দৈনিক বেদবাণী


এই সমগ্র সংসার নিরোগ এবং শুভচিন্তা যুক্ত হোক । যজুর্বেদ ১৬.৪                    সূর্য-এর আলোয় স্বয়ং আলোহীন চাঁদ আলোকিত হয় । ঋগ্বেদ ৫.৪০.৫                    প্রশংসনীয় সংস্কৃতি, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও মাতৃভূমি— এই ত্রয়ী সুখ-সমৃদ্ধি প্রদান করে। ঋগ্বেদ ১.১৩.৯                    উত্তম জীবন লাভের জন্য আমাদের জ্ঞানীদের সাহচর্যে চলা উচিৎ। ঋগ্বেদ ১.১২.১৬                    যে ব্যক্তি সম্পদ বা সুখ বা জ্ঞান নিঃস্বার্থভাবে দান করে, সে-ই প্রকৃত মিত্র। ঋগ্বেদ ২.৩০.৭                    মানুষ কর্ম দ্বারাই জগতে মহত্ত্ব ও প্রসিদ্ধি লাভ করে। ঋগ্বেদ ৩.৩৬.১                    হে পতি! তোমার স্ত্রীই গৃহ, স্ত্রীই সন্তানের আশ্রয়। ঋগ্বেদ ৩.৫৩.৪                    পরমাত্মার নিয়ম বিনষ্ট হয় না; তা অটুট, অচল ও অপরিবর্তনীয়। ঋগ্বেদ ৩.৫৪.১৮                    এই ধর্মের মার্গই সনাতন, এই পথে চলেই মানবগণ উন্নতি লাভ করে। ঋগ্বেদ ৪.১৮.১                    পরমাত্মার নিকট কোনো মানুষই বড় বা ছোট নয়। সকল মানুষই সমান এবং পরস্পরের ভ্রাতৃস্বরূপ। ঋগ্বেদ ৫.৬০.৫                    যে ব্যক্তি অকারণে অন্যের নিন্দা করে, সে নিজেও নিন্দার পাত্র হয়। ঋগ্বেদ ৫.২.৬                    নিশ্চিতরূপে এই চতুর্বেদ কল্যাণপ্রদায়িনী এবং মানবকে জ্ঞান প্রদান করে ধারণকারিণী। ঋগ্বেদ ৫.৪৭.৪                    বীর মানবের জন্য পর্বতও সুগম হয়ে যায়। ঋগ্বেদ ৬.২৪.৮                    আমরা অন্যের সঞ্চিত পাপের কর্মফল ভোগ করি না। ঋগ্বেদ ৬.৫১.৭                    হে মিত্রগণ! ওঠো— উদ্যমী হও, সাবধান হও এবং এই সংসাররূপী নদীকে অতিক্রম করো। ঋগ্বেদ ১০.৫৩.৮







ইতিহাসের পাতায় মহাভারত

Arindam
0

 


মহাভারতের প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ আবিস্কৃত হয়েছে বিগত শতকের মাঝামাঝির দিকেই। ১৯৫২ সালে ড. বি বি লাল এর নেতৃত্বে আর্কিওলজিকাল সার্ভে অব ইণ্ডিয়ার তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয় হস্তিনাপুরের প্রত্নতাত্ত্বিক খণনকার্য, উঠে আসে অনেক প্রমাণ। ১৯৭৯-৮০ সালে ড. এস আর রাও মহাভারতে উল্লেখিত সমুদ্রে নিমজ্জিত হয়ে যাওয়া দ্বারকা নগরীর মতোই  গুজরাটের দ্বারকার সমুদ্রতলে আবিস্কার করেন প্রাচীন দ্বারকা শহর।

এগুলো তো গেলো প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ। কিন্তু কোন ঘটনার প্রামাণ্য ও প্রাচীনতা সন্ধানের আরও কিছু কৌশল রয়েছে। তার মধ্যে একটি হলো প্রাচীন গ্রন্থসমূহের মধ্যে ওই বিশেষ বিষয়টির উল্লেখ। তা দিয়ে সেই বিশেষ ঘটনাটি কত সময় আগে থেকেই জনসমাজে প্রচলিত ছিল তা ধারণা করা যায়। আর মহাভারতের ক্ষেত্রেও আমরা দেখি এর উল্লেখ অনেক প্রাচীন উপমহাদেশীয় বইতে পাওয়া যায় যার দ্বারা মহাভারতের প্রাচীনতা সম্পর্কেও সম্যক ধারণা পাওয়া যায়। আসুন দেখে নিই।

