এটা সত্য যে সাংসারিক বিষয়বস্তুর সমূহের সঙ্গে আমাদের সম্বন্ধ নিত্য নয় । এই বিষয় ভোগ কোন ব্যক্তিকে পূর্ণ ও স্থায়ী সুখ প্রদান করতে পারে না । এই সত্যের সমান এটাও অটল সত্য যে , ঈশ্বরের সাথে আমাদের সম্বন্ধ সদা সর্বদা । এরূপভাবে সেই ঈশ্বর কে প্রাপ্ত করেই মনুষ্য পূর্ণ সুখী হতে পারে , অন্যথা নয় ।
আজকের সামাজিক পরিস্থিতিতে সবাই আজ তনু ,মন ও ধন দ্বারা ভৌতিক বিজ্ঞানের আবিষ্কার দ্বারাই সমস্ত দুঃখের নিবৃত্তি এবং নিত্যানন্দ কে প্রাপ্তি করতে চায় । তারা আত্মা - পরমাত্মার বিজ্ঞান তথা ঈশ্বর প্রাপ্তির লক্ষ্য কে সর্বদা পরিত্যাগ করে দিয়েছে । ফলস্বরূপ সবাই আজ বিবিধ দুঃখে অত্যন্ত সন্তপ্ত । যতক্ষণ আত্মা ও পরমাত্মার বিজ্ঞান কে লাভ না করা যায় ততক্ষণ দুঃখ থেকে কদাপি নিস্তার ঘটতে পারে না ।
ব্রহ্মপ্রাপ্তি হলে সমস্থ দুঃখের নিবৃত্তি হয় , আর ব্রহ্মপ্রাপ্তির জন্য যোগসাধনার গুরুত্ব অপরিসীম । গীতায় শ্রীভগবান যোগীকে মুক্ত বলে বর্ণনা করেছেন ।
স্পর্শান্ কৃত্বা বহির্বাহ্যাংশ্চক্ষুশ্চৈবান্তরে বােঃ।
প্রাণাপানৌ সমৌ কৃত্বা নাসাভ্যন্তরচারিণৌ ॥ ৫/২৭
যতেন্দ্ৰিয়মনােবুদ্ধিমুনির্মোক্ষপরায়ণঃ।
বিগতেচ্ছাভয়ক্রোধাে যঃ সদা মুক্ত এব সঃ ॥ ৫/২৮
অর্থ:-(২৭-২৮) বাইরের বিষয়সমূহ বাইরেই ত্যাগ করে , চোখের দৃষ্টিকে ভুযুগলের মধ্যস্থলে স্থিত করে এবং নাকের অভ্যন্তরে বিচরণকারী প্রাণ-অপান বায়ুকে সমান করে যিনি ইন্দ্রিয় , মন ও বুদ্ধিকে সংযত করেছেন এবং যে মােক্ষপরায়ণ মুনি ইচ্ছা , ভয় এবং ক্রোধরহিত হয়েছেন ; তিনি সর্বদা মুক্ত ।
আবার যোগ সম্পর্কে বলেছেন, —
“ চিত্তং নিরুদ্ধং যােগসেবয়া।
যত্র চৌবাত্মনাত্মানং পশ্যন্নাত্মনি তুষ্যতি ॥৬/২০
সুখমাত্যন্তিকং যত্তস্ফুদ্ধিগ্রাহ্যমতীন্দ্রিয়ম্।
বেত্তি যত্ৰ ন চৌবায়ং স্থিতশ্চলতি তত্ত্বতঃ ॥ ৬/২১
যং লব্ধ, চাপরং লাভং মন্যতে নাধিকং ততঃ।
যস্মিন্ স্থিতাে ন দুঃখেন গুরুণাপি বিচাল্যতে ॥ ৬/২২
তং বিদ্যাদুঃখসংযােগবিয়ােগং যােগসংজ্ঞিতম্।
স নিশ্চয়েন যােক্তব্যো যােগােহনির্বিচেতসা। ৬/২৩”
অর্থ:-(২০) যে অবস্থায় যােগের অনুষ্ঠান দ্বারা নিরুদ্ধ চিত্ত নিবৃত্ত (ক্ষান্ত) হয় এবং যে অবস্থায় (অষ্টাঙ্গযােগের অভ্যাসে) শুদ্ধ চিত্ত দ্বারা পরমাত্মার সাক্ষাৎ করে পরমাত্মাতেই সন্তুষ্ট হয়,...
