দৈনিক বেদবাণী


এই সমগ্র সংসার নিরোগ এবং শুভচিন্তা যুক্ত হোক । যজুর্বেদ ১৬.৪                    সূর্য-এর আলোয় স্বয়ং আলোহীন চাঁদ আলোকিত হয় । ঋগ্বেদ ৫.৪০.৫                    প্রশংসনীয় সংস্কৃতি, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও মাতৃভূমি— এই ত্রয়ী সুখ-সমৃদ্ধি প্রদান করে। ঋগ্বেদ ১.১৩.৯                    উত্তম জীবন লাভের জন্য আমাদের জ্ঞানীদের সাহচর্যে চলা উচিৎ। ঋগ্বেদ ১.১২.১৬                    যে ব্যক্তি সম্পদ বা সুখ বা জ্ঞান নিঃস্বার্থভাবে দান করে, সে-ই প্রকৃত মিত্র। ঋগ্বেদ ২.৩০.৭                    মানুষ কর্ম দ্বারাই জগতে মহত্ত্ব ও প্রসিদ্ধি লাভ করে। ঋগ্বেদ ৩.৩৬.১                    হে পতি! তোমার স্ত্রীই গৃহ, স্ত্রীই সন্তানের আশ্রয়। ঋগ্বেদ ৩.৫৩.৪                    পরমাত্মার নিয়ম বিনষ্ট হয় না; তা অটুট, অচল ও অপরিবর্তনীয়। ঋগ্বেদ ৩.৫৪.১৮                    এই ধর্মের মার্গই সনাতন, এই পথে চলেই মানবগণ উন্নতি লাভ করে। ঋগ্বেদ ৪.১৮.১                    পরমাত্মার নিকট কোনো মানুষই বড় বা ছোট নয়। সকল মানুষই সমান এবং পরস্পরের ভ্রাতৃস্বরূপ। ঋগ্বেদ ৫.৬০.৫                    যে ব্যক্তি অকারণে অন্যের নিন্দা করে, সে নিজেও নিন্দার পাত্র হয়। ঋগ্বেদ ৫.২.৬                    নিশ্চিতরূপে এই চতুর্বেদ কল্যাণপ্রদায়িনী এবং মানবকে জ্ঞান প্রদান করে ধারণকারিণী। ঋগ্বেদ ৫.৪৭.৪                    বীর মানবের জন্য পর্বতও সুগম হয়ে যায়। ঋগ্বেদ ৬.২৪.৮                    আমরা অন্যের সঞ্চিত পাপের কর্মফল ভোগ করি না। ঋগ্বেদ ৬.৫১.৭                    হে মিত্রগণ! ওঠো— উদ্যমী হও, সাবধান হও এবং এই সংসাররূপী নদীকে অতিক্রম করো। ঋগ্বেদ ১০.৫৩.৮







গর্ভপাত উচিত নাকি অনুচিত ?

অমৃতস্য পুত্রা
0
গর্ভপাত অর্থাৎ প্রাণ-হত্যাকারী অধিকাংশ ব্যক্তি এই ভুল ধারণা পােষণ করে থাকেন যে, গর্ভাধানের তিন-চার মাস পরে গর্ভস্থ শিশুর প্রাণ সঞ্চার হয়, তার আগে এটি শুধুমাত্র এক মাংসের পিণ্ড, যাতে প্রাণ থাকে না। এটি শুধু আত্মপ্রবঞ্চনা এবং মিথ্যাচার ছাড়া কিছুই নয়। আগেই বলা হয়েছে যে প্রাণ ছাড়া বিকাশ লাভ করা অসম্ভব এবং গর্ভাধানের সময়েই পুরুষের শুক্রাণুর সঙ্গে স্ত্রীর ডিম্বের মিলন হয়ে একটি নতুন প্রাণের সূত্রপাত হয়। সেই সময়ই পুরুষের (ক্রোমােসোেম) গুণসূত্রের মিলন হতেই সেই নতুন জীবটির ব্যক্তিত্বের উচ্চতা, বৌদ্ধিক স্তর, ব্লাডগ্রুপ ইত্যাদি নিশ্চিত হয়ে যায়। মায়ের গর্ভে নয় মাস সময় সেই জীবটির শুধুমাত্র নিরন্তর বেড়ে ওঠা ও প্রগতির কাল।
বৈজ্ঞানিকদের মতে এই প্রগতি নিম্ন প্রকারে হয়।। |

প্রথম সপ্তাহ-সেলগুলি ভাগ হতে থাকে। একটি নতুন জীবন মায়ের গর্ভে নিজ স্থান নির্ধারণ করতে থাকে এবং একটি নতুন প্রাণ বিকশিত হতে থাকে।





দ্বিতীয় সপ্তাহ-মাতৃখাদ্য থেকে নতুন জীব পুষ্টি লাভ করতে থাকে।



তৃতীয় সপ্তাহ -এই সূক্ষ্ম প্রাণীটির চোখ, মস্তিষ্ক, স্পাইনাল করুণে(গর্ভস্থ শিশুর) বিকাশ-ক্ৰম নার্ভাস সিস্টেম, পেট, হৃদয়, শিরা ইত্যাদির নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। অষ্টাদশ দিন থেকে হৃৎস্পন্দন শুরু হয়।



চতুর্থ সপ্তাহ-মাথা তৈরী হয়। মেরুদণ্ড সম্পূর্ণ তৈরী হয়ে সুষুম্ন তৈরী হয়ে যায়। হাত-পা তৈরী হতে থাকে।

পঞ্চম সপ্তাহ-বুক ও পেট তৈরী হয়ে দুটি পরস্পর থেকে পৃথক হয়ে যায়। মাথা, চোখ, চোখের মণি এবং রেটিনা তৈরী হয়। কান এবং হাতপায়ের আদল এসে যায়।



ষষ্ঠ ও সপ্তম সপ্তাহ-বাচ্চার শরীরের সমস্ত অংশ, মাথা, দেহ, মুখ, জিভ ইত্যাদি তৈরী হয়ে যায়। মস্তিষ্ক সম্পূর্ণভাবে বিকাশ লাভ করে, মাথার তরঙ্গ পরিমাপ করা যায়। বাচ্চার লিঙ্গ নির্ধারণ করা সম্ভব হয়। শিশু তার শরীর ও হাত-পা নাড়াতে পারে, কাতুকুতু দিলে বাচ্চার প্রতিক্রিয়া হয়।
অষ্টম সপ্তাহ—শিশু স্পর্শ এবং ব্যথা অনুভব করে। মুঠো বন্ধ করতে পারে, কিছু ধরতে পারে, আঙুল চুষতে পারে। সাঁতার দেবার মত নড়ে, জেগে থাকা ও ঘুমানাের চেষ্টা করে। কোনাে বস্তু স্পর্শ করলে তার থেকে বাঁচার চেষ্টা করে, তার হৃদস্পন্দন আন্ট্রাসােনিক স্টেথিস্কোপে শােনা যায়। তার আঙুলের ছাপ এমন হয়, যা তার ৮০ বছর বয়সের ছাপের অনুরূপ।


একাদশ-দ্বাদশ সপ্তাহ-শরীরের সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গঠন সম্পূর্ণ হয়। সেগুলি কাজও করতে থাকে। শিরা ও মাংসপেশীতে সামঞ্জস্য হতে থাকে, আঙুলে নখােকাম হতে থাকে। এবার তার শুধু বৃদ্ধি পাবার সময়।

ভ্রূণের(গর্ভস্থ শিশুর) বিকাশ-ক্রম ষােড়শ সপ্তাহ-মা শিশুর নড়াচড়া অনুভব করতে পারে। বাচ্চার দৈর্ঘ্য এখন ৫ ইঞ্চি হয়। মায়ের পেটে স্টেথােস্কোপ দিলে গর্ভস্থ শিশুর হৃৎস্পন্দন শােনা যায়।
ষষ্ঠ মাসে শিশু ১১"-১২", সপ্তম মাসে ১৪", অষ্টম মাসে ১৫"১৬" এবং নবম মাসের শেষে ১৭"-১৮" লম্বা হয়ে যায় এবং শিশুটির ওজন ৬-৭ পাউণ্ড হয়ে যায়।


|


ডক্টর টমাস বাণী তার পুস্তক "The secret life of unbor child" এ লিখেছেন যে,

 পঞ্চম মাসের মধ্যভাগে মায়ের (abdomen) পেটের ওপর আলাে পড়লে শিশু হাত নেড়ে চোখ ঢাকা দেবার অবস্থায় এসে যায়। জোরে বাজনা বাজলে তার হাত কানের দিকে চলে যায়। চোখ ঘূর্ণিত হলে তার শয়ন-জাগরণ ও স্বপ্নবস্থার আন্দাজ পাওয়া যায় ।

