দৈনিক বেদবাণী


এই সমগ্র সংসার নিরোগ এবং শুভচিন্তা যুক্ত হোক । যজুর্বেদ ১৬.৪                    সূর্য-এর আলোয় স্বয়ং আলোহীন চাঁদ আলোকিত হয় । ঋগ্বেদ ৫.৪০.৫                    প্রশংসনীয় সংস্কৃতি, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও মাতৃভূমি— এই ত্রয়ী সুখ-সমৃদ্ধি প্রদান করে। ঋগ্বেদ ১.১৩.৯                    উত্তম জীবন লাভের জন্য আমাদের জ্ঞানীদের সাহচর্যে চলা উচিৎ। ঋগ্বেদ ১.১২.১৬                    যে ব্যক্তি সম্পদ বা সুখ বা জ্ঞান নিঃস্বার্থভাবে দান করে, সে-ই প্রকৃত মিত্র। ঋগ্বেদ ২.৩০.৭                    মানুষ কর্ম দ্বারাই জগতে মহত্ত্ব ও প্রসিদ্ধি লাভ করে। ঋগ্বেদ ৩.৩৬.১                    হে পতি! তোমার স্ত্রীই গৃহ, স্ত্রীই সন্তানের আশ্রয়। ঋগ্বেদ ৩.৫৩.৪                    পরমাত্মার নিয়ম বিনষ্ট হয় না; তা অটুট, অচল ও অপরিবর্তনীয়। ঋগ্বেদ ৩.৫৪.১৮                    এই ধর্মের মার্গই সনাতন, এই পথে চলেই মানবগণ উন্নতি লাভ করে। ঋগ্বেদ ৪.১৮.১                    পরমাত্মার নিকট কোনো মানুষই বড় বা ছোট নয়। সকল মানুষই সমান এবং পরস্পরের ভ্রাতৃস্বরূপ। ঋগ্বেদ ৫.৬০.৫                    যে ব্যক্তি অকারণে অন্যের নিন্দা করে, সে নিজেও নিন্দার পাত্র হয়। ঋগ্বেদ ৫.২.৬                    নিশ্চিতরূপে এই চতুর্বেদ কল্যাণপ্রদায়িনী এবং মানবকে জ্ঞান প্রদান করে ধারণকারিণী। ঋগ্বেদ ৫.৪৭.৪                    বীর মানবের জন্য পর্বতও সুগম হয়ে যায়। ঋগ্বেদ ৬.২৪.৮                    আমরা অন্যের সঞ্চিত পাপের কর্মফল ভোগ করি না। ঋগ্বেদ ৬.৫১.৭                    হে মিত্রগণ! ওঠো— উদ্যমী হও, সাবধান হও এবং এই সংসাররূপী নদীকে অতিক্রম করো। ঋগ্বেদ ১০.৫৩.৮







আমাদের ধর্মের নাম সনাতন ধর্ম কেন ? বেদে কি এই নাম রয়েছে ?

অমৃতস্য পুত্রা
0


🔥 আমাদের ধর্মের নাম সনাতন ধর্ম কেন ? 
বেদে কি এই নাম রয়েছে ? 
সনাতন ধর্মের প্রবর্তক কে ? 🔥

✅ ধর্ম একটাই সেটা হচ্ছে সনাতন । আমাদের ধর্ম , তোমাদের ধর্ম বলে আদতে কিছু নেই । ধর্ম এই মহাবিশ্বে একটাই আর ধর্ম সবসময় ই সনাতন । সনাতন শব্দের অর্থ চিরন্তন । যা আগে ছিল , এখনও আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে তাই সনাতন ।

👉 মহাভারতের শান্তিপর্বে বলা হয়েছে - 


ধারণাদ্ ধর্মম্ ইত্যাহুর্ধর্মেণ বিধৃতাঃ প্রজাঃ।
যঃ স্যাদ্ ধারণসংযুক্তঃ স ধর্ম ইতি নিশ্চয়।।
মহাভারত শান্তিপর্ব ১০৬.১৫

অনুবাদঃ ধারণ ক্রিয়া থেকে ধর্ম শব্দের উৎপত্তি । ধর্ম সৃষ্টিকে বিশেষভাবে ধারণ করে আছে । সংক্ষেপে যা কিছুই ধারণ শক্তি সম্পন্ন তাই ধর্ম ।
[ মহাভারত - গীতাপ্রেস সংস্করণ (৫ম খণ্ড) ; অনুবাদকঃ পণ্ডিত রামনারায়ণ দত্ত শাস্ত্রী পাণ্ডেয় ' রাম ' ] 

☑️ সনাতন ধর্ম কি?

