
প্রকৃতি (Prakriti) বা Nature এক বহতা স্রোতের নাম । সে গতিময়, পরিবর্তনশীল , উন্মুখ । বিশৃঙ্খলা তার শৃঙ্খলা , অনির্বচনীয়তা তার পরম রূপ । সাঁঝবেলায় শিশির যেমন নিঃশব্দে ঝরে পড়ে পাতায় , কিংবা ধ্বংসের ভিতর দিয়ে যেমন জন্ম নেয় সৃষ্টির সূচনা—তেমনি প্রকৃতি আপন নিয়মে জেগে ওঠে , পরিবর্তিত হয় , কখনো গঠন করে , আবার কখনো ভেঙে দেয় ।
এই পরিবর্তনই প্রকৃতির ধর্ম । প্রকৃতির নিয়মই হল "পরিবর্তনই চিরন্তন ।" হোক তা কোষের বিভাজনে, বা মহাজাগতিক বিবর্তনে– সবই এক সূত্রে গাঁথা । উদ্ভব ও বিলয়ের চক্রে প্রকৃতি খেলছে চিরন্তন লীলার খেলা । এই লীলা কখনো ‘নাশ’ নয়, বরং ‘রূপান্তর’ । ধ্বংসের ছায়ায়ই লুকিয়ে থাকে সৃষ্টি , বিশৃঙ্খলার কোলে বাস করে নতুন নিয়মের সম্ভাবনা ।
এই পরিবর্তন, এই অনিশ্চয়তা— তাকেই সংস্কৃতে বলে ‘বিকৃতি’ । এবং বিকৃতিই প্রকৃতির স্বরূপ । ‘বিকৃতি’ মানেই ‘রূপান্তর’, ‘বিকাশ’ । সুতরাং ‘নিয়ম’ মানেই পরিবর্তন , স্থিতিই বরং অস্বাভাবিক! প্রকৃতি কখনো নিঃশব্দ, কখনো প্রলয়কারী , আবার কখনো মাতৃত্বের মতো কোমল ।


প্রকৃতি শব্দটি সংস্কৃত দর্শনে বহন করে এমন এক গূঢ় তাৎপর্য , যা অস্তিত্বের মূলে বিদ্যমান ; যা শুধু জড় নয় , বরং সমস্ত সৃষ্টির প্রথমতম সম্ভাব্য অবস্থার প্রতিনিধিত্ব করে । '√कृ' ধাতু দ্বারা "করা" বা "বিকাশ" বোঝায়; যা আধুনিক systems theory বা self-organizing systems-এর মূলে থাকে ।
'প্র' শব্দের অর্থ পূর্বে এবং 'কৃতি' শব্দের অর্থ উৎপত্তি বা সৃষ্টি । প্রকৃতির বুৎপত্তিগত অর্থ হলো সৃষ্টির পূর্বে বিদ্যমান । সৃষ্টির প্রথম উপাদান হলো এই প্রকৃতি ।পদার্থবিজ্ঞানে একে বলা যায় Primordial Energy Field বা Pre-Manifest State প্রকৃতিই হলো সকল জড় পদার্থের মূল কারণ । সাংখ্য দর্শনে এই প্রকৃতির স্পষ্ট বর্ণনা পাওয়া যায় ।
❝সত্ত্বরজস্তমসাংসাম্যাবস্থা প্রকৃতিঃ❞
[সাংখ্যদর্শন-১।৬১]
ভাবার্থঃ- সত্ত্বঃ, রজঃ ও তমঃ স্বরূপ তিন প্রকারের অনাদি নিত্য কারণ 'সাম্যবস্থায়' থাকায় পরস্পর মুক্ত হতে না পেরে পৃথক পৃথক থাকা অবস্থার নাম প্রকৃতি যা এই সমস্ত সৃষ্ট পদার্থের মূল কারণ । এটি জড় ও ত্রিগুণাত্মক বলে সংযােগ বিয়ােগের উপযােগী ।
[ এখানে ❝সাম্যাবস্থা❞ কথাটি থার্মোডাইনামিক equilibrium এর মত । এই অবস্থা ভেঙেই সৃষ্টি শুরু হয় । ]
প্রকৃতিকে আরো ভালভাবে বোঝার জন্য এই তিন গুণকে ভালোভাবে বুঝতে হবে
সত্ত্বঃ - √সৎ(ত্)+ত্ব অর্থাৎ সৎ ধাতুর সাথে ত্ব কৃৎ প্রত্যয় যুক্ত হয় সত্ত্ব শব্দটি গঠিত হয় । 'সৎ' শব্দের বুৎপত্তিগত অর্থ হচ্ছে ভূত , ভবিষ্যৎ , বর্তমান এই তিন কালে যা অস্তিত্বশীল । এটি পদার্থবিজ্ঞানে [ steady state বা তথ্যতাত্ত্বিক ভারসাম্য (informational stability) নির্দেশ করে। ]
রজঃ - √রন্ঞ্জ + অ । রন্ঞ্জ ধাতু এবং অ কৃৎ প্রত্যয়যোগে রজ শব্দটি গঠিত হয়েছে যেখানে ন্+ঞ অনুচ্চারিত থাকে । রন্ঞ্জ ধাতুর অভিধানিক অর্থ হচ্ছে রং । কিন্তু আরেকটি অর্থ হচ্ছে অস্থির বা গতিশীল ।
[ kinetic energy বা dynamic change-এর প্রতিরূপ হিসেবে দেখা যায় । ]
তমঃ - √তম্ + অ । তম্ ধাতুর সাথে অ কৃৎ প্রত্যয় যুক্ত হয়ে তম শব্দটি গঠিত হয় । এই ধাতুর একটি অর্থ হলো রূপান্তর । [ এটির সঙ্গে inertia , mass , বা resistive force-এর তুলনা করা যায় , যা পরিবর্তনের বিরুদ্ধে কাজ করে ।