১৯৯১-এর ফেব্রুয়ারীতে ‘গৃহশােভা' পত্রিকায় প্রকাশিত খবর অনুসারে ব্রিটিশ মনােবৈজ্ঞানিক পরিষদের মিঃ পিটার হপার কয়েক বৎসর গবেষণার পর আবিষ্কার করেন যে বারাে সপ্তাহ বয়স্ক ভ্রণ সঙ্গীত চিনতে সক্ষম হয়। সে শুধুমাত্র গর্ভেই সঙ্গীতের ধ্বনিতে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে না, সে পৃথক পৃথক ধ্বনি চিনতেও শিখে নেয়। তিনি বলেন, নবজাত শিশু যখনই তার পরিচিত সুর শুনতে পায় তখনই সে কান্না থামিয়ে চুপ করে যায়। নবজাত শিশু শুধু সেই সুরটিই চিনতে পারে, যা সে মাতৃগর্ভে থাকার সময় শুনেছিল। এই কথা মহাভারতে অভিমন্যুর মাতৃগর্ভে চক্রব্যুহ ভেদ করার শিক্ষা প্রাপ্ত করাকেই সত্য বলে অনুমােদন করে।
Shechenov Institute of Evolutionary Physiology & Biochemistry of Russia-র Infant Psychology-র চিকিৎসাশাস্ত্রের মত হল যে প্রকৃতি শিশুকে ছয় মাস গর্ভাবস্থাকালেই সবকিছু বােঝার যােগ্য করে দেয়। সে সমস্ত কিছু শুনতে ও দেখতে পায়, শোকা এবং স্বাদও অনুভব করতে পারে।উড়িষ্যা সরকার গর্ভবতী মায়েদের গর্ভস্থ শিশুদের গর্ভেই শিক্ষা প্রদান করার কার্যক্রম শুরু করছেন। এই প্রোগ্রাম National Institute of Habital Management, ভুবনেশ্বর দ্বারা আরম্ভ করা হয়েছে, যার মাধ্যমে গর্ভবতী মায়েদের চতুর্থ ও পঞ্চম মাসে শিক্ষা দেওয়া হয়। কেননা Dr. S. N. Pati-র বক্তব্য অনুসারে এই সময় জ্বণের মস্তিষ্ক এতাে বিকশিত হয়ে যায় যে "Psychosomatic reaction" দ্বারা, এবং শিশুর মধ্যে রক্ত সঞ্চালন দ্বারাই গর্ভস্থ শিশু মায়ের বিভিন্ন সঙ্কেত প্রাপ্ত করে নেয়।
সাধারণভাবে বলা যায় যে মা এবং গর্ভস্থ শিশুর মস্তিষ্কে এমন এক সামঞ্জস্য স্থাপিত হয় যে মায়ের মস্তিষ্ক যে সিদ্ধান্ত নেয়, সেই সিদ্ধান্ত তখনই শিশুর মস্তিষ্কে ছাপ ফেলে। উদাহরণস্বরূপ একটি মােটর বা স্কুটার চালিকা গর্ভবতী মা অজান্তেই তাঁর গর্ভস্থ শিশুকে সুরক্ষিতভাবে গাড়ি চালানাে শিখিয়ে দেন। | প্রায়শঃই দেখা যায় ডাক্তারের সন্তান ডাক্তার, সঙ্গীতজ্ঞের সন্তান সঙ্গীতজ্ঞ, ক্রিকেটারের সন্তান ক্রিকেটারই হয়। তার কারণ সন্তান গর্ভাবস্থাতেই তার মা-বাপের জ্ঞান ও রুচি দ্বারা শিক্ষালাভ করে এবং সময়মতাে গর্ভাবস্থায় প্রাপ্ত সেই জ্ঞান তাকে সেই বিষয়ে কুশলী করে তােলে। শাস্ত্রে একেই মা-বাপের থেকে প্রাপ্ত সংস্কার বলা হয়।
Williams obstetrics (17th edition 1985) এর লেখক বলেছেন C1, "Happily, we live and work in an era in which the foetus is established as our second patient with many rights and privileges comparable to those previously achieved only after birth." opeits বিজ্ঞানের প্রগতির ফলে জ্বণকে এখন মায়ের থেকে পৃথক এক রােগী বলে গণ্য করা হচ্ছে এবং গর্ভস্থ শিশুর কিছু কিছু রােগের কয়েকটি অপারেশন পর্যন্ত করা হচ্ছে।
শিশু হৃদরােগ বিশেষজ্ঞ শ্রীমতী ডক্টর অনল খলীলুল্লাহের কথা অনুসারে গর্ভাবস্থায় মাকে এক্সরে করালে প্রথম তিনমাস পর্যন্ত এক্সরের প্রভাব গর্ভের সন্তানের ওপর পড়তে পারে। তিনি ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনপ্রকার ঔষধ সেবনও নিষেধ করেছেন।

'বিশ্ববিখ্যাত পত্রিকা 'Lancet' গর্ভবতী মহিলাদের 'ultrasound' থেকেও সাবধান হতে বলেছেন। গর্ভবতীদের বারবার 'ultrasound' পরীক্ষা করালে প্রাণের বিকাশ বন্ধ হয়ে যায়। যেসব মহিলা গর্ভাবস্থায় পাঁচবার 'ultrasound' করিয়েছেন, তারা, এবং যাঁরা মাত্র একবার 'ultrasound' করেছেন, তাদের তুলনায় ২৫ গ্রাম কম ওজনের সন্তানের জন্ম দিয়েছেন।

গর্ভপাত করানােকে অধিকাংশ ব্যক্তি সাধারণত একটি ছােটখাট অপারেশন বলে মনে করে, যেন শরীরের থেকে সামান্য কোনও কিছু বাদ দেওয়া। এটি একেবারেই ভুল ধারণা। গর্ভপাত হল একটি জীবন্ত নির্দোষ শিশুর সুপরিকল্পিত নৃশংস হত্যা। গর্ভাধানের সঙ্গে সঙ্গেই গর্ভের মধ্যে জীবের অস্তিত্ব সুনিশ্চিত হয়ে যায় এবং মা যখন বুঝতে পারেন যে তিনি গর্ভবতী হয়েছেন, ততক্ষণে শিশুটির প্রায় সমস্ত অঙ্গই গর্ভের মধ্যে তৈরী হয়ে আসে, মস্তিষ্ক বিকশিত হয়ে যায়, হৃৎস্পন্দন শুরু হয় অর্থাৎ সে পূর্ণরূপে এক জীবিত প্রাণী।


নিজের জীবিত সন্তানকে অ্যাভরশনের মাধ্যমে হত্যা করার সিদ্ধান্তকারী মা-বাবা যদি জানতে পারেন যে এই ক্রিয়ার ফলে তাদের পূর্ণরূপে বিকশিত জীবন্ত সন্তানকে কি নির্মমভাবে, নির্দয়তার সঙ্গে কষ্ট দিয়ে হত্যা করা হয়, তবে তঁারা নিশ্চয়ই আর কখনও নিজেদের সন্তানকে এইভাবে হত্যা করাবেন না।অ্যাবােশ্মানের প্রধান পদ্ধতিগুলির নিম্নলিখিত রূপ—

 ১) (Suction Aspiration) চোষণ পদ্ধতি— এটি সর্বাধিক প্রচলিত। বিধি। এর দ্বারা গর্ভাশয়ের (womb} মুখ খুলে তার মধ্যে (Suction curette) একটি নল, যার মাথাটি ছুরির মত এবং নলটির সঙ্গে একটি পাম্প লাগানাে থাকে, সেটি পুরে দেওয়া এবং পাম্পটি জোরে চাপলে বাচ্চাটির শরীর টুকরাে টুকরাে হয়ে যায়। এটি ছুরির সাহায্যে বাচ্চার শরীরের বুক, পেট, মাথা ইত্যাদি কেটে টুকরাে টুকরাে হয়ে এমনভাবে টেনে ফেলে দেয় যেন সেগুলি ধুলাে ময়লা।


 ২) (Dilation and Evacuation) নিষ্কাসন পদ্ধতি—এই পদ্ধতি তিন থেকে নয় মাস পর্যন্ত বাচ্চাদের জন্য প্রয়ােগ করা হয়। এর দ্বারা গর্ভাশয়ের (Womb) মুখটি টেনে বড় করা হয় এবং বিশেষ প্রকার যন্ত্রের সাহায্যে বাচ্চাটির শরীর টুকরাে টুকরাে করা হয় এবং মাথাটি ভেঙে দেওয়া হয়। বাচ্চার শরীরের চূর্ণ-বিচূর্ণ মাথা, রক্তাক্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, ছােট্ট হৃদয়যন্ত্র প্রভৃতির টুকরােগুলি কঁচির সাহায্যে বার করা হয় এবং সেগুলি ধুলাে বালির মত ফেলে দেওয়া হয়।



