দৈনিক বেদবাণী


এই সমগ্র সংসার নিরোগ এবং শুভচিন্তা যুক্ত হোক । যজুর্বেদ ১৬.৪                    সূর্য-এর আলোয় স্বয়ং আলোহীন চাঁদ আলোকিত হয় । ঋগ্বেদ ৫.৪০.৫                    প্রশংসনীয় সংস্কৃতি, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও মাতৃভূমি— এই ত্রয়ী সুখ-সমৃদ্ধি প্রদান করে। ঋগ্বেদ ১.১৩.৯                    উত্তম জীবন লাভের জন্য আমাদের জ্ঞানীদের সাহচর্যে চলা উচিৎ। ঋগ্বেদ ১.১২.১৬                    যে ব্যক্তি সম্পদ বা সুখ বা জ্ঞান নিঃস্বার্থভাবে দান করে, সে-ই প্রকৃত মিত্র। ঋগ্বেদ ২.৩০.৭                    মানুষ কর্ম দ্বারাই জগতে মহত্ত্ব ও প্রসিদ্ধি লাভ করে। ঋগ্বেদ ৩.৩৬.১                    হে পতি! তোমার স্ত্রীই গৃহ, স্ত্রীই সন্তানের আশ্রয়। ঋগ্বেদ ৩.৫৩.৪                    পরমাত্মার নিয়ম বিনষ্ট হয় না; তা অটুট, অচল ও অপরিবর্তনীয়। ঋগ্বেদ ৩.৫৪.১৮                    এই ধর্মের মার্গই সনাতন, এই পথে চলেই মানবগণ উন্নতি লাভ করে। ঋগ্বেদ ৪.১৮.১                    পরমাত্মার নিকট কোনো মানুষই বড় বা ছোট নয়। সকল মানুষই সমান এবং পরস্পরের ভ্রাতৃস্বরূপ। ঋগ্বেদ ৫.৬০.৫                    যে ব্যক্তি অকারণে অন্যের নিন্দা করে, সে নিজেও নিন্দার পাত্র হয়। ঋগ্বেদ ৫.২.৬                    নিশ্চিতরূপে এই চতুর্বেদ কল্যাণপ্রদায়িনী এবং মানবকে জ্ঞান প্রদান করে ধারণকারিণী। ঋগ্বেদ ৫.৪৭.৪                    বীর মানবের জন্য পর্বতও সুগম হয়ে যায়। ঋগ্বেদ ৬.২৪.৮                    আমরা অন্যের সঞ্চিত পাপের কর্মফল ভোগ করি না। ঋগ্বেদ ৬.৫১.৭                    হে মিত্রগণ! ওঠো— উদ্যমী হও, সাবধান হও এবং এই সংসাররূপী নদীকে অতিক্রম করো। ঋগ্বেদ ১০.৫৩.৮







ব্রাহ্মণ কল্পাদি গ্রন্থ ও পশুবলি

অমৃতস্য পুত্রা
1


ওঁ তৎ সৎ
( সম্মানিত পাঠকগণ, আপনারা জানেন বাংলাদেশ অগ্নিবীর Exclusive লেখার জন্য বিখ্যাত। আমরা এখন পর্যন্ত অনেক অনন্য বিষয়ে লেখেছি বা প্রচার করেছি বাংলাতে।এর মাঝে আছে বেদে নবীর ভবিষ্যদ্বাণী খণ্ডন, বেদে গোহত্যা, বেদে বৈজ্ঞানিক ভুল খণ্ডন, সকল বর্ণের বেদাধিকার প্রচার ইত্যাদি। আমাদের প্রচারণার ফলে সামগ্রিকভাবে বাঙালির ধর্মীয় চিন্তার ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও পরিবর্তন এসেছে। বিশেষ করে বেদের প্রতি আগ্রহ ও বৈদিক গ্রন্থাদির বিশুদ্ধ বাংলা অনুবাদের জন্য প্রতিনিয়ত পাওয়া অনুরোধ দ্বারা ই পরিষ্কার।)
সনাতন সমাজে পশুবলির উৎপত্তি বেশিদিন না, শ্রৌতশাস্ত্রের ও পরবর্তী সময়ে। গৌতম বুদ্ধের সময়কালে তা যে প্রকট আকার ধারণ করেছিল তৎকালীন বৌদ্ধ ও জৈন শাস্ত্রে ই দেখা যায়।

