দৈনিক বেদবাণী


এই সমগ্র সংসার নিরোগ এবং শুভচিন্তা যুক্ত হোক । যজুর্বেদ ১৬.৪                    সূর্য-এর আলোয় স্বয়ং আলোহীন চাঁদ আলোকিত হয় । ঋগ্বেদ ৫.৪০.৫                    প্রশংসনীয় সংস্কৃতি, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও মাতৃভূমি— এই ত্রয়ী সুখ-সমৃদ্ধি প্রদান করে। ঋগ্বেদ ১.১৩.৯                    উত্তম জীবন লাভের জন্য আমাদের জ্ঞানীদের সাহচর্যে চলা উচিৎ। ঋগ্বেদ ১.১২.১৬                    যে ব্যক্তি সম্পদ বা সুখ বা জ্ঞান নিঃস্বার্থভাবে দান করে, সে-ই প্রকৃত মিত্র। ঋগ্বেদ ২.৩০.৭                    মানুষ কর্ম দ্বারাই জগতে মহত্ত্ব ও প্রসিদ্ধি লাভ করে। ঋগ্বেদ ৩.৩৬.১                    হে পতি! তোমার স্ত্রীই গৃহ, স্ত্রীই সন্তানের আশ্রয়। ঋগ্বেদ ৩.৫৩.৪                    পরমাত্মার নিয়ম বিনষ্ট হয় না; তা অটুট, অচল ও অপরিবর্তনীয়। ঋগ্বেদ ৩.৫৪.১৮                    এই ধর্মের মার্গই সনাতন, এই পথে চলেই মানবগণ উন্নতি লাভ করে। ঋগ্বেদ ৪.১৮.১                    পরমাত্মার নিকট কোনো মানুষই বড় বা ছোট নয়। সকল মানুষই সমান এবং পরস্পরের ভ্রাতৃস্বরূপ। ঋগ্বেদ ৫.৬০.৫                    যে ব্যক্তি অকারণে অন্যের নিন্দা করে, সে নিজেও নিন্দার পাত্র হয়। ঋগ্বেদ ৫.২.৬                    নিশ্চিতরূপে এই চতুর্বেদ কল্যাণপ্রদায়িনী এবং মানবকে জ্ঞান প্রদান করে ধারণকারিণী। ঋগ্বেদ ৫.৪৭.৪                    বীর মানবের জন্য পর্বতও সুগম হয়ে যায়। ঋগ্বেদ ৬.২৪.৮                    আমরা অন্যের সঞ্চিত পাপের কর্মফল ভোগ করি না। ঋগ্বেদ ৬.৫১.৭                    হে মিত্রগণ! ওঠো— উদ্যমী হও, সাবধান হও এবং এই সংসাররূপী নদীকে অতিক্রম করো। ঋগ্বেদ ১০.৫৩.৮







প্রাচীন ভারতে বাল্যবিবাহ ও বিবাহকালে কৃষ্ণ-রুক্মিণীর বয়স

সত্যান্বেষী
0

 


সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এখন বাল্যবিবাহের বিভিন্ন অর্ধসত্য ও মিথ্যা তথ্যে সয়লাব। সে প্রসঙ্গেই চলে আসে প্রাচীন ভারতে বাল্যবিবাহ প্রথা চালু হলো কবে থেকে সে বিষয়ক সমাচার। আর একই ধারায় চলে আসে শ্রীরাম ও শ্রীকৃষ্ণের বিয়ের প্রসঙ্গও। গতদিন আমরা দেখেছি বিয়ের সময় শ্রীরাম ও মাতা সীতার বয়স ছিল সর্বনিম্ন ২৪ ও ১৭ বছর। আজ আমরা দেখব বিয়ের সময় শ্রীকৃষ্ণ দম্পতির বয়সের বিষয়টি। 
 
