দৈনিক বেদবাণী


এই সমগ্র সংসার নিরোগ এবং শুভচিন্তা যুক্ত হোক । যজুর্বেদ ১৬.৪                    সূর্য-এর আলোয় স্বয়ং আলোহীন চাঁদ আলোকিত হয় । ঋগ্বেদ ৫.৪০.৫                    প্রশংসনীয় সংস্কৃতি, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও মাতৃভূমি— এই ত্রয়ী সুখ-সমৃদ্ধি প্রদান করে। ঋগ্বেদ ১.১৩.৯                    উত্তম জীবন লাভের জন্য আমাদের জ্ঞানীদের সাহচর্যে চলা উচিৎ। ঋগ্বেদ ১.১২.১৬                    যে ব্যক্তি সম্পদ বা সুখ বা জ্ঞান নিঃস্বার্থভাবে দান করে, সে-ই প্রকৃত মিত্র। ঋগ্বেদ ২.৩০.৭                    মানুষ কর্ম দ্বারাই জগতে মহত্ত্ব ও প্রসিদ্ধি লাভ করে। ঋগ্বেদ ৩.৩৬.১                    হে পতি! তোমার স্ত্রীই গৃহ, স্ত্রীই সন্তানের আশ্রয়। ঋগ্বেদ ৩.৫৩.৪                    পরমাত্মার নিয়ম বিনষ্ট হয় না; তা অটুট, অচল ও অপরিবর্তনীয়। ঋগ্বেদ ৩.৫৪.১৮                    এই ধর্মের মার্গই সনাতন, এই পথে চলেই মানবগণ উন্নতি লাভ করে। ঋগ্বেদ ৪.১৮.১                    পরমাত্মার নিকট কোনো মানুষই বড় বা ছোট নয়। সকল মানুষই সমান এবং পরস্পরের ভ্রাতৃস্বরূপ। ঋগ্বেদ ৫.৬০.৫                    যে ব্যক্তি অকারণে অন্যের নিন্দা করে, সে নিজেও নিন্দার পাত্র হয়। ঋগ্বেদ ৫.২.৬                    নিশ্চিতরূপে এই চতুর্বেদ কল্যাণপ্রদায়িনী এবং মানবকে জ্ঞান প্রদান করে ধারণকারিণী। ঋগ্বেদ ৫.৪৭.৪                    বীর মানবের জন্য পর্বতও সুগম হয়ে যায়। ঋগ্বেদ ৬.২৪.৮                    আমরা অন্যের সঞ্চিত পাপের কর্মফল ভোগ করি না। ঋগ্বেদ ৬.৫১.৭                    হে মিত্রগণ! ওঠো— উদ্যমী হও, সাবধান হও এবং এই সংসাররূপী নদীকে অতিক্রম করো। ঋগ্বেদ ১০.৫৩.৮







উপাসনার ধারণার উপর প্রশ্ন

অমৃতস্য পুত্রা
0

প্রশ্ন

উপাসনার বৈদিক পদ্ধতি কোনটি ?


বেদ ঈশ্বরকে মানুষের মত বিবেচনা করে না ৷ এটি ঈশ্বরের প্রথাগত উপাসনায়ও বিশ্বাস করে না । বিপরীতে, এটি যোগ পদ্ধতিতে ঈশ্বরের পূজা করার শিক্ষা দেয় যেটা আত্মা, মন এবং দেহের জন্য একটি টনিক হিসাবে কাজ করে । যোগ পদ্ধতিকে বর্তমান সময়ে জনপ্রিয় 'আসন' এবং 'প্রানায়ামের' সঙ্গে গুলিয়ে ফেলে বিভ্রান্তিতে পড়া যাবে না ।

অপরদিকে, যোগ পদ্ধতি একটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি যাহা ব্যাক্তিকে ঐশী বিধানের সাথে একাত্মতা আনে যে বিধান এই সৃষ্টিকে চালিত করছে এবং এভাবে ব্যাক্তির আনন্দ ও মনের শক্তিকে বহুগুনে বৃদ্ধি করে ৷



প্রশ্ন:
ঠিক আছে । কিন্তু আগে আপনি বলেছেন যে ঈশ্বর অলঙ্ঘ্যনীয় বিধান অনুযায়ী কাজ করেন । তাহলে ঈশ্বরের নিকট প্রার্থনা কিভাবে সহায়তা করবে যদি ঈশ্বর শুধুমাত্র তাঁর অলঙ্ঘ্যনীয় বিধান অনুসারেই কাজ করেন ?

ঈশ্বর বিশেষ ডিসকাউন্টের প্রস্তাব দেন না ৷ তার করুণা তাঁর বিধান ও কার্যপদ্ধতির মধ্যেই নিহীত থাকে । কাজেই, কর্মের তত্ত্ব অনুযায়ী যা ঘটবে প্রার্থনাগুলো তা অগ্রাহ্য করবে না । প্রার্থনাগুলো যা করে তা হলো সে আপনার নিজের ইচ্ছাগুলোকে শক্তিশালী করবে যাতে কাল আপনি আপনার ইচ্ছাকে সঠিক পথে চালনা করেন এবং এভাবেই, সামনের ভুলগুলি থেকে নিজেকে রক্ষা করেন ।



প্রশ্ন
কিন্তু এখনও, কেন আমাদের ঈশ্বরের উপাসনা করা উচিত ? সর্বোপরি, তিনি কখনও ক্ষমা করেন না ! ঈশ্বরের উপাসনায় কি উপকার হয় ?