মধ্যযুগীয় আচার্যগণ ও তাদের শাস্ত্রভাষ্যের কিছু কিছু স্থলে পশুবলি সিদ্ধ করে গেছেন। " "যজ্ঞের পশু স্বর্গে যায়" কিংবা " যজ্ঞের পশু বধ করা অহিংসা"‌ এ ধরনের কথা বারবার বলে গেছেন তোতাপাখির মতো যখন ই পশু সংরক্ষণের কোনো মন্ত্র এসেছে শাস্ত্রে।

যজ্ঞে পশু বলি দিলে তা স্বর্গে যায়, এমন ভাবনা সর্বৈব মিথ্যা, তা কোনো বৈদিক শাস্ত্রে নেই বিশেষ ব্যক্তিদের টীকা ছাড়া।
বরং বেদ স্পষ্ট করে ই পশু হত্যার বিরোধ করে।
বেদ অহিংসায় বিশ্বাসী এবং ক্ষতিকর জীবাণু আদি ও হিংস্র আক্রমণকারী পশু ছাড়া সকল ধরনের প্রাণী হত্যা নিষেধ করে ৷ বেদ খাদ্যের জন্য প্রাণী হত্যা নিষেধ করে এবং সকল প্রাণীর প্রতি দয়া প্রদর্শনের আহবান করে ৷
"পশুঁস্ত্রয়েথম্।"
যজু ৬।১১

পশুদের সংরক্ষণ কর।




"দ্বিপাদব চতুষ্পাৎ পাহি"
যজু ১৪।৮

দ্বিপাদ ও চতুষ্পাদ প্রাণীদের সংরক্ষণ কর।






 
"ঊর্জম্ নো ধেহি দ্বিপদে চতুষ্পদে"
যজু ১১।৮৩
সকল দ্বিপদী ও চতুষ্পদী বৃদ্ধি ও পুষ্টিপ্রাপ্ত হোক।



বেদান্ত সূত্রে বলা আছে-

জীবন সংশয়স্থলেই কেবল খাদ্য অখাদ্যের বিচার বর্জনীয়!
অর্থাৎ আপৎকাল ব্যতীত অন্য সকল ক্ষেত্রে বিচার বিবেচনা করতে হবে।

"সর্ব অন্ন অনুমতিঃ প্রাণাত্যয়ে চ তদ্দর্শনাৎ।"
বেদান্তসূত্র ৩/৪/২৮.

অর্থাৎ সর্বপ্রকার খাদ্য গ্রহণ করার অনুমতি কেবল জীবন বিপন্ন হওয়ার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, কারণ শ্রুতিতেই(বেদে) এইরূপ নির্দেশ আছে।
 
বেদে যেকোন প্রকারের মাংস আদি উৎসর্গ নিষিদ্ধ রয়েছে। কারণ ঈশ্বর রক্ত পিপাসু নন। তাহার সন্তুষ্টির জন্য কোন পশু হত্যার প্রয়োজন নেই। তাহার উপাসনা আমরা করি কেবল আত্মশুদ্ধির জন্য।


“য়জমানস্য পশুন পাহি”
(যজু ১.১)
অনুবাদঃ
যজমান (যজ্ঞকারী) পশুর পালন করিবে অর্থাৎ এখানে যজ্ঞে পশুহত্যা স্পষ্টই নিষেধ, কেননা হত্যা করলে পালন হয়না।



বৈদিক যজ্ঞ সর্বদাই পবিত্র সেখানে কোনরুপ হত্যা সম্ভব নয়।


সে জন্যই বেদ যজ্ঞকে অধ্বর সংজ্ঞা দিয়েছে। নিরুক্ত সংহিতা ১।এ অধ্বর শব্দের অর্থ বলা হয়েছে "অধ্বর ইতি যজ্ঞনাম ধ্বরতিহিংসাকর্মা তৎপ্রতিষেধ " অধ্বর = হিংসারহিত কর্ম অর্থাৎ যাহাতে কোন রূপ হত্যা হয় না






রাজসূয়ং বাজপেয়মগ্নিষ্টোমস্তদধ্বরঃ।
অর্কাশ্বমেধাবুচ্ছিষ্ট জীবর্বহিভমদিন্তম।।
(অথর্ববেদ ১১।৭।৭)