উল্লেখ্য যে বাল্যবিবাহ এমন একটি প্রথা যেখানে বর ও কনে উভয় ই বালক- বালিকা থাকেন। এক্ষেত্রে মূলত অভিভাবকদের উদ্যোগেই বিয়ের প্রক্রিয়াটি হয়ে থাকে। পাত্র ও পাত্রী অল্পবয়স্ক হওয়াতে তাদের মতের গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা সেখানে অনুপস্থিত। এমনকি ১০০ বছর আগেও আমরা দেখি উপমহাদেশে হিন্দু মুসলিম উভয় সমাজেই প্রচুর বাল্যবিবাহ হতো। বিদ্যাসাগর থেকে বঙ্গবন্ধু সকল ব্যক্তির জীবনেই এই বিষয়টি দেখা যায়। পাশাপাশি আরেক ধরনের বিয়ের প্রচলন সমাজে দেখা যেতো এবং আজও হয়তো কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় যেখানে সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব প্রতিপত্তি ব্যবহার করে অনেক বয়স্ক পুরুষরা অল্প বয়স্কা বালিকা মেয়েদের বিয়ে করত। বিদ্যাসাগর বা বঙ্গবন্ধুদেরকে সেই পর্যায়ে ফেলার সুযোগ নেই কেননা তাঁদের বিয়ের সময় বরকনে উভয়েই কমবয়স্ক ছিলেন অর্থাৎ এখানে পাত্রপাত্রীকে দোষের দৃষ্টিতে দেখার সুযোগ নেই এবং সেক্ষেত্রে বয়সের ব্যবধানটি দৃষ্টিকটু নয়।
 
আবার তাঁরা নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে প্রাতঃস্মরণীয় হলেও তাঁদেরকে কেউই সর্বকালের সর্বযুগের শ্রেষ্ঠ মহামানব দাবী করা হয়না, সকল মানবের জীবন আদর্শ বলে তাদের নাম প্রচার করা হয়না। তাঁরা কেবলই নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে সেরা যাঁরা জীবনের অনেক বিষয়েই স্ব স্ব সময়ের সমাজের গণ্ডীর বাইরে যেতে পারেন নি। তাই তাঁদেরকে উদাহরণ হিসেবে ব্যবহার করে অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলেমেয়ের বিয়ে দেয়াকে নৈতিক বৈধতা প্রদানের সুযোগ নেই। তাঁরাও কখন দাবী করেন নি তাঁদের জীবন শতভাগ আদর্শ জীবন, তাঁদের অনুসরণ না করলে নরকপ্রাপ্তি হবে।
 
প্রাচীন ভারতে কীভাবে ও কখন বাল্যবিবাহ শুরু হলো এই প্রসঙ্গে আলোকপাত অতীব প্রয়োজন। আমরা এ বিষয়ে ভারতবর্ষের প্রাচীনকাল হতে আধুনিক সময় পর্যন্ত সম্পূর্ণ ইতিহাস নিয়ে লেখা ১১ খণ্ডের প্রাতঃস্মরণীয় গ্রন্থ "The History and Culture of the Indian People" এর সাহায্য নেবো। বিখ্যাত ইতিহাসবিদ রমেশচন্দ্র মজুমদার এই সিরিজটির সাধারণ সম্পাদক। তিনি ছাড়াও
V. M. Apte, A. D. Pusalker, B. K. Gosh, H. D. Sankalia, S. Roy, A. K. Majumdar, P. M. Joshi, N. Venkataramanya, S. K. Chatterjee, S. K. Saraswati, J. N. Chaudhuri, G. S. Sardesai, A. L. Srivastava, Abdur Rashid and S. Roy এর মতো বিখ্যাত পণ্ডিতরা এই ১১ খণ্ডের লেখক হিসেবে ইতিহাসের প্যালিওলিথিক যুগ হতে বৈদিক যুগ হয়ে মৌর্য, শক,হুন, সালতানাত, মুঘল, ব্রিটিশ থেকে আধুনিককাল পর্যন্ত সকল ইতিহাস বর্ণনা করেছেন ভারতবর্ষের।
 
বইটির ১ম খণ্ডে 392 নং পৃষ্ঠায় The Vedic Age বা বৈদিক যুগ সময়কালের বিয়েপ্রথা নিয়ে বলা হয়েছে-
 
