দৈনিক বেদবাণী


এই সমগ্র সংসার নিরোগ এবং শুভচিন্তা যুক্ত হোক । যজুর্বেদ ১৬.৪                    সূর্য-এর আলোয় স্বয়ং আলোহীন চাঁদ আলোকিত হয় । ঋগ্বেদ ৫.৪০.৫                    প্রশংসনীয় সংস্কৃতি, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও মাতৃভূমি— এই ত্রয়ী সুখ-সমৃদ্ধি প্রদান করে। ঋগ্বেদ ১.১৩.৯                    উত্তম জীবন লাভের জন্য আমাদের জ্ঞানীদের সাহচর্যে চলা উচিৎ। ঋগ্বেদ ১.১২.১৬                    যে ব্যক্তি সম্পদ বা সুখ বা জ্ঞান নিঃস্বার্থভাবে দান করে, সে-ই প্রকৃত মিত্র। ঋগ্বেদ ২.৩০.৭                    মানুষ কর্ম দ্বারাই জগতে মহত্ত্ব ও প্রসিদ্ধি লাভ করে। ঋগ্বেদ ৩.৩৬.১                    হে পতি! তোমার স্ত্রীই গৃহ, স্ত্রীই সন্তানের আশ্রয়। ঋগ্বেদ ৩.৫৩.৪                    পরমাত্মার নিয়ম বিনষ্ট হয় না; তা অটুট, অচল ও অপরিবর্তনীয়। ঋগ্বেদ ৩.৫৪.১৮                    এই ধর্মের মার্গই সনাতন, এই পথে চলেই মানবগণ উন্নতি লাভ করে। ঋগ্বেদ ৪.১৮.১                    পরমাত্মার নিকট কোনো মানুষই বড় বা ছোট নয়। সকল মানুষই সমান এবং পরস্পরের ভ্রাতৃস্বরূপ। ঋগ্বেদ ৫.৬০.৫                    যে ব্যক্তি অকারণে অন্যের নিন্দা করে, সে নিজেও নিন্দার পাত্র হয়। ঋগ্বেদ ৫.২.৬                    নিশ্চিতরূপে এই চতুর্বেদ কল্যাণপ্রদায়িনী এবং মানবকে জ্ঞান প্রদান করে ধারণকারিণী। ঋগ্বেদ ৫.৪৭.৪                    বীর মানবের জন্য পর্বতও সুগম হয়ে যায়। ঋগ্বেদ ৬.২৪.৮                    আমরা অন্যের সঞ্চিত পাপের কর্মফল ভোগ করি না। ঋগ্বেদ ৬.৫১.৭                    হে মিত্রগণ! ওঠো— উদ্যমী হও, সাবধান হও এবং এই সংসাররূপী নদীকে অতিক্রম করো। ঋগ্বেদ ১০.৫৩.৮







ত্রৈতবাদ কি ও কেন ?

সত্যান্বেষী
0

 


ত্রৈতবাদ বাস্তবিকতা , বুদ্ধিগ্রাহ্যতা , সত্য , সম্ভাব্যতা এবং বৈজ্ঞানিক যথার্থ আধারের উপর প্রতিষ্ঠিত । ত্রৈতবাদ হচ্ছে বেদভিত্তিক একটি দর্শন । এই দর্শন অনুসারে , পরমাত্মা , জীবাত্মা এবং প্রকৃতি– এই তিনটি সত্তা অনাদি , নিত্য ও পৃথক ৷ এদের মধ্যে পরমাত্মা এই সৃষ্টির নিমিত্ত কারণ , প্রকৃতি উপাদান কারণ এবং জীবাত্মা সাধারণ কারণ ৷ এই দর্শন অনুসারে , পরমাত্মা এক , অদ্বিতীয় , চেতন , সর্বজ্ঞ , সর্বব্যাপী , আনন্দময় , একরস , বিকারশূন্য । অপরদিকে জীবাত্মা বহু , চেতন , একদেশী অল্পজ্ঞ । আর প্রকৃতি অচেতন , সর্বব্যাপী নয় ।
 
ত্রৈতবাদ নিয়ে ভালো ভাবে বুঝতে বিস্তর আলোচনার প্রয়োজন । একটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার পর আরো প্রশ্নের উদয় হবে এটাই স্বাভাবিক । স্বাধ্যায় এবং প্রশ্ন করার মাধ্যমে সম্যকরূপে জানতে সমর্থ হওয়া যাবে । কিন্তু এই একটা পোষ্টে সেটা কখনোই সম্ভব নয় ।
 
ত্রৈতবাদ অনুসারে পরমাত্মা , জীবাত্মা এবং প্রকৃতিকে অনাদি বলা হয়েছে । সাংখ্য এবং গীতায় এর নাম প্রকৃতি ও পুরুষ । পুরুষ শব্দটি পরমাত্মা এবং জীবাত্মা-উভয়ের বাচক । গীতাতেই জীবাত্মা ছাড়াও অন্য এক পুরুষের বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে , যা থেকে আমরা এই সিদ্ধান্ত নিতে পারি যে শ্রুতি , দর্শন এবং স্মৃতিপ্রস্থান একই সিদ্ধান্ত দিচ্ছে । উক্ত শাস্ত্রাদিতে পরমাত্মা , জীবাত্মা এবং প্রকৃতি উভয়কেই অনাদি বলা হয়েছে । অনাদি কী ? 
 
