া হোক ।’ আবার বলা হয়েছে– ‘যে কাষ্ঠদণ্ড মাংস-পাক পরীক্ষার্থে ভাণ্ডে দেওয়া হয়, যে সকল পাত্রে ঝোল রক্ষিত হয়, যে সকল আচ্ছাদন দ্বারা উষ্ণতা রক্ষিত হয়…এরা সকলেই অশ্বের মাংস প্রস্তুত করছে ।’ ( ১।১৬২৷১৩ ) । ঋগ্বেদের এ সকল বর্ণনা থেকে বুঝতে পারা যায় যে, অশ্বের মাংস বেশ রসাল করে ঝোলসহ রান্না করা হত এবং তা ঝলসানোও হত, এবং সে মাংসের জন্য যে মাত্র দেবতাগণই লালায়িত হয়ে উঠতেন তা নয় ; জনসাধারণও সে মাংসের টুকরো পাবার জন্য চারদিকে ভীড় করে থাকত ও রান্নার সুঘ্রাণ গ্ৰহণ করত। কেননা বলা হয়েছে– ‘যারা চারদিক থেকে অশ্বের মাংস রান্না দেখেছে, যারা বলেছে যে গন্ধ মনোরম হয়েছে–এখন নামাও, যারা মাংস পাবার জন্য অপেক্ষা করছে, তাদের সঙ্গে আমাদের সঙ্কল্প এক হউক । ( ঋগ্বেদ ১।১৬২৷১২) । 


 জবাব :

 যে বাজিনং পরিপশ্যন্তি পক্বং য ঈমাহুঃ সুরভির্নির্হরেতি ৷
যে চার্বতো মাংসভক্ষামুপাসত উতো তেষামভিগূর্তির্ন ইবন্তু ॥
 
ঋগবেদ ১/১৬২/১২

পদার্থঃ (যে) যে ব্যাক্তি (বাজিনম্) যেখানে প্রচুর অন্নাদি পদার্থ বিদ্যমান সেই ভোজনকে (পক্বম্) সুন্দর করে রান্না করে হয়েছে (পরিপশ্যন্তি) সব দিক থেকে দেখেন বা (যে) যিনি (ইম্) জলকে উত্তপ্ত কর (আহু) বলেম (যে, চ) আর যিনি (অর্বতঃ) প্রাপ্ত হওয়া প্রাণীর (মাংসভিক্ষাম্) মাংসকে প্রাপ্ত না হওয়াকে (উতো) তর্ক-বিতর্কে (উপাসনে) সেবন করে (তেষাম্) তার (অধিগুর্তিঃ) উদ্যম আর (সুরভিঃ) সুগন্ধ (ন) আমরা (ইন্বত) ব্যাপ্ত বা প্রাপ্ত হই ৷ হে বিদ্বান! তুমি (ইতি) এই ভাবে অর্থাৎ মাংসাদি অভক্ষ্য ইত্যাদিকে ত্যাগ করে নিরন্তর দূর কর ৷

ভাবার্থঃ যে ব্যাক্তি অন্ন আর জলকে শুদ্ধ করেন, রান্না করেন, সেগুলো ভোজন করা জানেন আর মাংস ছেড়ে ভোজন করেন, তিনি উদ্যমী হন ৷





যন্নীক্ষণং মাংস্পচন্যা উখাযা যা পাত্রাণি যুষ্ণ আসেচনানি ৷
ঊষ্মণ্যাপিধানা বরুণামঙ্কাঃ সূনাঃ পরি ভূষন্ত্যশ্বম্ ॥
 
ঋগবেদ ১/১৬২/১৩

পদার্থঃ
(যত্) যিনি (মাংস্পচন্যাঃ) মাংসাহারী যেখানে মাংস রান্না করে, সেই (উখায়াঃ) রান্না ও সিদ্ধ করার পাত্রকে (নীক্ষনম্) নিরন্তর দেখভাল করে, সেটাকে ঘৃণা করে যিনি (যুষ্ণঃ) রস কে (আসেচনানি) ভালোভাবে সেচন করার আধার বা (পাত্রাণি) পাত্র বা (ঊষ্মণ্যা) উত্তপ্ত উত্তম পদার্থ (অপিধানা) পাত্রের মুখ ঢাকার ঢাকনী (চরুনাম) অন্ন ইত্যাদিকে রান্না করার পাত্র কড়াই ইত্যাদি বাসনকোসন (অঙ্কাঃ) লক্ষণকে ভালোভাবে জানে আর (অশ্বম্) ঘোড়া কে (পরিভূষন্তি) সুশোভিত করে, এই (সূনাঃ) প্রত্যেক কাজে প্রেরিত হয় ৷