১.প্রথম এটি শাশ্বত এবং তিন কালেই বিদ্যমান ।
[ সময়াতীত উপাদান; পদার্থবিজ্ঞানের ভাষায় time-independent fundamental field ]
২.দ্বিতীয় এটি গতিশীলরত অবস্থায় এবং Dynamic system: যেমন entropy বা information flux-এর মতো চির প্রবহমান
৩. সর্বশেষ এটি রূপান্তরে সক্ষম । আরও স্পষ্ট ভাবে বললে প্রকৃতির সৃষ্টি বা ধ্বংস নেই । যেকোনো রূপেই এটি থাকুক না কেন এটির কোনো প্রাপ্তি , কোনো ক্ষয় নেই । [ Energy can neither be created nor destroyed Conservation Law-এর নিখুঁত প্রতিধ্বনি । ]
যখন রজ ও তম গুণ সত্ত্ব গুণের মধ্যে সুপ্ত অবস্থায় থাকে তখন প্রকৃতি অপ্রকাশিত থাকে । Latent state of potentia ; quantum vacuum এর analog যখনই এই তিনটি গুণ পৃথক হয় প্রকৃতি তমো গুণের প্রভাবে বস্তুগত এবং রজো গুণের প্রভাবে সম্প্রসারিত হতে থাকে । Big Bang এর ঠিক পরপর: mass ও expansion-এর উৎপত্তি , যেখানে mass creation , spatial expansion অর্থাৎ সৃষ্টির আদিতে জড় প্রকৃতি কেবল অস্তিত্বশীল অবস্থায় ছিল (সত্ত্ব গুণের অধীনে) । তারপর তাপের সৃষ্টি এবং বিস্ফোরণ ও রজোগুণের প্রভাবে সম্প্রসারণ । ঠিক যেমন Big Bang তত্ত্বে—প্রথমে সিংগুলারিটি , এরপর তাপীয় অশান্তি ও মহাবিস্ফোরণ । এরপর তমোগুণের প্রভাবে ভরের সৃষ্টি । Higgs Field-এর কার্যকলাপ ও mass acquisition এই ধাপেই ঘটে । এছাড়াও বেদে প্রকৃতিকে জড় হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে । জড় হলো এমন এক সত্তা যা অস্তিত্বশীল কিন্তু চেতনা শক্তিবিহীন অর্থাৎ নিজের থেকে কোনোরূপ কর্ম করতে অক্ষম । কেবল অন্য কোন চৈতন্য সত্তাই সহায়তায় এটি কর্ম করতে পারে । আধুনিক বিজ্ঞানে একে বলা যায় [ deterministic systems , যা external input বা force ছাড়া ক্রিয়াশীল নয় । ]
বেদে বলা হয়েছে -

এষা সনত্নী সনমেব জাতৈষা পুরাণী পরি সর্ব্বং বভূব । মহী দেব্যু ষসো বিভাতি সৈকেনৈকেন মিষতা বিচষ্টে ।
[অর্থববেদ ১০।৮।৩০]
অনুবাদ: এই নিত্য প্রকৃতি সর্বদাই পরিমাণ যুক্ত পুরাতন , নব নব রুপ ধারিণী এবং কার্য্যে করণ রুপে বিরাজমান । প্রত্যেক গতিশীল জীবের সঙ্গেই এই প্রকৃতি নিজের স্বরুপ ও সত্ত্বা প্রকাশ করিতেছে ।
বিজ্ঞানমতে এই মহাবিশ্বের সকল বস্তুর মূল কারণ শক্তি । সকল জড় পদার্থই শক্তির বস্তুগত রূপ যা হলো ভর । এছাড়াও ' শক্তির নিত্যতা সূত্র অনুসারে 'এই মহাবিশ্বের শক্তির পরিমাণ নির্দিষ্ট । শক্তির কোন ক্ষয় নেই এটি সৃষ্টি বা ধ্বংস করাও যায় না । শক্তি কেবল এক রূপ থেকে অন্য রূপে রূপান্তরিত হয় ।
প্রকৃতি (Nature/Primordial Energy) – এই শব্দটির মূলে আছে শক্তি বা Energy , যা পদার্থের (Matter) ভর হিসেবে প্রকাশ পায়। আধুনিক পদার্থবিদ্যায় বলা হয়, “All matter is a manifestation of energy”। শক্তিই এই মহাবিশ্বের মূল উপাদান ।
২. E = mc² (আইনস্টাইনের ভর-শক্তি সমীকরণ):
এর মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি , পদার্থ (Mass) আসলে শক্তির এক রূপ । এর মানে প্রতিটি বস্তুর ভেতর বিশাল পরিমাণ শক্তি নিহিত আছে, যা সৃষ্টি বা ধ্বংস হয় না , কেবল রূপান্তরিত (transformed) হয় ।