- যার কোনো সূচনা নেই । অর্থাৎ পরমাত্মা , জীবাত্মা এবং প্রকৃতির কোনো আদি নেই । আর আদি না থাকলে অন্তও আসবে না ।
 
এখানে একটা বিষয় স্পষ্ট করা প্রয়োজন । প্রকৃতি বলতে কেবল পৃথিবীকে বুঝানো হচ্ছে না । পৃথিবীর উপাদান-কারণকে বুঝানো হচ্ছে । অর্থাৎ পৃথিবীর আদি এবং অন্ত থাকলেও পৃথিবী যেসকল উপাদানে প্রস্তুত হয়েছে সেগুলোর সৃষ্টি বা বিনাশ নেই । অর্থাৎ যেমন শক্তির ধ্বংস নেই কেবল রূপান্তর হয় , এ ব্যাপারটাও অনেকটা তেমনই । 
 
एषा सनत्नी सनमेव जातैषा पुराणी परि सर्वं बभूव। 
मही देव्युषसो विभाती सैकेनैकेन मिषता वि चष्टे ॥
এষা সনত্নী সনমেব জাতৈষা পুরাণী পরি সর্বং বভূব। 
মহী দেব্যুষসো বিভাতী সৈকেনৈকেন মিষতা বি চষ্টে ॥
অথর্ববেদ: ১০/৮/৩০
 
পদার্থ: ‌ (এষা) এই (সনত্নী) সনাতন প্রকৃতি (সনং এবং) সৰ্ব্বদাই (জাতাঃ) কার্যোৎপাদন কারিণী (এযা) এই (পুরাণী) পুরাতন (সৰ্ব্বম্) সব কার্যে (পরিবভূব) পুর্ণভাবে অবস্থান করে (মহী) মহতী (দেবী) কান্তিময়ী (উসসঃ) কমনীয় পদার্থ সকলকে (বিভাতী) বিশেষরূপে আলােকিত করে (সা) সেই প্রকৃতি (একেন একেন) প্রত্যেক (মিষতা) গতিশীল জীবের সঙ্গে (বিচষ্টে) স্ব স্বরূপ বর্ণনা করে ।
অনুবাদ: এই নিত্য প্রকৃতি সৰ্ব্বদাই পরিণাম যুক্তা , পুরাতন , নব নব রূপ ধারিণী এবং সৰ্ব্ব কার্যে করণ রূপে বিরাজমানা । প্রত্যেক গতিশীল জীবের সঙ্গেই এই প্রকৃতি নিজের স্বরূপ ও সত্ত্বা প্রকাশ করিতেছে ।
 
 
त्रय: केशिन ऋतुथा वि चक्षते संवत्सरे वपत एक एषाम्।
 विश्वमेको अभि चष्टे शचीभिर्ध्राजिरेकस्य ददृशे न रूपम् ॥
ত্রয়: কেশিন ঋতুথা বি চক্ষতে সংবৎসরে বপত এক এষাম্। 
বিশ্বমেকো অভি চষ্টে শচীভির্ধ্রাজিরেকস্য দদৃশে ন রূপম্ ॥
ঋগ্বেদ: ১/১৬৪/৪৪
 
পদার্থ: (ত্রয়ঃ) তিন (কেশিনঃ) প্রকাশময় পদার্থ (ঋতুথা) নিয়মানুসারে (বিচক্ষতে) বিবিধ কার্য করিতেছে। (এষাম) ইহাদের মধ্যে (একঃ) এক (সংবৎসরে) সৃষ্টিকালে (বপতে) স্বপন করে (একঃ) এক (শচীভিঃ) শক্তি দ্বারা (বিশ্বম্) বিশ্বকে (অভিচষ্টে) দুই দিক হইতে দেখে (একস্য) একের (ঘ্রাজিঃ) বেগ (দদৃশে) দৃষ্ট হয় (রূপন) রূপ নয় ।
অনুবাদ: তিন প্রকাশময় পদার্থ সময়ানুসারে বিবিধ কার্য করিতেছে । ইহাদের মধ্যে ব্রহ্ম সৃষ্টিকালে বীজ বপন করে , জীব সামর্থ দ্বারা সংসারকে শুভ অশুভ দুই দিক হইতে ভােগ করে । প্রকৃতির শুধু বেগ দেখা যায় কিন্তু রূপ দেখা যায় না ।
ভাবার্থ: ব্রহ্ম, জীব ও প্রকৃতি এই তিনটি প্রকাশময় পদার্থ । ইহারা জগতের কারণ । প্রকৃতির কার্য চৰ্ম্ম চক্ষুতে দেখা যায় কিন্তু সূক্ষ্ম বলিয়া তাহার রূপ দেখা যায় না ।
 
এই তিন তত্ত্ব পরস্পর স্বরুপ থেকে ভিন্ন তথা প্রলয়বস্থা এবং সৃজনাবস্থায় একত্রে থাকে ।
এই পরমাত্মা , জীবাত্মা এবং প্রকৃতির কোনো সমষ্টি হয় না । সেজন্য এদের নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আলাদা সত্ত্বারও প্রয়োজন হয় না । তাহলে এই তিনটি আলাদা আলাদা হওয়া সত্ত্বার মধ্যে সম্পর্ক কী ? কীভাবে এরা কী কাজ করে ?
 
