ঘড়ি কেন ঘড়ি ? - অগ্নিবীর

 


প্রাচীনকালে ভারতীয় উপমহাদেশে বৈদিক আর্যগণ দিনের বেলায় সময় পরিমাপের জন্য আবিস্কার করেন সূর্যালোকের আপতন ও বিচ্যুতি পরিমাপের মাধ্যমে সময় মাপার কৌশল যাকে বর্তমানে আমরা বলি সূর্যঘড়ি। ভারতের কোনার্কের সূর্যমন্দিরসহ বেশকিছু প্রাচীন মন্দিরে এখনও সেই প্রাচীন সূর্যঘড়ি বা Sundial টিকে আছে।
এ তো গেল দিনের বেলার বিষয়, কিন্তু রাতের বেলা কীভাবে সময় পরিমাপ হবে? বৈদিক আর্যগণ এই সমস্যা সমাধানেরও দুটো উপায় বের করলেন। একটি হলো চাঁদের আলোর আপতন ও বিচ্যুতি পরিমাপের মাধ্যমে যাকে বলা হয় চান্দ্রঘড়ি কিন্তু অমাবস্যায় তো চাঁদের আলো থাকেনা, ঝড়বৃষ্টির বিষয়ও আছে। সূর্যও সবদিন সমান আলো দেয়না। তাই সূর্য ও চন্দ্রের আলোপ্রাপ্তির উপর নির্ভর না করেই সময় পরিমাপ করার একটি পদ্ধতি তারা আবিস্কার করলেন জল দিয়ে। দিন ও রাতকে মোট ৬০ টি সমান ভাগে ভাগ করা হলো, প্রতিটি ভাগের নাম দেয়া হলো ঘড়ি এবং দিনকে ও রাতকে আলাদাভাবে ৪ টি করে ভাগে ভাগ করা হয় যাকে বলা হতো পহর(প্রহর)। এই ঘড়ি মাপার জন্য প্রতিটি নগরে কিছু লোক নিযুক্ত করা হলো আর তাদের নাম দেয়া হলো ঘড়িয়াল। একটি পাত্রের নিচে ছিদ্র করে চিকন নল বসানো হতো। সেই নল দিয়ে ফোঁটায় ফোঁটায় পানি পড়ত নিচের আরেকটি পাত্রে। ওই পাত্রে রাখা হতো ধারকাটা একটি ভাসমান দণ্ড। দণ্ডের সঙ্গে যুক্ত ওপরের দিকে রাখা হতো আরেকটি ধারকাটা চাকা। চাকার সঙ্গেই যুক্ত থাকত সময় নির্ণায়ক কাঁটা এবং কাঁটার মাথার চারপাশে ঘণ্টা ও মিনিট নির্ণয়ের চিহ্ন দেওয়া বৃত্ত। নিচের পাত্রের পানি যত বাড়ত, ভাসমান দণ্ডটি তত ওপরের দিকে উঠে আসত এবং ধারকাটা চাকায় শক্তি সঞ্চারিত হয়ে চাকাটিকে ঘোরাতে সক্ষম হতো এবং বলে দিত ঘড়ির পরিমাপ। সেই থেকেই যন্ত্রটির নাম হয়ে গেল ঘড়ি! 
 
খ্রিষ্টপূর্ব ৪ হাজার সনের পূর্ব হতেই প্রাচীন ভারতীয়, মিশরীয় ও গ্রীকরা এই জলঘড়ির ব্যবহার করতেন। মহেঞ্জোদারোর খননে এরকম কয়েকটি জলঘড়ির পাত্র পাওয়া গিয়েছিল। প্রাচীন ভারতে জলঘড়িকে বলা হতো ঘটিকা(যার অর্থ কুম্ভ বা পাত্র) যন্ত্র। আজও তাই আমরা নিমন্ত্রণপত্রে লেখা দেখি "অমুক ঘটিকায়"!
 
পবিত্র অথর্ববেদের ১৯নং কাণ্ডের ৫৩ নং সূক্তের ৩ নং মন্ত্রের আধ্যাত্মিক মন্ত্রটিতেই সর্বপ্রথম সময় ও জলঘড়ির ইংগিত দেয়া আছে বলে অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন। মন্ত্রটি এরকম-
 
পূর্ণ কুম্ভো ধি কাল আহিতস্তং বৈ পশ্যামো বহুধা তু সন্ত।
বিশ্বজগৎ কালের উপর স্থিত এক পূর্ণপাত্র যাকে সাধুগণ বহুরূপে ব্যক্ত হতে দেখেছেন।
 
বাংলাদেশ অগ্নিবীর
সত্য প্রকাশে নির্ভীক সৈনিক

No comments:

Post a Comment

Pages