বেদ ঐশ্বরিক বাণী হওয়ায় এতে এমন কোনো কথা থাকা অসম্ভব যা জড়বিজ্ঞানের বিরোধিতা করে। বরং বেদ জড়বিজ্ঞান বা সমাজবিজ্ঞান আদি সকল বিজ্ঞানের এমন ইঙ্গিত বহন করে যা আধুনিক যুগে ও সমান সত্য। বেদে বৈজ্ঞানিক ভুল খোঁজা অপপ্রচারকারীর বাতুলতা ছাড়া আর কিছু নয়।
শঙ্কাঃ Rig Veda 3.6.5 Great are the deeds of thee, the Great, O Agni: thou by thy power hast spread out earth and heaven.
জবাবঃ এখানে এমন কিছু ই নেই।
এই মন্ত্র কে মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী বিদ্বানপক্ষে অর্থ করেছেন।
হে বিদ্বান নেতা, তুমি সুখপ্রদায়ী। সূর্য ও বিদ্যুৎ রূপী অগ্নির মতো তুমি ভূলোক ও দ্যুলোকের সর্বত্র ব্যপ্ত থাক এবং ঈশ্বরের দূতের মতো তাঁর মহিমা প্রকাশ কর। তোমার কর্ম মহান। তুমি জ্ঞান ও কর্মের বিশালতার কারণে বলশালী। তোমার এই মহত্ব প্রকাশিত হলে তুমি নেতৃত্বলাভ করবে ও দূত হিসেবে নিয়োগ লাভ করবে।
ভাবার্থঃ জ্ঞানী ও শক্তিশালী লোকেদের ই দূত ও নেতা হিসেবে নিয়োগ পাওয়া উচিত যারা সূর্যাগ্নির মতো(অগ্নি/বিদ্যুৎ/সূর্য) তেজস্বী।
শঙ্কাঃ Rig Veda 10.111.5 The counterpart of heaven and earth is Indra: he knoweth all libations, slayeth Susna. The vast sky with the Sun hath he extended, and, best otpillars, stayed it with a pillar.
Rig Veda 9.74.2 A far-extended pillar that supports the sky…
সমাধানঃ ঋগ্বেদ 10/111/5 এ এমন কিছু ই নেই।
পৃথিবী এবং দ্যুলোক কে পরিমাপকারী পরমেশ্বর সমস্ত পদার্থসমূহকে জানেন এবং শোষক মেঘ কে হত্যা করে বর্ষণ ঘটান। পৃথিবী এবং দ্যুলোক কে সূর্যের প্রকাশ দ্বারা প্রকাশিত করেন। তিনি সর্বাধিক ধারক শক্তিমান। সেই ধারণ শক্তি দ্বারা সমস্ত লোকসমূহ কে ধারণ করেন।
(অনুবাদঃ বৈদ্যনাথ শাস্ত্রী)
"যিনি দ্যুলোকের সহায় এবং পৃথিবীর ধারণকর্তা তথা বিস্তৃত সর্বত্র পরিপূর্ণ ব্যাপক পরমাত্মা সর্বপ্রকারে প্রাপ্ত। সেই পরমাত্মা এই দ্যুলোক এবং অন্তরিক্ষ লোক কে অদ্ভূত কর্ম দ্বারা সংহত করেন এবং সংগত দ্যুলোক এবং ভূলোা কে সেই পরমাত্মা ধারণ করেন। তিনি সর্বজ্ঞ পরমেশ্বর, ঐশ্বর্যের দাতা। "
(অনুবাদঃ আর্য মুনি)
মন্ত্রে দুটিতে পরমাত্মাকে সর্বাধার রূপে বর্ণনা করার জন্য "স্কম্ভ" শব্দ এসেছে যার অর্থ ধারণকর্তা পরমাত্মা।
কেননা তিনিই দ্যুলোক পৃথিবী লোক কে ধারণ করে আছেন। অথর্ববেদে দশম মণ্ডলের সপ্তম কে স্কম্ভ সুক্ত বলা হয় যেখানে পরমাত্মাকে সর্বাধার রূপে বর্ণনা করা হয়েছে।
অপপ্রচারকারীর মতানুসারে স্কম্ভ দ্বারা যদি pillar বুঝায় তবে বলতে হবে সে pillar স্বয়ং পরমাত্মা। কেননা তিনিই তো সকল কিছুর ধারণ কর্তা।