- পরমাত্মা নির্গুণ , তাই তিনি সর্বতোভাবে মুক্ত এবং প্রকৃতির গুণত্রয় তাকে আবদ্ধ করতে পারে না । সর্বব্যাপী হওয়ায় তিনি প্রকৃতি উপাদানসমূহকে রূপান্তর করেন এবং ভোগ হেতু নির্মাণ করেন ।
কিন্তু প্রকৃতি নিজের এই ভোগ গ্রহণ করতে পারে না । কেবল পরমাত্মা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় ।
অন্যদিকে জীবাত্মাকে প্রকৃতির গুণসমূহ (সত্ত্ব , রজঃ , তমঃ) আবদ্ধ করতে পারে । কারণ সে পরমাত্মার মতো নির্গুণ নয় । প্রকৃতির ভোগসমূহ সে ভোগ করে । কিন্তু এই জীবের অন্তিম চেষ্টা থাকে পরমাত্মা প্রাপ্তি । এখানে পরমাত্মা প্রাপ্তি বলতে জীবাত্মা গিয়ে পরমাত্মায় মিশে যাবে এমনটা ভাবা যাবে না । কারণ এরকম ভাবলে মনে হবে পরমাত্মা কোনো আলাদা স্থানে আছেন এবং তিনি সর্বব্যাপী নন । তাই জীবাত্মা প্রকৃতির ত্রিগুণ থেকে মুক্ত হয়ে সেখানে গিয়ে পরমাত্মায় মিশে যাবে , ব্যাপারটা এমন নয় । বস্তুতঃ জীবাত্মাও পরমাত্মার মতোই নির্গুণ হতে পারে তার কর্মের মাধ্যমে । জীবাত্মা যখন গুণত্রয়ের বন্ধন ছিন্ন করে নির্গুণ হয়ে যান তখন তিনি মুক্ত অবস্থা প্রাপ্ত করেন । শাস্ত্রে সেই জীবাত্মাকে মুক্ত পুরুষ বলা হয়েছে । তাহলে এখানে পরমাত্মা প্রাপ্তি বলা হলো কেন ? 
 
  • পরমাত্মা প্রাপ্তি কথাটি এখানে পরমাত্মার স্বরূপার্থে ব্যবহৃত । তাহলে জীবাত্মা কী পরমাত্মার মতোই হয়ে যায় ?
  •  না । মুক্ত পুরুষ কখনোই পরমাত্মার মতো সৃষ্টিক্রিয়াদি কার্য সম্পন্ন করতে পারে না । কেবল নির্গুণতা লাভ করে । অর্থাৎ জন্মমৃত্যুর চক্র থেকে মুক্ত হয় । তবে নির্গুণতা প্রাপ্ত হওয়ার পর ইচ্ছা করলেই সে পুনরায় জন্মগ্রহণ করতে পারে । অন্যদিকে পরমাত্মা কখনো জন্মগ্রহণ করে না । কেননা পরমাত্মা সর্বতোভাবে উদাসীন থাকেন এবং সর্বব্যাপী হওয়ার কারণে কোনো নির্দিষ্ট স্থানে , নির্দিষ্ট শরীরে আবদ্ধ হন না । 
 
আর অন্যদিকে প্রকৃতি কেবল রূপান্তর হয় । মুক্ত পুরুষ সম্পর্কে বেদ থেকে প্রমাণ -
 
অপশ্যং গোপামৈনপদ্যমানমা চ পরা চ পৃথিভিশ্চর॑ন্তম্ । 
স সধ্রীচীঃ স বিষূচীর্বসান আ বরীবর্তি ভুবনেষ্বন্তঃ।।
[ অথর্ববেদ - ৯/১০/১১ ]
 
১.(গোপাম্) যারা ইন্দ্রিয়ের রক্ষা করে (অনিপদ্যমানম্) বার বার বিবিধ যোনীতে অবতরণ করতে (অপশয়ম্) আমি দেখেছি। জিতেন্দ্রিয়তা দ্বারা মুক্ত হওয়া ওই পুরুষকে ( আ চ পরা চ) নিকটে এবং দূরে - আমাদের নিকট আসে আবার আমাদের ছেড়ে দূরে চলে যায় (মার্গং সে চরন্তম্) বিচরণ করতে আমি দেখেছি । যেখামে আমরা আছি সেখানেও আসে আবার অন্য লোক-লোকান্তরেও চলে যায় ।
২.(সঃ)ওই মুক্তাত্মা মানবকল্যাণ/লোকহিতের জন্য (সঘ্রীচী) যে শরীরের সাথে আমাদের ওঠা-বসা সেই শরীর ধারণ করে । এই শরীরের মাধ্যমেই আমাদের উপদেশ দেন এবং নিজের জন্মের উদ্দ্যেশ্য পূরণ করে । (সঃ বিষূচী) সেই মুক্তাত্মা বিভিন্ন লোকে শরীর ধারণ করে এবং ( ভূবনেষু অন্ত ) এই ভূবনে বিচরণ করে । লোকহিতের জন্য এই পুরুষকে " অতিমানব " বা মহাপুরুষ বলা হয় ।
ভাবার্থ : জিতেন্দ্রিয় পুরুষ মুক্তাত্মা হয়ে যায়। সে সময় - সময় লোকহিতের জন্য শরীর ধারণ করে এই ভূবনে বিচরণ করেন । 

[ আধ্যাত্মিক ভাষ্যঃ পণ্ডিত হরিশরণ সিদ্ধান্তালংকার ]

 
স স্মা কৃণোতি কেতুমা নংক্ত চিদ্ দূর আ সতে। 
পাবকো যদ্বনস্পতীন্প্র স্মা মিনাত্যজরঃ।।৪।।
[ ঋগ্বেদ ৫/৭/৪ ]
পদার্থঃ (সঃ) সেই (পাবকঃ) প্রভু আমাদের জীবনকে পবিত্রকারী (নংক্ত চিত্) রাত্রিতেও‌ , অত্যন্ত অন্ধকারেও এমনকি (দূরে আসতে) সর্বদা দূরে স্থিত পুরুষের জন্যেও (কেতুম্) [ জ্ঞানের আলোকে ] প্রকাশিত (আকৃণোতি স্ম) করেন প্রভু। বস্তুত প্রভুর কৃপাতেই আমরা [ জ্ঞানের ] আলোকে প্রাপ্ত হই। এই আলোকে তখন প্রাপ্ত করি (যদ্) যখন (অজরঃ) কখনো জীর্ণ হয় না সেই প্রভু (বনস্পতীন্) জ্ঞান রশ্মির [ প্রাপ্তকারী ] স্বামীদের‌ , জ্ঞানী পুরুষদের‌‌ , মুক্তাত্মা পুরুষদের (প্র আ মিনাতি স্ম) একবার পুনরায় পৃথিবীতে স্থাপন করেন । প্রভুর প্রেরণাতেই এই মুক্তাত্মা জন্ম-মৃত্যুর কষ্টকে স্বীকার করে এই পৃথিবীতে আসেন আর লোকজনকে প্রভুর সন্দেশ শুনান‌ ।
 
