দেখা গেছে বেদে ঠিক যেভাবে বর্ণিত, আশ্চর্যজনকভাবে আধুনিক বিজ্ঞানও তাদের সেরূপ ই ঔষধি গুণ আবিস্কার করতে সক্ষম হয়েছে।পবিত্র বেদে বর্ণিত ঠিক এমন ই কিছু উদ্ভিদকে নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদনের প্রথম পর্ব আজ।
কুশ উদ্ভিদ
বৈজ্ঞানিক নাম-Desmostachya bipinnata
কুশ(Demostachya bipinnata),একটি কোঁকড়ানো ঘাস প্রজাতি যার মূল কিছুটা মোটা,মধ্যকাণ্ড খাড়া।পাতা সরু ও পাতলা,০.১-০.৩ cm চওড়া।রাসায়নিক পরীক্ষায় এর পাতায় পেক্টোস,লিগনিন, সেলুলোস পাওয়া গিয়েছে।এর মূল ঝাঁঝালো,কিছুটা মিষ্টি যাতে রাসায়নিক পরীক্ষায় Cylindrin,Arunodroine,Feninole Iso Arborinole পাওয়া গেছে।
অথর্ববেদ ও ঋগ্বেদে বিভিন্ন স্থানে এটির উল্লেখ পাওয়া গিয়েছে।পবিত্র বেদে ও সংস্কৃত ভাষায় এর অপর নাম দর্ভ(Darbha)।বিখ্যাত উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞ গিরিজা প্রসন্ন মজুমদার অবশ্য দর্ভ ও কুশ ঘাসকে একই ঘাসের দুই প্রজাতি বলে উল্লেখ করেছেন।তিনি কুশকে খরদর্ভ ও দর্ভকে মৃদুদর্ভ বলে উল্লেখ করেছেন।
শারাসঃ কুশারাসো দর্ভাসঃ সৈর্যা উত।
মৌন্জা অদৃষ্টা বৈরিণাঃ সর্বে সাকং ন্যলিপ্সত।।
(ঋগ্বেদ ১.১৯১.৩)
অনুবাদ-সেই বিষযুক্ত জীবাণুগুলো লুকিয়ে আছে লতাপাতায়,পুকুরে ও ডোবায়, কুুুশ ঘাসে,হ্রদে,স্রোতে,
মুঞ্জ মূলে,পাতায় ও বৃক্ষে।একসাথে তারা পরজীবিরূপে সর্বত্র লেগে থাকে।
আধুনিক বিজ্ঞান থেকে আমরা জানি যে নোংরা উদ্ভিজ্জ খাদ্যে ও অপরিস্কার পানিতে থাকে রোটা ভাইরাস,E.histolytica প্যারাসাইট যেগুলো মানুষের অন্ত্রে গিয়ে বিষ নিঃসরণ করে যার ফলে ডায়রিয়া,ডিসেন্ট্রি হয়ে থাকে।বিভিন্ন পরজীবি সমূহ লার্ভা,ডিম প্রভৃতি রূপে দলবদ্ধভাবে পানির স্রোতে বা পুকুরে,ডোবায় বা হ্রদে থাকে।যেমন Schistosoma Hematobium নামক পরজীবি যা হ্রদে বা পুকুরে,স্রোতে থাকে এবং সেখানে স্নান করলে আমাদের শরীরে প্রবেশ করে আমাদের মুত্রথলিতে রোগ সৃষ্টি করে।
আবার Hookworms সহ বিভিন্ন প্যারাসাইট বিভিন্ন উদ্ভিদে,পাতায়,শাক সবজিতে লেগে থাকে যা ফলমূল শাকসবজি ভালো করে না ধুয়ে খেলে আমাদের অন্ত্রে প্রবেশ করে এবং রোগব্যাধি সৃষ্টি করে।পবিত্র বেদ অনুজীববিদ্যার এই সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিষয়গুলোই তুলে ধরেছে।
অথর্ববেদ ১৯.২৮.১ এবং ১১.৬.১৫ তে দর্ভ বা কুশ ঘাসকে শরীরের শত্রুনাশক,প্রাণবর্ধক,রোগনাশক বলা হয়েছে।
