১)
অহমেব স্বয়মিদং বদামি জুষ্টং দেবেভিরুত মানুষেভিঃ।
যং কাময়ে তং তমুগ্রং কৃণোমি তং ব্রহ্মাণং তমৃষিং তং সুমেধাম্।।
(ঋগ্বেদ ১০।১২৫।৫)
যং কাময়ে তং তমুগ্রং কৃণোমি তং ব্রহ্মাণং তমৃষিং তং সুমেধাম্।।
(ঋগ্বেদ ১০।১২৫।৫)
অনুবাদঃ আমি(পরমাত্মা) স্বয়ং এটা বলছি,যার বচন বিদ্বানগণ ভালোবাসে এবং সকল মনুষ্যও প্রীতিপূর্বক সম্মান করে,পাঠ করে। যাকে যাকে কর্মগুণের দ্বারা আমি পছন্দ করি তাকে তাকেই কর্মানুসারে আমি করে তুলি তেজস্বী ক্ষত্রিয় কিংবা জ্ঞানী চতুর্বেদ জ্ঞাতা ব্রাহ্মণ অথবা ঋষির ন্যায় অথবা শ্রেষ্ঠ মেধাযুক্ত।
তাৎপর্যঃ কর্মগুণেই বর্ণ লাভ হয়,জন্ম বা বংশমর্যাদা দিয়ে নয়।
২)
অহং ভূমিমদদামার্যায়াহং বৃষ্টিং দাশুষে মর্ত্যায়।
অহমপো অনয়ং বাবশানা মম দেবাসো অনুকেতমায়ন্।।
(ঋগ্বেদ ৪।২৬।২)
অহমপো অনয়ং বাবশানা মম দেবাসো অনুকেতমায়ন্।।
(ঋগ্বেদ ৪।২৬।২)
অনুবাদঃ আমি আর্যদের(মহৎ মনুষ্যদের) এই পৃথিবী দান করেছি , আমি দানশীল মনুষ্যদের জন্য ধনের বর্ষণ করি, আমিই গর্জনশীল জলকে পৃথিবীতে এনেছি, বিদ্বানগণ আমার জ্ঞানের পথ ই অনুসরণ করেন।
তাৎপর্যঃঈশ্বর এই সমগ্র ধরণীকে মহৎ মনুষ্যের নিকট প্রদান করেছেন,যে ব্যাক্তি দানশীল তার জন্যে ঈশ্বর স্বয়ং ধনের বর্ষণ করেন।বিদ্বান ব্যাক্তি পবিত্র বেদে ঈশ্বরের দেখানো জ্ঞানের পথ ই অনুসরণ করেন।
৩)
পাবমানীঃ স্বস্ত্যয়নীস্তাভির্গচ্ছতি নান্দনম্।
পুণ্যাংশ্চ ভক্ষান্ ভক্ষয়ত্যমৃতত্বং চ গচ্ছতি।।
(সামবেদ, ১৩০৩)
পুণ্যাংশ্চ ভক্ষান্ ভক্ষয়ত্যমৃতত্বং চ গচ্ছতি।।
(সামবেদ, ১৩০৩)
অনুবাদঃ পবিত্র স্বরূপ এবং জগত পবিত্রকারী এই বেদবাণী পরম কল্যাণকর। এর অধ্যয়ন এবং মননে মনুষ্যের পরম আনন্দ লাভ হয়, পবিত্র ভোজ্যের ভোজনপ্রাপ্তি হয় এবং মোক্ষরূপ অমৃতত্বের আনন্দকে মনুষ্য প্রাপ্ত করে।
তাৎপর্যঃ বেদের পবিত্র মন্ত্র যিনি নিয়মিত পাঠ করেন ও এর বাণী পালন করেন তা সেই ধার্মিক ব্যাক্তিকে পবিত্র করে, শরীরকে নীরোগ রেখে অনেক সুন্দর ভোজ্য পদার্থকে প্রাপ্ত করায় এবং পরমকল্যাণকর পরমাত্মার এই বাণী দ্বারাই প্রাণীসকল মুক্তিলাভ করে।
৪)
তমু স্টুহি যো অন্তঃ সিন্ধৌ সৃনুঃ। সত্যস্য যুবানামদ্রোঘবাচং সুশেবম।।
(অথর্ববেদ ৬।১।২)
(অথর্ববেদ ৬।১।২)
অনুবাদঃ তুমি তার ই স্তুতি করো যিনি এই ভবসাগরের মাঝে সত্যের প্রেরণা দানকারী, চিরনতুন, দোষরহিত বেদবাণীর দাতা ও উত্তম কল্যাণময়।
ভাবার্থঃপরমাত্মা নির্ভুল,অলঙ্ঘনীয়,সকল কালের জন্য প্রযোজ্য চিরযুবা পবিত্র বেদবাণীর দাতা,তিনিই আমাদের এই সংসাররূপ ভবসাগর পার করাতে পারেন বেদবাণীর মাধ্যমে সত্যের প্রেরণা দান করার মাধ্যমে,তিনি উত্তম কল্যাণময়,সকলে তার ই উপাসনা কর।
৫)
আ ত্বা ব্রহ্মযুজা হরী বহতামিন্দ্র কেশিনা।
উপ ব্রহ্মাণি নঃ শৃণু।।
(সামবেদ, ৬৬৭)
উপ ব্রহ্মাণি নঃ শৃণু।।
(সামবেদ, ৬৬৭)
অনুবাদ- হে পরমাত্মা! কেশ যেমন মস্তকের চারদিকে ছড়িয়ে থাকে ঠিক তেমনি কেশরূপ বৃত্তিসমূহ আমাদের চারদিকে বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে।চিত্ত ও আত্মা উভয়ে যেন তা হতে মুক্ত হয়ে ব্রহ্মে যুক্ত থেকে তোমাকে প্রাপ্ত করে। আমাদের বেদোক্ত এই প্রার্থনা তুমি স্বীকার করো।
তাৎপর্যঃ কেশ যেমন চারদিকে ছড়িয়ে থামে, তেমনি আমাদের বৃত্তি সমূহ বাহ্যিক বস্তুর প্রভাবে চারদিকে বিক্ষপ্ত হয়ে আছে। আমাদের এই বৃত্তি সমূহকে নিয়ন্ত্রিত ও সংযমী করে মন ও আত্মার দ্বারা উপাসনারূপ ধ্যান করলেই পরমেশ্বরকে লাভ করতে পারবো। তাই আমাদের এই প্রার্থনা যে, যখন আমরা বেদের পবিত্র মন্ত্র প্রেমের সহিত পাঠ করি, তখন ঈশ্বর যেন কৃপা করে তা স্বীকার করে। যেমন পিতা তার নিজের সন্তানের কথা শুনে প্রসন্ন হয় ঐরূপ পরম পিতা আমাদের প্রার্থনা শুনে যেন আমাদেরকে তার সাথে যুক্ত হবার আশীর্বাদ দেন।
ওঁ শান্তি শান্তি শান্তি