বর্তমান সমাজের বৈবাহিক প্রথা আলোচনায় যে দুইটি শব্দ স্বাভাবিকভাবেই আলোচনায় এসে যায় তা হল যৌতুক এবং দেনমোহর(যাকে হিন্দুশাস্ত্রে বলা হয় স্ত্রীশুল্ক) প্রথা।অন্যান্য ধর্মে এসব নিয়ে ধর্মগ্রন্থে কি বলা আছে তা নিয়ে বিস্তর আলোচনা হলেও আমাদের হিন্দু গুরুরা এ ধরনের জীবনমুখী আলোচনায় পারদর্শী নন।তাঁরা কেবল ভক্তি, কীর্তন নিয়ে আলোচনা করতে ব্যস্ত থাকেন এবং আপ্তবাক্যটি ভুলে যান; কেবল দিব্যজ্ঞান নয় কাণ্ডজ্ঞানও চাই।
ধর্ম শুধু আধ্যাত্মিক দর্শন এর ই উপায় নয়,সাধারণ জনমানসের জীবনযাপন প্রণালীরও মূল দিকনির্দেশক বটে।আর মানবজীবনে
বিবাহ নামক যে পবিত্র সামাজিক বন্ধনটি মানবসমাজের ভিত্তিকাঠামোরূপে দায়িত্ব পালন করে আসছে দিনের পর দিন সেই শুদ্ধ অনুষ্ঠানটি সুদীর্ঘকাল ধরে বইছে যৌতুক নামক কলঙ্কের এক পাপভার।মানব চরিত্রের যত নিম্নধরনের অবনমন সম্ভব তার মধ্যে যৌতুক বোধহয় নিকৃষ্টতম।
বছরের পর বছর প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের মৌলবাদীত্বের,ধর্মান্ধতার দিকে এগিয়ে চলার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হল শিক্ষাব্যবস্থায় পাঠ্যপুস্তক এর সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ।আমাদের মৌলবাদী শিক্ষাব্যাবস্থার সুবাদে শিক্ষার্থীরা বখতিয়ার খিলজির ১৭ জন সৈন্য নিয়ে বাংলা জয়ের কাল্পনিক কাহিনী জানলেও জানতে পারেনা যে এই ধর্মান্ধ জঙ্গী সেনাপতি ই বাংলা জয় করতে হিন্দু-বৌদ্ধদের প্রতি ঘৃণাস্বরুপ ধংস করে দিয়েছিল পৃথিবীর প্রাচীনতম আবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,মানব সভ্যতার গৌরব প্রখ্যাত নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়।
সুতরাং স্বাভাবিকভাবেই ভয়াবহ পক্ষপাতমূলক মিথ্যাচারে ভরা পাঠ্যক্রমে ছোটবেলাতেই আমাদের পড়তে হয় যে যৌতুক প্রথা নাকি হিন্দুদের সৃষ্ট!তাদের উদ্দেশ্য একটাই আর তা হল অঙ্কুর থেকেই কোমলমতি হিন্দু শিশুদের নিজ ধর্ম ও সমাজ সম্বন্ধে নেতিবাচক ধারনা দিয়ে সংখ্যালঘু নির্মূলীকরণ করা।কিন্তু প্রশ্ন হল আমাদের দেশে অন্যান্য ধর্মালম্বীরা তাহলে যৌতুক নেন কেন?তাদের উত্তরটা হয় এটা হিন্দুদের থেকে দেখে দেখে তারা শিখেছেন!কিন্তু কই,তারা হিন্দুদের থেকে দেখে দেখে ধর্মীয় সহনশীলতা তো শিখতে পারেন নি!তাহলে তো ২৪ দিনে ৩১৯ টি মন্দিরে হামলার মত সংবাদ দেশবাসীকে পড়তে হতনা!আমাদের দেশের ইতিহাসে হিন্দুদের কাছ থেকে সংখ্যাগুরু জনগোষ্ঠী কোন শিক্ষা আজ পর্যন্ত নিয়েছেন বলে প্রতীয়মান হয়না,তাহলে প্রিয় বাংলা অন্তত আফগান হবার দিকে এগোতনা!তো তারাই আবার আমাদের কাছ থেকে যৌতুক নেয়া শিখেছেন,ব্যাপারটা একটু ইশপের গল্পের মত হয়ে গেলনা?
