শিক্ষক কাদের ও কী শিক্ষা দেবেন সায়ণভাষ্য খণ্ডনসহ
উত্তরঃ
অবস্যতে স্তুবতে কৃষ্ণিয়ায় ঋজূয়তে নাসত্যা শচীভিঃ ।
পশুং ন নষ্টমিব দর্শনায় বিষ্ণাপ্বং দদথুর্বিশ্বকায় ॥
ঋগ্বেদ ১।১১৬।২৩
অনুবাদঃ হে (নাসত্যা) অসত্য ত্যাগ করে সত্যগ্রাহী অধ্যাপক ও উপদেশক ! তোমরা উভয়ে (শচীভিঃ) সুশিক্ষাপ্রদায়ক বাণীসমূহের মাধ্যমে (অবস্যতে) স্বীয় রক্ষণের কামনাকারী , (স্তুবতে) ধর্মকামী , (ঋজূয়তে) সরল স্বভাব ও আচরণযুক্ত , (কৃষ্ণিয়ায়) আকর্ষণযুক্ত তথা বুদ্ধিকামী, (বিশ্বকায়) সংসারের প্রতি দয়ালু (দর্শনায়) ধর্ম-অধর্ম দর্শনকারী মানবের নিমিত্তে -
»(পশুম্, ন) যেভাবে পশুকে প্রত্যক্ষ দর্শন করাও »(নষ্টমিব) যেভাবে হারানো বস্তুকে অন্বেষণ করে বের করা হয় সেভাবেই -
(বিষ্ণাপ্বম্) বিদ্যারত বিদ্বানগণ যে বোধ লাভ করেন তা (দদথুঃ) প্রদান করো ।
ভাবার্থঃ এই মন্ত্রে উপমালঙ্কার বিদ্যমান । শাস্ত্রবক্তা, উপদেশক ও বিদ্যাদাতা বিদ্বান যেভাবে প্রত্যক্ষ গো আদি পশুকে দেখিয়ে কিংবা দৃষ্টির অগোচরে থাকা বস্তুকে প্রত্যক্ষ করান সেভাবেই শমদমাদি গুণযুক্ত বুদ্ধিমান শ্রোতা বা অধ্যেতাদের পৃথিবীর পদার্থ থেকে ঈশ্বর পর্যন্ত বিশেষ জ্ঞান প্রদায়ক সাঙ্গোপাঙ্গ বিদ্যাসমূহকে প্রত্যক্ষ করাবে এবং এই বিষয়ে কপটতা ও আল্যাদি নিন্দিত কর্ম কখনো যেন না করে ।
[ভাষ্যকারঃ মহর্ষি স্বামী শ্রীমৎ দয়ানন্দ সরস্বতী ]
সংস্কৃতভাষ্যঃ
অন্বয়ঃ - হে নাসত্যোপদেশকাধ্যাপকৌ যুবাং শচীভিরবস্যতে স্তুবত ঋজূয়তে কৃষ্ণিয়ায় বিশ্বকায় দর্শনায় পশুং ন নষ্টমিব বিষ্ণাপ্বং দদথুঃ ॥
পদার্থঃ -
(অবস্যতে) আত্মনোঽবো রক্ষণাদিকমিচ্ছতে (স্তুবতে) ধর্মং শ্লাঘমানায় (কৃষ্ণিয়ায়) কৃষ্ণমাকর্ষণমর্হায়। বা ছন্দসি সর্বে বিধয়ো ভবন্তীতি ঘঃ। (ঋজূয়তে) ঋজুরিবাচরতি তস্মৈ (নাসত্যা) অসত্যত্যাগেন সত্যগ্রাহিণৌ (শচীভিঃ) সুশিক্ষিকাভির্বাগ্ভিঃ (পশুম্) (ন) ইব (নষ্টমিব) যথাঽদর্শনং প্রাপ্তং বস্তু (দর্শনায়) প্রেক্ষমাণায় (বিষ্ণাপ্বম্) বিষ্ণান্ বিদ্যাব্যাপিনো বিদুষ আপ্নোতি বোধস্তম্। অত্র বিষ্লৃধাতোর্নক্ তত অপ্লৃধাতো রূ। বা ছন্দসীতি পূর্বসবর্ণপ্রতিষেধাদ্যণ্। (দদথুঃ) দদ্যাতম্ (বিশ্বকায়) বিশ্বস্যাঽনুকম্পকায় ॥
ভাবার্থঃ - অত্রোপমালঙ্কারৌ। আপ্তা উপদেশকাধ্যাপকা জনা যথা প্রত্যক্ষং গবাদিকমদৃষ্টং বস্তু বা দর্শয়িত্বা সাক্ষাৎকারয়ন্তি তথা শমাদিগুণান্বিতেভ্যো ধীমদ্ভ্যঃ শ্রোতৃভ্যোঽধ্যেতৃভ্যশ্চ পৃথিবীমারভ্যেশ্বরপর্যন্তানাং পদার্থানাং সাঙ্গোপাঙ্গা বিদ্যাঃ সাক্ষাৎকারয়ন্তু নাত্র কপটালস্যাদিকুৎসিতং কর্ম কদাচিৎকুর্য্যুঃ ॥
অর্থাৎ,
শিক্ষার্থী হবে -
(১) নিজের সুরক্ষাকামনাকারী
(২) সরল সহজ আচরণ যুক্ত
(৩) ধর্ম পথে গমনেচ্ছু
(৪) বিদ্যা আকর্ষক
(৫) জগতের সকলের প্রতি দয়ালু