ঈশ্বরের উপাসনা করা উচিত, এবং একমাত্র তাঁরই উপাসনা করা উচিত ।

এটা সত্য যে, ঈশ্বরের পূজা দ্বারা আপনি ব্যর্থ হলে শর্টকাট পাসের শংসাপত্র (certificate) পাবেন না ৷ একমাত্র অলস এবং প্রতারকগন সফলতার জন্য এই ধরনের অযাচিত উপায় কামনা করে । ঈশ্বরের উপাসনার উপকারগুলি ভিন্নঃ

ইশ্বরের উপাসনা দ্বারা, একজন ব্যাক্তি ঈশ্বর এবং তাঁর সৃষ্টিকে আরও ভালভাবে বুঝতে পারেন ৷

উপাসনা দ্বারা, একজন ভালভাবে তাঁর বৈশিষ্ট্য বুঝতে পারে এবং এগুলোকে তার নিজের জীবনে গ্রহণ করতে পারেন । এটি একজন ব্যক্তির ব্যক্তিত্বকে উন্নত করে, ভবিষ্যতের পাপের উৎসকে ধ্বংস করে, সত্য ও সমবেদনার গুণাবলীকে উৎসাহ দেয় এবং সত্য ও পরমসুখের কাছাকাছি আসে ।

উপাসনা দ্বারা, যে কেউ 'ভেতরের কন্ঠস্বর' ভালভাবে শুনতে পারেন এবং তাঁর কাছ থেকে নিয়মিত পরিষ্কার নির্দেশিকা পেতে পারেন ।

উপাসনা দ্বারা, একজন ব্যাক্তি অজ্ঞতা দূর করেন, শক্তি লাভ করেন এবং আত্মবিশ্বাস এবং আত্মরক্ষার সঙ্গে জীবনের সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জ সহ্য করতে পারেন ।

পরিশেষে, একজন ব্যাক্তি অজ্ঞতা সম্পূর্ণরূপে মুছে ফেলতে পারেন এবং পরম সুখের সাথে মোক্ষ বা পরিত্রাণ অর্জন করতে পারেন ।

আমি উপাসনার জন্য আরো একটি কারণ যোগ করতে চাই ।

ঈশ্বর আমাদের জন্য এত কিছু করেছেন এবং অবিরামভাবে তা অন্তহীন চালিয়ে যাবেন ৷ এবং তাই, আমাদের জন্য তাঁকে ধন্যবাদ জানানোটা স্বাভাবিক ঠিক যেভাবে আমরা আমাদের মরনশীল মা বাবাকে ধন্যবাদ জানাই তাদের আর্শ্বীবাদের জন্য ৷ শুধুমাত্র একজন দুর্ভাগা স্বার্থপর ব্যক্তি কৃতজ্ঞতা প্রদর্শন করবে না এবং তার হৃদয়কে শুদ্ধ করার সুযোগ হারাবে ।

দয়া করে মনে রাখবেন যে, উপাসনা যন্ত্রের মতন মন্ত্র উচ্চারনের কিছু নয় বা মনের শূণ্যতা নয় । কর্ম, জ্ঞান এবং গভীর চিন্তার মাধ্যমে জ্ঞান অাত্মভুত করার এটি একটি প্ররোচনাদায়ক দৃষ্টিভঙ্গি ৷



প্রশ্ন
আমাদের কিভাবে ঈশ্বরের উপাসনা করা উচিত?


ঈশ্বরের উপাসনা নিহীত আছে আমাদের জীবনের প্রতিটি কর্মে । সত্য উপাসনা বলতে ক্রমাগত ভিত্তিতে 'ভিতরের কন্ঠস্বরকে' অনুসরণ করা বোঝায় । এটাকে বলা হয় যজ্ঞীয় জীবনযাপন করা অর্থাৎ মহৎ উদ্দেশ্যে স্বার্থহীন কর্মে নিয়োজিত হওয়া ৷

এটিকে কর্মের মাধ্যমে উপাসনা করা বলা হয় ৷ যাইহোক, কোন ব্যাক্তি তার জীবনকে বিপথে না নিয়ে পবিত্রভাবে উত্তম পদ্ধতিতে পরিচালনা নিশ্চিত করার জন্য, তাকে আরো দুটি দিক নিয়ে অনুশীলন করতে হবেঃ

জ্ঞান অন্বেষন করা

আমাদের সংস্কারের অংশ হিসাবে জ্ঞানকে আত্মভুত করতে জ্ঞানের প্রতি মনোযোগী হওয়া ৷

জ্ঞান-গভীর মনোযোগ-কর্ম এই তিনটি একত্রে চলে এবং বিচ্ছিন্নতাতে ফলহীন হয় ।



প্রশ্ন
ঈশ্বর উপাসনার মূল উপাদান কি কি?

ঈশ্বরের উপাসনার তিনটি প্রধান উপাদান আছে:

স্তুতি

প্রার্থনা

উপাসনা বা যোগীয় অনুশীলন



প্রশ্ন
ঈশ্বর "স্তুতি" কি ? এর ধরন কি?

স্তুতি বা প্রশংসার অর্থ হল যে কোনো সত্তার সঠিক গুনাবলী বা বৈশিষ্ট্যগুলোকে সর্বাধিক সত্যনিষ্ঠ পদ্ধতিতে প্রকাশ করা ৷ অতএব, কোনকিছুর 'মিষ্টি কথায় ভোলানো মিথ্যা', সেইসাথে 'অযৌক্তিক নিন্দা,' উভয়ের কোনটাই স্তুতি নয় ৷

ঈশ্বরের স্তুতির উদ্দেশ্য হলো ঈশ্বরের বৈশিষ্ট্যগুলোকে বুঝা এবং তাঁর সাথে সংগতি রেখে আমাদের নিজেদের প্রকৃতি এবং কর্মকে সে অনুযায়ী রূপ দিতে চেষ্টা করা । উদাহরণস্বরূপ, ঠিক যেমন ঈশ্বর ন্যায়পরায়ণ এবং দয়ালু, আমাদেরও উচিত ন্যায়পরায়ণ ও দয়ালু হওয়া । ঈশ্বর কখনোই হতাশ হন না, এবং তাই, আমাদেরও হতাশ হওয়া উচিত নয় ।

একজন ব্যক্তি যিনি কেবল একজন নাট্যশিল্পীর মতো ঈশ্বরের গুনগান করেন কিন্তু তার নিজের চরিত্র পরিবর্তন করতে চেষ্টা করেন না, তিনি আসলে স্রেফ সময় নষ্ট করছেন কারন ঈশ্বর আত্মমুগ্ধ বা স্বৈরশাসক নন, যে তিনি প্রশংসায় আনন্দ পাবেন ৷ যাই হোক আমরা যে স্তুতি করি তা আমাদের নিজস্ব উন্নতির দ্বারা শুধুমাত্র আমাদের কল্যানের জন্য ।



প্রশ্ন
স্তুতি কয় ধরনের?