৩) Dilatation and Curettage (D & C) বিধি—এটিও প্রথমটির মতই। এতে ছুরিটি তীক্ষ্ণ ধারওয়ালা লুপের মত হয় যেটি গর্ভাশয়ের বাচ্চাটিকে কেটে টুকরাে করে ফেলে। কাটা টুকরােগুলি একটি চামচের মত (cervix) জিনিসে করে গর্ভাশয় থেকে বার করে আনা হয়।
 ৪) তীক্ষ ক্ষারসম্পন্ন বিষ পদ্ধতি – একটি লম্বা মােটা সুঁচ গর্ভাশয়ে লাগিয়ে পিচকারীর দ্বারা নুনযুক্ত ক্ষারসম্পন্ন বিষ ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। সেইক্ষার চারদিক দিয়ে বাচ্চাটিকে ডুবিয়ে দেয়। ফলে বাচ্চাটি এর কিছুটা খেয়ে ফেলে এবং বিষ খাওয়া মানুষের মতাে গর্ভে ছটফট করতে থাকে, তার চামড়া কালাে হয়ে যায় এবং সে ক্রমশঃ নিস্তেজ হয়ে মরে যায়, 

তখন তাকে বার করে নেওয়া হয়।


গর্ভপাতের দ্বারা মায়েরও বিপদাশঙ্কা


গর্ভপাত বা ভ্ৰণ-হত্যা দ্বারা যেমন একদিকে নিরপরাধ গর্ভস্থ শিশুর নির্মম হত্যা হয় তেমনই অন্যদিকে গর্ভপাতকারী মায়ের ক্ষেত্রেও নানা জটিলতা, সমস্যা দেখা যায়। তারমধ্যে কিছু কিছু জটিলতা তৎকালিক প্রভাব ফেলে আর কিছু কিছু ধীরে ধীরে প্রকাশ পায়, যা পরবর্তীকালে মাকে শুধু বন্ধ্যাই করে তােলে না, তার জীবনও সঙ্কটাপন্ন হয়ে ওঠে।
তাৎক্ষণিক জটিলতাসমূহ
১) (Haemorrhage) হেমারেজ (রক্তস্রাব) – গর্ভপাতের কারণে রক্তক্ষয় হওয়ায় মায়ের বিপদাশঙ্কা থাকে এবং তার রক্ত নেওয়ার প্রয়ােজন হতে পারে।
২) (Infection) রােগ সংক্রমণ – গর্ভপাতের জন্য গর্ভস্থ শিশুর শরীরের টুকরাে-অংশ গর্ভাশয়ে থেকে গেলে অথবা অপারেশনকালে কোনও ত্রুটি থাকলে টুবল ইনফেকশন হতে পারে, যার ফলে সেই নারী বন্ধ্যা হয়ে যেতে পারে।
৩) (Damaged Cervix) গর্ভাশয়ের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া— গর্ভপাতের উদ্দেশ্যে যন্ত্রপাতি ব্যবহারের জন্য গর্ভাশয়ের মুখ খােলা হয়, ফলে সেই স্থানে আঘাত হলে ভবিষ্যতে স্বতঃই গর্ভপাত হওয়ার অথবা সময়ের আগেই শিশুর ভূমিষ্ঠ হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়।
৪) (Perforation of the Uterus) গর্ভাশয়ে ছিদ্র হওয়া গর্ভপাতের জন্য ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি (Curette) দ্বারা জরায়ুতে ছিদ্র হতে পারে এবং পরিণামে সেটি বের করে দিতে হয় ফলে নারীটি বন্ধ্যা হয়ে যায়।
| ৫) (Perforation of the Bowl) অন্ত্রতে ছিদ্র হওয়া—গর্ভপাতের জন্য ব্যবহৃত যন্ত্রের দ্বারা অন্ত্রে ছিদ্র হয়ে যেতে পারে।

দীর্ঘকালীন জটিলতাসমূহ

১) (Stillborn and Handicapped Babies) মৃত অথবা পঙ্গু শিশু – যেসব নারীর রক্ত RH—negative এবং যাদের গর্ভপাতের পর RHgam পাওয়া যায় না, তাদের ভাবী সন্তানদের ক্ষেত্রে এরূপ বিপদাশঙ্কা থেকে যায়।

২) (Miscarriages) গর্ভস্রাব—যেসব নারীর গর্ভপাত করানাে হয়, তাদের ক্ষেত্রে ৩৫% গর্ভস্রাব হবার আশঙ্কা বেশী থাকে, অর্থাৎ তাদের গর্ভাশয় সন্তান ধরে রাখতে অক্ষম হয়।

৩) (Impaired child-bearing ability) বিকৃত গর্ভক্ষমতা – গর্ভপাতের পরে পরবর্তী সন্তানের জন্মের সময় নানাপ্রকার জটিলতা উৎপন্ন হতে পারে।

৪) (Premature births) সময়ের আগে জন্ম – বারবার গর্ভপাত করালে সময়ের আগেই বাচ্চা জন্মাবার আশঙ্কা ২ থেকে ৩.৩ গুণ বৃদ্ধি পায়।
> Article-Sahu Shilendra Kumar Jain, Advocate.

৫) (Low birth weight) কম ওজনের শিশু জন্মানাে—গর্ভপাতের পরে পরবর্তী সন্তানের কম ওজনের আশঙ্কা ২ থেকে ২.২৫ গুণ বৃদ্ধি পায়।

৬) (Ectopic pregenancies) শিশুর ফেলাপিয়ন টিউবে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হওয়া – এতে মায়ের জীবনহানির আশঙ্কা থাকে, কারণ বাচ্চাটি গর্ভাশয়ের পরিবর্তে ফেলােপিয়ান টিউবে (Falliopian tube) বাড়তে থাকে। এইরূপ ঘটনা ক্রমশঃ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এক্ষেত্রে তখনই অপারেশন করানাের প্রয়ােজন হয়।
গর্ভপাত করাবার পর যেসব বিপদের আশঙ্কা থাকে সেই সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ বা বৈজ্ঞানিকদের অভিমত
শাকাহার ক্রান্তি—১৯৮৯ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বরে প্রকাশিত নিবন্ধ অনুসারে গর্ভহত্যা করানাের ফলে নারীগণ সারাজীবনে কষ্ট অনুভব করে। দেহ ব্যধি মন্দির হয়ে ওঠে। ঘরে কলহ ও ক্লেশ পরিপূর্ণ হয়। সমস্ত পরিবারটিই অশান্তি ও দুঃখের জ্বালায় জ্বলতে থাকে। | (১)গর্ভপাতকারিণীদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ এমন অসুস্থ হয়ে পড়ে যে তারা আর কখনও সন্তানের মা হতে পারে না (Toronto, Candian 1970 অনুসন্ধান অনুযায়ী)।
(২)প্রসবকালের বিপদের চেয়ে গর্ভপাতে দ্বিগুণ বিপদের সম্ভাবনা থাকে।
(৩জাপানের (Nagode Survey, 1968) অনুযায়ী গর্ভপাতকারী মহিলাদের মধ্যে ৩০% এর বেশী পরবর্তীকালে মানসিক ব্যাধির শিকার হয়। | ১৫ জুলাই, ১৯৯০-এর Hindustan Times-এ প্রকাশিত ঘটনা অনুযায়ী (Abortion related deaths increasing), বিশ্বে প্রতি বছর যে পাঁচ কোটি গর্ভপাত করানাে হয় তার প্রায় অর্ধেকই অবৈধ, যাতে প্রায় ২ লাখ নারী প্রতি বছরই মৃত্যুমুখে পতিত হয় এবং প্রায় ৬০ থেকে ৮০ লাখ সারা জীবনের জন্য ব্যাধিগ্রস্ত হয়ে পড়ে। ভারতেই আনুমানিক প্রায় ৫ লাখ মহিলা প্রতি বছর অবৈধ গর্ভপাতের থেকে উৎপন্ন সমস্যায় মৃত্যুবরণ করে।
সুতরাং গর্ভপাত করাতে মায়েদেরও বিপদাশঙ্কা কিছু কম নয়।