১.
১০৩০ সনে সংস্কৃত-বিদ্যার অধ্যয়নকারী মুসলমান ঐতিহাসিক আলবেরুনী লিখেছেন - মহাভারতে ১৮ পর্বে ১০০,০০০ শ্লোক রয়েছে । [1]
এটা থেকে জ্ঞাত হ‌ওয়া যায় আলবেরুনীর সময় মহাভারতের কলেবর বর্তমান কালের মতোই ছিলো ।

২.
আনুমানিক ১০০০ সনে শৈব শাস্ত্রের অদ্বিতীয় বিদ্বান, ভরত নাট্যবেদ এর ব্যখ্যাকার আচার্য অভিনবগুপ্ত লিখেছেন মহাভারত শাস্ত্রে শতসহস্র
( ১লক্ষ) শ্লোক রয়েছে । [2]

৩.
৯২০ সনে [3] মাঘপ্রণীত শিশুপালবধ মহাকাব্যের ওপর টীকা‌কার বল্লভদেব মহাভারতে শ্লোকের পরিমাণ সপাদলক্ষ –– ১২৫০০০ মেনেছেন( বর্তমানে যদিও মহাভারতে শ্লোক সংখ্যা আনুমানিক ৮৫ হাজার পাওয়া যায় হরিবংশ ব্যতিত)। [4]

৪.
৯০০ সনে রাজশেখর স্বরচিত‌ কাব্য-মীমাংসা গ্রন্থে ভারত সংহিতাকে শতসাহস্রী( ১ লক্ষ শ্লোক) বলেছেন । [5]

৫.
৬৩০ সনে বলভীবিনিবাসী ঋগ্বেদ ভাষ্যকার আচার্য স্কন্দ স্বামী  তার ভাষ্যে ভারতান্তর্গত অনেক আখ্যানের সংকেত দিয়েছেন । [6]

৬.
স্থাণ্বীশ্বর মহারাজ শ্রী হর্ষবর্ধনের( ৬০৬-৬৪৭ সন) রাজসভা সুশোভিতকারী গদ্যকবি ভট্টবাণ কাদম্বরী এবং হর্ষচরিত নামে দুইটি গ্রন্থ লিখছেন । এই দুটি গ্রন্থে মহাভারতান্তর্গত অনেক সরস কথা এবং কাহিনীতে ভর্তি রয়েছে । [7] 
হর্ষচরিত গ্রন্থের আরম্ভে ভট্টবাণ স্পষ্ট লিখেছেন ভারত গ্রন্থের রচয়িতা ব্যাস । [8]

৭.
আনুমানিক এই একই সময়ে ব্যাকরণ কাশিকাকার জয়াদিত্য কাশিকাবৃত্তি ১/১/১১ ।। এবং ৫/৪/১২২ ।‌। নং-এ মহাভারত শান্তিপর্বের দুই শ্লোক ১৭৬/১২ ।। এবং ১০/১ ।। ক্রমশ উদ্ধৃত করেছেন ।

৮. 
৫৯০ সনে মীমাংসা-বার্তিকের লেখক (প্রতাপশালী অর্থাৎ প্রভাকরবর্ধন ৬০৫ সনে পরলোকগমন করেন । তার সমকালীন বিশ্বরূপ স্বরচিত বালক্রীড়ায় কুমারিলের শ্লোক উদ্ধৃত করেছেন), [ 9 ] বৌদ্ধমত-বিধ্বংসক ভট্ট কুমারিল মহাভারতের অনেক শ্লোক উদ্ধৃত করেছেন এবং মহাভারতের এক শ্লোক উদ্ধৃত করে একে পারাশার্য(পরাশর পুত্র ব্যাস) এর কৃতি মেনেছেন । [10]

৯.
আনুমানিক এই একই সময়ে কাব্যালংকারসূত্র-প্রণেতা কাশ্মীরনিবাসী ভামহ‌ মহাভারতে বর্ণিত অনেক কাহিনীর উল্লেখ নিজের গ্রন্থে করেছেন । [11]

১০.
কাশ্মীরনিবাসী ভামহ‌ের সময়কাল হতে কিছু কাল আগে ন্যায়বার্তিককার শৈব আচার্য উদ্যোতকর স্বরচিত‌ বার্তিক-এ  ৪/১/২১।। নং সূত্রে মহাভারত বনপর্বের একটি শ্লোক ৩০/২৮।। উদ্ধৃত করেছেন ।

১১.
মৎসপুরাণের বর্তমান রূপ ইদানীং উত্তরকালের নয় । সেখানে মহাভারতের এক লাখ শ্লোকের‌ বর্ণনা রয়েছে । [ 12]

