অর্থাৎ তাহলে হিসেব দাঁড়ায় যে বিবাহের সময় সীতার বয়স কেবল ১৮-১২= ৬ এবং শ্রীরামচন্দ্রের বয়স ২৫ -১২ =১৩ বছর ছিলো।
এই শ্লোকটির পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণের পূর্বে আমাদেরকে সনাতন ধর্মের মৌলিক কিছু সাংবিধানিক নিয়ম জানতে হবে-
পবিত্র বেদেই বিয়ের বয়স সম্পর্কে মানবজাতিকে ঈশ্বর নির্দেশ দিয়ে দিয়েছেন যে ব্রহ্মচর্য জীবন সমাপ্ত হলে যুবক যুবতী যোগ্য সঙ্গীকে বিবাহ করবে-
💥 বাল্যবিবাহ নিয়ে পবিত্র বেদ বলছে-
অনুবাদঃ যে পুরুষ সর্বতােভাবে যজ্ঞােপবীত ধারণ ও ব্রহ্মচর্য সেবন দ্বারা বিদ্বান্ এবং সু শিক্ষিত হইয়া , সুন্দর বস্ত্র পরিধান পূর্বক , ব্রহ্মচর্য্যযুক্ত পূর্ণ যৌবন প্রাপ্ত হইয়া , বিদ্যাগ্রহণ করিয়া গৃহাশ্রমে প্রবেশ করেন , তিনিই দ্বিতীয় বিদ্যাজন্মে প্রসিদ্ধি লাভ করিয়া অতিশয় শােভাযুক্ত ও মঙ্গলকারী হন । উত্তম ধ্যানযুক্ত বিজ্ঞান দ্বারা বিদ্বানেরা সেই পুরুষকে উন্নতিশীল করিয়া প্রতিষ্ঠিত করেন । আর যে স্ত্রী পুরুষ , ব্রহ্মচর্য্য ধারণ , বিদ্যা এবং সুশিক্ষা গ্রহণ না করিয়া বাল্যাবস্থায় বিবাহ করে তাহারা নষ্ট - ভ্রষ্ট হইয়া বিদ্বান্ ব্যাক্তিদের মধ্যে সম্মান লাভ করেনা ॥
সুতরাং পবিত্র বেদ অনুযায়ী উপনয়ন গ্রহণের পর ব্রহ্মচর্য আশ্রম কাল সম্পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত যুবক যুবতীর বিয়ের কোন সুযোগ নেই এবং বাল্যবিবাহ নিষিদ্ধ। তাই বিয়ের বয়স নিয়ে এটাই সনাতন ধর্মের বিধান, অন্য কোথায় কে কত বয়সে বিয়ে করল তাতে সনাতন ধর্মের কিছুই যায় আসেনা।
🏵️ এই কথাপ্রসঙ্গেই বাল্মীকি রামায়ণের একটি শ্লোক দেখে নিই-
এবার আরেকটি শ্লোকে দেখব আমরা যে অযোধ্যা কাণ্ডে মাতা কৌশল্যাকে যখন শ্রীরাম নিজে এসে বনবাসের ঘোরতর দুঃসংবাদ দেন তখন মাতা কৌশল্যার বিলাপের কালে মাতা কৌশল্যা তাঁর দুঃখ কষ্ট একদিন শ্রীরাম দূর করবেন এই আশায় তিনি কতগুলো বছর অতিক্রম করেছেন সেই প্রসঙ্গে বলছেন-
অর্থাৎ এই শ্লোকে দেখা যাচ্ছে বনবাসে যাবার ঠিক প্রাক্কালে শ্রীরামের বয়স তাঁর উপনয়নের সময়কালের বয়স হতে ১৭ বছর বেশী।
তাহলে সেই হিসেব অনুযায়ী বনবাসের প্রাক্কালে মাতা কৌশল্যার সাথে এই কথোপকথনের সময় শ্রীরামের বয়স ছিল ১১+১৭= ২৮ বছর। আগেও আমরা সুশ্রুত সংহিতা ও রামায়ণের শ্লোকের সমন্বয়ে দেখেছি শ্রীরামের বয়স বিয়ের সময় ছিল কমপক্ষে ২৫ বছর। এখন দেখছি ২৮ বছর বয়সে তাঁর বনবাস হয়েছে।
