ত্রৈতবাদ হচ্ছে বেদভিত্তিক একটি দর্শন । এই দর্শন অনুসারে , পরমাত্মা , জীবাত্মা এবং প্রকৃতি– এই তিনটি সত্তা অনাদি , নিত্য ও পৃথক ৷ এদের মধ্যে পরমাত্মা এই সৃষ্টির নিমিত্ত কারণ , প্রকৃতি উপাদান কারণ এবং জীবাত্মা সাধারণ কারণ ৷ এই দর্শন অনুসারে , পরমাত্মা এক , অদ্বিতীয় , চেতন , সর্বজ্ঞ , সর্বব্যাপী , আনন্দময় , একরস , বিকারশূন্য । অপরদিকে জীবাত্মা বহু , চেতন , একদেশী অল্পজ্ঞ । আর প্রকৃতি অচেতন , সর্বব্যাপী নয় । ষড়দর্শনের ন্যায় দর্শন এবং যোগ দর্শনে ত্রৈতবাদের স্বরূপ -




ন্যায় দর্শনের সূত্রে ঈশ্বরকে জীবাত্মার কর্মফল দাতা সম্মোধন করে বলা হয়েছে --
পুরুষকে তার ইচ্ছানুসারে কর্মফল প্রাপ্ত করতে দেখা যায় না, অতএব এটা সিদ্ধ হয় যে, ঈশ্বর এই সৃষ্টির কারণ এবং কর্মফল তাঁরই অধীনে । [ 1 ] মহর্ষি বাৎসায়নও এই অর্থ মেনেছেন তাঁর সূত্রে । [ 2 ] ন্যায়সূত্র ( ৪/১/২১) এর উপর ভাষ্য করার সময় মহর্ষি বাৎসায়ন প্রকরণ বশ ঈশ্বর গুণবিশিষ্ট জীবাত্মা থেকে ভিন্ন শক্তি বলেছেন । [ 3 ]
শ্রী বিশ্বনাথ ভট্টাচার্যও বাৎসায়নের এই ভাষ্যের ওপর বৃত্তি লিখেন - নিত্য, জ্ঞান, ইচ্ছা, প্রযন্ত, সামান্যগুণ এবং সংযোগাদি গুণ দ্বারা বিশেষ জীব থেকে ভিন্ন, আরাধনীয়, সৃষ্টিকর্তা, বেদ দ্বারা হিতাহিত উপদেশক, জগতের পিতা ( ঈশ্বর ) । [ 4 ]
এই প্রকারে ন্যায় দর্শনে ঈশ্বর সত্ত্বাকে সৃষ্টিকর্তা এবং কর্মফল প্রদাতা হিসেবে স্বীকার করেছে তথা জীবাত্মা থেকে ঈশ্বরকে ভিন্ন মানা হয়েছে ।


ন্যায় দর্শনের সূত্রে ( ১/১/৯) আত্মাকে প্রমেয় সম্বোধন করে আত্মার অনুমাপক গুণের বর্ণনায় সূত্রাকার লিখেছেন -- ইচ্ছা, দ্বেষ, প্রযন্ত, সুখ, দুঃখ এবং জ্ঞান আত্মার অনুমাপক । [ 5 ] ন্যায় দর্শনে জীবাত্মার বিস্তৃত বর্ণন রয়েছে । [ 6 ] জীবাত্মাকে ইন্দ্রিয়সমূহ থেকে ভিন্ন সম্বোধন করে বলা হয়েছে যে, যে সব বস্তুকে আমরা চক্ষু দ্বারা দর্শন করি সেগুলোকে চর্চার মাধ্যমে স্পর্শ করি । এক অর্থে দুটি ইন্দ্রিয়ের আবৃত্তি যা সিদ্ধ করে চেতনের ( জীবাত্মা ) শক্তি এরূপ ক্রিয়া করাচ্ছে । অচেতন ইন্দ্রিয় সমূহ স্বয়ং এটা করতে পারে না । [ 7 ] দেহাত্মবাদীদের খণ্ডন করে বর্ণনা করেছেন -- মৃত্যুর পর দেহকে জ্বালিয়ে দিলে কোনো পাপ না হয়ে [ 8 ] সিদ্ধ হয় যে, সেই সময় তার কোনো সুখ-দুঃখের অনুভব হচ্ছে না, কিন্তু যখন জীবাত্মা শরীরে অবস্থান করে তখন তার কষ্টাদি হয়ে থাকে । আর তখন কেউ যদি এই জীবিত অবস্থায় তাঁকে জ্বালিয়ে দেয় তো তখন পাপ হবে । যদিও দেহাত্মবাদীগণ পাপ-পূণ্যকে মান্যতা দেয় না তবুও লাভ-হানিকে তো মানে । শুধুমাত্র শরীরের নাশ হওয়ার কারণে যে হানি হয় সেটাই পাপ । নির্জীব শরীরকে জ্বালানোর ফলে কোনো হানি হয় না অতএব সিদ্ধ হয় যে জীবাত্মা যখন শরীর ত্যাগ করে তখন শরীরকে জ্বালিয়ে দেওয়ায় কোনো পাপ হয় না অতএব আত্মার প্রামাণিকতা সিদ্ধ হয় । দেহাত্মবাদীগণ এই বিষয়ের ওপর শঙ্কা করে যে, যখন জীবাত্মা নিত্য তখন জীবিত অবস্থায়ও শরীরকে জ্বালিয়ে দিলে কোনো পাপ হয় না । সূত্রাকার এই শঙ্কার খণ্ডন