গর্ভস্থ শিশু-হত্যার চাক্ষুষ বিবরণ

১৯৮৪ সালে কনাস সিটি, মিসৌরীতে 'National rights to life convention' হয়েছিল। এই সম্মেলনের এক প্রতিনিধি Mrs. Sandy Ressal, Dr. Bernard Nathanson-এর দ্বারা একটি Suction Abortion-এ গর্ভপাতের উপর তৈরী Ultrasound movie-র যে বর্ণনা দিয়েছিলেন, তা তারই কথায় নিম্নরূপ
গর্ভস্থ শিশুটি ছিল মাত্র দশ সপ্তাহের এবং সে অত্যন্ত সুস্থ ছিল। আমি তাকে মাতৃগর্ভে খেলা করতে, এপাশ-ওপাশ করতে এবং আঙুল চুষতে দেখেছি, তার হৃদস্পন্দনও আমি শুনতে পাচ্ছিল্যাম, তখন তার নাড়ী সাধারণভাবে অর্থাৎ প্রতি মিনিটে ১২০ গতিতে চলছিল। সবকিছুই ঠিকঠাক ছিল। কিন্তু যেমনই সাকশন যন্ত্রটি গর্ভাশয়কে স্পর্শ করল, নিস্পাপ শিশুটি ভয়ে কুঁকড়ে গেল এবং তার হৃদস্পন্দনের গতি বেড়ে গেল। যদিও তখনও পর্যন্ত কোনও যন্ত্রই বাচ্চাটিকে স্পর্শ করেনি, তৎসত্ত্বেও সে অনুভব করেছিল যে কোনও বস্তু তার এই আরামপ্রদ, সুরক্ষিত ক্ষেত্রে আঘাত করার চেষ্টা করছে।
আমি হতভম্ব হয়ে দেখছিলাম যে এই যন্ত্রটি ঐ ছােট্ট নিস্পাপ ফুলের মতাে শিশুটিকে ছিন্ন-ভিন্ন করে দিচ্ছে। প্রথমে শিরদাঁড়া, তারপর পা ইত্যাদি এমনভাবে টুকরাে করা হচ্ছিল যেন সেটি কোনও জীবিত প্রাণীই নয়, গাজর বা মূলাে। আর সেই শিশুটি যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে বাঁচবার জন্য পালাবার চেষ্টা করছে। সে এতাে ভয় পেয়েছিলাে যে নারীর সম্পন্দন ২০০ তে উঠে গিয়েছিল। আমি নিজের চোখে তাকে পিছনে মাথা
হেলিয়ে এবং মুখ খুলে চিৎকার করার চেষ্টা করতে দেখেছিলাম, যাকে Dr. Nathanson যথার্থই silent Scream বা নীরব চিৎকার বলেছেন ; আমি নিজেই দেখেছি। শেষকালে আমি সেই নৃশংস বীভৎস দৃশ্যও দেখেছি যখন Forceps দিয়ে তার মাথাটি ভাঙ্গার জন্য খোঁজা হচ্ছিল, পরে খুঁজে পেয়ে সেটিকে চূর্ণ করে দেওয়া হয়, না হলে Suction tube দিয়ে সেই মাথাটি বার করা সম্ভব হােত না।
হত্যার এই বীভৎস খেলা শেষ করতে মাত্র ১৫ মিনিট সময় লেগেছিল। এই ভয়ঙ্কর দৃশ্যের পরিণাম এর বেশী কী হবে যে, যে ডাক্তার এই অ্যালবার্শান করিয়েছিলেন এবং কৌতূহলবশতঃ তার ফিল্ম তুলেছিলেন, তিনি স্বয়ং এই ফিল্মটি দেখার পর নিজের Clinic পরিত্যাগ করে চলে যান এবং আর কখনও ফিরে আসেননি।

• গর্ভস্থ শিশুর হত্যা এবং তার বেদনা প্রদর্শনকারী এই ফিল্মটি (Silcin Sercam) TASTICS T T Nesident Ronald Reagan দেখলেন, তখন তিনি এর দ্বারা এত প্রভাবিত হয়েছিলেন যে, প্রত্যেক আমেরিকান সংসদ সদস্যকে এই ছবিটি দেখতে অনুরােধ করেন। তিনি অ্যাবাের্শান আইনটি পরিবর্তন করার পক্ষপাতী ছিলেন।
• Mother Teresa বলেছেন যে গর্ভপাত হল গর্ভস্থ বাচ্চাকে হত্যা করা। তিনি বিশ্বের সরকারের কাছে abortion আইন রদ করার অনুরােধও করেছিলেন।
| Stonaway. New Delhi, 12.02.94-এ প্রচারিত সংবাদ অনুযায়ী Mother Teresa আমেরিকাতে ক্রমবর্ধমান হিংসার সঙ্গে জণ-হত্যার সম্পর্ক যােগ করেছিলেন। তিনি আমেরিকান President Clinton. VicePresident Gore, তাদের স্ত্রী এবং আরও তিন হাজার শ্রোতার সামনে তার ERICT 1601656 (1, "If we accept that a mother can kill even her own child, how can we tell other people not to kill each other? Any country that accepts abortion is not teaching its people to love, but to use any violence to get what they want." “যদি আমরা মেনে নিই যে একজন মা তার সন্তানকে হত্যা করতে পারেন তাহলে আমরা অপরকে কি করে বলব যে, তারা যেন পরস্পরকে হত্যা না করে। যে সব দেশ গর্ভপাতকে বৈধতা প্রদান করেছে, তারা তাদের প্রজাদের ভালােবাসার শিক্ষা না দিয়ে নিজ ইচ্ছাপূরণের জন্য হিংসার আশ্রয় নেবার শিক্ষা দিচ্ছে।
শুধুমাত্র আমেরিকাতেই প্রতি বৎসর ১৫ লক্ষ abortion হয়।
Hindustan Times, 02.09.94-এ প্রচারিত সংবাদ অনুযায়ী Mother Teresa কায়রােতে world Population Conference প্রারম্ভের আগের সন্ধ্যায় বলেছিলেন, "The greatest destroyer of peace today in the world is abortion. The only one who has the right to take life is the one who has created it. Nobody else has the right not the mother, not the father, not the doctor, no agencies, no conference, no Government." বর্তমানে বিশ্বশান্তি নষ্ট করার সব থেকে বড় কারণই হল গর্ভপাত। যিনি জীবন দান করেন, সেই প্রভুরই একমাত্র জীবন নেওয়ার অধিকার থাকে। তাছাড়া কারােরই, তা তিনি মা হন বা বাবা, ডাক্তার হন। অথবা কোনও সংস্থা বা সরকার, গর্ভপাতের দ্বারা জীবন নেওয়ার কোনওই
অধিকার নেই। | সান্ধ্য টাইমস, ৬.৯.৯ ৪-এ প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী কায়রােতে অনুষ্টিত বিশ্ব-সম্মেলনে বহু দেশই পরিবার-পরিকল্পনা-কার্যক্রমে গর্ভপাতে উৎসাহ প্রদানের বিরােধ করেছিলেন। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শ্ৰীমতী বেনজির ভুট্টো বলেছিলেন যে ইসলাম ধর্মে যতক্ষণ না মায়ের জীবনের কোনও গভীর সংশয় না দেখা যায়, ততক্ষণ গর্ভপাত করার অনুমতি দেওয়া হয় না।
৬.৯.৯৪-এর হিন্দুস্থান টাইমসে প্রকাশিত সংবাদ অনুসারে মহান 0911918 76011060 "Brutal formulas for population reduction" জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করার নৃশংস উপায় বলে অভিহিত করেছেন। তিনি গর্ভপাতেরও নিন্দা করেছেন।
| ২.৯.৯৪-এ হিন্দুস্তান টাইমসের সংবাদ অনুসারে Mother Teresa বলেছেন যে, যদি আপনার কোনও অবাঞ্ছিত সন্তান থাকে, যাকে আপনি প্রতিপালন করতে সক্ষম নন, তাহলে তা তাঁকে (মাদার টেরিজাকে) প্রদান করুন। তিনি কোনও শিশুকেই গ্রহণ করতে অপারগ নন। তিনি ঐ শিশুকে আদর করার মত বাবা-মা এবং ঘরের বন্দোবস্ত করে দেবেন।

( ক্রুণ হত্যা—আইনের দৃষ্টিতে )