১২.
৫৭০ সনের পূর্ববর্তী শব্দব্রহ্মবাদী বাক্যপদীয় এর কর্তা মহাবৈয়াকরণ ভর্তৃহরি‌ [13] মহাভারতের অনেক শ্লোক উদ্ধৃত করেছেন । এক স্থানে উনি আশ্বমেধিক পর্বের অনেক শ্লোক উদ্ধৃত করেছেন । [14]  এর দ্বারা জ্ঞাত হ‌ওয়া যায়‌ যে, ভর্তৃহরি এর সময়কালে আশ্বমেধিক পর্ব‌ও বিদ্যমান ছিলো ।

১৩. 
এর থেকে কিছু পূর্বের প্রতিপদশ্লেষের বক্তা সুবন্ধুর বাস্তবতারও একই হাল। এই গ্রন্থে মহাভারতের বিভিন্ন ঘটনার‌ উল্লেখ পাওয়া যায় ‌। [ 15 ]

১৪. 
উদ্যোতকর এর রচিত ন্যায়বার্তিকে মহর্ষি ব্যাসের যোগভাষ্যের প্রমাণ পাওয়া যায় । যোগভাষ্য‌ সেই সময়কালের‌ও আগের গ্রন্থ । এই যোগভাষ্য ১/৪৭।। [16] এবং ২/৪২।। নং সূত্রে মহাভারতের দুই শ্লোক উদ্ধৃত । [17]

১৫.
৪৪৫ সনে [ 18 ] মহারাজ সর্বনাথের তাম্রপত্র হতে‌ও প্রমাণ পাওয়া যায় মহাভারতে এক লক্ষ শ্লোক রয়েছে । [19]

১৬.
এই সময়কাল থেকে কিছু কাল পূর্বে মীমাংসা ভাষ্যকার শবর স্বভাষ্যে ৮/১/২।। নং-এ মহাভারতের আদিপর্ব হতে ১/৪৯।। নং শ্লোক উদ্ধৃত করেছেন ।

১৭.
প্রায় এই সময়কাল অথবা‌ এর থেকে কিছুকাল‌ পূর্বে নিরুক্ত‌ বৃত্তিকার‌ দূর্গ‌ও মহাভারতের অনেক শ্লোক উদ্ধৃত করেছেন । [20]   আচার্য‌ দূর্গ ৬৩০ সনের ঋগ্‌ভাষ্যকার স্কন্দ স্বামীর পূর্বের‌ গ্রন্থকার । আচার্য দূর্গ কর্তৃক উল্লেখিত মহাভারতের একটা শ্লোক‌ নির্দেশ করে যুদ্ধ কাণ্ডের  অবস্থায় তেমন‌ কোনো‌ পার্থক্য‌ হয় নাই । [ 21]

শুধু এটাই নয়, দূর্গ এটাও মত‌ দিয়েছেন যে‌, নিরুক্তকার‌ মহর্ষি‌ যাস্ক‌ আখ্যান‌ সহিত ভারত সংহিতাকে‌ জানতেন‌ । [ 22 ] । যদি‌ দূর্গের এই মত‌ সত্য‌ সিদ্ধ হয়, তাহলে‌ মানতে‌ হবে‌ যে‌ মহাভারতের বর্তমান আকার‌ ভারত‌ যুদ্ধের‌ তিনশত বর্ষের‌ মধ্যে‌ গঠিত‌ হয়েছে‌ । মহর্ষি যাস্কের‌ সময়কাল ভারত যুদ্ধের‌ তিনশত বর্ষের পরবর্তী কালে‌ নয় ।

১৮.
মহাযানিক‌ সগাথক‌ এর লঙ্কাবতার‌ সূত্রে‌ ব্যাস এবং মহাভারতের স্পষ্ট উল্লেখ পাওয়া যায়‌  । [ 23 ]

১৯.
বাররুচ‌ নিরুক্ত‌ সমুচ্চয় নামে‌ একটি গ্রন্থ‌ পাওয়া যায়‌ । সেখানে বেদ মন্ত্রের‌ বিবর‌ণ রয়েছে । বররুচি‌ কর্তৃক লিখিত‌ হ‌ওয়ার‌ কারণে‌ এই গ্রন্থ‌ খ্রিষ্টীয় প্রথম‌ শতাব্দী অথবা তা‌র পূর্বে লিখিত  । এই গ্রন্থে‌ মহাভারতের অনেক শ্লোকের উল্লেখ‌ রয়েছে ।  [ 24 ]