রামায়ণের সুপরিচিত দক্ষিণ ভারতীয় টীকাকার নাগোজি ভট্টও তাঁর রামায়ণ টীকা "তিলক" এ মত দিয়েছেন অযোধ্যা ত্যাগের সময় রামের বয়স ছিল ২৫। অপর সুপরিচিত টীকাকার শিবসহায় তাঁর শিরোমণি নামক টীকায় মত দিয়েছেন অযোধ্যা ত্যাগের সময় শ্রীরামের বয়স ছিল ২৮।
এখন তাহলে আমরা বিশ্লেষণ করে দেখব যে বিয়ের পর বনবাসের ঘটনা ঘটার আগে কতদিন স্ত্রীকে নিয়ে তিনি অযোধ্যার রাজভবনে বসবাস করেছিলেন। তাহলেই সহজে বিয়ের বয়সটি বের হয়ে আসবে।
আলোচনার শুরুতেই আমরা বলেছি সমস্যাটা মূলত অরণ্যকাণ্ডের দুইটি শ্লোক নিয়ে যেখানে বলা হয়েছে-
অর্থাৎ ছদ্মবেশী রাবণের সাথে দেখা যখন হলো মাতাসীতার তখন মাতাসীতা বলছেন আমার স্বামীর বয়স এখন ২৫ আর আমার ১৮। ইক্ষাকুবংশে বিয়ের পর ১২ বছর কাটিয়ে তারপস বনবাসে এলাম।
তাহলে বুঝা যায় বিয়ের সময় তাঁদের বয়স ছিল যথাক্রমে (২৫-১২)= ১৩ এবং (১৮-১২)=৬।
💥💥💥 কিন্তু শুভংকরের ফাঁকি এখানেই। আমরা আগেও অনেকবার ই আমাদের গবেষণামূলক বিভিন্ন প্রবন্ধে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের বিখ্যাত সব গবেষকদের গবেষণালব্ধ মন্তব্য উপস্থাপন করেছি রামায়ণ ও মহাভারত নিয়ে। গবেষকগণ একমত যে রামায়ণের উত্তর কাণ্ড মূল রামায়ণের অংশ ই নয়, এটি পরবর্তীকালের পৌরাণিক যুগে রচিত স্বার্থান্বেষীদের রচিত একটি নকল অংশ যাতে রয়েছে গর্ভবতী মাতা সীতার বনবাস, রাম কর্তৃক শূদ্র শম্বুকহত্যার বানানো গল্প যেগুলো আসলে বাস্তবে ঘটেনি। গবেষকগণ আরও বলেন রামায়ণের আদিকাণ্ডও মূলত পরবর্তীকালের ই রচনা, এর কেবল কয়েকটি সর্গ ই মৌলিক।
আর বাল্মীকি রামায়ণের পাণ্ডুলিপিকে সম্পূর্ণরূপে আগের সেই প্রাচীন শুদ্ধরূপে নেয়া সম্ভব না হলেও বর্তমানে প্রাপ্ত পাণ্ডুলিপিসমূহের সাহায্যে যতটা সম্ভব শুদ্ধরূপে প্রকাশ করা সম্ভব ততটা করার লক্ষ্যেই বিগত শতকের ৬০ এর দশকে ভারতশ্রেষ্ঠ সকল গবেষকগণ প্রাচ্যবিদ্যা গবেষণা সংস্থা Baroda Oriental Institute(BOI) থেকে প্রকাশ করেন বাল্মিকী রামায়ণের এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বিশুদ্ধ পাণ্ডুলিপি Critical Edition Of Ramayana. ১৯৬৫ সালে প্রকাশিত হয় অরণ্যকাণ্ড সংবলিত ৩য় খণ্ড। সেই অরণ্যকাণ্ডের ৪২ টি প্রাচীন পাণ্ডুলিপি সারাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে গবেষকরা সংগ্রহ করতে থাকেন এক যুগ ধরে। সেগুলোর পর্যাপ্ত বিশ্লেষণ শেষে দেখা যায় তুলনামূলক বিশুদ্ধ পাণ্ডুলিপিগুলো