
আমি কি ডরাই, সখি, ভিখারী রাঘবে?
পশিব লঙ্কায় আজি নিজ ভুজ-বলে
দেখিব কেমনে মোরে নিবারে
নৃমণি
(মেঘনাদবধ কাব্য,তৃতীয় সর্গ)
শুধু মধুসূদন ই নন,এরকম অনেক ভ্রষ্ট মিথ্যাচারী ই বহুবছর ধরে চেষ্টা করেছে রাবণকে গৌরবান্বিত করার।
নৃমণি(রাজাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ) শ্রী রাম যিনি বনের সন্ন্যাসী,মাটিতে শয়ন করেন,অর্থবিত্তহীন তাঁকে রামায়ণে প্রায়শই উচ্চবিত্তশালী রাবণ, তার ছেলে ইন্দ্রজিৎ তথা মেঘনাদ,মেঘনাদের স্ত্রী প্রমীলা ভিখারি বলে উপহাস করতেন। রাবণ তো একবার সীতাকে লোভ ই দেখিয়েছিলেন এভাবে-
(মেঘনাদবধ কাব্য,তৃতীয় সর্গ)
শুধু মধুসূদন ই নন,এরকম অনেক ভ্রষ্ট মিথ্যাচারী ই বহুবছর ধরে চেষ্টা করেছে রাবণকে গৌরবান্বিত করার।
নৃমণি(রাজাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ) শ্রী রাম যিনি বনের সন্ন্যাসী,মাটিতে শয়ন করেন,অর্থবিত্তহীন তাঁকে রামায়ণে প্রায়শই উচ্চবিত্তশালী রাবণ, তার ছেলে ইন্দ্রজিৎ তথা মেঘনাদ,মেঘনাদের স্ত্রী প্রমীলা ভিখারি বলে উপহাস করতেন। রাবণ তো একবার সীতাকে লোভ ই দেখিয়েছিলেন এভাবে-
কি করিষ্যসি রামেণ সুভগে
চিরবাসসা।
নিক্ষিপ্তবিজয়ো রামো
গতশ্রী বন গোচর।।
ব্রতী স্থন্ডিলশায়ী চ
শংকে জীবতি বা ন বা।
(বাল্মীকি রামায়ণ
৫.২০.২৬)
“হে
সুভগে(সুন্দরী),এই ছিন্নবস্ত্রধারী রামকে নিয়ে তুমি কি করবে? ভিখারির মত বনে বনে
থাকা,ব্রহ্মচারী/ব্রতধারী রাম বনে বনে থেকে গতশ্রী (দেখতে আর সুন্দর নেই),সে ঘুমায়
মাটিতে, এই লোক যুদ্ধে জিততে পারবে কিনা আমার সন্দেহ(তাই আমাকেই বিয়ে কর)।“
যে রাবণ পরের স্ত্রীকে হরণ করে এনেছিল, তার স্বামীর অর্থবিত্তের অভাব,বনবাসে মলিন সৌন্দর্য, ব্রহ্মচারীর ছিন্ন পোশাককে বিদ্রুপ করে সে গরীব বলে তাকে ছেড়ে দিতে বলেছিল সেই রাবণকে অনেক বামপন্থী, নাস্তিক, অজ্ঞরা মহান মানব, মহান পণ্ডিত বলে আখ্যায়িত করেন। আবার অনেকেই গদগদ হয়ে বলেন রাবণ নাকি শিবের উপাসক ছিলেন,অথচ এটা বলেন না যে পৌরাণিক কাহিনী মতে রাবণ শিবের উপাসনা ই করেছিলেন শিবের কর্তৃক প্রদত্ত শাস্তির যন্ত্রণা সইতে না পেরে তা থেকে মুক্তি পাবার জন্য বাধ্য হয়ে।
আবার অনেকেই বলে রাবণ নাকি মহান বৈদিক ছিলেন,অথচ রামায়ণে আমরা দেখতে পাই রাবণ বৈদিক ধর্ম, আচার পালন করা মুনিদের হত্যা করতেন, লণ্ডভণ্ড করে দিতেন যজ্ঞ, তার উদ্দেশ্য ছিল একমাত্র যজ্ঞ করলে তিনি ই করবেন, অন্যরা করে যাতে পুণ্য অর্জন করতে না পারে। এজন্যে কেউ যজ্ঞাদি করলেই তিনি তাকে হত্যা করতেন -
প্রাপ্ত যজ্ঞ হরম্ দুষ্টম্ ব্রহ্মঘ্নম্ ক্রূর
কারিণম্।
কর্কশম্ নিরনুক্রোশম্
প্রজানাম্ অহিতে রতম্।।
(বাল্মীকি রামায়ণ ৩.৩২.২০)
যে ব্যাক্তি ছিলেন
যজ্ঞের বিনষ্টকারী,ব্রহ্মের উপাসকদের হত্যাকারী,ক্রূর,কর্কশ,প্রজাদের প্রতি
অত্যাচারী...