শঙ্কাঃ Yajur Veda 14.5 Upon the back of Aditi I lay thee the sky’s supporter, pillar of the Quarters…
সমাধানঃ এই মন্ত্রে এমন কিছু নেই। এখানে মূল মন্ত্রে তো অদিতি শব্দটি ও নেই।
প্রকৃত অনুবাদ দেখুনঃ
অাদিত্যাস্ত্বা পৃষ্ঠে সাদয়ম্যন্তরিক্ষস্য ধর্ত্রী বিষ্টম্ভনীং দিশামধিপত্নীং ভুবনানাম্। উর্মির্দ্রপ্সোহ্অপামসি বিশ্বকর্মা তহ্ঋষিরশ্বিনাধ্বর্যূ সাদযতামিহ ত্বা।।যজু ( ১৪/৫)
।।পদার্থঃ - হে স্ত্রী! যে ( তে) তোমার ( বিশ্বকর্মা) সব শুভ কর্ম দ্বারা যুক্ত( ঋষিঃ) বিজ্ঞান দ্বারা পতির ( অন্তরিক্ষস্য) অন্তকরনে নাশ রহিত বিজ্ঞানকে ( ধর্ত্রীম্) ধারন করিতে ( দিশাম্) পূর্বাদি দিশার ( বিষ্টম্ভনীম্) অাধার এবং( ভুবনানাম্) সন্তান উৎপত্তির নিমিত্ত ঘরের ( অধিপত্নীম্) অধিষ্ঠতা হওয়াতে পালনকারী( ত্বা) তোমাকে সূর্যের কিরণের সমান ( অাদিত্যাঃ) পৃথিবীর ( পৃষ্ঠে) ভূমির উপর ( সাদযামি) ঘরের অধিকারীনি স্থাপিত করছি,যেহেতু তুমি ( অপাম্) জলের ( উর্মিঃ) তরঙ্গ সদৃশ ( দ্রপ্সঃ) অানন্দযুক্ত ( অসি) হও; সেহেতু ( ত্বা) তোমাকে ( ইহ) এই গৃহাশ্রমের ( অধ্বর্যু) রক্ষার নিমিত্ত যজ্ঞকারী ( অশ্বিনা) বিদ্যায় ব্যপ্তবুদ্ধি অধ্যাপক এবং উপদেশক পুরুষ ( সাদয়তাম্) স্থাপিত করে।
এই মন্ত্র বাচকালুপ্তালাঙ্কারঃ যুক্তঃ-
ভাবার্থঃ যে সকল স্ত্রীগণ অবিনাশী সুখের প্রদানকারী সর্বদিশায় প্রসিদ্ধ কীর্তিমান পতিগণ দ্বারা যুক্ত সদা অানন্দিত, এই গৃহাশ্রমের ধর্ম পালনে এবং তাহার উৎপত্তির জন্য সামর্থবান হয়ে থাকে।
সরলার্থঃ হে স্ত্রী! যে তোমার সমস্ত শুভ কর্ম যুক্ত বিজ্ঞানদাতা পতির মধ্যে অন্তঃকরণের নাশরহিত বিজ্ঞান কে ধারণ করার পূর্বাদি দিশাসমূহ কে আধার এবং সন্তানোৎপত্তির নিমিত্তে ঘর কে অধিষ্ঠাতা হওয়ার কারণ তোমাকে সূর্যের কীরণের সমান পৃথিবীর পৃষ্ঠে ঘরের অধিকারিণী স্থাপিত করেছি, যে তুমি জলের তরঙ্গের সমান আনন্দযুক্ত হও। সেই তোমাকে এই গৃহাশ্রমে রক্ষার নিমিত্তে যজ্ঞকারী বিদ্যাতে ব্যপ্তবুদ্ধি অধ্যাপক এবং উপদেশক পুরুষ স্থাপিত করেছি।
(ভাষ্যঃ মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী)
শঙ্কাঃ
”The oblation full of cooked articles put into the fire, goes up to the sky. And returns there from full of rain.”- Yajur Veda 3.49,
”We perform the yajna for Vasus, Rudras and Adityas…The desired oblation (Ahuti) reaches the space, comes in contact with air and the light of that sun. It thence brings down rain for us…”- Yajur Veda 2.16, .