সনাতন শব্দে শাশ্বত, চিরন্তন অর্থাৎ অপরিবর্তনশীল বুঝায়। সনাতন কোন জাতিবাচক শব্দ নয়, বরং প্রাণীমাত্রের ধর্মই হচ্ছে সনাতন। সনাতনকে বুঝতে গেলে প্রথমে তিনটি বিষয়ে জানা দরকার, (১) নতুন, (২) পুরাতন ও (৩) সনাতন। যেমনঃ (১) নতুন= যা পূর্বে ছিলনা কিন্তু বর্তমানে প্রাপ্ত, তাই নতুন। (২) পুরাতন= নতুনের বিপরীত শব্দ পুরাতন অর্থাৎ যা বর্তমানে নতুন কিন্তু কিছুদিন পর জীর্ণ হয় তাই পুরাতন। (৩) সনাতন= যা নতআবার পুরনোও নয়, তাই সনাতন। যেমনঃ মূল প্রকৃতি, আত্মা ও পরমাত্মা, আবার এভাবেও বুঝতে পারেন যদিও মূল প্রকৃতি থেকে দৃশ্যমান সমস্ত কিছুর সৃষ্টি। যেমনঃ চম্বুকের ধর্ম আকর্ষণ করা, তা পূর্বে যেমন ছিল, বর্তমানেও তাই আছে, আর প্রলয়ের পূর্ব পর্যন্ত তাই থাকবে, এমন নয় যে পূর্বে আকর্ষণ করতো আর এখন করেনা । সূর্য আলো প্রদান করে, বর্তমানেও তাই, আর প্রলয়ের পূর্ব পর্যন্ত একই থাকবে, এমন নয় যে পূর্বে আলো প্রদান করতো আর এখন করেনা ইত্যাদি। যে ধর্মের কখনো বিনাশ বা পরিবর্তন হয়না তাই সনাতন ধর্ম। সনাতন মানবতার ধর্ম, তাই পবিত্র বেদ বলছে, “কৃণ্বন্তো বিশ্বমার্যম্" [ঋগ্বেদ ৯.৬৩.৫] অর্থাৎ বিশ্বের সকলকে আর্য্য অর্থাৎ শ্রেষ্ঠ কর। “মনুর্ভব জনয়া দৈবম্ জনম্" [ঋগ্বেদ ১০.৫৩.৬] অর্থাৎ প্রকৃত মানুষ হও, অন্যকেও মানুষ হিসেবে গড়ে তোল। এক্ষনে ধর্মের বিষয়ে আলোকপাত করা যাক।

☑️এখানে হয়তো কেউ এমনটা প্রশ্ন করতে পারেন, “ধর্ম কি সম্প্রদায় ভিত্তিক? তা নাহলে ধর্মের নাম সনাতন কেন?

 - অত্যন্ত যৌক্তিক প্রশ্ন । ধর্মের নাম সনাতন কেন? তা প্রথম প্রশ্নেই উত্তর প্রদান করা হয়েছে। ধর্ম কখনো জাতি, গোষ্ঠী, সম্প্রদায়, দেশ-কাল পাত্রভেদে হয়না, ধর্ম সকলের জন্য। আমরা মানব সকল যদি একটাই জাতি হই, তবে কিকরে প্রত্যেকের আলাদা ধর্ম হতে পারে? আপনি যেমন মাকে মা বলেন, ঠিক অন্যেও তাই বলে, হয়তো শব্দগত কিছু পার্থক্য হতে পারে, তা অন্য কথা। অতএব ধর্ম কখনো সম্প্রদায় ভিত্তিক নয়, সকলের জন্য একই। ধর্ম হচ্ছে ঈশ্বরীয় ব্যবস্থা। মনুষ্য দ্বারা সংস্থাপিত, প্রবর্তিত বা প্রচলিত নয়। এই সত্যটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, ধর্মের কখনোও পরিবর্তন হয়না। জলে কাষ্ঠ ভেসে থাকা - কাষ্ঠের ধর্ম, চুম্বকের ধর্ম আকর্ষণ করা, আগুনের ধর্ম উত্তাপ প্রদান করা, ইত্যাদি। এখন চিন্তা করে দেখুন, এসব এসব ধর্মগুলি পশুপাখি না মানুষের, কিংবা কোন মনুষ্য দ্বারা তাই সে যত বড় গুরু, সাধু বা যোগীপুরুষ হোন না কেন, সংযুক্ত হয়েছে? আপনি বলবেন- না, সেটা কেউ করতে পারে না, এমন ঘটনা কোন কালে, কোন দেশে ঘটেনি। মনুষ্য ধর্ম সৃষ্টি করেছেন এমন কখনোও হতে পারে না। অতএব ধর্মের মহান সিদ্ধান্ত সার্বকালিক, সার্বদেশিক, সৃষ্টি নিয়মানুগ, বেদ ও ঈশ্বরীয় অভিপ্রেত।

▶️ ধর্মের স্বরূপ→
ব্যাকরণের পরিভাষায় “ধৃঞ্-ধারণে” ধাতুর দ্বারা “অর্তিস্তু সুহুস্টধৃ" [উনাদি ১।১৪০] সূত্র হতে প্রাপ্ত 'মন্' প্রত্যয় যোগে ধর্ম শব্দ সিদ্ধ হয়। “ধারণাৎ ধর্মম্ ইত্যাহুঃ" “ধ্রিয়তে অনেন লোকঃ" আদি বুৎপত্তি অনুসারে, 'যা আত্মোন্নতি এবং উত্তম সুখের জন্য ধারণ করা হয়' অথবা যার দ্বারা লোকসকল ধারণ করে অর্থাৎ ব্যবস্থা বা মর্যাদায় স্থিত করা হয়, তাকেই ধর্ম বলে। এই প্রকারে আত্মার উন্নতি করে এমন, মোক্ষ বা উত্তম ব্যবহারিক সুখ প্রদানকারী সদাচরণ, কর্তব্য অথবা শ্রেষ্ঠ নিয়ম-কানুন বিধানই ধর্ম । মনুস্মৃতি শাস্ত্রে ধর্মকে ব্যাপক অর্থ গ্রহণ করা হয়েছে। স্থুলরূপে তা দুই অর্থে গ্রহণ করা যায়।