অর্থ:-(২১) যে অবস্থায় অনন্ত সুখ অনুভব হয় , যে আনন্দ ইন্দ্রিয়েরঅনুভূতি থেকেও ঊর্ধ্বে স্থিত , কেবল শুদ্ধবুদ্ধি দ্বারা গ্রহণযােগ্য এবং যেঅবস্থাতে স্থিত হয়ে এই যথার্থ তত্ত্ব (পরমাত্মা) থেকে বিচলিত হন না,...
অর্থ:-(২২) যে অবস্থা লাভ করলে অন্য কোনাে প্রাপ্তিকে উত্তম মনে হয়না এবং যে অবস্থায় প্রতিষ্ঠিত হলে মানুষ মহাদুঃখেও বিচলিত হয় না,...
অর্থ:-(২৩) যে অবস্থায় দুঃখের সাথে কোনাে সংযােগ থাকে না , সেই অবস্থাকে যােগ বলে । অধ্যবসায় সহকারে , তৎপরায়ণ চিত্তে এই যােগ অভ্যাস করা কর্তব্য ।
- যোগের অর্থ —
যোগের অর্থই এই যে , সমস্ত দুঃখ থেকে মুক্ত হয়ে পরমানন্দে স্থিতিলাভ করা ।
মহর্ষি পতঞ্জলি বলেছেন ❝ যোগশ্চিত্তবৃত্তি নিরোধ ❞ অর্থাৎ মনের সঙ্কল্প বিকল্প রূপ কাম , ক্রোধ , দ্বেষ আদি সমস্ত অনাবশ্যক চিন্তা কে রুদ্ধ করে মন কে অভিষ্ট ধ্যেয় তে নিযুক্ত করে মনের সাত্ত্বিক বৃত্তিরও নিরোধ করে ঈশ্বর কে প্রাপ্ত করাই হচ্ছে যোগ ।
ব্যুৎপত্তি অর্থ অনুসারে যোগ শব্দ ❝যুজ সমাধৌ❞
আত্মেনপদী ধাতুর সহিত ❝ঘঞ্❞ প্রত্যয় যুক্ত হয়ে নিষ্পন্ন হয়েছে । অতঃ “যোগ ” শব্দের অর্থ “সমাধি” অর্থাৎ চিত্তের বৃত্তির নিরোধ ।
বৈদিক শাস্ত্রে যোগসাধনার মহিমা বর্ণন—
- বেদে যোগের মহত্বঃ -
তৈত্তিরীয় ব্রাহ্মণে( ৩।১০।১১।৩) ❝অনন্তা বৈ বেদা ❞ ❝সর্বজ্ঞানময়ো হি সঃ❞ (মনু০২l৭) অর্থাৎ বেদ সর্বজ্ঞানময় । বেদ বিদ্যাই সমস্ত বিদ্যার আদিমূল অর্থাৎ সমস্ত বিদ্যার উৎপত্তি বেদ হতে । ঈশ্বর প্রদত্ত জ্ঞানের বিনা কোন ব্যক্তির ব্যবহার সিদ্ধি , ব্যক্তির ভৌতিক বিজ্ঞান এবং না কোন আধ্যাত্মিক বিদ্যার লাভ হতে পারতো । আর না তো তারা লৌকিক সুখ লাভ করতে পারতো আর না তো মোক্ষসুখ ।
যোগদর্শন আদি সমস্ত আর্ষশাস্ত্রে প্রতিপাদিত যে বিদ্যা তা বেদের মাধ্যমে প্রদানকারী আদিমূল ঈশ্বরই । এভাবে যোগের ধারণার স্রোতও বেদ হতেই প্রবাহিত ।
যথাঃ
ই॒মং যব॑মষ্টায়ো॒গৈঃ ষ॑ড্যো॒গেভি॑রচর্কৃষুঃ। তেনা॑ তে ত॒ন্বো॒ রপো॑ঽপা॒চীন॒মপ॑ ব্যযে ॥
স্বর রহিত মন্ত্র
ইমং যবমষ্টায়োগৈঃ ষড্যোগেভিরচর্কৃষুঃ। তেনা তে তন্বো রপোঽপাচীনমপ ব্যযে ॥
[ অর্থববেদ ৬/৯১/১]
পদার্থঃ (ইমম্) এই [ সর্বব্যাপী ] (য়বম্) সংযোগ-বিয়োগ কারী পরমেশ্বর কে (অষ্ঠায়োগৈঃ) আট প্রকারের [ যম-নিয়ম আদি ] যোগ আর (ষড্যোগেভিঃ) ছয় প্রকারের [ পঠন-পাঠন আদি ব্রাহ্মণের কর্ম থেকে ] (অচর্কৃষুঃ) সে [মহাত্মাদের] কর্ষণ করে অর্থাৎ পরিশ্রম করে প্রাপ্ত করেছেন । (তেন) তার [কর্ম] থেকে (তে) তোমার (তন্বঃ) শরীরের (রপঃ) পাপপ্রবৃত্তিসমূহকে (অপাচীনম্)