দুটি ধরনের স্তুতি আছেঃ

সগুন স্তুতিঃ যেসব বৈশিষ্ট্যগুলো ঈশ্বরে বিদ্যমান, সেগুলোকে স্মরণ করা ও বুঝার মাধ্যমে প্রশংসা করা ৷ উদাহরণস্বরূপ, তিনি শ্বাশত এবং বিশুদ্ধ ।


নির্গুন স্তুতিঃ যেসব বৈশিষ্ট্যগুলি ঈশ্বরের মধ্যে উপস্থিত নয় সেগুলোকে স্মরণ করা ও বোঝার মাধ্যমে প্রশংসা করা । উদাহরণস্বরূপ, তাঁর কোন আকার নেই, এবং তিনি জন্মগ্রহণ করেন না ।

পার্থক্যটা কেবল ভাষাগত এবং মূল তত্বগত নয় ৷



প্রশ্ন
ঈশ্বরের "স্তুতি" আছে এমন কিছু বৈদিক মন্ত্র কি আপনি প্রদান করতে পারেন ?

বেদের প্রধান বিষয় ঈশ্বর । অতএব, ঈশ্বরের স্তুতিমূলক বহু সংখ্যক মন্ত্র রয়েছে যা বেদের অংশ । উদাহরণ স্বরূপঃ


যজুর্বেদ ৪০/৮

তিনি সকল কিছুতেই বর্তমান, গতিমান এবং সবচেয়ে শক্তিশালী, বিশুদ্ধ, সর্বজ্ঞ, সকল কিছুর জ্ঞাতা, সকলের প্রভু, শ্বাশত, স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং বেদের জ্ঞানের দ্বারা আমাদের সকলকে পথ প্রদর্শন করেন ৷ (এটি সগুন স্তুতি ৷)

তিনি শরীরবিহীন, তিনি কখনই জন্ম নেন না, তাঁর কোন স্নায়ু বা খুঁত নেই, তিনি পাপ আচরণ করে না এবং ব্যথা ও দুঃখ থেকে আলাদা । (এটি নির্গুন স্তুতি ।)

অথর্ববেদ ১০/৮/১ এবং ১০/৭/৩২-৩৪

তিনি নিখুঁতভাবে জানেন অতীতে কি ঘটেছে, বর্তমানে কি ঘটছে এবং ভবিষ্যতে কী কী ঘটতে পারে । তিনি তাঁর জ্ঞানের মাধ্যমে সমগ্র জগতকে পরিচালনা করেন এবং আমাদের সকলের প্রভু । তিনি নিজেই স্বয়ং আনন্দময় এবং দুঃখ থেকে সম্পূর্ণ দূরে ! তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ, এবং আমরা তাঁকে নমষ্কার করি !

তিনি পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন যেখানে আমরা বাস করি এবং (সৃষ্টি করেছেন) মহাবিশ্বকে একই সাথে সেই সব কাঠামোকে যা আমাদেরকে আলোক দান করে । তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ, এবং আমরা তাঁকে নমষ্কার করি !

সৃষ্টির প্রতিটি চক্রের মধ্যে তিনি সূর্য ও চাঁদ সৃষ্টি করেন । তিনি আমাদের কল্যানের জন্য আগুন তৈরি করেন ৷ তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ, এবং আমরা তাঁকে নমষ্কার করি !

তিনি বায়ু সৃষ্টি করেন যাহাতে আমরা নিঃশ্বাস গ্রহন করি ও প্রশ্বাস ত্যাগ করি । তিনি আলো সৃষ্টি করেন যার মাধ্যমে আমরা দেখি ৷ তিনি সকল দশটি দিকের সবকিছু সৃষ্টি করেছেন এবং অনিন্দ্যসুন্দর ও সমন্বয়ের সহিত পরিচালনা করছেন, যাতে আমরা সর্বাধিক উপকৃত হই ৷ তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ, এবং আমরা তাঁকে নমষ্কার করি !


যজুর্বেদ ২৫/১৩

তিনি আমাদের আত্মায় জ্ঞানের শক্তি প্রদান করেন । তিনি আমাদের সকলকে সত্য জ্ঞান ও আনন্দ প্রদান করেন । সমস্ত পন্ডিত তাঁর এবং একমাত্র তাঁরই উপাসনা করে । বুদ্ধিমান মানুষেরা অব্যাহত আনন্দ লাভের জন্য এবং পরিত্রাণ লাভের জন্য বেদে প্রণীত তাঁর নির্দেশনা অনুসরণ করেন । শুধুমাত্র তাঁর প্রতি আত্মসমর্পণেই আছে দুঃখকষ্ট থেকে মুক্তি এবং দুর্বৃত্রতায় লিপ্ত থাকার মাধ্যমে তাঁর কাছ থেকে দূরে সরে থাকাই কেবল বারবার জন্মমৃত্যু চক্রের ফাঁদে পড়ার কারণ । তাই, আমাদের উচিত তাকেই এবং একমাত্র তাঁরই উপাসনা করা যিনি আনন্দ ও সুখের একমাত্র সংজ্ঞা ৷



প্রশ্ন
প্রার্থনা বা ঈশ্বরের প্রার্থনা কি ?