যেমন নেপালি লিপি, সারদা লিপি,মৈথিলী ও দেবনগরী লিপিতে পূর্বে উল্লেখিত ৪৭ নং সর্গের ৪নং শ্লোক উষিত্বা দ্বাদশ সমা ইক্ষ্বাকুণাং নিবেশনে বা আমি এখানে আসার আগে ১২ বছর ইক্ষাকু কূলে( শ্বশুরালয়ে) কাটিয়ে এসেছি অংশটি নেই, নেই প্রাচ্যবিদ গ্যাস্পার গোরেসিও এর অষ্টাদশ শতকের রামায়ণ পাণ্ডুলিপিতেও। বরং সেই শ্লোকের স্থানে বিশুদ্ধ পাণ্ডুলিপিসমূহ অনুযায়ী BOI এর প্রকাশিত ৩য় খণ্ডের ২৩১ পৃষ্ঠায় বাল্মীকি রামায়ণ ৩.৪২.৫ নং শ্লোকে রয়েছে-
মম ভর্তামহাতেজা বযসা পঞ্চবিংশকঃ৷৷অষ্টাদশ হি বর্ষাণি মম জন্মনি গণ্যতে৷( এখন আমার বয়স ১৮ ও আমার স্বামীর বয়স ২৫) এই শ্লোকটি দিয়ে আমরা হিসেব করলে পাই বিয়ের সময় শ্রীরাম ও মাতা সীতার বয়স ছিল যথাক্রমে-
২৫-১ = ২৪ বছর ও ১৮-১= ১৭ বছর।
তবে চমকপ্রদ বিষয় হলো ১০ নং শ্লোকটির দুইটি অংশ-
এর মধ্যে অষ্টাদশ হি বর্ষাণি মম জন্মনি গণ্যতে অংশটিও BOI প্রকাশিত বিশুদ্ধ পাণ্ডুলিপিতে নেই! অর্থাৎ বনবাসের সময় শ্রীরামের বয়স এই শ্লোক অনুযায়ী ২৫ হলেও মাতা সীতার বয়স যে ১৮ ছিল তার প্রমাণ নেই। আর এরপরেও শ্লোকাংশটিকে গণনা করা হলে বিয়ের সময় মাতা সীতার বয়স দাঁড়ায় ১৭।
সে অনুসারে শ্রীরাম ও মাতা সীতার মধ্যে ৭ বছরের বয়সের ব্যবধান ধরে নিলে বনবাসকালে মাতা সীতার বয়স দাঁড়ায় ২১ অর্থাৎ বিবাহকালে তাঁর বয়স ছিল ২০ এবং শ্রীরামের ২৭। অর্থাৎ যে কোন দিকেই হিসেব করলে বিবাহকালে তাঁরা যুবক যুবতী ছিলেন, ১৩ ও ৬ বছর বয়স্ক বালক বালিকা ছিলেন যা প্রচার করা হচ্ছে।
আবার রামায়ণের উত্তর পশ্চিমীয় লাহোর লিপিতে বয়স সংক্রান্ত উভয় শ্লোক ই অনুপস্থিত। উল্লেখ্য যে উত্তর-পূর্ব অঞ্চলীয় পাণ্ডুলিপি আর উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলীয় পাণ্ডুলিপিসমূহের মধ্যে উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় লিপিসমূহই অধিকতর প্রাচীন। বাংলা অঞ্চলের লিপিতেও রামের বয়স উল্লেখিত নেই। উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় লিপিসমূহ অনুযায়ী বনবাসকালে রামের বয়স ছিল ২৫ এবং উত্তর পশ্চিমাঞ্চলীয় লিপিসমূহ অনুযায়ী ২৮ বছর।
শ্রীরাম ও মাতাসীতা যে সে বিয়ের সময় যুবাবস্থায় ছিলেন তার অনেক প্রমাণ রামায়ণেই পাওয়া যায়। মাতা সীতার স্বয়ংম্বরে ঋষি বিশ্বামিত্র শ্রীরাম ও ভ্রাতা লক্ষ্মণকে নিয়ে জনকপুরীতে উপস্থিত হলে রাজা জনক তাদের দেখে একথা বলেন-
আবার তখন রাজা জনক সীতার বিবাহের সন্দর্ভে বললেন -