--- রাজসূয়, বাজপেয়, অগ্নিষ্টোম এইসব যজ্ঞ অধ্বর অর্থাৎ হিংসারহিত। অর্ক এবং অশ্বমেধ যজ্ঞ প্রভূর মধ্যে স্থিত, যাহা জীবের বৃদ্ধিকারী এবং অতন্ত্য হর্ষদায়ক।




 
 
অগ্নে যঃ যজ্ঞমধ্বরং বিশ্বত বিশ্বতঃ পরিভূরসি। স ইদ্দেবেষু গচ্ছতি।।
(ঋগ্বেদ ১।১।৪)

--- হে পরমেশ্বর যে অধ্বর অর্থাৎ হিংসা রহিত যজ্ঞকে সর্বত্র ব্যাপক হয়ে সব প্রকারে পালনকারী। এই হিংসারহিত যজ্ঞে বিদ্বান লোক সুখ প্রাপ্ত করে।




যজ্ঞের জন্য অধ্বর (হিংসারহিত) শব্দের প্রয়োগ ঋগবেদ ১।১।৮, ১।১৪।২১, ১।১৯।১, ১।২৮।১, ৩।২১।১ এরূপ বহু স্থলে এসেছে।

মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী কর্তৃক সর্বপ্রথম ব্যাকরণ ও বেদাঙ্গ অনুসন্ধান করে বেদের বিশুদ্ধ ভাষ্য রচনা ও "গোমেধ" "অশ্বমেধ" "নরমেধ"‌ প্রভৃতি যজ্ঞের প্রকৃতরূপ উদ্ঘাটন ও পরবর্তী সকল বৈদিক ভাষ্যকারগণ কর্তৃক তাঁর অনুবাদ অনুসরণের ফলে এখন বেদ দেখিয়ে বলি সিদ্ধ করার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। কারণ বেদে বলি সিদ্ধ করতে গেলে তার সাথে গোহত্যা ও অশ্লীলতার ও উদ্ভব ঘটে। ( আগ্রহী গণ যজুর্বেদ ২৩।২০-৩০ ও ৫৯-৬৫ আর ঋগ্বেদ ১০।৮৫।১৩ ও ১০।৮৬ সুক্তের সায়ন মহীধরের অনুবাদ মিলিয়ে দেখতে পারেন।)

এখন এই নব্য পণ্ডিতগণ বেদ মন্ত্রের ব্যাখ্যা স্বরূপ রচিত ব্রাহ্মণ গ্রন্থ থেকে পশুবলি সিদ্ধ করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
ব্রাহ্মণ গ্রন্থে পশুবলির ক্ষেত্রে শঙ্কাযুক্ত শব্দটি হল "আলভন" বা "আলভতে"।

"আলভতে" শব্দটি লভ ধাতুর পূর্বে আ উপসর্গ যোগে গঠিত। লভ ধাতুর অর্থ পাণিনীয় ধাতুপাঠ মতে ' প্রাপ্তি '। আলভতে মূল অর্থ প্রাপ্তি ছাড়া সংস্পর্শ ও বোঝাতে পারে। কিন্তু কদাপি হত্যা বোঝাতে ব্যবহৃত হওয়া সম্ভব না।
কারণ
  • ১.ধাতুপাঠের ১/৭০২ সূত্রে পাওয়া যায় "আ + ডু-লভষ্ প্রাপ্তৌ"। তাই 'আলভতে' এর ধাতুগত অর্থ হচ্ছে স্পর্শ করা বা প্রাপ্ত হওয়া৷

  • ২.নিঘণ্টু ২। ১৯ এ হত্যার সকল সমার্থক শব্দ কথিত থাকলেও সেখানে "আলভ্" ধাতুর আলাদা করে উল্লেখ নেই।  
 
 