আপনাদের একটি চমকপ্রদ তবে স্বাভাবিক তথ্য জানিয়ে রাখা দরকার।আপনারা কি জানেন যে যৌতুক এর জন্য নির্যাতনে সবচেয়ে বেশী নারী মৃত্যু হয় কোনদেশে?দেশটির নাম পাকিস্তান,যেখানে প্রতি বছর যৌতুক এর কারনে নির্যাতিত হয়ে ৩০০০ এর ও বেশী নারী মারা যান।পাকিস্তানের ৮৪ শতাংশ মানুষ ই বিশ্বাস করেন যে যৌতুক ছাড়া নারীর বিয়ে অসম্ভব আর দেশটির ৯৫ শতাংশ বিয়েতেই যৌতুক আদান-প্রদান করা হয়!বিখ্যাত ইসলামিক লেখক A.S Bazmee Ansari তার “হামদর্দ ইসলামিকাস” গ্রন্থে বলেছেন পাকিস্তানে মুসলিমরা যৌতুক কে সুন্নাহ বা পুণ্যকর্ম মনে করেন!বাংলাদেশ পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন সংস্থার কাছে আমার প্রশ্ন,মুসলিম অধ্যুষিত দেশটিতেও কি হিন্দুরা চুপি চুপি গিয়ে তাদের যৌতুক নেয়া শিখিয়ে দিয়ে এসেছিল?
আজ আমরা দেখব হিন্দুশাস্ত্রসমূহ যৌতুক নিয়ে কি বলে।
অশ্লীল তনুর্ভবতি রুশতী পাপয়ামুয়া।
পতির্যদদ্ভোঃ বাসসঃ সমঙ্গমভ্যুর্ণূতে।।
অথর্ববেদ ১৪.১.২৭
অনুবাদ-যে নববিবাহিত পতি স্ত্রীর পোশাক/সম্পত্তি/অর্থ ব্যবহার করতে চান, গ্রহন করতে চান তিনি অপবিত্র,পাপী বলে গণিত হন(তার এহেন কাজ অশ্লীল,পাপযুক্ত বলে মনে করা হয়)
মনুসংহিতা ৩.৫২ বলছে-
স্ত্রীধনানি তু যে মোহাদুপজীবন্তি বান্ধবাঃ।
নারীযানানি বস্ত্রং বা তে পাপা যান্ত্যধোগতিম্।।
অর্থাৎ কন্যার পতি বা শ্বশুরবাড়ির লোক কন্যার সম্পত্তি,বিবাহের সময় প্রাপ্ত স্ত্রীধন পেতে চাইলে, ভোগ করতে চাইলে সেই পাপাচারীগণ অধোগতি লাভ করেন।এই শ্লোকে স্পষ্ট করে দেয়া হয়েছে কোনভাবেই বরপক্ষ যৌতুক গ্রহণ করতে পারবেনা।পিতা মাতা থেকে কন্যা যে সম্পত্তি উপহার পাবে তা একান্তই তার নিজস্ব।
আর দেনমোহর তথা স্ত্রীশুল্ক এর ব্যাপারে বলা হয়েছে-
ন কন্যায়াঃ পিতা বিদ্বান গৃহ্নীয়াচ্ছুল্কমন্বপি।
গৃহ্নন শুল্কং হি লোভেন স্যান্নরোহপত্যবিক্রয়ী।।
( মনু ৩।৫১)
অর্থাৎ কন্যার পিতা বুদ্ধিসম্পন্ন বা বিদ্বান হলে বরের কাছ থেকে অতি অল্পপরিমাণ কন্যা শুল্কও গ্রহন করবেন না কারন এটি অপত্য বিক্রয় বা সন্তান বিক্রয়ের সমতুল্য।