২. শক্তির নিত্যতা সূত্র (Law of Conservation of Energy):
শক্তি না সৃষ্টি হয়, না ধ্বংস হয় — এটি একটি চিরন্তন, অপরিবর্তনীয় সত্তা । এই সূত্র বেদের এই মন্ত্রের সাথে মিলে যায় ।
৩. Dynamic Equilibrium (ত্রিগুণের সাম্যাবস্থা):
সাংখ্য দর্শন অনুযায়ী প্রকৃতির মধ্যে সত্ত্ব, রজ, তম — এই তিনটি গুণ একসাথে সাম্যাবস্থায় থাকলে প্রকৃতি সুপ্ত থাকে । কিন্তু যখন এই গুণগুলোর মধ্যে ভারসাম্য নষ্ট হয়, তখন প্রকৃতি কার্যকরী হয়ে ওঠে — এই নীতিটি আজকের বিজ্ঞানেও unstable equilibrium এবং symmetry breaking ধারণার সাথে মিলে যায় , যেখানে ভারসাম্য ভাঙলে সৃষ্টির সূচনা হয় ।
৪. নিউটনের প্রথম সূত্র ও জড়তা (Inertia):
মন্ত্রে বলা হয়েছে , প্রকৃতি নিজে জড় (inert), কাজ করতে পারে না — কেবল চৈতন্য (Consciousness) বা Purusha এর সংস্পর্শে এলে এটি কর্মক্ষম হয় । এই ধারণা Newton's First Law of Motion এর সাথে পুরোপুরি মিলে যায়:
“An object at rest stays at rest unless acted upon by an external force.”
অর্থাৎ , বল প্রয়োগ না হলে বস্তু নিজে কিছুই করে না । এটি প্রকৃতির জড় অবস্থার বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা ।
পদার্থ যে অবস্থায় আছে সেই অবস্থায় থাকতে চাওয়ার প্রবণতাই হলো মূলত জড়তা । অর্থাৎ বিজ্ঞান এক্ষেত্রে ভর বা শক্তিকে জড় বলছে । মূলত কোনরূপ চেতনা শক্তি না থাকার কারণেই পদার্থের কর্ম করার ক্ষমতা নেই ।

অজারে পিশঙ্গিলা শ্বাবিত্কুরুপিশঙ্গিলা ।শশঽআস্কন্দমর্ষত্যহিঃ পন্থাং বি সর্পতি ॥
[যজুর্বেদ ২৩।৫৬]
অনুবাদ— হে মনুষ্য! জন্মরহিত প্রকৃতি [কল্পান্তরে] কার্যকে করণরূপে লীন করে (নিজের রূপকে সম্বরণ করে) এবং [কল্পারম্ভে] সংসাররূপে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়ে কার্যকে প্রকট করে (রূপকে প্রকট করে) । জ্ঞানী পুরুষ প্রকৃতির বন্ধনকে অতিক্রম করে কিন্তু কুটিল স্বভাবের পুরুষ জন্মমৃত্যুর পথে নানাভাবে বিচরণ করে ।
অজারে= "অজ" (অ-জ = যার জন্ম নেই) , অর্থাৎ অজন্মা শক্তি/প্রকৃতি , যা eternal energy বা primordial matter-এর প্রতীক ।
পিশঙ্গিলা = গৌরবর্ণ/পিঙ্গলাভা , যা তিনটি গুণের (সত্ত্ব, রজ, তম) মিশ্রণে তৈরি এক প্রতীকী রঙ ।
Nature composed of three fundamental tendencies or modes.
শ্বাবিত্কুরু = "শ্ব" (করণরূপে) + "অবিত্" (আবৃত করা) + "কুরু" (তৎসম ধাতু "কৃ" অর্থাৎ করা) ।
প্রকৃতি করণ বা সম্ভাব্য রূপে নিজেকে গোপন করে বা লীন করে । Potential Energy, Quantum Vacuum, বা latent possibility
শশআস্কন্দম= "শশ" (বৃদ্ধি) , "আস্কন্দ" (বিকাশ/বিস্ফোরণ) প্রকৃতির বিস্ফোরণ বা প্রসারণশীল রূপ ।
অহিঃ সর্প ; সর্পের মতো চলাফেরা , প্রতীকীভাবে কুটিল বা গতিশীল পাথ।
পন্থাং বি সর্পতি= সংবেদশূন্য পথে গমন ।