প্রতিটি গর্ভপাতেই জীবহত্যা অনিবার্য, তাই ১৯৭১ সাল পর্যন্ত ভারতে গর্ভপাত করা বা করানাে দুই-ই আইনতঃ অপরাধ বলে মনে করা হত এবং | Indian Penal Code-এর ৩১২ B ধারা অনুসারে গর্ভপাতকারী এবং যারা করায় বা গর্ভপাতের জন্য যারা উৎসাহ দেয় তাদের তিন বছর থেকে যাবজ্জীবন কারাবাস পর্যন্ত শাস্তি দেওয়া হত।
ভারত সরকার ১৯৭১-এ একটি নতুন আইন (The Medical lermination of Pregnancy Act, 1971) তৈরী করে গর্ভপাত করা বা করানােকে প্রত্যক্ষ অথবা পরােক্ষরূপে একপ্রকার বৈধতা প্রদান করেন। ১৯৭১-এর নতুন আইন অনুসারে কোনও রেজিষ্টার্ড মেডিক্যাল প্র্যাক্টিশনারের বিচারে যদি
ক) গর্ভবতী মাতার গর্ভের জন্য জীবনের আশঙ্কা উৎপন্ন হয় বা তার শারীরিক, মানসিক (Grave injury) কোনও ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। | খ) গর্ভস্থ শিশুটির জন্মের পর তার বিকলাঙ্গ, পঙ্গু বা শারীরিক, মানসিকভাবে কোনও অস্বাভাবিক হবার ভয় থাকে।
তাহলে তিনি ১২ সপ্তাহ পর্যন্ত গর্ভস্থ শিশুটির অ্যাবাের্শান করালে অথবা দ্বিতীয় কোনও রেজিষ্টার্ড মেডিক্যাল প্র্যাক্টিশনারের সঙ্গে পরামর্শ করে একমত হলে ১২ সপ্তাহ থেকে ২০ সপ্তাহ পর্যন্ত গর্ভস্থ শিশুর গর্ভপাত করালে তাকে কোনও রূপ দোষী সাব্যস্ত করা যাবে না।
এই আইনে মানসিক স্বাস্থ্যের ‘Grave injury' ভীষণ ক্ষতির ব্যাখ্যা (Explanation) এইরূপ
১) যদি স্ত্রীলােকটি কোনও বলাৎকারের শিকার হওয়ায় গর্ভবতী হয়ে থাকে, তাহলে সেটিকে তার মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ভীষণ ক্ষতিকারক বলে মনে করা যাবে।
২) যদি সেই মহিলা এবং তার স্বামী পরিবার সীমিত রাখার জন্য নেওয়া গর্ভনিরােধের পরিকল্পনা অসফল হওয়ার জন্য অবাঞ্ছিত গর্ভধারণ। করে তাহলে সেটিও ঐ গর্ভবতী মহিলার মানসিক স্বাস্থ্যের বিশেষ হানিকারক বলে মনে করা যাবে। | এই দ্বিতীয় ব্যাখ্যায় ‘গর্ভ নিরােধের পরিকল্পনা অসফল হওয়ার জন্য গর্ভ ধারণ করায় – এতে প্রাণ হত্যা করা বা করানাের একপ্রকার স্বাধীনতা দেওয়া বা পুরােপুরি আইনি স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছে এবং আইন প্রণয়নকারীর উদ্দেশ্য এবং আইনের সেই ভাবনাকে যা উল্লিখিত Paragraph-এর (ক), (খ) এবং (১)-এ দেওয়া হয়েছে তারই ক্ষতি সাধন (Grave injury) করেছে। এর ফলে প্রাণ হত্যা দিনে রাতে দ্বিগুণ চতুর্গুণ করে বেড়ে যাচ্ছে এবং গর্ভপাত করানাে এক অতি উত্তম ব্যবসায়ে পরিণত হয়েছে। গর্ভপাত করানাে এবং অবাঞ্ছিত সন্তান থেকে সহজে মুক্তি পাওয়ার বিজ্ঞাপনও দেশের প্রতিটি জায়গায় দেখা যায়।
সরকারী রিপাের্ট (Reference—Annual India) অনুসারেই যেখানে ১৯৭৬-এ ২,০৬,৭১০ টি গর্ভপাত করা হয়েছিল সেখানে ১৯৮১ তে ১৮, ২১,০০ ৪টি গর্ভপাত করা হয়েছে।
২৫ মার্চ, ১৯৯৩-এর Hindustan Times-এ প্রকাশিত Report অনুসারে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রী শ্রী বি. শঙ্করানন্দ রাজ্যসভায় বলেছেন যে বিগত ৩ বৎসরে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সংস্থাগুলিতে আনুমানিক ১৮, ১০, ১০০ গর্ভপাত করানাে হয়েছে।
| (১ 'অবৈধ সংস্থা এবং নিজস্ব ক্লিনিকগুলিতে এর কতগুণ অধিক গর্ভপাত করানাে হয়েছে তার অনুমান নিজেরাই করুন। Dr. D. C. Jain ‘শাকাহার ক্রান্তিতে গর্ভপাতের বিভীষিকার ওপর আলােকপাত করে লিখেছেন যে সারা ভারতে প্রায় ৫১ লক্ষ ৪৭ হাজার গর্ভপাত প্রত্যেক বছর হচ্ছে এবং ক্রমশঃ তা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এইভাবে লক্ষ লক্ষ নিস্পাপ নির্দোষ শিশুকে গর্ভেই ছিন্ন-ভিন্ন করে হত্যা করা এক জঘন্য অপরাধ। বিশ্বের অনেক দেশেই খুনীদেরও ফাসি দেওয়া হয় না, কেননা কারও জীবন নেওয়ার অধিকার কারােরই নেই। আর গর্ভপাতের মতাে হত্যা তাে ফঁাসী থেকেও বেশী নিষ্ঠুরতা। ফাসীতে তাে তৎক্ষণাৎ মৃত্যু হয় আর গর্ভপাতে শিশু বহুক্ষণ ধরে ছটফট করতে করতে

ভ্রণের লিঙ্গ পরীক্ষা—আশীর্বাদের জায়গায় অভিশাপ হয়েছে

কেবল ভয়ঙ্কর অপরাধীকেই ফঁাসীর সাজা দেওয়া হয়, কিন্তু গর্ভপাতের শিকার হয় নিস্পাপ শিশুরা। এই নির্দোষ শিশুদের যদি কোনও আদালতে দাঁড়াবার বা তার পক্ষে কোনও উকিল দিয়ে মামলা করার অধিকার দেওয়া হত তাহলে এইসব শিশুদের হত্যাকারী মা, বাবা এবং গর্ভপাতকারী ডাক্তারদের বিশ্বের কোনও শক্তিই ফাসীর দড়ি থেকে বাঁচাতে পারত না।
পত্নীকে পুড়িয়ে মারা যদি অপরাধ হয়, অন্ধ-পঙ্গু-ক্যান্সার রােগপীড়িত - এড়স ব্যাধিগ্রস্ত বা বৃদ্ধাবস্থায় দুঃখী ব্যক্তি, যিনি শারীরিক ও মানসিক কবশতঃ মৃত কামনা করেন, এদের মা যদি অপরাধ হয়, তাহলে এক নিরপরাধ, পূর্ণ দীর্ঘায়ু হবার ক্ষমতাসম্পন্ন শিশুকে গর্ভেই হত্যা করা কি
অপরাধ নয় ? | অহিংসার পথ প্রদর্শনকারী গৌতম বুদ্ধ, ভগবান মহাবীর এবং অহিংসার পূজারী মহাত্মা গান্ধীর অনুগামীদের ও গর্বভরে নিজেদের অহিংসবাদী বলা ব্যক্তিদের এইভাবে নিরপরাধ শিশুদের গর্ভেই হত্যা করা বা করানাে কি শােভা পায় ? এটা কি তাদের পক্ষে লজ্জাজনক নয় ?
বিশ্বের বহু দেশের সরকারের এই জঘন্য অপরাধের প্রতি লক্ষ্য পড়েছে এবং তারা এমন এক আইন প্রণয়নের কথা চিন্তা করছেন, যাতে গর্ভবতী মায়ের যখন জীবন সংশয় হয় এবং তাঁকে বাচাবার আর কোনও উপায় থাকে না, একমাত্র তখনই অ্যাবাের্শান করা যেতে পারে।
এই আইন সমস্ত দেশেই যাতে অতি শীঘ্র প্রণয়ন করা হয় তার জন্য চেষ্টা করা সব মানুষেরই কর্তব্য।


Prenatal testing বা গর্ভজন্স পরীক্ষণ আরম্ভ করা হয়েছিল বংশানুক্রমিক বিকৃতি, বংশগত রােগ অথবা গুণসূত্রাদির দোষগুলি জানার জন্য। এটি এক বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার, এর দ্বারা এই পরীক্ষার মাধ্যমে ৭২ টি অসাধ্য এবং বংশগত রােগ নিরীক্ষণ করা সম্ভব ছিল এবং গর্ভস্থ শিশুর কোনও রােগ বা দোষ থাকলে অনেক আগে থেকেই তার চিকিৎসা করা সম্ভব হত। নিশ্চিতভাবে এটি এক আশীর্বাদ এবং প্রশংসনীয় প্রয়াস। কিন্তু এই পরীক্ষায় শিশুর লিঙ্গ জানা সম্ভব হওয়ায় এটি সহজেই আশীর্বাদ থেকে অভিশাপে পরিবর্তিত হয়ে যায়। | প্রথমে এই পরীক্ষা গর্ভস্থ শিশুর সম্পর্কে সমস্ত কিছু জানার ঔৎসুক্যকে রােধ করতে না পারায় করানাে হত। কিন্তু শীঘ্রই এই ঔৎসুক্য এবং মমত্বের স্থান গ্রহণ করে, মেয়েকে ছেলের থেকে হীন মনে করার দুর্ভাবনা এবং এই পরীক্ষা যে কুটিল, স্বার্থপর এবং বিদ্বেষের চিন্তা নিয়ে করানাে হতে থাকে তা হল—কি জানি গর্ভে ছেলের বদলে মেয়ে নেই তাে ? মেয়েকে ছেলের থেকে ভিন্ন বলে অথবা তাদের একপ্রকার ভার বলে মনে করা সমাজের এই মানসিকতায় কিছু স্বার্থপর ব্যক্তি তাদের ব্যবসা বাড়াবার মস্ত সুযােগ পেয়েছে এবং দেখতে দেখতে প্রায় সকল শহরেই এই ক্লিনিক ছেয়ে গেছে। এই সব স্থানে গর্ভ পরীক্ষা এবং গর্ভপাত দ্বারা জণ নষ্ট করার সুবিধা পাওয়া যায়। কিছু লােভী ব্যক্তি তাে গর্ভস্থ শিশুকন্যাকে হত্যা করাবার জন্য এরূপ বিজ্ঞাপন দিতেও সঙ্কোচ করে না যে‘কন্যাপণের সস্তা বিকল্প—গর্ভপাত।