  • ৩.যজুর্বেদ ৩০।৫-২২ এ আমরা দেখতে পাই বিভিন্ন রকম পেশাজীবীর বর্ণনা। উক্ত সর্বমোট একশত বিরাশি প্রকারের লোক ও তাদের পেশা বাইশ নং মন্ত্রে থাকা একটি ক্রিয়াপদ আলভন দ্বারা ই যুক্ত। আলভন অর্থ পশুবলি হলে একশ বিরাশি পেশার লোক কে হত্যা করতে হবে! যা চরম হাস্যকর অর্থ। এজন্য এমনকী পৌরাণিক বলিবাদী মহীধর ও উব্বট ও এই স্থলে আলভন অর্থ সংস্পর্শ করেছেন। ( রাজা দেশ চালনার জন্য নিম্নোক্ত লোকেদের সংস্পর্শে আসবেন।)
  • ৪. অথর্ববেদ ৭।১০৯।৭ মন্ত্রে ও আলভন এর ধাতুগত অর্থ প্রাপ্তি ( গ্রহণ করা) আছে ।
 
 
  • ৫.পারস্কর গৃহ্যসূত্র ১।৮।৮ বা ২।২।১৫‌ তে " দক্ষিণাম্ অস্মম্ হৃদয়ম আলভতে" যা পতি পত্নী পরস্পরের নিকট বলছে। এখানে স্পর্শার্থে আলভতে প্রযুক্ত। বধ অর্থে প্রযুক্ত হলে পতি পত্নী পরস্পর বধ করে এরূপ অর্থ দাঁড়ায়।
  • ৬. গোভিল গৃহ্যসূত্র ২।৭।২ এ জাতকর্ম সংস্কারের ব্যাপারে বলা হচ্ছে "অত ঊর্ধ্বম অস্ম আলম্ভনম্।" অর্থাৎ নানা পবিত্র দ্রব্যাদি স্পর্শ শিশুকে করাবে। এখানে আলভন শব্দে বধ বোঝালে নামকরণ অনুষ্ঠানে ই শিশু কে বধ করা অর্থ হয়ে যায়! এক ই রকম সূত্র আশ্বলায়ন ১।১৫।১ এ ও দেখা যায়।
  • ৭. যজুর্বেদ ৩৪।৪৯ এ "অন্বলেভিরে" এর অর্থ মহীধর উব্বট সহ সকলেই (অনু+লভ= নৈকট্য লাভ তথা স্পর্শ) করেছেন।

  • ৮. অনেকে আলভন= হত্যা এর পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন, কৃষ্ণ যজুর দুই পৃথক শাখা মৈত্রায়নী ও কাঠক সংহিতার দুটো ভিন্ন স্থলে এক মন্ত্র আছে যা মৈত্রায়নী ১।৫।৯ তে " বৎসম্ আলভতে ......"‌ কে কাঠকে " বৎসম্ পরা হন্তি.... " রূপে আছে।
তাহলে আলভতে হণ ধাতু তথা হননাত্মক অর্থ প্রকাশ করে। কিন্তু নিঘণ্টু ২।১৪ তে আমরা হণ ধাতুকে গতি প্রকাশক হিসেবে দেখি। আলভতে যদি স্পর্শ বা নৈকট্য হয়, তবে পরা হন্তি ও নিকটে আসা বোঝাবে।
  • ৯.সূ⁠র্যায়া⁠ বহ⁠তুঃ প্রাগা⁠ত্সবি⁠তা য়ম⁠বাসৃ⁠জত্ । অ⁠ঘাসু⁠ হন্যন্তে⁠ গাবোঽর্জু⁠ন্যোঃ⁠ পর্যু⁠হ্যতে ॥ ১০.০৮৫.১৩ 
 
যদি হণ ধাতু কেবল হত্যা বোঝায়, তাহলে এই ঋকের অর্থ দাঁড়ায় মাঘ মাসে (অঘা)‌ সবিতা সূর্যাকে বিবাহের জন্য যাত্রা করেন ও ফাল্গুন (অর্জুন= ফাল্গুনী) মাসে তাদের বিবাহ অনুষ্ঠানে গোহত্যা করা হয়। কিন্তু,  হন্যতে অর্থ গতি (নিঘণ্টু 2।24) ও গাব অর্থ রশ্মি (নিঘণ্টু ১।৫) ধরলে এই মন্ত্র সূর্যরশ্মির গতি বোঝায়। 
 
 
 