করে বলেছেন -- নিত্য আত্মা বধ করাকে হিংসা করা হয় না কিন্তু কার্যাশ্রয় শরীর এবং বিষয়োপল্ধির কারণে ইন্দ্রিয়কে বধ করাকে হিংসা করা হয় । [ 9 ] এই হিংসা জীবিতর ক্ষেত্রে মানা হয়, নির্জীব শরীরকে নয়, অতএব শরীরে অবস্থিত চেতন জীবাত্মার স্বতন্ত্র সত্ত্বা । জীবাত্মাকে নিত্য সম্বোধন করে হেতু দেওয়া হয়েছে যে, এই জন্মের হর্ষ,ভয়,শোক জীবাত্মার পূর্বজন্মের অভ্যাস দ্বারা তথা স্মৃতি দ্বারা এই জন্মেও হয়ে থাকে । [ 10 ] অতএব মৃত্যুর সময় জীবাত্মার মরন হয় না, যে জীবাত্মা পূর্ব জন্মে ছিল সেই-ই এখনও বিদ্যমান রয়েছে । শিশুকে স্তন্যপান করানো প্রবৃত্তিও পূর্বজন্মে এই প্রকার অভ্যাসের সূচক । [11 ] অতএব মৃত্যুর সময় জীবাত্মার বিনাশ না হওয়ায় জীবাত্মা নিত্য তত্ত্ব ।


অন্য দার্শনিকগণ যেই মূল উপাদান কারণকে প্রকৃতি বলেছেন সেই মূল উপাদান কারণকে ন্যায় দর্শনে পরমাণু রূপে স্বীকার করা হয়েছে । মহর্ষি গৌতম ন্যায় দর্শনে পরমাণু থেকে সৃষ্টির উৎপত্তি মেনেছেন । সূত্রাকার পরমাণুর লক্ষণ বর্ণনা করেছেন -- যা ত্রসরেণু অথবা দ্বয়ণুক থেকেও অতি সূক্ষ্ম, সেটি হলো পরমাণু[ 12 ] ।
ন্যায় দর্শনে পরমাণুকে নিত্য স্বীকার করা হয়েছে৷ এক স্থানে প্রতিবাদী শব্দের নিত্যতার বিষয়ে হেতু দিয়েছে যে– শব্দের স্পর্শ না হওয়ায় তা নিত্য। [ 13] এই হেতুর খণ্ডন করে গৌতম মুনি বর্ণনা করেছেন, এই হেতু ব্যাভিচারীমূলক কেননা কর্মেরও স্পর্শ হয় না পরন্তু কর্ম অনিত্য । [ 14 ] পরমাণুর স্পর্শ হয় পরন্তু তা নিত্য । [ 15 ] এই প্রকরণে পরমাণুকে নিত্য স্বীকার করা হয়েছে । ন্যায় দর্শনে অভাব থেকে ভাবের উৎপত্তি খণ্ডন করা হয়েছে । বীজের উদাহরণ দিয়ে বলা হয়েছে যে, বিনষ্ট বীজ অঙ্কুরিত হয় না । [ 16 ]
অংকুর হওয়ার প্রারম্ভে মূল বীজের উৎপন্ন অবশ্যই হয় । বাৎস্যায়নও এই সূত্রের ( ৩/২/১৭ ) ওপর ভাষ্য করতে যেয়ে বর্ণনা করেছেন -- বিনষ্ট বীজ থেকে অঙ্কুরের উৎপন্ন হয় না অতএব অভাব থেকে ভাবের উৎপত্তি হয় না । [ 17 ]
ন্যায় দর্শন সাংখ্য দর্শনের মতো সৎকার্যবাদকে মান্যতা দেয় না বরং বীজকে উপমর্দনের ( বিনাশ ) পরবর্তীতে এক নতুন পদার্থ অঙ্কুরিত হয় বলে মানে । এমনটা দার্শনিকগণের মত । পরন্তু গভীর পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে লক্ষ্য করা যায় যে, ন্যায় দর্শনে উপমর্দন এবং প্রাদুর্ভাব পৌর্বাপর্য ক্রমনির্দেশ রয়েছে । এই কারণে অভাব থেকে ভাবের সিদ্ধি হয় না এমনটা সূত্রকার স্পষ্ট করে দিয়েছেন । [ 18 ]
পরমাণুকে বিভক্ত করার সময় এমন একটি অবস্থা অবশ্যই আসবে যখন আর বিভক্ত করা সম্ভব নয়, তাকেই পরমাণু বলা হয় । এই বিভক্তের অন্তে তার অভাব হবে না কেননা এটা অণুভাব তত্ত্ব । [ 19 ]
এই প্রকারে ন্যায় দর্শনে পরমাণুকে মূল উপাদান মেনে তাকে ভাব রূপে নিত্য স্বীকার করা হয়েছে ।
