দৈনিক বেদবাণী


এই সমগ্র সংসার নিরোগ এবং শুভচিন্তা যুক্ত হোক । যজুর্বেদ ১৬.৪                    সূর্য-এর আলোয় স্বয়ং আলোহীন চাঁদ আলোকিত হয় । ঋগ্বেদ ৫.৪০.৫                    প্রশংসনীয় সংস্কৃতি, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও মাতৃভূমি— এই ত্রয়ী সুখ-সমৃদ্ধি প্রদান করে। ঋগ্বেদ ১.১৩.৯                    উত্তম জীবন লাভের জন্য আমাদের জ্ঞানীদের সাহচর্যে চলা উচিৎ। ঋগ্বেদ ১.১২.১৬                    যে ব্যক্তি সম্পদ বা সুখ বা জ্ঞান নিঃস্বার্থভাবে দান করে, সে-ই প্রকৃত মিত্র। ঋগ্বেদ ২.৩০.৭                    মানুষ কর্ম দ্বারাই জগতে মহত্ত্ব ও প্রসিদ্ধি লাভ করে। ঋগ্বেদ ৩.৩৬.১                    হে পতি! তোমার স্ত্রীই গৃহ, স্ত্রীই সন্তানের আশ্রয়। ঋগ্বেদ ৩.৫৩.৪                    পরমাত্মার নিয়ম বিনষ্ট হয় না; তা অটুট, অচল ও অপরিবর্তনীয়। ঋগ্বেদ ৩.৫৪.১৮                    এই ধর্মের মার্গই সনাতন, এই পথে চলেই মানবগণ উন্নতি লাভ করে। ঋগ্বেদ ৪.১৮.১                    পরমাত্মার নিকট কোনো মানুষই বড় বা ছোট নয়। সকল মানুষই সমান এবং পরস্পরের ভ্রাতৃস্বরূপ। ঋগ্বেদ ৫.৬০.৫                    যে ব্যক্তি অকারণে অন্যের নিন্দা করে, সে নিজেও নিন্দার পাত্র হয়। ঋগ্বেদ ৫.২.৬                    নিশ্চিতরূপে এই চতুর্বেদ কল্যাণপ্রদায়িনী এবং মানবকে জ্ঞান প্রদান করে ধারণকারিণী। ঋগ্বেদ ৫.৪৭.৪                    বীর মানবের জন্য পর্বতও সুগম হয়ে যায়। ঋগ্বেদ ৬.২৪.৮                    আমরা অন্যের সঞ্চিত পাপের কর্মফল ভোগ করি না। ঋগ্বেদ ৬.৫১.৭                    হে মিত্রগণ! ওঠো— উদ্যমী হও, সাবধান হও এবং এই সংসাররূপী নদীকে অতিক্রম করো। ঋগ্বেদ ১০.৫৩.৮







ধর্ম,বিজ্ঞান ও ইতিহাসের আলোকে ভূত প্রেত ও জ্বীন

সত্যান্বেষী
0


  •  বৈজ্ঞানিক ব্যাখা:

অজানাকে মানুষের বড় ভয়। এই ভয়ের পেছনে আছে অনিশ্চয়তা। সে জন্যই অন্ধকারকে মানুষ যুগ যুগ ধরে ভয় পেয়ে আসছে। কবরস্থান বা শ্মশানের পাশ দিয়ে দিনের বেলায় হাঁটতে কিন্তু অত ভয় করে না কারও। রাতদুপুরে আবার অতি সাহসীরও হাঁটু কেঁপে যায় ওই রকম জায়গা দিয়ে হেঁটে যেতে।


অজানা ও অনিশ্চয়তাকে ভয় পাওয়ার এ রহস্যের বীজ আছে মানুষের জিনে। জিন মানে জেনেটিক কোড। ডিএনএতে লেখা যে জৈব কোড কাজ করে জীবনের নীলনকশা হিসেবে। সেই জিনে লেখা আছে, অজানাকে ভয় পাওয়ার কথা তবে তা অভ্যাসগত কর্ম হিসেবে সংযুক্ত হয়েছে দিনের পর দিন।

 অনিশ্চয়তা ও অন্ধকারকে ভয় পাওয়ার কথা। কারণ, সতর্ক করে তোলা। প্রাচীনকালে গুহাবাসী মানুষের অন্ধকারে সতর্ক থাকা প্রয়োজন ছিল। বিপদ ওত পেতে থাকতে পারে যেকোনোখানে। অজানা পরিবেশে, অজানা যেকোনো কিছুর ব্যাপারে বা অন্ধকারে অনিশ্চয়তার মধ্যে তাই সতর্ক থাকা দরকার, যাতে প্রস্তুত থাকা যায়। হুট করে কোনো বিপদে পড়তে না হয়। এই ভয় আমাদের ডিএনএতে রয়ে গেছে আজও। আমরা তাই ভয় পাই, ভয় পেতে চাই। ভয় পাওয়াটা সত্যি না হলে উপভোগও করি। সে জন্যই মানুষ ভূতের গল্প পড়ে, মুভি দেখে।

behaviour /personality effect over gene >

https://open.lib.umn.edu/intropsyc/chapter/11-3-is-personality-more-nature-or-more-nurture-behavioral-and-molecular-genetics/


https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC1120191/

পরীক্ষাগারে বিস্তর সময় খরচ করে ভূতের অস্তিত্ব বা অনস্তিত্ব প্রমাণের গুরুদায়িত্বটি পালনে আগ্রহ দেখাননি তেমন কেউ। এই তত্ত্ব নিয়ে মানুষ মাথা ঘামিয়েছে সভ্যতার আদিকাল থেকে। মৃত্যুর পরে আত্মার অস্তিত্ব বিদ্যমান থাকে কি থাকে না, তা নিয়ে দর্শনশাস্ত্র যতটা না ভেবেছে, তার চেয়ে অনেক বেশি ভেবেছেন ভৌতিক গল্পের রচয়িতারা। আর এই সব কাহিনির শ্রোতা-পাঠকও তাদের অবিশ্বাসকে মুলতবি রেখে শুনে অথবা পড়ে গিয়েছে ভূতের গল্প যুগের পরে যুগ ধরে। কিন্তু গল্পের শেষে সেই প্রশ্নটাই উঠেছে ভূত কি সত্যিই আছে?


যুক্তিবাদী বিজ্ঞানমনস্করা সর্বদাই সন্দেহ প্রকাশ করেছেন ভূতের অস্তিত্বে। তারা বার বার বলেছেন, ভূত যে রয়েছে, তার প্রমাণ কোথায়? এর উত্তরে ভূতবাদীরা পাল্টা প্রশ্ন করেছেন সে যে নেই, তার প্রমাণটাই বা কই? এহেন চাপান উতোরে কেটে গিয়েছে অনেক সময়। কিন্তু পরীক্ষাগারে বিস্তর সময় খরচ করে ভূতের অস্তিত্ব বা অনস্তিত্ব প্রমাণের গুরুদায়িত্বটি পালনে আগ্রহ দেখাননি তেমন কেউ।

https://www.google.com/url?sa=t&source=web&rct=j&opi=89978449&url=https://en.m.wikipedia.org/wiki/Large_Hadron_Collider&ved=2ahUKEwjxnoyPvr6CAxX42DgGHdsFDgMQFnoECCwQAQ&usg=AOvVaw0XVNaKJDFRV4LnDdNdcHYG


এই কাজেই এগিয়ে এসেছিলেন বিশ্বখ্যাত পদার্থবিদ ব্রায়ান কক্স। এই ইংরেজ পরমাণু বিজ্ঞানী টেলিভিশনে বিজ্ঞান সংক্রান্ত অনুষ্ঠানের সূত্রে আবার তুমুল জনপ্রিয়। সম্প্রতি কক্স জানিয়েছেন, ভূতের অস্তিত্ব নেই। যদি তা থাকত, তা হলে বিশ্বের সবথেকে বড় বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় তা ধরা পড়তই। কী এই সব থেকে বড় পরীক্ষা’? কক্স জানিয়েছেন, মানুষের মৃত্যুর পরে তার আত্মা কোথায় যায়, তা নিয়ে সভ্যতার উন্মেষের কাল থেকেই মানুষ সন্ধান চালিয়েছে। যদি তেমন কোনও ‘যাওয়ার জায়গা’ থাকত, তা হলে তা নিশ্চিতভাবেই বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র সার্ন এর লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডার এ ধরা পড়ত।


লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডার আসলে বিশ্বের বৃহত্তম আণবিক বিশ্লেষক। চৌম্বক শক্তিকে কাজে লাগিয়ে এই যন্ত্র মহাজগতের মৌলিক বস্তুসমূহকে বুঝতে যায়। এই বিশ্লেষণ থেকে আমাদের চারপাশে দৃশ্যমাণ জগতের প্রতিটি এলিমেন্টকেই জানা বা বোঝা যায়। লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডার যে কোনও এনার্জিকেও বিশ্লেষণ করতে সমর্থ। কক্সের মতে, ভূত যদি থাকত, তবে তারা এনার্জি দিয়েই গঠিত হত। কারণ, আত্মা যে কোনও পদার্থ দিয়ে গঠিত নয়, তা প্রমাণের অপেক্ষা রাখে না। 

বৈজ্ঞানিক যুক্তি অনুসারে শক্তি বিভিন্নভাবে বিরাজমান থাকতে পারে। তার রূপ পরিবর্তন করতে পারে। যেমন— তাপ, আলো, রাসায়নিক শক্তি, বৈদ্যুতিক শক্তি। শক্তি যে কোনো পরিবর্তন আনতে পারে। থার্মোডিনামিক্সে আলোচনার বিষয় এই শক্তি। থার্মোডিনামিক্সের প্রথম সূত্র অনুসারে শক্তি এক মাধ্যম থেকে অন্য মাধ্যমে পরিবর্তিত হতে পারে। কিন্তু তা সৃষ্টি বা ধ্বংস করা যাবে না। পৃথিবীর মোট শক্তি এবং পদার্থ সবসময় ধ্রুব থাকবে।

থার্মোডিনামিক্সের দ্বিতীয় সূত্র অনুসারে একই ব্যবস্থার মধ্যে শক্তির পরিবর্তনের সময় যদি নতুন কোনো শক্তি না ঢুকে বা কোনো শক্তি বের না হয়ে যায় তবে সম্ভাব্য শক্তি সবসময় প্রাথমিক শক্তির চেয়ে কম থাকবে। এটাকে এনট্রপি বলে। একসময় সম্ভাব্য শক্তি কার্বোহাইড্রেটের মধ্যে তালাবদ্ধ হয়ে পড়ে যা গতিশক্তিরূপে রূপান্তর হয়। এই শক্তি পরিবর্তনের প্রক্রিয়ায় কিছু শক্তি তাপশক্তি রূপে উড়ে যায়। ফলে একটা বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয় যা পরিমাপ করাই এনট্রপির কাজ। শক্তির প্রবাহ ক্রম এবং জীবন বজায় রেখে চলে।


থার্মোডিনামিক্সের সূত্র যদি বিভিন্নভাবে পরীক্ষা করা যায় তবে প্রমাণ করা সম্ভব ভূত আছে। কেউ তা না মানলেও কিছু প্রশ্নের জন্ম হবে। প্রথম সূত্র মতে শক্তির কোনো বিনাশ নেই, শুধু এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় যায়। তাহলে, আমরা যদি শক্তি হই তবে মৃত্যুর সঙ্গে আমরা বিনাশ হব না, শুধু রূপ পরিবর্তন হবে।

অথচ থার্মোডাইনামিকস-এর দ্বিতীয় সূত্র অনুযায়ী এনার্জি উত্তাপে লোপ পায়। একমাত্র যদি ভূতেরা এই সূত্রকে এড়িয়ে যাওয়ার কৌশল জেনে থাকে, তা হলে কিছু বলার নেই। কিন্তু তা যদি না হয়ে থাকে, তা হলে লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডার তাদের খোঁজ পেতই।


সার্ন বা ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চ-এর তরফে কক্স এক প্রকার ঘোষণাই করে দিয়েছেন ভূতের অস্তিত্ব নেই। কিন্তু যদি ভৌতিক এনার্জি তাপকে প্রতিহত করতে সমর্থ হয়? সেখানে কী হবে, তা কিন্তু কক্স বলেননি।