 
জয়দেব শর্মার ভাষ্যে " মাঘমাসে সূর্যরশ্মির হ্রাস ঘটে এ ফাল্গুন মাসে তা আগের অবস্থায় ফিরে আসে। মাঘ মাসে তথা শীতে সূর্যের শক্তিহ্রাস ই বিবাহস্বরূপ।"
  • ১০. ব্রাহ্মণ এর পশুবলি আসলে পশুবলি নয়। তা পশু কে সামনে রেখে অগ্নিতে যব ব্রীহি আদি বস্তু তথা পুরোডাশ আহুতি দেওয়া হত। যজ্ঞশেষে পশু কে নিয়ে যাওয়া হত। যজ্ঞ শেষে কাল্পনিক বলির জীবিত ফেরতকেই ঋষিগণ বলতেন " বেদ মন্ত্র উচ্চারণে আহুতি দিলে বলি পুনরায় জীবিত হয়।"
.শতপথ ব্রাহ্মণের একটি উপাখ্যান দ্বারা বলির স্বরূপ পরিষ্কার হয়।

 পুরুষং হ বৈ দেবাঃ । অগ্রে পশুমালেভিরে তস্যালব্ধস্য মেধোঽপচক্রাম সোঽশ্বং প্রবিবেশ তেঽশ্বমালভন্ত তস্যালব্ধস্য মেধোঽপচক্রাম স গাং প্রবিবেশ তে গামালভন্ত। তস্যালব্ধস্য মেধোঽপচক্রাম। সোঽবিং প্রবিবেশ তেঽবিমালভন্ত। তস্যালব্ধস্য মেধোঽপচক্রাম। সোঽজং প্রবিবেশ তেঽজমালভন্ত তস্যালব্ধস্য মেধোঽপচক্রাম - ১.২.৩.[৬]
স ইমং পৃথিবীং প্রবিবেশ । তং খনন্তৈবান্বীষুস্তমন্ববিন্দংস্তাবিমৌ ব্রীহিয়বৌ তস্মাদপ্যেতাবেতর্হি খনন্ত ইবৈবানুবিন্দন্তি স যাবদ্বীর্যবদ্ধ বা অস্যৈতে সর্বে পশব আলব্ধাঃ স্যুস্তাবদ্বীর্যবদ্ধাস্য হবিরেব ভবতি য এবমেতদ্বেদাত্রো সা সম্পদ্যদাহুঃ পাঙ্ক্তঃ পশুরিতি - ১.২.৩.[৭]
যদা পিষ্টান্যথ লোমানি ভবন্তি । যদাপ আনয়ত্যথ ৎবগ্ভবতি যদা সংয়ৌত্যথ মাংসং ভবতি সংতত ইব হি স তর্হি ভবতি সংততমিব হি মাংসং যদা শৃতোঽথাস্থি ভবতি দারুণ ইব হি স তর্হি ভবতি দারুণমিত্যস্থ্যথ যদুদ্বাসয়িষ্যন্নভিঘারয়তি তং মজ্জানং দধাত্যেষো সা সম্পদ্যদাহুঃ পাঙ্ক্তঃ পশুরিতি - ১.২.৩.[৮]
স যং পুরুষমালভন্ত । স কিম্পুরুষোঽভবদ্যাবশ্বং চ গাং চ তৌ গৌরশ্চ গবয়শ্চাভবতাং যমবিমালভন্ত স উষ্ট্রোঽভবদ্যমজমালভন্ত স শরভোঽভবত্তস্মাদেতেষাং পশূনাং নাশিতব্যমপক্রান্তমেধা হৈতে পশবঃ - ১.২.৩.[৯]
(শতপথ ১।২।৩।৬-৯)

-পূর্বে দেবগণ পুরুষরূপ পশুকেই মেধ করতেন। তাকে আলভন করা হলে যজ্ঞীয় সার অংশ অশ্বের দেহে চলে গেল। অশ্বকে আলভন করলে সেই সার অংশ গরুর দেহে‌ গেল। গরুকে আলভন  করলে যজ্ঞীয় সার মেষের দেহে স্থানান্তর হল। মেষ আলভনর পর সার অংশ ছাগদেহে প্রবেশ করল। ছাগ আলভনর পর যজ্ঞসার পৃথিবীতে স্থানান্তর হল। দেবগণ যজ্ঞসার খোঁজার নিমিত্তে পৃথিবী খনন করলেন এবং ব্রীহি (ধান) ও যবাদি শস্য রূপে ইহা‌ কে পাইলেন। যিনি এই উপাখ্যান জানেন, তার নিকট সকল পশু বধ করলে লাভ করা যজ্ঞফল আর ধান যব নিবেদন করে প্রাপ্ত ফল সমান। 