"The frequent mention of unmarried girls like Ghoshā, who grew up in the houses of their parents, the references to the ornaments worn by maidens at festival occasions in order to win lovers to a youth's courtship of the maiden he loves, to the lover's gitts, to their mutual love and to the spell by which a lover hopes to lull the whole household to sleep while he visits his beloved-all this evidence speaks in favour of the custom of girls normally marrying long after they had reached puberty. Some of the passages mentioned above, but not all, may refer to the hetaera class as existing in Vedic society. "
অর্থাৎ ঋগ্বেদ হতে মন্ত্র উল্লেখ করে ইতিহাসবিদরা বলছেন সে সময় বয়ঃসন্ধিকালের অনেক পরে বিয়ে হতো, স্বয়ম্বর সভা হতো, যুবক যুবতীরা একে অপরকে পছন্দ করে বিয়ের করার রীতি ছিল, এমনকি অনেক নারী বিদূষী ছিলেন যাঁরা জ্ঞানসাধনার জন্য অবিবাহিত ই থেকে যেতেন। 
 
আরও বলছে-
"There seems to have been considerable freedom on the part oï young persons concerned in the selection of a wife or husband, as they generally married at a mature age." অর্থাৎ প্রাপ্তবয়স্ক হবার পরেই নিজ নিজ পছন্দের স্বাধীনতা থাকত জীবনসঙ্গী নির্বাচনে।
 
বইটির ২য় খণ্ডে বলা হয়েছে বৈদিক পরবর্তী স্মৃতিশাস্ত্রীয় যুগ নিয়ে। স্মৃতিশাস্ত্রীয় যুগকে দুইটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম ভাগ সম্বন্ধে বলা হয়েছে-
 
"There are, however, clear indications that during the first half of the period under review, at any rate, there were highly educated women, holding an honourable position in society and household. Two classes of women students are mentioned: Brahmavādini or lifelong students of sacred texts, and Sadyodvāhā who prosecuted their studies till their marriage. Panini refers to women students of Vedic Sākhās. Kātyāyana, in his Värttika, refers to women teachers who were called Upādhyāyā or Upādhyāyī, as distinguished from Upādhyāyānīs, i.e. wives of teachers. The necessity of coining a new term shows that the women teachers were large in number. Patañjali also refers to a special designation for the women scholars who made a special study of Mimāṁsā philosophy.
The Buddhist and Jain texts also refer to women of the Brahmavadini class, i.e. those who remained unmarried to carry on their studies. Most of the Buddhist nuns, whose songs have been preserved in the Therīgāthā, were maidens born in well-to-do families, who renounced the world for the sake of spiritual salvation. "
 
অর্থাৎ স্মৃতিশাস্ত্রীয় যুগের প্রথম ভাগেও বাল্যবিবাহের প্রচলন তখনও হয়নি। নারীরাও উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হতেন, তাঁরা অধ্যাপিকা হতেন যাঁদের বলা হতো উপাধ্যায়ী। ব্রহ্মবাদিনী নারীগণও ছিলেন যাঁরা জ্ঞানসাধনা ও ধর্মীয় শিক্ষা প্রচারের জন্য আজীবন অবিবাহিত ই থাকতেন। যুবতী মেয়েরা উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করে বিয়ে করতেন যাঁদের বলা হতো সদ্যবহু। পাণিনি, কাত্যায়ন এই শ্রেণীর নারীদের কথা উল্লেখ করেছেন। তৎকালীন বৌদ্ধ ও জৈন গ্রন্থেও একই ধরনের প্রমাণ পাওয়া যায়।
 
কিন্তু স্মৃতিশাস্ত্রীয় যুগের দ্বিতীয়ভাগেই ধীরে ধীরে শুরু হলো সামাজিক অবক্ষয়। বলা হচ্ছে - 
There was already a tendency in sutra text to lower the age of marriage for girls. Later Smritis like Yajnavalkya insisted that girl should be given marriage before they reach puberty. 
অর্থাৎ স্মৃতিশাস্ত্রীয় যুগের দ্বিতীয়ভাগে সমাজে নারীদের সম্মান কমতে শুরু করে। নারীদের শিক্ষার চেয়ে তাদের দৈহিক অবস্থাকেই তাদের সম্মানের প্রধান প্রতীক হিসেবে নেয়ার ভাবধারা শুরু হয়। এতে করে তাদেরকে যত দ্রুত বিয়ে দিয়ে দেয়া যাবে তত পূণ্য এমন একটি ধারা প্রচলিত হয়। 
 