অপরদিকে ১২ বছর শশুরবাড়িতে থাকার পর বনবাসে যাবার যে শ্লোকটিকে কেন্দ্র করে হিসেব কষে অপপ্রচার চালানো হয় যে বিয়ের সময় শ্রীরামের বয়স ছিল ১৩ বছর সে শ্লোকটি যে মূল রামায়ণের শ্লোক নয় তা Baroda Oriental Institute পাণ্ডুলিপি পরীক্ষা করে প্রমাণ করলেও তার প্রত্যক্ষ প্রমাণ রামায়ণেই আছে।
আমরা জানি রামায়ণের আদিকাণ্ডের অধিকাংশ ই অপ্রামাণিক, পরবর্তীকালের রচিত, মূল রামায়ণের অংশ নয়। সেই আদিকাণ্ডেই দেখা যাচ্ছে ঋষি বিশ্বামিত্র যখন শ্রীরামকে বনে দস্যুদের মোকাবেলা করার জন্য চাইতে রাজা দশরথের কাছে গেলেন তখন দশরথ বলছেন-
অর্থাৎ আমার রাজীবলোচন রামের বয়স ১৬ ও হয়নি( অর্থাৎ ১৬ ছুঁই ছুঁই), সে কি ওই ভীষণ রাক্ষসদের সাথে যুদ্ধ করার যোগ্য!
অর্থাৎ আদিকাণ্ডের এই শ্লোকে দেখা যাচ্ছে শ্রীরাম ঋষি বিশ্বমিত্রের সাথে বনে যাবার কালেই তাঁর বয়স ১৬ ছুঁই ছুঁই, অর্থাৎ বিয়ে হবার আগেই ১৬। তাহলে যে শ্লোকটিকে দেখিয়ে বলা হচ্ছে বিয়ের সময় ই বয়স ছিল ১৩ তা যে অবাস্তব এখান থেকেও তা প্রমাণিত।
আবার আগেই বলেছি গবেষকদের মতে বাল্মীকি রামায়ণের আদি ও উত্তর কাণ্ড পরবর্তীকালে রচিত বৈষ্ণব সাহিত্য যেখানে মূল রামায়ণের সাথে এই দুইটি কাণ্ড জুড়ে দিয়ে শ্রীরামকে মর্যাদা পুরুষোত্তম এর পরিবর্তে নারায়ণের অবতার দেখানোর প্রচেষ্টা করা হয়েছে। আর এই ধরনের পৌরাণিক সাহিত্যের একটি বৈশিষ্ট্য হলো নায়কের বয়সকে ইচ্ছাকৃতভাবে কম দেখানো যাতে তার কৃত কর্মসমূহের মাহাত্ম্য অলৌকিক মনে হয়। যেমনটি হরিবংশে কংসবধকালে শ্রীকৃষ্ণের বয়স কিছুস্থানে যুবক লেখা থাকলেও কিছু স্থানে তাঁর অলৌকিকত্ব প্রদর্শনের জন্য তাঁকে সেখানে ১০-১১ বছরের বালক বড় বড় বিখ্যাত মল্লযোদ্ধাদের পরাজিত করছেন এরকম উল্লেখ করা হয়েছে। আদিকাণ্ডের এই শ্লোকটিতেও এই ঘটনাটিই ঘটেছে। পরবর্তীকালের বৈষ্ণব কবি শ্রীরাম একদম ১৬ বছর বয়সেই বনের দস্যুদের যুদ্ধে একা পরাজিত করেছেন এটা দেখিয়ে তাঁর মাহাত্ম্যবৃদ্ধি করেছেন, অর্থাৎ ওইসময় তাঁর বয়স আদতে আরও বেশী ই ছিল। অথচ এই বয়স কমিয়ে দেখানো শ্লোক অনুযায়ীও বিয়ের সময় তাঁর বয়স ১৬ এর অধিক ছিল, তাহলে কীভাবে বিয়ের সময় তাঁর বয়স ১৩ বলে প্রচার করছে অপপ্রচারকারীরা!
BOI এর Critical Edition এর অরণ্যকাণ্ডের সম্পাদক P.C Diwanji ১ বছর শ্বশুরালয়ে থাকার শ্লোকটিকে স্থান দেয়ার প্রসঙ্গে লেখেন -“it very well suits the context.”
