দৈনিক বেদবাণী


এই সমগ্র সংসার নিরোগ এবং শুভচিন্তা যুক্ত হোক । যজুর্বেদ ১৬.৪                    সূর্য-এর আলোয় স্বয়ং আলোহীন চাঁদ আলোকিত হয় । ঋগ্বেদ ৫.৪০.৫                    প্রশংসনীয় সংস্কৃতি, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও মাতৃভূমি— এই ত্রয়ী সুখ-সমৃদ্ধি প্রদান করে। ঋগ্বেদ ১.১৩.৯                    উত্তম জীবন লাভের জন্য আমাদের জ্ঞানীদের সাহচর্যে চলা উচিৎ। ঋগ্বেদ ১.১২.১৬                    যে ব্যক্তি সম্পদ বা সুখ বা জ্ঞান নিঃস্বার্থভাবে দান করে, সে-ই প্রকৃত মিত্র। ঋগ্বেদ ২.৩০.৭                    মানুষ কর্ম দ্বারাই জগতে মহত্ত্ব ও প্রসিদ্ধি লাভ করে। ঋগ্বেদ ৩.৩৬.১                    হে পতি! তোমার স্ত্রীই গৃহ, স্ত্রীই সন্তানের আশ্রয়। ঋগ্বেদ ৩.৫৩.৪                    পরমাত্মার নিয়ম বিনষ্ট হয় না; তা অটুট, অচল ও অপরিবর্তনীয়। ঋগ্বেদ ৩.৫৪.১৮                    এই ধর্মের মার্গই সনাতন, এই পথে চলেই মানবগণ উন্নতি লাভ করে। ঋগ্বেদ ৪.১৮.১                    পরমাত্মার নিকট কোনো মানুষই বড় বা ছোট নয়। সকল মানুষই সমান এবং পরস্পরের ভ্রাতৃস্বরূপ। ঋগ্বেদ ৫.৬০.৫                    যে ব্যক্তি অকারণে অন্যের নিন্দা করে, সে নিজেও নিন্দার পাত্র হয়। ঋগ্বেদ ৫.২.৬                    নিশ্চিতরূপে এই চতুর্বেদ কল্যাণপ্রদায়িনী এবং মানবকে জ্ঞান প্রদান করে ধারণকারিণী। ঋগ্বেদ ৫.৪৭.৪                    বীর মানবের জন্য পর্বতও সুগম হয়ে যায়। ঋগ্বেদ ৬.২৪.৮                    আমরা অন্যের সঞ্চিত পাপের কর্মফল ভোগ করি না। ঋগ্বেদ ৬.৫১.৭                    হে মিত্রগণ! ওঠো— উদ্যমী হও, সাবধান হও এবং এই সংসাররূপী নদীকে অতিক্রম করো। ঋগ্বেদ ১০.৫৩.৮







বেদে সুরা ও তার প্রকৃত অর্থ এবং অপপ্রচারের জবাব

অমৃতস্য পুত্রা
2


আমাদের জীবনাচরণের মূল আধার বেদ। কেননা সৃষ্ট জীবের বিধি বিধান তথা জীবনাচরণ নিশ্চিত করা ঈশ্বরেরই কর্তব্য। সৃষ্ট জীবের মধ্যে মনুষ্যের জ্ঞান প্রজ্ঞা অনান্য জীবের অপেক্ষা অধিক উৎকৃষ্ট। সেহেতু ঈশ্বর মনুষ্যের কর্তব্য কর্ম, তথা বিধি নিষেধাদিরূপ  জ্ঞানের সমষ্টি  বেদ এই মনুষ্যের জন্য প্রকট করেছেন।
এবং মানুষ এই জ্ঞানের ব্যবহার দ্বারা তাদের জীবনাচরণ আরো সুসঙ্খলরূপে সাজিয়েছে, ফলে সৃষ্টি হয়েছে অনেক শাস্ত্রের। এভাবে জগতের সমস্ত শাস্ত্র তথা মহান পুরুষ মুনি ঋষি আদি বেদরই জয়গান গেয়েছেন। এর কারণ এই যে বেদ ঈশ্বরীয় জ্ঞান হেতু এতে ভূল সিদ্ধান্ত থাকতে পারে না, যা মনুষ্যের জীবনে বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। সেই হেতু সকল শাস্ত্রের মূল শিরোমণি বেদ কে সবাই এক বাক্য স্বিকার করেছেন। কিন্তু কিছু চক্র আছে যারা বেদের এই জয়গান কে সহ্য করতে পারছে না। এজন্য তারা সর্বদাই বেদে ভূল ত্রুটি খুজতে অতি ব্যস্ত। তাদের লক্ষ্য এই যে বেদ যদি এমন কিছু দেখানো যায় যা আদর্শ মানবিক কর্ম নয় তাহলে মানুষকে বেদ থেকে দূরে আনা সম্ভব হবে।

বর্তমানে এ চক্র বেদে সুরা অর্থাৎ মদ্যপানের বর্ণনা খুজে পেয়েছেন।  তারা বেদের অসংখ্য জায়গা থেকে সূরা পানের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রমানের চেষ্টা করে যে বেদে নেশাগ্রস্থ হওয়ার পরামর্শ দেয়।  তাদের এই প্রচেষ্ঠার সহযোগী রূপে কাজ করে কিছু কদর্যরূপ বেদ ভাষ্য এবং প্রচলিত লৌকিক কিছু সংস্কৃত অভিধান।  তাদের আরোপকৃত দাবীর সত্যতা বিশ্লেষণের পূর্বে  আমাদের বেদাদি শাস্ত্র থেকে দেখে নেওয়া দরকার যে সূরা পান সমন্ধ্যে কি বলে? 

