১.
যিনি সচ্চিদানন্দ পরমেশ্বরের সেবক, ধার্মিক, বিদ্বান , পরোপকারী তিনি
তৃপ্ত হন । এমন বিদ্বানের সংস্পর্শ ব্যতীত কেউই বিদ্যা তথা রাজ্যের
স্থিতিশীলতা লাভ করতে পারে না ।
[যজুর্বেদ ভাবার্থ ১২.২৯ ]
২.
যেমন কোনো মানুষ বিদ্বান ব্যক্তির থেকে বিদ্যা লাভ করে, পরোপকারী হয়ে সকল
প্রাণীদের কল্যাণ করে এবং বিদ্যাদান করে আনন্দ লাভ কর "আপ্ত" মানুষও তেমনই
হয়ে থাকে।
[ ঋগ্বেদ ভাবার্থ ১.৭৬.৫ ]
৩. সেই বিদ্বানই "আপ্ত" হন,যিনি কুটিলতাবর্জিত হয়ে প্রতিদিন যোগ্য ব্যক্তিদের বিদ্যারূপ জ্ঞান দান করেন ।
[ ঋগ্বেদ ভাবার্থ ৬.২৮.২ ]
৪.
হে মানবগণ ! যে ব্যাক্তি অন্যের কাজে বাধা প্রদান করে না, চুরি করেনা,
তৃষ্ণার্তের নিকট জলের মতো শান্তিদায়ক হয়ে শরীর এবং আত্মার বলবৃদ্ধি করে
সেই মানবই "আপ্ত" হয়।
[ ঋগ্বেদ ভাবার্থ ৫.৫২.১২ ]
৫. যে বিদ্বান দিন-রাত পরিশ্রমের মাধ্যমে জ্ঞানার্জন করে এবং অন্যকে উপদেশ প্রদান করে তাকেই "আপ্ত" বলে জানবে।
[ ঋগ্বেদ ভাবার্থ ৫.৫৩.৩ ]
৬.
হে মানবগণ ! সূর্য যেমন দূরে অবস্থিত হয়েও নিজ জ্যোতি দ্বারা প্রসিদ্ধ হয়,
তেমনি "আপ্ত" মানবও নিজ কীর্তি দ্বারা প্রসিদ্ধ হয়ে থাকেন।
[ ঋগ্বেদ ভাবার্থ ৫.৩০.৫]
৭. যিনি অপরের মধ্যে বিদ্যার বল তথা সম্পদ (লাভের উপায়) স্থাপিত করেন এবং যিনি কায়মনোবাক্যে এক হয়ে থাকেন তাঁকেই "আপ্ত" জানবে।
[ ঋগ্বেদ ভাবার্থ ৫.৪৪.৬ ]
৮.
যিনি (সকলকে) উত্তম শিক্ষা এবং বিদ্যা দানের মাধ্যমে বদঅভ্যেস, দুর্গুণ
তথা অধর্মাচরণ থেকে বিরত করে শুভগুণ এবং ধর্মাচরণে প্রবৃত্ত করে, তিনিই এই
জগতের কল্যাণকারী "আপ্ত"মানব।
[ ঋগ্বেদ ভাবার্থ ১.১২৮.৫ ]
৯. সেই "আপ্ত" হয়, যাঁর সর্বস্ব পরোপকারের উদ্দেশ্যে নিবেদিত, এতে কোনো সন্দেহ নেই।
[ ঋগ্বেদ ভাবার্থ ৩.৩০.১৯ ]
১০. তিনিই "আপ্ত" হন, যিনি সকল মানবের মধ্যে বুদ্ধি আদি পদার্থের বিকাশের মাধ্যমে নিজ সমকক্ষ করতে তৎপর থাকেন।
[ ঋগ্বেদ ভাবার্থ ৩.৩৯.২ ]
১১.যে
মানব বলার উপযুক্ত কথা বলেন, পানযোগ্য পদার্থকে পান করেন, প্রণাম করার
যোগ্য ব্যক্তিকে প্রণাম করেন, শাস্তিযোগ্য পাপীকে উপযুক্ত শাস্তি প্রদান
করেন এবং জানার যোগ্য (জ্ঞাতব্য) বিষয়কে জানেন, তিনিই "আপ্ত" পুরুষ।
[ ঋগ্বেদ ভাবার্থ ২.১৯.৭ ]
১২.