মানুষের কল্পনাশক্তি বেশ প্রখর। আর আমাদের মস্তিষ্ক যেকোনো কিছুতে প্যাটার্ন খুঁজে পেতে চায়। তোমরা কি জানো, ২০২১ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার কেন দেওয়া হয়েছে? জটিল ও এলোমেলো বিভিন্ন পদার্থ এবং ঘটনার ভেতরের সুপ্ত প্যাটার্ন আবিষ্কারের জন্য। পৃথিবীর জলবায়ু কী জটিল একটা ঘটনা! এলোমেলোভাবে মেঘের বিচরণ, বাতাস, বায়ুমণ্ডলে বিভিন্ন পদার্থ, গ্রিনহাউস গ্যাস, নাইট্রোজেন চক্র, অক্সিজেন চক্র—এ রকম নানা জিনিস। এত সব জিনিসের প্রতিটির আচরণের ভেতরে প্যাটার্ন খুঁজে বের করেছেন এবারের নোবেলজয়ী দুজন বিজ্ঞানী, স্যুকুরো মানাবে আর ক্লাউস হেসেলম্যান। আর জর্জিও পারিসি জটিল পদার্থের গঠনের ভেতরে সুপ্ত প্যাটার্ন খুঁজে বের করেছেন। এমনকি পাখির ঝাঁকের প্যাটার্নও তাঁর গবেষণার ওপর ভিত্তি করে ব্যাখ্যা করা যায়।


এত সব বলার অর্থ, আমাদের মস্তিষ্ক প্যাটার্নের খোঁজে হন্যে হয়ে থাকে। কোনো প্যাটার্ন নেই, এমন কিছু তার পছন্দ নয়। সে জন্যই আমরা মেঘের ভেতর হাতি-ঘোড়া দেখতে পাই। মশারির কোরা কুঁচকে থাকলে মনে হয়, ওখানে কেউ আছে। এটা আর কিছুই নয়, মস্তিষ্কের প্যাটার্ন খোঁজার প্রবণতা। এর নাম পেরিওডোলিয়া। এর সঙ্গে যখন অন্ধকার ও অজানার ভয় যোগ হয়, তখন মনে হয়, ওই যে অন্ধকারে কেউ আছে। এদিকেই তাকিয়ে আছে। কিছু হয়তো করবে সে আমাকে।

কেউ তাঁর আত্মীয়ের আত্মা দেখেছেন, আবার কেউ দেখেছেন কোনও নাম না জানা অশরীরীকে। প্রতিমুহূর্তেই বিশ্বজুড়ে ইন্টারনেটে ভূতের লক্ষ লক্ষ ভিডিও (বলা হয় আসল), সিসিটিভিতে ধরা পড়া ভূতের ভিডিও ও ছবি আপলোড ও ডাউনলোড হয়ে চলেছে। হন্টেড ছবি মানেই সেটা হাউসফুল। ছবির ট্রেলরে গুচ্ছ লাইক, শেয়ার।  শুরুর দিন থেকে আজ পর্যন্ত বাজারে ভূত কোম্পানির সেনসেক্স পড়েনি, ক্রমশ উর্ধ্বমুখী হয়েছে।


https://bahok.in/three-veteran-scientists-won-the-nobel-prize-for-solving-complex-physics-problems/


আসলে জন্ম থেকে মানুষের অবচেতন মনে ভূত বেশ বড় একটা জায়গা করে নিয়েছে। প্রচুর ভূতের গল্প শোনা বা টিভি, ইউটিউবে ভূতের ভিডিও দেখা সব কিছুই মনের অন্দরে বেশ থাবা গেড়ে বসে। এর ফলে মানসিক কাঠামোতেও ভূত তার পাকাপাকি একটা জায়গা করে নেয়।  ভূত দেখার মানসিকতা নিয়ে The Houran and Lange model মতবাদটি  বলছে, একজন মানুষই অপরকে ভূত দেখতে উদ্বুদ্ধ করেন। যদি একজন মানুষ কোনও জায়গায় ভূত দেখেছেন বলে দাবি করেন, তাহলে ভূতে বিশ্বাস করেন এমন মানুষরা সে কথার শোনার পর সেই নির্দিষ্ট জায়গায় ভূত দেখবেনই। এটা বাস্তবের থেকেও বড় অবচেতন মনের ক্রিয়ায় হয়ে থাকে।

https://pubmed.ncbi.nlm.nih.gov/9229473/

১৯৯৭ সালে, একটি প্রাচীন পরিত্যক্ত থিয়েটারে ২২ জন মানুষকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।তাঁদের মধ্যে ১১ জনকে বলা হয়েছিল থিয়েটারটির পুনর্নির্মাণ হবে। বাকি ১১ জনকে বলা হয়েছিল, সাবধানে থাকতে, কারণ এই পোড়ো থিয়েটারে এমন কিছূ ঘটনা ঘটে, বুদ্ধিতে যার ব্যাখ্যা মেলে না। গভীর রাতে থিয়েটারের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন জন ঘণ্টা চারেক কাটিয়েছিলেন। 

প্রথম ১১ জন বলেছেন, “বড্ড নোংরা, সাপখোপ থাকতে পারে, পুনর্নির্মাণ না করে নতুন বানানো উচিত, থিয়েটার পুনর্নির্মাণ করতে খরচ অনেক বেশি হবে, এখন এই নকশা চলে না”, ইত্যাদি ইত্যাদি। বাকি ১১ জনের মধ্যে বেশিরভাগই  বলেছিলেন, তাঁরা পায়ের আওয়াজ শুনেছেন, একজনের কথায়, “একটা হাওয়ার মতো কি যেন যাচ্ছিল আর আসছিল, একটা ছায়ামূর্তি পর্দা ফেলছিল, মাটির ধুলোয় প্রকাণ্ড পায়ের ছাপ”, ইত্যাদি দেখেছেন।

এই পরীক্ষায় এটাই প্রমাণিত হয়, মানুষের মনের ক্ষমতা সীমাহীন। আপনি ভূতে বিশ্বাস করেন এমন কাওকে ভূত দেখতে বাধ্য করতে পারেন। সবচেয়ে বড় কথা, ভূতে বিশ্বাস রাখেন এমন একজন মানুষের মস্তিষ্ক নিজের অজান্তেই ভূতের পরিবেশ তৈরি করতে সক্ষম। সাধারণ ভূতের গল্পে বা ছবিতে হানাবাড়ি হিসেবে ভাঙাচোরা গাছপালায় ঢাকা পোড়ো বাড়ি, কবরস্থান, বাঁশবাগান, চার্চ-এর কথা বলা হয়। কারণ মানুষ ওখানে ভূত দেখতে চায়।পুরোটাই মস্তিষ্কের কারসাজি


বিজ্ঞান প্রমাণ পেয়েছে , যাঁরা প্রচন্ড ভূতে বিশ্বাস করেন বা ভূত দেখেছেন বলেন উপর কাজ করে এক বিশেষ বৈদ্যুতিক তরঙ্গ। সেটা কী? ডি পিজ্জাগালি  নামে এক বিজ্ঞানী ২০০০ সালে একটি পরীক্ষা করেন। তাতে তিনি দেখিয়েছিলেন, ভূতে বিশ্বাসীরা তাঁদের মস্তিষ্কের ডান গোলার্ধে নিজের উপর অতিরিক্ত আস্থা পোষণ করেন।


https://www.google.com/url?sa=t&source=web&rct=j&opi=89978449&url=https://brain.harvard.edu/%3Fpeople%3Ddiego-pizzagalli&ved=2ahUKEwijjKmiwr6CAxX07zgGHRAoBlwQFnoECA0QAQ&usg=AOvVaw2qPxCoB0Ns1_J8upvE-tmN


অন্য অর্থে, ভূতে অবিশ্বাসীদের থেকে ভূতে বিশ্বাসীদের মস্তিষ্কের ডান দিকে বৈদ্যুতিক ক্রিয়া বেশি সক্রিয়। মনের ভূত দেখার অদম্য বাসনার সঙ্গে তাল মিলিয়ে, সামনের দেখা স্বাভাবিক জিনিসকে ভূতুড়ে করে তোলে মস্তিস্কের ডান গোলার্ধের  এই অতি সক্রিয় তরঙ্গগুলি। তাই যাঁরা ভূত দেখবেন বলে ব্রেন ওয়ার্ক করে রাখেন তাঁদের মস্তিষ্কই তাঁদের ভূত দেখায়।


মানুষ একা থাকতে ভয় পান, তাই একাকী মানুষ  ভূত দেখেন


যে মানুষরা ভূত দেখেছেন বলেন, খেয়াল করবেন সবাই একা একা ভূত দেখেছেন। তাঁর দেখা ঘটনার সাক্ষী পাবেন না।সকালের ভারতের বনগাঁ লোকালে কেউ ভূত দেখেছেন? কিন্তু রাত ১০.০৫ এর বনগাঁ লোকালের ভূতের গল্প বিখ্যাত। যখন মানুষ নির্জন, অচেনা  জায়গায় থাকেন, তখন তখন তাঁরা ভূত দেখেন।


রাতের আঁধারে আমাদের একাকীত্ব ও একাকীত্বের ভয় মনে অন্য কারও উপস্থিতি জানান দেয়। ঘাড়ে কারও গরম নিঃশ্বাস, পার্কের গাছটার নড়ে ওঠা, ছাদে কারও পায়ের আওয়াজ টের পাই। এভাবেই আমরা আমাদের মনগড়া ভুতুড়ে পরিবেশ নিজেরাই তৈরি করে নিই।


  • তড়িৎচুম্বকীয় ক্ষেত্র (Electromagnetic Fields)

বলা হয়ে থাকে যে ভূত দেখার পিছনে রয়েছে তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গের কারসাজি? যে তড়িৎচুম্বকীয় ক্ষেত্র আমাদের ভূত দেখায় বা ভূতের সঙ্গে পরিচয় করায় তার নাম ইনফ্রাসাউন্ড। আমরা যে কম্পাঙ্কের শব্দ শুনে অভ্যস্ত, এটি তার চেয়ে নিচু কম্পাঙ্কের শব্দ। ইনফ্রাসাউন্ডের সঙ্গে ভূতের সম্পর্ক নিয়ে ব্যাপক ভাবে গবেষণা করেছেন কানাডার নিউরোসায়েন্টিস্ট ডঃ পারসিঙ্গার এবং তাঁর লরেনটিয়ান ইউনিভার্সিটির টিম।


তাঁরা একটি যন্ত্র তৈরি করেন যার নাম গড হেলমেট।  ভূত বিশ্বাসীরা এই হেলমেট  মাথায় পরলে, এটি চৌম্বকীয় সিগন্যাল ছুড়ে তাঁদের মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট অংশকে উদ্দীপ্ত করে। তাঁরা অবাস্তব অকল্পনীয় দৃশ্য প্রত্যক্ষ করেন। দেখা গেছে, নির্জন জায়গায় যতক্ষণ ভূত বিশ্বাসীরা হেলমেটটি পরে ছিলেন, সেই সময়ের মধ্যে তাঁদের অনেকে ভূত দেখেছেন বা ভূতের ছায়া দেখেছেন। এমনকী প্রভু যিশুকেও দেখেছেন।


https://en.m.wikipedia.org/wiki/God_helmet

বিজ্ঞানীরা বলেছেন, সত্যিই কানাডার কিছূ ভুতুড়ে জায়গা বা বাড়ি যেমন, সাউথ ব্রিজ ভল্ট, হ্যাম্পটন কোর্ট প্রভৃতি জায়গায় এরকম শক্তিশালী অথচ অনিয়মিত চৌম্বকীয় ক্ষেত্র খুঁজে পাওয়া গেছে। তাই ভূতে বিশ্বাসী মানুষ সেখানে ভূত দেখেছেন।যাঁরা বলেন ভূত দেখেছেন, এঁদের সবাই মিথ্যেবাদী নন.