যেহেতু ঋগ্বেদ স্পষ্ট বলে দিয়েছি সঠিক বিদ্যাশিক্ষা সম্পন্ন করার পরেই একজন স্বনির্ভর,সুশিক্ষিত কন্যা সন্তানের বিয়ে দেয়া যাবে তাই সেরকম একজন নারী কোন অসহায় বা পরনির্ভরশীল কেউ নয় যে তার নিরাপত্তার জন্য কন্যাশুল্ক দিতে হবে।এটি বিয়েকে একটি আর্থিক লেনদেন এ পরিণত করে এবং নারীকে বেচাকেনার পণ্যে পরিণত করে।
প্রখ্যাত গ্রীক ঐতিহাসিক আরিয়েন খ্রিষ্টপূর্ব ৩য় শতাব্দীতে তাঁর দ্যা ইনভ্যাসন অব আলেক্সান্ডার ইন ইণ্ডিয়া গ্রন্থে ভারত ভ্রমণ প্রসঙ্গে লিখেছেন-
"ভারতের বিয়েতে ছেলেপক্ষ যৌতুক নেবার কোন চল ছিলনা,তারা শুধু দেখত মেয়ে সুন্দরী এবং ব্যাক্তিত্বসম্পন্ন কিনা।"
প্রখ্যাত পর্যটক আল-বিরুনি ১০১৭ খ্রিষ্টাব্দে ভারতবর্ষের বিবাহ রীতি নিয়েতাঁর ইন্ডিকা গ্রন্থে লিখেন-
"বিয়ের উৎসবে অনেক আনন্দ হয়।কোন ধরনের যৌতুক এর প্রচলন নেই।বর কনেকে বিয়ের সময় উপযুক্ত কোন উপহার প্রদান করেন যেটা ফেরত নেয়ার কোন অধিকার তার থাকেনা।" তিনি এ কথাও ব্যাক্ত করেন যে কন্যাদেরকে তাদের পৈতৃক সম্পত্তির যে ভাগ তা বিয়ের সময়েই কন্যাকে দিয়ে দেয়া হতো।
জার্মান-আমেরিকান ভাষাবিদ মাইকেল উইটজেলও একই মত প্রকাশ করেছেন যে বৈদিক যুগে যৌতুক প্রথার চল ছিলনা বললেই চলে।কেইন এবং লচফেলড ও সমমত প্রকাশ করে বলেছেন যে সেই সময় বরের পক্ষ থেকে কোন ধরনের অর্থ দাবী করা হতনা এবং মনুস্মৃতিতেই তার প্রমান পাওয়া যায়।
কেইন এও উল্লেখ করেন যে ধরনের বিয়েতে যৌতুক দেয়া হত তা অসুর বিবাহ নামে পরিচিত হত এবং তাকে ঘৃণ্য দৃষ্টিতে দেখা হত।
উত্তরাধিকার সূত্রে পবিত্র বেদ কি বলছে তা বর্তমানে বিশেষ করে বাংলাদেশের সমাজে একটি বহুল চর্চিত প্রশ্ন।
নিরুক্তের ৩য় অধ্যায়ের ৪র্থ খণ্ডের প্রথমে বলেছে, "কন্যা পুত্রের ভাব অর্থাৎ কন্যা পুত্র হয়ে থাকে।"
শেষে বলা হয়েছে, "বিনা ভেদে পুরুষ ও স্ত্রী দুই প্রকার পুত্রেরই সমান দায়ভাগ রয়েছে। এই বিষয়কে সিদ্ধ করতে এই ঋচা বা শ্লোকে বলা হয়েছে, হে পুত্র, তুমি অঙ্গ থেকে উৎপন্ন, হৃদয় থেকে প্রকট। এজন্য তুমি আমার স্বরূপ, কেবল পুত্র নাম রয়েছে। এজন্য পুরুষ ও স্ত্রী পুত্রের কোন প্রকার ভেদ বিহীনভাবে ধর্মানুসারে দায় ভাগ রয়েছে, এটি সৃষ্টির আদিতে স্বয়ম্ভু মনু বলেছেন।"