ভাবার্থঃ প্রভুর থেকে দূরে স্থিত অন্ধকারে মগ্ন পুরুষকে প্রভু স্বেচ্ছায় জন্ম নেওয়া মুক্তাত্মাদের দ্বারা, জ্ঞানের সন্দেশ শুনান , আর এইভাবে তাদের অজ্ঞানতার অন্ধকারকে দূর করেন।।
 
[ আধ্যাত্মিক ভাষ্যঃ পণ্ডিত হরিশরণ সিদ্ধান্তালংকার ]

 
মূলত মােক্ষ প্রাপ্ত জীবাত্মা - কেই মুক্তাত্মা বলা হয়ে থাকে । মুক্তাত্মা কি করতে পারে এই সম্পর্কে
শতপথ ব্রহ্মণ গ্রন্থ থেকে দেখুন-
 
"শৃণ্বন্ শ্রোত্রং ভবতি, স্পর্শয়ন্ ত্বগ্ভবতি, পশ্যন চক্ষুর্ভবতি,রসয়ন্ রসনা ভবতি, জিঘ্রন্ ঘ্রাণং ভবতি, মন্বানো মনো ভবতি, বোধয়ন্ বুদ্ধির্ভবতি, চেতয়ঁশ্চিত্তম্ভবত্যহঙকুর্বাণো হঙ্কারো ভবতি।।"
(শতপথ ব্রাহ্মণ কাং ১৪)
অর্থাৎ মুক্তি অবস্থায় জীবাত্মা শুনিতে ইচ্ছা করিলে স্বশক্তি দ্বারাই শ্রোত্র , স্পর্শ করিতে ইচ্ছা করিলে ত্বক, দেখিবার সংকল্প হইলে চক্ষু, স্বাদ গ্রহণের জন্য ঘ্রাণ, সংকল্প বিকল্প করিবার জন্য মন, নিশ্চয় করিবার জন্য বুদ্ধি, স্মরণ করিবার জন্য চিত্ত, অহংবুদ্ধির জন্য যেমন ইন্দ্রিয়গোলকের দ্বারা স্বকার্য সিদ্ধ করে সেইরূপ মুক্তি অবস্থায় স্বশক্তি দ্বারা সমস্ত আনন্দ ভোগ করে ।"এর থেকে একেবারে নিশ্চত ভাবে যানা যায় যে মুক্ত আত্মারা চাইলে অবতরণ করতে পারেন । 
 
ত্রৈতবাদ ভারতীয় আস্তিক ষড়দর্শন গুলোর সমন্বয়াত্মক দৃষ্টিকোণের প্রতিনিধিত্ব করে তথা বিভিন্ন সাম্প্রদায়িক দর্শনগুলোর কিছু না কিছু তত্ত্বের প্রতিনিধিত্ব‌ও করে ।
 
ত্রৈতবাদ অনুসারে জীবাত্মা অনাদি । জীবাত্মার স্বরূপ হল আনন্দময় না । তাই সে আনন্দ পেতে চায় । এই আনন্দ হল ব্রহ্মের সংস্পর্শ । এটাই মোক্ষ । জীব ভোগের জন্য বার বার জন্ম হয় যতক্ষণ পর্যন্ত মোক্ষ প্রাপ্তি না হয় । তার কর্ম অনুসারে যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু মোক্ষ প্রাপ্তি করবে পরে ঐ জীবাত্মা পুনরায় জন্মগ্রহণ করে ।
 
ঈশ্বর কর্তৃক জগৎ সৃষ্টির কারণ কী ? এটি আমাদের অনেক কমন প্রশ্ন । ঈশ্বর কেন এই জগৎ সৃষ্টি করেছেন ? ত্রৈতবাদ অনুযায়ী আমরা এর খুব সুন্দর ব্যাখ্যা পাই যা কিনা যোগ দর্শনে পতঞ্জলি মুনি করে গেছেন । 
 
যেকোনো কাজের তিনটি কারণ থাকে ।
নিমিত্ত কারণ , উপাদান কারণ , সাধারণ কারণ ।
নিমিত্ত কারণ হল কর্তা (who) , উপাদান কারণ কর্ম (what) , সাধারণ কারণ হল কার জন্য (why) ।
সহজভাবে বোঝালে , যদি একটা বাড়ির নির্মাণকে কার্য ধরি , তো মিস্ত্রি সেই বাড়ির নিমিত্ত কারণ , উপাদান কারণ ইট , বালু , সিমেন্ট , রড আর সাধারণ কারণ সেই বাড়িতে যারা থাকবে তারা ।
ত্রৈতবাদ মতে সাধারণ কারণ হল জীবাত্মা । কেননা ঈশ্বর নিজে এই জগৎকে কখনোই ভোগ করেন না । কাজেই এই জগতের সৃষ্টি জীবাত্মার ভোগের নিমিত্ত ।
 
সূত্র - তদর্থ এব দৃশ্যস্যা ঽঽত্মা। (যোগ দর্শন ২।২১)
শব্দার্থ - (তদ্-অর্থঃ) ওই জীবাত্মার ভােগ এবং অপবর্গের জন্য (এব) অবশ্যই (দৃশ্যস্য) দৃশ্যের (আত্মা) স্বরূপ হয় ।
সূত্ৰাৰ্থ - দৃশ্যের স্বরূপ জীবাত্মার ভােগ ও অপবর্গকে সিদ্ধ করার জন্য হয় ।
 