তার প্রিয় বোন শুর্পনখা তাকে লক্ষ্য করে বলছে-
প্রমত্ত কামে ভোগেষু
স্বৈর বৃত্ত নিরংকুশ।
স্বমুৎপন্নম্ ভয়ম ঘোরম্
বোদ্ধয়ম্ ন অববুধ্যসে।।
(বাল্মীকি রামায়ণ
৩.৩৩.১)
অনুবাদ- তুমি কামে-ভোগে
প্রমত্ত,নিজের সেবাতে ব্যস্ত সারাক্ষণ,তাই রাজা হয়েও কি সমুদয় বিপদ আসন্ন তার
দিকে খেয়াল ই নেই তোমার।
এর পরের শ্লোকে বললেন “তোমার মতো যে শুধু নিজের ভোগে ব্যাস্ত থাকে, নোংরা কামে মত্ত থাকে তাকে মৃত্যুর পর শবদাহের সময়েও কেউ সম্মান দেয়না।“
এরপর শ্রী রামের
প্রশংসায় শুর্পণখা বললেন-
চতুর্দশ সহস্রাণি
রক্ষসাম্ ভীম কর্মনাম্।
হতানি একেন রামেণ খরঃ চ
সহ দুষণঃ।।
(৩.৩৩.১২)
অর্থাৎ ১৪০০০ অত্যন্ত
খারাপ কাজ করা রাক্ষসকে রাম একা বধ করেছেন যার মধ্যে খর এবং দুষণও আছে।
ঋষিণাম্ অথয়ম্ দত্তম্ কৃতক্ষেমা চ দণ্ডক।
ধর্ষিতম্ চ জনস্থানম্
রামেণ অক্লিষ্ট কারিণা।।
(৩.৩৩.১৩)
অনুবাদ-দণ্ডক বনের নিরীহ
ঋষিদের অজেয় রাম নিরাপত্তা দিয়েছেন, জনস্থানের দস্যুদের করেছেন উচ্ছেদ।
অপরদিকে তুমি হলে কাম লালসায় মত্ত,মোটাবুদ্ধি যে মন্ত্রীদের মাধ্যমে রাজ্য পরিচালনা কর তাই আসন্ন বিপদ চোখে দেখতে পাওনা।
(৩.৩৩.১৪)
রামায়ণের প্রক্ষিপ্ত উত্তর কাণ্ডে পর্যন্ত ৩১ নং
অধ্যায়ে আমরা দেখতে পাই রাবণ নিজ সৎ ভাই কুবেরের পুত্রবধু রম্ভাকে (অর্থাৎ রাবণ ছিল রম্ভার শ্বশুর!) জোরপূর্বক ধর্ষণ
করেছিলেন। এজন্যে পুণ্যবান কুবের তাকে অভিশাপ দিয়েছিলেন যে যদি আবার কখনো রাবণ কোন
নারীর সাথে জোরপূর্বক কিছু করে তবে সাথে সাথে তার মৃত্যু হবে।
এভাবে পূর্ব হতেই নিজ দুশ্চরিত্রের জন্য প্রবলভাবে সমালোচিত হওয়ায় চাইলেও তিনি
সীতাকে স্পর্শ করতে পারেন নি। সাথে পারিপার্শ্বিক সামাজিক এবং রাজনৈতিক চাপ তো ছিলই।
তাই তিনি মা সীতাকে
হুমকি দিচ্ছেন, ১২ মাস সময়সীমা বেঁধে দিচ্ছেন, এর মধ্যে সীতা তাকে বিয়ে না করলে তিনি সীতাকে
হত্যা করবেন।
শ্রিণু মৈথিলী মত বাক্যম্
মাসান দ্বাদশা ভামিনি ।
কালেনা আনেন না অভ্যেসি
যদি মাম্ চারু হাসিনি।।
ততঃ ত্বম প্রাতঃ আশা
অর্থম সুদাঃ চেতস্যন্তি লেশশঃ।
(বাল্মীকি রামায়ণ
৩.৫৬.২৪,২৫)
অনুবাদ- হে সুহাসিনী
মৈথিলী, তোমাকে ১২ মাস সময় দিলাম, এর মধ্যে যদি তুমি রাজি না হও আমায় বিয়ে করতে আমি
তোমাকে টুকরো টুকরো করে রান্না করে সকালের নাস্তা করব!