ন্যায় দর্শনে ত্রৈতবাদের বিবেচনে যেটা নিষ্কর্ষ হয় যে, ন্যায় দর্শন অনুসারে ঈশ্বর সৃষ্টিকর্তা । তিনি পরমাণু থেকে যা নিত্য মূল উপাদান, তা থেকে সৃষ্টি করেন অতএব তিনি সৃষ্টির নিমিত্ত কারণ । তিনিই জীবের কর্মফল প্রদান করেন । তিনি জীবাত্মা থেকে ভিন্ন । জীবাত্মা শরীর এবং ইন্দ্রিয় থেকে ভিন্ন চেতন সত্ত্বা । দেহান্তের সময় যার মৃত্যু হয় না । নিজের কর্মের দ্বারা নতুন শরীর ধারণ করে অতএব জীবাত্মা নিত্য । ঈশ্বর, জীবাত্মা, পরমাণু এই তিনটি স্বতন্ত্র স্বত্তা তথা পরস্পর ভিন্ন । ঈশ্বর, জীব এবং মূল উপাদান পরমাণুকে নিত্য মানার কারণে ন্যায় দর্শনে ত্রৈতবাদের সত্ত্বা বিদ্যমান ।
ভাই পরমানন্দ লিখছেন -- ন্যায় এবং যোগ দর্শন তিনটি অন্তিম তত্ত্বকে স্বীকার করে -- প্রকৃতি, আত্মা এবং ব্রহ্ম । প্রকৃতি জড়রূপ । জীবাত্মা প্রলাজ্ঞ, পুরুষ পাপ কর্মকারী এবং কর্মফল ভোগী । ব্রহ্ম সর্বজ্ঞ, এই সত্ত্বাগুলোকে সৃষ্টি করেন এবং চালনা করেন । [20]




মহর্ষি পতঞ্জলিপ্রণীত যোগদর্শনে প্রথমপাদে শীঘ্রপমাধি যুক্ত করার পদ্ধতি বর্ণনা করা হয়েছে ।
সেই পদ্ধতিতেই ঈশ্বরের উপাসনাকে সমীপতম সাধন বর্ণনা করা হয়েছে । এই প্রকরণে ঈশ্বরের স্বরূপ বর্ণন, তাঁর বাচক শব্দ " প্রণব " এর উল্লেখ তথা প্রণবের অর্থ সহিত জপ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে । এই প্রকরণের প্রথম সূত্র -- " ঈশ্বর প্রণিধানাদ্ধা " । [21 ] অর্থাৎ, ঈশ্বরকে বিশেষ ভক্তি করার ফলে ( সমাধি লাভ শীঘ্র প্রাপ্ত হয় ) । এই সূত্রের উপর মহর্ষি ব্যাস কর্তৃক ভাষ্যে প্রণিধানের অর্থ ভক্তি বিশেষ রয়েছে । [ 22 ] সেটাই ভোজদেব জী ভক্তি বিশেষের অর্থ বিশেষ উপাসনা করেছেন । [ 23 ]
সেই ঈশ্বরের স্বরূপ বর্ণনা পরবর্তী সূত্রে এই প্রকারে করা হয়েছে ।
" ক্লেশকর্ম বিপাকাশয়েরপরামৃষ্টঃ পুরুষবিশেষ ঈশ্বরঃ " । [ 24 ] অর্থাৎ অবিদ্যাদিক্লেশ এবং পূণ্যপাপরূপ কর্ম, সেই কর্মের ফল এবং বাসনা রহিত পুরুষ বিশেষ অর্থাৎ অন্য পুরুষের ( জীব ) থেকে বিশেষ হলেন [ 25 ] ঈশ্বর । এখানে ঈশ্বর শব্দ সেই পরমব্রহ্মকে নির্দেশ করছে যাঁকে অদ্বৈতবাদীগণ নিরুপাধিক ব্রহ্ম বলে সম্বোধন করে কেননা এই সূত্রে সব কিছুই অবিদ্যাদি উপাধি সমূহ থেকে আলাদা তথা ঈশ্বরকে জীবাত্মা থেকে ভিন্ন হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে । ঈশ্বরের নিরুপাধিক ব্রহ্মকে সোপাধিক রূপে মান্যতা দেওয়া কেবল অদ্বৈতবাদীগণের কল্পনামাত্র । কেননা শাস্ত্রে কোথাও এমন প্রমাণ নাই যেখানে ঈশ্বরকে উপাধিতে যুক্ত বলে বর্ণনা করা হয়েছে । এখানে আরও একটি বিষয় স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে যে, ঈশ্বর জীবাত্মা থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন শক্তি । এই কথনের বর্ণনা করে সূত্রাকার লিখেন -- " তত্র নিরতিশয়ংসর্বজ্ঞবীজফলম্ " ।। [ 26 ] অর্থাৎ, সেই ঈশ্বরে সবচেয়ে অধিক জ্ঞান হওয়ার জন্য তিনি সর্বজ্ঞতার বীজ রূপ ।
এখানে নিরতিশয় শব্দের তাৎপর্য হলো যে অতিশয় ভাব থেকে বের হয়েছে । [ 27 ] তথা " সর্বজ্ঞবীজম " এর অর্থ যিনি সর্বজ্ঞতার মূল কারণ । যিনি জ্ঞানের পরাকাষ্ঠা [ 28 ]