ব্যাখ্যা - এই সূত্রে দৃশ্যের কী প্রয়ােজন ; সেই বিষয়ে বলা হয়েছে এই দৃশ্যের রচনা ঈশ্বর , যাতে জীবাত্মা ভােগ এবং অপবর্গ রূপ প্রয়ােজনকে সিদ্ধ করতে পারে সেই জন্য করেছেন । এই সংসারে তিনটি পদার্থ রয়েছে ঈশ্বর , জীব ও প্রকৃতি । ঈশ্বর সকল কামনা হতে রহিত ; তাই তাঁর কাছে এই দৃশ্যের কোনাে প্রয়ােজন নাই । প্রকৃতি একটি জড়পদার্থ হওয়ায় সে নিজেকে স্বয়ং ভােগ করতে পারে না । কিন্তু জীবাত্মার নিজস্ব কোনাে আনন্দ না থাকায় সে এই দৃশ্যকে ভােগ করে ।
সূত্রঃ যোগ দর্শন ভাষ্য- আচার্য কপিল আর্য ।
 
মহর্ষি ব্যাসদেব বলেছেন— 
 
“ন কর্মাবিভাগাদিতি চেন্নাঽনাদিত্বাৎ; (ব্র০ সূ০ ২।১।৩৫)” অর্থাৎ জীবের কর্মপ্রবাহ অনাদি , যেহেতু জীবাত্মা স্বয়ং অনাদি । যদি প্রলয়কালে পরমাত্মা ভিন্ন জীব না থাকতেন , তবে মহর্ষি ব্যাস জীবের কর্মকে অনাদি বলতেন না । এই সৃষ্টিচক্রের কোন প্রারম্ভিক বিন্দু নেই । যদি অনাদি জীবের কোন শুরু বা জন্ম থাকতো , তখনই বলা যেতো জীবাত্মা উৎপন্ন হবার পর থেকে শুভ-অশুভ কর্ম করে , তারপর থেকে কর্মবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে নানা যোনিতে ভ্রমণ করছে । কিন্তু এই সৃষ্টি ও প্রলয়রূপী চক্রের কোন Starting point নেই । অনাদিকাল থেকেই অনাদি জীবগণ কর্ম করেই আসছে , সেই অনুযায়ীই তারা মনুষ্য , পশু, কীটাদি যোনিতে জন্মগ্রহণ করছে । 
 
আর , যদি সৃষ্টিচক্রের কোন প্রারম্ভিক বিন্দু থাকতো , মানে একদম প্রথম সৃষ্টি বলে কিছু থাকতো , তাহলে ঈশ্বরের ওপর এই দোষ আরোপ হতো— কেন তিনি প্রথম কল্পের সৃষ্টিতে কোন জীবাত্মাকে মনুষ্যদেহ দিলেন এবং কোন জীবাত্মাকে পশুদেহ অথবা কীটপতঙ্গের দেহ দিলেন ? কোন পাপের ফলে , কী দোষে ওই আত্মাগুলো নিম্নযোনির দেহ লাভ করলো ? তাহলে ঈশ্বর অন্যায়কারী ও পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে পড়তেন ।
 