বেদে মানব জীবনের সপ্ত মর্যাদা অর্থাৎ সাতটি বিশেষ সীমার কথা বলেছেন, যার একটিও যদি কেউ প্রাপ্ত হয় তবে সে নিশ্চিতরূপে পাপী।  যথাঃ

সপ্ত মর্য্যাদা কবয়স্ততক্ষুস্তাসামমেকামিদভ্যংহুরো গাত্।
 (ঋগবেদ ১০।৫।৬)

অর্থাৎ মেধাবি আপ্ত ঋষিগণ সপ্ত মর্যাদা- জীবনের সীমা তৈরী করেছেন,  তাহার যেন লঙ্ঘন না করা হয় অর্থাৎ তাহাতে যেন কেউ না পৌছে।

 নিরুক্তে ৬।২৭  অনুসারে এ সীমার প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে - চুরি,  গুরুপত্নির সাথে সম্ভোগ, ব্রহ্মহত্যা, গর্ভপাত, সুরাপান, পাপকর্মের পুনরাবৃত্তি এবং  পাপ করেও মিথ্যা বলা - পাপ কে লুকানো। এর মধ্যে একটিতেও যে গমণ করে - নিজের মধ্যে আরোপিত করে,  সে পাপী হয়। 

অর্থাৎ বেদ মতে সাতটি পাপ কার্যের মধ্যে একটি হচ্ছে সূরা (মদ্য) পান।  অর্থাৎ বেদ কখনো মদ্য পানের বিধান দেয় নি।  মনুসংহিতাই সূরা(মদ্য) কে আরো ঘৃণার সাথে দেখা হয়েছে। যথাঃ 

সুরা বৈ মলমন্নানাং পাপ্মা চ মলমুচ্যতে।
তস্মাদ্বাহ্মণরাজন্যৌ বৈশ্যশ্চ ন সুরাং পিবেৎ ॥
(মনু ১১।৯৪)

-নিশ্চয়ই মদিরা অন্নের মল আর মলকে পাপ বলা হয়,  এই জন্য দ্বিজ তথা ব্রাহ্মণ ক্ষত্রিয় বৈশ্য মদ্য পান করবে না।


যক্ষরক্ষঃপিশাচান্নং মদ্যং মাংসং সুরাসবম্ ।
তদ্ ব্রাহ্মণেন নাত্তব্যং দেবানামশ্নতা হবিঃ ।। 
(মনু ১১।৯৬)

- মাদক দ্রব্য , মাংস,  মদিরা তথা দ্রাক্ষা রস যক্ষ,  রাক্ষস এবং পিশাচের ভক্ষ্য | দেবতার হবি ভক্ষণকারী ব্রাহ্মণের এসব কদাপি সেবনযোগ্য নয়।



অমেধ্যে বা পতেন্মত্তো বৈদিকং বাপ্যুদাহরেৎ ।
অকার্যমন্যৎ কুর্যাদ্বা ব্রাহ্মণো মদমোহিতঃ ।।
(মনু ১১।৯৭)

-মদ্য পান করে উৎপন্ন হওয়া ব্রাহ্মণ অপবিত্র স্থানে পতিত হয় অথবা বেদবাক্য অশুদ্ধ বলবে অথবা অন্য কোন নিষিদ্ধ কর্ম করবে। এই কারণে মদ্য পান করা উচিত নয়।

শুধু তাই নয়, সূরা পানকারীকে মনুসংহিতাই শাস্তির বিধান পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে। যথাঃ

সুরাং পীত্বা দ্বিজো মোহাদগ্নিবর্ণাং সুরাং পিবেৎ ।
তয়া স্বকায়ে নির্দগ্ধে মুচ্যতে কিল্বিষাত্ততঃ ।।
(মনু ১১।৯১)

 -দ্বিজ অজ্ঞান দ্বারা সুরা (মদ্য) পান করলে ,  অগ্নির সমান তপ্ত মদ্য (সুরা) পান করবে তাহাতে তাহার দেহ দগ্ধ হবার পর সেই মদ্যপানের পাপ নষ্ট হয়  অর্থাৎ দ্বিজ অজ্ঞান দ্বারা মদ্য পান করলে তাকার প্রায়াশ্চিত্তের জন্য অগ্নির সমান গরম মদ্য পান করবে, তখন তিনি সেই মদ্যপানরূপ পাপ থেকে মুক্ত হন।

কণান্ বা ভক্ষয়েদব্দং পিণ্যাকং বা সকৃন্নিশি ।
সুরাপানাপনুত্ত্যর্থং বালবাসা জটী ধ্বজী ।।
(মনু ১১।৯৩)

- অথবা চালকণা বা তিল রাত্রের একবার করে এক বর্ষ করে ভক্ষণ করবে,  সুরাপানের পানের পাপ দূর করার জন্য কম্বলের বস্ত্র পড়বে এবং জটাধারী থাকবে এবং সুরাপান পাত্র ধারণ করে থাকবে।।

