দৈনিক বেদবাণী


এই সমগ্র সংসার নিরোগ এবং শুভচিন্তা যুক্ত হোক । যজুর্বেদ ১৬.৪                    সূর্য-এর আলোয় স্বয়ং আলোহীন চাঁদ আলোকিত হয় । ঋগ্বেদ ৫.৪০.৫



প্রাচীন আচার্য ও টীকাকারের মতানুসারে রামায়ণ-মহাভারতে প্রক্ষিপ্ততা

সত্যান্বেষী
0

 


রামায়ণ ও মহাভারতে প্রচুর পরিমাণ প্রক্ষিপ্ততা রয়েছে। এটি সকলে স্বীকার করেন। তবুও এটি বললেই এক শ্রেণির স্বার্থবাদী ধর্মব্যবসায়ী বলে, রামায়ণ ও মহাভারতে কোনো প্রক্ষিপ্ততা নাই৷
এই প্রক্ষিপ্ততার দাবি নাকি শুধু আর্যসমাজীরাই করে থাকে৷ আর্যসমাজীরা যেখানে যুক্তিতে ও প্রমাণে পারে না, সেই গ্রন্থকেই প্রক্ষিপ্ত বলে দাবি করে ৷ 
 
আসলেই কি তাই? চলুন আজকে দেখে নেওয়া যাক, সেই সব স্বার্থবাদীদের কাছে প্রামাণ্য আচার্য, টীকাকার ও গ্রন্থ রামায়ণ ও মহাভারতের প্রক্ষিপ্ততার বিষয়ে কী বলেছে ?
 
১. মহাভারত নিয়ে পৌরাণিক দ্বৈত পরম্পরার বিখ্যাত আচার্য শ্রীমধ্বাচার্য বা আনন্দতীর্থ একটি বিশাল গ্রন্থ রচনা করেছিলেন৷ গ্রন্থটির নাম "মহাভারত তাৎপর্য নির্ণয়"৷ এই গ্রন্থে তিনি মহাভারত সম্পর্কে বলেছেন–
 
কচিৎ গ্রন্থান্ প্রক্ষিপন্তি কচিদন্তরিতানপি।
কুর্য্যুঃ কচিচ্চ ব্যত্যাসং প্রমাদাৎ কচিদন্যথা॥
(মহাভারত তাৎপর্য নির্ণয়– ২।৩)
অর্থাৎ মহাভারত গ্রন্থে কোথাও প্রক্ষিপ্ত করেছে, কোথাও কিছু বাক্য লুকিয়ে ফেলেছে, কোথাও ভুলবশত পরিবর্তন করেছে এবং কোথাও জ্ঞানবশত পরিবর্তন করেছে।
 


এখানে দেখা যাচ্ছে, পৌরাণিকদের বিখ্যাত প্রামাণ্য ও প্রাচীন আচার্যই মহাভারতের প্রক্ষিপ্ততা অকপটে স্বীকার করেছেন৷ অথচ তাঁরই কপট শিষ্যরা এখন এটি স্বীকার করে না। 
 
২. পৌরাণিকদের প্রামাণ্য শাস্ত্র হলো পুরাণ৷ সেই পুরাণের মধ্যে অন্যতম হলো গরুড় পুরাণ৷ গরুড় পুরাণের ব্রহ্মকাণ্ডে মহাভারত সম্পর্কে বলা হয়েছে–
 
দৈত্যাঃ সর্ব বিপ্রকুলেষু ভূত্বা কৃতে যুগে ভারতে ষট্‌সহস্র্যাম্।
নিষ্কাস্য কাংশ্চিন্নবনির্মিতানাং নিবেশনং তত্র কুর্বন্তি নিত্যম্॥
(গরুড় পুরাণ– ব্রহ্মকাণ্ড ১।৬৯)
অর্থাৎ ভারতবর্ষে কৃতযুগে দৈত্যরা ব্রাহ্মণকুলে জন্মগ্রহণ করেছিল। তারা ভারত হতে ছয় হাজার শ্লোক বাদে বাকি শ্লোক নিষ্কাশন করেছিল এবং সেই স্থানে নতুন শ্লোক যুক্ত করেছিল। 
 
 

 
অর্থাৎ পৌরাণিকদের শাস্ত্রও মহাভারতের প্রক্ষিপ্ততার সাক্ষ্য দিচ্ছে। এখন অবশ্য সেইসব স্বার্থবাদীরা নিজেদের মুখ বাঁচাতে তাদের প্রিয় শাস্ত্র পুরাণের এই শ্লোককেই প্রক্ষিপ্ত বলে দাবি করবে৷ তাহলে দেখতেই পাচ্ছেন, কারা মূলত যুক্তি ও প্রমাণে না পারলে গ্রন্থকে প্রক্ষিপ্ত দাবি করে!
 
৩. মহাভারতের ন্যায় রামায়ণেও প্রচুর প্রক্ষিপ্ততা রয়েছে৷ এমনকি রামায়ণের উত্তরকাণ্ড পুরোটাই প্রক্ষিপ্ত৷ স্বার্থবাদীরা আবার রামায়ণের উত্তরকাণ্ডকে প্রক্ষিপ্ত মানে না৷ তবে ঠ্যালায় পড়লে দাবি করে যে রামায়ণের উত্তরকাণ্ডের ২–৪টি শ্লোক প্রক্ষিপ্ত হতে পারে৷ কিন্তু পুরো উত্তরকাণ্ডটি প্রক্ষিপ্ত নয়৷ কিন্তু এদিকে রামায়ণের এখনজন বিখ্যাত টীকাকার ও বিখ্যাত বৈয়াকরণ নাগেশভট্ট রামায়ণের বালকাণ্ডের ২।৪৩ শ্লোকের টীকার শেষে পুরো উত্তরকাণ্ডকেই খিল অর্থাৎ পরবর্তীকালে সংযুক্ত হিসেবে উল্লেখ করেছেন - 
 
"উত্তরকাণ্ডং ত্বস্য খিলম্, ভারতস্য হরিবংশবৎ৷" অর্থাৎ রামায়ণের উত্তরকাণ্ড হলো খিল, যেমন হরিবংশ হলো মহাভারতের।
 

এরকম অংশ উদাহরণ পাওয়া যাবে প্রাচীন আচার্য, গ্রন্থ এবং বিভিন্ন টীকাকারদের লেখায়, যেখানে তাঁরা মহাভারত ও রামায়ণের প্রক্ষিপ্ততা স্বীকার করে নিয়েছেন৷ তাই স্বার্থবাদীদের অপপ্রচার হতে সাবধান৷ নিজেই অনুসন্ধান করুন তারপর ঠিক-ভুল বিচার করুন৷

Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)