বৈদিক যুগে নারীদের প্রাপ্তবয়স্ক পূর্ণ শিক্ষিত হবার পর বিয়ে হলেও স্মৃতিশাস্ত্র যুগের দ্বিতীয় ভাগে অর্থাৎ বৌদ্ধ যুগের পর থেকে বিভিন্ন স্মৃতিশাস্ত্রগুলোতে ধীরে ধীরে নারীদের কম বয়সেই বিয়ে দেয়ার পক্ষে বিভিন্ন শ্লোক লেখা হতে থাকে। পরবর্তীকালের স্মৃতিশাস্ত্র যেমন যাজ্ঞবল্ক্য স্মৃতি ইত্যাদিতে শ্লোক রচনা করা হয় যে বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছানোর আগেই মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেয়া উচিত। অর্থাৎ খ্রিষ্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতকের পর থেকে ধীরে ধীরে নারীদের বিয়ের বয়স কম দেখানো শ্লোকগুলো রচনা শুরু করা হয়। তবে এ যুগে চূড়ান্ত অধঃপতন হয়নি সমাজে নারীদের, তাই বলা হচ্ছে But the final stage in this downward movement was not reached in during the period under review.
 
আরও খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি কথা উঠে এসেছে লেখকদের আলোচনায় এ অংশে।
 
"It was rather a transitional period, and we really find two entirely different pictures of women reflected in literary works. In one set of verses in the epics we find women described as fickle, quarrelsome, untruthfulin other words, a veritable pot of poison! She must, therefore, remain (we are told) under control all her life; in girlhood under the guardianship of her father, in youth under the domination of the husband, and in old age in the charge of her sons. In the other set of verses, woman is 'the glory of the home', the symbol of prosperity to the family, (the better) half of the husband, his friend, philosopher and guide, and therefore worthy of all attention and respect. As a mother, she is superior to ten fathers, superior to anything else on earth.
The same sort of contradiction appears in the Smriti works. Manu, for example, declares that gods are pleased with (those households) where women are held in honour, and that a husband should be punished by the king if he cast off the wife, who is not guilty of any crime causing loss of caste. At the same time, he lays down that the husband had absolute rights over the wife to the extent of inflicting corporal punishment and could discard her immediately she says anything disagreeable to him. It is also declared that "by a girl, by a young woman, or even by an aged onc, nothing must be done independently, even in her own house."
অর্থাৎ এই যুগের প্রথম দিকে নারীদের সম্মান অনেকটা বৈদিক যুগের মতোই থাকলেও পরেরদিকে যে তার অবনমন ঘটে এই বিষয়টি স্মৃতিশাস্ত্র ঘাঁটলেই দেখা যায়। যেমন আমরা মনুস্মৃতিতেই দেখি কিছু শ্লোকে নারীদের অত্যন্ত উচ্চ মর্যাদা দেয়া হয়েছে যেগুলো হলো আসল মনুসংহিতার মূল শ্লোক, আবার কিছু শ্লোকে নারীদের অত্যন্ত অবমাননা করা হয়েছে যেগুলো এই যুগের দ্বিতীয়ভাগে রচিত নকল শ্লোক। আজ আমরা জানি মনুস্মৃতিতে থাকা ২৬৮৫ টি শ্লোকের ১৪০০ এর অধিক শ্লোক ই নকল বা প্রক্ষিপ্ত শ্লোক। মেধাতিথির ন্যায় প্রাচীন পৌরাণিক আচার্যরাও মনুসংহিতায় এই নকল শ্লোক সংযুক্ত হবার বিষয়টি স্বীকার করে গেছেন। এভাবেই এই যুগের দ্বিতীয়ভাগে নারীদের সামাজিক অবস্থান অবনমিত হতে শুরু করে এবং তা জোরদার করার জন্য সমাজপতিরা স্মৃতিশাস্ত্রে নকল শ্লোক রচনা করে নারীর বিয়ের বয়স কম দেখাতে শুরু করেন কেননা সমাজের সাধারণ মানুষকে ধর্মগ্রন্থের শ্লোকরূপে কম বয়সে বিয়ের নির্দেশ দেখালে তারা সহজেই তা মেনে নেবে।
 