অর্থাৎ বেদ মনুসংহিতায় সূরা কে পাপের সাথে তুলনা করা হয়েছে এবং পাপের প্রায়াশ্চিত্তরূপ বিভিন্ন শাস্তি প্রদানের বিধিও রয়েছে। কিন্তু এসব এড়িয়ে কুচক্রিরা বেদে সূরা পানের বর্ণনা খুজে পেয়েছেন।  এখানে একটা জিনিষ উল্লেখ করা প্রয়োজন যে বেদের বহু স্থলে "সুরা" শব্দের উল্লেখ রয়েছে কিন্তু সেটা বিশেষ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে, তা আমরা আরোপকৃত দাবী খন্ডনকালে প্রমাণ সহিত দেখাবো। 

আরোপ -১
Yajur Veda 21.60 …The Agnis, Sarasvatî, and Indra have drunk the Surâ and Soma draughts.
The Sanskrit word mentioned here is Sura which means liquor, following is the snapshot from Vaman Shivaram Apte’s Sanskrit-English lexicon,
[The Practical Sanskrit-English Dictionary, p.1132, by Vaman Shivaram Apte, Published by Shiralkar, Poona, 1890]

জবাবঃ
এখানে অত্যাধুনিক Sanskrit-English Dictionary দিয়ে মহাশয়টি যে জ্ঞানের বাহার দেখাতে চাচ্ছেন তাহার এই জ্ঞান নেই যে,  বেদ ব্যাখ্যার জন্য বেদাঙ্গ, ব্রাহ্মণ আদি গ্রন্থের প্রয়োজন পড়ে। এসব  Dictionary দিয়ে বেদ ব্যাখ্যা করলে অর্থের যে বারোটা বাজবে সেটাই স্বাভাবিক।

যেমন ঋগবেদের একটি মন্ত্রে বলা হয়েছে "উক্ষা দাধার পৃথিবীমূত দ্যাম"  এখানে যদি উক্ষা অর্থ বৃষ ধরা হয় তবে অর্থ দাঁড়ায় বৃষ পৃথিবীকে ধারণ করে আছে।  কিন্তু এটা সবচেয়ে বড় মূর্খামী কেননা পৃথিবীর পরিসর এতো বৃহৎ যে একটা বৃষের সে সামর্থ নেই। শুধু মাত্র সে সামর্থ একমাত্র পরমেশ্বরে রয়েছে, এজন্য যজুর্বেদ ১৩।৪ এ বলা হয়েছে "স দাধার পৃথিবীং দ্যামুতেমাম্"। অর্থাৎ মন্ত্রের প্রকরণ অনুসারে শব্দের যথার্থ অর্থ প্রয়োগেই মন্ত্রের সু অর্থ হয় অন্যথা নয়।
এই মন্ত্রে মহাশয়টি "সুরা" শব্দটির দিকে ইঙ্গিত করে প্রমাণের চেষ্টা করেছে বেদে মদ্য পানের আজ্ঞা রয়েছে, এবং এর সমর্থনে ডিকশনারীর অর্থ দেখাচ্ছেন।  কিন্তু আমরা আগেই বলেছি, বেদ ব্যাখ্যার জন্য বেদাঙ্গ, ব্রাহ্মণ আদি গ্রন্থের সহায়তা প্রয়োজন, নতুবা সু অর্থ সম্ভব নয়।

শতপথ ব্রাহ্মণ ১২।৮।১।৪ অনুসারে,  " যস্তে রসঃ সম্ভৃত্যহওষধীষ্বিত্যপাং  চ বাহপহঔষধীনাং চ রসো যৎ সুরা"  অর্থাৎ এই সুরা জল এবং ঔষধির রস, একে জল এবং ঔষধীর রস সমৃদ্ধ করে।




স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী তাহার ভাষ্যে এই বিষয়টি স্পষ্ট করে বলেছেন যে, এই সুরা পত্র নিষ্কর্ষ করে উৎপন্ন হয় সেই ঔষধি রস। ভাবার্থে বলেছেন -যে মনুষ্য ছাগাদি পশুদের দুগ্ধ প্রাণ অপান রক্ষার জন্য শুদ্ধ ও পক্ক পদার্থ ভোজন করে,  উত্তম রস পান করে বৃদ্ধি প্রাপ্ত করেন ,তিনি সুখ প্রাপ্ত হন। দেবীচাঁদ তাহার ভাষ্যে লিখেছেন - Drink the essence of the juices of medicinal herbs. অর্থাৎ মন্ত্রে যে সুরার উল্লেখ রয়েছে তা মদ্য জাতীয় পদার্থ হয় বরং ঔষধীর রস।