(১) মূখ্য অর্থ (আধ্যাত্মিক উদ্দেশ্য সাধক)
(২) গৌণ অর্থ (লৌকিক ব্যবহার সাধক)

(১) আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রে আত্মার উপকারক,নিঃশ্রেয়সসিদ্ধি অর্থাৎ মোক্ষ প্রাপ্তিকরণ আচরণকেই ধর্ম বলে। ইহাই ধর্মের মূখ্য উদ্দেশ্য। ইহা সার্বভৌমিক, সার্বকালিক ও সর্বজনীন, যা কখনোই ত্যাজ্য নয়। ইহার প্রতিপাদন করাই ধর্মশাস্ত্রের মূখ্য উদ্দেশ্য । মহর্ষি মনুকৃত ধর্মের বর্ণন→

ছয় নিঃশ্রেয়সকর কর্ম→

বেদাভ্যাসস্তপোজ্ঞানমিন্দ্রিয়াণাং চ সংয়মঃ ।
ধর্মক্রিয়াহত্মচিন্তা চ নিঃশ্রেয়সকরং পরম্ ॥
মনুস্মৃতি ১২.৮৩

অনুবাদঃ (বেদাভ্যাসঃ, তপঃ, জ্ঞানম্, ইন্দ্রিয়াণাম্ সংযমঃ, ধর্মক্রিয়া, চ আত্মচিন্তা) বেদধ্যয়ন [১২.৯৪-১০৩], তপ= ব্রত সাধনা [১২.১০৪], জ্ঞান= সত্যবিদ্যার প্রাপ্তি [১২.১০৪], ইন্দ্রিয় সংযম [১২.৯২], ধর্মক্রিয়া= ধর্মপালন ও যজ্ঞাদি ক্রিয়ার অনুষ্ঠান এবং আত্মচিন্তা= পরমাত্মার জ্ঞান এবং ধ্যান, এই ছয় (নিঃশ্রেয়সকরম্ পরম্) মোক্ষ প্রদানকারী সর্বোত্তম কর্ম । 
[ মনুস্মৃতি - ভাষ্যকারঃ ড. সুরেন্দ্র কুমার, আর্যসমাজ ] 

নিম্ন প্রমাণ হতেও উক্ত অর্থ সিদ্ধ হয় - 

ধর্ম সঞ্চয়ের বিধান এবং প্রশংসা→

ধর্ম শতৈঃ সঞ্চিনুয়াদ্বল্মীকমিব পুত্তিকাঃ।
পরলোকসহায়ার্থং সর্বভূতান্যপীড়য়ন্॥
মনুস্মৃতি ৪.২৩৮

অনুবাদঃ (পুত্তিকা বল্মীকম্+ইব) যেভাবে পুত্তিকা বল্মীক তৈরী করে তেমনই (সর্বলোকানি অপীড়য়ন্) কাউকে পীড়া না দিয়ে (পরলোক-সহায়ার্থম্) পরলোকের সুখার্থ (শতৈঃ ধর্মম্ সঞ্চিনুয়াৎ) ধীরে ধীরে ধর্মের সঞ্চয় করো। 
[ মনুস্মৃতি - ভাষ্যকারঃ ড. সুরেন্দ্র কুমার, আর্যসমাজ ] 

তস্মাদ্ধর্মং সহায়ার্থং নিত্যং সংচিনুয়াচ্ছনৈঃ।
ধর্মেণ হি সহায়েন তমস্তরতি দুস্তরম্॥
মনুস্মৃতি ৪.২৪২

অনুবাদঃ (তস্মাৎ) সেই কারণে (সহায়ার্থম্) পরলোক অর্থাৎ পরজন্মে সুখ এবং জন্মের সহায়ার্থ (নিত্যম্ ধর্মম্ শতৈঃ সঞ্চিনুয়াৎ) নিত্য ধর্মের সঞ্চয় ধীরে ধীরে করবে (হি) কারণ (ধর্মেণ সহায়েন) ধর্মের সহায়ে (দুস্তরম্ তমঃ তরতি) দুস্তর দূঃখসাগরকে জীব অতিক্রম করেন।
[ মনুস্মৃতি - ভাষ্যকারঃ ড. সুরেন্দ্র কুমার, আর্যসমাজ ] 

✅ ধর্মের দশ লক্ষণ→
ধৃতিঃ ক্ষমা দমোঽস্তেয়ং শৌচং ইন্দ্রিয়নিগ্রহঃ ।
ধীর্বিদ্যা সত্যং অক্রোধো দশকং ধর্মলক্ষণম্ ॥
মনুস্মৃতি ৬.৯২