যে বিদ্বান চাঁদের মতো শান্ত স্বভাবের এবং সূর্যের মতো জ্ঞানের জ্যোতি
প্রকাশ করার মনোভাব নিয়ে সকলের মাঝে জ্ঞানের জ্যোতি প্রদান করেন , তিনিই
"আপ্ত" মানব ।
[ ঋগ্বেদ ভাবার্থ ১.১০৫.১৮ ]
১৩. যে বিদ্বানের প্রশংসা লোকমুখে প্রচারিত হয় এবং সকল প্রজাগণ যে-ই বিদ্বানের প্রশংসা করেন, সেই "আপ্ত" মানবের আশ্রয় গ্রহণ করবে।
[ ঋগ্বেদ ভাবার্থ ১.১২৭.২ ]
১৪. সেই "আপ্ত" মানব , যিনি সকলের সুখ চান। তাঁর সংস্পর্শে বিদ্যালাভ, অবিদ্যার নাশ, ধন প্রাপ্তি এবং দারিদ্র্যতার বিনাশ হয়।
[যজুর্বেদ ভাবার্থ ২৯.৩৭ ]
১৫.
যে ব্যক্তি "আপ্ত" মানবের সংস্পর্শে থেকে সকল শাস্ত্র বিষয়ে জ্ঞান লাভ করে
এবং তাঁর(আপ্ত পুরুষের) কৃপাপূর্বক অন্যকেও উপদেশ দান করে থাকেন, তিনিও
"আপ্ত" পুরুষ হন।
[ ঋগ্বেদ ভাবার্থ ৫.৪৩.১ ]
১৬.
যে "আপ্ত" পুরুষ ব্যর্থ সময় নষ্ট করে না, উত্তম নিয়ম পালনের সাথে কর্তব্য
কর্ম করেন এবং ত্যাগের উপযুক্ত কর্ম ত্যাগ করেন, তাঁর প্রাতঃকাল, দিন-রাত,
পক্ষ, মাস, ঋতুসমূহ সুষ্ঠুভাবে অতিবাহিত হয়।
এজন্য
মানুষ উন্নতি প্রাপ্ত করার প্রচেষ্টা করে, উত্তম মার্গে চলে শুভ গুণসমূহ
এবং সুখসমূহ প্রাপ্ত করে । উত্তম লক্ষণযুক্ত বাণী ও কর্ম দ্বারা ধর্ম কে
গ্রহণ এবং অধর্মের ত্যাগে সর্বদা সচেষ্ট থাকে ।
[যজুর্বেদ ভাবার্থ ২৭.৪৫ ]
১৭.
"আপ্ত" পুরুষ জ্ঞান বা উপদেশ প্রদান করা অথবা শিক্ষাদান ব্যাতীত অন্য কোনো
কার্য কে মানবের কল্যাণকারী মনে করেন না। সে কারণে "আপ্ত" পুরুষ অজ্ঞানী
ব্যক্তিদের কৃপাপূর্বক সর্বদা উপদেশ প্রদান করেন, শিক্ষাদান করেন।
[যজুর্বেদ ভাবার্থ ২৭.৪৩ ]
১৮. মানুষ যেমন নিজের সুখ কামনা করে, তেমনি অন্যের সুখ কামনাকারী "আপ্ত" পুরুষ পূজনীয় হয়ে থাকেন।
[যজুর্বেদ ভাবার্থ ১২.১১০ ]
১৯.
তিনিই পূজ্য, সূর্যের তেজের মতো বিদ্যাকে প্রকাশকর্তা "আপ্ত" বিদ্বান,
যিনি শুভ গুণ-কর্ম সবার মাঝে প্রেরণ করেন। ঋত্বিকগণ যেভাবে উত্তম সংস্কারের
সহিত যজ্ঞ করে সংসারের উন্নতি করেন, তেমনি (আপ্ত পুরুষ) শুভ গুণযুক্ত
বিদ্যার্থীদের মাঝে বিদ্যা এবং ধর্মের স্থাপনা করে সকল মানুষকে সুখী করেন।
[ ঋগ্বেদ ভাবার্থ ৩.৫৯.৫ ]