ঋগ্বেদ ৩.৩১.২ দেখলে আমরা দেখি পিতামাতার স্নেহে অধিকার পুত্র এবং কন্যা সন্তানের উভয়ের ই সমান এবং তারা উভয়েই সমান দামী। বিয়ে হলেই মেয়ে তার পিতা মাতার বাড়ি হতে আলাদা হয়ে যায় না,তাকে আলাদা করে ধন নয় বরং শিক্ষা ও সম্পদে পরিপূর্ণভাবে তৈরী করে তাকে প্রেরণ করা হয়-
৩১ নং সুক্তের ২ নং মন্ত্রে বলা হচ্ছে-
ন জাময়ে তান্বো রিক্থমারেক চকার গর্ভ সনিতুর্নিধানম্।
যহো মানরো জনযত্ন বহিমন্যঃ কর্তা সুকৃতীরন্য ঋন্ধন্।।
অর্থাৎ আলাদা করে কন্যার বর বা জামাতাকে সুক্ষ্ম ধন দেয়া নয় বরং সেই কন্যা যেন চকার গর্ভ সনিতুঃ নিধানম বা সন্তান জন্ম দেয়া এবং তাকে যাতে পূর্ণরূপে মানুষ করে গড়ে তুলতে পারে সেই শিক্ষায় আলোকিত করে দিতে হয়।
যহো মাতরোঃ (যখন পিতামাতার) বহ্নি জনযত্ন(উজ্জ্বল পুত্র কন্যার জন্ম হয়) তখন অন্য(একজন অর্থাৎ পুত্র) হয় কর্তা সুকৃতী( পরিবারের সুকৃতির কর্তা) আর অন্য ঋন্ধন(আর অন্যজন অর্থাৎ কন্যা হয় পরিবারের অলংকারের ন্যায়)।
এজন্যেই পবিত্র বেদকে বলা হয় মানবজাতির সংবিধান, একজন হিন্দু ধর্মালম্বী যত শাস্ত্র ই পড়ুক না কেন যতক্ষণ পর্যন্ত সে বেদ পড়বে না ততক্ষন পর্যন্ত সে নিজের জীবনবিধি জানতে পারবেনা।তাই বেদব্যাতীত সকল শাস্ত্র পাঠ ই বৃথা হয়ে যায়।
তাহলে আমরা আমাদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ,আমাদের জীবনবিধি পবিত্র বেদে ঐশ্বরিক নির্দেশনা পাচ্ছি যে মাতাপিতার জন্য কন্যা ও পুত্র উভয় সন্তান ই সমান দামী এবং বিয়ের সময় কন্যাকে সুশিক্ষা ও মাতাপিতার স্নেহ অধিকার কোনটা থেকেই বঞ্চিত করা যাবে না,তবে সম্পত্তি কন্যা কী উপায়ে পাবে তা পেতে আমাদের যেতে হবে স্মৃতিশাস্ত্রে।
মনুসংহিতা ৯.১৩০ বলছে-
যথৈবাত্মা তথা পুত্রঃ পুত্রেণ দুহিতা সমা।
তস্যামাত্মনি তিষ্ঠন্ত্যাং কথমন্যো ধনং হরেৎ।।
অর্থাৎ পুত্র এবং কন্যা হল নিজ আত্মার সমতুল্য,তারা দুইজনেই সমান(পিতামাতার কাছে),তাই সে পুত্র কন্যা থাকতে কি করে অন্য কোন ব্যাক্তি পৈতৃক ধন নিয়ে নেবে?