বিপরীতমুখী করে (অপ ব্যয়ে) আমি সরিয়ে দিচ্ছি ।
ভাবার্থঃ যেই প্রকারে মহর্ষিগণ যোগসাধন আর ব্রাহ্মণগণ কর্ম দ্বারা ঈশ্বর কে লাভ করেন, সেভাবেই বিদ্বান মনুষ্য ঈশ্বর প্রাপ্তির দ্বারা আত্মদোষ ত্যাগ করে আনন্দিত হবেন ।
যুঞ্জতে মন-উত যুঞ্জতে ধিয়ো বিপ্রা বিপ্রস্য বৃহতো বিপশ্চিতঃ।
বি হোত্রা দধে বয়ুনাবিদেক ইন্মহী দেবস্য সবিতুঃ পরিষ্টুতিঃ।।
(ঋগবেদ ৫।৮১।১)
পদার্থঃ যাহারা ঈশ্বরের উপাসক (বিপ্রাঃ) অত্যন্ত মেধাবী , বিদ্বান্ ও হোত্রা , অর্থাৎ উপাসনারূপ যোগক্রিয়াশীল যোগীজন (বিপ্রস্য) সেই বৃহতের অপেক্ষা বৃহৎ অর্থাৎ সর্বাপেক্ষা বৃহৎ (বিপশ্চিতঃ) সর্বজ্ঞ সর্বপ্রকার বিদ্যাযুক্ত পরমেশ্বরের মধ্যে (মন যুঞ্জতে) আপনার মন কে যথাযোগ্য বা সম্যক প্রকার যুক্ত বা স্থির [ অর্থাৎ চিত্তবৃত্তির নিরোধ ] করেন , তথা (উত ধিয়) আপনার বুদ্ধিবৃত্তি ও জ্ঞানকেও (যুঞ্জতে) সদা পরমাত্মাতে ধারণ করে থাকেন । যে পরমাত্মা এই সমগ্র জগতের (বিদধে) ধারণ ও বিধান করেন (বয়ুনাবিদেক ইৎ) যিনি সকল জীবের শুভাশুভ কর্ম বিষয়ে জ্ঞাত আছেন এবং যিনি সাক্ষীস্বরূপ , যিনি একমাত্র অদ্বিতীয় ও সর্বব্যাপক, যাহাপেক্ষা আর শ্রেষ্ঠতম কোন পদার্থ নেই , সেই (দেবস্য) দেব অর্থাৎ জগতের প্রকাশক ও (সবিতুঃ) সকল পদার্থের রচয়িতা স্রষ্টারুপী পরমেশ্বরের (মহী পরিষ্টুতিঃ) আমরা সর্বপ্রকারে অত্যন্ত মহতী স্তুতি করি ।
যুঞ্জানঃ প্রথমং মনস্তত্ত্বায় সবিতা ধিয়ঃ।
অগ্নের্জ্যোতিনর্নিচায্য পৃথিব্যা অধ্যাভরত।।
(যজুর্বেদ ১১।১)
পদার্থঃ (যুঞ্জানঃ) যোগাভ্যাসী মানুষেরা (তত্ত্বায়) তত্ব অর্থাৎ ব্রহ্মবস্তু বা ব্রহ্মজ্ঞান প্রাপ্তির জন্য (প্রথম মনঃ) সর্বাগ্রে মনকে পরমেশ্বর যুক্তি করিয়া থাকেন (সবিতা) পরমেশ্বরও এইরূপ যোগীর প্রতি কৃপা করিয়া তাহার (ধিয়ম্) বুদ্ধিকে আপনাতে যুক্ত করিয়া নেন (অগ্নের্জ্যো) তখন সেই যোগী পরমেশ্বরের প্রকাশ নিশ্চয় করিয়া জ্ঞাত হইয়া (অধ্যাভরৎ) স্বীয় আত্মাতে পরমেশ্বর কে ধারণ করেন (পৃথিব্যাঃ) পৃথিবীর মধ্যে যোগীর উপরোক্ত লক্ষণ প্রসিদ্ধ আছে ।
যুক্তেন মনসা বয়ং দেবস্য সবিতুঃ সবে।
স্বর্গায় শক্ত্যা।।
(যজুর্বেদ ১১।২)