২০. 
পৈশাচী বৃহৎকথা গ্রন্থের‌ লেখক গুণাঢ্য‌‌ মহাভারত অধ্যয়ন করেছিলেন । তিনি তার‌ স্বরচিত‌ গ্রন্থে অনেক আখ্যানের‌ বর্ণনা করেছেন যা‌ মহাভারতে‌ই পাওয়া যায়‌ । কথা-সরিত-সাগর নামক গ্রন্থে‌ মহাভারতের অনেক কিছু উল্লেখ‌ রয়েছে‌ । [ 25 ]

২১. 
সাকেত-এ‌ লব্ধজন্ম‌ মহাকবি‌ মহাবাদী‌ ভিক্ষু আচার্য অশ্বঘোষের রচিত বুদ্ধ‌ চরিত এবং সৌন্দরনন্দ‌ এই দুটি মহাকাব্যে‌ মহাভারতে বর্ণিত‌ অনেক ঘটনা‌র উল্লেখ পাওয়া যায় । [ 26 ]

ভদন্ত অশ্বঘোষ‌ বৌদ্ধ‌ মহাযান‌ সম্প্রদায়ের প্রকাণ্ড পণ্ডিত ছিলেন । তার‌ সময়কাল‌ খ্রিষ্টাব্দ‌ প্রথম শতাব্দীর‌ পূর্বে‌ হবে । সারস্বত‌ দ্বারা‌ নষ্ট বেদের উপদেশ নামে‌ একটি আখ্যান‌ মহাভারতে উল্লেখ ছিলো । বুদ্ধচরিত‌ ১/৪৭।।-এ অশ্বঘোষ সারস্বত‌ এর সেই কাহিনীকে নির্দেশ করে । [ 27 ]

২২.
জৈন সম্প্রদায়ের উত্তরাধ্যয়ন সূত্র‌ নবমাধ্যয়নের নমি‌ প্রব্রজ্যার ১৪তম অধ্যায়ের‌ গাথা‌য়  মহাভারত শান্তিপর্ব ১৭/১৯।‌। ১৭৬/৫৬ ।।  অথবা‌ ২৮২/৪ ।। এর উল্লেখ রয়েছে ।

২৩.
মৃচ্ছকটিক‌ নাটক‌ রচনাকারী শূদ্রক‌ যিনি ২০০ সনের‌ পূর্বে, তিনি তার স্বরচিত‌ নাটকে‌ মহাভারতের বিভিন্ন কাহিনীর সংকেত দিয়েছেন । তিনি  বিদ্বান এবং আর্য‌ রাজা‌ ছিলেন ।  [28]

২৪. 
শুঙ্গ বংশ প্রবর্তক সম্রাট পুষ্যমিত্রের [29] যাজ্ঞিক পুরোহিত আচার্য পত‌ঞ্জলি‌ তাঁর ব্যাকরণ‌ মহাভাষ্যে‌ কোনো পুরাতন‌ নাটকের একটি শ্লোকের উল্লেখ‌ করেছেন । [ 30]
যে‌ শ্লোক মহাভারতের একটি শ্লোকের‌ প্রতিধ্বনিমাত্র‌ ।  [ 31 ]  মহাভাষ্য‌ ৪/২/৬০ -এ আখ্যানের দৃষ্টান্ত হিসেবে তিনটি উদাহরণ দেওয়া হয়েছে - যাবক্রীতক, প্রৈয়ঙ্গবিক, যাযাতিক। 
এগুলোর‌ মধ্যে প্রথমটি মহাভারত বনপর্ব অধ্যায় ১৩৭ - ১৪১তম অধ্যায়ে পাওয়া যায় ।
তৃতীয়টিও‌ মহাভারত আদিপর্ব ৭১তম অধ্যায় থেকে আরম্ভ হয়েছে । এটি মৎস্য‌ পুরাণে‌ও রয়েছে ।

মহাভাষ্য‌ ৩/৩/১৬৭ - এ একটি শ্লোক " কালঃ পচতি‌ ভুতাতি‌ " এর উল্লেখ রয়েছে । এই শ্লোক ঠিক এইভাবে‌ই  মহাভারতেই আদিপর্ব ১/১৮৮ নং শ্লোকে পাওয়া যায় ‌।  মহাভাষ্য‌ ৪/১/৪৮ -এ উল্লেখিত একটি শ্লোকের সাথে মহাভারত বনপর্বের‌ ১/২৭ নং শ্লোকের মিল পাওয়া যায়‌ ।  মহাভাষ্যে এমন কিছু বচন‌ রয়েছে যা‌ দ্বারা‌ জ্ঞাত হ‌ওয়া যায় যে, মহর্ষি পতঞ্জলি মহাভারত‌ সম্পর্কে গভীর‌ পরিচিত‌ ছিলেন । [ 32 ]