মহৎ উদ্দেশ্যে আমরা আমাদের সেরা প্রচেষ্টা করার পর) ঈশ্বরের নিকট হতে সহায়তা পাবার জন্য অনুরোধ করাই হলো প্রার্থনা ৷ এটা প্রার্থনা হয় না, যখন আমরা খারাপ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য অনুরোধ করি বা আমরা যখন নিজের সেরা প্রচেষ্টা করা ছাড়া কোন অনুরোধ করি ৷ প্রার্থনা দুষ্টের জন্য নয় আবার অলসের জন্যও নয় ৷

এইভাবে, আমরা ঈশ্বরের নিকট যা কিছুই প্রার্থনা করি না কেন, আমাদেরকে একই সাথে ঐ বিষয়টিকে জীবনে গ্রহণ করতে হবে । উদাহরণস্বরূপ, যদি আমরা জ্ঞানের জন্য প্রার্থনা করি, তাহলে আমাদের উচিত জ্ঞান অন্বেষনের সর্বোত্তম প্রচেষ্টা করা । যথাযথ প্রচেষ্টা করা হয়েছে শুধুমাত্র পরে প্রার্থনা করা মানে। বিনামূল্যে মধ্যাহ্নভোজের প্রত্যাশা ভিক্ষুকের চিহ্ন, ঈশ্বরের উপসকের নয়, যিনি নিজেও একমুহুর্তের জন্য ও অলস হননা । অতএব, যথাযথ পরিশোধ করুন এবং তারপর আপনার খাবারের জন্য অনুরোধ করুন ।

অসৎ প্রার্থনাগুলো বিপরীত ফল আনে কারণ এগুলো ব্যাক্তির মনকে দূষিত করে এবং ব্যাক্তির জন্য আরও দুঃখকে ডেকে আনে । উদাহরণস্বরূপ, ঈশ্বর এই ধরনের প্রার্থনা প্রত্যাখ্যান করেন যেমন-

"হে ঈশ্বর, আমার শত্রুকে ধ্বংস করে দাও এবং আমাকে সবচেয়ে শক্তিশালী ও মহিমান্বিত করো ।" কারণ উভয় শত্রুই যদি একইরকম প্রার্থনা করে, তবে কি ঈশ্বর তাদের দুজনকেই ধ্বংস করবেন ?

কেউ যদি যুক্তি দেন যে ঈশ্বর দুজনের মধ্যে যিনি অধিকতর আন্তরিকভাবে প্রার্থনা করেন তার (প্রার্থনা) শুনবেন, তাহলে এই যুক্তি দ্বারা, যে ব্যক্তি কিছুটা কম আন্তরিকভাবে প্রার্থনা করে অন্ততপক্ষে তার কিছুটা ক্ষতি হওয়া উচিত, যদিও এর পরিমান তার শত্রুর চেয়ে কম !

এটি সম্পূর্ণ মূর্খ যুক্তি !

অনুরূপভাবে, যদি কেউ প্রার্থনা করেন, যেমনঃ হে ঈশ্বর আমাদের জন্য মিষ্টি তৈরি করুন, দয়া করে আমার ঘর পরিষ্কার করুন, আমার পোষাক ধুয়ে ফেলুন, আমার ফসল কাটুন ইত্যাদি"।

সোজাকথায় সে একটা বোকা ৷


যজুর্বেদ ৪০/২

ঈশ্বর আমাদের আদেশ দিয়েছেনঃ "ভালভাবে চেষ্টা করে ১০০ বছর বা তার বেশি সময় বাঁচ এবং কখনো অলস হয়ো না।"


যারা ঈশ্বরকে এই আদেশ উপেক্ষা করে না তারা কখনোই সুখ অর্জন করতে পারে না, যদিও তারা হয়তো অন্যান্য গুণাবলিতে উন্নতচরিত্র হতে পারে তাও (সুখ অর্জন করতে পারে না) ।

কঠোর পরিশ্রম বা পুরুষার্থ হল জীবনে আত্মভুত করার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য । বাকি সব উত্তম গুণগুলি ধরে নেয় যে পুরুষার্থ গুনাবলিটি ইতিমধ্যেই সেখানে রয়েছে ।

অন্য কথায়, ভাগ্য সাহসীদের পক্ষে ।

আমরা কেবল তাদেরই চাকুরীতে নিয়োগ দেব যারা কাজ করে, কিন্তু অলসদের নিয়োগ দেব না । কেবলমাত্র যাদের চোখ আছে এবং দেখার ইচ্ছা আছে তারাই কিছু দেখতে পারে । চিনিকে উপার্জন করে ও এটিকে খাওয়ার দ্বারাই কেবল চিনির স্বাদ গ্রহণ করা যাবে, "চিনি মিষ্টি" শুধুমাত্র এটি বলে চিনির স্বাদ গ্রহন করা যাবে না । একইভাবে, শুধুমাত্র সেই ব্যাক্তি, যে উত্তম কার্য করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে অবশেষে চিনি (মিষ্টতা) অর্জন করবে, শীঘ্রই বা দেরিতে ৷


প্রশ্ন
আপনি কি ঈশ্বর এর প্রার্থনা সংক্রান্ত কিছু মন্ত্র বেদ থেকে প্রদান করতে পারেন?

আসলে অনেক মন্ত্র দিতে পারি ! আসুন ঈশ্বরের নিকট প্রার্থনা সংক্রান্ত জীবনের সবচেয়ে সুখী কার্য্যক্রম উপভোগ করুন ৷ কিন্তু এর আগে, আমাদের অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে সর্বোত্তম, অবিরাম, কঠোর এবং উদ্যমী প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমরা আমাদের হোমওয়ার্ক করছি ৷

যজুর্বেদ ৩২/১৪

হে অগ্নি (আলোকিত ঈশ্বর), সেই বুদ্ধির সাথে আমাদের আশীর্বাদ করুন, যার মাধ্যমে যোগীগন এবং পণ্ডিতগন আপনার পূজা করে । এবং এখনই আমাদের সেই মেধা প্রদান কর ! আমরা কোন আত্মম্ভরিতা ছাড়াই আপনার নিকট আমাদের সবকিছু আত্মসমর্পণ করার অঙ্গীকার করা ৷ সর্বোপরি, আপনিই সকল কিছুর উৎস যা আমরা অধিকার করি !