অনুবাদঃ 
১. (ধৃতিঃ)কষ্ট বা বিপদ এ ধৈর্য রাখা এবং দুঃখী ও বিচলিত না হওয়া তথা ধর্ম পালনের ক্ষেত্রে কষ্ট আসা সত্ত্বেও ধৈর্য রেখে পালন করতে থাকা, 
২. (ক্ষমা) ধর্ম পালন এর জন্য নিন্দা,মান অপমান প্রভৃতি সহ্য করা , 
৩. (দমঃ) ইর্ষা,লেভ, মোহ,বৈর প্রভৃতি অর্ধম গুলো কে সংকল্প ও বিচারের দ্বারা মন কে নিয়ন্ত্রণ করে রাখা, 
৪. (অস্তেয়ম্) চুরি, ডাকাতি, মিথ্যা, ছল-কপটতা, অসৎচারণ, অন্যায়, অধর্মাচারণ হয় এরকম কোন বস্তু, ধন ইত্যাদি না নেওয়া, 
৫.(শৌচম্) শরীর আর মন পবিত্র রাখা, 
৬. (ইন্দ্রিয়নিগ্ৰহঃ) ইন্দ্রিয়ের নিজের নিজের বিষয়ের অধর্ম এবং আসক্তি থেকে মুক্ত রাখা, 
৭.(ধীঃ) বুদ্ধির উন্নতি করা, মননশীল হয়ে বুদ্ধিবর্ধক উপায় বের করা , এবং বুদ্ধিনাশক ধ্বংস ইত্যাদি না করা, 
৮. (বিদ্যা) সত্যবিদ্যা এর প্রাপ্তির জন্য অধিক যত্নবান হয়ে বিদ্যা এবং জ্ঞানের উন্নতি করা, 
৯.(সত্যম্) মন, বচন, কর্ম কে সত্য মানা, সত্যভাষণ, সত্যাচরণ করা, আত্মবিরুদ্ধ মিথ্যাচার না করা, 
১০. (অক্রোধঃ ) ক্রোধপূর্ণ ব্যবহার এবং প্রতিশোধের ভাবনা ত্যাগ করে শান্তির ইত্যাদি গুণ গ্ৰহণ করা

- (দশকং ধর্মলক্ষণম্) এই দশটি হল ধর্মের লক্ষণ। এই গুনগুলো হল ধর্মপালনের পরিচয় এবং যে মানুষ ধার্মিক, সে এই লক্ষনগুলো সিদ্ধ করে। এটাই হল ধর্মের সর্বপ্রামাণ্য দশ লক্ষণ ।
[ মনুস্মৃতি - ভাষ্যকারঃ ড. সুরেন্দ্র কুমার, আর্যসমাজ ] 

(২) ব্যবহারিক ক্ষেত্রে, ত্রিবিধ= আধ্যাত্মিক, মানসিক ও শারীরিক উন্নতি ঘটায়, মানবতা এবং দেবত্বের বিকাশ ঘটায়, উত্তম সুখকারী শ্রেষ্ঠ ব্যবহারিক কর্তব্য, মর্যাদা এবং বিধানই (নিয়ম-কানুন) ধর্ম। এ ব্যবহারিক ক্ষেত্রে হওয়ার কারণ কর্ম, দেশ-কাল পরিস্থিতি বশতো কিছু পরিবর্তনও এসে যায়। নিম্নে সংক্ষিপ্ত প্রমাণ দ্রষ্টব্য→

☑️সত্য তথা প্রিয়ভাষণ করবে→

সত্যং ব্রূয়াৎপ্রিয়ং ব্রূয়ান্ন ব্রূয়াৎসত্যং অপ্রিয়ম্ ।
প্রিয়ং চ নানৃতং ব্রূয়াদেষ ধর্মঃ সনাতনঃ ॥
মনুস্মৃতি ৪.১৩৮

অনুবাদঃ মনুষ্য (সত্যং ব্রূয়াৎ প্রিয়ং ব্রূয়াৎ) সদা সত্য বলবে ও তা প্রিয় অর্থাৎ মধুর, শিষ্ট এবং হিতকর রূপে বলবে (সত্যম্ +অপ্রিয়ং ন ব্রূয়াৎ) সত্যকথনও অপ্রিয় ও অহিতকর ভাবে যেন না বলে [ যেমন অন্ধকে অন্ধ , পঙ্গুকে পঙ্গু না বলে ] (চ) এবং (প্রিয়ং অনৃতং ন ব্রূয়াৎ) প্রিয় বা হিতকর মিথ্যাও যদি হয় তবে তা বলবে না অর্থাৎ অপরের চাটুকারিতা ও প্রসন্নতার জন্য মিথ্যা বলবে না , (এষঃ সনাতনঃ ধর্মঃ) এটিই সনাতন ধর্ম । 
[ মনুস্মৃতি - ভাষ্যকারঃ ড. সুরেন্দ্র কুমার, আর্যসমাজ ] 

☑️পতি-পত্নী আমরণ একসাথে থাকবে→

অন্যোন্যস্যাব্যভিচারো ভবেদামরণান্তিকঃ ।
এষ ধর্মঃ সমাসেন জ্ঞেয়ঃ স্ত্রীপুংসয়োঃ পরঃ ॥
 মনুস্মৃতি ৯.১০১

অনুবাদঃ (আমরণান্তিকঃ) মরণ পর্যন্ত (অন্যোন্যস্য+অব্যভিচারঃ ভবেন) পতি-পত্নী পরষ্পর কোনও প্রকারের ধর্ম উলঙ্ঘন এবং বিচ্ছেদ না হয় (সমাসেন) সংক্ষেপে (স্ত্রীপুংসয়োঃ) স্ত্রী পুরুষের (এষঃ পরঃ ধর্মঃ জ্ঞেয়ঃ) ইহাই সাররূপ মূখ্য ধর্ম।
[ মনুস্মৃতি - ভাষ্যকারঃ ড. সুরেন্দ্র কুমার, আর্যসমাজ ] 