সংসারে কেউ কম জেনে থাকে পরন্তু ঈশ্বর সবাইকে জানেন । ঈশ্বর সর্বজ্ঞ হওয়ার কারণে সবার গুরু তিনি । যত জ্ঞানীর আবির্ভাব হয়েছে তাদের আবির্ভাব কোনো না কোনো সময়ে হয়েছে, পরন্তু ঈশ্বর সর্বদা জ্ঞানী ; তিনি সময় দ্বারা আবদ্ধ নন । ঈশ্বরের বিষয়ে কেউই সময়ের সীমাবদ্ধতায় রাখতে পারে না কেননা তিনি অনাদি শক্তি । এজন্য তিনি সবার গুরু । এই বিষয়ে সূত্রাকার স্পষ্ট করেছেন -- " স এষ, পূর্বেষামপি গুরুঃ কালেনানবচ্ছেদাত " [ 29 ] । অর্থাৎ সেই পূর্বোক্ত সর্বজ্ঞ ঈশ্বর সবচেয়ে পূর্বে বিদ্যমান থাকার কারণে, সময়সীমাতে আবদ্ধ না হওয়ার কারণে প্রাচীন জ্ঞানীদেরও গুরু তিনি । এই দুটি সূত্রে ঈশ্বরের সর্বজ্ঞতা এবং জীবাত্মার অল্পজ্ঞতাও পরিলক্ষিত হয় ।
এমন ভাবে সর্বজ্ঞ এবং সবার গুরু পুরুষ বিশেষ ঈশ্বরকে " বাচক " শব্দ সম্বোধন করে সূত্রকার বর্ণনা করেছেন -- তাঁর বাচক শব্দ
" প্রণব " ( ও৩ম্ ) [ 30 ] । এই সূত্রের উপর ভোজদেব বৃত্তি বর্ণনা করে অর্থ করেছেন --
এই প্রকারে ওঙ্কার হলো ঈশ্বরের উক্ত স্বরূপ বর্ণনা, এই দুটির বাচ্য বাচক ভাব লক্ষণ নিত্য । [ 31 ] এভাবে ওঙ্কারের জপ এবং তাঁর স্বরূপকে ধ্যান করা উচিত । একাগ্রচিত্তে প্রণবের জপ করলে এবং তাঁর অর্থকে ধ্যান করলে যোগীর চিত্তের একাগ্রতা প্রাপ্ত হয় । [32] যোগ দর্শনে অন্য দুই সূত্রেও ঈশ্বরের উল্লেখ রয়েছে । [ 33 ] এই সূত্রগুলো থেকে স্পষ্ট যে, যোগদর্শনে ঈশ্বর প্রকৃতির বন্ধন রহিত কর্মফল এবং বাসনার ঊর্ধ্বে, সর্বজ্ঞ এবং সবার গুরুরূপে স্বীকার করা হয়েছে । ঈশ্বর প্রকৃতি এবং জীবাত্মা থেকে ভিন্ন ।
এই ভিন্নতাই মহর্ষি ব্যাস সূত্র ( ১/২৪ ) প্রকরণে বর্ণনা করেছেন, প্রকৃতি এবং পুরুষ থেকে ভিন্ন সেই ঈশ্বর কে ? [ 34 ]
এটা স্পষ্ট যে, যোগদর্শনে প্রতিপাদিত ঈশ্বরের স্বরূপ অদ্বৈতবাদীগণের ঈশ্বর থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন ।


যোগ দর্শনে জীবাত্মার সত্ত্বা স্বতঃসিদ্ধ কেননা যোগ সাধনার আবশ্যকতা জীবাত্মারই রয়েছে । যোগ অঙ্গের দ্বারা জীবাত্মার অশুদ্ধিক্ষয় ( অবিদ্যার নির্বাত্ত ) হওয়ার পর তার যথার্থ জ্ঞানের প্রকাশ হয় এবং এই জ্ঞান বিবেক প্রাপ্তি পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে থাকে । [ 35 ] যোগের ৮টি অঙ্গকে [ 36 ] জীবাত্মা ধারণ করে সমাধিলাভ প্রাপ্ত করে । জীবাত্মা অবিদ্যাগ্রস্থ হয়ে যায় । তাকে সেই অবিদ্যাকে দূর করতে হবে । যোগের মাধ্যমে জীবের বিবেকবোধ জাগ্রত হয় তথা যোগের দ্বারাই জীবাত্মার চিত্তের বৃত্তির নিরোধ করা হয় । যোগদর্শনের প্রথম সূত্রে এরূপ বর্ণনা করে জীবাত্মা সত্ত্বার স্বীকার করা হয়েছে । [ 37 ] কেননা এই চিত্ত জীবাত্মারই সাধন । যখন চিত্তের বৃত্তির নিরোধ হয়ে যায় তখন জীবাত্মাকে সূত্রকার বলেন --
" তদা দ্রষ্টুঃ স্বরূপেবস্থানম্ ।। [ 38 ] মহর্ষি দয়ানন্দ জী এই সূত্রের অর্থ করেছেন, সুতরাং সবার দ্রষ্টা ঈশ্বরের স্বরূপে জীবাত্মার স্থিতি হয়ে থাকে । মহর্ষি ব্যাস এই সূত্রের অর্থ করেছেন, তখন দ্রষ্টার ( জীব ) নিজ চেতনরূপে অবস্থিতি হয়ে থাকে । [ 39 ] ব্যুৎথান দশাবস্থায় সেই জীবাত্মার যেমনভাবে চিত্তের বৃত্তি হয়ে থাকে সেই বৃত্তির সমানই তার জ্ঞান হয়ে থাকে । [ 40 ] সমাধিপাদের বৈরাগ্য বিষয়ক সূত্রগুলোর মধ্যে একটি সূত্রে [41] পর্যবেক্ষণ এবং শ্রবণের বিষয়ে বৈরাগ্য হওয়ার বর্ণনা রয়েছে ; দ্বিতীয় সূত্রেই গুণসমূহে বৈরাগ্য হওয়ার বর্ণনা করা হয়েছে -- " তৎপরং পুরুষখ্যাতের্গুণবৈতৃণ্ষং ।। [ 42 ] অর্থাৎ, সেই ( পূর্ব সূত্রে বর্ণিত ) বৈরাগ্যের পরে পুরুষজ্ঞান প্রাপ্ত হওয়ার পর তিনটি গুণের প্রতিও বৈরাগ্য হয়ে থাকে ।
