আমরা মানুষ বলেই ভুল করি " আগঃ পুরুষতা করাম" [ যজু০ ১৯।৬২ ] । জড়জাগতিক মোহমায়ায় প্রতিনিয়ত আমরা নানা অপরাধে জড়াই । কারো দৃষ্টিতে তা সামান্য অপরাধ কারো দৃষ্টিতে তা বড় ।
" তৃষ্টাসি তৃষ্টিকা বিনা বিষাতক্যসি "[ অথর্ববেদ ৭।১১৩।২]~ বিষয়ভোগের তৃষ্ণা লোভময়ী, বিষরূপী এবং বিষাক্ত ।
কমবেশী প্রায় সবার মনেই পাপের ইচ্ছা জন্মায় । অজ্ঞ জীব হিসেবে যা অত্যন্ত স্বাভাবিক হলেও আমাদের মূল লক্ষ্য তা থেকে পৃথক থাকা । কেননা ধর্মের শিক্ষাই Homo sapiens থেকে আমাদের ' মনুর্ভব' = মানুষ করে তোলা । এই জগতে মানব দেহ ধারণ করে কেউ পরমেশ্বরের উপদেশ ও আদেশ অনুসরণ করে পাপ থেকে রক্ষা পায় । সফল ও সৌভাগ্যবান সেই মানবই যে কিনা সংসাররূপী পাথুরে সমুদ্রকে ভগবদ্ভক্তিরূপ নৌকা ও বেদকে দাঁড় হিসেবে সাথে নিয়ে ভগবানের পরমাশ্রয় লাভ করে৷ হতভাগ্য তো সেই ব্যক্তি যে কামনা-বাসনার বশীভূত হয়ে দুর্লভ এই মানবজন্মকে ইন্দ্রিয়ের দাস রূপে নষ্ট করে । কিভাবে আমরা এই পাপভাব থেকে রক্ষা পাবো ? তারই আজকে প্রথম উপায় আমরা দেখবো -
ঋষি: - ব্রহ্মাদেবতা - পাপ্মাছন্দঃ - অনুষ্টুপ্সূক্তম্ - পাপ্মনাশন সূক্তযো নঃ পাপ্মন্ন জহাসি তমু ত্বা জহিমো বয়ম্।পথামনু ব্যাবর্তনেঽন্যং পাপ্মানু পদ্যতাম্ ॥অথর্ববেদ ৬।২৬।২পদার্থঃ (পাপ্মন্) হে পাপভাব ! (যঃ) যে তুমি [ যদি ] ( নঃ) আমাদের (ন জহাসি) না ত্যাগ করো, তবে (বয়ম্, উ ) আমরা নিশ্চিতভাবে ( তম্, ত্বা) সেই তোমাকে (জহিমঃ) ত্যাগ করি। [ যারা ] (পথাম্) সৎপথের বা ইন্দ্রিয়ানুশাসনের(অনু) নিরন্তর (ব্যাবর্তনে) ত্যাগ করে, (অন্যম্) পাপত্যাগীদের থেকে আলাদাদের = ইন্দ্রিয়সংযমহীন - তাদের( পাপ্মা) পাপভাব ( অনু) নিরন্তর (পদ্যতাম্) প্রাপ্ত হোক ।সরলার্থঃ হে পাপভাব ! যদি তুমি আমাদের ত্যাগ না করো, তবে আমরাই তোমাকে ত্যাগ করি ।যারা সৎপথের নিরন্তর ত্যাগ করে তথা ইন্দ্রিয়কে অনুশাসনে রাখে না ; পাপত্যাগীদের থেকে আলাদাদের তথা যারা ইন্দ্রিয়সংযমহীন - তাদের পাপভাব নিরন্তর প্রাপ্ত হোক ।
১। এই মন্ত্রে পাপ নিরাকরণের জন্য দৃঢ় সংকল্প বা দৃঢ় ইচ্ছাশক্তি রূপ উপায়কে অবলম্বন করা হয়েছে । " যদি পাপভাব আমাদের ত্যাগ না করে তবে আমরাই পাপভাবকে ত্যাগ করি " এটি দৃঢ় সংকল্প - প্রতিজ্ঞা যাই বলুন না কেন তারই একটি স্বরূপ । একজন ব্যক্তি যে " এখন আমি পাপভাবকে ত্যাগ করেছি " , " পাপভাব কিংবা পাপের চিন্তা এখন আমাদের আর স্পর্শ করতে পারবে না " এইভাবে চিন্তা করে তবে আত্মশক্তিতে বলীয়ান হয়ে স্বীয় ইন্দ্রিয়কে বশীভূত করে সমস্ত পাপ করার হাত থেকে রক্ষা পেতে পারে । কেননা ,
' ঈর্মৈব তে ন্যবিশন্ত কেপয়ঃ '[ অথর্ববেদ ২০।৯৪।৬ ]~ পাপী ও অসৎকর্ম যে করে সেই ব্যক্তি অধোগতি লাভ করে ।
২। মন্ত্রে " নঃ" এবং " বয়ম্ " পদ এসেছে । সমষ্টিগত এই পদ দ্বারা স্পষ্টভাবেই বোঝা যাচ্ছে যে এই মন্ত্র পাপের বিরুদ্ধে বহু মানুষের যুগপদ্ দৃঢ় সংকল্পকেই নির্দেশ করছে । আমাদের চিন্তা থাকবে এমন যে -
" ন মে দাসো নার্যো মহিত্বা ব্রতং মীমায় যদহং ধরিষ্যে "[ অথর্ববেদ ৫।১১।৩ ]~ উত্তম অধম এমন কারো শক্তি নেই যে আমাকে আমার সত্যাচরণরূপ ব্রত থেকে আলাদা করতে পারে ।
অর্থাৎ বেদ আমাদের এই শিক্ষা দিচ্ছে, পাপ ত্যাগের ইচ্ছা কেবল শুধুমাত্র একার নয় বরং সমষ্টিগতভাবেই হওয়া অত্যাবশ্যক । একজন মানুষ নিজে পাপত্যাগ করতে চাইলেও পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির কারণে করতে পারে না এমন উদাহরণ বিরল নয় । পরমেশ্বরের বিধান স্বরূপ বৈদিক দর্শন আমাদের নির্দেশ দিচ্ছে - হে অমৃতের সন্তানগণ ! তোমরা পাপভাব ত্যাগ করো । একসাথে সংকল্প করো পাপের বিরুদ্ধে । নিজের চিত্তকে সুদৃঢ় করো এবং বৃত্ত্যারূঢ় পাপ ও তদানুকূল কুসংস্কার ত্যাগ - সমূলে বিনাশ করো । দৃঢ় সংকল্পের এই বিধি বৈদিক কর্তব্য শাস্ত্রের মূল একটি ভিত্তি ।
ইন্দ্র ক্রতুং ন আ ভর [ সামবেদ ২৫৯ ]~ হে ভগবান ! আমাদের প্রজ্ঞা দান করো ।
[ চলবে ]

বাংলাদেশ অগ্নিবীর
সত্য প্রকাশে নির্ভীক সৈনিক