মন্ত্রের সত্যার্থ নিম্নরূপ-

ভাষ্যার্থঃ হে মনুষ্য ! যেভাবে আজ উত্তমভাবে সমীপে স্থির হওয়া এবং দিব্যগুণ সম্পন্ন পুরুষ বট বৃক্ষাদির সমান যে যে প্রাণ এবং অপানের জন্য দুঃখ বিনাশকারী ছাগ আদি পশু থেকে বাণীর জন্য মেষ থেকে[দুগ্ধ]  পরম ঐশ্বর্যের জন্য ষাঁড় থেকে [কৃষিক্ষেত্রে অন্নাদি সৃষ্টিতে ব্যবহার করে ] ভোগ করে- উপযোগ নেয়। সেই  সুন্দর সুঠাম পশুদের  প্রতি পক্বযোগ্য বস্তুর গ্রহণ করে। প্রথম উত্তম সংস্কৃত বিশেষ অন্ন দ্বারা বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়।  প্রাণ অপান প্রশংসিত বাণী ভালোভাবে রক্ষা কর্তা পরম ঐশ্বর্যবান রাজা যা পত্র নিষ্কর্ষ করে উৎপন্ন হয় সেই ঔষধি রসকে পান করে,  ওইরূপ আপনি হোন [ আপনিও প্রাপ্ত করুন।। 
(অনুবাদঃ মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী) 

আরোপ -০২ 
Yajur Veda 19.33 All essence of thine own in plants collected, all strength of Soma when poured out with Surâ—Therewith impel with joy the sacrifice, Sarasvatî, the Asvins, Indra, Agni.

জবাবঃ
মহাশয়টির দাবীর সহজ অর্থ এই যে, সুরার সাথে অভিষুত সোমের শক্তি সরস্বতী অশ্বিনী, ইন্দ্র এবং অগ্নি কে তুষ্টি প্রদান করে। প্রচলিত সমস্ত ভাষ্যকাররাই এরূপ অর্থ করেছে,  না তো তারা সুরা শব্দের স্পষ্ট কোন অর্থ করেছে, আর এই কারণেই ভ্রান্তির উদয় হয়েছে। স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী, তিনি শব্দের একদম পরিষ্কার অর্থ তুলে ধরেন, সেজন্য অপপ্রচারকারীর মহল সহজে অঙ্গুলি তোলার সাহস করে না। মন্ত্রে উল্লেখিত শব্দটি হচ্ছে "সুরয়া",  সুর শব্দটি ঐশ্বর্য্য অর্থে ব্যবহৃত হয়। দয়ানন্দ সরস্বতী এর অর্থে লিখেছেন - উত্তম দানশীল স্ত্রী।




গীতা ১১।২১-২২ শ্লোকানুসারে "সুর" এবং " অসুর" শব্দের দুটি ভেদ করা হয়েছে,  এখানে সুর শব্দটি দেবপক্ষে ব্যবহার হয়েছে।


নিরুক্ত ৭।১৫ অনুসারে দেবো দানদ বা,  অর্থাৎ দেবের লক্ষন হচ্ছে দান।



এভাবে "সুরয়া" শব্দে দয়ানন্দ জী এখানে দেবী অর্থাৎ উত্তম দানশীল স্ত্রী করেছেন। দেবীচাঁদ তার অনুবাদে charitabl lady করেছেন।




পূর্ণ মন্ত্রার্থ  দেখুন -

ভাষ্যার্থঃ  হে বিদ্বান ! যে আপনার  সোমলতাদি ঔষধিসকলে বিদ্যমান সিদ্ধ কৃত  অংশুমান আদি চব্বিশ প্রকারের ভেদ সম্পন্ন সোমের উত্তম দানশীল স্ত্রী উত্তম প্রকারের  ধারনকৃত বলকারক রস রয়েছে,  সেই  আনন্দদায়ক রস দ্বারা সর্ব সুখ প্রদানকারী যজমান উত্তম বিদ্যাযুক্ত স্ত্রী বিদ্যাব্যাপ্ত অধ্যাপক এবং উপদেশক ঐশ্বর্যযুক্ত সভা এবং সেনাগণের পতি অগ্নির ন্যায় শত্রুকে ভস্মকারী যোদ্ধাকে প্রসন্ন করুন। 
(অনুবাদঃ মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী) 

আরোপ- ০৩
Atharva Veda 4.34.6 Full lakes of butter with their banks of honey, flowing with wine, and milk and curds and water Abundant with their overflow of sweetness, these streams shall reach thee in the world of Svarga, whole lakes with lotus blossom shall approach thee.

জবাবঃ
মন্ত্রে অপ্রচারকারীর দাবী হচ্ছে বেদে - হ্রদে সুরার প্রবাহের কথা উল্লেখ রয়েছে।  অর্থাৎ এই পন্ডিতের মতে "সুরা" শব্দটি মানেই মদ্য পদার্থ। সাধারণ চিন্তাধারা নিয়ে লোকজনের ব্রেন ওয়াস করার চেষ্টা আর কি। বেদার্থ করার জন্য যে,   বেদাঙ্গের জ্ঞান থাকা প্রয়োজন তা বরাবরই বলে এসেছি। বৈদিক শব্দকোষ নিঘন্টু ১।১২ অনুসারে,  "সুরা ইতি উদকম নাম" অর্থাৎ জলের আরেক নাম সুরা।




পন্ডিত হরিশরণ সিদ্ধান্তলংকার তার ভাষ্যে বিষয়টির অতি সুন্দর উপস্থাপন করে বলেছেন - এই স্বর্গতুল্য গৃহে যেন, মধু, পবিত্র জল, দুগ্ধের হৃদ প্রবাহিত হয় অর্থাৎ গৃহে যেন এসবের স্বল্পতা নয় হয়, গৃহ যেন এসব দ্বারা পরিপূর্ণ থাকে। দেখুন -

