প্রশ্নঃ ঈশ্বর মায়া বা প্রকৃতির অধীশ্বর নাকি অধীন
মায়াং তু প্রকৃতিং বিদ্যান্মায়িনং তু মহেশ্বরম্।
তস্যাবয়বভূতৈস্তু ব্যাপ্তং সর্বমিদং জগৎ॥
শ্বেতাশ্বতর ৪।১০
সরলার্থঃ মায়াকে প্রকৃতি বলে জানবে এবং মায়ার অধিষ্ঠাতাকে মহেশ্বর বলে জানবে। তাঁর একদেশস্থ পাঁচ অঙ্গভূত অর্থাৎ পঞ্চ-মহাভূত দ্বারা এই সম্পূর্ণ জগৎ পরিব্যাপ্ত ।
‘মায়া’ শব্দটির প্রকরণানুসারে অনেক প্রকার অর্থ হয়। নিঘণ্টু অনুসারে ‘মায়া’ বুদ্ধির একটি নাম। কিন্তু এই শ্রুতিবাক্যে ঋষি প্রকৃতিকেই ‘মায়া’ শব্দ দ্বারা নির্দেশ করেছেন। মায়ার সংজ্ঞায় বলা যেতে পারে— যে তত্ত্ব কোনো তত্ত্বের বিকার বা কার্য নয় অর্থাৎ কেবল কারণ, তা-ই ‘মায়া’ বা ‘মূল প্রকৃতি’। মায়া বা প্রকৃতিই জগতের উপাদান-কারণ, যার সহযোগে পরমাত্মা এই দৃশ্যমান জগৎ রচনা করেছেন। প্রকৃতি জড় হওয়ার কারণে স্বয়ং কিছু উৎপন্ন করতে পারে না, পরমাত্মাই প্রকৃতিতে গতির সঞ্চার করেন। মায়াপতি হওয়ার কারণেই পরমাত্মাকে ‘মায়াধীশ’ বলা হয়। কারণ ঈশ্বরের সত্তা এবং অসীম ক্ষমতা দ্বারাই জগতের সমস্ত ব্যবস্থা যথাযথ নিয়মে চলছে। কেননা এই বিশাল পৃথিবী, সূর্যাদি লোকলোকান্তর সঠিক নিয়ম ব্যবস্থাতে চালিত করার কোনো সামর্থ্য জীবাত্মার নেই। সেই ঈশ্বরের একদেশস্থ পঞ্চমহাভূত দ্বারা এই জড়-জগৎ নির্মিত ও ব্যাপ্ত হয়েছে ।
এই শ্রুতিতে জগৎকে পরমাত্মার অঙ্গভূত বলা হয়েছে। বেদ বলছে এই জগৎ পরমাত্মারই মহিমা এবং তা পরমাত্মার এক পাদ। যথা— “এতাবানস্য মহিমাতো জ্যায়াংশ্চ পুরুষঃ। পাদোঽস্য বিশ্বা ভূতানি ত্রিপাদস্যামৃতং দিবি॥ (ঋ০ ১০।৯০।৩)” অর্থাৎ এই দৃশ্যমান জগৎ (ব্রহ্মাণ্ড) এই পরমাত্মার মহিমার সূচক। পরমাত্মা তো এর থেকেও অধিক মহান! ‘মূল-প্রকৃতি’ থেকে ‘বিশ্বব্রহ্মাণ্ড’ পর্যন্ত ওই পুরুষের এক পাদ। এঁর তিন পাদ প্রকাশ স্বরূপে অবিনাশী। পরের মন্ত্রে বলা হয়েছে—“ত্রিপাদূর্ধ্বং উদৈৎ পুরুষঃ পাদোস্যেহাভবৎ পুনঃ” (ঋ০ ১০।৯০।৪) তিন পাদযুক্ত এই পুরুষই সবার ঊর্ধ্বে বিরাজমান, তাঁর এক পাদ জগৎরূপে প্রকট হয় ।
© বাংলাদেশ অগ্নিবীর