এর পরিণামে লিঙ্গ পরীক্ষার পর হওয়া গর্ভপাতগুলির মধ্যে ৯৭% অর্থাৎ প্রায় সবই গর্ভস্থ কন্যাদেরই হত্যা করা হয়েছে। গর্ভস্থ সন্তান পুত্র হলে কোনও বাবা-মাই তাকে হত্যা করাতে চান না, তা তাদের আগে যত পুত্রই থাক না কেন। ৩০.৬.৯৪ এর নব ভারত টাইমসে প্রকাশিত এক বিবৃতি অনুযায়ী বিগত পাঁচ বছরে কন্যা প্রাণ হত্যা করার সংখ্যা ২০০% বৃদ্ধি পেয়েছে। এই অমানুষিক প্রবৃত্তিতে স্ত্রী-পুরুষের জনসংখ্যার মধ্যে এক গভীর পার্থক্য দেখা দিয়েছে। ১৯৮১ তে যেখানে প্রতি হাজার পুরুষে মহিলা সংখ্যা ছিল ৯৩৫, সেখানে ১৯৯১ তে তা কমে ৯২ ৯ হয়েছে। কোনও কোনও রাজ্যে এই অনুপাত ৮৮২ তে নেমে গেছে।
হিন্দুস্তান টাইমসের ২৬.৭.৯৪ তারিখে প্রকাশিত সংবাদ অনুসারে দেশে ক্ষীয়মাণ পুরুষ-স্ত্রীর অনুপাতের জন্য এখন প্রতি হাজার পুরুষে মহিলা সংখ্যা মাত্র ৯ ১০। এই প্রবৃত্তি যদি বন্ধ করা না যায় তাহলে এই অসমান লিঙ্গ অনুপাতে নানাপ্রকার সমস্যা যেমন বহুপতি প্রথা, বেশ্যাবৃত্তি ইত্যাদি
বৃদ্ধি পাবে। যার পরিণামে এক্স আদি রােগের মহামারী ছড়াবে।
এই পরীক্ষার ফলে ক্রমবর্ধমান অপব্যবহার বন্ধ করার জন্য মহারাষ্ট্র সরকার সর্বপ্রথম জ্বণের লিঙ্গ পরীক্ষা করার ওপর প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছেন। তার পরে অন্যান্য রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারও একটি
Prenatal Diagnostic Techniques', (Regulation and Prevention of Misuse) Bill প্রণয়ন করে প্রাণের লিঙ্গ পরীক্ষায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু কেবলমাত্র আইন প্রণয়নের দ্বারা কোনও খারাপ কাজ সম্পূর্ণভাবে দূর হয় না, কারণ স্বার্থপর ব্যক্তিরা আইন থেকে রক্ষা পাবার কোনও না কোনও রাস্তা খুঁজে বের করে নেয়। সুতরাং এই খারাপ কাজ বন্ধ করার জন্য মহিলা-সংগঠনগুলি, সরকার এবং বুদ্ধিজীবিদের একত্র হয়ে দেশব্যাপী অভিযান চালাতে হবে এবং জনতা আর বিশেষ করে মাতৃকুলকে জাগরিত করতে হবে এবং তাদের সেই বিকৃত রুচি এবং মান্যতা থেকে মুক্তি দিতে হবে যা কন্যা-প্রাণ হত্যার জন্য দায়ী।
এই পরীক্ষাতে যে লিঙ্গ পুরােপুরি জানা যায়, তা বলা যায় না এবং এই পরীক্ষার দ্বারা কিছু বিপদের আশঙ্কাও থাকে; যেমন জ্বণ এবং বীজাংডাসন (প্লেসেন্টা) অংশ নষ্ট হওয়া, অকালে আপনিই গর্ভপাত হওয়া বা সময়ের আগেই বাচ্চা প্রসবের আশঙ্কা। মুম্বাইয়ের শ্রীমতী নাথী বাঈ দামােদর ঠাকরসী ফার্মাসী কলেজের ডক্টর আর. পি. রবীন্দ্র বলেছেন যে এই পরীক্ষাতে কোমরের হাড় সরে যাওয়ার অথবা হাঁপানী হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ১৭.১২.৯৩ এর Delhi Mid day-র সংবাদ অনুসারে বারংবার আন্ট্রাসাউণ্ড করান্সে শিশুর ওজনে তার খারাপ প্রভাব পড়ে। Dr. Arti Malik 7699631, "No longer it is believed that Prenatal ultrasound is entirely harmless." | যাঁকে আকাশের থেকেও উচচ বলে মনে করা হয় সেই পিতা এবং যাঁকে সন্তানের প্রতি অগাধ মমত্বসম্পন্ন ও নিঃস্বার্থ ত্যাগের জন্য দেবতাদের থেকেও উচ্চে স্থান দেওয়া হয় সেই মাতা—তাঁদের নিজেদের গরিমা বজায় রাখার জন্য দৃঢ় সংকল্প করা উচিত যে কন্যা-সন্তানের হত্যায় প্ররােচিত করতে নিজেও জ্বণ হত্যা করব না এবং অপরকেও পরামর্শ দেব না। প্রত্যেক স্বামী-স্ত্রী যদি এরূপ সংকল্প করেন তাহলে বিশ্বের কোনও শক্তিই তাদে গর্ভস্থ কন্যা-সন্তানকে হত্যা করতে সক্ষম হবে না।

পুত্র-কন্যার মধ্যে পার্থক্য কেন ?

আগে যা বলা হয়েছে যে প্রাণের লিঙ্গ পরীক্ষা করার পরে যেসব গর্ভপাত ও প্রাণহত্যা করা হয়, সেগুলি প্রায় সবই কন্যার, পুত্রের নয়। তা কেন ? কন্যা কি কোনও নিষ্প্রাণ বস্তু যা হত্যা করলে হিংসা করা হয় না? কন্যা হওয়া কি অপরাধ, যাকে আইন হত্যা করার অনুমতি দিয়েছে ? কন্যা কি অনাবশ্যক বস্তু ? মেয়েদের মধ্যে কি ছেলেদের থেকে মানবিক গুণ, প্রতিভা এবং কার্যক্ষমতার অভাব থাকে ?

তা একেবারেই নয়। কার মধ্যেও মা সাপের ততটুকু জাংশই থাকে, যতটুকু থাকে পুত্রের মধ্যে। কন্যা-জ্বণে ততটা প্রাণই থাকে, যতটা থাকে পুত্র-জুণে। নিরপরাধ কন্যা বা নারী হত্যাকারীর তত সাজাই মেলে যতটা পায় পুত্র বা পুরুষ হত্যাকারী। নারী হল সৃষ্টির জননী, পুরুষের প্রেরণা। শক্তি। ইতিহাস সাক্ষী যে নারীরা শুধুমাত্র পুরুষের সমকক্ষই নয় বরং তার থেকেও শ্রেষ্ঠ বলে প্রমাণিত হয়েছে। অসুর বিনাশকারিণী মা দুর্গা, ত্যাগ ও তপস্যার মূর্তি সীতা, যমরাজকে পরাজিতকারিণী সতী সাবিত্রী, এঁরা সকলেই নারী। ঝাসির রাণী লক্ষ্মীবাঈ, মাদার টেরেসা, ইন্দিরা গান্ধী, লতা মঙ্গেশকর, এঁরা প্রমাণ করে দিয়েছেন যে সাহস কার্যক্ষমতা প্রতিভা ইত্যাদি কোনও ক্ষেত্রেই এঁরা পুরুষের থেকে কম নন। বংশের এবং বাপমায়ের নাম যতটা উজ্জ্বল নারী করতে পারে, পুরুষ ততটা পারে না। মহাকবি কালিদাস, সন্ত তুলসীদাস প্রমুখকে মহান সাহিত্যকার হওয়ার প্রেরণা কোনও নারীই প্রদান করেছিলেন। ইংরেজীতে একটি প্রবাদ আছে "There is a woman behind every successful man" (প্রত্যেক সফল পুরুষের পিছনেই একটি নারীর অবদান থাকে) এটি সমস্ত জগৎ মেনে থাকে। মনুস্মৃতিতেও বলা হয়েছে—
যত্র নার্য পূজ্যন্তে রমন্ত্রে তত্র দেবতাঃ। 
যত্রৈতাস্তু ন পূজ্যন্তে সর্বাত্ৰাফলাঃ ক্রিয়াঃ।। 
(মনুস্মৃতি ৩৫৬)
অর্থাৎ যেখানে নারীদের সম্মান করা হয় সেখানে সকল দেবতা বিরাজ করেন আর যেখানে নারীদের সম্মান প্রদর্শন করা হয় না সেখানকার সকল ক্রিয়াই নিস্ফল হয়।