যর্জুবেদ ১৯/৯

আপনি প্রতিভাময়, আমাদের প্রতিভা প্রদান করুন ৷

আপনি অসীম সাহসী এবং পরাক্রমী, আমাদেরকে একই সাহস ও পরাক্রম প্রদান করুন ৷

আপনি সর্ব শক্তিমান, আমাদেরকেও মানসিক ও শারিরীকভাবে শক্তিশালী এবং বলবান কর ।

আপনি সম্পূর্ণ সক্ষম, আমাদেরকেও সক্ষম কর ৷

আপনি অপরাধ এবং অপরাধীদের উপর ক্রোধ প্রদর্শন করেন ৷ আমাদের প্রস্তুত করুন আমরাও যেন অপরাধ এবং অপরাধীদের উপরও একইভাবে রাগ দেখানোর অভ্যাস গড়ে তুলি ।

আপনি সকল প্রশংসা বা সমালোচনা সহ্য করেন । তেমনি প্রশংসা বা সমালোচনা উপেক্ষা করা এবং শুধুমাত্র লক্ষ্যের দিকে মনোযোগী হতে আমাদেরকে পর্যাপ্ত শক্তি দিন ।

অন্য কথায়, মন্দ থেকে দূরে ধার্মিকতার প্রতি আমাদেরকে চালিত কর ৷


যজুর্বেদ ৩৪ / ১-৬ (শিব সংকল্প মন্ত্র)

হে প্রিয় ঈশ্বর ! আপনার আশীর্বাদের সাথে, আমার মন সকল ধরনের জ্ঞানের বহু দূর অব্দি যায়, যখন জাগ্রত থাকি । এমনকি ঘুমের সময়, এটি একইভাবে কাজ করে । আপনার দান আমার এই শক্তিশালী মন যেন সদা সকল পাপ থেকে দূরে থাকে এবং সবসময় যেন শুধুমাত্র বিশুদ্ধ চিন্তায় থাকে । আমি যেন সর্বদাই সকলের কল্যানের চিন্তা করি এবং কখনও যেন কারো ক্ষতি কামনা না করি ৷

হে সর্বজ্ঞ, এই মন ধৈর্যশীল পণ্ডিতদেরকে এবং উন্নত চরিত্রের মানুষদেরকে চালিত করে উত্তম কাজ করতে এবং ক্রমাগত মন্দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে । এই মন বিপুল সম্ভাবনাময় এবং সকল জীবের কল্যাণে নিমজ্জিত থাকতে পারে । এমন উন্নত মন যেন মন্দ থেকে দূরে চালিত করে এবং শুধুমাত্র পবিত্র চিন্তা কামনা করে ৷


এই মন মহান জ্ঞান প্রদান করে ৷ এইটি এক ও সকলকে আলোকিত করে এবং আমাদেরকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে । তার সমর্থন ছাড়া এমনকি একটি কাজও সম্পন্ন করা যায় না । এই মহান মন সদা উন্নত চিন্তায় মগ্ন থাকুক এবং অসৎ কামনা থেকে দূরে থাকুক ৷

যোগীগন অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যত এই মনের মাধ্যমে জানেন । এই মন আমাদেরকে ঈশ্বরের সহিত একত্রিত হতে সহায়তা করে এবং পরম জ্ঞান সন্ধান করতে সাহায্য করে। এই মন পাঁচ ইন্দ্রিয়, আত্মা এবং বুদ্ধির সাথে একত্রে কাজ করে সৎকাজ পরিচালনা করতে ৷ এই মহান মন সদা বিশুদ্ধ থাকুক এবং সকলের কল্যান করুক ৷

চারটি বেদ - ঋগ্বেদ, যজুর্বেদ, সামবেদ এবং অথর্ববেদের জ্ঞান মনের মধ্যেই গেঁথে থাকে, যেভাবে একটি চাকার কেন্দ্রে অর (spoke) সংযুক্ত করা হয় । এই মন ঈশ্বরের অস্তিত্বের একটি সাক্ষ্য, যিনি সবসময় এটির মধ্যে এবং এর চারপাশে অর্ন্তভুক্ত আছেন ৷ এমন মন যেন সদা উন্নত কর্মের প্রতি নিবেদিত থাকে যাতে করে আমি সকল অজ্ঞতা দূর করে আমার ভেতর নিহীত থাকা বৈদিক জ্ঞানকে আবিষ্কার করতে পারি ।

মন মানুষের কর্মকে নিয়ন্ত্রন করে যেমনভাবে রথচালক রজ্জু দ্বারা ঘোড়াকে নিয়ন্ত্রন করে । এটা অত্যন্ত গতিসম্পন্ন এবং সদা আমার সাথে থাকে । এমন মন যেন সর্বদা সকলের জন্য কল্যাণ এবং উন্নত চিন্তা অন্বেষন করে এবং কখনও যেন পাপের মধ্যে বসবাস না করে ।

যর্জুবেদ ৪০/১৬

হে সুখ প্রদানকারী, আত্মপ্রকাশকারী, সর্বজ্ঞ ঈশ্বর, আপনি আমাদের সঠিক বুদ্ধি প্রদান করুন । আপনি আমাদেরকে পাপ কর্ম থেকে দূরে চালিত করুন ৷ আমাদের চিন্তা, শব্দ, এবং কর্মকে শুদ্ধ করার জন্য আমরা বারংবার আপনার নিকট প্রার্থনা করি ৷

যজুর্বেদ ১৬/১৫

হে রুদ্র (দুঃখী মানুষকে কাঁদতে ও কষ্ট ভোগ করতে পারে এমন ব্যক্তি)! দয়া করে আমাদের সকলকে পথ প্রদর্শন করুন যাতে আমাদের কেউ, আমাদের কনিষ্টদের, আমাদের জ্যেষ্ঠ্যদের, আমাদের পিতামাতাদের, গর্ভের প্রাণীদের, আমাদের প্রিয়জনদের এবং সকল নির্দোষ নিরীহ জীবিত প্রাণীর ক্ষতি না করে । আমাদেরকে সেই পথ থেকে দূরে চালিত করুন যে পথ আমাদেরকে আপনার শাস্তির সম্মুখীন করতে পারে ।

শাতপথ ব্রাহ্মণ ১৪/৩/১/৩০

আমরা যেন মিথ্যার পথ পরিহার করি এবং সত্যের প্রতি অগ্রসর হই ৷ আমরা যেন অন্ধকারের পথ পরিত্যাগ করি এবং আলোর দিকে প্রতি অগ্রসর হই । আমরা যেন মৃত্যুর পথ প্রত্যাখ্যান করি এবং মোক্ষের মাধ্যমে শাশ্বত অমরত্ব অন্বেষন করি । হে ঈশ্বর! অনুগ্রহ করে আমাদের পথ প্রদর্শক হও !