সমাধানঃ অপপ্রচারকারীর বারিচক্র সম্পর্কে কোনো জ্ঞান নেই তা বোঝা ই যাচ্ছে।
অপপ্রচারকারী বলতে চাইছেন যজ্ঞ তথা অগ্নি থেকে বৃষ্টি সৃষ্টি অবৈজ্ঞানিক।
কিন্তু বারিচক্রের সারমর্ম এই যে, সূর্যের তাপে পৃথিবীস্থিত জল বাষ্পীভূত হয়ে অন্তরীক্ষে গমন করে। সেখান থেকে ঘনীভূত হয়ে মেঘের সৃষ্টি করে ও বৃষ্টিপাত ঘটায়।
এ প্রসঙ্গে নিরুক্ত কি বলে দেখা যাক,
অথাপি ব্রাহ্মণং ভবত্যগ্নির্বা ইতো বৃষ্টিং সমীর্যতি ধামচ্ছদদিবি খলু ভূত্বা বর্ষতি, মরুতঃ সৃষ্টাং বৃষ্টিং নয়ন্তি(7/24)
ব্রাহ্মণে কথিত আছে যে, অগ্নি পৃথিবী হতে বৃষ্টি প্রেরণ করে।আকাশে গিয়ে তা আচ্ছাদনকারী মেঘ হয়ে বৃষ্টিপাত ঘটায়।মরুৎগণ (বাতাস) বৃষ্টিকে পরিচালনা করে। আর সূর্য তার রশ্মি দ্বারা মেঘ কে আঘাত করে, বৃষ্টিপাত ঘটে।
অথর্ববেদের নিম্নোক্ত মন্ত্রে ও বারিচক্র সিদ্ধ হয়।
সূর্যরশ্মি বাষ্পরূপ আবরণ বহন করে দ্যুলোকের দিকে গমন করে। অতঃপর বাষ্প বিপরীত দিকে ঘোরে ও অন্তরীক্ষলোক থেকে নিচে গমন করে ও পৃথিবী তে বৃষ্টিবর্ষণ ঘটায়।
যজুর্বেদের মন্ত্রদ্বয় ও এই উক্তি ই সিদ্ধ করে।
ঘৃত ও অন্য সামগ্রী দ্বারা পূর্ণ যজ্ঞাগ্নি বেদী হতে বাষ্পীভূত হয়ে ঊর্ধ্বে গমন করে। জল সহ তা ভূপৃষ্ঠে পতিত হয়। হে দর্শন ও সহস্র যজ্ঞের অধীশ প্রভু, আমরা ( যজমান ও পুরোহিত) যেন যজ্ঞের বিনিময়ে খাদ্য, শক্তি ও অন্যান্য বস্তু লাভ করতে পারি।
(ভাষ্যঃ ডঃ তুলসি রাম শর্মা)
অষ্ট বসু, একাদশ রুদ্র, দ্বাদশ আদিত্যের উদ্দেশ্যে আমরা যজ্ঞ সম্পাদন করি।এই আহুতি যেন বায়ুর সাথে ঊর্ধ্বলোকে গমন করে, সেখান থেকে বিদ্যুৎ রূপী রশ্মি দ্বারা সূর্য দ্বারা সৃষ্ট বৃষ্টিধারা বহন করে এই পৃথিবীর নদীসমূহকে পুষ্ট করে। পক্ষীকূল যেমন তাদের গৃহে শয়ন করে, আমরা ও যজ্ঞরহস্য আবিষ্কারের জন্য বেদমন্ত্রের উদ্ধারে ব্রতী হই। হে দৃষ্টিদানকারী অগ্নি, তুমি আমার চোখ কে রক্ষা কর ও দৃষ্টিরূপ আশীর্বাদ প্রদান কর।
(ভাষ্যঃ ডঃ তুলসি রাম শর্মা)
শঙ্কাঃ Atharva Veda 5.23.5 Eastward the Sun is mounting, seen of all, destroying thing unseen, Crushing and killing [with our spells] all the worms invisible and visible.