এখন আমরা কিছুটা বাস্তবিক প্রয়োগ এর দিকে যাব,কিভাবে হিন্দু সমাজে স্মৃতি শাস্ত্রকারগণ কন্যাকে সম্পত্তি দেবার উপায় বলে গেছেন যাতে বিয়ের পর কন্যা ও জামাতার সাথে কোন ধরনের সম্মুখ মোকাবেলা ছাড়া ই এই সম্পত্তি কন্যার হস্তগত হয় এবং কোনভাবেই যাতে জামাতা শুধু সম্পত্তির লোভে কন্যাকে অত্যাচার করতে না পারে, কন্যার সম্পত্তিকে ভোগ করতে না পারে।
আর এই উপায়কে বলা হয় স্ত্রীধন।এখন আমরা দেখব স্ত্রীধন আসলে কী।
আদদীত ন শুদ্রোহপি শুল্কং দুহিতরং দদৎ।
শুল্কং হি গৃহ্নন কুরুতে ছন্নং দুহিতৃবিক্রয়ম।।
(মনু ২।৯৮)
অর্থাৎ কন্যা বিবাহকালে একদম নিকৃষ্ট ব্যাক্তিও যাতে শুল্ক(দেনমোহর) গ্রহন না করে কারন যে কন্যাশুল্ক আদায় করে সে বস্তুতঃ প্রচ্ছন্নভাবে কন্যা ই বিক্রয় করে।
স্ত্রীধন হল বিয়ের সময় কন্যা বিভিন্ন উৎস থেকে যে ধন প্রাপ্ত হয়, তা কি কি?
অধগ্নধ্যাবাহনিকং দত্তঞ্চ প্রীতিকর্মণি।
ভ্রাতৃমাতৃপিতৃপ্রাপ্তং ষড়বিধং স্ত্রীধন স্মৃতম।।
(মনু ২.১৯৪)
অর্থাৎ স্মৃতি অনুযায়ী ৬ ভাবে কন্যা স্ত্রীধন প্রাপ্ত হয়, অধ্যাগ্নি, অধ্যাবাহনিক, প্রীতিদত্ত,পিতৃ, মাতৃ, ভ্রাতৃ কর্তৃক যা দেয়া হয়।
এর মধ্যে অধ্যাগ্নি হল সেই অংশ যা বিয়ের সময় পিতা বা ভ্রাতা সম্পত্তির অংশ হিসেবে এর সমমানের কোন উপহার মেয়েকে দিয়ে দেন।
এটা ই ছিল হিন্দু সমাজে মেয়েকে উত্তরাধিকার সম্পত্তি দেবার একটা সুন্দর সামাজিক রীতি।বিয়ের পর অন্যান্য সমাজের মত জামাই এর বারবার শ্বশুর বাড়ি গিয়ে সম্পত্তির জন্য ঝগড়া মারামারি নয় বরং বিয়ের সময় স্ত্রীধন হিসেবে অথবা বিয়ের পর পিতা,মাতা,ভ্রাতা কর্তৃক উপহার হিসেবে পরোক্ষভাবে কন্যাকে পৈতৃক সম্পত্তির অধিকার দেয়া ই ছিল হিন্দু সমাজের রীতি।
রামায়ণের আদি পর্বে দেখা যায় রাজা জনক মাতা সীতাকে বিয়ের সময় পৈতৃক উত্তরাধিকার হিসেবে স্ত্রীধন দিচ্ছেন-
হিরণ্ময় সুবর্ণস্য মুক্তানাম বিদ্রুমস্য চ।
দদৌ রাজা সুসংহৃষ্ট কন্যা ধনম অনুত্তমম।।
(বাল্মীকি রামায়ণ আদিপর্ব ১.৭৪.৫,৬)
অর্থাৎ রাজা জনক হৃষ্টচিত্তে কন্যাকে স্বর্ণ,রৌপ্য, মুক্তা,কোরালখচিত আদর্শ কন্যা ধন(স্ত্রীধন) প্রদান করলেন।
এবং পূর্বেই মনুস্মৃতির তৃতীয় অধ্যায়ের ৫২ নং শ্লোকে বলে দেয়া হচ্ছে এই সম্পত্তিতে শুধু বধুর একার ই অধিকার,কোনভাবেই পতি তা ব্যবহার করতে পারবেনা।করলে সে যান্ত্যধোগতিম বা চূড়ান্ত অধোগতি লাভ করবে।