☑️ কখনো বিচ্ছেদ করবে না→

তথা নিত্যং যতেয়াতাং স্ত্রীপুংসৌ তু কৃতক্রিয়ৌ ।
যথা নাভিচরেতাং তৌ বিযুক্তাবিতরেতরম্ ॥
মনুস্মৃতি ৯.১০২

অনুবাদঃ (কৃতক্রিয়ৌ স্ত্রীপংসৌ) বিবাহিত স্ত্রী পুরুষ (নিত্যম্ তথা যতেয়াতাম্) সদা এমন যত্ন করে (যথা তৌ) যেন কোনও প্রকারে (তৌ) তারা (এতরেতরম্) পরষ্পরকে (বিযুক্তৌ ন+অভিচরেতাম্) ত্যাগ না করে= সম্বন্ধবিচ্ছেদ যেন না করে।
[ মনুস্মৃতি - ভাষ্যকারঃ ড. সুরেন্দ্র কুমার, আর্যসমাজ ] 

☑️ দণ্ডসাধন ও উপযোগ বিধি→

তস্যার্থে সর্বভূতানাং গোপ্তারং ধর্মং আত্মজম্ ।ব্রহ্মতেজোময়ং দণ্ডং অসৃজৎপূর্বং ঈশ্বরঃ ॥
মনুস্মৃতি ৭.১৪

অনুবাদঃ (তস্য+অর্থে) সেই রাজার জন্য (পূর্বম্) সৃষ্টির প্রারম্ভেই (ঈশ্বরঃ) ঈশ্বর (সর্বভূতানাম্ গোপ্তারম্) সকল প্রাণির পালনকর্তা (ব্রহ্মতেজোময়ম্) ব্রহ্মতেজোময় অর্থাৎ শিক্ষাপ্রদ এবং অপরাধনাশক গুণযুক্ত (ধর্মাত্মজম্) ধর্মস্বরূপাত্মক (দণ্ডম্+অসৃজৎ) দণ্ড বিধানের ব্যবস্থা করেছেন।
[ মনুস্মৃতি - ভাষ্যকারঃ ড. সুরেন্দ্র কুমার, আর্যসমাজ ] 

✴️ দর্শনশাস্ত্রে ধর্মের স্বরূপকে উত্তম প্রকারে সুস্পষ্ট করা হয়েছে। সেই অনুসারে ধর্মের পরিভাষা নিন্মরূপ→ 

👉
যতোঽভ্যুদয়নিঃশ্রেয়সসিদ্ধিঃ স ধর্মঃ॥
বৈশেষিক দর্শন ১.১.২
পদার্থঃ (যতোঃ) যা দ্বারা (অভ্যুদয়ঃ) অভ্যুদয় (নিঃশ্রেয়সসিদ্ধিঃ) নিঃশ্রেয়স সিদ্ধি হয় (সঃ ধর্মঃ) তা-ই ধর্ম।
[ ভাষ্যকারঃ আচার্য উদয়বীর শাস্ত্রী, আর্যসমাজ ]

অর্থাৎ যা দ্বারা পদার্থ সমূহের যথাযথ জ্ঞান ও তার প্রয়োগ দ্বাএয়া উন্নতি সিদ্ধ হয় তাই ধর্ম । মনুবাক্যে আমরা দেখেছি বেদমাতা পদার্থসহ সকল বিদ্যার মূলস্রোত ও প্রেরণাদানকারিণী । এজন্যই পরের সূত্রেই বলা হয়েছে -

তদ্বচনাদাম্নায়স্য প্রামাণ্যম্ 
বৈশেষিক ১.১.৩
পদার্থঃ ( তৎ) সেই ( বচনাৎ) বচন থেকে ( আম্নায়স্য) আম্নায় = বেদের ( প্রামাণ্যম্) প্রামাণিকতা রয়েছে । 
[ ভাষ্যকারঃ আচার্য উদয়বীর শাস্ত্রী, আর্যসমাজ ]

👉
চোদনালক্ষণোঽর্থো ধর্মঃ।
পূর্বমীমাংসা ১.১.২
পদার্থঃ (চোদনালক্ষণঃ) চোদনা = নোদনা = প্রেরণা, যার লক্ষণ - সাধন এবং (অর্থঃ) অর্থ = বেদ শাস্ত্র প্রতিপাদিত বা বোধিত বিষয় , তাহাই (ধর্মঃ) ধর্ম।
[ ভাষ্যকারঃ আচার্য উদয়বীর শাস্ত্রী, আর্যসমাজ ]

✅এই যে ধর্ম সবসময় সনাতন হয়, এই জ্ঞানটি ঈশ্বর আমাদেরকে প্রেরণ করেছিলেন যে আদি গ্রন্থের মাধ্যমে তার নাম হলো বেদ । বেদ জ্ঞান হল অনাদি এবং দেশ, কালের বন্ধনের দ্বারা বাঁধা নয়। সবার জন্য এবং সব যুগের জন্য। আর তাই বেদে যে ধর্মের বিবৃতি করা হয়েছে তাকেই সনাতন ধর্ম বলে । পবিত্র অর্থববেদের মন্ত্রে এই কথাটিই বলা হয়েছে -