Atharva Veda 2.32.1. The rising sun shall slay the worms (which lives on earth), the setting sun with his rays shall slay the worms that are within the cattle!
সমাধানঃ
এখানে ও অপপ্রচারকারীর অজ্ঞতা ফুটে উঠছে। বেদের উপরোক্ত মন্ত্রদ্বয় পোকা তাড়ানোর মন্ত্র না, বরং এই মন্ত্রদ্বয়ে সূর্যরশ্মি দ্বারা ক্ষতিকর সকল পোকামাকড়ের বিরুদ্ধে কল্যাণ কামনা করা হয়েছে।
শুধু মন্ত্রোচ্চারণ পোকামাকড় তাড়াতে পারে না, কিন্তু সূর্যরশ্মি বা আলো পোকামাকড় দূরে খুব দক্ষতার সাথে কাজ করতে পারে।
এ প্রসঙ্গে কিছু বৈজ্ঞানিকের মৌলিক কাজ দেখুন পৃথিবীর শীর্ষস্থানীয় সাইন্টিফিক জার্নাল সাইটগুলো (nature, ncbi, researchgate) থেকে।
সূর্য পূর্ব দিকে উদিত হয় তা সমগ্র জগৎ দেখে। ইহা দৃশ্য ও অদৃশ্যমান সকল বস্তু কে দূর করে। দৃশ্য ও অদৃশ্য সকল ক্ষতিকারক পোকামাকড় ও জীবাণু হত্যা ও ধ্বংস করে।( ভাষ্যঃ ডঃ তুলসি রাম শর্মা)
সতত উদীয়মান ও অস্তায়মান সূর্য যেন তার রশ্মি দ্বারা ভূমিতে ও গবাদিপশুর শরীরে থাকা সকল অণুজীব ধ্বংস করে।
( ভাষ্যঃ ডঃ তুলসি রাম শর্মা)
Atharva Veda 4.11.1 The Bull supports the wide-spread earth and heaven, the Bull supports the spacious air between them. The Bull supports the sky’s six spacious regions: the universal world hath he pervaded.
সমাধানঃ
এখানে বৃষ শব্দের অর্থ নিয়ে শঙ্কার উদ্ভব হয়েছে। বেদে বৃষ শব্দটি ষাঁড় অর্থে না, বরং সূর্য অর্থে প্রযুক্ত।
নিরুক্ত 7/23 মতে বৃষ অর্থ বর্ষণকারী তথা সূর্য।
এ প্রসঙ্গে দ্রষ্টব্যঃ https://www.agniveerbangla.org/2019/02/blog-post_4.html?m=1
সূর্য পৃথিবীকে ও অন্তরীক্ষলোক কে ধারণ করে। সূর্য ঊর্ধ্বলোকের ছয় অঞ্চল ( সৌরজগতের ছয় গ্রহ) ধারণ করে। সূর্য তার রশ্মি দ্বারা সমগ্র বিশ্ব কে আলোকিত করে।
( ভাষ্যকারঃ বৈদ্যনাথ শাস্ত্রী)
Atharva Veda 11.3.33 … With Heaven and Earth as ears, with these I have eaten it…
সমাধানঃ
Atharva Veda 11.3.11 This earth, is the cooking pot, and sun the lid of the Odana (rice) as it is cooking
সমাধানঃ
মন্ত্রের সরল অর্থঃ এই পৃথিবী ই ওদন তথা দেহ ও মনের খাদ্য নির্মাণের পাত্র। অন্তরীক্ষ এই পাত্রের ঢাকনা স্বরূপ।
এ মন্ত্রে আকাশ কে ঢাকনার সাথে তুলনা করা হচ্ছে।
মূলত ঢাকনার কাজ কি?