একদম বাস্তবসম্মত ভাবেই বিজ্ঞান বলে দিয়েছে তাঁরা ভূত দেখেছেন, তবে একটু অন্যভাবে। হ্যাঁ সত্যিই ভূতেরা পৃথিবীতে আছে। তবে তেনারা প্রকৃতিতে বা পোড়ো বাড়িতে বাস করেন না। তেনাদের বাস কেবল সেই সব মানুষের মনে, যাঁরা ভূত দেখেন বা ভূত দেখতে চান।

ডেভিড স্মাইলেস বলেন, ‘আপনি যদি মৃত প্রিয়জনের উপস্থিতি দেখেন বা অনুভব করেন এবং সেই উপলব্ধিতে বিশ্বাস স্থাপন করেন- তাহলেই কিন্তু বিষয়টি ভৌতিক ঘটনায় পরিণত হয়ে যায়। কারণ মস্তিষ্ক আপনাকে মিথ্যা বলছে এমন ধারণার চেয়ে বিশ্বাস স্থাপন করা অনেক বেশি সহজ।’


মস্তিষ্কের কিন্তু খুব কঠিন একটি কাজ আছে। বিশ্বের অজস্র তথ্যের সংকেতের ব্যবস্থাপনায় অক্লান্ত কাজ করে যায় আমাদের মগজ। চোখ রঙের সংকেত দেয়, কান নানান শব্দের সংকেত পাঠায়। ত্বক চাপ-তাপের অনুভব তৈরি করে।


মস্তিষ্ক এই জগাখিচুড়ি সংকেতের জঞ্জাল থেকে প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো সুবিন্যস্ত করার কাজ করে। একে বলা হয় বটম-আপ প্রসেসিং। আর এ কাজে দারুণ দক্ষ আমাদের মস্তিষ্ক। এই দক্ষতা এতটাই ভালো যে কখনও কখনও অর্থহীন জিনিসগুলোরও অর্থ খুঁজে পায় মাথার মগজ। একে বলা হয় প্যারিডোলিয়া। আপনি মেঘের দিকে তাকিয়ে খরগোশ, জাহাজ বা কোনো মানুষের মুখ যখন দেখেন, সেটি ঘটে এই প্যারিডোলিয়ার কারণে।


https://www.sciencebee.com.bd/qna/30290/%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%A1%E0%A7%8B%E0%A6%B2%E0%A6%BF%E0%A7%9F%E0%A6%BE

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Pareidolia

মস্তিষ্ক টপ-ডাউন পদ্ধতিতেও সংকেতের প্রক্রিয়াজাত করে। ডেভিড স্মাইলেস বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে সংকেতের সঙ্গে বিশ্ব সম্পর্কে আপনার উপলব্ধির তথ্য যুক্ত হয়। বেশির ভাগ সময় ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে অজস্র সংকেত মস্তিষ্কে আসে। এর সবগুলোতে মনোযোগ দিলে আপনি উন্মাদ হয়ে যাবেন। এ জন্য মস্তিষ্ক সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো বেছে নেয়। তারপর তথ্যের বাকিটা পূরণ করে বিশ্ব সম্পর্কে আপনার আগে থেকে তৈরি উপলব্ধি বা পারসেপশন দিয়ে।’


আর তাই আপনি এই মুহূর্তে যা দেখছেন, বাস্তবের পৃথিবী তা নাও হতে পারে। যেটি দেখছেন তা আসলে এমন একটি ছবি, যা চোখের মাধ্যমে ধারণ করা সংকেতের ভিত্তিতে মস্তিষ্ক আপনার জন্য এঁকে দিয়েছে। অন্য ইন্দ্রিয়ের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটছে। বেশির ভাগ সময় এই ছবিটি সঠিক। তবে কখনও কখনও মস্তিষ্ক এমন কিছু যোগ করে দেয়, যার অস্তিত্ব আদৌ নেই।

উদাহরণ দিয়ে বলা যেতে পারে, আপনি কোনো গানের কথা শুনতে ভুল করলে মস্তিষ্ক ঠিকই সেখানে সামঞ্জস্যপূর্ণ কোনো শব্দ যোগ করে দেয়। (এবং আপনি পরে সঠিক শব্দ শিখলেও মস্তিষ্ক সম্ভবত সেই ভুল শোনাকেই অব্যাহত রাখবে।)

তথাকথিত ভূত-শিকারিরা তাদের যন্ত্রে বিশেষ শব্দ ধারণ করে সেগুলোকে ভূতের কথাবার্তা হিসেবে প্রচার করার সময়েও একই ঘটনা ঘটতে পারে। এই রেকর্ডিং সম্ভবত শুধু একরাশ বিশৃঙ্খল শব্দমালা। অনুমান শক্তির ওপর নির্ভর না করলে আপনি এই শব্দমালার কোনো অর্থ খুঁজে পাবেন না। তবে যখন অনুমান করতে চাইবেন, তখন মনে হবে যেন সহজেই তা বুঝতে পারছেন।


আমাদের মস্তিষ্ক বিশৃঙ্খলতার মাঝে কোনো অবয়ব যুক্ত করে দিতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব রোগী ভিজ্যুয়াল হ্যালুসিনেশন অনুভব করেন, তাদের প্যারিডোলিয়ার মাত্রা সম্ভাবনা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি।

ডেভিড স্মাইলেসের মতে, মানুষ সাধারণত একাকী, অন্ধকারাচ্ছন্ন ও ভয়ার্ত পরিবেশে ভূতের অস্তিত্ব অনুভব করেন। অন্ধকার পরিবেশে মানব মস্তিষ্ক বিশ্ব থেকে পর্যাপ্ত চাক্ষুষ তথ্য পেতে ব্যর্থ হয়। এমন অবস্থায় মস্তিষ্কের নিজস্ব সৃষ্টিকে বাস্তবতার ওপর চাপিয়ে দেয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যেতে পারে।

মস্তিষ্ক বাস্তবতার চিত্রে কখনও কখনও এমন জিনিস অন্তর্ভুক্ত করে যার অস্তিত্ব আসলে নেই। আবার অনেক সময় বাস্তবে থাকা কোনো জিনিসকে শনাক্ত করতে ব্যর্থতার ঘটনাও ঘটে। একে বলা হয় ‘অমনোযোগী অন্ধত্ব’ বা ইনটেনশনাল ব্লাইন্ডনেস।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Inattentional_blindness#:~:text=Inattentional%20blindness%20or%20perceptual%20blindness,any%20vision%20defects%20or%20deficits.

লন্ডনের গোল্ডস্মিথ ইউনিভার্সিটির মনোবিজ্ঞানী ক্রিস্টোফার ফ্রেঞ্চ বলেছেন, ‘মস্তিষ্কের মেমরি ভিডিও ক্যামেরার মতো কাজ করে না। আপনি কেবল সেটাই মনে রাখবেন যাতে আপনি মনোযোগ দিচ্ছেন। কিছু লোকের অন্যদের তুলনায় মনোযোগী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আর তাদের ভূতসহ উচ্চমাত্রার অলৌকিকতায় বিশ্বাসের মাত্রাও বেশি।’


ক্রিস্টোফার ও তার সহকর্মীরা ২০১৪ সালে একটি সমীক্ষা চালান। এতে দেখা গেছে, উচ্চতর মাত্রায় অলৌকিকতায় বিশ্বাস এবং অভিনিবেশের উচ্চ প্রবণতা থাকা ব্যক্তিদের অসাবধানতাবশত অন্ধত্বে ভোগার সম্ভাবনা বেশি। তাদের মস্তিষ্কে একসঙ্গে অনেক স্মৃতিশক্তি ধরে রাখার ক্ষমতা কম।


স্মৃতিতে প্রচুর তথ্য রাখতে বা একবারে একাধিক জিনিসের প্রতি মনোযোগ দেয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা হলে চারপাশ থেকে সংবেদনশীল সংকেতগুলো হারিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়। আর সে ক্ষেত্রে অনেকে ভুল ধারণার দায় চাপাতে পারেন ভূতের ওপর।

যেকোনো ব্যক্তি ঘুমের পক্ষাঘাত, হ্যালুসিনেশন, প্যারিডোলিয়া বা অমনোযোগী অন্ধত্ব অনুভব করতে পারেন। তবে এই অভিজ্ঞতাকে ব্যাখ্যার উপায় হিসেবে সবাই ভূত বা অন্য কোনো অতিপ্রাকৃত সমাধানের পথ খোঁজেন না। এমনকি ডোম কখনও ভাবেননি, ছোটবেলায় তিনি সত্যিই কোনো ভূতের মুখোমুখি হয়েছিলেন। বড় হয়ে তিনি বিষয়টি নিয়ে ঘেঁটেছেন এবং কী ঘটতে পারে সে সম্পর্কে প্রশ্ন করেছেন।


তিনি বিশ্লেষণাত্মক চিন্তাপদ্ধতি ব্যবহার করে প্রয়োজনীয় উত্তর পেয়েছিলেন। এখনও তিনি স্নায়ুবিজ্ঞানী বালান্দ জালালের তৈরি একটি কৌশল ব্যবহার করেন। ঘুমের পক্ষাঘাত এড়াতে তিনি শ্বাস-প্রশ্বাসের দিকে মনোযোগ দেন, শরীরকে যতটা সম্ভব শিথিল করার চেষ্টা করেন এবং কিছুটা সময় এভাবে পার হতে দেন। ডোম বলেন, ‘আমি এখন একে অনেক ভালোভাবে মোকাবিলা করি। আমি স্বাচ্ছন্দ্যে ঘুমাই এবং ঘুমকে উপভোগ করি।’


ইউনিভার্সিটি অফ সাউথ ওয়েলসের মনোবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী রবিন অ্যান্ড্রুসের ধারণা ছিল, শক্তিশালী বিশ্লেষণাত্মক চিন্তাশক্তির মানুষের অতিলৌকিক বিশ্বাসের প্রবণতা কম। আর এই ধারণা প্রমাণের জন্য তিনি মনোবিজ্ঞানী ফিলিপ টাইসনের সঙ্গে একটি গবেষণা করেছেন।

গবেষণায় ৬৮৭ জন শিক্ষার্থী অংশ নেন। তাদের প্রত্যেককে জিজ্ঞেস করা হয়, ‘মৃতদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব’ অথবা ‘মন বা আত্মা শরীর ছেড়ে ভ্রমণ করতে পারে’- এমন ধারণার সঙ্গে তারা কতটা একমত।

এই গবেষণায় দেখা গেছে, উচ্চতর বিশ্লেষণাত্মক চিন্তাশক্তির শিক্ষার্থীদের অলৌকিক বিশ্বাসের মাত্রা কম। একই সঙ্গে কলা বিভাগে অধ্যয়নরতদের তুলনায় ভৌতবিজ্ঞান, প্রকৌশল বা গণিতের শিক্ষার্থীদের ভূত বিশ্বাস অনেকটা কম। অন্য আরও কয়েকটি গবেষণায় একই প্রবণতা লক্ষ করা গেছে।

তবে অবাক করা বিষয় হলো, বিজ্ঞানে অধ্যয়নরত বা বিজ্ঞানী হিসেবে কর্মরত অনেকের মধ্যেও অলৌকিকতায় বিশ্বাস দেখা যায়। একে একটি বড় ধরনের সমস্যা হিসেবেই মনে করছেন রবিন অ্যান্ড্রুস ও ফিলিপ টাইসন।

টাইসন বলছেন, ‘একটি ভূতের গল্প বা ভূতুড়ে অভিজ্ঞতা বাস্তব কি না তা বিচারের সক্ষমতা না থাকলে আপনি যেকোনো বিজ্ঞাপন, অপচিকিৎসা বা ভুয়া খবরের মাধ্যমেও বোকা বনে যেতে পারেন। কীভাবে তথ্য নিয়ে প্রশ্ন করা যায় এবং যুক্তিসংগত ও বাস্তব ব্যাখ্যা খোঁজা যায় তা সবার জন্যই গুরুত্বপূর্ণ।’

আর তাই কেউ ভূতের গল্প বললে উপভোগ করুন। তবে এতে বিশ্বাস স্থাপনের কিছু নেই, যা বর্ণনা করা হয়েছে সে বিষয়ে সম্ভাব্য সব ব্যাখ্যা নিয়ে চিন্তা করুন। মনে রাখবেন, ভয়ংকর কোনো ধারণায় ডুবিয়ে দিয়ে আপনার মন কিন্তু যেকোনো সময় আপনাকে বোকা বানিয়ে দিতে পারে


প্রাচীন ইতিহাসে ভূত সম্পর্কে বলা হয়েছে, এটি এমন এক শক্তি যা কারো মৃত্যুর পর ফিরে আসে। যেসব স্থান ও মানুষ সে ছেড়ে যায় বা তার সঙ্গে যা অনিষ্ট হয়েছে সে ফিরে এসে তার প্রতিশোধ নেয়। বিশেষ করে রাজপরিবারের কোন সদস্য অল্প বয়সে মরে গেলে তাকে নিয়ে এসব গল্প ছড়াতো। যীশুখ্রিস্টের মৃত্যুর পরের শতকে ভূত নিয়ে প্রথম গল্পের দেখা পেয়েছেন ইতিহাসবিদরা। এরপর গ্রিক লেখক লুসিয়ান প্লাইনি এবং প্লুটোও ভূত নিয়ে গল্প লিখেছেন।