মহর্ষি ব্যাস এর অর্থ করেন -- পর্যবেক্ষণ এবং শ্রবণের বিষয়সমূহে দোষ দর্শনকারী বিরক্ত ব্যক্তি পুরুষ দর্শনের অভ্যাসে অবিদ্যাকে দূর করার পর বিবেক যুক্ত বুদ্ধি দ্বারা ব্যক্তাব্যক্ত ধর্মীয় গুণসমূহ মাধ্যমে বৈরাগ্যধারণ করে [43] । এই সূত্রে পুরুষের ( জীবাত্মা ) বৈরাগ্যেরই বর্ণনা রয়েছে । এখানে জীবাত্মা পাঁচ প্রকার ক্লেশ দ্বারা বদ্ধ হয়ে থাকে । [ 44 ]
জীবাত্মা কর্মফল চক্রের মাধ্যমে যাওয়া-আসা করে । এই কর্মেরই পরিমাণ স্বরূপ জীবাত্মা, জাতি, আয়ু এবং ভোগসমূহকে প্রাপ্ত করতে থাকে । [ 45 ] পুরুষকে ( জীবাত্মা ) অপরিণামী হিসেবে উপস্থাপিত করে বর্ণনা করা হয়েছে চিত্তবৃত্তির স্বামী জীবাত্মার চিত্তবৃত্তিসমূহ সম্পর্কে জ্ঞাত থাকে, কেননা পুরুষ পরিণামী নয় । [ 46 ]
যোগ দর্শনে এই প্রকারে " জীবাত্মা " সমন্ধী বিষয়ের প্রধানতা রয়েছে । কেননা এই যোগ প্রক্রিয়া জীবাত্মার জন্যই, সেই-ই সাধক ।
সমাধি এবং বৈরাগ্যের উপায় তার জন্যই, তারই সাধনা দ্বারা বিভূতিসমূহ প্রাপ্ত হয়ে থাকে । আটটি অঙ্গের ক্রিয়াকলাপ তার জন্যই ।


যোগদর্শনে " অলিঙ্গ " শব্দ প্রকৃতির অর্থে প্রযুক্ত হয়েছে । সূক্ষ্ম বিষয়সমূহকে প্রকৃতিকে অতিসূক্ষ্ম হিসেবে স্বীকার করে সূত্রকার বর্ণনা করেছেন --
" সূক্ষ্মবিষয়ত্বংচালিঙ্গ পর্যবসানম্ ।। " [ 47 ]
অর্থাৎ, সূক্ষ্ম বিষয়কে অলিঙ্গ বলা হয় ।
মহর্ষি ব্যাস এই সূত্রের উপর ভাষ্য করতে যেয়ে বর্ণনা করেছেন, এই সূত্রের দ্বারা প্রকৃতির অতিসূক্ষ্মতার ব্যাখ্যান দেওয়া হয়েছে । [ 48 ]
এই সূত্রের ওপর ভোজদেব জী বৃত্তি লিখেছেন, যার সারমর্ম -- যা কোনো কিছুতে লয় হয় না, সেই প্রধান ( প্রকৃতি ) অলিঙ্গকে সূক্ষ্ম বিষয়তত্ব মানা হয়ে থাকে । [ 49 ] বাচস্পতি মিশ্র জীও অলিঙ্গ শব্দের অর্থ প্রকৃতি করেছেন । [ 50 ] নিজ কারণে লীন হয়ে যাওয়া লিঙ্গ জগত তথা অলিঙ্গ প্রকৃতি এসব গুণের অবস্থাভেদ, এইসব বিষয় স্পষ্ট করতে সূত্রাকার বর্ণনা করেছেন,
" বিশেষাবিশেষলিঙ্গমাত্রালিঙ্গানিগণপর্বাণি "
[ 51 ] । অর্থাৎ, বিশেষ, অবিশেষ, লিঙ্গমাত্র এবং অলিঙ্গ এগুলো গুণসমূহেরই অবস্থা ভেদ । ভোজদেব জী এই সূত্রের অর্থ বর্ণনা করেছেন -- মহাভূত এবং ইন্দ্রিয় সমূহ বিশেষ । তন্মাত্রা এবং অন্তঃকরণ অবিশেষ । লিঙ্গ মাত্র বুদ্ধিবাচক এবং অলিঙ্গ প্রকৃতি বাচক, এই চারটি গুণ ( সত্ব, রজ এবং তম ) অবস্থাভেদ বাচক । [ 52 ]
যোগ দর্শনেও সৎকার্যবাদকে সিদ্ধান্ত হিসেবে মান্যতা দেওয়া হয়েছে । প্রলয়কালে সম্পূর্ণ জগৎ প্রকৃতিতে লীন হয়ে যায় ।পরন্তু প্রকৃতির কোনো উপাদান কারণ নাই অতএব কোনো প্রকার উপাদান কারণে লীন হয় না । অতএব প্রকৃতিকে এই সূত্রগুলোতে অলিঙ্গ বলা হয়েছে ।