আরেকটি লক্ষ্যণীয় বিষয় যেটি কেউ খেয়াল করেনা তা হলো এই যে নকল শ্লোকটিতে লেখা হলো বিয়ের পর রামসীতা ১২ বছর ধরে অযোধ্যায় বাস করার পর তারপর বনবাসের ঘটনা ঘটল। অথচ রামায়ণে শ্রীরামের প্রায় প্রতিটা সময়ের সব কাজকর্মের বর্ণনা থাকলেও ওই ১২ বছরের কোন কথা ই উল্লেখিত নেই, একদম ধুম করে যেন একটি অধ্যায় থেকে পরের অধ্যায়ে যেতেই মাঝখানে ১২ বছর ভ্যানিশ! এই বিষয়টি পুরো বাল্মীকি রামায়ণের রচনাশৈলীর সাথে একদম ই বেমানান কেননা বাল্মীকি রামায়ণে শ্রীরামের পদে পদে প্রতিটি সময়ের কথা বিস্তারিত বর্ণিত হয়েছে তাই হঠাৎ করে মাঝখানের ১২ বছর নিয়ে কোন কথাই বলা হলো না এটা অস্বাভাবিক। India's most renowned christian hindi scholar নামে খ্যাত Camile Bulcke তার রামকথা অনুবাদের ৩৫৯ নং পৃষ্ঠায় এই বিষয়টি নিয়ে আলোকপাত করেন। বিষ্ণুর একজন অবতার এভাবে ১২ বছর ধরে কিছুই করলেন না, একদম নীরবে বসে থাকলেন, সেসময়টা নিয়ে ১টি বাক্যও রামায়ণে নেই এটা অসম্ভব, নিশ্চয়ই এই ১২ বছরের কথাটি পরবর্তীকালের রচিত অংশ।
অতএব, প্রাচ্যবিদ্যা গবেষকদের বক্তব্য, বেদের বাল্যবিবাহ নিষিদ্ধের নির্দেশ, আশ্বলায়ন গৃহ্যসূত্র ও সুশ্রুত সংহিতার বিধান এবং রামায়ণে প্রাপ্ত পারিপার্শ্বিক সকল প্রমাণে এটি নিশ্চিত যে উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় লিপিসমূহের অনুযায়ী বিয়ের সময় শ্রীরাম ও মাতা সীতার বয়স যথাক্রমে কমপক্ষে ২৪ ও ১৭ এবং উত্তর পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রাচীনতর লিপিসমূহের অনুযায়ী কমপক্ষে ২৭ ও ২০ ছিল। ইতিহাসবিদেরা বলেন ভারতবর্ষে বাল্যবিবাহের সূত্রপাত হয়েছিল ৭ম শতকের দিকে যা পরবর্তীতে তুর্কি,মুঘল ইত্যাদি বহিরাগতদের আক্রমণের হাত থেকে মেয়েদের রক্ষা করার হেতুরূপে তীব্রতর আকার ধারণ করে। বৈদিক যুগের সকল লিখনিতেই নারীদের যুবাবস্থায় বিয়ের উল্লেখ পাওয়া যায়। অপরদিকে সনাতন ধর্মের সর্বোচ্চ সংবিধান পবিত্র বেদ স্পষ্টই বলছে বাল্যবিবাহ নিষিদ্ধ, যুবাবস্থায় ব্রহ্মচর্য আশ্রম সমাপ্ত করেই নারী-পুরুষ বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হবে। তাই পুরাণ নামক মধ্যযুগীয় কল্পকাহিনীর বইয়ের অজুহাত দিয়ে সনাতন ধর্মে বাল্যবিবাহ সমর্থনের কোন সুযোগ নেই।
ও৩ম্ শান্তি শান্তি শান্তি
Sources:
[1] Valmiki Ramayana – Hanumanta Rao
[2] Valmiki Ramayana – Rajsekhar Basu
[2] Valmiki Ramayana – Upendranatha Mukhopadhyay
[3] Valmiki Ramayana, CE – Volume 1
[4] Valmiki Ramayana with Tilaka commentary
[5] Valmiki Ramayana – IIT
[6] Aashwalayana Grihyasutra
[7] Valmiki Ramayana, CE – Volume 3
[8] Ramkatha – Camille Bulcke