ভোগ্য ভবদথো অন্নমদদ্বহু ।
যে দেবমুতরাবন্তমুপাসতৈ সনাতনম্ ।।
অথর্ববেদ ১০.৮.২২

অনুবাদঃ সেই মানব (ভোগ্যঃ) [সুখদ্বারা ] অনুভবযোগ্য (ভবৎ) হবে (অথো) এবং আরো (বহু) বিবিধ (অন্নম্) অন্ন [জীবনসাধন] (অদৎ) ভোগ করবে ; (যঃ) যে [মনুষ্য] (উত্তরবন্তম্) অতি উত্তম গুণযুক্ত (সনাতনম্) সনাতন [নিত্য স্থায়ী] (দেবম্) দেব [স্তুতিযোগ্য পরমেশ্বর]কে (উপাসাতৈ) উপাসনা করবে । 
[ ভাষ্যকারঃ পণ্ডিত ক্ষেমকরণ দাস ত্রিবেদী, আর্যসমাজ ]
অর্থাৎ সেই সনাতন পরমেশ্বরকে স্মরণকারী ব্যক্তি উত্তম ভোক্তা ও সুদীর্ঘকাল পর্যন্ত অন্ন আদিকে প্রাপ্ত করে পুষ্ট হয়ে থাকে।

✅পরের মন্ত্রে বলা হচ্ছে-

সনাতনমেনমাহুরুতাদ্য স্যাপ্তুনর্ণবঃ ।
অহোরাত্রো প্রজায়েতে অন্যো অন্যস্য রূপয়ো ।।
অথর্ববেদ ১০.৮.২৩

অনুবাদঃ (এনম্) এই [সর্বব্যাপক]-কে (সনাতনম্) সনাতন [নিত্য স্থায়ী পরমাত্মা] (আহুঃ) তিনি [বিদ্বান্] বলেন , (উত) এবং তিনি (অদ্য) আজ [প্রতিদিন] (পুনর্ণবঃ) নিত্য নব (স্যাৎ) হয়ে থাকেন । (অহোরাত্রে) দিন ও রাত্রি উভয়ে (অন্যো অন্যস্য) একে অপরের (রূপয়োঃ) দ্বিবিধ রূপ দ্বারা (প্র জায়েতে) উৎপন্ন হয়ে থাকে।
[ ভাষ্যকারঃ পণ্ডিত ক্ষেমকরণ দাস ত্রিবেদী, আর্যসমাজ ]

অর্থাৎ রাত দিনের এই চক্র সেই সৃষ্টির আদি হতেই চলছে। তারপরেও প্রতিটি দিন, প্রতিটি রাত আমাদের কাছে নতুনের মতো লাগে। ঠিক তেমনি অনাদি অনন্ত সনাতন হয়েও ঈশ্বর সবসময় নবীন।

🔥🌼ঋগ্বেদ ১.১০২.৮ এ সনাতনের সংক্ষিপ্ত রূপ হিসেব সনাৎ শব্দটি আমরা দেখি ' অতীদং বিশ্বং ভুবনং ববক্ষিথাশত্রুরিন্দ্র জনুষা সনাদসি ' । ' সনাদসি ' পদটিকে ভাঙলে পাওয়া যায় সনাৎ+অসি । মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী যার ভাষ্যে লিখেছেন ' (সনাৎ) সনাতনাৎ কারণাৎ (অসি) ভবসি ' অর্থাৎ পরমেশ্বরই জগতের সনাতন কারণ । এছাড়াও ঋগ্বেদের ১ম মণ্ডলের ৬২ সংখ্যক সূক্তের ৮ , ১০-১৩ মন্ত্রসহ ১.১০২.৮ এর মূল পাওয়া যায় । 

✅আর সেই সনাতন পরমব্রহ্মের দেয়া সনাতন জ্ঞানবাণী হলো পবিত্র বেদ। এই উপলক্ষে কয়েকটি মন্ত্র পড়েই বেদে আবার বলা হচ্ছে -

অন্তি সন্তং ন জহাত্যন্তি সন্তং ন পশ্যতি। 
দেবস্য পশ্য কাব্যং ন মমার ন জীর্যতি ॥
অথর্ববেদ ১০.৮.৩২
অনুবাদঃ ( অংতি সন্ত ) সমীপবর্তী পরমাত্মাকে ( ন পশ্যতি) দেখে না ( অন্তি সন্ত ) , সমীপবৰ্তী পরমাত্মাকে ( ন জহাতি ) ছাড়েও না ( দেবস্য কাব্য ) ঈশ্বরের কাব্য বেদকে ( পশ্য ) দেখো ; [ সেটি ] ( ন মমার ) মরে না ( ন জীৰ্যতি ) জীর্ণও হয় না । 
[ ভাষ্যকারঃ পণ্ডিত ক্ষেমকরণ দাস ত্রিবেদী, আর্যসমাজ ]

অর্থাৎ পরমাত্মা যেমন সনাতন, তার বেদবাণীও সনাতন, বেদ কখনো জীর্ণ হয়না।

✅শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় বলা হয়েছে - 

ত্বমক্ষরং পরমং বেদিতব্যং ত্বমস্য বিশ্বস্য পরং নিধানম্ । 
ত্বমব্যয়ঃ শাশ্বতধর্মগোপ্তা সনাতনস্ত্বং পুরুষো মতো মে ।। 
শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা ১১.১৮ 