যজুর্বেদ ২/১০

হে ধনবান ঈশ্বর ! দয়া করে একটি সুস্থ শরীর, সুস্থ ইন্দ্রিয় এবং ভালো অভ্যাসের সাথে অত্যন্ত উন্নতচরিত্র মানসিকতার সাথে আমাকে স্থিতিশীল কর ৷ অনুরোধ করি আমাদের সহায়তা করুন যাতে আমরা আমাদের দেশকে শক্তিশালী ও উন্নত করতে পারি ৷ আমাদের মহান ইচ্ছাগুলো সদা জয়ী হোক এবং আমরা যেন শুধুমাত্র মহান কর্মের আচরণ অন্বেষন করি । আমরা যেন একটি শক্তিশালী চক্রবর্ত্তী স্বাধীন রাজ্য স্থাপন করতে পারি এবং ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারি ৷ আমরা যেন দুর্নীতি, জালিয়াতি, বিশ্বাসঘাতকতার সমস্ত শক্তিকে যা আমার দেশকে পীড়িত করে, তাকে লড়াই করে দূর করে দিতে পারি ।



 ঋগ্বেদ ১/৩৯/২

আমরা যেন সদা শক্তিশালী হই ৷ আমাদের অস্ত্র, বন্দুক, কামান, গোলাবারুদ, ইত্যাদি যেন সবসময় প্রস্তুত এবং সঠিক স্থানে থাকে । আমাদের অস্ত্র এবং শক্তি যেন অশুভ শক্তিকে পরাজিত করতে সক্ষম হয় যারা নির্দোষ মানুষকে ক্ষতি করতে চায় ৷ আমাদের অস্ত্র ও শক্তি যেন তাদের সৈন্যশক্তিকে থামাতে পারে ৷ আমাদের অবিসংবাদিত শক্তি, বিক্রম ও সাহস আমাদের সহায়তা করুক একটি স্বাধীন, শক্তিশালী, কল্যাণকর ও এবং ন্যায়সঙ্গত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে যাতে দূর্নীতি, বিশ্বাসঘাতক, প্রতারনা ও অপরাধের শক্তিসমূহ আমাদের দ্বারা পরাজিত হতে থাকে । কিন্তু আমাদের এই প্রার্থনা আমাদের জন্য, শুধুমাত্র আমরা যখন সত্য, করুণা, ন্যায় এবং মহত্বের পথে থাকব ৷ যারা এমনটা (অর্থাৎ শক্তিমান হতে) আকাঙ্খা করে কিন্তু জালিয়াতি, বিশ্বাসঘাতক, অন্যায়কারী এবং অপরাধী, তারা সদা ঈশ্বরীয় অনুগ্রহের দ্বারা পরাজয়ের গ্লানী ভোগ করে । তাই, আমাদের উচিত শুধুমাত্র মহৎ কাজে নিয়োজিত হওয়া ।


যজুর্বেদ ৩৮/১৪

আমরা যেন শুধু ধর্মীয় কাজ করতে ইচ্ছুক হই ৷ ভাল স্বাস্থ্যকর খাবারের মাধ্যমে আমাদের শরীর যেন সদা শক্তিশালী ও বলশালী হয় । আমরা যেন নিরবচ্ছিন্নভাবে পরিশ্রম করে যেতে পারি ৷ আমরা যেন বেদ বুঝতে এবং আমাদের কল্যানের জন্য সেই বেদ জ্ঞানকে প্রয়োগ করতে পারি । আমাদের যেন ব্রাহ্মণগন (পণ্ডিতগন) থাকেন যারা আমাদের ভাল জ্ঞান প্রদান করতে পারে । আমাদের যেন সাহসী ক্ষত্রিয় (যোদ্ধাগন) থাকে যাতে আমরা একটি শক্তিশালী জাতি প্রতিষ্ঠা করতে পারি এবং আমাদের দেশের ভেতরে এবং বাইরে থাকা জালিয়াতি শক্তিকে ধ্বংস করতে পারি । আমাদের যেন বিশেষজ্ঞরা থাকেন যারা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং প্লেন, যানবাহন, উপযোগী গ্যাজেট, মেশিন ইত্যাদির বিকাশে সহায়তা করেন । আমরা যেন সদা শুধুমাত্র ন্যায়বিচারের পথে থাকি । আমরা যেন কোন জীবিত সত্তার সঙ্গে কোনরূপ শত্রুতা পোষন না করি । আমাদের যেন একটি শক্তিশালী দেশ, অসাধারন সম্পদ ও উন্নত চরিত্র থাকে ৷

আমরা যেন আমাদের সবকিছু ঈশ্বরের কাছে সমর্পণ করি, যিনি আমাদের মা, বাবা, বন্ধু এবং গুরু । আমাদের সমগ্র জীবন, আমাদের জীবনী শক্তি, আমাদের ইন্দ্রিয়াদি, আমাদের প্রচেষ্টা, আমাদের সুখ, আমাদের আত্মা, আমাদের আলোকায়ন এবং জ্ঞান, আমাদের কর্মের ফলাফল, আমাদের বলিদান, আমাদের প্রশংসা স্তুতিসমূহ, আমাদের আবেগ, আমাদের মহান অর্জন, সবকিছুই (ঈশ্বরের কাছে সমর্পণ করি)। যেহেতু, আমরা যা অধিকার করি ঈশ্বর তার সকলকিছুরই উৎস ৷ অন্য কথায় বলা যায়, যা কিছুই আমরা জীবনে ভাবি বা করি তার একমাত্র উদ্দেশ্য হলো ঈশ্বরকে অর্জন করা । এই পরম সমর্পণই আমাদের জীবনের মন্ত্র হওয়া উচিত !