যখন হনুমান সীতাকে গোপনে লংকায় দেখতে এলেন তখন মাত্র আর ২ মাস বাকী সেই ১২ মাসের। তখনও রাবণ একই হুমকি দিচ্ছেন, আগামী ২ মাসের মধ্যে শয্যাসঙ্গিনী না হলেই খুন করবেন মা সীতাকে।
সীতাকে তিনি বলছেন তিনি
রাক্ষস বংশের, তার জন্য অন্যের স্ত্রীকে জোর করে অপহরণ করে বিয়ে করা অপরাধ নয়!
স্বধর্ম রক্ষসাং ভীরু
সর্বথৈব ন সংশয়।
গমনং বা পরস্ত্রীণাম্
হরণম্ সম্প্রমথ্য বা।।
(বাল্মীকি রামায়ণ
৫.২০.৫)
আমি রাক্ষস,হে ভীরু
সীতা,অন্যের স্ত্রীকে জোর করে অপহরণ করে গ্রহন করা আমার কাছে অধর্ম নয় এটা
নিশ্চিত।
তাহলে ভেবে দেখুন পাঠককুল,যারা বলছে রাবণ জিতলে রাবণকে বীর করেই রামায়ণ লেখা হত তারা কি জেনে বা না জেনেই মিথ্যাচার করছে না? যে ব্যাক্তি পরের বৌকে, নিজের পুত্রবধূকে ধর্ষণ করে, পরের বৌকে অপহরণ করে আনে, শয্যাসঙ্গিনী হতে রাজি না হলে খুন করার হুমকি দেয়, প্রজাদের কে অত্যাচার করে, নিরীহ মুনি ঋষিদের হত্যা করে, পবিত্র যজ্ঞকে লণ্ডভণ্ড করে, তার নিজের বোন ই তাকে নোংরা, কামে,লোভ লালসায় মত্ত বলে সে নাকি প্রকৃত বীর! আর রাবণের নিজের ভাষাতেই যে ব্যাক্তি ব্রহ্মচারী, কোন সম্পত্তি ভোগ না করে ছেড়া বস্ত্র পরিধান করে মাটিতে শয়ন করে, রাবণের বোনের ভাষায় যে ব্যাক্তি অসহায়কে নিরাপত্তা দেয় সে নাকি খারাপ, সে নাকি অপরের রাজ্য আক্রমণ করে ক্ষতি করেছে!
তাই এসব মিথ্যাবাদী নাস্তিক থেকে সতর্ক থাকুন,কেউ নাস্তিক হওয়া তার ব্যক্তিগত ইচ্ছা,কিন্তু মিথ্যাচার করে শ্রীরামকে নিচু করার জন্য একজন দুশ্চরিত্র ব্যক্তিকে বীর হিসেবে আখ্যায়িত করা, অন্যায়ের শিকার হিসেবে চিত্রায়িত করে সমবেদনা পাবার মিথ্যা চেষ্টা করা অবশ্যই অন্যায় আর এসব অন্যায়কে তথ্য, জ্ঞান দিয়ে রুখে দিতে সবসময় অতন্দ্র প্রহরীর মত কাজ করে যাবে-
বাংলাদেশ অগ্নিবীর
সত্য প্রকাশে নির্ভীক সৈনিক
আর্যমশাই, কি ব্যাপার? রাবণের অপকর্মের ক্ষেত্রে যে রামায়ণের উত্তরকাণ্ড থেকে তথ্য দিচ্ছেন! রামের তপস্বী শম্বুক হত্যার বেলায় যে উত্তরকাণ্ড প্রক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে, হে আর্যবাবু? এহেন দ্বিচারিতার কারণ কি জানতে পারি?