আর আমরা মোটামুটি সবাই ই জানি এই স্ত্রীধন বা কন্যার সম্পত্তি প্রচলিত আইনে পরবর্তীকালে কেবল সেই মায়ের কন্যাসন্তানরাই উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত হন।এভাবেই বৈদিক পরম্পরায় অত্যন্ত সুন্দর উপায়ে নারীর সম্পত্তির উত্তরাধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে সমানভাবে যা পৃথিবীর অন্য কোন সম্প্রদায়ে দেখা যায় না।
এছাড়া স্মৃতিশাস্ত্রে আরও বলা হচ্ছে যে-
অনপতস্য পুত্রস্য মাতা দায়ম্বাপ্নুয়াৎ
(মনু ৯.২১৭)
অর্থাৎ যদি মাতার পুত্র নিঃসন্তান হয় এবং পুত্রের মৃত্যু যদি আগে হয় তাহলে তার সম্পত্তিও মা ই পাবেন, মা যদি না থাকেন তাহলে দিদা বা বোন পাবেন।এটিও নারী উত্তরাধিকারের একটি রূপ।আর যদি কন্যা অবিবাহিত হয় এবং তার নিজস্ব কোন ভরনপোষণ করতে হবে এমন কোন পরিবার( স্বামী , পুত্র, কন্যা) না থাকে, সে যদি পিতৃলয়ে থাকে তাহলে সে সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত হবেনা।
মনু ৯.১১৮ অনুযায়ী তখন প্রতি ভাই বোনকে স্বাদংশচ্চতুর্ভাগং অর্থাৎ নিজ সম্পত্তির ৪ ভাগের ১ ভাগ দেবেন।
অর্থাৎ বিবাহিত বা অবিবাহিত কন্যার আর্থিক নিরাপত্তা অত্যন্ত সুন্দরভাবে নিশ্চিত করেছিলেন তৎকালীন স্মৃতিকারগণ।
তবে এইসব স্মৃতিশাস্ত্রের শ্লোক বলে সেগুলোর নিয়মসমূহ ধ্রুব নয় বরং সমাজভেদে,সময়ভেদে, পরিস্থিতিভেদে পাল্টাবে,তখনকার সমাজবিজ্ঞানী মহর্ষি মনু এই নিয়মগুলো করে গিয়েছিলেন বেদের আদেশ অনুসরণ করে সমাজের অবস্থা বুঝে, ঠিক তেমনি বর্তমান আইনজ্ঞরাও ভারতে বেদের আইন মেনেই নারী পুরুষ এর সমান সম্পত্তির অধিকার নিশ্চিত করেছেন ১৯৫৬ Hindu Succession Law এর মাধ্যমে, তাই ভারতে হিন্দু নারী-পুরুষ সকলেই পৈতৃক সম্পত্তিতে সমান ভাগ পান।বাংলাদেশে যা এখনো বিদ্যমান আইন, সুযোগসন্ধানী ধর্মান্তরকরণের প্রবণতা ইত্যাদি সার্বিক পরিস্থিতির বিবেচনায় হিন্দু মেয়েদের নিরাপত্তার স্বার্থে প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
প্রাচীন সংস্কৃত প্রবচনে ঋষির উদাত্ত বাণীতে জানিয়েছিলেন-
নাস্তি স্ত্রী সমা ছায়াঃ
নাস্তি স্ত্রী সমা গতিঃ
অর্থাৎ নারী হল আমাদের ছায়ার ন্যায়,নারী আমাদের গতির ন্যায়।তাই ছায়ার মুল্য দিন,গতির আশ্রয় নিন,তবেই সমাজ গতিময় হবে।
ওঁ শান্তি শান্তি শান্তি
মনু ২.১৯৪ শ্লোকে অধ্যাবাহনিক আর প্রীতিদত্ত বলতে কি বুঝানো হয়েছে???
ReplyDelete