অনুবাদঃ তুমি পরম অক্ষর , একমাত্র জ্ঞাতব্য ; তুমি বিশ্বের পরম আশ্রয় ; তুমি অব্যয়, শাশ্বত ধর্মের রক্ষক এবং সনাতন পুরুষ , এই আমার অভিমত।
[ শ্রীমদভগবদগীতা - যোগপ্রদীপার্যভাষ্য - মহামহোপাধ্যায় পণ্ডিত আর্যমুনি ]

বিবিধ ভাষ্যকার এখানে ' শাশ্বতধর্মগোপ্তা ' = সনাতন ধর্মের রক্ষক অর্থ করেছেন । তাদের এই অর্থ অসঙ্গত বলা যায় না । মহর্ষি শ্রীমদ্দয়ানন্দ সরস্বতীকৃত ভাষ্যে ঋগ্বেদে ১.১২৪.২ (শশ্বতীনাম্) সনাতনীনামুষসাং প্রকৃতীনাং বা , ১.১৩৫.৭ (শশ্বতঃ) সনাতনবিদ্যায়ুক্তান্, ১.১৩৯.৮ (সনা) সনাতনানি, সামবেদ ১৮২০ (সানসিং রয়িম্) সনাতন ইত্যাদি সহ পুরাণ , সনাৎ , পূর্ব্যম্, সনা সমধর্মী পদ দ্বারা ৩০০এরও অধিকস্থলে সনাতন অর্থ পাওয়া যায় । 

✅সর্ব্বেহপ্যেতে যজ্ঞবিদো যজ্ঞক্ষয়িতকল্মষাঃ ।
যজ্ঞশিষ্টামৃতভুজো যান্তি ব্রহ্ম সনাতনম্ ।।
শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা ৪.৩০

অনুবাদঃ এই যজ্ঞবিদ্‌গণ সকলেই যজ্ঞদ্বারা নিস্পাপ হয়ে থাকেন; যাঁহারা অমৃত-স্বরূপ যজ্ঞাবশিষ্ট অন্ন ভোজন করেন, তাঁহারা সনাতন ব্রহ্মপদ লাভ করেন।
[ শ্রীমদভগবদগীতা - যোগপ্রদীপার্যভাষ্য - মহামহোপাধ্যায় পণ্ডিত আর্যমুনি ]

✅ মহাভারতের অনুশাসন পর্বের ১৬তম অধ্যায়ে আমরা দেখি - 

👉দেবাসুরমুনীনাং তু যচ্চ গুহ্যং সনাতনম্।
গুহায়াং নিহিতং ব্রহ্মি দুর্বিজ্ঞেয়ং মুনেরপি ॥২৯ 
অনুবাদঃ সেই সনাতন ব্রহ্মই দেবাসুর ও মুনিগণের নিকট গুহ্য, হৃদয়গুহানিহিত ও দূর্বিজ্ঞেয় । 

👉অতঃ প্রবর্ততে সর্বমস্মিন্সর্বং প্রতিষ্ঠিতম্।
অস্মিংশ্চ প্রলয়ং যাতি অয়মেকঃ সনাতনঃ॥৩৫
অনুবাদঃ এঁর থেকেই সমস্ত জগতের উৎপত্তি, প্রতিষ্ঠা ও লয় হয়ে থাকে । ইনিই সনাতন । 

👉এতৎপদমনুদ্বিগ্নমেতদ্ব্রহ্ম সনাতনম্।
শাস্ত্রবেদাঙ্গবিদুষামেতদ্ধ্যানং পরং পদম্॥৫৬
অনুবাদঃ ইহাই উদ্বেগরহিত পরমপদ , ইনিই সনাতন ব্রহ্ম৷ শাস্ত্র ও বেদাঙ্গজ্ঞাটা মানবের জন্য ইনিই ধ্যানযোগ্য পরমপদ । 

👉কর্মন্যাসকৃতানাং চ বিরক্তানাং ততস্ততঃ।
যা গতির্ব্রহ্মিসদনে সা গতিস্ত্বং সনাতন॥ ৬২
অনুবাদঃ সনাতন দেব ! কর্ম- সন্ন্যাসীগণ ও রিক্তগণের ব্রহ্মলোকে যে গতি লাভ হয় তা আপনিই । 

👉অপুনর্ভবকামানাং বৈরাগ্যে বর্ততাং চ যা।
প্রকৃতীনাং লয়ানাং চ সা গতিস্ত্বং সনাতন॥ ৬৩ 
অনুবাদঃ সনাতন পরমেশ্বর ! যে মোক্ষলাভে ইচ্ছুক বৈরাগ্যমার্গে গমনকারী তাদের ও প্রকৃতিতে লয় প্রাপ্ত হয় যারা তাদের, যে গতি উপলব্ধ হয় তা আপনিই । 

[ মহাভারত - গীতাপ্রেস সংস্করণ (৬ষ্ঠ খণ্ড) ; অনুবাদকঃ পণ্ডিত রামনারায়ণ দত্ত শাস্ত্রী পাণ্ডেয় ' রাম ' ] 