ভাষ্যার্থঃ  ঘৃতের হ্রদ যার কিনারা শর্করা দ্বারা তৈরি তথা এমন হৃদ যাহা [সুর = Shine] চকমক জল পূর্ণ, ওই হ্রদ যাহা যাহা দুগ্ধ দ্বারা  পূর্ণ হয়ে আছে জল দ্বারা পূর্ণ এবং (দধ্না )দধি দ্বারা পূর্ণ হয়ে আছে  এই সব ধারণকৃত হৃদ তুমি সমীপতা দ্বারা প্রাপ্ত হও। অর্থাৎ ঘরে "ঘৃত, দধি, পবিত্রজল,দুধ,দধি"র স্বল্পতা না হোক ; এই সব ধারণকৃত হ্রদ স্বর্গতুল্য এই গৃহে মাধুর্যযুক্ত রসের সেচনকারী হও এবংচারিদিশাই পদ্মের সরোবর তোমার গৃহে উপস্থিত থাকুক ।
(অনুবাদঃ পন্ডিত হরিশরণ সিদ্ধান্তলংকার)

আরোপ -০৪
Yajur Veda 19.5 Soma with Wine, pressed; filtered for the banquet, cleanses priest, noble, brilliancy and vigour. God, with the Bright give Deities enjoyment: give food with flavour to the Sacrificer.

জবাবঃ
মন্ত্রানুসারে  সুরা সোমের সাথে যুক্ত হয়ে তেজ সামর্থ্য বীর্য বৃদ্ধি করে। এখানে একটি বিষয় একদম পরিষ্কার যে, এখানে  মদ্য জাতীয় কোন পদার্থের কথা বলা হচ্ছে না।  কেননা মদ্য পানে কখনো ইন্দ্রিয়ের সামর্থ্য অর্জন হয় না আর না তো বীর্য তথা প্রতিভার বিকাশ হয় বরং তার বিপরীত ক্রিয়া  দেখা যায়। অর্থাৎ সুরা এখানে সোম এবং জলের মিশ্রিত রস (অপহঔষধীনাং চ রসো যৎ সুরা) যা পানের দ্বারা তেজ, ইন্দ্রিয়ের সামর্থ্য বৃদ্ধি পায়।

 দেবীচাঁদ তার ভাষ্যে বিষয়টির স্পষ্ট করে লিখেছেন -  the soma (juice of medicines) prepared throught purifying process sacrifice (homa) for enjoyment, abd taken for the removal of sickness advances, the spiritual  and temporal forces, brilliancy  and physical vigour.


মন্ত্রার্থ নিম্নরূপ -

ভাষ্যার্থঃ সবন ক্রিয়া দ্বারা সেবিত সোম, ঔষধির রস তেজ, ইন্দ্রিয়ের সামর্থ্য, ব্রহ্মজ্ঞান এবং বল কে উৎপন্ন করে।  অতঃ হে বিদ্বান! দেব!  তেজ বৃদ্ধিকারী রস দ্বারা প্রাণের শক্তি কে বৃদ্ধি করো।  যজমান, উপাসক জন কে উত্তম অন্ন প্রদান কর।
(অনুবাদঃ জয়দেব শর্মা) 

আরোপ -০৫
Yajur Veda 19.7 For each of you is made a God-appointed place: so grant to me a portion in the highest sphere. Surâ the strong art thou. This here is Soma. Entering thine own place do me no mischief.

জবাবঃ
এই মন্ত্রে সুরাকে  বলযুক্ত বলা হয়েছে, আর এখানেই স্পষ্ট যে, এটা মাদকদ্রব্য নয়। কেননা মদ্যপানে মনুষের শরীরে বল বৃদ্ধি পায় না বরং ইন্দ্রীয় শিথিলতা দেখা যায়।  পূর্বোক্ত বিচার বিশ্লেষন অনুযায়ী সুরা সেই সোমলতা আদি ঔষধির রস যা শরীরে বল প্রদান করে। দয়ানন্দ জী ভাবার্থে বলেছেন - যে রাজা ও প্রজাগন বুদ্ধি, বল, আরোগ্য আর আয়ু বৃদ্ধিকারী ঔষধীসমূহের রস সদা সেবন করে আর প্রমাদকারী পদার্থকে সেবন করে না, সে এই জন্ম ও পরজন্মে ধর্ম অর্থ কাম আর মোক্ষের সিদ্ধকারী হয় ৷ দেবীচাঁদ তার ভাষ্যে লিখেছেন - The soma creeper, full of force. 
মন্ত্রার্থ নিম্নরূপ

ভাষ্যার্থঃ হে রাজা আর প্রজাগন ! অনেক প্রকার স্থানকৃত বিদ্বানগনের প্রিয় আচরণ তোমরা উভয় কে প্রাপ্ত হবে যারা নিশ্চয়ই নিজের কারণকে ভালোভাবে প্রবেশ করে  অনেক বলকারী সোমবল্লী আদি লতা, সেই উৎকৃষ্ট  বুদ্ধিরূপ অবকাশে বর্তমান আছে, তাহাকে তোমরা দুজন প্রাপ্ত হও আর প্রমাদকারী পদার্থের সঙ্গ করো না ৷ হে বিদ্বৎপুরুষ যিনি  এই সোম ইত্যাদি ঔষধিগন আছে, তাহাদের মত আমাকে তুমি  নষ্ট কর না ।
(অনুবাদঃ মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী) 