যজুর্বেদ ১৮/২৯

আমরা যেন আমাদের শাসক হিসাবে একমাত্র তাঁকেই (ঈশ্বরকে) বিবেচনা করি এবং অন্য কোন বংশ, ব্যক্তি বা দলকে আমাদের শাসক হিসাবে গ্রহণ করতে অস্বীকার করি । আমরা যেন শুধুমাত্র তাঁর (ঈশ্বরের) সৃষ্ট বিধান অনুসরণ করি এবং মনুষ্য সৃষ্ট বিধানের অনুসরণ না করি যদি তা ঈশ্বরের বিধানের বিরুদ্ধে যায় ৷ আমরা যেন ঐক্যবদ্ধ একত্রিত হয়ে ঐসব শক্তিকে ব্যার্থ করে দেই যারা ঈশ্বরের পরিবর্তে তাদেরকে শাসক হিসেবে গ্রহণ করতে আমাদেরকে বাধ্য করে । অন্য কথায়, আমরা যেন সকলে একত্রিত হই, একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াই না করি এবং চিন্তা, শব্দ ও কর্মের মধ্যে কেবল সত্যের অনুসরণ করি ।

আসুন আমরা পরম ঈশ্বর কর্তৃক পরিচালিত হই এবং কোন এক ব্যক্তির বা অযোগ্য গোষ্ঠীর খেয়ালখুশি দ্বারা পরিচালিত না হই ৷



প্রশ্ন
ঈশ্বর উপাসনা কি?

উপাসনার অর্থ ঈশ্বরের নিকটবর্তী হওয়া । অন্য কথায়, উপাসনা বলতে ঈশ্বরকে ভালোভাবে বুঝতে চেষ্টা করাকে বোঝায় যাতে আমরা তাঁর নির্দেশ অনুযায়ী চিন্তা করতে, কাজ করতে এবং কথা বলতে পারি । এভাবেই, ঈশ্বরের নৈকট্য লাভের জন্য এবং সরাসরি প্রমাণের দ্বারা তাঁকে উপলব্ধি করতে আমাদের যে সমস্ত কার্যক্রমগুলি প্রয়োজন এগুলোই 'উপাসনা'এর অধীনে ।

যিনি অজ্ঞতার সব বীজ ধ্বংস করেছেন এবং উপাসনার মাধ্যমে ঈশ্বরের নিকটবর্তী হয়েছেন সেই ব্যাক্তি সুখ ও আনন্দের এমন একটি স্তরকে অনুধাবন করেন যেটা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না শুধুমাত্র নিজের মধ্যে অনুভূত হতে পারে ৷


প্রশ্ন
আমরা কিভাবে উপাসনা করতে পারি ?


উপাসনা একটি দীর্ঘ বিষয় এবং যোগ দর্শনের ভিত্তিতে গঠিত ৷ আমি এখানে খুব সংক্ষিপ্ত বিবরণ প্রদান করছি ৷

উপাসনার প্রথম ধাপে নিম্নলিখিতগুলি করা প্রয়োজন । মনে রাখবেন যে এটা অবশ্যক এবং উপাসনা পদ্ধতির পরবর্তী ধাপটি অর্থবহ হবে কেবলমাত্র তখনই যখন শিক্ষার্থী তার সেরা প্রচেষ্টাটা প্রথম ধাপে দেবে ৷ এর দুটি উপাদান রয়েছেঃ

যম

অহিংসা - কারো প্রতি ঘৃণা বা শত্রুতা না করা । শুধুমাত্র সমবেদনার অনুভূতি

সত্য - জ্ঞানের সর্বোচ্চ ব্যবহার করে সত্যকে গ্রহণ এবং মিথ্যাকে বর্জন ৷

অস্তেয় - (চুরি না করা) যা বৈধভাবে নিজের নয় তাকে বর্জন করা ।

ব্রহ্মচার্য (নৈতিকতা) - স্ব-নিয়ন্ত্রণ চর্চা করা, লম্পট না হওয়া, জ্ঞান এবং কাজ করার অঙ্গগুলিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা ।

অপরিগ্রহ (নম্রতা) - নম্র হওয়া এবং কোন মিথ্যা অহংবোধ না থাকা ।

নিয়ম

শৌচ (বিশুদ্ধতা) - মনের বিশুদ্ধতা এবং ভাল স্বাস্থ্যবিধির অনুশীলন ।

সন্তুোষ (সন্তুষ্টি) - ব্যার্থতা, সাফল্য, সন্মান বা অপমান ইত্যাদি বিবেচনা না করে অলসতা পরিহার করে আনন্দ ও উৎসাহের সহিত উত্তম কর্মের জন্য সেরা প্রচেষ্টা করা ৷

তপ (প্রচেষ্টা) - ঈশ্বরের পথে আনন্দ এবং ব্যথাকে উপেক্ষা করা এবং প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা।

স্বাধ্যায় (গভীর চিন্তা) - জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য ক্রমাগত প্রচেষ্টা, ভাল সঙ্গীর খোঁজ করা এবং ঈশ্বরকে উপলব্ধি করা এবং ওম শব্দের মানে, ইত্যাদি ৷

 ঈশ্বর প্রনিধান (ঈশ্বরের প্রতি সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ) - ঈশ্বরের পথে ইচ্ছাকে সমর্পণ করা ৷

এই মূল বিষয়গুলি বোঝার পর, আমরা প্রকৃতপক্ষে যোগের বিশাল আঙ্গিনায় প্রবেশ করার যোগ্য হব ।

এখানে উল্লেখ্য, এর মানে এই নয় যে আপনি এইগুলোর উপর দক্ষতা অর্জনের পরেই শুধুমাত্র পরবর্তী ধাপ শুরু করতে পারেন । যেহেতু এই পদক্ষেপগুলি সমগ্র উপাসনা প্রক্রিয়ার সারাংশ ধারণ করে । কিন্তু পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে, আপনাকে অন্ততপক্ষে, এই বিষয়গুলো বুঝতে হবে এবং সত্যিকারভাবে এই বিষয়গুলোর উপর কাজ করে যেতে হবে । আপনি ব্যর্থ হতে পারেন কিন্তু সবসময় আবার দৃঢ়সংকল্পের সাথে উঠে দাঁড়াতে হবে এই যম ও নিয়মে দক্ষ হওয়ার জন্য ।



প্রশ্ন
আমরা কিভাবে একটা উপাসনা পর্ব পরিচালনা করব ?