আর এই সনাতন ধর্মকে আমরা যেন জানতে পারি, চোখ দিয়ে দেখতে পারি সেজন্য আমাদের জন্য প্রেরিত মানবজাতির দিক নির্দেশনা হলো পবিত্র বেদ ।

☑️ 
পিতৃদেব-মনুষ্যাণাং বেদশ্চক্ষুঃ সনাতনম্।
অশক্যঞ্চাপ্রমেয়ঞ্চ বেদশাস্ত্রমিতি স্থিতিঃ ।।
মনুস্মৃতি ১২.৯৪

পদার্থঃ (পিতৃ-দেব-মনুষ্যাণাম্) পিতৃ এবং পালক পিতৃ আদি বিদ্বান এবং অন্যান্য মনুষ্যদের জন্য (বেদঃ সনাতনং চক্ষু) বেদে সনাতন চক্ষু = পথপ্রদর্শক (চ) ইহা (অশকয়ম্) অক্ষম অর্থাৎ যাহা কোন পুরুষ সৃষ্টি করতে পারে না। এজন্য অপৌরুষেয়। (চ) তথা (অপ্রমেয়) অনন্ত সত্য বিদ্যা দ্বারা যুক্ত (ইতি স্থিতিঃ) এই নিশ্চিতভাবে স্বীকৃত।
[ মনুস্মৃতি - ভাষ্যকারঃ ড. সুরেন্দ্র কুমার, আর্যসমাজ ] 

☑️
চাতুর্বণ্যং ত্রয়ো লোকাশ্চত্বারশ্চাশ্রমাঃ পৃথক্ ।
ভূতং ভব্যদ্ভবিষ্যঞ্চ সর্বং বেদাৎ প্রসিদ্ধ্যতি ।।
মনুস্মৃতি ১২.৯৭

পদার্থঃ (চাতুর্বণম্) ব্রাহ্মণ,ক্ষত্রিয়,বৈশ্য, শুদ্র এই চার বর্ণ এবং ইহার ব্যবস্থা ( ত্রয়ঃ লোকাঃ ) পৃথিবী, আকাশ এবং দ্যুলোক অর্থাৎ সমস্ত ভূমন্ডল গ্রহ আদি (চত্বারঃ আশ্রমাঃ পৃথক্) ব্রহ্মচর্য, গৃহস্থ,বানপ্রস্থ এবং সন্ন্যাস এই চারি আশ্রম কে পৃথক পৃথক বিধান ( চ ভূত্যম্ ভব্যম্ ভবিষ্যম্) এবং ভুত, ভবিষ্যত, বর্তমান এবং কালের বিদ্যা ( সর্ব বেদাৎ প্রসিদ্ধতি) ইহা সব বেদ দ্বারা প্রসিদ্ধ প্রকাশ এবং জ্ঞান অর্থাৎ এই সব ব্যবস্থা এবং বিদ্যার জ্ঞান বেদ দ্বারাই হয় ।
[ মনুস্মৃতি - ভাষ্যকারঃ ড. সুরেন্দ্র কুমার, আর্যসমাজ ]

☑️ 
শব্দঃ স্পর্শশ্চ রূপঞ্চ রসো গন্ধশ্চ পঞ্চমঃ ।
বেদাদেব প্রসূয়ন্তে প্রসূতির্গুণকর্মতঃ ।।
মনুস্মৃতি ১২.৯৮

পদার্থঃ (শব্দঃ স্পর্শঃ রূপম্ রসঃ পঞ্চমঃ গন্ধঃ) শব্দ, স্পর্শ, রূপ, রস এবং পঞ্চম গন্ধ এই ( প্রসূতি- গুণ- কর্মতঃ ) উৎপত্তি, গুণ এবং কর্মের জ্ঞানরূপ ( বেদাৎ এব প্রসূয়ন্তে) বেদ দ্বারা প্রসিদ্ধ= বিজ্ঞাত অর্থাৎ এই তত্তশক্তির উৎপত্তিবাস ইহার গুণের জ্ঞান, ইহার উপযোগীর জ্ঞান, ইহার উপযোগীর জ্ঞান এবং উৎপন্ন সমস্ত জড় চেতন সংসারের জ্ঞান বিজ্ঞান বেদ দ্বারা প্রাপ্ত হয়।
[ মনুস্মৃতি - ভাষ্যকারঃ ড. সুরেন্দ্র কুমার, আর্যসমাজ ]

 
আর তাই সনাতন পরমব্রহ্ম প্রেরিত সনাতন বেদবাণীর দ্বারা বিধৃত ও দৃষ্ট যে ধর্ম তাই সনাতন ধর্ম। ধর্ম মানেই সনাতন কারণ সৃষ্টির আদি থেকেই ধর্ম বিদ্যমান। আর তাই কোন মানুষ ধর্মের প্রবর্তক হতে পারেনা কারণ মানুষ সৃষ্টির আগে থেকেই ধর্ম মহাজগতে উপস্থিত। সনাতন ধর্মের প্রবর্তক স্বয়ং ঈশ্বরই যিনি বেদের মাধ্যমে মনুষ্যকে এই সনাতন ধর্মের প্রবচন দিয়েছেন।

ও৩ম্ শান্তি শান্তি শান্তি 

🖋️
বাংলাদেশ অগ্নিবীর

Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)