ReplyDeleteওহে অনার্য মশাই লেখাটি আগে ভালো করে পড়ুন।উত্তরকাণ্ড প্রক্ষিপ্ত এটা তো এই লেখাতেও বলা হয়েছে।অন্যান্য কাণ্ড হতে আপনার অসুরগুরু রাবণের যে অপকর্ম তুলে ধরা হয়েছে সে সম্বন্ধে আপনার কি মত?আর উত্তরকাণ্ড প্রক্ষিপ্ত তা তো আর্যরাই কেবল বলেনি বরং পৌরাণিক,বামপন্থী সকল সংস্কৃত বিশেষজ্ঞরাই বলেছেন।উনারা বললে আরাম আর আর্যরা তা উদ্ধৃত করলে হারাম;এহেন দ্বিচারিতার কারন জানতে পারি?
Delete'রাবণকে আমি মহান লোক মনে করি' এটা ধরে নিয়ে পরবর্তী বাক্যগুলো ব্যয় করেছেন। একে বলে বিশুদ্ধ strawman fallacy.
Deleteআমার কথা ছিল উত্তরকাণ্ড প্রক্ষিপ্ত যারা বলে, তাদের কাছে উত্তরকাণ্ডের কোনো কথাই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। সারা বছর যারা উত্তরকাণ্ডকে প্রক্ষিপ্ত বলে, রামায়ণ-মহাভারতের ক্রিটিকাল এডিশনের ধোয়া তুলে, তারা যখন স্বমত প্রতিপাদনের জন্য উত্তরকাণ্ড ব্যবহার করে, তখন বুঝতে বাকি থাকেনা, তারা কত বড় লোকপ্রবঞ্চক!
আপনারা আসলে নিজেরাই নিজেদের খণ্ডন করে চলেছেন প্রতিনিয়ত।
১) উত্তরকাণ্ড প্রক্ষিপ্ত দেখালেন প্রথমে আপনারা
২) তারপর বললেন, তাই শম্বুক বধ প্রক্ষিপ্ত
৩) উত্তরকাণ্ডে দেখালেন রাবন ভীষণ বাজে লোক ছিল
৪) এভাবে উত্তরকাণ্ডকে নিজেরাই মান্যতা দিলেন।
৫) নিজেরাই নিজেদের খণ্ডন করলেন।
৬) প্রমাণ করলেন, আপনারা নেহাতই গোজামিলবাজ, জোচ্চোর।
উত্তরকাণ্ডের আগে 'প্রক্ষিপ্ত'শব্দটি সম্ভবত পরে জুড়েছেন, জোচ্চোর আর্যমশাই। প্রক্ষিপ্ত বলে যদি স্বীকারও করে থাকেন, তবে তা উদ্ধৃত করে কি প্রমাণ করলেন? প্রমাণ করলেন, আপনারা কত বড় মদন! 😂😂😂
যারা উত্তরকাণ্ডকে ৩৬৫ দিন প্রক্ষিপ্ত বলে, এবং নিজের সুবিধানুযায়ী স্বমত প্রতিপাদনে সেখান থেকে কোট করে, 'তারা বললে আরাম' কখনোই নয়। সহিহ হিপোক্রেসিকে তো আর আরাম বলা যায় না, ভায়া!
যাইহোক, strawman fallacy আপনাদের মতাদর্শীক সহোদর মুমিনদের ক্ষেত্রে কাজে লাগাবেন, কাজে দিলেও দিতে পারে৷
আপনি নিজেকে Strawman ভাবেন দেখে ভালো লাগল যদিও আপনি বা আপনার লজিক তার চেয়েও হাস্যকর।যেখানে বলাই হয়েছে "এমনকি প্রক্ষিপ্ত উত্তরকাণ্ডেও" বলা আছে রাবণ দুশ্চরিত্র এবং সাথে অন্যান্য কাণ্ডেও তার দুশ্চরিত্র কর্মকাণ্ডের বর্ণনা এখানে উদ্ধৃত করা হয়েছে সেখানে Strawman Fallacy এখানে কিভাবে খাটে অপদার্থ অনার্য মহাশয়?নাকি রাবণের শিষ্য হলেই লাম্পট্য মার্কা যুক্তি দেখাতে হবে? এসব লাম্পট্য আপনার অনার্য অপদার্থ আত্মীয়দের সাথে করুন গিয়ে,এখানে নয়।
Deletethihk
Delete