যখনই কেউ উপাসনা করতে চায়, তার উচিত

একটি অপেক্ষাকৃত নির্জন জায়গা খোঁজা

একটি শান্ত অবস্থানে বসা ৷

কিছু প্রাণায়াম অনুশীলন করা (মন নিয়ন্ত্রণ করার জন্য শ্বাস প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রন পদ্ধতি) ৷

(লক্ষ্য রাখুন, আনুলোম, বিলোম এবং কপালভাতি বর্তমান সময়ে জনপ্রিয় ৷ তারা শুধুমাত্র শারীরিক ব্যায়াম যা যোগব্যায়ামের সাথে কোন সম্পর্ক রাখে না ৷)

মানুষের মনকে জগতের চারপাশ থেকে একক কেন্দ্রে আনতে নাভীকুন্ড, গলা, চোখের কেন্দ্র, পিঠ, মাথা, পাঁজরের কেন্দ্র ইত্যাদির মত শরীরী কেন্দ্রীয় অংশের কোন শারীরিক অংশের দিকে (মনোযোগ) কেন্দ্রীভুত করুন ।

ঈশ্বর এবং তাঁর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক সম্বন্ধে চিন্তা শুরু করুন । ধীরে ধীরে ঈশ্বরের সঙ্গে একটি মানসিক সংযোগের দিকে চালিত হোন এবং তার প্রশান্তির মধ্যে মগ্ন হোন । বাকি বিশ্বকে যেতে দিন ৷ এমনকি যদি বিক্ষিপ্ত চিন্তাভাবনা আসে, আপনি স্রেফ উপেক্ষা করুন ঠিক যেভাবে সুন্দর সঙ্গীত উপভোগ করার সময় আপনি মশাকে উপেক্ষা করেন ৷

দুর্বলতা এবং পাপ চিন্তাধারা অপসারণ করতে সিদ্ধান্ত নিন এবং নিজেকে বিশুদ্ধ করতে এখনই সিদ্ধান্ত নিন ৷



প্রশ্ন
উপাসনার সুবিধা কি?

আমরা অধ্যায়ে শুরুতে কিছু বেনিফিট তালিকাভুক্ত করেছি । এখানে আরও কিছু আছেঃ

যে ব্যাক্তি উপাসনা অনুশীলন করে সে দ্রুত তার মনকে বিশুদ্ধ করে তোলে এবং সত্য ভিত্তিক করে তোলে । যেহেতু সত্যই হলো শান্তি, এইটি তাকে প্রস্তুত করে, তার জীবনকে উপভোগ করতে এবং অন্যান্য সমকক্ষ ব্যাক্তিদের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি উপভোগ করতে ৷

ধীরে ধীরে এই সত্য = সুখ এই তত্ব তাকে মোক্ষের পরম সুখের দিকে নিয়ে যায় যেখানে আর কোন দুঃখ নেই । এর চেয়ে অর্জনযোগ্য ভালো কোন অবস্থা নেই ৷ (অর্থাৎ এটিই সর্বোচ্চ আনন্দময় অবস্থা)

যে ব্যক্তি ২৪x৭x৩৬৫ (অর্থাৎ প্রতি মুহুর্তে) ঈশ্বরের প্রতি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকে, সে সর্বদা জীবনে আরো সুখ ও আনন্দের দিকে অগ্রসর হয় । সে, তার সমকক্ষ ব্যাক্তিদের মধ্যে যারা উপাসনা করে না তাদের তুলনায় হয়ে উঠে আরো সক্ষম, তৎপর, উদ্যমী এবং সফল ৷

সংক্ষেপে, উপাসনা একজন ব্যাক্তিকে পার্থিব ও আধ্যাত্মিক উভয় ক্ষেত্রে সবচেয়ে সফল করে তোলে ৷ সর্বোপরি, একমাত্র ঈশ্বরই সকল পার্থিব এবং আধ্যাত্মিক সুখের উৎস !

ঠিক যেমন ঠাণ্ডা শীতকালে একজন কম্পনরত ব্যক্তি আরাম বোধ করে, যখন তিনি আগুনের কাছাকাছি চলে আসেন, অনুরূপভাবে, ঈশ্বরের নিকটবর্তী হয়ে আত্মার সমস্ত পাপ নষ্ট হয়ে যায়, তাঁর প্রকৃতি, কর্ম এবং প্রবৃত্তিগুলি ঈশ্বরের সাথে সমন্বয় সাধন করে, এবং তাই তিনি পরম আনন্দ ও শুদ্ধতা অর্জন করেন ৷

ঈশ্বর এর উপাসনা ব্যাক্তির ইচ্ছাশক্তিকে এত দৃঢ় করবে যে সে ব্যাক্তিটি জীবনের এমন বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে সক্ষম হবে যেটা অন্যদের জন্য অসম্ভব মনে হতে পারে ৷ জীবনের সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হলে, ঐ ব্যক্তি তার শান্তভাব বজায় রাখতে সক্ষম হন এবং সফলভাবে এটি থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন । মানুষের জীবনে এর চেয়ে বড় আশ্চর্য অর্জন আর কি হতে পারে !

এ ছাড়াও, যারা ঈশ্বরকে পূজা করে না, তারা বোকা একইসাথে নির্লজ্জ অকৃতজ্ঞ । কারন কেউই সেই এককে (ঈশ্বরকে) উপেক্ষা করতে পারেনি, যিনি সমগ্র জগত সৃষ্টি করে আমাদের অত্যন্ত সুখ দিয়েছেন এবং আমাদের ধারন করে যাচ্ছেন ৷ শুধু ভাবুন, যারা তাদের নিজেদের অভিভাবকদেরকে প্রত্যাখ্যান করে এমন অকৃতজ্ঞ, স্বার্থপর এবং মূঢ় ব্যাক্তিকে কি শাস্তি আমাদের দেয়া উচিত ৷


Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)