১. সাংখ্যে ঈশ্বর সত্তাকে স্বীকার করা হয়েছে এবং সেই সর্বোচ্চ সত্তাকে বুঝাতে ঈশ্বর শব্দের প্রয়োগ হয়েছে ।
২. সাংখ্যে জীবাত্মাকে বুঝাতে পুরুষ শব্দের
প্রয়োগ হয়েছে।
৩. সাংখ্যে পরিণামিনী প্রকৃতির বর্ণনা রয়েছে
৪. সাংখ্যে জীবাত্মার বন্ধন হিসেবে প্রকৃতিকে মান্যতা দেওয়া হয়েছে এবং এর হেতু
অবিদ্যাকে বলা হয়েছে । জ্ঞান দ্বারা মুক্তির মান্যতা দেওয়া হয়েছে ।
৫. সাংখ্যে কৈবল্য মু্ক্তির বর্ণনা রয়েছে ।
৬. সাংখ্যে চেতন তত্বকে অপরিণামী বলা হয়েছে ।


১. যোগ দর্শনেও ঈশ্বরের সত্তাকে স্বীকার করা
হয়েছে এবং এখানেও সেই সর্বোচ্চ সত্তাকে
বুঝাতে ঈশ্বর শব্দের প্রয়োগ হয়েছে ।
২. যোগ দর্শনেও পুরুষ শব্দ জীবাত্মার জন্য প্রযুক্ত হয়েছে ।
৩. যোগ দর্শনেও অলিঙ্গ শব্দ দ্বারা প্রকৃতির বর্ণনা করা হয়েছে ।
৪. যোগেও জীবাত্মার বন্ধন হিসেবে প্রকৃতিকে মান্যতা দেওয়া হয়েছে এবং এর কারণও অবিদ্যাকে বলা হয়েছে তথা বিবেকখ্যাতি দ্বারা মুক্তির মান্যতা দেওয়া হয়েছে ।
৫. যোগ দর্শনেও কৈবল্য মু্ক্তির বর্ণনা রয়েছে।
৬. যোগেও চেতন তত্বকে অপরিণামী বলা হয়েছে ।
এই জন্য গীতায় বর্ণনা করা হয়েছে -- সাংখ্য এবং যোগ দুটিকে ভিন্ন সম্বোধনকারী বালক ( অবোধ ) । যা সাংখ্যে বিদ্যমান সেটাই যোগে বিদ্যমান । সাংখ্য এবং যোগের পরস্পর সমানতার জন্য শ্রী রামশঙ্কর ভট্টাচার্য দ্বারা লিখিত পাতঞ্জল যোগ দর্শনের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ । সেখানে বর্ণনা করা হয়েছে কপিল সাংখ্য বিদ্যা এবং যোগ বিদ্যার আদিম প্রবক্তা [53] ; আরও লিখেন সাংখ্য এবং যোগ পরস্পর পূরক [ 54 ]
পাতঞ্জল যোগ দর্শনে ত্রৈতবাদের অন্বেষণে নিম্নলিখিত নিষ্কর্ষ প্রকাশিত হয় ।
যোগ দর্শনে ঈশ্বর বিষয়ক মান্যতা বেদানুকূল আস্তিক পরম্পরা দ্বারা সম্বন্ধ রাখে ।
ভিত্তিহীন অবৈদিক অদ্বৈতপ্রতিপাদিত ঈশ্বরের কোনো সংকেতই নাই । ঈশ্বরকে সর্বজ্ঞ, অতএব অবিদ্যা রহিত স্বীকার করা হয়েছে । সেই ঈশ্বর জীবাত্মার জন্য অর্থ সহিত জপ এবং ধ্যান করার যোগ্য তাঁর প্রণব বাচক ও৩ম্ শব্দ দিয়েছেন । এখানে পুরুষ শব্দ শুধুমাত্র জীবাত্মার জন্য প্রযুক্ত হয়েছে ।
জীবাত্মা শরীরী, অবিদ্যাগ্রস্থ এবং কর্মফলের চক্রে আবদ্ধ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে ।
সমাধি দ্বারা জীবাত্মা কৈবল্যকে প্রাপ্ত করে ।
প্রকৃতি নিত্য তথা পরিণামবালী । প্রকৃতি স্বয়ং কার্য জগতের উপাদান কারণ । প্রকৃতির কোনো উপাদান কারণ নাই ।
ঈশ্বর, জীব এবং প্রকৃতি এই তিন সত্তা স্বতন্ত্র সত্তা হিসেবে যোগ দর্শনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে । অতএব, এখানে স্পষ্টভাবে ত্রৈতবাদের পরম্পরা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ।




১.
ঈশ্বরঃ কারণং পুরুষ কর্তাফল্যদর্শনাত্।। ( ন্যায়. ৪/১/১৬)
২.
পুরুষোহয়ংসমীহপানাং নাবশ্যং সমীহাফলমাপ্মোতি তেনানুমীয়তে পরাধীনং পুরুষস্য কষেফলারাধনমিতি। যদধীনং স ঈশ্বরঃ।। তস্মাদীশ্বরঃ কারণমিতি।। --( বাৎস্যায়নভাষ্য, ন্যায়. পৃষ্ঠা- ২৬০)
৩.