ঋগ্বেদ‌: ১/১৬৪/২০‌ ঋগ্বেদ: ১০/৮২/৬ যজু: ১৭/৩১
যজু: ১১/৪ ঋগ্বেদ: ৭/৩২/২৬ সামবেদ: পূর্বাচিক: ৩/২/৭ অথর্ববেদ: ২০/৭৯/১ ঋগ্বেদ: ১/৫৭/৪‌ অথর্ববেদ: ২০/১৫/৪ যর্জুবেদ: ৩২/১৫‌ ঋগ্বেদ: ৮/১৩/৯ যজু: ৩১/১৫ ঋগ্বেদ: ৮/৯৬/৬ অথর্ব: ১০/৭/১
যজু: ৪/৪০ যজু: ৪০/৪ অথর্ব: ১০/৮/১২ যজু: ৩২/৮
অথর্ব: ১০/৮/১২ অথর্ব: ১০/৮/৪০ অথর্ব:১০/২১/১
অথর্ব:১০/৪/১ ঋগ্বেদ: ১০/৯০/২ ঋগ্বেদ: ১০/৮২/৩ , ৬/৯/৩ ) ঋগ্বেদ: ১/১৬৪/৬ , ১০/১৬৪/৩৭‌ , ১০/৭৯/৬
ঋগ্বেদ: ৫/৫১/১৬, ১০/৮২/৩ ঋগ্বেদ: ১০/১৮/৩ , ১০/৩৬/৮ ঋগ্বেদ: ১০/৮২/৭ অথর্ববেদ: ২/৩৬/৩ যজুর্বেদ: ৩৮/২০ ঋগ্বেদ: ১/১/৯ ঋগ্বেদ: ১/১০/৬ যজু: ৩২/৩ অথর্ব: ৯/৯/২০
একাক্ষরং পরং ব্রহ্ম।। (মনু. ২/৮৩)
ততঃ স্বয়ম্ভুর্ভগবানব্যক্তো ব্যঞ্জয়ন্নিদম্। মহাভূতাদিবৃত্তৌজাঃ প্রাদুরাসীৎ তমোনুদঃ।। (মনু. ১/৬) যোহসাবতীন্দ্রিয়গ্রাহ্যঃ সূক্ষ্মোহব্যক্তঃ সনাতনঃ। সর্বভূতময়োহচিন্ত্যঃ স এব স্বয়মুদ্বভৌ।। (মনু. ১/৭)
সোহভিধ্যায় শরীরাৎ স্বাৎ সিসৃক্ষুর্বিবিধাঃ প্রজাঃ। (১/৮)স্বানি স্বান্যভিপদ্যন্তে তথা কর্মাণি দেহিনঃ।। (১/৩০)কর্মণাঞ্চ বিবেকার্থং ধর্মাধর্মৌ ব্যবেচয়ৎ। দ্বন্দ্বৈরযোজয়চ্চেমাঃ সুখদুঃখাদিভিঃ প্রজাঃ।। ( মনু. ১/২৬)মনু. (১/৩৭-৪০) তথা ৪৩-৪৬স ব্রহ্ম পরমভ্যেতি।। (মনু. ২/৮২)আসীদিদং তমোভূতমপ্রজ্ঞাতমলক্ষণম্। অপ্রতর্ক্যমবিজ্ঞেয়ং প্রসুপ্তমিব সর্বতঃ।। (মনু. ১/৫) ইন্দংজগৎ তমোভূতং তমসি স্থিতং লীনমাসীৎ। তমঃ শব্দেন গুণবত্যা প্রকৃতিনিদিশ্যতে।।কুল্লূকভট্টভাষ্য‌, মনু. পৃ. ৪
মনু. ২/৬তভোনুদঃ প্রকৃতিপ্ররেকঃ।। ( কুল্লূকভট্টভাষ্য, পৃ. ৬)দেখিয়ে - মণিপ্রভা হিন্দী ভাষ্য, পৃ. ৩ দেখুন --- (মনু. ১/৮)য়তকারণমব্যক্তং নিত্যং সদসদাত্মকম্। তদ্বিসৃষ্টং স পুরুষো লোকে ব্রহ্মেতি কীর্ত্যতে।। (মনু. ১/১)ব্রহ্মপুরাণ (১/৩৩) । বিষ্ণুপুরাণ (১/২/১৯-২০)। কূর্মপুরাণ পূর্বার্দ্ধ ৪/৬) ]
ঈশ্বরঃ কারণং পুরুষ কর্তাফল্যদর্শনাত্।। ( ন্যায়. ৪/১/১৬ (
পুরুষোহয়ংসমীহপানাং নাবশ্যং সমীহাফলমাপ্মোতি তেনানুমীয়তে পরাধীনং পুরুষস্য কষেফলারাধনমিতি। যদধীনং স ঈশ্বরঃ।। তস্মাদীশ্বরঃ কারণমিতি।। --( বাৎস্যায়নভাষ্য, ন্যায়. পৃষ্ঠা- ২৬০)
গুণবিশিষ্টমাত্মান্তরমীশ্বর।। ( ন্যায়. পৃ.- ২৬২)
গুণৈনিত্যজ্ঞানেচ্ছাপ্রয়ত্নৈঃ সামান্যগুণৈশ্চ সংয়োগাদিভির্বিশিষ্টমান্ত রং জীবেভ্যো ভিন্ন আত্মাজগদারাভ্যঃ সৃষ্টি কর্তা বেদদ্বারাহিতাহিতোপদেশকোজ-গতঃ পিতেতি।।
( বাৎস্যায়নভাষ্য, ন্যায়. পৃ. ২৬২)
ইচ্ছাদ্বেষপ্রয়ত্নসুখদুঃখজ্ঞানান্যাত্মনো লিগমিতি।। (ন্যায়. ১/১/১০) ন্যায়. ৩/১/১, ৩/১/২৫
দর্শনস্পর্শনাভ্যামে--র্থ গ্রহণাত্।। ( ন্যায়.৩/১/১)
শরীরদাহে পাতকাভাবাত্।। ( ন্যায়. ১/১/৪)
ন, কার্যাশ্র্যকৃর্তৃবধাত্।। (ন্যায়. ১/১/৬)
পূর্বাভ্যস্তস্মৃত্যনু বন্ধাজ্জাতস্য হর্ষভয়শোকসংপ্রতিপত্তেঃ।। (ন্যায়. ৩/১/১৬)
প্রেত্যাহারাভ্যাসকৃতাৎস্তন্যাভিলাষাত্।।
( ন্যায়. ১/১/২২)পরং বা ত্রুটেঃ।। (ন্যায়. ৪/২/১৫)
অস্পর্শত্বাত্।। (ন্যায়. ২/২/২২) ন কর্মানিত্যত্বাত্।। (ন্যায়. ২/২/২৩)নাণুনিত্যত্বাত্।। (ন্যায়. ২/২/২৪)
ন বিনষ্টেম্যো নিষ্পতেঃ।। ( ন্যায়. ৩/২/১৭)
ন বিমষ্টাদ্বীজাদংকুর উৎপদ্যত ইতি্ তস্মান্নাভাবাদভাবোদ্ভাবোৎপত্তিরিতি।। (ন্যায়. বাৎস্যায়ন ভাষ্য, পৃ০ ৪/২/১৪)
ক্রমনির্দশাদত্রতিষেধঃ।। (ন্যায়. ৩/২/১৮) ন প্রলয়োহণুমদভাবাত্।। (ন্যায়. ৪/২/১৪)
ভাই পরমানন্দ, মেরে অন্ত সময় কা আশ্রয়, পৃ, ৫০।।
যোগ. (১/২৬) প্রণিধাতাদ্ভক্তিবিশেষাত্।। ( যোগ, ব্যাসভাষ্য, পৃষ্ঠা ৫৮)তত্র ভক্তি বিলেষো বিশিষ্টমুপাসনং সর্ব ক্রিয়াণাং তত্রার্পণম্।।
যোগ. ১/২৪ পুরুষবিশেষঃ অন্যেভ্যঃ পুরুষেভ্য বিশিষ্যত ইতি বিশেষঃ। দেখিয়ে ভোজবৃত্তি, (যোগ.পৃ. ৬৩) যোগ০ (১/২৫) কশ্চিত্ কশ্চিদেবাতীতাদি গৃহ্নাতি কশ্চিদবহুতরং, কশ্চিত্ বহুতমমতি গ্রাহ্যাপেক্ষয়া গ্রহণে হ স্যাল্পতত্বং বহুত্বং কৃতম্--- এতদ্বিবর্ধমানং যত্র নিষ্কান্তমতিশয়াত্ স সর্বজ্ঞ ইতি।। (বাচস্পতিমিশ্র টীকা. যোগ., পৃ. ৩৭)যত্রকাষ্ঠাপ্রাপ্তির্জ্ঞানস্য স সর্বজ্ঞঃ।। ( ব্যাসভাষ্য)যোগ. ১/২৫ তস্য বাচকঃ প্রণবঃ ।। যোগ‌. ১/২৭ইৎথমুক্ত স্বরূপস্যেশ্বরস্য‌ বাচকোভিধায়কঃ প্রকর্ষেণ নুয়তে‌ স্তুয়তে‌ অনেনেতি‌ নীতি স্তোতি‌ বা প্রণব ওঙ্কারঃ, তয়োশ্ব বাচ্যবাচক ভাবলক্ষণ সম্বোন্ধ নিত্যঃ ।। ভোজবৃত্তি, পৃ. ৭৩ যোগ‌. ১/১৮ প্রণবস্য‌ জপঃ প্রণবাভিবেদ্যস্য চেশ্বরস্য‌ ভাবনম্ । তদস্য‌ যোগিনঃ প্রণবং জপতঃ প্রণবার্থ চ‌ ভাবয়তশ্চিত্তমে কাংগ্রসম্পদ্যতে ।। যোগ. ব্যাসভাষ্য. পৃ. ৭৩ । তপঃ স্বাধ্যায়েশ্বরপ্রণিধানানি ক্রিয়া যোগঃ । ২/১।। তথা সমাধিসিদ্ধিরীশ্বরপ্রণিধানাত্ ।। ২/৪৫ ।
অর্থ প্রধানপুরুষব্যতিরিক্তঃ কোয়মীশ্বরোনামিতি‌ ।। ব্যাস‌ ভাষ্য, পৃ.৫৮ ।। যোগাঙ্গানুষ্ঠানাদশুদ্ধিক্ষয়ে জ্ঞানদীপ্তিরাবিবেককখ্যাতেঃ ।। ২/২৮ যমনিয়মাসনপ্রাণায়ামপ্রত্যহারধারণাধ্যান‌ সমাধয়োষ্টাংগানি ।। ২/২৯।। যোগশ্চিত্তবৃত্তিনিরোধঃ ।। যোগ. ১/১ যোগ. ১/২ সত্যার্থ প্রকাশ: নবম সমুল্লাস
স্বরূপ প্রতিষ্ঠা তদানী চিতশক্তির্য়থা কৈবল্যে, ব্যাস ভাষ্য‌: পৃ. ১১। তথা দ্রষ্টুঃ পুরুষস্য‌ তস্মিনকালে স্বরুপে চিন্মাত্রতায়ামবস্থানং স্থিতির্ভবতি -- ভোজবৃত্তি
বৃত্তিসারূপ্যমিতরত্র‌ ।। যোগ. ১/৪
দৃষ্টানুশ্রবিকবিষয়বিতৃষ্ণাস্য‌ বশীকার সঙ্গা বৈরাগ্যম্ ।। ১/১৫যোগ‌. ১/১৬ দৃষ্টানুশ্রবিকবিষয়দোষ দর্শীবিরক্তঃ পুরুষদর্শনাভ্যাসাত্তচ্ছুদ্ভিপ্র- বিবেকাপ্যায়িত
বুদ্ধিগুণেভ্যো ব্যক্তাব্যক্ত ধর্মকেভ্যো বিরক্ত‌ইতি ।। যোগ. ব্যাসভাষ্য. পৃ. ৩৭
অবিদ্যাস্মিতারাগদ্বেষাভিনিবেশঃ পঞ্চ ক্লেশা‌ঃ ।। যোগ. ২/৩ সতিমুলেতদ্বিপাকোজাত্যায়ুভৌগঃ । যোগ. ২/১৩ তদা‌জ্ঞাতশ্চিত্তবৃত্তয়স্তৎপ্রভোঃ পুরুষস্যাপরিণামিত্বাত্ ।। যোগ. ৪/১৮ যোগ‌. ১/৪৫
অতঃ প্রধানে‌ সৌক্ষ্ম্যং নিরতিশয়ং ব্যাখ্যাতম্ ।
যোগ. ব্যাসভাষ্য. পৃ. ১১৫
লয়ং গচ্ছতি তল্লিঙ্গ ন লয়ং গচ্ছতি তদলিঙ্গম্ ন‌ ক্বেচিল্লীয়তে - ইত্যলিঙ্গ‌ প্রধানং তৎপর্যন্তং সূক্ষ্মবিষয়ত্বম্ ।। ভোজ‌ বৃত্তি, পৃ. ১১৬
অলিঙ্গম‌্ প্রধানং তদ্ধি ন ক্বেচিল্লয়ং গচ্ছতি । বাচস্পতি মিশ্রটীকা । পৃ. ৬২ যোগ. ২/১৯
গুণাংনাং পর্বাণ্যবস্থাবিশেষাশ্চত্বারো জ্ঞাতব্যা ইত্যুপদিষ্টং ভবতি । বিশেষা মহাভুতেন্দ্রিয়াণি অবিশেষাস্তন্মাত্রান্তঃ করণানি‌, লিঙ্গমাত্রং বুদ্ধিঃ অলিঙ্গমব্যমিত্যুক্তম্ ।। ভোজ বৃত্তি, পৃ. ১৬৪
সাংখ্য যোগৌপৃথগ্বালাঃ প্রবদন্তি ন পণ্ডিতাঃ । এক মব্যাস্থিতঃ সম্যগুভয়োবিন্দতে ফলম্‌ । গীতা. ৫/৪ যত্যাংখ্যৈঃ প্রাব্যতে স্থানং তদ্যোগৈরপি গম্যতে ।। ৫/৫
পরমর্ষিকপিলঃ সাংখ্য বিদ্যায়াস্তদনুগত যোগ‌বিদ্যাশ্চ‌আদিম প্রবক্তেতি শিষ্টপরম্পরা সপ্রসিদ্ধিঃ । সম্পাদক শ্রীরামশঙ্কর ভট্টাচার্য. যোগের ভূমিকা. পৃ.
অতঃ সাংখ্যযোগৌ পরস্পরপুরকাবিতি কথয়িতুং শক্যতে ।। পৃ. ২
 