বিশ্ব এবং তার যাবতীয় জড়বস্তু এবং প্রাণীর , মানুষের বুদ্ধি , মন , চিত্ত , অহংকার এবং ইন্দ্রিয়াদির তথা আত্মা ভিন্ন মানুষের সমস্ত অবশিষ্ট সত্তার , বিশ্বের যাবতীয় পরিবর্তন এবং বিবর্তনের মূল অনিঃশেষ কারণই প্রকৃতি । জগতে সবকিছুই রিসাইকেল হয় । মহাজগতেও তাই । আমাদের বৈদিক শাস্ত্রসমূহও এই কথাই বলছে - ❝পরিবর্তনই সংসারের নিয়ম❞ । Change is the rule of the world." বিজ্ঞানও তাই বলে- "শক্তির সৃষ্টি নেই ও ধ্বংস নেই" একরূপ থেকে অন্যরূপে রূপান্তরিত হয় মাত্র "। ❝প্রকৃতিং পুরুষষ্ণৈব বিদ্ধ্যনাদী উভাবপি ॥❞ গীতা (১৩।২০) প্রকৃতি ও পুরুষ [পরমাত্মা/জীবাত্মা] উভয়কেই অনাদি বলে জেনো । Matter can neither be created nor it can be destroyed না প্রকৃতিকে জন্ম দেওয়া যেতে পারে না একে নষ্ট করা যেতে পারে ; শুধু রূপান্তরিত হয় । প্রকৃতির শুধু পরিবর্তন হয় এবং পরিবর্তনের কারণেই জগতে বিভিন্নতা দেখা যায় । ❝সূর্য়াচন্দ্রমসৌ ধাতা যথাপূর্বমকল্পয়ৎ ❞(ঋ০১০।১৯০।৩) প্রবাহ দ্বারা অনাদি এ সৃষ্টির রচনা প্রত্যেক কল্পেই পূর্ববৎ সংঘটিত হয় । এই ক্রম অনাদিকাল থেকে অনন্তকাল ধরে চলতেই থাকে । প্রকৃতি মূলত অনাদি । প্রকৃতি জড়াত্মক , জড়শক্তির আধার , অচেতন এবং ত্রিগুণাত্মিকা । সত্ত্ব , রজঃ এবং তমঃ, এই ত্রিবিধ গুণের সমষ্টি এবং শক্তির মূল সাম্যাবস্থার নাম প্রকৃতি । সৃষ্টির অনন্ত সম্ভাবনার অবিকৃত এবং পূর্ণ সাম্য-প্রকৃতিই প্রকৃতি ।

বেদস্তত্পশ্যন্নিহিতং গুহা সদ্যত্র বিশ্বং ভবত্যেকনীডম্।তস্মিন্নিদং সং চ বি চৈতি সর্বং সঽ ওতঃ প্রোতশ্চ বিভূঃ প্রজাসু ॥
[যজুর্বেদ ৩২।৮]
অনুবাদ— যার মধ্যে সমস্ত জগত আশ্রয় গ্রহণ করেছে সেই বুদ্ধিগম্য চেতন ব্রহ্মকে মেধাবী পুরুষ জ্ঞান দৃষ্টিতে দর্শন করেন । সর্বজগৎ প্রলয়কালে তাতে সূক্ষ্মরূপে মিলিত হয় এবং উৎপত্তিকালে পৃথক , স্থূলরূপে পরিণত হয় । সেই সত্যস্বরূপ পরমাত্মা জীব ও প্রকৃতিতে ওতপ্রোতভাবে ব্যাপক রয়েছেন ।
১. "নিহিতং গুহা"- Consciousness in the Quantum Field:
এই “গুহা” হল subatomic reality , অর্থাৎ quantum vacuum বা zero-point field, যেখানে সমস্ত কিছু সম্ভাব্য রূপে নিহিত থাকে । আধুনিক কোয়ান্টাম থিওরি মতে, সমস্ত পদার্থ Quantum Field থেকে উৎসারিত — যেখানে কণাগুলি সুপ্তভাবে 'নিহিত' থাকে যতক্ষণ না তারা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে 'বাস্তব' হয় ।
২. “একনীডম্”- Singularity & Cosmic Substratum:
মন্ত্রে বলা “একনীডম্” অর্থাৎ সবকিছুর এক আশ্রয় — আধুনিক বিজ্ঞান মতে তা হলো Gravitational Singularity বা Quantum Singularity অর্থাৎ Big Bang-এর পূর্বে সমস্ত মহাবিশ্ব একটি একক বিন্দুতে সন্নিবিষ্ট ছিল — যাকে বলা হয় Initial Singularity ।
সৃষ্টির সময়ে তা বিস্ফোরিত হয়ে প্রকাশিত হয় (বি চৈতি ), এবং প্রলয়ের সময়ে আবার ঐ বিন্দুতে বিলীন হয় (সং চ ইতি )।
৩. “সং চ বি চৈতি” — Conservation & Transformation:
এই অংশটি “Energy Conservation”-এর সূক্ষ্ম দার্শনিক রূপ —
সং = পুনঃ মিলন, প্রলয়
বি = বিচ্ছিন্নতা, সৃষ্টি
যেমন Matter-Energy বিভিন্ন রূপে প্রকাশ পায় ও মিলিত হয় —
একই শক্তি কখনো আলো , কখনো পদার্থ , কখনো গতি বা মাধ্যাকর্ষণ —
E = mc² দিয়ে বোঝায় শক্তি ও ভরের ঐক্য
৪. “ওতঃ প্রোতঃ বিভূঃ” — Universal Immanence:
পরমাত্মা (বা Consciousness) শুধু বাইরে নয় , সকল সত্তার ভিতরে জালের মতো বিস্তৃত। এটি বর্তমান কসমোলজির Holographic Principle-এর মতো —
প্রত্যেক অংশেই সম্পূর্ণ তথ্য নিহিত (like in DNA or a hologram) । এছাড়াও এটি Panpsychism-এর ধারণার সঙ্গে মিল রাখে , যা বলে সচেতনতা বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে।