ঢাকনার কাজ হলো বাইরের কোন কিছুকে ভিতরে ঢুকতে বা ভিতরের কোনকিছুকে বাইরে যাওয়াকে নিয়ন্ত্রন করা, বাধা প্রদান করা ৷
আমরা জানি পৃথিবীর আকাশের বায়ু মন্ডল মহাজাগতিক অনেক ক্ষতিকর বিষয় যেমন আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মিসহ আরও অন্যান্য অনেক ক্ষতিকর পদার্থকে পৃথিবীতে আসতে বাঁধা প্রদান করে। বায়ুমন্ডল একটি গ্যাসের স্তর যার 78% নাইট্রোজেন, 21% অক্সিজেন, 0.9% আর্গন, 0.03% কার্বন ডাই অক্সাইড এবং অবশিষ্টাংশ বিভিন্ন ধরনের গ্যাস।পৃথিবীর আকাশের বায়ুমন্ডলের কারনে প্রায় সকল উল্কাপিন্ড পৃথিবীতে পৌছানোর আগেই তা বায়ুমন্ডলের সংস্পর্শে এসে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। তাছাড়া সূর্য থেকে বেরিয়ে আসা বিদ্যুৎ-চুম্বকীয় বিকিরণ, তেজস্ক্রিয় রশ্মি, অতি বেগুণী রশ্মি যা ঘন্টায় 900000 মাইল বেগে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে আঘাত করে। যদি সেই মহাজাগতিক রশ্মি, আয়ন এবং ইলেকট্রন কণা যদি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল ভেদ করে ভূপৃষ্ঠে পৌছতে পারে তবে উদ্ভিদজদৎ, প্রাণীজগৎ এর ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হতো। কিন্তু বায়ুমণ্ডলীয় স্তরগুলো সূর্য থেকে আগত ক্ষতিকর রশ্মি ও অণু কণাগুলোকে বাধা প্রদান করে। এভাবেই এটি ঢাকনীরূপে কাজ করে, তাই এখানে আকাশ মন্ডলকে ঢাকণী উপমালঙ্কারের প্রয়োগ করাটা যথাযথই হয়েছে ৷
এটি উদ্দিষ্ট মন্ত্রের প্রাকৃতিক ব্যাখ্যা।
উক্ত মন্ত্রের আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যা ও সম্ভব।
11/3 সূক্তের উদ্দিষ্ট দেবতা ওদন।স্বাভাবিক ভাবে এই ওদন শব্দের অর্থ অন্ন বা খাদ্য।
বেদে ওদন শব্দটি কেবল দেহের খাদ্য হিসেবেই ব্যবহৃত হয় নি, বরং সামগ্রিক অর্থের দিক থেকে দেহ ও মন সকল বিষয়ের পরিপুষ্টি সাধন করে, এমন বস্তুর কথা বলা হয়েছে।
সূক্তের পূর্বে ডঃ তুলসী রাম ভাষ্যের ভূমিকাতে কথিতঃ
প্রথম পর্যায় ব্রহ্ম ও খাদ্যের মধ্যে অভেদরূপ কল্পনা করে। ব্রহ্ম যিনি জীবনের পরম উদ্দেশ্য,সেই স্বয়ম্ভু, সদা প্রাণময় ব্রহ্ম আমাদের আত্মার খাদ্যস্বরূপ।।সাধারণ খাদ্য যেমন আমাদের দেহের ক্ষুধা নিবৃত্তি করে, আমাদের দেহকে রোগমুক্ত থাকে, দেহের উন্নতি করে, তেমনি পরম ব্রহ্মের চিন্তা আমাদের আত্মাকে পবিত্র করে, আত্মার ক্ষুধা নিবৃত্তি করে, আত্মার রোগস্বরূপ সকল কলুষতা থেকে মুক্তি দেয়।