আরোপ -০৬
Atharva Veda 10.6.5 To this we give apportioned food, clarified butter, wine, and meath. May it provide each boon for us as doth a father for his sons…

জবাবঃ
মন্ত্রে ঘৃত, মধু, অন্ন সহিত সুরা কে গ্রহন করার কথা বলা হয়েছে যা শরীরে বীর্যমণির বৃদ্ধি করে  দিব্য গুণের বিকাশ করে। পূর্বোত্তর বিচার অনুযায়ী এখানে সুরা কোন মদ্য নয় কেননা মদ্য কখনো দিব্যগুণের বিকাশে সহায়তা করে না। পন্ডিত হরিশরণ সিদ্ধান্ত জী সুরা কে জল এবং ঔষধির রস বলেছেন।  ভাবার্থে বলেছেন -উত্তম অন্নের দ্বারা উৎপন্ন বীর্য শরীর কে সুরক্ষিত রাখে। ইহা আমাদের সেই প্রকার কল্যাণে নিবাস করায় যেমন পিতা পুত্র কে সুরক্ষিত রাখে। মন্ত্রার্থ নিম্নরূপ -

ভাষ্যার্থঃ সেই বীর্যমণির জন্য আমরা ঘৃত কে জল এবং ঔষধির রস কে মধু কে তথা খাবার যোগ্য সাত্বিক অন্ন কে গ্রহন করি। [ইহার দ্বারা উৎপন্ন বীর্যমণি শরীর কে সুরক্ষিত রাখে।] বীর্যমণি দিব্য গুণের বিকাশের জন্য অধিকাধিক সামনের দিন প্রাপ্ত হয়ে আমাদের সেই প্রকার উত্তম কল্যাণে নিবাস করাও, যেমন পিতা পুত্রের জন্য উত্তম নিবাস প্রাপ্ত করায়।
(অনুবাদঃ পন্ডিত হরিশরণ সিদ্ধান্তলংকার)

আরোপ - ০৭
Atharva Veda 15.9.1-3 He went away to the people. Meeting and Assembly and Army and Wine followed him. He who hath this knowledge becomes the dear home of Meeting, Assembly, Army, and Wine.

জবাবঃ
অপপ্রচারকারী মহাশয় মন্ত্রে সুরা দেখলেই সেটা wine বলে অনুবাদ করে, সেটা প্রকরণের সাথে মিলুক বা না মিলুক। অর্থাৎ তিনি সুরা বলতে শুধু wine টাই বোঝে, বৈদিক ব্যকরণ আদির অর্থজ্ঞানের অভাব থাকলে যা হয়। উণাদিকোষ ২।২৪ অনুসারে সুর ঐশ্বর্যে ব্যবহৃত হয় (সুনোতি সবতি উৎপাদয়ত্যৈশ্বর্য্যবান্ বা ভবতীতি সুরঃ)।


পন্ডিত হরিশরণ সিদ্ধান্ত জী সুরা = [সুর ঐশ্বর্য] রাষ্ট্ররক্ষক সেনা এবং রাজ্যকোষ [রাজ লক্ষ্মী] অর্থ করে ভাবার্থ বলেছেন -  যে রাজন্য ব্রাত্য(ব্রতী রাজা) প্রজার উন্নতিই শাসনের লক্ষ্য হিসেবে মনে করেন সেই রাজা সভা-সমিতির সেনা এবং সুর(লক্ষ্মী) এর প্রিয় হয়। তুলসীরাম শর্মাও সুরা কে wine করেন নি, তিনিও লিখেছেন -  the commonalty of social prosperity। পুরো মন্ত্রার্থ নিম্নরূপ -

ভাষ্যার্থঃ রাজন্য ব্রাত্য প্রজাদের উন্নতির লক্ষ্যে গতিশীল হয়।[প্রজা সমৃদ্ধি তাঁর শাসনের মূল লক্ষ্য। ] এমন হয়ে সেই রাজন্য ব্রাত্যকে ব্যবস্থাপিকা সভা এবং কার্যকারিনী সমিতি তথা সেনা,  রাষ্ট্ররক্ষক সেনা এবং রাজ্যকোষ [রাজ লক্ষ্মী] অনুকূলতা দ্বারা প্রাপ্ত হন।  যে রাজন্য ব্রাত্য “প্রজা সমৃদ্ধি”কে শাসনের লক্ষ্য করে নেয় সেই ব্রাত্য অবশ্যই  সভা এবং সমিতির তথা  সেনা এবং রাজ্য লক্ষ্মী প্রিয় স্থান হয়।
(অনুবাদঃ পন্ডিত হরিশরণ সিদ্ধান্তলংকার)

আরোপ -০৮
Atharva Veda 14.1.35-36 Whatever lustre is in dice, whatever lustre is in wine, Whatever lustre is in cows, Asvins, endue this dame therewith. With all the sheen that balmeth wine, or thigh of female paramour, With all the sheen that balmeth dice, even with this adorn the dame.

