



মহর্ষি দয়ানন্দ জী যজুর্বেদ এর ৪০তম অধ্যায়ের ভাষ্য ত্রৈতপরকই করেছেন । এই অধ্যায়ের আরম্ভই " ঈশ " শব্দ দ্বারা হয়েছে । [ 1 ] । তাঁকে এক [ 2 ] সত্তা হিসেবে উল্লেখ করে তাঁর স্বরূপ বর্ণনা এরূপ করা হয়েছে, তিনি সবার অভ্যন্তরে, বাহিরে ব্যাপক হিসেবে অবস্থান করেন । [ 3 ] তিনি সর্বব্যাপক, শরীর রহিত, শুদ্ধ, পাপ করেন না, কবি, মনীষী, স্বয়ম্ভু, ঠিক-ঠিক জীবাত্মার জন্য পদার্থসমূহের নির্মাণকর্তা । [ 4 ] তাঁরই নাম ' ও৩ম্ ' ; যাকে স্মরণ করা উচিত । [ 5 ] স্বয়ং ঈশ্বর বলেন, যে আদিত্যে ( সূর্য ) পুরুষ ( পরমাত্মা ) রয়েছে তা আমি । [ 6 ] ও৩ম্ আকাশের ন্যায় ব্যাপক । [ 7 ]




যজুর্বেদ এর প্রথম মন্ত্রেই জীবাত্মাকে বলা হয়েছে, ঈশ্বর হতে প্রাপ্ত পদার্থসমূহকে ভোগ করতে ; কারও ধনসম্পদের প্রতি ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষা না করতে । [ 8 ] ঈশ্বর সমগ্র সংসার সৃষ্টি করেছেন এই নিত্য জীবাত্মাদের জন্য এমনটা " শাশ্বতীভ্যঃ সমাভ্যঃ " [ 9 ] শব্দ দ্বারা স্পষ্ট বর্ণনা করা রয়েছে, যার অর্থ অনাদি প্রজা [ 10 ] । অনাদি প্রজা জীবাত্মাই, কেননা ভোগ করার সামর্থ্য বা শক্তি জীবাত্মার মধ্যেই নিহিত । সমস্ত ভোগ্য পদার্থ জীবাত্মার জন্যই । আরও বর্ণিত হয়েছে, মনুষ্য কর্ম করার মাধ্যমেই শতবর্ষ পর্যন্ত বাঁচার ইচ্ছা পোষণ করে । [11 ]
এখানে " নরে " [ 12 ] শব্দের প্রয়োগ জীবাত্মাকে নির্দেশ করেই বুঝানো হয়েছে ।
তৃতীয় মন্ত্রে " জনা " [ 13 ] শব্দের প্রয়োগও জীবাত্মাকে নির্দেশ করেছে ।
শরীরকে বিনাশী নির্দেশ করে বর্ণনা করা হয়েছে যে, অন্তে শরীর ভস্ম হয়ে যায় । [ 14 ]
এটা দ্বারাই জীবাত্মাকে " ক্রতো " সম্বোধন করা হয়েছে । [ 15 ] এই জীবই ঈশ্বরের প্রতি প্রার্থনা করে থাকে । হে দেব ! ধন প্রাপ্তির জন্য আমাদের সুমার্গ পথে চালিত করো । [ 16 ]
আমরা বার বার তোমাকে নমস্কার জানাই । [ 17 ] এই প্রকরণে স্পষ্টভাবে জীবাত্মারই উল্লেখ রয়েছে ।




এই অধ্যায়ে প্রকৃতিরও বর্ণন বিদ্যমান । প্রথম মন্ত্রে " হৃদম " শব্দের অর্থ মহর্ষি দয়ানন্দ জী
" প্রকৃতি থেকে শুরু করে পৃথিবী পর্যন্ত " করেছেন । [ 18 ] " মুঞ্জীথা " শব্দের অর্থ ভোগ করা । যখন জীবাত্মা ভোগ্য পদার্থের প্রাপ্ত হবে তখনই সে ভোগ করতে পারে ; ভোগ্যের জন্য রয়েছে প্রকৃতি । একটি মন্ত্রে অসম্ভূতি শব্দ দ্বারা প্রকৃতি [ 19 ] এবং সম্ভূতি শব্দ দ্বারা কার্য জগতকেও বর্ণনা করা হয়েছে ।
বস্তুতঃ এই ৪০তম অধ্যায়ে ঈশ্বর, জীব এবং প্রকৃতির স্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে । তিনটি সত্তাকেই স্বতন্ত্র সত্তা হিসেবে স্বীকার করা হয়েছে ।
তিনটি সত্তাকেই তাদের স্বরূপ থেকে ভিন্ন বর্ণনা করা হয়েছে । ঈশ্বর সৃষ্টিকর্তা, জীবাত্মা কর্ম করে কর্মফল ভোগ করে থাকে । ঈশ্বর জীবাত্মাকে তাঁকে স্মরণ এবং নমস্কার করার আদেশ দিয়েছেন । ঈশ্বরের স্থানে প্রকৃতি তথা কার্য জগতের উপাসনা করা উচিত নয় । ঈশ্বর পাপ রহিত ( অপাপ বিদ্ভম্ ) এবং জীবাত্মা দ্বারা পাপ হয়ে থাকে । [ 20 ] এজন্য জীবাত্মা পাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য প্রার্থনা করে । [ 20 ]
এভাবে এই অধ্যায়ে ত্রৈতবাদ স্পষ্টভাবে প্রতিপাদিত হয়েছে ।
এছাড়া " বেনস্তৎপশ্যন " এই ঋচা দ্বারা মহর্ষি দয়ানন্দ জী ত্রৈতবাদ প্রতিপাদন করেছেন ।
[ 21 ]


1. ঈশাবাস্যমিদং সর্বম্ — যজু. ৪০/১
2. অনেজদেকম্ — যজু. ৪০/৪
3. তদন্তরস্য সর্বস্য তদুসর্বস্যাস্য বাহ্যতঃ —
যজু. ৪০/৫
4. যজু. ৪০/৮
5. ও৩ম্ ক্রতো স্মর — যজু. ৪০/১৫
6. য়োসাবাদিত্যে পুরুষঃ সোসা বহম্ —
যজু. ৪০/১৬
7. ও৩ম্ খং ব্রহ্ম — যজু. ৪০/১৬
8. তেন ত্যক্তেন মুঞ্জীথা — যজু. ৪০/১
9. যজু. ৪০/৮
10. দেখুন মহর্ষি দয়ানন্দ জীর ভাষ্য
11. যজু. ৪০/২
12. যজু. ৪০/২
13. যজু. ৪০/৩
14. ভস্মান্তং শরীরম্ — যজু. ৪০/১৫
15. দেখুন মহর্ষি দয়ানন্দ জীর ভাষ্য
16. অগ্নে নয় সুপথা রায়ে অস্মান্ —
যজু. ৪০/২৬
17. ভুয়িষ্ঠাং তে নম উক্তিং বিধেম —
যজু. ৪০/২৬
18. দেখুন যজু. ৪০/১ মন্ত্রের মহর্ষি দয়ানন্দ জীর ভাষ্য
19. দেখুন যজু. ৪০/৮ মন্ত্রের মহর্ষি দয়ানন্দ জীর ভাষ্য
20. য়ুয়োধ্যস্মজ্জুহুরাণমেনী — যজু. ৪০/১৬
21. দেখুন যজু. ৩২/৮ মন্ত্রের মহর্ষি দয়ানন্দ জীর ভাষ্য
নমস্কার