আমি,ব্রহ্মচারী সেই ওদন দ্বারা ই মৃত্যুকে জয় করি, যা প্রজাপতি, বিশ্বচরাচরের প্রভু এই ব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টিকালে তাঁর শক্তি দ্বারা তৈরি করেছিলেন। এই ওদন ব্রহ্মাণ্ড পরিচালনার শক্তিস্বরূপ ও অক্ষয়।
আমি সেই ওদন দ্বারা মৃত্যুকে জয় করি যেখান থেকে বিশ্ব তৈরিকারী শক্তি গুলো ধ্বংস হবার হাত থেকে রক্ষা পায় (শক্তির সংরক্ষণশীলতা) ।এবং এই ওদ দ্বারা জ্ঞানী ব্যক্তিরা তপস্যা ও সংরক্ষণ দ্বারা অর্জন ও পালন করেন। ব্রাহ্মণ তথা ঈশ্বর মহাবিশ্বের সৃষ্টির সময় তেজরূপ ওদন কে ই প্রথম সৃষ্টি করেছিলেন।
আমি সেই ওদন দ্বারা ই মৃত্যুকে জয় করি যা এই পৃথিবীকে পালন করছে। এই ওদন আকাশমণ্ডলকে আর্দ্র রাখে ও অন্তরীক্ষলোককে উত্তমরূপে বহন করে।
আমি সেই ওদন দ্বারা ই মৃত্যুকে জয় করি যেখান থেকে ত্রিশটি অর (চাকার স্পোক) যুক্ত মাসচক্র ( মাসের ত্রিশ দিন),বারো টি অর যুক্ত বর্ষচক্র (বছরের বারো মাস) সৃষ্ট। পর্যায়ক্রমে আবর্তিত হওয়া দিন ও রাত্রি কখনো ই এই চক্রকে অতিক্রম করে না।
আমি সেই ওদন দ্বারা ই মৃত্যুকে জয় করি যা জীবনদায়ী।পৃথিবী আলো দ্বারা ও জল তার স্রোত দ্বারা পরিপূর্ণ হয়ে সেখানে ই প্রবেশ করে।সেখানে ই দীপ্যমান অন্তরীক্ষলোকের সমগ্র অঞ্চল অবস্থান করে।
আমি সেই ওদন দ্বারা ই মৃত্যুকে জয় করি যেখান থেকে পরিপূর্ণ হয়ে অমৃতসত্তা অস্তিত্বশীল হয়েছে।এটি ই গায়ত্রী ছন্দের রক্ষক ও এখানে ই পরিপূর্ণ ত্রুটিবিহীন বেদের অবস্থান।
,
অথর্ববেদ 4/35/1-6
(অনুবাদকঃ বৈদ্যনাথ শাস্ত্রী)।
উপর্যুক্ত মন্ত্রগুলি থেকে ঘুরে এটা পরিষ্কার যে এখানে ওদন মানে কেবল খাদ্য বা ভাত নয়। বেদমতে এই ওদন হচ্ছে পরমেশ্বরের সেই তেজ যা থেকে মহাবিশ্বের উদ্ভব।আমাদের খাদ্যের উৎপত্তি ও খাদ্য থেকে আমরা যে শক্তি পাই তার উৎপত্তি সেই আদি মহাবিশ্বের তেজ থেকে যা প্রজাপতি ব্রহ্ম সৃষ্টি করেছেন।শক্তির সংরক্ষণশীলতা নীতি থেকে ও আমরা সেটাই জানি।
ওদন বলতে যেমন আমাদের খাদ্যশস্য বোঝায়, তেমনি ঈশ্বরের তেজ ও ওদন।এই পৃথিবী ই ওদনের পাত্র এর ব্যাখ্যা এই যে, আমরা এই পৃথিবীতে থেকে ই শারীরিক ও মানসিক সমৃদ্ধি অর্জন করি।সুতরাং এই পৃথিবী ওদন প্রস্তুত করার পাত্র। আর বায়ুমণ্ডল হচ্ছে এই পৃথিবীর ঢাকনা।