জবাবঃ
উল্লেখিত মন্ত্রদ্বয়ে সুরা শব্দের উল্লেখ রয়েছে, যা অপপ্রচারকারী মহাশয় মদ্য (wine) অর্থ করেছেন। সুরা শব্দের অর্থ পূর্বেই ব্যাখ্যা করা হয়েছে যে, এটা সোমরস এবং জলের মিশ্রণ অথবা ঐশ্বর্য্য  অর্থের বোধ করায়।  ব্রাহ্মণ গ্রন্থেও সুরা কে যশ অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে (যশো হি সুরা,  শত০ ১২।৭।৩।১৪)। পন্ডিত ক্ষেমকরণদাস ত্রিবেদী  মন্ত্রদ্বয়ের অর্থে সুরা কে ঐশ্বর্য্য তথা লক্ষী অর্থে অনুবাদ করেছেন। আচার্য্য বৈদ্যনাথ  শাস্ত্রীও সুরা কে prosperity করেছেন। মন্ত্রদ্বয়ের সত্যার্থ নিম্নরূপ -

[১] ভাষ্যার্থঃ যে তেজ ব্যবহার কুশলে এবং যে [তেজ] ঐশ্বর্য [বা লক্ষ্মী] তে রয়েছে। যে  তেজ  গতিশীল [পুরুষার্থ] লোকদের মধ্যে রয়েছে  হে  বিদ্যা কে প্রাপ্ত উভয় [স্ত্রী পুরুষ] সেই তেজ দিয়ে  এই বধু  কে  শোভায়মান করুন।
(অনুবাদঃ ক্ষেমকরণদাস ত্রিবেদী)




[২] ভাষ্যার্থঃ যেই তেজের কারণে অত্যন্ত নির্দোষ স্ত্রীর পৌরুষ, যেই কারণে (সুরা) ঐশ্বর্য্য [লক্ষ্মী], এবং যেই কারণ সমস্ত ব্যবহার সিঞ্চন করা করা [বৃদ্ধি করা যায়], হে বিদ্যা কে প্রাপ্ত উভয় [স্ত্রী পুরুষ সমুহ!] সেই তেজ দ্বারা এই বধু কে শোভায়মান করো।।
(অনুবাদঃ ক্ষেমকরণদাস ত্রিবেদী)


আরোপঃ ০৯
Atharva Veda 6.69.1 Mine be the glory in the hill, in vales, in cattle, and in gold, Mine be the sweetness that is found in nectar and in flowing wine!

জবাবঃ
এ মন্ত্রেও সুরা শব্দের ব্যবহার হয়েছে যার অর্থ পূর্বে আমরা বিশ্লেষন করেছি অর্থাৎ সুরা = ঐশ্বর্য্য (উ০ ২।২৪)।  তাই এখানে পুনরায় বিশ্লেষনের আবশ্যকতা নেই।  ক্ষেমকরণ জী মন্ত্রের ভাব প্রকাশে বলেছেন - মানুষ বিদ্বানদের সৎসঙ্গে বিদ্যা আদি প্রাপ্ত করে নিজের ঐশ্বর্য এবং স্বাস্থ্য স্থির রেখে যশ প্রাপ্ত হয়। পূর্ণ মন্ত্রার্থ নিম্নরূপ -
ভাষ্যার্থঃ উপদেশকারী সন্যাসীদের, জ্ঞানের উপদেশ পালনকারী [ব্রহ্মচারী] র মধ্যে  সুবর্ণে এবং বিদ্যায় যে যশ আছে! এবং প্রবাহমান জলে [অথবা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত ঐশ্বর্য] এবং  অন্নে  যে মিষ্টতা আছে, তাহা আমার মধ্যেও যেন হয়।
(অনুবাদঃ ক্ষেমকরণদাস ত্রিবেদী)



আরোপ -১০
Atharva Veda 9.1.18 May all the sweetness that is found in hills and mountains, steeds and kine, And wine that floweth from the cup,—may all that sweetness be in me.

জবাবঃ
পুণরপি মন্ত্রে ব্যবহৃত শব্দ সুরা, পূর্বের মতোই সুরা কে wine করে অপপ্রচারকারী প্রশান্তি লাভ করেছে।  আমরা তার প্রশান্তি বেদাঙ্গ দ্বারা খন্ডন করে দেখিয়েছি যে, বেদে সুরা শব্দ লৌকিক মদ্য হিসেবে আসে নি, সর্বদাই বিশেষ অর্থ বহন করেছে। এ মন্ত্রের অর্থে ক্ষেমকরণ জী সুরা শব্দের দুটি অর্থ দেখিয়েছেন - জল এবং ঐশ্বর্য্য।

 নিঘন্টু ১।১২ অনুসারে,  "সুরা ইতি উদকম নাম" অর্থাৎ জলের আরেক নাম সুরা।


এবং উণাদিকোষ ২।২৪ অনুসারে, ঐশ্বর্য্য।




 সুতরাং অর্থ একদম পরিষ্কার, অতএব মন্ত্রের পূর্ণ অনুবাদ দেখুন -

ভাষ্যার্থঃ  যে [জ্ঞান] স্তুতি যোগ্য সন্যাসীদের মধ্যে মেঘে, গোমাতার এবং ঘোড়ার মধ্যে যে জ্ঞান আছে। সেই প্রবাহমান জল [অথবা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত ঐশ্বর্য] এ যে জ্ঞান আছে, তা আমার হোক। 
(অনুবাদঃ ক্ষেমকরণদাস ত্রিবেদী)



আরোপঃ ১১
Yajur Veda 19.16 The Sacrificer’s seat is the throne’s symbol, the jar containing Surâ of the Altar. The mid-space is the northern Altar’s symbol: the cloth for filtering is the physician.