কিন্তু বিশ্বাসে ভূত আছে : ভূত মানে মৃতের আত্মা বা অপচ্ছায়া। ভূতে বিশ্বাস সেই প্রাচীনকাল থেকেই। অসংখ্য প্রাচীন লোককাহিনীতে ভূতের উল্লেখ আছে। পৃথিবীর অধিকাংশ জাতিই ভূতে বিশ্বাস করে। তাদের মতে প্রাণির শরীর থেকে আত্মা চলে গেলেই সে প্রাণহীন হয়ে পড়ে। কোনো কোনো আত্মা প্রাণির শরীর থেকে বের হওয়ার পরও ফিরে আসে। আর এই ফিরে আসা আত্মাই হচ্ছে ভূত। ভূতের শরীরী রূপ থাকে না। সে থাকে অস্পষ্ট। কিন্তু তার চালচলন স্বাভাবিক জীবিত শরীরের মতো। তাকে স্পষ্ট দেখা যায় না। কিন্তু উপলব্ধি করা যায়। ইংরেজিতে ‘ঘোস্ট’ শব্দটির প্রাচীন ইংরেজির ‘গাস্ট’ থেকে উদ্ধৃত। প্রাচ্যের অনেক ধর্মে ভূতের উল্লেখ আছে। যেমন হিন্দুদের পুরাণ ও তন্ত্রে ভূতের কথা উল্লেখ আছে। হিব্রু তাওরাত ও বাইবেলেও ভূতের উল্লেখ আছে। মুসলিমদের কুরানে জিনতত্ব আছে। 

ভূত-বিশ্বাসী: এক সমীক্ষা থেকে জানা গেছে, ইংল্যান্ডের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬৮ শতাংশ মানুষ প্রেতাত্মায় বিশ্বাস করেন। আরেকটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, আমেরিকার মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ কঠোরভাবে ভূত-বিশ্বাসী। তার মধ্যে আবার ২৩ শতাংশ মানুষ দাবি করেছেন, তারা রীতিমতো ভূত দেখেছেন অথবা ভৌতিক অস্তিত্ব অনুভব করেছেন। সে কারণে হলিউডের সিনেমা জগতে একটা বড় অংশ জুড়ে রয়েছে ‘হরর ফিল্ম’। এমন বিশ্বাস যে দেশের মানুষের তাদের ভূতের সিনেমা দেখিয়ে টাকা কামানো দোষের কিছু নয়।


এখন প্রশ্ন হলো, ইংল্যান্ডে কেন এই ব্যাপক সংখ্যায় ভূত বিশ্বাস্ত সমাজ-মনস্তাত্ত্বিকদের মতে, এ ধরনের গণবিশ্বাসের পেছনে দুই দেশে দুই প্রকার কারণ কাজ করেছে। ইংল্যান্ডের স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়া, বৃষ্টির আধিক্য ভৌতিক গল্প সংক্রমণের পক্ষে উপযুক্ত। তার ওপরে বিপুল সংখ্যক পুরনো প্রাসাদ, কবরখানা, মান্ধাতার আমলের গির্জা, তার ভল্ট, মাটির নিচের অলিগলি অবশ্যই এক ধরনের ছমছমে পরিবেশ সৃষ্টি করে। ফলে ভূতে বিশ্বাস হওয়াটাই স্বাভাবিক। সেই সঙ্গে অবশ্যই রয়েছে ব্রিটিশ সাহিত্যিকদের অনবদ্য কলমের অবদান। বিদেহী আত্মা নিয়ে চর্চাও ব্রিটেন কম করেনি। প্ল্যানচেট, সিয়াস, গুপ্তচক্র বিভিন্ন কালে সেদেশে ফিরে ফিরে এসেছে।


হোয়াইট হাউসের ভূত: বিশ্বের সবচেয়ে সুরক্ষিত ভবন ওয়াশিংটন ডিসির ১৬০০ পেনসিলভেনিয়া এভিনিউর ‘হোয়াইট হাউস’ কেবল আমেরিকার প্রেসিডেন্টের বাসভবনই নয়, এটি একটি ঐতিহাসিক ভবনও বটে। এমন একটি ভবনে যদি ভূতপ্রেতরা আস্তানা গাঁড়ে তাহলে কেমন হয়? প্রেসিডেন্টের বাসভবনে নাকি ঘুরে বেড়াচ্ছে ডজনখানেক ভূত! এমন বিশ্বাস কেবল ভৌতিক গল্পপ্রিয় সাধারণ আমেরিকানদেরই নয়, হোয়াইট হাউসের একাধিক সাবেক কর্মকর্তা-কর্মচারী এসব ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বলে দাবি করেছেন।


তাদের দাবি অনুসারে, হোয়াইট হাউসের পূর্ব দিকের একটি কক্ষে প্রায়ই নাকি কাজে ব্যস্ত থাকেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম ফার্স্ট লেডি এবিগেইল অ্যাডামসের ভূত। আবার মরার পরও বাগানে রীতিমতো কাজ করে যাচ্ছেন হোয়াইট হাউসের সাবেক কর্মচারী ডলি ম্যাডিসন। শুধু তারাই নন, আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কন, রুজভেল্ট, হ্যারিসন, রিগ্যান, অ্যান্ড্রু জ্যাকসনসহ আরও অনেকের প্রেতাত্মা নাকি এখনো দিব্যি ঘুরে বেড়ায় হোয়াইট হাউসে।


বাংলা লোকসাহিত্যে ভূত একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। পুরাতন এবং নতুন উভয় বাংলা রূপকথায় প্রায়ই ভূতের ধারণা ব্যবহার করা হয়। আধুনিক বাংলা সাহিত্যেও ভূতের উদাহরণ পাওয়া যায়। বিশ্বাস করা হয়, ভূত হল সেই সব অশরীরি আত্মা যারা জীবিত অবস্থায় শান্তি খুঁজে পায়নি বা অপঘাতে মারা গেছে। বাংলা সংস্কৃতিতে অনেক ধরনের ভূতের বিশ্বাস রয়েছে। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- পেত্নী হলো নারী ভূত, শাকচুন্নি হলো বিবাহিত মহিলাদের ভূত, চোরাচুন্নি দুষ্টু ভূত, মেছোভূত হচ্ছে মাছ খেকো ভূত। আরো রয়েছে দেও, নিশি, মামদো ভূত, গেছোভূত, ব্র্রহ্মদৈত্য, স্কন্ধকাটা ভূত। এর বাইরেও রয়েছে ডাইনী, যারা আত্মা নয় বরং জীবিত। এরা কালা জাদু করে।


মামদো ভুত

‘মামদো’ ভূতের নাম নিশ্চয়ই শুনেছেন! এগুলো হল মুসলমানদের আত্মা! এদের আত্মা স্বর্গে যেতে ব্যর্থ হয়েই মামদো হয়েছে। এই ভুতগুলো কোনভাবেই মুক্তি পায় না।

এরা বড় জ্বালাতন কারী ভুত। পৃথিবীতে তাদের আত্মীয় স্বজনও এমন কোন পুণ্য কাজ করতে পারেনা,যার কারণে এসব আত্মা মুক্তি পায়।

মামদো ভুতের আত্মা না স্বর্গে যেতে পারে, না মুক্তি পায়! এক সময় আত্মীয় স্বজনও মারা যায়। ফলে অতৃপ্ত, ক্ষিপ্ত এসব ভুত-আত্মা জীবিত মানুষকে শান্তি দেয়না, বিবিধ উপায়ে তারা মানব সমাজে অনিষ্ট সাধনে লেগে থাকে।


প্রেত্নী

নিশ্চয়ই পেত্নীর নাম শুনে থাকবেন! এগুলো হল মহিলাদের অতৃপ্ত আত্মা। পরিবার ও সংসারে সকল অশান্তির পিছনেই লেগে থাকে পেত্নীদের ভূমিকা।

লম্বা নাক, সরু গাল, ছোট্ট ঠোটের পেত্নীর চেহারা চিত্রকরেরা এঁকে থাকে।

শাঁকচুন্নি নামের একটি পেত্নী আছে। এটা অনেকটা উপকারী পেত্নী। কারো সংসারে ঢুকে সে গায়ে পড়ে কাজ করে দেয়। ভূত সম্পর্কিত কিম্ভূত আলোচনা

এতে করে সে সংসারে জব্বর কাজ-কর্ম সম্পাদিত হয়। গৃহস্বামীর পিছনে লেগে থাকে বলে সে সংসারে আগুন ও জ্বলে উঠতে পারে।

এগুলো হল সেই মহিলার পেত্নী। যারা ছিল কর্মে চঞ্চল কিন্তু সুখের সংসার পায় নি। তাই অন্যের সংসারে ঢুকে নিজের সংসার পাতে।


দৈত্য

দৈত্যের কথা অবশ্যই শুনবেন! সিন্দাবাদের কাহিনীতে হু হা হা হা হা করে ঘটনাস্থলে হাজির হয়। মানুষ যা চায়, তাই হাজির করে দেয়।

এগুলো আলাদা কোন জীব নয়; মানুষেরই প্রেতাত্মা! তবে চরম শক্তিশালী ও বেজায় ক্ষমতাধর।

এমন দৈত্যদের মধ্যে একটি আছে ব্রহ্ম দৈত্য। শব্দ দ্বারাই বুঝা যায় এরা হিন্দু ব্রাহ্মণদের মৃত আত্মা।

কোন কারণে এরাও স্বর্গে পৌছতে ব্যর্থ হয়েছে। উচ্চ বংশীয় মর্যাদার কারণে, মর্তে এরা সাধারণ মানুষের মত হলেও, পরলোকে ওদের আত্মা মহাশক্তিধর হয়ে উঠে।

আরো বহু ধরনের ভুত, পেত্নী ও দৈত্য আছে। এগুলোর অনেকটার সাথে আমাদের পরিচিতি আছে। বাংলা সাহিত্যের পাতায় এই নামগুলো আমরা কদাচিৎ দেখে থাকি।

অত তলিয়ে দেখিনা বলেই, চিন্তা থেকে হারিয়ে যায়। পাঠকদের সুবিধার্থে এমন কিছু উদাহরণ উপস্থাপন করা হল,

দেও – পানিতে চুবিয়ে মারে,

দৈত্য – শক্তিশালী পুরুষ ভুত,

ডাইনী – সুন্দরী মেয়েদের আত্মা।

ডাকিনী – কুমারী মেয়ের মৃত আত্মা।

চোরাচুন্নী – চুরির অপরাধে মৃত আত্মা

মোহিনী – ব্যর্থ প্রেমে আত্ম হত্যাকারীনী।

কানাভুলো – অন্ধকার রাত্রে পথ ভুলিয়ে দেয়,

গেছোভুত – বনে জঙ্গলের গাছে অবস্থানকারী ভুত।

মেছোভুত – জলাশয়ে থাকে যেখানে মাছ পাওয়া যায়।

কাঁদারমা – জঙ্গলে দুঃখিনী মায়ের মত বিলাপ ধরে কাঁদে,

শাঁকিনী – বিয়ের পরে সংসারে অসুখী হয়ে আত্মহত্যা করা নারী।

এত যে ভৌতিক অভিজ্ঞতা মানুষের মুখে মুখে শোনা যায়, এর সবই কি তাহলে মিথ্যা? আসলে ভয় পাওয়াটা মিথ্যা নয়। পৃথিবীতে ভূত নেই, কিন্তু ভূতের ভয় আছে। মুহম্মদ জাফর ইকবাল তাঁর ভূত সমগ্র বইয়ে এ নিয়ে লিখেছিলেন, ‘পৃথিবীতে ভূত নেই, কিন্তু ভূতের গল্প আছে।’ কারণ, মানুষ ভয় পায়। দুর্বল মানসিক অবস্থায় ভয় পেলে মানুষের যে অভিজ্ঞতা হয়, তা অমানবিক। কারণ, ভূত না থাকলেও ভয়টা সত্যি।


  • চিকিৎসা বিজ্ঞানের ব্যাখা:


*বোবায় ধরা(Sleep Paralysis) মানে, ঘুমের ভেতর কেউ চেপে ধরে আছে মনে হওয়া। নড়াচড়া করতে না পারা। এই ঘটনার বৈজ্ঞানিক নাম ‘স্লিপ প্যারালাইসিস’। ঘুমের পাঁচটি পর্যায় আছে। প্রথম দিকে মানুষের ঘুম হালকা থাকে, ধীরে ধীরে গাঢ় হয়। সবচেয়ে গভীর ঘুমের পর্যায়টির নাম ‘রেম স্লিপ’। এ সময় মানুষের চোখের পাতা কাঁপে, মানুষ স্বপ্ন দেখে। শরীর গভীর ঘুমের এ রকম একটি পর্যায় থেকে আরেকটি পর্যায়ে যাওয়ার সময় স্লিপ প্যারালাইসিস হতে পারে।


https://www.nhs.uk/conditions/sleep-paralysis/


আরও কিছু সাধারণ অভিজ্ঞতা আছে। গলার স্বর শোনা বা চোখের কোনা দিয়ে নড়াচড়া দেখতে পাওয়া। এর নাম অডিটরি হ্যালুসিনেশন। কেউ কেউ আবার বিচিত্র গন্ধও পান। হুমায়ূন আহমেদের দেবী বইটা কি পড়েছ তোমরা? সে বইয়ে রাণু চরিত্রটি বেলি ফুলের গন্ধ পায়। এর নাম অলফ্যাক্টরি হ্যালুসিনেশন। রাণুর অবশ্য অডিটরি হ্যালুসিনেশনও হয়। সে কারও হাঁটার শব্দ পায়। দেখতে পায় এমন কাউকে, যে সেখানে নেই।


হ্যালুসিনেশন(Hallucination) অর্থ বাইরের কোনো উদ্দীপক ছাড়াই অনুভূতি প্রত্যক্ষণ করার প্রক্রিয়া"।অলৌকিক কিছুর উপস্থিতি টের পাওয়া, ভৌতিক শব্দ শোনা, অযৌক্তিক গন্ধ পাওয়া, মৃত মানুষের সঙ্গে কথা বলা, অলৌকিক কারও দ্বারা কিছু করতে বাধ্য হওয়া ইত্যাদি হ্যালুসিনেশনের উদাহরণ। হ্যালুসিনেশনে ভোগা অনেকেই শোনেন যে, তাকে কেউ মরে যেতে বলছে এবং অনেকে আত্মহত্যার চেষ্টাও করেন। হ্যালুসিনেশন কয়েক ধরনের হতে পারে। যেমন: ভিজ্যুয়াল হ্যালুসিনেশন, অডিটরি হ্যালুসিনেশন, ট্যাক্টাইল হ্যালুসিনেশন, অলফ্যাক্টোরি হ্যালুসিনেশন, গাস্টাটরি হ্যালুসিনেশন ও জেনারেল সোমেটিক হ্যালুসিনেশন।আরও সহজ ভাষায় বলতে গেলে, ধরুন আপনার স্বামী/স্ত্রী বিভোর ঘুমে আচ্ছন্ন। কিন্তু আপনি দেখছেন যে তিনি ঘুমাচ্ছেন না, তিনি কারও সঙ্গে কথা বলছেন। হতে পারে সেটা ফোনে বা ফিজিক্যালি। এটাই হ্যালুসিনেশন।


ইলিউশন: (Illusion) বাইরের কোনো উদ্দীপক সহীত অনুভূতি প্রত্যক্ষণ করার প্রক্রিয়া,ইলিউশনের অনেক উদাহরণ দেওয়া সম্ভব। যেমন, জাদুর মাধ্যমে কোনো ব্যক্তিকে হঠাৎ গায়েব করে দেওয়াটা ইলিউশন। একইভাবে ছায়া দেখে তাকে ভূত-প্রেত বা কোনো বস্তুর আকৃতি ভাবা, আয়নায় ছোট জায়গাকে বড় মনে হওয়া, দূর থেকে কারও হাঁটার ভঙ্গি বা চুল দেখে তাকে পরিচিত কারও মতো মনে হওয়া—এসবই ইলিউশন। ইলিউশন মূলত আমাদের চোখকে ফাঁকি দেয়। ইলিউশনের কিছু প্রকারভেদ রয়েছে। যেমন> দড়িকে সাপ মনে হওয়া।


ডিলিউশন: (Delusion)ডিলিউশনের উদাহরণের দেখা মিলবে প্রাত্যহিক নানা ঘটনাতেই। এই যেমন, প্রমাণ ছাড়াই অন্যকে সব সময় সন্দেহের চোখে দেখা, কারও ঠোঁট নড়তে দেখেই কী বলা হচ্ছে তা অনুমান করা, কোনো দুর্ঘটনার জন্য অতীতের কোনো কর্মকে দায়ী বলে ভাবা, নিজেকে খুব সুপিরিয়র ভাবা, কেউ নজরদারি করছে এমন ভাবা ইত্যাদি।

অনেক ধরনের ডিলিউশনাল ডিসঅর্ডার রয়েছে। যেমন: পারসিকিউটরি ডিলিউশন, ডিলিউশন অব গ্র্যান্ডিয়র, ডিলিউশনাল জেলাসি, এরোটোমেনিয়া অর ডিলিউশন অব লাভ, সোম্যাটিক ডিলিউশনাল ডিসঅর্ডার, ইন্ডিউস ডিলিউশনাল ডিসর্ডার, ব্যায়ার ডিলিউশন, নন-ব্যায়ার ডিলিউশন, মুড কনগ্রুয়েন্ট ডিলিউশন ও মুড নিউট্রাল ডিলিউশন।

আসলে পৃথিবীতে আজ পর্যন্ত ভূত বা এ ধরনের অতিলৌকিক কোনো ঘটনার শক্ত কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সুস্থ মস্তিষ্কের একাধিক মানুষের এ ধরনের অভিজ্ঞতা একই সঙ্গে হতে দেখা যায় না। এ ধরনের অভিজ্ঞতার গল্প সাধারণত আসে ‘অমুক বলেছেন বা তমুকের কাছ থেকে শোনা’ হিসেবে। যাঁরা দেখার কথা বলেন, তাঁরা অন্ধকারে বা একা, এমন মানসিকভাবে বিপন্ন অবস্থায় থাকেন যে হ্যালুসিনেশন হওয়া স্বাভাবিক। দিনদুপুরে কয়েকজন সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষ একসঙ্গে এ ধরনের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গেছেন, এমনটা সাধারণত হয় না। তবে অনেক সময় দেখা যায়, একজন মানুষ কিছু দেখতে পেয়েছে বললে বাকিরাও দেখে, গন্ধ পেয়েছে বললে বাকিরাও পায়। এর নাম ম্যাস হ্যালুসিনেশন। বিভিন্ন ধরনের সাজেশন (কেউ কিছু দেখেছে বা শুনেছে বললে) এবং পেরিওডোলিয়া মিলে এমনটা হয়। এটাকে বলে ‘ইনডিউসড হ্যালুসিনেশন’ হওয়া। মানে, পরিবেশ-পরিস্থিতি ও মানসিক দুর্বলতার কারণে কেউ যখন ভৌতিক কিছু দেখা বা শোনার কথা বলে, বাকিরাও তখন সেটা অনুভব করে। তবে দিনদুপুরে সাধারণত এ রকম হয় না। কারণ, পরিবেশে অনিশ্চয়তার বিষয়টা থাকে না। সাধারণত দু-তিনজনের দল রাতদুপুরে নির্জন কোথাও এ রকম অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে পারে।

একটা মজার বিষয় হলো, যাঁরা আগে থেকেই ভূতে ভয় পান (গল্প বা ভৌতিক অভিজ্ঞতা শুনে শুনে), তাঁরাই সাধারণত ভৌতিক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হন। যাঁরা এমনিতে ভয় পান না, তাঁদের সাধারণত এমন অভিজ্ঞতা হয়ও না। এর কারণ, ভয় পাওয়ার (পড়ো, হ্যালুসিনেশন হওয়ার) জন্য প্রয়োজনীয় মানসিক দুর্বলতা তাঁদের মধ্যে থাকে না। ভূতের ভয়ই না শুধু, যেকোনো কারণে মন দুর্বল থাকলে এমনটা হতে পারে। এ কারণেই মাদকদ্রব্য নিলে মানুষের হ্যালুসিনেশন হয়। (মাদকদ্রব্য নেওয়া কখনোই উচিত নয়। মিথ্যা আর মাদক—দুটিকে না বলা আবশ্যক।)

আজ পর্যন্ত যত ধরনের ভৌতিক অভিজ্ঞতার খোঁজ বিজ্ঞানীরা পেয়েছেন, প্রতিটিই হয় মনের ভুলে বা কোনো রোগের কারণে হওয়া হ্যালুসিনেশন, কিংবা কেউ জেনেবুঝে এমন করেছে মানুষকে ভয় দেখানোর জন্য। সত্যি সত্যি ভৌতিক অভিজ্ঞতার প্রমাণ পাওয়া গেলে বিজ্ঞান হয়তো এসব নিয়ে নতুন করে ভাববে।


Dissociative identity disorder ( DID )বা ( বহুসত্ত্বা) 

/Multiple personality Disorder : 

যাকে আমরা দেবদেবীদের (দূর্গা, কালী, সন্তুষী, শিব) জিন, ভূত, ইত্যাদির ধরা বলে থাকি। ডিসোসিয়েটিভ আডেন্টিটি ডিজঅর্ডার বা ডিআইডি হলো কোন মানুষের মাঝে দুই বা ততোদিক ব্যাক্তিত্ত্বের বর্হিপ্রকাশ। ডিআইডি এমন একটি অবস্থা যেখানে ব্যাক্তি নিজেকে নিজেকে প্রকৃত পরিচয় থেকে আলাদা মনে করে এবং তার মাঝে নতুন সত্ত্বা আর্ভিভাব হয়। সাধারনত মানসিক বিভিন্ন সমস্যার সাথে সম্পর্কিত। ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের মধ্যে ৬ গুন বেশি হওয়ার প্রবনতা রয়েছ। ২০ শতকের পর থেকে রোগী শনাক্তের পরিমান বৃদ্ধির সাথে সাথে অধিক সত্ত্বার সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। বিচ্ছিন্ন সত্ত্বার প্রভাবে ব্যাক্তির প্রাথমিক পরিচয় যা তার নামের সত্ত্বা নিষ্ক্রিয়, পরানির্ভরশীল, হতাশ থাকে। DID আক্রান্তু অনেক রোগীর মাঝেই অতিতে Bipolar disorder ইতিহাস লক্ষ করা যায়।

প্যারিসের স্যালপেট্রীয়ার হসপিটালের প্রধান চিকিৎসক ড. জিন মার্টিন চারকট রোগটি প্রথম আবিষ্কার করে। হিস্ট্রেরিয়া ও এপিলেপ্সীর সাথে মিল থাকার কারনে তিনি নাম দেন হিস্ট্রি-এপিলেপ্সী।

জিনের আছর,ভূতে ধরা,মা কালী ভর করা—বাংলাদেশের গ্রামে গঞ্জে আনাচে কানাচে এই সমস্যাগুলো প্রায়ই শোনা যায় ।জিন কিংবা ভূতে ধরা রোগী অসংলগ্ন কথাবার্তা বলতে থাকে । চিকিৎসার অংশ হিসেবে সাধারনত কবিরাজ বা ওঝা ডেকে আনা হয় । সেই কবিরাজ অমানুষিক অত্যাচারের মাধ্যমে চিকিৎসা চালায়,যার ফলে রোগীর শারীরিক অনেক ক্ষতি হয় এমনকি কখনো কখনো মারাও যায় ।

চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় হিস্টেরিয়া কিংবা সিজোফ্রেনিয়ার রোগের বিভিন্ন সিম্পটমের সাথে জিনের আছরের লক্ষনগুলো মিলে যায় । আসুন এই রোগগুলো সম্পর্কে জানার চেষ্টা করি ।


https://www.google.com/url?sa=t&source=web&rct=j&opi=89978449&url=https://www.ncbi.nlm.nih.gov/books/NBK568768/&ved=2ahUKEwiR46v4zL6CAxWyslYBHeXVCDEQFnoECBsQAQ&usg=AOvVaw2mcNyCEfH-S59-rBZXrz9j



হিস্টেরিয়া (Hysteria)

