বাসন্তী নবসস্যোষ্টি বসন্তের উৎসব,নতুন ফসলের উৎসব।অশুভকে অগ্নিদগ্ধ করে শুভময়তার সাথে নতুন বছরকে রঙ্গীন করে বরণ করার উৎসব।মূলত সংস্কৃত বর্ষপঞ্জিতে চৈত্র মাস দিয়েই নতুন বছরের শুরু হত বলেই চৈত্রের শুরুতে এই বসন্ত উৎসব।
কিন্তু বর্তমান সময়ে অস্লীল সংগীত ও নাচ পরিবেশন এর মাধ্যমে যে হোলিউৎসব পালিত হয় এই সম্পূর্ণ ই শাস্ত্র নিন্দিত।
শস্যের অগ্নিতে দগ্ধ অর্ধপক্ক শুঁটি জাতীয় ফসলকে হোলিকা বলে। অর্থাৎ যেগুলোতে ছাল থাকে।
ঋতু অনুসারে দুটি মুখ্য ফসল হয়।
ভারতীয় ফসল এবং সেগুলোর শ্রেণীবিন্যাস,
(১) খারিফ শস্য:– আমন ধান, ভুট্টা, পাট, শন, তুলা, জোয়ার, বাদাম, বাজরা, লঙ্কা, বেগুন, লাউ, কুমড়াে, শসা, ঢেড়শ, ঝিঙে, পটল, করলা, পুঁইশাক, কচু ইত্যাদি।
(২) রবি শস্য:– গম, আলু, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ওলকপি, বিট, গাজর, শালগম, যব, বার্লি, মুগ, মুসুর, ছােলা, মটর, মূলাে, পালং, শীতেরবেগুন, টম্যাটো, সরষে, তামাক ইত্যাদি।
“বাসন্তীয় নবসস্যেষ্টি হোলকৎসব” বসন্ত ঋতুতে রবির নবাগত ফসলকে হোম/হবনে দিয়ে তারপর শ্রদ্ধার সঙ্গে গ্ৰহণ করাকে হোলি বলে।
এই পর্ব প্রাকৃতিক, ঐতিহাসিক নয়। এবং পরে “হোলা” থেকে হোলি হয়েছে। “প্রহ্লাদ–হোলিকা” দৃষ্টান্ত আলংকারিক।।
এই দৃষ্টান্তকে এই ভাবে বোঝানো যেতে পারে – সবুজ ডাল জাতীয় শস্যের উপর যে ছাল(wrapper) থাকে তাকে হোলি বলে। সেগুলো জ্বলে যায় কিন্তু ভিতরে যে প্রহ্লাদ (অন্ন, ডাল জাতীয় শস্য) থাকে তা জ্বলেনা। এখান থেকেই হোলিকা এবং প্রহ্লাদের কাহিনীকে ইতিহাসের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। ছাল জ্বলে যায় কিন্তু ভিতরের শস্য সুরক্ষিত থাকে।
দ্বিতীয়ত কোনো ব্যক্তি যতই পুণ্যাত্মা বা পাপী হোক, আগুনে যদি বসে তবে সে জ্বলে যাবে কেননা অগ্নির কাজ হচ্ছে জ্বালানো, সে কারোর তপ, নিষ্ঠা ধর্ম যাচাই করে না। তাই, হোলিকা প্রহ্লাদকে কোলে নিয়ে বসতো তাহলে দু'জনেই জ্বলে যেতো।
হোলি একটা প্রাকৃতিক পর্ব, একটি ভৌগলিক পর্ব।
হোলি পালনের সঠিক বিধান হলো বসন্ত ঋতুর নতুন অন্নকে যজ্ঞ (হবন) এ আহুতি দিয়ে গ্ৰহন করা। কেননা ভারতীয় সংস্কৃতি দান দিয়ে, বিতরণ করে খাওয়াতে বিশ্বাস করে।
বেদে বলা হয়েছে – “কেবলাঘো ভবতি কেবলাদী” অর্থাৎ একা একা ভক্ষণ কারী পাপী হয়। এই জন্যই প্রসন্নতার সহিত বিতরণ করে খাওয়া উচিত।
দ্বিতীয়ত হোলিতে যে রং খেলার প্রচলন আছে সেটাও একটা প্রাকৃতিক উৎসব।
সংবৎসরোহসি পরিবৎসরোসীদাবৎসরোসিদ্বৎসরোহসি।
উষসস্তে কল্পন্তামহোরাত্রাস্তে কল্পন্তামর্ধেমাসাস্তে কল্পনাং মাসাস্তে কল্পন্তামৃতবস্তে কল্পন্তাঙসংবৎসরস্তে কল্পনাম্।
প্রেত্যাৎএত্যৈ সং চাঞ্চ প্র চ সারয।
সূবর্ণ চিদসি তযা দেবতযাঙ্গিরসদ ধ্রুব সীদ।।
(যজুর্বেদ ২৭.৪৫)
অনুবাদ-হে আলোকিত মনুষ্যগণ তোমরা নতুন বছরে নতুন করে জেগে ওঠ,বিগত বছরের সকল জীর্ণতা ঝেড়ে ফেল।তোমাদের নতুন ভোর কর্মাত্মক হোক,বছরের সব দিনগুলো শুভ হোক,প্রতিটা মাস,অর্ধমাস শুভ হোক,ঋতুগুলো শুভ হোক।দিনে দিনে অগ্রসর হও,শক্তিমান হও,প্রাণবায়ুকে স্থির করে গুণযুক্ত হও।
শুনং সুফলা বি তুদন্তু ভুমিং শুনং কীনাশ অনু যন্তু বাহান্।
শুনাসোরা হবিষা তোশামানা সুপিপ্পলা ঔষধী কর্তমস্মৈ।।
(অথর্ববেদ ৩.১৭.৫)
অনুবাদ- কৃষক আমাদের দেয় পুষ্টির জোগান,যেন সে সমৃদ্ধির সাথে ভূ্মির চাষ করতে পারে।সেচের ষাঁড় ও ঘোড়াগুলো থাকুক সযত্নে।যজ্ঞের প্রার্থনায় সূর্য ও বায়ু আমাদের পূর্ণ করুক খাদ্যে ও শস্যে,ফুলে ও ফলে।
এছাড়া



এসকল উৎসব সঠিকভাবে পালন করা উচিত ।
মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতীর জীবন চরিত্র, পৃষ্ঠা ২৮৯
আসুন ঈশ্বর স্মরণ করে ও সাত্ত্বিকভাবে সকল উৎসব পালন করি ।
চলুন আমরা সবাই প্রকৃত বৈদিক জ্ঞান আহরণের মাধ্যমে তথাকথিত কুসংস্কার এর বেড়াজাল ছিন্ন করে নতুন দিগন্তের দিকে এগিয়ে যাই।
শুভ হোলি
শুভ নবান্ন
বাংলাদেশ অগ্নিবীর
সত্য প্রকাশে, নির্ভীক সৈনিক।।