ভাবার্থঃ যে মনুষ্য মাংসাদি রান্না হয়নি এমন বাসনকোসনকে ধরে, জল ইত্যাদিকে ওখানে রেখে আগুন জ্বালায় আর সেটিকে ঢাকনি দিয়ে ঢাকতে জানে, সে রান্নাবিদ্যায় কুশল হয় ৷ যে ঘোড়াকে সুন্দরভাবে শিখিয়ে একে সুশোভিত করে চালায়, সে সুখের পথে যায় ৷






  

শঙ্কা ৪ :রতিসম্ভোগের প্রয়োজনীয়তার প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় ঋগ্বেদের প্রথম মণ্ডলের ১৭৯ সুক্তে ! তবে কামশাস্ত্ৰ সম্বন্ধে অনুশীলনেরও উল্লেখ পাওয়া যায় বৃহদারণ্যক উপনিষদে (৬।২৷১২-১৩ ; ৬।৪।২-২৮ )। সেখানে খোলাখুলিভাবে বলা হয়েছে যে রমণের সময় যদি নারীর কামোদ্রেক করাতে চাও, তা হলে যোনির ওষ্ঠপৃষ্ঠ জিহবা দ্বারা লেহন করবে । (৬।৪।৯) ।

  
জবাব : এতি দাম্পত্য জীবনের এক্তি প্রতিচ্ছবি মাত্র

ঋগ্বেদ ১/১৭৯ 
 ঋষিকা লোপামুদ্রা (১-২) অগস্ত্য মিত্রাবরুনী, অগস্ত্য শিস্য ঋষি (৫-৬) 


১) বহু বছরের দিবা রাত্র ক্লান্তিহীন শ্রমে, প্রতিটি প্রত্যুষই কেড়ে নিচ্ছে দৈহিক সজীবতা। তবুও যেন সায়াহ্নের অবসন্নতা আমার প্রিয়কে দূরে না ঠেলে দেয়। 
 ২) প্রকৃতির সত্যনিষ্ঠ আমাদের পূর্বজগণ দেবতাসকাশেও জানতে পারেননি এর রহস্য; অতএব, পৌরুষদীপ্ত স্বামীগণ তাঁদের স্ত্রীদের সকাশে গমন করুন। 
৩) কোন জ্বালাতন/অবসাদই সংসারকে নিরর্থক করে দিতে পারেনা, কারণ তা ঈশ্বর দ্বারা আশীর্বাদপ্রাপ্ত এবং প্রকৃতি দ্বারা সুরক্ষিত। এস, একসাথে সংসারের সকল যুদ্ধে জয়ী হই। সন্তানাদি ও গ্রাহস্ত্য আমাদের শতযুদ্ধ জয়ের নিশ্চয় করুক। 
৪) বদ্ধ স্রোতস্বিনী নদীর অবাধ্য উচ্ছ্বাসের মত কামনাবেগ উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠে। লুকানো অদম্য আবেগে প্রণয়িনী অর্ধাঙ্গিনী ঘনশান্ত প্রশ্বাসে স্বামীকে বাহুডোরে আবদ্ধ করে। 
৫) কামনা ভাবাবেশকর এই গুহ্য সোমরস সম্পর্কে আমি অবহিত এবং হৃদয়নিগুঢ়ে আপ্লুত। এ যদি পাপকাজ হয়ে থাকে, তবে আমি ক্ষমাপ্রার্থী। মরণশীল মানুষ শেষপর্যন্ত বিবিধ কামনাবেগে বদ্ধ। 

৬) জীবনের গুঢ় রহস্যের সন্ধানে গিয়ে প্রখর বুদ্ধিমত্তায় ও দূরদৃষ্টিতে বলীয়ান  অগস্ত্য (যে ধর্ম পথ থেকে বিচ্যূত হয় না )শক্তি, সন্তানাদি ও প্রকৃত পরিবারের সন্ধান করে। সংসারে উভয়পক্ষেরই সুষম বর্ধনে তাঁর প্রচেষ্টার পুর্নতা প্রাপ্ত হয়।