পুত্র-কন্যার মধ্যে পার্থক্য কেন ? পুত্র-কন্যার মধ্যে পার্থক্য করা কোনও তথ্য বা তর্কের ওপর নির্ভর না করে শুধুমাত্র আমাদের নিজেদের স্বার্থ ও কুসংস্কারের তৈরী মিথ্যা ভুলের ওপর টিকে রয়েছে। এটি আমাদের দৈবী গুণের পরিবর্তে আসুরী গুণের পরিচায়ক। পুত্ৰ ৰংশের নাম উজ্জ্বল করবে, বৃদ্ধাবস্থায় সাহায্য করবে, কন্যা অন্যের জিনিস, তাকে বিবাহের সময় পণ দিতে হবে অর্থাৎ উপার্জিত অর্থের খরচ হবে আর পুত্রের বিবাহে পণ অর্থাৎ অনায়াসে অর্থ প্রাপ্তি হবে—এইপ্রকার মানসিকতায় স্বার্থপরতা ও ব্যবসায়িক বুদ্ধি নিহিত থাকে। বাৎসল্য, মমতা এবং সন্তানের প্রতি প্রেম-ভালবাসা এই ধরনের স্বার্থপর ব্যবসায়িক বুদ্ধির জন্য দূরীভূত হয় এবং সন্তানও এরূপ পরিবেশে প্রতিপালিত হলে স্বার্থপর হবেই। সেও যদি বড় হয়ে বৃদ্ধ বাবা-মাকে স্বার্থের দৃষ্টিতে দেখে, তাতে আর আশ্চর্য কি ? যেমন বীজ বপন করবে, তেমন ফসলই প্রাপ্ত হবে।
‘কাটা গাছ বপন করলে আম কোথায় পাবে ? এক নিশ্চিত সত্য হল এই যে, পুত্র ও কন্যা যে যার নিজ ভাগ্য নিয়ে জন্মায়। নিজের আশপাশে তাকালে এমন অনেক উদাহরণ দেখা যায় যে কোনও গরীবের মেয়ে রাণী হয়েছে এবং সে বিয়ের পর তার বাপ-মাভাইয়ের দারিদ্র্য দূর করেছে, আবার হয়তাে কোনও ধনীপুত্র সম্পত্তি উড়িয়ে কষ্ট পাচ্ছে।
আমরা যদি আমাদের আত্মীয়স্বজনদের দেখি, তবে দেখব যে অধিকাংশ মা-বাবা তাদের কন্যা এবং জামাতাতে যত সন্তুষ্ট পুত্র ও পুত্রবধূতে তত নয়। কন্যার বিবাহের পর জামাতাকে পুত্ররূপে পাওয়া যায় আর পুত্র বিবাহের পর পুত্রবধূর হয়ে পর হয়ে যায়। অনেক পরিবারে পুত্র মা-বাপের সঙ্গে থাকতেই চায় না আর যদি থাকেও প্রায়ই ঝগড়া বিবাদ হতে থাকে। বৃদ্ধ মা-বাবাকে দুঃখের সময় কন্যা-জামাত যেমন আন্তরিকতার সঙ্গে দেখাশােনা করে, পুত্র ও পুত্রবধূ তা করে না আর যদি করেও তা বেশীরভাগই আত্মীয়দের বদনাম থেকে বাঁচার জন্য, জগৎকে দেখানাের জন্য অথবা সমাজের ভয়ে। সুতরাং কন্যার থেকে পুত্র বৃদ্ধাবস্থায় বেশী সাহায্য করবে, তা ভাবা এক মৃগতৃষ্ণাই। পুত্র যদি বৃদ্ধাবস্থায় সাহায্য করবে তাহলে নিত্য-নতুন এত বৃদ্ধাশ্রম খােলার প্রয়ােজন হত না, তীর্থস্থানে দুবেলা খাবারের জন্য রাস্তায় ঘােরা-মহিলাদের ভীড় দেখা যেত না।

মাত্র দু-তিন পুরুষের পর্যন্ত নাম উজ্জ্বল করার কথাই যদি বলা হয় তাহলে পুত্র যদি বংশের নাম উজ্জ্বল করতে সক্ষম হয়, তবে তা কলঙ্কিত করতেও পারে পুত্রই। কারাের নাম উজ্জ্বল হয় তার নিজের কাজের জন্যই, পুত্র বা কন্যার জন্য নয়। আসল হল সদ্গুণ, তা যে পুত্র বা কন্যার মধ্যে থাকবে, সে-ই নাম উজ্জ্বল করবে। কন্যারা আজকাল সর্বক্ষেত্রেই পুত্রদের থেকে এগিয়ে নাম করছে। পরীক্ষার ফলতেও মেয়েদের সাফল্য ছেলেদের থেকে বেশী।
| তাই ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের হীন বলে মনে করা সর্বতােভাবে অনুচিত ও মিথ্যা প্রমমাত্র। মেয়েদের গর্ভেই হত্যা করা এমন এক দুষ্কর্ম এবং পাপ, তা যাঁরা করেন এবং করান, তারা ভয়ঙ্কর শাস্তি থেকে রক্ষা পাবেন না এবং জন্ম জন্মান্তর ধরে তাদের দুষ্কর্মের ফল ভুগতে হবে।
(সমীক্ষা
গর্ভপাত করানাের ফলে মহিলাদের উপর দৈহিক ও মানসিক প্রতিক্রিয়া জানার জন্য ভারতবর্ষের বিভিন্ন অঞ্চলে একটি সমীক্ষা করা হয়েছিল। সমীক্ষায় জানা যায় যে, প্রায় সব ক্ষেত্রেই গর্ভপাতকারী মহিলাগণ। নানানভাবে ব্যাধিগ্রস্থ হয়েছেন বিভিন্ন জটিল সমস্যা ও মানসিক রােগে ভুগছেন। এইসব ব্যাধির ফলে তাঁদের জীবন দুর্বিসহ তাে হয়েছেই উপরন্তু এইসব দুরারােগ্য রােগের ফলে তাদের সংসারে সুখ শান্তিও নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তাদের এই কষ্টকর জীবনের কথা ভেবে সকলকেই গর্ভপাতের বিষময় পরিণতির কথা ভেবে দেখা উচিত।



(সমীক্ষায় জানা যায় যে বিভিন্ন ব্যক্তিগত ও সামাজিক কারণে ভুক্তভােগী মহিলাগণ গর্ভপাতের কুপরিণাম জনসমক্ষে প্রকাশে ততটা আগ্রহী নন। ভুক্তভােগীর সম্পূর্ণ ঠিকানা এবং বিস্তারিত তথ্য যাঁরা জানতে ইচ্ছুক তারা এই ঠিকানায়
যােগাযােগ করতে পারেন—আনন্দভবন, রাণী বাজার, বিকানীর, রাজস্থান।)


১. শ্রীমতী সুনীতি দেবী বৈদ্য, শামলী
(ক) পায়ে ব্যথা,
(খ) চোখে কম দেখা,
(গ) মােটা হয়ে যাওয়া,
 (ঘ) রক্তচাপের অস্বাভাবিকতা,
(ঙ) কোমরে ব্যথা।

২. শ্রীমতী মায়া, রেনপাল ও অপারেশন করার তিন বছর পরে পাগল হয়ে গেছেন। তাদের সংসার ভেঙে গেছে।

৩. শ্রীমতী গীতা দেবী, কালান্দী, জয়পুর
(ক) কোমরে ব্যথা,
(খ) পায়ে ব্যথা, একজিমা
(গ) গর্ভাশয় বাদ দিতে হয়েছে,
 (ঘ) মােটা হয়ে যাওয়া, মাথা ঘােরা,
(ঙ) ডায়াবিটিস।


৪. শ্রীমতী রণজিৎ চৌর, হৃষীকেশ ও
(ক) কোমরে ব্যথা,
(খ) মাথা ঘােরা,
(গ) হাতে-পায়ে ব্যথা,
 (ঘ) গ্যাস,
(ঙ) অত্যধিক অস্থিরতা।