এরপর বইটির ৩য় খণ্ডে আলোচিত হয়েছে Classical Age নিয়ে(খ্রিষ্টপূর্ব ৩য় শতক থেকে খ্রিষ্টীয় ৬ষ্ঠ শতক), যখন কিনা মহাভারত রামায়ণের পাণ্ডুলিপি পূর্ণতাপ্রাপ্ত হতে শুরু করে পরবর্তীকালের কবিদের হাত ধরে, ব্যাসদেব ও বাল্মীকিমুণির রচিত প্রাচীন শ্লোকের সাথে কয়েকগুণ নতুন শ্লোক রচিত হয় নব্য কবিদের হাতে, বৈষ্ণব সাহিত্যের রচনাও শুরু হয় এ সময়ে, অশোকলিপিও এই সময়কার ই ঘটনা। মহাভারতের কিছু প্রামাণ্য শ্লোকের সাথে বিপুল পরিমাণে নতুন রচনা যুক্ত হয়ে রচিত হয় হরিবংশ। আর এই যুগেই প্রাচীন পুরাণ সমূহের রচনাও শুরু হয় এবং চূড়ান্ত অধঃপতন ঘটে নারীদের অবস্থানের। এই যুগেই পুরাণে নারীদের ৮ বছর বয়সেই বিয়ে দিয়ে দেয়া, মাতা সীতার বিয়ের বয়সকে কমিয়ে ৬ বছর দেখানো, মাতা রুক্মিণীর বিয়ের বয়স কমিয়ে স্কন্দ,পদ্ম সহ বিভিন্ন পুরাণে ৮ বছর দেখানোর জন্য নকল শ্লোকগুলো রচিত হওয়া শুরু করে। ইতিহাসবিদগণ এই অংশে বলছেন-
 
"The rules relating to marriage, formulated in the older Smsitis, are not materially altered during this period, but there is a growing tendency to lower the marriageable age of girls. Some texts make it compulsory for the guardian to marry the girl before puberty. According to Vishnu Purāna the age of the bridegroom should be three times that of the bride."
 
অর্থাৎ এই ক্লাসিকাল তথা বৈষ্ণব সাহিত্যের পৌরাণিক যুগে বিয়ের পদ্ধতি আগের স্মৃতিযুগের মতোই থাকলেও মেয়েদের বিয়ের বয়স আরও কমতে শুরু করে। সেগুলোর পক্ষে পুরাণসমূহে প্রচুর শ্লোক রচিত হতে থাকে। বিষ্ণুপুরাণে শ্লোক রচনা করা হয় যে বরের বয়স কনের অন্তত ৩ গুণ হওয়া উচিত। আর এই শ্লোকগুলোর রেফারেন্স ই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন বিচরণ করছে সনাতন ধর্মে বাল্যবিবাহের সমর্থন আছে দেখানোর জন্য যদিও সনাতন ধর্মের প্রধান ধর্মগ্রন্থ পবিত্র বেদ স্পষ্টই বাল্যবিবাহকে নিষিদ্ধ করেছে এবং শিক্ষাজীবন সম্পূর্ণ করে যুবাবস্থায় নারীপুরুষকে বিয়ে করতে নির্দেশ দিয়েছে। এভাবেই খ্রিষ্টপূর্ব ৩য় শতক থেকে খ্রিষ্টীয় ৬ষ্ঠ শতকের মধ্যে সনাতন সমাজে পৌরাণিক ভাবধারা একদম জেঁকে বসে, নারীদের অবস্থার চূড়ান্ত অবনমন হয়, বর্ণাশ্রম ধর্ম সম্পূর্ণরূপে বর্ণপ্রথায় রূপান্তরিত হয়। লেখকদের লেখাতেও উঠে এসেছে ৭ম শতকের সময় হতে দেখা যায় এই পৌরাণিক প্রথাই সমাজে প্রচলিত হয়ে যায় যে মেয়েদের ৬ বা ৮ বছর বয়সেই বিয়ে দিয়ে দিতে হবে-
 
"As regards the marriageable age of girls, Medhātithi agrees with the views of the authorities of the preceding age. Girls, says he, should be given away in marriage when they are eight or six years old and called nagnikā. Again he says 106 that the right time for giving away a girl in marriage is between her eighth year and her attaining puberty."
 