আমরা খাদ্য হিসেবে যা খাচ্ছি , তা আবার বর্জ্য পদার্থ হিসেবে মাটিতে মিশে যাচ্ছে , আবার পরে নতুন খাদ্য রূপে আমাদের পাতে ফিরে আসছে । এই জীবজগতের সবাই , একে অপরের ওপর নির্ভরশীল । সবাইকে নিয়েই সবার চলতে হয় । এখানে খাদক আবা আরেক জনের খাদ্যে পরিণত হয় । প্রকৃতির ইকোসিস্টেমে এই রূপান্তর অনবরত চলছে । সৃষ্টিকে রক্ষা করার এর থেকে ভালো উপায় হয়তো আর ছিল না । সকলকে বিভিন্ন রূপে বারে বারে এই জগৎকে উপলব্ধি করার এ এক অভূতপূর্ব উপায় । মানুষ আজ তার নিজ বুদ্ধির গুণে অন্যের খাদ্য তালিকা থেকে নিজেকে বাদ রাখতে পারলেও পঞ্চভূতে বিলীন হওয়া তো আর রোধ করতে পারে নি । ❝ঈশা বাস্যমিদং সর্বং যত্কিঞ্চ জগত্যাং জগত্ ॥❞ [যজুর্বেদ ৪০।১] প্রকৃতি থেকে পৃথিবী পর্যন্ত সব পরিবর্তনশীল সৃষ্টিতে চরপ্রাণী মাত্রই পরমাত্মা দ্বারা আচ্ছাদিত । রিসাইকেলে মানুষকেও যেতে হয় । এই নিয়মের বাইরে আমরা কেউ নই । অথচ আমাদের এত বুদ্ধি থাকা সত্ত্বেও রিসাইকেলের কথাটা বেমালুম ভুলে যেতে বসেছি । নির্দ্বিধায় অপরকে ঠকিয়ে যাচ্ছি । অন্যায় করে যাচ্ছি । নিজের সাময়িক স্বার্থসিদ্ধির জন্য অপরকে ভুলপথে চালনা করছি এবং তা প্রতিনিয়ত করছি । কাউকে ঠকালে যে আদতে নিজেকেই ঠকানো হলো । সবকিছুই যে বুমেরাং হবে! এবং হচ্ছেও তো তাই । এ আমরা কেমন বুদ্ধিজীবী প্রাণী হলাম ? মাটিতে একটি গর্ত ভরাট করতে গেলে , আর একটা গর্ত খুঁড়তে হয় , এবার নতুন খোঁড়া গর্ত ভরাট করতে হলে , আর একটা গর্ত খুঁড়তে হবে , এইভাবেই তো চলতে হবে । ❝সমূলাঃ সোম্যেমাঃ সর্বাঃ প্রজা সদায়তনাঃ সৎপ্রতিষ্ঠাঃ॥❞(ছান্দো০ উ০ ৬।৮।৪) অর্থাৎ সত্যস্বরূপ প্রকৃতি , জগতের মূলাধার এবং স্থিতির কারণ । এখানে মূল-প্রকৃতিকে সৎ বলা হয়েছে , যার কখনো অভাব হয় না । এই সমস্ত সংসার প্রকৃতির বিকার হওয়ার কারণে প্রলয়ের পর প্রকৃতিতেই লীন হয়ে যায় ।
সর্বশক্তিমান ঈশ্বর সেই অব্যাক্ত প্রকৃতি হতে জগৎ কে বার-বার রচনা করেন । যখন জগৎ ধ্বংস হয়ে যায় তখন প্রকৃতি পুনরায় এমন এক অবস্থায় চলে যায় যখন সেখানে অন্য কোনো কিছুর অস্তিত্ব থাকেনা । সেই প্রকৃতি হতেই ঈশ্বর নিজ সামর্থ্য দ্বারা জগৎকে পুনরায় রচনা করে থাকেন । স্বত্তঃ, রজঃ এবং তমঃ গুণের সমন্নয় দ্বারা সমস্তকিছুই আচ্ছাদিত হয়ে থাকে আর এই মেলবন্ধন কে প্রকৃতির নিয়ম বলা হয়ে থাকে ।
❝ইন্দ্রো মায়াভিঃ পুরুরূপ ঈয়তে❞ (ঋগ্বেদ০৬।৪৭।১৮)
সরলার্থঃ সর্বপ্রকাশক জগদ্বীশ্বর , প্রকৃতি দিয়ে জগৎ প্রকাশ(সৃষ্টি) করেন , যা(প্রকৃতি) জগতের উপাদান কারণ (Material Cause) । প্রকৃতি নিজে থেকেই কিছু করতে পারার সামর্থ্য রাখে না , ঈশ্বরের অনুপ্রেরণায় প্রকৃতি হতে সমস্তকিছু প্রকটিত হয় এবং পরবর্তীতে প্রকৃতির নিয়মেই এই জগৎ চালিত হয় , প্রকৃতির নিয়মেই এই জগৎ সৃষ্টি এবং ধ্বংস হয় । মহাবিশ্বে এই অবিচ্ছিন্ন পরিবর্তন প্রকৃতির চিরন্তন আইন ।