২৫. 
মহাকবি ভাসের অনেক‌ নাটকে মহাভারতের বিভিন্ন ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায় ।  [ 33 ]

২৬.
আচার্য পাণিনি‌ ছিলেন খ্রিষ্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতকের অর্থাৎ আজ হতে প্রায় ২৬০০ বছর আগের। তাঁর এক সূত্রে তিনি মহাভারত শব্দের‌ উল্লেখ করেন। এতে বুঝা যায়
তিনি মহাভারতের অস্তিত্ব সম্পর্কে জ্ঞাত ছিলেন ।
তাঁর গণপাঠ অল্প পরিমাণে বিকৃত হয়েছে, কিন্তু অধিকাংশ‌ই অবিকৃত রয়েছে । তাঁর দ্বারা লিখিত অষ্টাধ্যায়ীর বিভিন্ন পদে মহাভারতের বিভিন্ন ব্যক্তিত্বের উল্লেখ পাওয়া যায় যার দ্বারা খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকেও মহাভারতের প্রচলন সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। রেফারেন্স সহকারে পাণিনির সেই সূত্রগুলোর উল্লেখ করা হলো-

🔸 বিশ্বক্‌সেনার্জুনৌ  ২/২/৩১।।   [ 35 ]
🔸 সাত্যকি ‌ ‌ ২/৪/৫৯ ।।
🔸 ভীমঃ ভীষ্মঃ ৩/৪/৭৪ ।।
🔸 কৃষ্ণ । সলক‌ । যুধিষ্ঠির । অর্জুন । সাম্ব ।  
      গদ‌ । প্রদ্যুম্ন । রাম ।  ৪/১/৯৬ ।।
🔸 জর‌ৎকার  ৪/১/১১২ ।।
🔸 কুরু  ৪/১/১৫১ ।।
🔸 কৌরব ৪/১/১৫৪ ।।
🔸 গাণ্ডীব ২/৪/৩১ ।।
🔸 শ্বাফল্কি  ২/৪/৬১ ।।  [36]
🔸 ক্ষেমবৃদ্ধিন  ৪/১/৯৬
🔸রুক্মিণী  ৪/১/১২৩ ।।
🔸 কিতব‌ ‌ ৪/১/১৫৪ ।।  [37]
🔸 আশো‌কেয় ৪/১/১৭৩ ।। 

২৭. 
আশ্বলায়ন‌ গৃহ্যসূত্রে যা খ্রিষ্টপূর্ব ৫ম-ষষ্ঠ শতকে রচিত তাতে ভারত‌ এবং মহাভারত দুটি‌ নামের‌ই উল্লেখ পাওয়া যায় । আশ্বলায়ন গৃহ্যসূত্র শৌনক‌ শিষ্য‌ আশ্বলায়ন কৃত ।  এতেও প্রমাণিত হয় খ্রিষ্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতকেও মহাভারতের প্রচলন ছিল।

এই প্রকারে পূর্বোক্ত‌ প্রমাণ‌ দ্বারা‌ লক্ষ্য‌ করা যায়‌ যে, মহারাজ বিক্রমের সময়কালের  আগে‌ হতে‌ ভারতের‌ বিভিন্ন আচার্যগণ‌ মহাভারতের ভিন্ন ভিন্ন পর্বের‌ শ্লোক‌ তাদের স্বরচিত‌ গ্রন্থে‌ উদ্ধৃত করেছেন । আচার্য দূর্গের মতানুসারে‌ মহর্ষি যাস্ক‌‌ও আখ্যান‌ সহিত মহাভারতের অস্তিত্ব জানতেন।

আর প্রাচীন ইতিহাসের এই প্রমাণগুলো বিশ্লেষণ পূর্বক অধ্যয়ন‌ করে মহাভারতের ঐতিহাসিক সত্যতা‌ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়।

🔅🔅 তথ্যসূত্র  🔅🔅

[1]  আলবেরুনীর ভারত, অধ্যায় ১২

[2] 
দ্বৈপায়নেন মুনিনা যদিদং ব্যধায়ি শাস্ত্রং সহস্রশতসম্মিতমত্র মোক্ষঃ
        ( ভগবদগীতা ভাষ্য, ভূমিকা শ্লোক ২ )

[3] 
বল্লভদেব এর‌ পুত্র‌ ছিলেন চন্দ্রাদিত্য এবং পৌত্র‌ কয্যট‌ । কয্যট‌ দেবীশতকের‌ বিবৃতিতে‌ তার‌ সময়কাল‌ ৪০৭৮ কলি সংবৎ অর্থাৎ ৯৭৬ সনের উল্লেখ করেছেন ।