গ্রিক শব্দ ‘হিস্টেরা’ বা জরায়ু থেকে উৎপত্তি হয়েছে ‘হিস্টেরিয়া’ শব্দের। একসময় মনে করা হতো নারীর জরায়ুর কোন অস্বাভাবিক অবস্থার কারনেই হিসটিরিয়ার সৃষ্টি। পরবর্তীতে একে মানব মনের একধরণের সমস্যা হিসেবেই চিহ্নিত করা হয়েছে। অনেক সময় একে কনভার্সন ডিসঅর্ডার বা ‘কনভারসন ডিসোসিয়েটিভ ডিজঅর্ডার’ বলা হয় । কনভারসন ডিসঅর্ডারে শারীরিক লক্ষণ—হাত-পা অবশ, কথা বলতে না পারা—প্রভৃতি নিয়ে রোগের প্রকাশভঙ্গি দেখা যায়। যদিও প্রকৃতপক্ষে শারীরিক কোনো সমস্যা থাকে না। আর ডিসোসিয়েটিভ ডিজঅর্ডারে বিভিন্ন মানসিক লক্ষণ দেখা যায়—যেমন, ভুলে যাওয়া, নিজের পরিচয় মনে করতে না পারা, নিরুদ্দেশে চলে যাওয়া, পূর্বের স্মৃতি ভুলে যাওয়া প্রভৃতি।


https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC3480686/


https://www.ncbi.nlm.nih.gov/books/NBK551567/



আমাদের অবচেতন মনের কিছু অবদমিত সহজাত কামনার সঙ্গে আমাদের সামাজিক আচারের সংঘাত ঘটে। সৃষ্টি হয় সহ্যাতীত উৎকণ্ঠা ও মানসিক চাপ। ফলে আমাদের অজ্ঞাতেই কিছু মানসিক ক্রিয়া সেই সহজাত কামনাগুলোকে দমন করে। যখন কোনো কারণে মানসিক ক্রিয়াশক্তি দুর্বল হয়ে যায়, তখন সেই অবাঞ্ছিত অবদমিত কামনাগুলো সজ্ঞান চেতনায় উঠে আসতে চায়। শুরু হয় দ্বন্দ্ব, যার বহিঃপ্রকাশ ঘটে নানা শারীরিক লক্ষণে। কারও কারও মতে, সামাজিক বিধিনিষেধ যখন আমাদের কামনা-বাসনাগুলোকে অবদমিত করে রাখে, তখন সেই অবদমিত কামনা-বাসনাগুলো অন্যভাবে (শারীরিক লক্ষণ হিসেবে) প্রকাশ পায়; তখন হয় হিস্টেরিয়া।


মস্তিষ্কের বাঁ ও ডান—দুটি অংশ থাকে। যখন কোনো কারণে দুই অংশের কাজে সমন্বয়হীনতা ঘটে, তখন হিস্টেরিয়ার লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে বলে কেউ কেউ মনে করেন। মস্তিষ্কের ‘ব্যাসাল গ্যাংলিয়া’ ও ‘থ্যালামাস’—এ দুটি অংশকে হিস্টেরিয়ার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বলে ধারণা করা হয়। শারীরিক ও মানসিকভাবে যদি কাউকে নিপীড়ন করা হয়, কেউ যদি যৌন নিপীড়নের শিকার হয়, কাউকে যদি কোনো কারণে দোষী সাব্যস্ত করা হয় এবং এসব ক্ষেত্রে তারা যদি বিষয়টি প্রকাশ করতে না পারে, উপযুক্ত প্রতিকার না পায়, তবে অবদমিত ক্ষোভ ও ধ্বংসাত্মক মনোবৃত্তি থেকে হিস্টিরিয়া দেখা যেতে পারে।

 আনোয়ারা সৈয়দ হকের লেখা ‘মানসিক সমস্যার গল্প’ বইটাতে ৩০ বছর বয়স্ক এক হিস্টেরিয়া রোগীর গল্প বর্ননা করা হয়েছে । এদেশে নারীরা এমনিতেই সামাজিক ভাবে নানা সময় লাঞ্ছনা, অবহেলা বা শারীরিক অত্যাচারের স্বীকার হন যার ফলে প্রধানত মহিলাদেরকেই হিস্টেরিয়া রোগে আক্রান্ত হতে দেখা যায়। এই সকল ক্ষেত্রে রোগীকে ঝাড়ফুকের জন্য সময় নষ্ট না করে হাসপাতালে নেওয়া উচিত কিংবা ডাক্তার দেখানো উচিত ।

 জহির রায়হানের লেখা ‘হাজার বছর ধরে’ উপন্যাসটি আমাদের সময়ে SSC এর সহপাঠ হিসেবে ছিল । এই উপন্যাসে মজু ব্যাপারীর মেয়েকে একদিন ভূতে ধরে । ভূত ছাড়ানোর জন্য তাকে গনু মোল্লার কাছে নিয়ে আসা হয় ঝাড়ফুক করার জন্য। 

সিজোফ্রেনিয়া (schizophrenia)

এবারে আসুন সিজোফ্রেনিয়া রোগটি সম্পর্কে কিছু জানা যাক ।বাংলাদেশের গ্রামে গঞ্জে বিশেষত অশিক্ষিত মানুষদের মধ্যে এই রোগটি দেখা যায়। রোগী অলিক কিছু দেখে বা শোনে বা চিন্তা করে। অধিকাংশ সময়েই সে অডিটরী হ্যালুসিনেশনের শিকার হয়।সে এমন কিছু শোনে যেটা আশেপাশের আর কেউ শুনতে পায় না। সে ভাবতে পারে কেউ তার সাথে সবসময় কথা বলছে/নিরদেশ দিচ্ছে। আবার একাধিক মানুষ তার মাথার ভেতর বসে কথা বলছে,রোগী জাস্ট রানিং কমেন্ট্রির মত করে তাদের কথা শুনছে ,এমন উপসর্গও হতে পারে। সে ভাবতে পারে কেউ তার সাথে সবসময় কথা বলছে। অনেক একে গায়েবী আওয়াজ বলে অভিহিত করে। অলীক অনেক কিছুই সে দেখতে পারে। উদ্ভট অনেক কিছুই সে করতে পারে। ধর্ম বা পরিবেশ অনুযায়ী কেউ আরবীতে সুরা কেরাত পড়া শুরু করতে পারে, কেউ বা জয় মা কালী বলে নাচানাচি করতে পারে। উপসর্গ দেখে বাংলাদেশের সকল ধরনের জিনে ধরা, ভুতে ধরা, আছর পড়া, নজর লাগা, ভর করা ইত্যাদি সকল রোগকেই সিজোফ্রেনিয়া ধরা যায়।


https://www.nimh.nih.gov/health/topics/schizophrenia#:~:text=What%20is%20schizophrenia%3F,for%20their%20family%20and%20friends.


রোগের কারন বংশগত এবং পরিবেশগত। বংশে অতীতে কারো সিজোফ্রেনিয়া থাকলে সেই পরিবারের পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে এই রোগের সম্ভাবনা থাকে। তবে বেশি প্রভাব পরিবেশের।ধর্মীয় বা আধ্যাত্মিক জগতের উপরে দৃড় বিশ্বাস তার মনে সিজোফ্রেনিয়ার বিজ বপন করে। ইসলামে বিশ্বাসী কোন তরুন তরুনীর উপর কখনো মা কালী ভর করে না।আবার কোন হিন্দুর উপর মুসলমান জিনের আছর পড়তে দেখা যায় না।


দেখা যায়, যে এলাকায় শিক্ষার হার কম, সেই এলাকার কমবয়সীরা এই রোগে আক্রান্ত হয়।অশিক্ষিত মানুষদের মস্তিষ্ক তুলনামূলকভাবে নতুন, অদ্ভুত বিষয় সহজে গ্রহন করতে পারে না। কোন নির্দিষ্ট ঘটনা বা তথ্য(কোন ভূত তাড়ানোর দৃশ্য,কোন প্যারানরমাল এক্টিভিটিজ,কোন ধর্মীয়/ সামাজিক মিথ অথবা এমনকিছু যা সে ব্যাখ্যা করতে পারছে না) এই কিশোর কিশরীদের মস্তিষ্ক যখন আলোড়িত করে, তখন সে সর্বক্ষন এটা নিয়ে চিন্তা করতে থাকে।চিন্তা করে যখন কোন সল্যুশন পায় না তখন মস্তিষ্কে এম্ফেটামিন হরমোন নিসৃত হয়। এম্ফেটামিন আবার ডোপামিন নামক আরেক হরমোনকে নিঃসরনের প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। এই ডোপামিনের প্রভাবেই রোগি কাল্পনিক কথা শোনে, অবাস্তব জিনিস দেখে এবং অসম্ভব কাজ করতে পারে।

ধরা যাক, কোন তরুনী দুপুরে গোছলের পরে বকুল গাছ তলায় বসেছিল। বিকালে তার মা তাকে ডেকে বলল,কেন সে বকুল তলায় বসেছিল? সে কি জানে না গোছলের পরে ভেজা চুলে বকুল তলায় বসলে জিনের নজর লাগে? তরুনী যদি অশিক্ষিত এবং কুসংস্কারাচ্ছন্ন হয় তাহলে এ ঘটনায় ওই তরূনীর মনে বেশ শক্ত একটা ভয় ঢুকে যাবে। (সে কুসংস্কার মুক্ত হলে একটুও ভয় পাবে না) রাতে হয়তো তার পরিবারের বয়স্ক দাদী নানী কারো কাছ থেকে সে কিছু জিনে ধরার গল্প শুনল, জিনে ধরলে মানুষ কি করে সে বিষয়ে তার কিছু ধারনা হল। এখন তার কাছে ভয়টা অনেক শক্ত হয়ে গেথে যাবে। তার ব্রেনে ডোপামিনের কাজ শুরু হয়ে গেছে।পরের কয়েক দিনের মধ্যেই তার সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশী। এবং আক্রান্ত হয়ে সে সেই সব আচরন করার চেষ্টাই করবে, যে কাজের ইনফরমেশন গুলা তার মাথায় আছে।(দাদীর কাছে শুনেছে জিনে ধরলে পুরুষ কন্ঠে কথা বলে। সে চাইবে গলা মোটা করে কথা বলতে। তার পাশের ঘরের আচারের ওপর হয়তো তার লোভ ছিল। সে আদেশ করবে আমাকে ওই ঘর থেকে আচার এনে খেতে দাও ইত্যাদি)।


নির্দিষ্ট কিছু ড্রাগের প্রভাবেও সিজোফ্রেনিয়া ঘটতে পারে।বিভিন্ন পূজা পার্বনে নেশা করার পর অনেকের মধ্যে উন্মত্ততার ভাব আসে। ক্লান্তিহীনভাবে সে তখন নাচ গান করতে পারে।অনেক অপ্রত্যাশিত আচরন ও করতে পারে সে তখন। 


সিজোফ্রেনিয়ার প্রভাবে রোগীর সাময়িক ভাবে স্মৃতিভ্রম হতে পারে। আবার কখনো কখনো শুধু নির্দিষ্ট কিছু স্মৃতিই তার মাথায় থেকে যায়। রোগী এ সময় নিজের সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারনা পোষন করে।তার আশেপাশের পরিবেশে কি হচ্ছে সে এটা ধরতে পারে না। অসংলগ্ন কথা বার্তা বলে থাকে, যা স্বাভাবিক অবস্থায় তার বলার কথা না। এমনকি এ অবস্থায় তার গলার স্বর ও পরিবর্তিত হতে পারে। চূড়ান্ত অবস্থায় রোগী নিজের বা অন্যদের শারীরিক ক্ষতি করতে পারে। তার শারীরিক শক্তি এ সময় অনেক বেশি বলে মনে হতে থাকে বা স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে সে অনেক বেশি কাজ করতে পারে এ সময়।

convulsion রোগের কিছু কিছু উপসর্গও এই ধরনের জিনের আছরের সাথে মিলে যায় । কনভালশনের ক্ষেত্রে রোগীর শরীর কাপতে থাকে, তাদের মুখ দিয়ে ফেনা বের হয় এবং কিছুক্ষন পরে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এটি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক ব্যাপার। এর সাথে ভৌতিক কোন ব্যাপার না। চিকিৎসা করালে এ রোগ সম্পুর্ন সেরে যায় ।


ভূত আছে নাকি নেই সেটা নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে । তবে ভূতের উপদ্রব কিংবা জ্বিনের আছরের অনেকগুলা ঘটনাই যে আসলে হিস্টেরিয়া কিংবা মাস হিস্টেরিয়া নামক রোগ, সেটা নিশ্চয়ই আপনারা বুঝতে পেরেছেন। এই ধরনের রোগিকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। অল্প কিছু চিকিৎসা পেলেই এই ধরনের রোগী সুস্থ হয়ে ওঠে। তাই এই ধরনের রোগী দেখলে পীর ফকির ডেকে এনে ঝাড় ফুক না করিয়ে দ্রুত ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান ।