গুণবিশিষ্টমাত্মান্তরমীশ্বর।। ( ন্যায়. পৃ.- ২৬২)
৪.
গুণৈনিত্যজ্ঞানেচ্ছাপ্রয়ত্নৈঃ সামান্যগুণৈশ্চ সংয়োগাদিভির্বিশিষ্টমান্ত রং জীবেভ্যো ভিন্ন আত্মাজগদারাভ্যঃ সৃষ্টি কর্তা বেদদ্বারাহিতাহিতোপদেশকোজ-গতঃ পিতেতি।।
( বাৎস্যায়নভাষ্য, ন্যায়. পৃ. ২৬২)
৫.
ইচ্ছাদ্বেষপ্রয়ত্নসুখদুঃখজ্ঞানান্যাত্মনো লিগমিতি।। (ন্যায়. ১/১/১০)।
৬.
ন্যায়. ৩/১/১, ৩/১/২৫
৭.
দর্শনস্পর্শনাভ্যামে--র্থ গ্রহণাত্।। ( ন্যায়.৩/১/১)
৮.
শরীরদাহে পাতকাভাবাত্।। ( ন্যায়. ১/১/৪)
৯.
ন, কার্যাশ্র্যকৃর্তৃবধাত্।। (ন্যায়. ১/১/৬)
১০.
পূর্বাভ্যস্তস্মৃত্যনু বন্ধাজ্জাতস্য হর্ষভয়শোকসংপ্রতিপত্তেঃ।। (ন্যায়. ৩/১/১৬)
১১.
প্রেত্যাহারাভ্যাসকৃতাৎস্তন্যাভিলাষাত্।।
( ন্যায়. ১/১/২২)
১২.
পরং বা ত্রুটেঃ।। (ন্যায়. ৪/২/১৫)
১৩.
অস্পর্শত্বাত্।। (ন্যায়. ২/২/২২)
১৪.
ন কর্মানিত্যত্বাত্।। (ন্যায়. ২/২/২৩)
১৫.
নাণুনিত্যত্বাত্।। (ন্যায়. ২/২/২৪)
১৬.
ন বিনষ্টেম্যো নিষ্পতেঃ।। ( ন্যায়. ৩/২/১৭)
১৭.
ন বিমষ্টাদ্বীজাদংকুর উৎপদ্যত ইতি্ তস্মান্নাভাবাদভাবোদ্ভাবোৎপত্তিরিতি।। (ন্যায়. বাৎস্যায়ন ভাষ্য, পৃ০ ৪/২/১৪)
১৮.
ক্রমনির্দশাদত্রতিষেধঃ।। (ন্যায়. ৩/২/১৮)
১৯.
ন প্রলয়োহণুমদভাবাত্।। (ন্যায়. ৪/২/১৪)
২০.
ভাই পরমানন্দ, মেরে অন্ত সময় কা আশ্রয়, পৃ, ৫০।।
২১.
যোগ. (১/২৬)
২২.
প্রণিধাতাদ্ভক্তিবিশেষাত্।। ( যোগ, ব্যাসভাষ্য, পৃষ্ঠা ৫৮)
২৩.
তত্র ভক্তি বিলেষো বিশিষ্টমুপাসনং সর্ব ক্রিয়াণাং তত্রার্পণম্।।
২৪.
যোগ. ১/২৪
২৫.
পুরুষবিশেষঃ অন্যেভ্যঃ পুরুষেভ্য বিশিষ্যত ইতি বিশেষঃ। দেখিয়ে ভোজবৃত্তি, (যোগ.পৃ. ৬৩)
২৬.
যোগ০ (১/২৫)
২৭.
কশ্চিত্ কশ্চিদেবাতীতাদি গৃহ্নাতি কশ্চিদবহুতরং, কশ্চিত্ বহুতমমতি গ্রাহ্যাপেক্ষয়া গ্রহণে হ স্যাল্পতত্বং বহুত্বং কৃতম্--- এতদ্বিবর্ধমানং যত্র নিষ্কান্তমতিশয়াত্ স সর্বজ্ঞ ইতি।। (বাচস্পতিমিশ্র টীকা. যোগ., পৃ. ৩৭)
২৮.
যত্রকাষ্ঠাপ্রাপ্তির্জ্ঞানস্য স সর্বজ্ঞঃ।। ( ব্যাসভাষ্য)
২৯.
যোগ. ১/২৫
৩০. তস্য বাচকঃ প্রণবঃ ।। যোগ. ১/২৭
৩১.
ইৎথমুক্ত স্বরূপস্যেশ্বরস্য বাচকোভিধায়কঃ প্রকর্ষেণ নুয়তে স্তুয়তে অনেনেতি নীতি স্তোতি বা প্রণব ওঙ্কারঃ, তয়োশ্ব বাচ্যবাচক ভাবলক্ষণ সম্বোন্ধ নিত্যঃ ।। ভোজবৃত্তি, পৃ. ৭৩
৩২.
যোগ. ১/১৮
৩৩.