[4] 
সপাদলক্ষং শ্রীমহাভারতম্ । ২ । ৩৮।‌। এতে‌ হরিবংশের‌ পাঠ‌ও পাওয়া যায়‌ ।

[5]   পৃষ্ঠা: ৭

[6] 
ভারতে তু ঋষয়ঃ শাপাৎস‌রস্বতীং মোচয়ামাসুরিত্যাব্যখ্যানম্‌ ।
             ( ঋগ্বেদভাষ্য‌ ১/১১২/৯ ।। সমতুল্য মহাভারত শল্যপর্ব, অধ্যায়: ৪৪ )

[7] 
পার্থরথপতোকেব বানরাক্রান্তা, পৃষ্ঠা: ৬৭ ।  বিরাটনগরীব কীচকশতাবৃতা, পৃষ্ঠা: ৬৭। ভীষ্মমিব শিখণ্ডিশত্রুম, পৃষ্ঠা: ১০৭ । পরাশরমিব যোজন‌গন্ধানুসারিণম্, পৃষ্ঠা: ১০৭, ১০৮ । মহাভারতে শকুনি বধঃ, পৃষ্ঠা ১৪৩ ।  মহাভারত-পুরাণ- রামায়ণানুরাগিণা, পৃষ্ঠা: ১৭৯ । আস্তীকতনুরিচ‌ আনন্দিতভুজঙ্গলোকাঃ, পৃষ্ঠা: ১৮২ । মহাভারতে দুঃশাসনাপরাধাকর্ণনম্, পৃষ্ঠা: ১৯৯ । মহাভারত-পুরাণেতিহাসরামায়ণেষু, পৃষ্ঠা: ২৬৩ । মহাভারতভিবানন্তগীতাকর্ণনানন্দিততরম্, পৃষ্ঠা: ৩১৪ । ইত্যাদি, কাদম্বরী, পূর্বভাগ, হরিদাসকৃত কলকাতা সংস্করণ,শক, ১৮৫৭ ।

বিবিধবীররসরামণীয়কেন মহাভারতমপি লংঘয়ন, ষষ্ঠ উচ্ছ্বাস, পৃষ্ঠা: ৬৩৯ । পাণ্ডবঃ সব্যসাচী চীনবিষয়মতিক্রম্য‌ রাজসূয়সম্পদে ক্রুধ্যদ্-গন্ধর্বধনুষ্কোটিটাঙ্কারকুজিতকুঞ্জং হেমকুটপর্বতং পরাজেষ্ট, সপ্তম উচ্ছ্বাস পৃষ্ঠা: ৭৫৮ । হর্ষচরিত জীবানন্দ সংস্করণ, কলিকাতা, সন‌ ১৯১৮ ।

[8]
নমঃ সর্ববিদ তস্মৈ ব্যাসায় কবিবেধসে ।
চক্রে‌ পূণ্যং সরস্বত্যা থো‌ বর্ষমিব ভারতম্ ।। ৪

[ 9 ]
প্রতাপশীল অর্থাৎ প্রভাকরবর্ধন ৬০৪ সনে পরলোক‌ গমন‌ করেছেন । তার সমকালীন বিশ্বরূপ তার‌ স্বরচিত‌ বালক্রীড়া গ্রন্থে‌ কুমারিলের শ্লোক উল্লেখ করেছেন ।

[10]
প্রসিদ্ধৌ হি তথা চাহ‌ পারাশয়ৌন্ন বস্তুনি। ২ ।।
ইদং পুণ্যমিদং‌ পাপম্ । শ্লোকবার্তিক ঔৎপত্তিকসূত্র ।

[ 11 ]  ৩/৫ ।। ৩/৭।। ৫/৩৯ ।। ৫/৪২ ইত্যাদি

[ 12 ]
ভারতাখ্যানমখিলং চক্রে‌ তদুপবৃংহিতম্  ।
লক্ষেণৌকেন‌ যৎপ্রোক্তং বেদার্থপরিবৃংহিতম্ ।। ৫৩ । ৭০ ।।