জবাবঃ
মন্ত্রে অপপ্রচারকারীর মতে সুরাপাত্রের কথা বলা হয়েছে। সুরা শব্দের অর্থ পূর্বেই বলা হয়েছে।  দয়ানন্দ জীর সুরাধানি শব্দের অর্থ করেছেন- যার মধ্যে সোমরস ধরা হয়,সেই কলসি (অপহঔষধীনাং চ রসো যৎ সুরা)। অর্থাৎ এখানেও মদ্যের কথা বলা নেই। মন্ত্রার্থ নিম্নরূপ -

ভাষ্যার্থঃ হে মনুষ্য! তোমাদের যোগ্য যে, যজ্ঞের জন্য যা সকল প্রকারে সেবন করা হয়, সেই সুন্দর ক্রিয়া রাজারা যেখানে বসেন, সেই সুখদায়ক বেদির অর্থ ধান্যাদি পদার্থের আধার যার মধ্যে সোমরস ধরা হয়,সেই কলসি যার মাধ্যমে জীবন হয়,এই অন্নাদি পদার্থ  উত্তরের বেদীর রুপকে কর্মকারী এবং বৈদ্দ এগুলো সমস্তকিছু সংগ্ৰহ করো।। 
(অনুবাদঃ মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী)

আরোপঃ ১২
Rig Veda mentions a miracle by Ashwins who drew a hundred jars of wine from hoof of their horse,
Rig Veda 1.116.7 O heroes, ye gave wisdom to Kakshivan who sprang from Parjra’s line, who sang your praises. Ye poured forth from the hoof of your strong charger a hundred jars of wine as from a strainer.

জবাবঃ
অপপ্রচারকারী এখানে  একশোটি সুরার পাত্র পেয়েছেন। সুরা শব্দের অর্থ আমরা বিস্তারপূর্বক আলোচনা করেছি। দয়ানন্দ জী এই মন্ত্রে সুরা শব্দের অর্থে বলেছেন "অভিষুতস্য রসস্য" অর্থাৎ The distilled juice। মন্ত্রের ভাবার্থ এই যে, শাস্ত্রবেত্তা,বিদ্বান, অধ্যাপক  যেভাবে শান্তিপূর্বক ইন্দ্রিয়াদি বিষয় থেকে বিরত থাকা আদি গুণযুক্ত সজ্জন বিদ্যার্থীদের জন্য শিল্পকার্য অর্থাত কারিগরি বিদ্যা এবং চাতুর্যযুক্ত তথা বুদ্ধি সৃষ্টিকারী কার্য করান তথা শিক্ষা দেন,  তারা প্রশংসাযুক্ত শিল্পী অর্থাত কারিগর হয়ে রথ আদিকে তৈরি করতে পারেন , শিল্পীগণ যেই যান তথা উত্তম রথ,  বিমানাদিতে জলঘর থেকে জল সেচন করেন এবং জলাকরের বাষ্প দ্বারা চালিত হওয়ার মাধ্যমে তৈরি বিদ্যুতাদির দ্বারা অশ্বের ন্যায় দ্রুত একদেশ থেকে অন্য দেশে যেতে পারেন।
পূর্ণ মন্ত্রার্থ নিম্নরূপ -

ভাষ্যার্থঃ হে বিনয় প্রাপ্তকারী সভা সেনাপতি তোমরা উভয়ে পদে প্রসিদ্ধ হওয়া উত্তম শাসনব্যবস্থা কে শেখো  এবং স্তুতিকারী বিদ্যার্থীদের জন্য বহু প্রকার বুদ্ধি এবং উত্তম পথের চিন্তা করো তথা বলবান অশ্বের [ দ্রুততাদি গুণ ] সমতুল্য অগ্নি সম্বন্ধিত কলাঘরের, যার ব্যবহার দ্বারা শিল্পীগণ তর্কের[ব্যবহার] সহিত পার হন,  সেই খুরের সমান জল সেচন স্থান থেকে পরিস্রুত রসে পূর্ণ শত পাত্রকে নাও, সেচন করো।
(অনুবাদঃ মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী) 

সম্পূর্ণ বিচার বিশ্লেষন অনুয়াযী এটা স্পষ্ট যে, বেদে সুরা শব্দ অনেক মহত্বপূর্ণ রূপে এসেছে।  এখন অপপ্রচারকারী যদি লৌকিক অর্থ দেখে বেদের স্থলে স্থলে সুরা শব্দ দেখিয়ে সেটাকে মদ্য হিসেবে চালাতে চায় সেটা তার ভন্ডামী। একজন সুচিন্তাবিদ বেদার্থের কখনোই  কুঅর্থ করবেন না। আমরা বেদাঙ্গ থেকে প্রমাণ সহিত দেখিয়েছি সুরা শব্দ প্রচলিত মদ্য অর্থে ব্যবহৃত হয় নি বরং এটি ঔষধির রস তথা ঐশ্বর্য্যের রূপে ব্যবহৃত হয়েছে। 


Post a Comment

2Comments
  1. পরিশ্রমী লেখা। এ ধরণের লেখা আরও চাই। লেখককে ধন্যবাদ।

    ReplyDelete
Post a Comment