বাংলাদেশে অনেক পীর ফকির আছে, তারা রোগীকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে নিষেধ করে। তারা রোগীর আত্মীয় স্বজনকে বিভিন্নভাবে ভয় দেখায়। রোগীকে ডাক্তারের কাছে নেওয়া হলে ক্ষতি হবে, রোগী মারা যাবে এমন কথা বলে । রোগীর চিকিৎসার দায়িত্ব পেলে ভূত নামানোর জন্য রোগীর উপর অনেক অত্যাচার করে। হাজার বছর ধরে উপন্যাসের গনু মোল্লা ভূত নামানোর জন্য শুকনো মরিচে আগুন ধরিয়ে মজু ব্যাপারীর মেয়ের নাকে ঠেসে ধরত । এই ধরনের আরো অনেক অত্যাচার ফকিররা করে থাকে । ঝাটা কিংবা বেত দিয়ে পিটানো,পানিতে চুবানো কিংবা শরীরে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার মত ভয়াবহ কাজও তারা করে । এই ধরনের কাজের পিছনে তাদের যুক্তি হচ্ছে ,’আমি যতই মারি, মেয়েটা কোন ব্যথা পাচ্ছে না, মেয়েটার ঘাড়ে থাকা জিন ব্যথা পাচ্ছে’। এটা সম্পূর্ন ভুল কথা । মেয়েটা অবশ্যই ব্যথা পায়।

কিন্তু হিস্টেরিয়া রোগের কারনে সঠিকভাবে বলতে পারে না। কোনো কোনো সময় ফকিরের অত্যাচারে রোগী মারাও যায় , ফকির তখন জিনের ঘাড়ে দোষ চাপায় (মেয়েটাকে জিন মেরে ফেলেছে, আমি কিছু করিনি) । এই সকল পীর ফকির কিংবা সাধূ সন্যাসীর কাছ থেকে সাবধান। এদের কাছ থেকে উপকারের বদলে ক্ষতিই হবে শুধু। কাজের কাজ কিছুই হবেনা, মাঝখান দিয়ে টাকা পয়সা খরচ হবে ।

হিস্টেরিয়া কিংবা সিজোফ্রেনিয়া কিংবা অন্যান্য যে কোনো অস্বাভাবিক রোগের ক্ষেত্রেই রোগিকে ডাক্তারের কাছে নিতে হবে। আপনার আমার একটু সচেতনতাই অনেককে বাঁচাতে পারে অপচিকিৎসার হাত থেকে।

ভূত নেই বলে যে ভূতের ভয় নেই, তা কিন্তু নয়। কেউ যদি অনেক ভয় পায়, তার উচিত ভালো মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া। কারণ, ভয়টা সত্যি। এই ভয় একজন মানুষকে মানসিকভাবে পঙ্গু করে ফেলতে পারে। তোমাদের কারও যদি অনেক ভয় লাগে, অবশ্যই মা–বাবাকে জানাবে এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেবে।


  • ধর্মীয় ব্যাখা:


সনাতন ধর্ম:

সনাতন ধর্ম গ্রন্থ বেদ ও বেদানুকুল শাস্ত্রে আত্মা নিয়ে খুব নিখুত ভাবে আলোচনা আছে যেখানে অন্যান্য ধর্মে আত্মার কোন সুস্পষ্ট ব্যাখা নেই।বিজ্ঞান ও তাতে ব্যর্থ।

বেদ অনুযায়ী তিনটা অনাদি সত্তা> পরমাত্মা, প্রকৃতি,ও জীবাত্মা (physical matter insubatomic state)

ঋক্‌বেদ১:১৬৪:২০,, ১:১৬৪:৪৪,,, ১০:৮২:৭,,,, যজুর্বেদ ৪০:১,,, ৪০:১৫,,,অথর্ববেদ ৪:৩৫:১,,, ১০:৮:২-৪,,,, শেতাশ্বতর উপনিষদ ১:১০ ঈশ্বর মহাবিশ্বের সৃষ্টির প্রতিনিধিত্বকারী কারণ।


প্রকৃতিং পুরুষষ্ণৈব বিদ্ধ্যনাদী উভাবপি।

গীতা (১৩।২০)

ভাষার্থঃ- প্রকৃতি ও পুরুষ উভয়কেই অনাদি বলে জেনো।

এই তিনটি সত্তার বাহিরে আর কোন সত্তা নেই।যদি থাকত তবে বেদ, উপনিষধ,স্মৃতিশাস্ত্রে আলোচিত হত।

যখন একজন মানুষ মারা যায় তখন তাহার দেহের দুনিয়ার কর্মফল অনুযায়ী আত্মার পূনজন্ম হয়  প্রমাণ নিচে দেখুন


সবিতা প্রথমেऽইনগ্নিন্ত্রিতীয়ে বায়ুতীয়ऽআদিত্যশ্চতুর্থে। চন্দ্ৰমাঃ

পঞ্চমऽঋতুঃ ষষ্ঠে মরুতঃ সপ্তমে বৃহস্পতিরষ্টমে মিত্রো নবমে বরুণো দশমऽইন্দ্ৰऽএকাদশে বিশ্বে দেবা দ্বাদশে। [যজুর্বেদ ৩৯/৫)

ভাবার্থ - যখন আত্মা দেহ ত্যাগ করে পৃথিবী আদি সহ সকল পদার্থে ভ্রমণ করে, স্বীয় কর্মানুসারে পরমাত্মার বিধিঅনুসারে জন্ম লাভ করে, সুপ্রসিদ্ধ হয়।

মূলত এই মন্ত্রের দ্বারা অনেকেই ভাবেন যে আত্মা শরীর ত্যাগ করার পর সূর্য, জল, বায়ু আদি পদার্থ হতে শক্তি প্রাপ্ত করে তারপর নতুন দেহ ধারণ করে। যদিও উক্ত মন্ত্রে বলা হয় নি শক্তি গ্রহণের পর আত্মা গর্ভাশয়ে প্রবেশ করে । আত্মা যখন পুরাতন দেহ ত্যাগ করে বাইরে আসে, তখন তার পক্ষে প্রকৃতির কোন কিছু ভোগ করা সম্ভব নয়, কারণ তখন আত্মার নিকট স্থুল দেহ থাকে না। এই সম্পর্কে সাংখ্যদর্শনে বলা হয়েছে -


ন কিঞ্চিদপ্যনুশয়িনঃ

( সাংখ্য -৫/১২৫)

ন বুদ্ধ্যাদিনিত্যত্বমাশ্রয়বিশেষেহপিবিহ্নিবৎ। ( সাংখ্য - ৫/১২৬) 

আশ্রয়াসিদ্ধেশ্চ। 

( সাংখ্য - ৫/১২৭) 

অর্থাৎ - যে আত্মা পূর্বতন শরীর ত্যাগ করে নতুন শরীর ধারণ হেতু যাত্রা করে তাকে অনুশয়ী আত্মা বলে। এই অনুশয়ী আত্মার কোন প্রকার চৈতন্য তথা সুখ দুখঃ ইত্যাদির জ্ঞান থাকে না । তাই আত্মা এই সম্পর্কে সম্পুর্ন অজ্ঞ থাকে যে সে কোথায় যাচ্ছে, কি হেতু গমন করছে। 

যতক্ষণ পর্যন্ত আত্মা স্থুল শরীরকে প্রাপ্ত না করে ততক্ষন পর্যন্ত আত্মার চৈতন্য হয় না। সুক্ষ্ম শরীরে আত্মা সুখ দুখঃ আদির জ্ঞান লাভ করতে পারে না। 


এ সম্পর্কে গীতার একটা শ্লোক উদাহরণ হিসাবে দেওয়া যেতে পারে - 


নৈনং ছিন্দন্তি শস্ত্রাণি নৈনং দহতি পাবকঃ। ন চৈনং ক্লেদয়ন্ত্যাপো ন শোষয়তি মারুতঃ॥

( গীতা -২/২৩)

অনুবাদঃ আত্মাকে অস্ত্রের দ্বারা কাটা যায় না, আগুনে পুড়ানো যায় না, জলে ভেজানো যায় না, অথবা হাওয়াতে শুকানো যায় না। 


অর্থাৎ আত্মার উপর জল, বায়ু, তাপ আদি কোন কিছুর প্রভাব পড়ে না। যখন আত্মা স্থুল শরীরে অবস্থান করে তখন তাপ, জল, বায়ু ইত্যাদির প্রভাব মূলত স্থুল শরীর ভোগ করে। আত্মা মূলত দেহের মাধ্যমেই শক্তি প্রাপ্ত করে, সুখ ভোগ করে, কষ্ট ভোগ করে। সুতরাং গীতার শ্লোকানুসারেও আমরা দেখতে পাচ্ছি আত্মার স্থুল শরীর ব্যাতিত শক্তি প্রাপ্ত করা অসম্ভব। 


তদ্যথা তৃণজলায় কা তৃণস্যান্তং গত্বাহন মারুনমারুন্যাত্মানম,পসংহর তার মেবায়মাত্মেদং শরীরং নিহ ত্যাঽবিদ্যাং গময়িত্বাহ নামারুমমারুম্যাত্মানম,প সংহরতি

 [বৃহদারণ্যক ৪/৪/৩ ]


অর্থাৎ - যেরূপে জোঁক একটি তৃণের শেষ প্রান্তে গিয়ে অপর তৃণকে আশ্রয় করে নিজেকে তার উপর উঠিয়ে নেয় তেমনি আত্মাও দেহত্যাগ করিয়া অবিদ্যা দূর করে অন্য একটি দেহকে আশ্র‍য় করে ও সেখানে গমন করে। 


➤জীব যেমন জীর্ণ বস্রাদি পরিত্যাগ করে নতুন বস্র পরিধান করে। আত্মাও তেমনি জীর্ণ দেহ ত্যাগ করে নতুন শরীরে প্রবেশ করে। (গীতা ২/২২)

➤জীব যেরুপ বাসনাযুক্ত, মরণকালে সেইরুপ সঙ্কল্পবিশিষ্ট হইয়া প্রাণবৃত্তিকে অবলম্বন করে। প্রাণ উদানবায়ু ও জীবাত্মার সহিত মিলিত হইয়া ভোক্তা জীবকে যথাসঙ্কল্পিত লোকে লইয়া প্রাপ্ত হবে

  (প্রশ্ন উপ ৩/১১)


শতং চৈকা চ হৃদয়স্য নাড্যস্তাসাং মূর্ধানমভিনিঃসৃতৈকা। তয়োমায়ন্নমৃতত্বমেতি বিষন্যা উৎক্রমণে ভবন্তি৷৷ 

[ কঠোপনিষদ - ২/৩/১৬ ]

পদার্থ - [ হৃদয়স্য ] হৃদয়ের [শতম্ চ একা চ] একশ এক [নাড়্যঃ] নাড়ি আছে [ তাসাম্] তাদের মধ্যে [একা ] একটি [মূর্ধানম্] মস্তকের দিকে [অভিনিঃসৃতা ] বেরিয়েছে (একে সুষুম্না বলে) [ তথা ] তার দ্বারা [ ঊর্ধ্বম্‌ ] ঊর্ধ্বলোকে [আয়ন্] গিয়ে (মানুষ) [অমৃতত্বম্] মোক্ষ [এতি] প্রাপ্ত হয় [অন্যাঃ] অপর একশত নাড়ি দ্বারা [উৎক্রমণে] মৃত্যুকালে জীবকে [ বিষন্যা] নানাবিধ যোনিতে নিয়ে যাওয়া [ভবন্তি] হয়। 


অথৈকয়োর্ধ্ব উদানঃ পুণ্যেন পুণ্যং লোকং নয়তি পাপেন পাপমুভাভ্যামেব মনুষ্যলোকম্॥ 

[প্রশ্ন উপনিষদ - ৩/৭]

পদার্থ - [অথ] তথা [একয়া] আর একটি নাড়ি আছে, তার দ্বারা [ উদানঃ ঊর্ধ্বঃ ] উদানবায়ু উপরের দিকে গমন করেন [ সঃ পুণ্যেন] তিনি পুণ্যকর্মের দ্বারা (মনুষ্যম) মানুষকে [পুণ্যম্ লোকম্] পুণ্য লোকে [নয়তি] নিয়ে যান [পাপেন] পাপকর্মহেতু [পাপম্ (নয়তি) ] পাপযোনিতে নিয়ে যান।[উভাভ্যাম্ এব] পাপ এবং পুণ্য উভয়বিধ কর্ম দ্বারা (জীবকে) [ মনুষ্যলোকম্] মনুষ্য শরীরে নিয়ে যান৷


যচ্চিত্তস্তেনৈষ প্রাণমায়াতি প্রাণস্তেজসা যুক্তঃ সহায়না যথাসংকল্পিতং লোকং নয়তি।

[প্রশ্নোপনিষদ -৩/১০]

পদার্থ - [এষঃ] এই জীবাত্মা [যচ্চিত্তঃ] যে সংকল্পবান হন [তেন ] সেই সংকল্পের সাথে [ প্রাণম্] মুখ্য প্রাণে [আয়াতি] স্থিত হয়ে যান [প্রাণঃ] মুখ্য প্রাণ [ তেজসা যুক্তঃ] তেজ যুক্ত [আত্মনা সহ ] জীবাত্মাকে [যথাসঙ্কল্পিত] সংকল্পানুসারে [লোকম্] ভিন্ন ভিন্ন লোক অথবা যোনিতে [ নয়তি ] নিয়ে যায়।


উপরুক্ত শাস্ত্রীয় আলোচনা থেকে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া গেল যে, দেহ ত্যাগের সাথে সাথেই আত্মার পূন্যজন্ম হয়ে যায়।সুতরাং এছাড়া আলদা কোন সত্তা বিদ্যমান থাকে না।যেহেতু কিছু থাকে না সেক্ষেত্রে ভূত প্রেত নিছক ভ্রমাত্মক। 


  • তাহলে ভূত কি?