[ 13 ]
নালন্দার‌ আচার্য ধর্মপাল‌ ভর্তৃহরি রচিত
" পেহ‌-ন " প্রকীর্ণক ? এর উপর‌ টীকা লিখেছিলেন । ( ইৎসিঙ্গ, হিন্দী সংস্করণ, পৃষ্ঠা: ২৭৬ ) ধর্মপালের জীবনকাল‌ ৫৩৯-৫৭০ সন ।  তিনি ৩২ বছর বয়সে‌ গত হয়েছেন । (  Introduction to Vaisheshika Philosophy according to the Dashapadarthi Shastra  by H.Ui, 1917. P.10 ) অত‌এব ধর্মপাল ৫৭০ সনের‌ পূর্বে বাক্য‌পদীয় গ্রন্থের‌ উপর টীকা লিখেছিলেন ।

[ 14 ]  বাক্যপদীয় প্রথম‌কাণ্ড ৪০, ৪৩

[ 15 ] বৃহন্নলানুভাবোপি, পৃষ্ঠা: ২৩ । দুঃশাসনদর্শনং মহাভারতে, পৃষ্ঠা: ২৮ । কৌরবব্যূহ হব সুশর্মাধিষ্ঠিতঃ, পৃষ্ঠা: ৪৭ । ভীমোপি ন বকদ্বেষী, পৃষ্ঠা: ৮২ । ভারতসমরভুম্যেব, পৃষ্ঠা: ১১৩ । উত্তরগোগ্রহণ‌ সমরভুম্যেব বর্ধমানবৃহন্নলয়া, পৃষ্ঠা: ১১৮ ।
বিরাটলক্ষম্যেব আনন্দিতকীচকশতয়া, পৃষ্ঠা: ১২০ । কুরুসেনাভিব উলুকদ্রোণ‌ শকুনিসনাথাম্, পৃষ্ঠা: ৩১৬ ।

কৃষ্ণমাচার্য সংস্করণ । উপযুক্ত উদ্ধরণ সম্পাদক মহাশয়ের ভূমিকা পৃষ্ঠা: ২৩.২৪ থেকে নেওয়া হয়েছে ।

[ 16 ]
মহাভারত, শান্তি পর্ব,  ১৭/২০ ।। ১৫৯/১১  ।।

[ 17 ]
মহাভারত, শান্তি পর্ব,  ১৭৪/৪৬।। ১৭৭/৫১।। ২৭৭/৭ ।‌।

[ 18 ]  উল্লেখিত নির্ণীত সন পাশ্চাত্য লেখকদের অনুসারে ।

[ 19 ]  শতসাহস্রয়াং সংহিতায়াম্ । গুপ্ত শিলা-লেখ, ভাগ ৩, পৃষ্ঠা: ১৩৪ ।

[ 20 ]  নিরুক্ত ভাষ্য‌ ৪/১ -এ মহাভারত আদি পর্ব ১/৪৯ নং শ্লোকের‌ উদ্ধৃত রয়েছে । নিরুক্ত ভাষ্য‌ ৩/৪ -এ  সুভদ্রাহরণ‌ সম্বন্ধে ভগবান বাসুদেবকে বলা একটি বাক্যের উল্লেখ রয়েছে ।  আদিপর্ব ২৭৩/৪ ।‌। দূর্গ নিরুক্ত ভাষ্য‌ ৬/৩০ -এ উল্লেখ রয়েছে -- ইতি ভারতে‌ শ্রুয়তে‌ ।

[ 21 ]
  তথা‌ করোতি‌ সৈন্যানি যথা‌ কুর্য়াদ‌্‌ ধনঞ্জয়ঃ ।
  নিরুক্ত বৃত্তি ৩/১৩ ।।  ভীষ্মপর্ব ৫৫/৩৭।‌। নিরুক্ত  ৭/১৪ ।।

[ 22 ]  এষ‌ চাখ্যানসময়ঃ ৭/৭ এর উপর‌ দূর্গ লিখেন -- ভারতে চাখ্যানসময়ঃ । 

[ 23 ]

ব্যাসঃ কণাদ‌ ঋষভঃ কপিলশাক্যনায়কঃ ।
নির্বৃতে সম পশ্চাত্তু ভবিষ্যন্ত্যেবমাদয়ঃ ।। ৭৮৪ ।।

ময়ি‌ নির্বৃত বর্ষশতে‌ ব্যাসো‌ বৈ ভারতস্তথা ।
পাণ্ডবাঃ কৌরবা রাম পশ্চান্মৌরী ভবিষ্যতি ।।
                                                        ৭৮৫ ।।

মৌর্যা নন্দাশ্ব গুপ্তাশ্চ ততো‌ ম্লেচ্ছা নৃপধমাঃ ।
ম্লেচ্ছান্তে শস্ত্রসংক্ষোভঃ শস্ত্রান্তে চ‌ কলিযুগঃ ।।
                                                      ৭৮৬ ।।

এই গাথার‌ চীন ভাষায় অনুবাদ ৫১৩ সনে করা হয় ।  Perface, The Lankavatara Sutra, Kyoto, 1923, pp. VIII, IX.