 ৫. শ্রীমতী মীনু সরাফ, কলকাতা 
(ক) মাসিকের গােলমাল,
(খ) কোমরে ব্যথা।

৬. শ্রীমতী চন্দ্রা শৰ্মা, কলকাতা :
(ক) গ্যাস,
 (খ) খাবার থলীতে ঘা,
 (গ) শিরদাঁড়ায় ব্যথা,
(ঘ) টি.বি.,
(ঙ) অত্যন্ত দুর্বলতা।।

৭. শ্রীমতী কমলাদেবী, গঙ্গাশহর, রাজস্থান
 (ক) গ্যাস,
(খ) বমি,
(গ) পায়ে ব্যথা।



৮. শ্রীমতী গীতাদেবী পারিখ, নাগৌর, রাজস্থান ও
(ক) লুকোরিয়া,
(খ) মাথা ব্যথা,
(গ) বুক ধড়ফড়,
(ঘ) হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়া।


 ৯. শ্রীমতী পূর্ণিমা দুবে, ইন্দ্রধর ও
 (ক) ঘুম না আসা,
(খ) নার্ভাসনেস,
(গ) স্বেত প্রদর,
(ঘ) কোমর ও বুকে ব্যথা।

১০. শ্রীমতী সুকলা দেবী শর্মা, বিকানীর ও
(ক) গ্যাস,
(খ) কোমরে ব্যথা,
(গ) প্রস্রাব করতে গেলে জ্বালা।

১১. শ্রীমতী কল্যাণী সিংহ, পালী :
(ক) সমস্ত শরীর ফুলে যাওয়া,
 (খ) অত্যধিক স্রাব এবং অনিয়মিত মাসিক ধর্ম।

১২. শ্ৰীমতী তেজোবাঈ শর্মা, জেলা হনুমানগড় ?
 (ক) গলার শিরায়, কোমরে ব্যথা, (
খ) পেটের নাড়িতে ব্যথা,
 (গ) গ্যাস,
(ঘ) লুকোরীয়া,
(ঙ) ২৪-২৫ ঘণ্টা পর্যন্ত অজ্ঞান অবস্থা।

১৩. শ্রীমতী মীনা দেবী যাদব, লুধিয়ানা
(ক) শরীরের আকৃতিতে পরিবর্তন,
(খ) মাথা ও বুকে ব্যথা,
(গ) মাথা ঘােরা,
(ঘ) কর্মক্ষমতার অবলুপ্তি,
(ঙ) রক্ত চলাচলে ব্যাঘাত।

১৪. শ্ৰীমতী ভগবতী দেবী পুরােহিত (আগরওয়াল), যােধপুর ।
(ক) পেটে টিউমার,
(খ) ডিপ্রেসন,
(গ) মাথা ও কোমরে ব্যথা,
(ঘ) অত্যধিক রক্ত স্রাব,
(ঙ) কাজ করতে অসমর্থ।

১৫. শ্ৰীমতী কমলেশ শর্মা, হরিয়ানা ও
(ক) কোমরে ব্যথা,
(খ) পেটের নালীতে ব্যথা,
(গ) স্বেত প্রদর,
(ঘ) চোখে কষ্ট,
(ঙ) অন্ধকার দেখা,
(চ) কাজ করতে অক্ষমতা।

১৬. শ্রীমতী ইন্দু কন্দোঈ, হিন্দমােটরঃ (৪টি মেয়ে হবার আবার গর্ভ সঞ্চার হলে মেয়ে জন্মাবে মনে করে ২৩ বার গর্ভপাত করিয়েছেন।)
(ক) কোমরে, পায়ে ব্যথা,
(খ) দুর্বলতা,
(গ) নিজে থেকেই গর্ভপাত— ছেলে,
 (ঘ) পরে ডাক্তার জানিয়েছেন আবার শিশু জন্মলে মায়ের মৃত্যু হবে, ফলে সন্তান বন্ধের অপারেশন করিয়েছেন।


১৭. শ্রীমতী সীতাদেবী, টালিগঞ্জ, কলকাতা
(ক) কোমরে ব্যথা,
(খ) পায়ে ব্যর্থ,
(গ) ১০-১২ বছর পরে গর্ভাশয় কেটে বাদ দেওয়া,
(ঘ) পেটে ক্যান্সার-টিউমার হয়েছে যা চিকিৎসার অসাধ্য।


১৮, শ্রীমতী বেনু সপরা, দিল্লী
(ক) শরীর ফুলে গেছে,
(খ) কোমর ও গায়ে ব্যথা,
 (গ) শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট,
(ঘ) অল্প পরিশ্রমেই ক্লান্তি,
(ঙ) জরায়ুর কাছে ব্যথা।


১৯. শ্ৰীমতী কমলা মালী, রাজলদের, রাজস্থান
(ক) অ্যাবাের্শান করার পর পেটে প্রায়ই জল ভরে যায়, নার্সিং হােমে গিয়ে জল বের করতে হয়,
(খ) অবিরাম অসুখে ভুগছে।।

২০. শ্ৰীমতী রত্নপ্রভা, ঔরঙ্গাবাদ, মহারাষ্ট্র ও
(ক) গর্ভপাত করাবার পর চোখের দৃষ্টি ক্ষীণ হওয়া,
(খ) কোমরে সর্বদাই ব্যথা।

২১. শ্ৰীমতী সুশীলা সিংহ
(ক) কোমরে ব্যথা,
 (খ) মাথা ঘােরা,
(গ) অত্যধিক রক্তস্রাব,

সমীক্ষা (ঘ) চোখের দৃষ্টিশক্তি কমে আসা। ২২.শ্রীমতী সুমিত্রা ধানুকা, ফতেপুর, রাজস্থান ও (ক) অ্যালাের্শানের পর সেলাইয়ের জায়গায় পুঁজ এবং সেখানে টিউমার হওয়া, (খ) ব্যথা, (গ) গ্যাস।

২৩. শ্রীমতী এম. সী, বিন্নানী, মাদ্রাজ ও তৃতীয় সন্তান জন্মাবার পর অপারেশন করানাের ফলে নিম্নলিখিত উপসর্গ দেখা দিয়েছে—
(ক) কাজ-কর্মে শিথিলতা,
(খ) সারা শরীরে ব্যথা,
(গ) প্রজনন ক্ষমতা লােপ হওয়ায় যন্ত্রণা, ফলে গর্ভাশয় বের করে দেওয়া। রােগের উপসর্গ ক্রমে বাড়ছে, এখন খুবই অনুতপ্ত যে বাচ্চা বন্ধ করার অপারেশন করে খুবই ভুল করেছি।

২৪. শ্ৰীমতী অনিতা, দিল্লী
(ক) চোখ খারাপ হওয়া,
(খ) কমজোরি,
 (গ) মাথায় টাক পড়া।


২৫. শ্রীমতী সুমিত্রা ধানুকা, ফতেপুর, রাজস্থান :
(ক) কপার টী লাগাবার পর থেকে গােলমাল বেড়েছে,
(খ) খুব কষ্ট ভােগ করছি।

২৬. শ্রীমতী হােটেলাল সারড়া ও ৪টি মেয়ের পর পুত্র সন্তান জন্মায় এবং জন্ম নিরােধের অপারেশন করাই। এক মাস পরে সেই পুত্র-সন্তান মারা যায়। পুনরায় অপারেশন ঠিক করাতে যাই। পরীক্ষা করে বলা হয় যে পুনরায় গর্ভধারণ সম্ভব নয়। এখন আমার চারটিই মেয়ে।

২৭. শ্রীমতী মঞ্জু মিশ্র, গােরক্ষপুর ও
(ক) কোমরে ব্যথা,
(খ) অত্যধিক সাদা স্রাব,
 (গ) মাথা ঘােরা,
(ঘ) দুর্বলতা,
(ঙ) মাঝে মাঝে অজ্ঞন হওয়া।

২৮. শ্রীমতী পূর্ণিমা দুবে, গােরক্ষপুর ও
(ক) ঘুম হয় না,
(খ) বুক ধড়ফড়,
(গ) সাদা স্রাব, (
ঘ) কোমরে, বুকে ব্যথা।


২৯. শ্রীমতী সুষমা শেঠ, পিতমপুরা, দিল্লী  দু’বছর আগে কপার-টী লাগানাের ফলে—
(ক) ১০-১২ দিন ধরে মাসিক ধর্মে অত্যধিক স্রাব হওয়া,
 (খ) গত ২-৩ মাসে ২০ দিন পর্যন্ত অত্যধিক রক্ত স্রাব হওয়ায় কপার-টী বার করে দেই। এখন মাসিক স্বাভাবিকের মত ২-৩ দিন হয় এবং ভাল আছি।


Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)