এখানে  অগস্ত্য কোন মানুষের নাম নয় । ব্যাখ্যা পড়ুন নিম্নে -


 //তবে কামশাস্ত্ৰ সম্বন্ধে অনুশীলনেরও উল্লেখ পাওয়া যায় বৃহদারণ্যক উপনিষদে (৬।২৷১২-১৩ ; ৬।৪।২-২৮ )। // উপনিষদে তথাকথিত অশ্লীল বিষয়ের স্থান হল কেন? এ বিষয়ে আমাদের মন্তব্য এই সাধারণ  লােকের নিকটে বিবাহধর্ম ইন্দ্রিয়ভােগের ব্যাপার এবং হাস্য পরিহাসের বিষয়। ঋষি এখানে অন্য আদর্শ দেখিয়েছেন। আমরা বলি বিধাতার সৃষ্টিব্যাপার অতি গভীর ; ঋষির নিকটে মানবের উপ-সৃষ্টি ব্যাপারও তেমনি গম্ভীর। তিনি উপ-সৃষ্টিকে একটি যজ্ঞ রপে বর্ণনা করিয়াছেন (৬।৪।৩) ; ইহা যজ্ঞ , সুতরাং ইহার শুভক্ষণও আছে, মন্ত্রও আছে। উপনিষদের এই প্রকরণে এই উপসৃষ্টি-যজ্ঞই ব্যাখ্যাত হইয়াছে। ইহার মন্ত্রাদি বর্তমান আদর্শের(?) বিরােধী এবং এই যজ্ঞ বর্ণনাও সকলের পাঠ্য নহে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে ও শরীরবিজ্ঞানের সমুদয় তত্ত্ব সকলের নিকটে ব্যক্ত করা যায় না। উপসৃষ্টি-যজ্ঞও গত বিষয় অর্থাৎ উপনিষৎ ঋষিগণ সাধারণের নিকট ইহা ব্যক্ত করিতেন না, উপদেশ দিতেন উপযুক্ত শিষ্যকে।


// সেখানে খোলাখুলিভাবে বলা হয়েছে যে রমণের সময় যদি নারীর কামোদ্রেক করাতে চাও, তা হলে যোনির ওষ্ঠপৃষ্ঠ জিহবা দ্বারা লেহন করবে । (৬।৪।৯) ।  // ডাহা মিথ্যা কথা । 


স য়ামিচ্ছেত্ কাময়েত মেতি তস্যামর্থং নিষ্ঠায় মুখেন মুখ

সন্ধায়োপস্থমস্যা অভিমৃশ্য জপেদঙ্গাদঙ্গাত্সম্ভবসি

হৃদয়াদধিজায়সে । স ত্বমঙ্গকষায়োঽসি দিগ্ধবিদ্ধমিব

মাদয়েমামমূং ময়ীতি ॥ ৯॥ 
অন্বয়ঃ  সঃ যাম ইচ্ছেং কাময়েত মা (আমাকে) ইতি তস্যাম্ অর্থ নিষ্ঠায় (স্থাপন করিয়া) মুখেন মুখ সন্ধায় (সংযােগ করিয়া) উপস্থম্ অস্যাঃ অভিমৃশ্য জপেৎ—অঙ্গাৎ অঙ্গাৎ সম্ভবসি, হৃদয়াৎ অধিজায়সে, সঃ ত্বম্ অঙ্গকষায়ঃ (অঙ্গের রস) অসি দিদ্ধবিধ্বম্ ইব (বিষলিপ্ত শরবিদ্ধা মৃগীর ন্যায়) মাদয় (বশীভূত কর) ইমাম্ অমূম্ ময়ি ইতি।।

সরলার্থঃ যে (পুরুষ) ইচ্ছা করে যে স্ত্রী তাহাকে কামনা দান করুক, সে সেই স্ত্রীতে  আপনার ইন্দ্রিয় সংযােগ করিয়া, তাহার মুখে মুখ মিলাইয়া ও তাহার উপস্থ স্পর্শ করিয়া এই মন্ত্র জপ করিবে—তুমি (শুক্র) আমার প্রত্যেক অঙ্গ হইতে সম্ভূত হও, হৃদয় হইতে জন্মাও, তুমি আমার সর্বাঙ্গের রস, তুমি ইহাকে (ত্রীকে) বিষবাণবিদ্ধ মৃগীর ন্যায় বশীভূত করিয়া আমাকে আনন্দে মত্ত কর।



 


Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)