চরক সংহিতা,সুশ্রুত সংহিতা,অষ্টাঙ্গ হৃদয় সূত্রে একে মধুর বিপাক ও অগ্নিদীপন (হজমে সাহায্যকারী) বলা হয়েছে।মুত্রাল(প্রস্রাবে সাহায্যকারী বা Diuretics)হিসেবে একে চরক সংহিতার সূত্রস্থানের ৪.১৫ তে উল্লেখ করা হয়েছে।সুশ্রুত সংহিতার সূত্রস্থানের ৩৮/১০-১১ তে একে মুত্রক্রুচ্ছহর বা প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া বা ইনফেকশনে উপকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।আর প্রকৃতপক্ষেই বিখ্যাত মেডিকেল সায়েন্স বিষয়ক জার্নাল পাবমেডে প্রকাশিত একটি রিসার্চ পেপারে ২৯ জন স্বেচ্ছাসেবীর উপর চালিত পরীক্ষায় দেখা গেছে কুশ ঘাস ডাইউরেটিকস হিসেবে এবং প্রস্রাবের ইনফেকশন দূরীকরণে কাজ করছে।রিসার্চ পেপারটির লিংক-
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC3665103/#!po=2.00000
এছাড়াও কুশঘাসকে স্তন্যজননা(Galactogogue বা মায়ের স্তনে দুগ্ধ উৎপন্নকারী), রসায়ন( Anti Oxidant), বাত-পিত্ত-কফনাশকারী ইত্যাদি রূপে বর্ণনা করা হয়েছে এই প্রাচীন গ্রন্থসমূহে ।
আধুনিক প্রাকৃতিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে এটি নিম্নলিখিত রোগের ঔষধ তৈরীতে ব্যবহৃত হয়-
১.ডায়রিয়া
২.ডিসেন্ট্রি
৩.এস ডাইউরেটিক
৪.মেনোরেজিয়া
৫.হাইপারডিপসিয়া
অর্থাত্ আধুনিক বিজ্ঞানও নিশ্চিত করছে যে উদ্ভিদটি ডায়রিয়া,ডিসেন্ট্রি ইত্যাদি রোগের প্রতিষেধকরূপে কাজে লাগে।
এই কুশঘাস হিন্দু সংস্কৃতিতে বিশুদ্ধিকরণ এর কাজে ব্যাবহৃত হয়। যজ্ঞসহ বিভিন্ন পবিত্র অনুষ্ঠানে পবিত্র জল ছিটানোর কাজেও কুশঘাস ব্যাবহৃত হয়।
Centre for Nanotechnology and Advanced Biomaterials (CeNTAB) and the Centre for Advanced Research in Indian System of Medicine (CARISM) of the SASTRA University এর একদল গবেষক কুশ ঘাস নিয়ে গবেষণায় চমকপ্রদ কিছু ফল পেয়েছেন।
আশ্চর্যের এখানেই শেষ নয়! পবিত্র অথর্ববেদের ৬.৪৩.২ এ বলা হয়েছে কুশঘাসের মূল নাকি ভুরিমূল সমুদ্রম্অবতিষ্ঠাতি দর্ভঃ পৃথিব্যা বা ভূমিপৃষ্ঠ হতে একদম গভীরে জল স্তর পর্যন্ত বিস্তৃত। আর আধুনিক উদ্ভিদবিজ্ঞানের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি বেদে উল্লেখিত ঔষধি ঘাসসমূহের মধ্যে একমাত্র কুশ ঘাসের মূল ই ভূমির নিচে ৫ ফুট পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে!
শেষ করার আগে আরো দুটি মজার তথ্য জানাই আপনাদের।
শ্রীমদ্ভগবদ গীতার ৬.১১ নং শ্লোকে যোগেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ এই কুশ ঘাসের আসন কে ধ্যান করার জন্য উত্কৃষ্ট হিসেবে বর্ণনা করেছেন
এবং ত্রিপিটক অনুযায়ী মহামতি গৌতম বুদ্ধ কুশ ঘাসের আসনে বসেই ধ্যান করতেন!
পবিত্র বেদের এই অতিপ্রাকৃত জ্ঞান ছড়িয়ে দিন সকলের মাঝে!
ওঁ শান্তি শান্তি শান্তি
Owo
ReplyDelete