ধরুন মোবাইলের উপাদানগুলো জড় । জড় বস্তুগুলো নিজে নিজে কখনও একত্র হয়ে মোবাইল তৈরি করতে পারে না । এমন একজন লাগবে , যিনি উপাদান বস্তুসমূহের সমন্বয় করে মোবাইল তৈরি করবেন । অনুরূপ প্রকৃতিও জড় , আর জড় হওয়ার কারণে সে নিজে নিজে পরিবর্তিত হতে পারে না । একজন সচেতন সত্তা লাগবেই , যিনি প্রকৃতিকে পরিবর্তন বা সঞ্চালন করবেন । সেই সত্তাই ঈশ্বর । ধরুন কোনো মাটির কলস তৈরির জন্য মুখ্যত দুইটি কারণ বিদ্যমান থাকা আবশ্যক । প্রথমত যেই মৃৎশিল্পী কলসটি তৈরি করবেন , দ্বিতীয়ত যেই উপাদান বা মাটি থেকে কলসটি তৈরি হবে । এখানে মাটি হলো কলসের উপাদান কারণ । অর্থাৎ কলসটি মূলত মাটিই , মাটি ছাড়া কিছুই না । কিন্তু আমি তাকে কলস হিসেবে দেখছি । যখন কলসটি তৈরি করা হয়নি তখনও মাটি ছিল কিন্তু কলসের অস্তিত্ব ছিলনা । ঠিক তেমনি জগতের উপাদান কারণ হলো প্রকৃতি । অর্থাৎ এই জগত মূলত প্রকৃতিই , কিন্তু আমি তাকে স্থূল জগতরূপে দেখছি । যখন এই জগত ছিল না তখনও প্রকৃতি ছিল আর যখন এই জগত ধ্বংস হয়ে যাবে তখনও প্রকৃতি থাকবে ।

ত্রয়ঃ কেশিনঃ ঋতুথা বি চক্ষতে সংবৎসরে বপত এক এষাম্ । বিশ্বমেকো অভি চষ্টে শচীভির্ধাজিরেকস্য দদৃশে ন রূপম্॥
[ঋ০১।১৬৪।৪৪]
পদার্থঃ(ত্রয়ঃ) তিন (কেশিনঃ) প্রকাশময় পদার্থ [কেশি কাশানাব্দা প্রকাশানাব্দা ; নিরুক্ত ১২।২৬ ] তুথা) নিয়মানুসারে (বি চক্ষতে) বিবিধ কার্য করে থাকে (এষাম্) এদের মধ্যে থেকে (একঃ) একটি (সংবৎসরে) বাসযোগ্য সংসারে , অথবা সৃষ্টিকালে (বপতে) বীজ বপন করে । (একঃ) একটি (শচীভিঃ) শক্তি , কর্ম ও বুদ্ধি দ্বারা (বিশ্বম্) বিশ্বকে (অভি চষ্টে) দুই দিক থেকে দেখেন । (একস্য)একটির (ধাজিঃ) বেগ তো (দদৃশে) দেখা যায় , কিন্তু (ন রূপম্) রূপ দেখা যায় না ।
কেশিনঃ (প্রকাশময় পদার্থ)
১."কেশিনঃ" (বা প্রকাশময় পদার্থ) এখানে Visible Matter বা Observable Particles হিসেবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। এটি সেই পদার্থ বোঝায় যা আমাদের চোখে দৃশ্যমান হয়, যেমন আলো বা ফোটন , যা কুয়ান্টাম মেকানিক্সের পর্যায়ে বিভিন্ন শক্তির আকারে প্রকাশ পায় ।
২. ঋতুথাঃ (নিয়মানুসারে)
"ঋতুথা" বা নিয়মাবলী বোঝায় Natural Laws বা Physical Laws , যেমন সৃষ্টির চক্র বা প্রকৃতির নির্দিষ্ট নিয়মগুলির মধ্যে যা পৃথিবী ও মহাবিশ্বের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে । যেমন , গতি , শক্তির সংরক্ষণ , বা থার্মোডাইনামিক্সের দ্বিতীয় সূত্র যা বলে "অবশ্যই পরিবর্তন ঘটবে", অর্থাৎ পৃথিবীর এবং মহাবিশ্বের নির্দিষ্ট নিয়মের মধ্যে সকল ক্রিয়া চলে ।
৩. বি চক্ষতেঃ (বিবিধ কার্য করে থাকে)
"বি চক্ষতে" মানে হল যে এই পদার্থ বা শক্তি আমাদের চোখের মাধ্যমে Perceptible Phenomena সৃষ্টি করে , অর্থাৎ যেগুলি আমরা অনুভব করতে পারি । উদাহরণস্বরূপ, আলো (ফোটন) বা তরঙ্গ (যেমন শব্দ বা বৈদ্যুতিন তরঙ্গ) আমাদের অনুভবে আসে ।
৪. এষাম্ঃ (এদের মধ্যে থেকে)
"এষাম্" মানে এই সমস্ত পদার্থ বা শক্তির মধ্যে থেকে একটি নির্দিষ্ট শক্তির বা শক্তির রূপকে তুলে ধরা হয়েছে। এটি Specific Energy States বা Energy Forms হতে পারে, যা নির্দিষ্ট প্রাকৃতিক অবস্থায় থাকে এবং একে অপরের সাথে সম্পর্কিত থাকে ।
৫. একঃ (একটি)
এখানে One বা A Singular Entity বোঝানো হচ্ছে, যা সমস্ত শক্তির মধ্যে একক , নির্দিষ্ট শক্তি বা শক্তির ক্ষেত্রকে নির্দেশ করে ।
৬. সংবৎসরেঃ (বাসযোগ্য সংসারে)