প্রণবস্য জপঃ প্রণবাভিবেদ্যস্য চেশ্বরস্য ভাবনম্ । তদস্য যোগিনঃ প্রণবং জপতঃ প্রণবার্থ চ ভাবয়তশ্চিত্তমে কাংগ্রসম্পদ্যতে ।। যোগ. ব্যাসভাষ্য. পৃ. ৭৩ ।
৩৪.
তপঃ স্বাধ্যায়েশ্বরপ্রণিধানানি ক্রিয়া যোগঃ । ২/১।। তথা সমাধিসিদ্ধিরীশ্বরপ্রণিধানাত্ ।। ২/৪৫ ।
৩৫.
অর্থ প্রধানপুরুষব্যতিরিক্তঃ কোয়মীশ্বরোনামিতি ।। ব্যাস ভাষ্য, পৃ.৫৮ ।।
৩৬.
যোগাঙ্গানুষ্ঠানাদশুদ্ধিক্ষয়ে জ্ঞানদীপ্তিরাবিবেককখ্যাতেঃ ।। ২/২৮
৩৭.
যমনিয়মাসনপ্রাণায়ামপ্রত্যহারধারণাধ্যান সমাধয়োষ্টাংগানি ।। ২/২৯।।
৩৮.
যোগশ্চিত্তবৃত্তিনিরোধঃ ।। যোগ. ১/১
৩৯.
যোগ. ১/২
৪০.
সত্যার্থ প্রকাশ: নবম সমুল্লাস
৪১.
স্বরূপ প্রতিষ্ঠা তদানী চিতশক্তির্য়থা কৈবল্যে, ব্যাস ভাষ্য: পৃ. ১১। তথা দ্রষ্টুঃ পুরুষস্য তস্মিনকালে স্বরুপে চিন্মাত্রতায়ামবস্থানং স্থিতির্ভবতি -- ভোজবৃত্তি
৪২.
বৃত্তিসারূপ্যমিতরত্র ।। যোগ. ১/৪
৪৩.
দৃষ্টানুশ্রবিকবিষয়বিতৃষ্ণাস্য বশীকার সঙ্গা বৈরাগ্যম্ ।। ১/১৫
৪৪.
যোগ. ১/১৬
৪৫.
দৃষ্টানুশ্রবিকবিষয়দোষ দর্শীবিরক্তঃ পুরুষদর্শনাভ্যাসাত্তচ্ছুদ্ভিপ্র- বিবেকাপ্যায়িত
বুদ্ধিগুণেভ্যো ব্যক্তাব্যক্ত ধর্মকেভ্যো বিরক্তইতি ।। যোগ. ব্যাসভাষ্য. পৃ. ৩৭
৪৬.
অবিদ্যাস্মিতারাগদ্বেষাভিনিবেশঃ পঞ্চ ক্লেশাঃ ।। যোগ. ২/৩
৪৭.
সতিমুলেতদ্বিপাকোজাত্যায়ুভৌগঃ । যোগ. ২/১৩
৪৮.
তদাজ্ঞাতশ্চিত্তবৃত্তয়স্তৎপ্রভোঃ পুরুষস্যাপরিণামিত্বাত্ ।। যোগ. ৪/১৮
৪৯.
যোগ. ১/৪৫
৫০.
অতঃ প্রধানে সৌক্ষ্ম্যং নিরতিশয়ং ব্যাখ্যাতম্ ।
যোগ. ব্যাসভাষ্য. পৃ. ১১৫
৫১.
লয়ং গচ্ছতি তল্লিঙ্গ ন লয়ং গচ্ছতি তদলিঙ্গম্ ন ক্বেচিল্লীয়তে - ইত্যলিঙ্গ প্রধানং তৎপর্যন্তং সূক্ষ্মবিষয়ত্বম্ ।। ভোজ বৃত্তি, পৃ. ১১৬
৫২.
অলিঙ্গম্ প্রধানং তদ্ধি ন ক্বেচিল্লয়ং গচ্ছতি । বাচস্পতি মিশ্রটীকা । পৃ. ৬২
৫৩.
যোগ. ২/১৯
৫৪.
গুণাংনাং পর্বাণ্যবস্থাবিশেষাশ্চত্বারো জ্ঞাতব্যা ইত্যুপদিষ্টং ভবতি । বিশেষা মহাভুতেন্দ্রিয়াণি অবিশেষাস্তন্মাত্রান্তঃ করণানি, লিঙ্গমাত্রং বুদ্ধিঃ অলিঙ্গমব্যমিত্যুক্তম্ ।। ভোজ বৃত্তি, পৃ. ১৬৪
৫৫.
সাংখ্য যোগৌপৃথগ্বালাঃ প্রবদন্তি ন পণ্ডিতাঃ । এক মব্যাস্থিতঃ সম্যগুভয়োবিন্দতে ফলম্ । গীতা. ৫/৪ যত্যাংখ্যৈঃ প্রাব্যতে স্থানং তদ্যোগৈরপি গম্যতে ।। ৫/৫
৫৬.
পরমর্ষিকপিলঃ সাংখ্য বিদ্যায়াস্তদনুগত যোগবিদ্যাশ্চআদিম প্রবক্তেতি শিষ্টপরম্পরা সপ্রসিদ্ধিঃ । সম্পাদক শ্রীরামশঙ্কর ভট্টাচার্য. যোগের ভূমিকা. পৃ. ১
৫৭.
অতঃ সাংখ্যযোগৌ পরস্পরপুরকাবিতি কথয়িতুং শক্যতে ।। পৃ. ২
নমস্কার