আর শিক্ষকদের উচিত সরল পদ্ধতিতে যেভাবে আমরা চোখে কোন বস্তু স্পষ্ট দেখতে পাই কিংবা না দেখা বস্তুও খুঁজে বের করে দেখি তেমনিভাবে দৃশ্যমান জগৎ ও ইন্দ্রিয়াগোচর ব্রহ্ম সম্পর্কে সকল তথ্য পক্ষপাতরহিতভাবে দিয়ে আমাদের অভ্যুদয় ও নিঃশ্রেয়সের পথে এগিয়ে দেওয়া । এখানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উচিত কোন রকম অসততা না রেখে একত্রে পারস্পরিক সহযোগিতামূলক আচরণ করা ।
সায়ণভাষ্যঃ “অবস্যতে অবনং রক্ষণমাত্মন ইচ্ছতে । “স্তুবতে স্তুতিং কুর্বতে "কৃষ্ণিয়ায় । কৃষ্ণো নাম কশ্চিৎ । তস্য পুত্রায় “ঋজূয়তে আর্জবমিচ্ছতে "বিশ্বকায় এতৎসঞ্জ্ঞায় ঋষয়ে হে নাসত্যৌ যুবাং “শচীভিঃ আত্মীয়ৈঃ কর্মভিঃ “বিষ্ণাপ্বং নাম বিনষ্টং পুত্রং “দর্শনায় দর্শনার্থং “দদথুঃ দত্তবন্তৌ । তত্র দৃষ্টান্তঃ । “পশুং ন “নষ্টমিব । এক উপমার্থীয়ঃ পূরকঃ । যথা কশ্চিদ্বিনষ্টং পশুং স্বামিনো দৃষ্টিপথং প্রাপয়তি তদ্বৎ ॥ অবস্যতে । অবঃশব্দাৎ “ সুপ আত্মনঃ ক্যচ্ '। শতুরনুমঃ' ইতি বিভক্তেরুদাত্তত্বম্ । কৃষ্ণিয়ায় । কৃষ্ণশব্দাদপত্যার্থে ছান্দসো ঘচ্ ॥
সায়ণভাষ্যের অনুবাদঃ
[ ভীষ্মদত্ত শর্মা , অদ্বৈত পরম্পরা অনুমোদিত ] হে অশ্বিনীকুমারদ্বয় ! তোমরা উভয়ে রক্ষার ইচ্ছুক , স্তুতিকর্তা , কৃষ্ণ নামের কোন ( ঋষির) পুত্র তথা ঋষুতার ইচ্ছুক বিশ্বক নামক ঋষিকে নিজেদের কার্যসমূহ দ্বারা তার বিষ্ণানু নামক বিনষ্ট পুত্রকে সেভাবেই দর্শন করিয়েছিলে যেভাবে কোন (ব্যক্তি) নষ্ট পশুকে তার স্বামীর দৃষ্টিগোচর করায় ।
লক্ষ্যণীয়ঃ
i. সায়ণভাষ্যে মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতীর ন্যায় যৌগিক অর্থ ও ব্যুৎপত্তি প্রদর্শন করা হয়নি ।
ii. সায়ণ «কৃষ্ণিয়ায়» পদের অর্থে "কৃষ্ণো নাম কশ্চিৎ"= কৃষ্ণ নামক কোন ঋষি বলে উল্লেখ করেছেন । এই কশ্চিৎ শব্দ দ্বারা বোঝা গেলো তিনি নিজেও দৃঢ় নিশ্চিত না হয়ে শুধুমাত্র তার যা মনে হয়েছে তাই লিখেছেন ।
iii. যারা কিনা সায়ণভাষ্য নিরুক্তসম্মত কিংনা পুরাণাদ চতুর্দশ বিদ্যা সম্বলিত বলে দাবি করেন তাদের নিকট প্রশ্ন এই কাহিনীর উৎস কী ? সায়ণ তো ব্রাহ্মণেও পেলে সেটিও " তথা চ ব্রাহ্মণম্ " [ যেমন ঋ০ ১।২৮।১] বলে উল্লেখ করেন এখানে কেন নেই ?
iv. যদি বিলুপ্ত বা অন্য কিছুও হয় তার উল্লেখ বা সংকেত নেই কেন ?
কেননা এর মূল কারণ হলো সায়ণ যাজ্ঞিক ব্যাখ্যা কিংবা নিরুক্তের বাইরে [ যা নিজেও অনেক সময় মানেননি ] স্বীয় বৈদিক উপলব্ধি ছিলো সীমিত ও কেবল নিজের মনের মত করে ব্যাখ্যা করে গিয়েছেন । শুধুমাত্র কিছু ব্রাহ্মণ, অষ্টাধ্যায়ীয় প্রমাণের উল্লেখ করে তার এই গল্প নিজে থেকে কল্পনা করে করা ভাষ্য বেদের নিত্যতা ক্ষুন্ন ব্যতীত আর কিছুই করেনি ।
বাংলাদেশ অগ্নিবীর