ন্যায় দর্শনে ত্রৈতবাদের বিবেচনে‌ যেটা‌ নিষ্কর্ষ হয় যে , ন্যায় দর্শন অনুসারে ঈশ্বর সৃষ্টিকর্তা । তিনি পরমাণু‌ থেকে যা‌ নিত্য‌ মূল উপাদান , তা‌ থেকে সৃষ্টি করেন অত‌এব‌ তিনি সৃষ্টির নিমিত্ত কারণ‌ । তিনি‌ই জীবের কর্মফল‌ প্রদান করেন । তিনি জীবাত্মা‌ থেকে ভিন্ন । জীবাত্মা শরীর এবং ইন্দ্রিয় থেকে ভিন্ন চেতন‌ সত্ত্বা । দেহান্তের সময় যার‌ মৃত্যু হয় না । নিজের‌ কর্মের দ্বারা নতুন শরীর ধারণ‌ করে অত‌এব জীবাত্মা নিত্য । ঈশ্বর, জীবাত্মা , পরমাণু‌ এই তিনটি স্বতন্ত্র স্বত্তা তথা পরস্পর ভিন্ন । ঈশ্বর , জীব এবং মূল‌ উপাদান পরমাণুকে নিত্য‌ মানার কারণে ন্যায় দর্শনে ত্রৈতবাদের সত্ত্বা বিদ্যমান ।
 