"সংবৎসরে" দ্বারা বোঝানো হচ্ছে একটি Time Cycle বা Cosmic Time Period, যেমন পৃথিবীর বার্ষিক পরিবর্তন বা মহাজাগতিক বছর । এটি Temporal Cycles যেমন , পৃথিবীর রোটেশন বা পৃথিবী-সূর্য সম্পর্কের প্রভাব যা জীবের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করে ।
৭. বপতেঃ (বীজ বপন করে)
"বপতে" মানে হল Seed Sowing, এটি জীবনের উৎপত্তি বা বিবর্তনের প্রক্রিয়াকে নির্দেশ করতে পারে । এখানে সৃষ্টির মৌলিক প্রক্রিয়া বোঝানো হচ্ছে , যেমন কোষের বিভাজন বা প্রাকৃতিক নির্বাচন (Natural Selection) যেখানে নতুন জীবন বা প্রজাতি সৃষ্টি হয় ।
৮. শচীভিঃ (শক্তি, কর্ম, বুদ্ধি)
"শচীভিঃ" বা শক্তি, কর্ম, এবং বুদ্ধি বাস্তবায়ন হচ্ছে Energy, Action, and Intelligence, যা মহাবিশ্বের ক্রিয়া, শক্তির প্রবাহ, এবং তথ্য বা বুদ্ধির কাজে ব্যবহৃত হয়। এটি কোয়ান্টাম মেকানিক্সের Quantum Field Theory বা Cognitive Sciences-এর সাথে সম্পর্কিত । যেখানে শক্তি ও বুদ্ধির দ্বারা মহাবিশ্বের গতি নিয়ন্ত্রিত হয় ।
৯. বিশ্বম্ঃ (বিশ্ব)
"বিশ্বম্" বা Universe , এখানে মহাবিশ্বের সামগ্রিকতা এবং তার ব্যাপকতার কথা বলা হচ্ছে। এটি মহাজাগতিক সিস্টেম বা Cosmic System যা ফিজিক্যাল এবং কসমোলজিক্যাল দৃষ্টিকোণ থেকে পৃথিবী ও মহাবিশ্বের গঠন এবং গতিকে প্রভাবিত করে।
১০. অভি চষ্টেঃ (দুই দিক থেকে দেখেন)
"অভি চষ্টে" বা Dual Perspective এখানে মহাবিশ্বের দৃষ্টিকোণকে দুটি বা বেশী দিক থেকে বিশ্লেষণ করার দিকে ইঙ্গিত করছে । এটি মহাবিশ্বের কার্যক্রম বা কসমোলজিক্যাল প্রক্রিয়াকে দুই বা একাধিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখানোর একটি প্রচেষ্টা । কোয়ান্টাম তত্ত্বের মতে, পর্যবেক্ষক এবং পর্যবেক্ষিত বস্তু একে অপরের সাথে সম্পর্কিত, এবং একাধিক পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে পৃথিবী বা মহাবিশ্বের কার্যক্রম ব্যাখ্যা করা যায় ।
১১. ধাজিঃ (বেগ)
"ধাজিঃ" বা Velocity এখানে মহাবিশ্বের গতির ব্যাপকতা বা Speed of Expansion কে নির্দেশ করছে । এটি মহাবিশ্বের বিস্তার বা Cosmic Expansion হতে পারে , যেমন Hubble’s Law যা বলে যে মহাবিশ্বের সমস্ত গ্যালাক্সি একে অপর থেকে সরে যাচ্ছে , অর্থাৎ মহাবিশ্ব বিস্তৃত হচ্ছে ।
১২. দদৃশেঃ (দেখা যায়)
"দদৃশে" বা Perceptible বলতে আমরা যা দেখতে পাই , সেই বিষয়টি বোঝানো হচ্ছে । এটা কোয়ান্টাম মেকানিক্সের Wave-Particle Duality বা অন্যান্য পারস্পরিক সম্পর্কের প্রতিফলন হতে পারে , যেখানে আমাদের চোখের ক্ষমতা সীমিত , তবে তার প্রভাব বা প্রতিফলন আমরা দেখেতে পারি ।
১২. ন রূপম্ঃ (রূপ দেখা যায় না)
"ন রূপম্" বা Invisible Nature এখানে রূপের অদৃশ্যতার ইঙ্গিত দেয় সূক্ষ্ম প্রকৃতি , যা কোয়ান্টাম তত্ত্বে বা রিলেটিভিস্টিক । এই তত্ত্ব অনুযায়ী , অনেক শক্তি ও পদার্থের প্রকৃতি বা রূপ নির্দিষ্টভাবে দেখা সম্ভব নয় , যেমন Dark Matter বা Dark Energy যা মহাবিশ্বের মোট বস্তুর এক বিরাট অংশ গঠন করে , কিন্তু আমাদের দৃষ্টিতে তা অদৃশ্য থাকে।


যো বিদ্যাত্সূত্রং বিততং যস্মিন্নোতাঃ প্রজা ইমাঃ। সূত্রং সূত্রস্য যো বিদ্যাদ্স বিদ্যাদ্ব্রাহ্মণং মহত্॥
[অথর্ববেদ ১০।৮।৩৭]