আর এজন্যেই আমরা দেখতে পাই পুরাণসমূহে বাল্যবিবাহ নিয়ে যত নকল শ্লোক রয়েছে সবগুলোতেই কনের বয়স হয় ৬ অথবা ৮ দেয়া হয়েছে। আর বর্তমান প্রজন্ম ইতিহাস না জেনেই সেগুলোকে সত্য ধরে মাতা সীতার বিয়ের বয়স ৬ আর মাতা রুক্মিণীর বিয়ের বয়স ৮ প্রচার করছে যাতে যোগ দিয়েছে অনেক নামধারী শিক্ষক, ধর্মীয় নেতা, ফেসবুক সেলিব্রিটিরা যাদের অধ্যয়নের সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিচরণের কারণে এতই হ্রাস পেয়েছে যে তারা আর গবেষণা বা পড়াশোনার প্রয়োজন বোধ করেন না।
 
আর পুরাণের এতগুলো নকল শ্লোকের মাঝেই ক্লাসিকাল যুগের প্রথম দিকে রচিত হরিবংশের একটি শ্লোকে বিয়ের সময় শ্রীকৃষ্ণ পত্নী মাতা রুক্মিণীর আসল বয়সের ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
 
হরিবংশ বিষ্ণুপর্ব ৫৯।৩৭-৩৮ এ দেখা যায় শ্রীকৃষ্ণ যেদিন রুক্মিণীকে দেখেন-
 
কৃষ্ণেন মনসা দৃষ্টাম দূর্নির্লক্ষ্যম্ সুরৈরপি।।
শ্যামাবদাতা সা হ্যাসীৎ পৃথুচার্বাযতেক্ষণা
অর্থাৎ যাঁর দর্শন পাওয়া ছিল অতীব কঠিন তাঁকে শ্রীকৃষ্ণ নিজের অন্তর দিয়ে দর্শন করলেন যিনি ছিলেন গৌরবর্ণ ১৬ বছর বয়স্কা আয়তচক্ষু।
 

 
অর্থাৎ বিবাহের সময় রুক্ষ্মিণীর বয়স ছিলো কমপক্ষে ১৬ বছর । আর আগেই দেখিয়েছি ক্লাসিকাল যুগের সাহিত্যে মেয়েদের বিয়ের বয়স কমানো হচ্ছিল, আর সেই কমিয়ে দেখানো পর্যায়ের শ্লোকে মাতা রুক্মিণীর বয়স দেখানো হয়েছে ১৬ বছর। অর্থাৎ এই ১৬ হলো বিয়ের সময় তাঁর ন্যূনতম বয়স, সম্ভাবনা এটাই অধিক যে মূলত তাঁর বয়স আরও বেশীই ছিল। আর বলাই বাহুল্য শ্রীকৃষ্ণকর বয়স তখন আরও বেশী ছিল, তিনি তখন ছিলেন দ্বারকার De Facto রাজা।
 