[ 24 ]  ২/৩৬ ।‌। ২/৪২ ।।

[ 25 ]
কথা. স. সাগর‌ ‌‌ ‌ ‌ ‌ ‌ ‌ ‌ ‌ ‌ ‌ ‌ ‌ ‌ ‌ ‌ ‌ ‌ ‌ ‌ ‌  ‌ ‌মহাভারত

রুকমুনি‌ কথা ১৪/৭৬‌ ‌ ‌ ‌ ‌ ‌ ‌ ‌ ‌ ‌ ‌   ‌আদিপর্ব অ. ১

সুন্দোপসুন্দ কথা ১৫/১৩৫ ‌ ‌ আদিপর্ব ‌        
                                                    অ.২০১

কুন্তি-দুর্বাসা কথা ১৬/৩৬ ‌       আদিপর্ব    ‌   
                                                     অ.১১৩/৩২

পাণ্ডু-মুনিবধ‌ ২৭/২০  ‌‌ ‌ ‌ ‌ ‌ ‌ আদিপর্ব অ.১০৯

শুকুন্তলা ৩২/১০৮  ‌ ‌ ‌‌ ‌ ‌ ‌ ‌ ‌ ‌ ‌ ‌ ‌ ‌ ‌আদিপর্ব অ. ৬২

                             ইত্যাদি ‌

[ 26 ] 
বুদ্ধ চরিত ১/৪২ ।। ১/৪৫ ।।  ৪/৭৬।।  ৪/৭৯ ।।  ১১/১৫ ।।  ১১/১৮।।  ১১/৩২।।

সৌন্দরনন্দ ৭/২৯।।  ৭/৩১।। ৭/৩৮।।  ৭/৪১।।   ৭/৪৪ ।। ৯/১৮ ।। ৯/২০ ।।

[27] মহাভারত শল্য‌ পর্ব অধ্যায় ৫২ ।

[ 28 ] 

এষোহং গৃহীত্বা কেশহস্তং দুঃশাসনস্যানুকৃতিং করোমি । ১/২৯ ।।

মার্গৌ হ্যোষ নরেন্দ্রসৌপ্তিকবধে‌ পূর্ব কৃতো‌ দ্রৌণিনা‌ ।  ৩/১১ ।।

অক্ষধুতজিতো‌ যুধিষ্ঠিরঃ  । পাণ্ডবা হব‌ বনাদজ্ঞাতচর্যা‌ গতাঃ ।  ৫/৬ ।।

ভীমস্যানুকরিষ্যামি বাহুঃ শস্ত্রং ভবিষ্যতি‌ । ৬/১৭ ।।

[ 29 ] 
পতঞ্জলি‌ কত‌ সুন্দর‌ শৈলীতে পুষ্যমিত্রের উল্লেখ করেছেন --

মহীপালবচঃ শ্রুত্বা‌ জুঘুষুঃ পুষ্যমাণবাঃ ।
এষ‌ প্রয়োগ‌ উপপন্নো‌  ভবতি‌  ।৭।২।২৩ ।।

[ 30 ]
যস্মিন্দশ সহস্রাণি‌ পুত্রে জাতে‌ গবাং দদৌ‌ ।
ব্রাহ্মণেভ্যঃ প্রিয়ারখ্যেভ্যঃ সোয়মুঞ্ছেন জীবতি  ।। ইতি ১/৪/৩ ।।

[ 31 ]
যস্মিঞ্জতে‌ দদৌ‌ দ্রোণো গবাং দশশতং ধনম্ ।
ব্রাহ্মণেভ্যো মহাহেভ্যঃ সোশ্বত্থামৈষ গর্জতি ।।
                                    দ্রোণ‌ পর্ব ১৯৭/৩১ ।।
[ 32 ] ধর্মেণ স্ম কুরবো‌ যুধ্যন্তে । ৩/২/১২২ ।।  
[ 33 ]  পঞ্চরাত্র, দূত‌বাক্য, মধ্যমব্যাযোগ, দুতঘটোৎকচ‌, কর্ণভার এবং উরুভংগ‌ ।
[34]
মহান‌ ব্রীহি-অপরাহ্য-গৃষ্টি-ইষ্বাস-জাবাল-ভার-ভারত-হৈলিহিল-রৌরব-প্রবৃদ্বেষু । ৬/২/৩৮।।
[ 35 ]  কৃষ্ণার্জুন
[ 36 ]  অক্রুর‌
[ 37 ]  শকুনি‌

Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)