অনুবাদ— যে ব্যক্তি সত্যই মহৎ ব্রহ্ম , পরম ব্রহ্মকে এবং তাঁর সৃষ্টিকে জানেন , যিনি চতুর্দিকে বিস্তৃত অস্তিত্ত্বের উর্ণ , যার মধ্যে মনুষ্যত্বসহ এই সমস্ত সৃষ্টির রূপ বয়নকৃত রয়েছে এবং সমস্ত উর্ণের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত এক অপরিহার্য ও সার্বজনীন তন্তুকে জানেন ।

অজামেকাং লোহিতশুক্লকৃষ্ণাং বহ্বীঃ প্রজাঃ সৃজমানাং স্বরূপাঃ । অজো হ্যেকো জুষমাণোহনুশেতে জহাত্যেনাং ভুক্তভোগামজোহন্যঃ ॥
[ শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ ৪।৫ ]
পদার্থঃ (একম্) এক (অজাম্) অনাদি (লোহিতশুক্ল কৃষ্ণতাম্) সত্ত্ব , রজ , তমোগুণাত্মক প্রকৃতি (সরূপাঃ) পরিণামি হওয়ার কারণে (বহ্বীঃ) বহু (প্রজাঃ) প্রজা , কার্যরূপ সৃষ্টি (সৃজমানাম্) উৎপন্নকারিণী (এক হি) এক (অজঃ) অনাদি জীবাত্মা (জুষমাণঃ) ভোগ করে (অনুশেতে) তাতে লিপ্ত হয় কিন্তু (অন্য) অন্য এক (অজঃ) অনাদি পরমাত্মা (এনাম্) এই (ভুক্তভোগাম্) জীব দ্বারা ভুক্ত প্রকৃতিকে (জহাতি) ত্যাগ করেন অর্থাৎ তিনি এই প্রকৃতিতে না তো লিপ্ত হন এবং না ভোগ করেন ।
প্রকৃতির কার্য ঈশ্বর দ্বারা সম্পাদিত ; তিনিই কর্তা । জগৎ এবং বিষয় নিষ্ঠ অন্তঃকরণ, দেহ-মন নিয়ে আমাদের অবভাষিক অস্তিত্ব সবই প্রকৃতির পরিণাম । বিবর্তনের ফলে এইরকম অনেক জগতের এবং জীবের সৃষ্টি হয়েছে । সে-সব লুপ্ত হয়ে আবার নতুন সৃষ্টি হয়েছে । প্রকৃতি অফুরন্ত শক্তির উৎসর্গ (বিবর্তন) এবং প্রলয় পালাক্রমে অনুভূত হয় । প্রকৃতির দুই অবস্থা , সাম্য এবং বৈষম্য ; প্রলয়ে সাম্য এবং সৃষ্টিতে বৈষম্য । প্রকৃতির পরিবর্তন এবং পরিণামে কোন ছেদ নেই । প্রলয়কালে সত্ত্বগুণ সত্ত্বে, রজোগুণ রজে এবং তমোগুণ তমোরূপে পরিবর্তনশীল । সৃষ্টিকালে এই তিনটি গুণ কার্যোন্মুখভাবে পরিবর্তনশীল । তখন গুণের বৈষম্য অথবা তারতম্যবশত সৃষ্টির বৈচিত্র্য সম্ভব হয় । গুণসংমিশ্রণের অসংখ্য সংখ্যায় বা অনুপাতে বৈষম্য ঘটে এবং প্রকৃতির বিচিত্র পরিণাম হয় । যে ক্রমানুসারে সৃষ্টি হয় , তার বিপরীত ক্রমে লয় হয় ।
অতঃ প্রকৃতি নিত্য পরিবর্তনশীল এবং অনাদি ।

১.A Brief History of Time" by Stephen Hawking
২. "The Grand Design" by Stephen Hawking and Leonard Mlodinow
৩.. "Cosmology: The Science of the Universe" by Edward Harrison
৪.. "Quantum Physics and the Nature of Reality" by Steven Weinberg
৫.. "The Selfish Gene" by Richard Dawkins
৬."The Emperor of All Maladies: A Biography of Cancer" by Siddhartha Mukherjee
৭.The Structure of Scientific Revolutions" by Thomas S. Kuhn
৮.The Fabric of the Cosmos" by Brian Greene
৯. "The Dancing Wu Li Masters" by Gary Zukav
১০. ঋগ্বেদভাষ্য মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী , পণ্ডিত জয়দেব শর্মা বিদ্যালঙ্কার মীমাংসাতীর্থ , পণ্ডিত হরিশরণ সিদ্ধান্তালঙ্কার , স্বামী ব্রহ্মমুনি পরিব্রাজক বিদ্যামার্ত , সায়ণাচার্য ।
১১. যজুর্বেদ ভাষ্যকার মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী , স্বামী ধর্মদেব বিদ্যামার্তণ্ড , পণ্ডিত হরিশরণ সিদ্ধান্তালঙ্কার
১২. অথর্ববেদ ভাষ্যকার দেবী চাঁদ , ক্ষেমকরণ দাস ত্রিবেদী ।
১৩. উপনিষদ স্বাধ্যায় প্রকাশনী ।
১৪.গীতা শুদ্ধধ্বনি ।
১৫. সাংখ্য দর্শন , পণ্ডিত গুরুদত্ত বিদ্যার্থী
বাংলাদেশ অগ্নিবীর
সত্য প্রকাশে নির্ভীক সৈনিক ।