যাহা কিছু উৎপন্ন হইয়া বর্তমান কালে থাকে না তাহা ভূতস্থ হয় বলিয়া তাহার নাম 'ভূত'। ব্রহ্মা হইতে আজ পর্যন্ত বিদ্বান্ব্যক্তিদের এইরূপ সিদ্ধান্ত


অমরকোষ অভিদান অনুযায়ী ভূত শব্দটির অর্থ হচ্ছে যা অতিবাহিত হয়ে গেছে বা কাল।


গীতায় ভূত শব্দটির অর্থ(সৃষ্টিচক্র বর্ননা)


অন্নাদ্ভবন্তি ভূতানি পর্জ্জন্যাদন্নসম্ভবঃ। 

 যজ্ঞাদ্ভবতি পর্জ্জন্যো যজ্ঞঃ কর্ম্মসমদ্ভবঃ।।

কর্ম্ম ব্রহ্মোদ্ভবং বিদ্ধি ব্রহ্মাক্ষরসমুদ্ভবম্ ।  

তস্মাৎ সর্ব্বগতং ব্রহ্ম নিত্যং যজ্ঞে প্রতিষজঠিতম্ ।। ৩/১৪-১৫ 


ভূতানি =প্রাণীসকল, অন্নাৎ = অন্ন থেকে,

ভবন্তি = উৎপন্ন হয় (এবং)অন্নসম্ভবঃ =অন্নের উৎপত্তি 

পর্জন্যাত = বৃষ্টি থেকে,পর্জন্য:=বৃষ্টি,ভবতি = হয়

যজ্ঞাৎ = যজ্ঞ দ্বারা (এবং)যজ্ঞঃ = যজ্ঞ

কর্মসমুদ্ভবঃ =,কর্ম দ্বারা নিষ্পন্ন হয়।


বঙ্গানুবাদঃ — অন্ন হইতে ভূত সকল উৎপন্ন হয়, পর্জ্জন্ন (বৃষ্টি) হইতে অন্নসম্ভব (অন্নের উৎপত্তি) হয়, যজ্ঞ হইতে পর্জ্জন্য উৎপন্ন হয়, যজ্ঞ কর্ম্ম হইতে উৎপন্ন, কর্ম্ম ব্রহ্ম হইতে উৎপন্ন আর ব্রহ্ম অক্ষর হইতে উৎপন্ন জানিও । এই জন্য সর্ব্বগত ব্রহ্ম নিত্য যজ্ঞে প্রতিষ্ঠিত ।। 


[শ্রীমদভগবদগীতা পদচ্ছেদ,অন্বয়,বংগানুবাদ- জয়দয়াল,গোয়েন্দাকা]


যজন্তে সাত্ত্বিকা দেবান্যক্ষরক্ষাংসি রাজসাঃ৷

প্রেতান্ভূতগণাংশ্চান্যে যজন্তে তামসা জনাঃ৷৷৪

(শ্রীমদ্ভগবদগীতা - ১৭/৪ ) 

পদ০ :- যজন্তে । সাত্ত্বিকাঃ । দেবান্ । যক্ষরক্ষাংসি । রাজসাঃ । প্রেতান্ । ভূতগণান্ । চ । অন্যে । যজন্তে । তামসাঃ । জনাঃ ।।


পদার্থঃ- (সাত্ত্বিকাঃ, দেবান্, যজন্তে) সাত্ত্বিক ব্যক্তি দেব = বিদ্বানদের সৎকার করে, (রাজসাঃ) রাজস ব্যক্তি (যক্ষরক্ষাংসি) যক্ষ = বল দ্বারা প্রতিষ্ঠিত রক্ষাংসি = পাপী ব্যক্তিদের সৎকার করে (অন্যে, তামসাঃ, জনাঃ) এবং অন্য তামস ব্যক্তি (ভূতগণান্) অগ্নাদি ভূত পদার্থ (চ) এবং (প্রেতান্) মৃত ব্যক্তিদের (যজন্তে) পূজা করে। 


অনুবাদঃ- সাত্ত্বিক ব্যক্তি দেব = বিদ্বানদের সৎকার করে, রাজস ব্যক্তি যক্ষ = বল দ্বারা প্রতিষ্ঠিত, রক্ষাংসি = পাপী ব্যক্তিদের সৎকার করে এবং অন্য তামস ব্যক্তি অগ্নাদি ভূত পদার্থ এবং মৃত ব্যক্তিদের পূজা করে।ভাষ্যকারঃ আর্যমুনি


  • প্রেত অর্থ কি?

গুরো: প্রেতস্য(মনু৫/৬৫) অর্থাৎ যখন গুরুর মৃত্যু হয় তখন মৃত দেহের নাম হয় প্রেত।


জ্বীন জাতি: ইসলামের কোরআনে জ্বীন জাতির উল্লেখ রয়েছে। আরবি জ্বীন শব্দটির আক্ষরিক অর্থ কোনো কিছু যা গুপ্ত, অদৃশ্য, অন্তরালে বসবাসকারী বা অনেক দূরবর্তী। কুরআনে জ্বীন ও ইনসান (মানুষ) এই দুই জাতির অস্তিত্বের কথা বলা হয়েছে। কুরআন অনুসারে জ্বীন জাতি মানুষের মতই আল্লাহ সৃষ্ট অপর আরেকটি জাতি, যারা পৃথিবীতে মানব আগমনের পূর্ব থেকেই ছিল এবং এখনো তাদের অস্তিত্ব রয়েছে। তবে মানুষের চোখে তারা দৃষ্টিগ্রাহ্য নয়। কিন্তু জ্বীনরা মানুষদের দেখতে পায়। তারা বিশেষ কিছু শক্তির অধিকারী।

জীনদের বংশ পরমপরা আছে,তারা সন্তান জন্ম দেয়।এছাড়া শোনা।যায় জীনদের সাথে মানুষের দৈহিক মিলনে তৃতীয় লিংগের উদ্ভব হয়।যা বিজ্ঞানের সাথে সাংঘর্ষিক। 

হ্যালোইন ডে: দরজায় ঠক্ ঠক্ শব্দ। কে এলো এতো রাতে? দরজা খুলতেই ভয়ে আত্মা উড়ে যাবার অবস্থা! লম্বা টুপি মাথায়, হাতে উড়ন্ত ঝাড়ু নিয়ে দাঁড়িয়ে নাক বাঁকানো হ্যালোইন ডাইনি! হ্যালোইন ডে-র কথা কে না জানে! প্রতিবছর অক্টোবরের ৩১ তারিখ মৃত আত্মাদের স্মরণে পালিত হয় এ দিবস। বিগত কয়েক বছরে পাশ্চাত্য ও প্রাচ্যের অলিগলির প্রায় সবখানেই হ্যালোইন ডে পরিচিতি পেয়েছে। অক্টোবরের ৩১ তারিখ মৃতের দেবতা সামহাইন সব মৃত আত্মাদের পৃথিবীতে আহ্বান জানান। ওইদিন নাকি উড়ন্ত ঝাড়ুতে করে হ্যালোইন ডাইনি সারা পৃথিবী উড়ে বেড়ায়। কখনো সবুজ খরখরে দেহের ডাইনি বুড়ি কড়া নাড়ে কোন বাড়ির দরজায়। হ্যালোইনের দিনটি সম্পর্কে এটাই লোকজ বিশ্বাস।

এ উৎসবের শুরুটা হয়েছিল মধ্যযুগে। আয়ারল্যান্ড, ওয়েলস, স্কটল্যান্ডের উচ্চভূমি ও ফ্রান্সের উত্তর অংশ জুড়ে তখন কেল্টিক সভ্যতা বিস্তার। প্রাচীন কেল্টদের পালিত সামহাইন উৎসব থেকেই মূলত হ্যালোইনের সূত্রপাত। কেল্টদের বিশ্বাস ছিল, নতুন বছর শুরু হওয়ার আগের রাতে জীবিত ও মৃতের দুনিয়ার মধ্যকার ফারাক কেটে যায়। সেসময় মৃত আত্মা ও ভূত-প্রেত পৃথিবীতে আসে। তাই ৩১ অক্টোবর রাতে মৃত স্বজনদের আত্মার সঙ্গে মিলনের কামনায় তারা সামহাইন উৎসব পালন করতো। পরে এ উৎসব খ্রিষ্টান ধর্মের ওপরেও প্রভাব ফেলে। বিশ্বব্যাপী পহেলা নভেম্বরকে ‘অল সেইন্টস ডে’ ঘোষণা করা হয় ও এর আগের সন্ধ্যা মানে ৩১ অক্টোবরকে ‘অল-হ্যালোস-ইভ’ বা হ্যালোইন হিসেবে পালিত হয়। ১৯২০ থেকে ১৯৫০ সালের ভেতর পুরো আমেরিকায় হ্যালোইন ডে’র আনুষ্ঠানিকতা বাড়তে থাকে। পরে দিনটিকে সরকারি ছুটির দিন হিসেবে গণ্য করা হয়। এদিন অনেকে ভূতের সাজে নিজেকে সাজায়। অনেকের মতে, এসময় সাধারণ মানুষের ভিড়ে মিশে যায় বিদেহী আত্মারাও।

  • মহালয়া ও ভূতচতুর্দশী : আগে দূর্গা দেবীর আগমন হিসেবে পালিত একটি পৌরানিক আচার। জনশ্রুতি আছে সেইদিন 

১৪পুরুষ নরক থেকে মর্ত্যলোকে আসে এবং এই ভূতচতুর্দশীতে আবার নরকে গমন করেন, সেই গমন পথ যাতে সুস্পষ্ট হয় তার জন্য ১৪ প্রদীপ জ্বালানো হয়।সেই দিন ১৪পদের শাক খাওয়া হয়।এছাড়া এলাকাভেদে অন্যান্য মুখরোচক গল্প ও থাকতে পারে

একটা সহজ জিনিস ভাবেন তো। আপ্নার রুমে বাতি জ্বলছে। ভরদুপুর। এই ঘরে যদি কোনো ভূত লুকিয়ে থাকেও, সে কথা ভেবে আপনি কি ভয় পাবেন? উঁহু, পাবেন না। কারণ, আলো আছে। হুট করে কেউ পেছন থেকে এসে আপনাকে ছুঁয়ে দেবে না বা ঘাড়ে টোকা দেবে না। এবার বাতিটা নিভিয়ে দিন। একটু আগে যেমন আপনি ভয় পাওনি, এখনো আসলে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।

কথায় আছে, বনের বাঘে খায় না, মনের বাঘে খায়। আপনি যদি মনের বাঘকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন তাহলে আপনার ভয় পাওয়ার কিচ্ছু নেই। 


© বাংলাদেশ অগ্নিবীর 

Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)