✅ প্রেমের বিয়ে কী গান্ধর্ব বিবাহ ❓এটি কী ধর্মীয় দৃষ্টিতে বৈধ ❓
🍁 ভগবান মনু স্বীয় মনুস্মৃতিতে ৮ প্রকার বিবাহের কথা উল্লেখ করেছেন । যথাক্রমে -
ব্রাহ্মো দৈবস্তথৈবার্ষঃ প্রাজাপত্যস্তথাসুরঃ ।
গান্ধর্বো রাক্ষসশ্চৈব পৈশাচশ্চাষ্টমোঽধমঃ ।।
মনুস্মৃতি ৩।২১
অর্থাৎ, বিবাহ আট প্রকার, যথা- ব্রাহ্ম, , দৈব, আৰ্ষ, প্রাজাপত্য, আসুর, গান্ধর্ব, রাক্ষস ও অধম পৈশাচ ।
মূল আলোচ্য বিষয়ে প্রবেশ করার আগে জেনে নেওয়া উচিত মহর্ষি মনু গান্ধর্ববিবাহ বলতে ঠিক কী বুঝিয়েছেন । মহর্ষি মনু বলেন -
ইচ্ছয়ান্যোন্যসংয়োগঃ কন্যায়াশ্চ বরস্য চ ।
গান্ধর্বঃ স তু বিজ্ঞেয়ো মৈথুন্যঃ কামসম্ভবঃ ।।
মনুস্মৃতি ৩।৩২
অর্থাৎ, বর ও কন্যার ইচ্ছানুসারে উভয়ের যে সংযোগ হয় এবং কামাসক্ত হয়ে উভয়ে মনে মনে স্বীকার করে নেয় যে, তারা উভয়ে স্ত্রী- পুরুষ—এরূপ বিবাহকে গান্ধর্ববিবাহ বলে।
এই বিবাহ বর্ণনায় উল্লেখযোগ্য একটি শব্দ হলো 'মৈথুন্যঃ কামসম্ভবঃ' অর্থাৎ এখানে কামনাজাত মৈথুন অর্থাৎ শারীরিক আকর্ষণই মূখ্য । বৈবাহিক দায়িত্ব এখানে মূখ্য বিবেচ্য নয় । তাই যারা কিনা নানাবিধ বাধার কারণে স্বীয় অভিরুচিতে বিয়ে করে গান্ধর্ববিবাহ বলে তাকে বৈধতা দিতে চাচ্ছেন নিজের অজান্তেই কী সেই বিয়েকে নিজের মানহানির কারণ হিসেবে সাব্যস্ত করছেন না ?
⛔ যে মনুস্মৃতিতে এই ৮ প্রকার বিয়ের কথা আছে তাতেই গান্ধর্ববিবাহকে নিন্দিত ও পরিত্যাজ্য বলা হয়েছে -
ইতরেষু তু শিষ্টেষু নৃশংসানৃতবাদিনঃ ।
জায়ন্তে দুর্বিবাহেষু ব্রহ্মধর্মদ্বিষঃ সুতাঃ ॥
অনিন্দিতৈঃ স্ত্রীবিবাহৈরনিন্দ্যা ভবতি প্রজা ।
নিন্দিতৈর্নিন্দিতা নৄণাং তস্মান্নিন্দ্যান্বিবর্জয়েৎ ॥
মনুস্মৃতি ৩।৪১-৪২
অর্থাৎ, এই চার প্রকার বিবাহ বাদে অবশিষ্ট— আসুর, গান্ধর্ব, রাক্ষস ও পৈশাচ এই ৪ (চারি) প্রকারের দুষ্ট বিবাহে উৎপন্ন সন্তান নিন্দিত কর্মের কর্তা মিথ্যাবাদী, বৈদিক ধর্মের বিদ্বেষী ও নীচ স্বভাবযুক্ত হয় । এজন্য যে সব নিন্দিত বিবাহে সন্তান নীচ হয়, তা ত্যাগ করে যে সব উত্তম বিবাহে সন্তান উত্তম হয়, তা-ই করা অত্যুত্তম কাৰ্য ।
- সারতত্ত্বঃ
১। বৈদিক শাস্ত্রে কন্যা ও বরের যাচাই-বাছাই করার অনুমোদন বিদ্যমান - https://www.agniveerbangla.org/2023/02/blog-post_22.html?m=1
২। যদি উপযুক্ত সাদৃশ্য, শারীরিক -মানসিক বৈসাদৃশ্য না থাকে , গুণ - কর্মস্বভাবজাত স্ববর্ণ হয় ইত্যাদি সমস্যা না থাকে তবে তাদের মধ্যে বিবাহ হবে । যদি উপযুক্ততা সত্ত্বেও মাতা-পিতা তা না মানেন তবে তা বৈদিক শাস্ত্রের উলঙ্ঘন ।
৩। অধুনা নর-নারীরা নানা বাধার কারণে বিবাহকে উপলক্ষ রেখেই নিরুপায় হয় আইনি ও ধর্মীয়ভাবে যে বিয়ে করেন তা উৎসাহপ্রদায়ক না হলেও তারা নিরুপায় হয়েই করেন । এমতাবস্থায় যেহেতু তা কামনাবাসনা বিষয়ভোগের জন্য নয় বরং পরিস্থিতিবশতঃ বাধ্য হয়ে করছেন তাকে মৈথুন্যঃ কামসম্ভবঃ'' অর্থাৎ শারীরিক ভোগ সর্বস্ব নামে মাত্র বিবাহ অর্থাৎ গান্ধর্ববিবাহ না বলা উচিত ।
৪। কুতর্ককারীরা বলেন বিবাহ বিবাহই, তাই গান্ধর্ব নামকরণেও আপত্তি নেই । কিন্তু গান্ধর্ববিবাহ নাম মহর্ষি মনু প্রদত্ত তাই এই বিবাহের স্বরূপ নিয়ে মহর্ষি মনুর মতামতই চূড়ান্ত । পাশাপাশি মহর্ষি মনু ৮ প্রকার বিবাহে কেবল প্রকার বলেছেন । উত্তম ও নিকৃষ্ট পরে বিভক্ত করেছেন । গান্ধর্ববিবাহ যদি বিবাহ হয় তবে জোর করে বা মদ্যপ কন্যা তুলে নিয়ে করা রাক্ষস বা পৈশাচ বিবাহ এসকল সম্ভোগকারীদের নিকট প্রকৃত বিবাহ হিসেবে স্বীকৃতি পাবে তো ?
অর্থাৎ, যদি কেউ গান্ধর্ববিবাহ করেছে বলে তাহলে বুঝতে হবে, কেবল শারীরিক সম্ভোগ ও কামনার বশীভূত হয়ে তারা একত্রিত হয়েছে ।
বাংলাদেশ অগ্নিবীর