 
স বা এষ পশুরেবালভ্যতে যৎপুরোডাশস্তস্য যানি কিংশারূণি তানি রোমাণি যে তুষাঃ সা ত্বগ্ যে ফলীকরণাস্তদসৃগ্যৎপিষ­্টং কিক্নসাস্তন্মাংসং যৎকিং...
ঐতরেয় ব্রাহ্মণ – ৬/৯
-এই যে পুরোডাশ [প্রদান] এর দ্বারা পশুরই আলম্ভন হয়। তার (পুরোডাশের অর্থাৎ তার উপকরণরূপ ধানের) যে কিংশারু (খড়) তাই [পশুর] লোম, যে তুষ তাই চর্ম, যে ক্ষুদ তাই রক্ত, যে (তণ্ডুল হতে প্রস্তুত) পিষ্টক ও পিষ্টকের অবয়সকল, তাই মাংস, আর যে কিছু সার (তণ্ডুলের কঠিন ভাগ) তাই অস্থি। [অতত্রব] যে পুরোডাশ দ্বারা যাগ করে, সে পশুগণের সকল যজ্ঞভাগ দ্বারাই যাগ করে। সেইজন্য [ব্রহ্মবাদীরা] বলেন, পুরোডাশ যাগ [সকলের] দর্শনীয়।
ঐতরেয় ব্রাহ্মণের উক্তি পুরোডাশ মাহাত্ম্য ই বর্ণনা করে। 





এখন দেখবার বিষয় ব্রাহ্মণ গ্রন্থ কে বেদ বলে মান্য করা পণ্ডিতগণ আদৌ ব্রাহ্মণ এর উক্তি মেনে যব ব্রীহি আদি আহুতি দেন কি না!


শতপথব্রাহ্মণের বর্ণনা অনুসারে (১১/৩/১/২-৪) মহারাজা জনক ঋষি যাজ্ঞবল্ক্যকে বললেন- "হে ঋষি যাজ্ঞবল্ক্য! তুমি কি যজ্ঞকে (অগ্নিহোত্র) জান?
উঃ হ্যাঁ জানি, রাজন্।
প্রঃ কী রকম?
উঃ কেবল দুধ।
প্রঃ যদি দুধ না থাকে তাহলে কি দিয়ে আহুতি দিবে? উঃ ধান বা যব।
প্রঃ যদি ধান বা যব না থাকে তাহলে? উঃ অন্য ঔষুধীযুক্ত দ্রব্য। প্রঃ যদি ঔষুধীযুক্ত দ্রব্য না থাকে? উঃ জঙ্গলের ঔষুধীদব্য। প্রঃ যদি তা না থাকে?
উঃ জঙ্গলের গাছপালা।
প্রঃ যদি তাও না থাকে?
উঃ তাহলে জল দিয়ে।
প্রঃ যদি জল না থাকে?
উঃ হে রাজন্! যদি কিছুই না থাকে, তবুও যজ্ঞ করা উচিত। কেবল শ্রদ্ধায় সত্যের অগ্নিহোত্র করুন।" .
এই রকম আনন্দদায়ক সংলাপে যজ্ঞের জন্য প্রয়োজনীয় হব্য পদার্থের উল্লেখ ঋষি যাজ্ঞবল্ক্য করেছেন। এর অর্থ হল যদি যজ্ঞ সামগ্রীর প্রত্যেক বস্তু নাও থাকে, এই অবস্থায় যা আছে, তা দিয়েই যজ্ঞ করা উচিত। ঠিক এই রকম বাণী ঋগবেদেও পাই আমরা। সেখানে বলা হয়েছে-
"হে ভগবান! আমার কাছে না আছে গরু(ঘী এর জন্য), না কুঠার (ভালো ঔষুধী কাঠ কাটার জন্য) তবুও যজ্ঞ করবো, যেমন কাঠ এনেছি এগুলোকেই স্বীকার কর, মৌমাছির এঁটোই আমার ঘি ঈশ্বর।"
# ঋগবেদ ৮/১০২/১৯-২১.

Credit: বাংলাদেশ অগ্নিবীর

Post a Comment

1Comments
  1. Pronam..
    Cordial thanks to the members of agniveer for such an informative column..please enlighten us by giving right information with references..😊

    ReplyDelete
Post a Comment