এটিই হলো প্রাচীন ভারতে বাল্যবিবাহের ইতিহাস। বৈদিক যুগে বেদের আদেশ মেনে চলা সমাজে বাল্যবিবাহ হতো না, নারীরাও পুরুষের সমান মর্যাদা পেতো, তাঁরা অধ্যাপিকা, ব্রহ্মবাদিনী হতেন, যোদ্ধা হতেন, রাজা হতেন। পরবর্তীতে স্মৃতিশাস্ত্রীয় যুগের প্রথম পর্যায়ে নারীদের অবস্থান প্রায় বৈদিক যুগের মতো থাকলেও দ্বিতীয় পর্যায়ে অর্থাৎ খ্রিষ্টীয় ৬ষ্ঠ শতকের পর বৈদিক শিক্ষার অভাবে নারীদের সমাজে অবস্থান কমতে থাকে, তাদের বিয়ের বয়স কমতে থাকে এবং তাকে বৈধতা প্রদানের জন্য বিয়ের বয়স কম হওয়া উচিত এমন শ্লোক রচিত হতে থাকে যা আমরা মনুসংহিতায় বর্তমানে দেখতে পাই।
মনুসংহিতায় আমরা দেখি প্রথম দিকের শ্লোকসমূহে নারী অধিকারের পক্ষে কথা বললেও পরবর্তীতে যুক্ত হওয়া নকল শ্লোকগুলোতে নারী অধিকারের বিপক্ষে অমানবিক সব বক্তব্য। এরপর ক্লাসিকাল যুগে( খ্রিষ্টীয় ৩য় শতক বা তার পর) পুরাণসহ বৈষ্ণবীয় সাহিত্য রচিত হতে থাকে যখন সমাজে বেদজ্ঞানের অভাবে অবক্ষয় চরমে। সে সময় সব পুরাণ ও অন্যান্য সাহিত্যে বর্ণপ্রথা ও বাল্যবিবাহকে বৈধতা দেয়ার জন্য বেদবিরুদ্ধ সকল শ্লোক রচনা করা হয়। নারীদের ৬ বা ৮ বছরে বিয়ে না দিলে তা পিতার জন্য মহা অমঙ্গল বলে ঘোষণা করা হয় বিষ্ণুপুরাণ সহ অন্যান্য পুরাণে। আর ঐতিহাসিক সব চরিত্র যেমন মাতা সীতা বা মাতা রুক্মিণী সহ সকলের বিয়ের বয়স ই গণহারে ৬ বা ৮ দেখিয়ে নতুন শ্লোক রচনা করা হয় যেগুলো এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চর্চার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু সতর্কতার সাথে পর্যবেক্ষণে আমরা গতকাল দেখেছি মাতা সীতার বিয়ের সময় বয়স কমপক্ষে ১৭ এবং মাতা রুক্মিণীর কমপক্ষে ১৬ ছিল। শেষ করব বিয়ের বয়স প্রসঙ্গে সনাতন ধর্মের সর্বোচ্চ আইন পবিত্র বেদে দেয়া ঈশ্বরের আদেশ দিয়ে-
য়ুবা সুবাসাঃ পরিবীত আগাৎ স উ শ্রেয়ান ভবতি জায়মানঃ ।
তং ধীরাসঃ কবয় উন্নয়ন্তি স্বাধ্যো ৩ মনসা দেবয়ন্তঃ ॥
(ঋগ্বেদ ৩/ ৮/ ৪)
অনুবাদঃ যে পুরুষ সর্বতােভাবে যজ্ঞােপবীত ধারণ ও ব্রহ্মচর্য সেবন দ্বারা বিদ্বান্ এবং সু শিক্ষিত হইয়া , সুন্দর বস্ত্র পরিধান পূর্বক , ব্রহ্মচর্য্যযুক্ত পূর্ণ যৌবন প্রাপ্ত হইয়া , বিদ্যাগ্রহণ করিয়া গৃহাশ্রমে প্রবেশ করেন , তিনিই দ্বিতীয় বিদ্যাজন্মে প্রসিদ্ধি লাভ করিয়া অতিশয় শােভাযুক্ত ও মঙ্গলকারী হন । উত্তম ধ্যানযুক্ত বিজ্ঞান দ্বারা বিদ্বানেরা সেই পুরুষকে উন্নতিশীল করিয়া প্রতিষ্ঠিত করেন । আর যে স্ত্রী পুরুষ , ব্রহ্মচর্য্য ধারণ , বিদ্যা এবং সুশিক্ষা গ্রহণ না করিয়া বাল্যাবস্থায় বিবাহ করে তাহারা নষ্ট - ভ্রষ্ট হইয়া বিদ্বান্ ব্যাক্তিদের মধ্যে সম্মান লাভ করেনা ॥
ও৩ম্ শান্তি শান্তি শান্তি
বাংলাদেশ অগ্নিবীর
সত্য প্রকাশে নির্ভীক সৈনিক

Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)