যোগ দর্শনে‌ও সৎকার্যবাদকে সিদ্ধান্ত হিসেবে মান্যতা দেওয়া হয়েছে । প্রলয়কালে সম্পূর্ণ জগৎ‌ প্রকৃতিতে‌ লীন হয়ে যায়‌ । পরন্তু প্রকৃতির কোনো উপাদান কারণ‌ নাই ‌অত‌এব কোনো প্রকার উপাদান কারণে‌ লীন‌ হয় না । অত‌এব প্রকৃতিকে এই সূত্রগুলোতে অলিঙ্গ বলা হয়েছে । যোগ‌ দর্শনে ঈশ্বর‌ বিষয়ক মান্যতা বেদানুকূল আস্তিক পরম্পরা‌ দ্বারা সম্বন্ধ রাখে । ভিত্তিহীন অবৈদিক অদ্বৈতপ্রতিপাদিত ঈশ্বরের কোনো সংকেত‌ই নাই । ঈশ্বরকে সর্বজ্ঞ , অত‌এব অবিদ্যা‌ রহিত স্বীকার‌ করা হয়েছে । সেই ঈশ্বর‌ জীবাত্মার জন্য অর্থ সহিত জপ‌ এবং ধ্যান করার‌ যোগ্য‌ তাঁর প্রণব‌ বাচক‌ ও৩ম্‌ শব্দ দিয়েছেন । এখানে পুরুষ শব্দ শুধুমাত্র জীবাত্মার জন্য প্রযুক্ত‌ হয়েছে । জীবাত্মা শরীরী, অবিদ্যাগ্রস্থ এবং কর্মফলের চক্রে‌ আবদ্ধ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে । সমাধি‌ দ্বারা‌ জীবাত্মা কৈবল্য‌কে প্রাপ্ত করে । প্রকৃতি নিত্য‌ তথা‌ পরিণামবালী । প্রকৃতি স্বয়ং কার্য জগতের উপাদান কারণ । প্রকৃতির কোনো উপাদান কারণ‌ নাই । ঈশ্বর , জীব এবং প্রকৃতি এই তিন সত্তা স্বতন্ত্র সত্তা হিসেবে যোগ‌ দর্শনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে । অত‌এব , এখানে স্পষ্টভাবে ত্রৈতবাদের‌ পরম্পরা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ।
 
সাংখ্যে ঈশ্বর সত্তাকে‌‌ স্বীকার করা হয়েছে এবং সেই সর্বোচ্চ সত্তাকে বুঝাতে ঈশ্বর‌ শব্দের প্রয়োগ‌ হয়েছে । সাংখ্যে জীবাত্মাকে বুঝাতে পুরুষ শব্দের
প্রয়োগ হয়েছে । সাংখ্যে পরিণামিনী প্রকৃতির বর্ণনা রয়েছে । সাংখ্যে জীবাত্মার‌ বন্ধন হিসেবে প্রকৃতিকে মান্যতা দেওয়া হয়েছে এবং এর হেতু
অবিদ্যাকে বলা হয়েছে । জ্ঞান দ্বারা মুক্তির মান্যতা দেওয়া হয়েছে । সাংখ্যে কৈবল্য‌ মু্ক্তির বর্ণনা রয়েছে । সাংখ্যে চেতন‌ তত্বকে অপরিণামী বলা হয়েছে ।
 
বাংলাদেশ অগ্নিবীর 🖤
সত্য প্রকাশে নির্ভীক সৈনিক l

Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)