ভাবার্থঃ মনুষ্যমাত্র এরূপ ইচ্ছা করিবেন (বয়ম্) যেন আমরা (স্বর্গায়) মোক্ষসুখ হেতু (শক্ত্যা) যথাযোগ্য সামর্থ ও যোগবলানুসারে (দেবস্য) সর্বপ্রকাশক ও সর্ব্বানন্দপ্রদ (সবিতু) সর্বান্তর্যামী পরমেশ্বরের সৃষ্টি মধ্যে উপাসনারুপ যোগসাধন দ্বারা (যুক্তেন মনসা) শুদ্ধান্তঃকরণ হইয়া, নিজ আত্মায় সেই পরমাত্মস্বরূপ আরাধিত করিয়া পরমানন্দ প্রাপ্ত হই ।
অষ্টাবিংশনি শিবানি শগ্নানি সহ যোগং ভজন্ত মে।
যোগং প্রপদ্যে ক্ষেমং প্রপদ্যে যোগং চনমোহোরাত্রাভ্যামন্ত।।
(অথর্ববেদ ১৯।৮।২)
পদার্থঃ হে পরমেশ্বর! ( অষ্টাবিংশনি) ২৮ [দশ ইন্দ্রীয়, দশ প্রাণ, মন, বুদ্ধি, চিত্ত, অহংকার বিদ্যা, স্বভাব, শরীর এবং বল ] (শিবানি) কল্যাণকারক এবং (শগ্নানি) সুখকারক হয়ে (সহ) একসাথে (মে) আমার (যোগম্) উপাসনা যোগ কে (ভজন্তাম্) সেবন করে। (যোগম্) সেই যোগ কে (চ) এবং (ক্ষমম্) রক্ষা কে [অর্থাৎ যোগের দ্বারা রক্ষা কে (প্র পদ্যে) আমি প্রাপ্ত হবো এবং (ক্ষেমম্) রক্ষা কে (চ) এবং (যোগম্) যোগ কে [রক্ষা দ্বারা যোগ কে ] (প্র পদ্যে) আমি প্রাপ্ত হবো, এইজন্য আমার আপনাকে (অহোরাত্রাভ্যামন্ত) দিন রাত্রি (নমঃ অস্তু) নমস্কার হোক ।
য়োগেয়োগে তবস্তরং বাজেবাজে হবামহে ।
সখায় ইন্দ্রমূতয়ে ॥
[ অথর্ববেদ ২০l২৬l১ ]
পদার্থঃ (য়োগে য়োগে) যোগের বিভিন্ন স্তর - যম , নিয়ম , আসন, প্রাণায়াম , প্রত্যাহার , ধারণা , ধ্যান [ সবিকল্পক-নির্বিকল্পক ] সমাধিতে (তবস্তরম্) ক্রমশ বৃদ্ধিপ্রাপ্ত, যোগ-বিঘ্নকে নষ্টকারী তথা সাধকদের উন্নতিকারী ['সর্বধাতুভ্যোঽসুন্' উণা ৪।১৯০] (ইন্দ্ৰম্) সিদ্ধি প্রদানকারী পরমেশ্বরকে (সখায়ঃ) আমরা সাথী যোগীগণ (বাজে বাজে) প্রত্যেকে নিজ অন্তরের দেবাসুর সংগ্রামে ['বাজ ইতি সংগ্রামনাম' নিঘ০ ২।১৭] (উতয়ে) রক্ষা বা বিজয় প্রাপ্তির জন্য (হামহে) আহ্বান করি ['লেটোঽডাটৌ' অষ্টা ৩।৪।৯৪, 'বহুলং ছন্দসি' অষ্টা ৬।১।৩৪]
সরলার্থঃ যোগের বিভিন্ন স্তর- যম , নিয়ম , আসন , প্রাণায়াম , প্রত্যাহার , ধারণা , ধ্যান , [ সবিকল্পক-নির্বিকল্পক ] সমাধিতে ক্রমশঃ বৃদ্ধিপ্রাপ্ত যোগ-বিঘ্নকে নষ্টকারী তথা সাধকদের উন্নতিকারী সিদ্ধিপ্রদানকারী পরমেশ্বরকে আমরা সাথী যোগীগণ প্রত্যেকে নিজ অন্তরের দেবাসুর সংগ্রামে রক্ষা বা বিজয় প্রাপ্তির জন্য আহ্বান করি l
ভাবার্থঃ যোগাভ্যাস করার মার্গে মানুষের ব্যাধি, সংশয়, প্রমাদ , আলস্য ইত্যাদি অধিক পরিমাণে বিঘ্ন সৃষ্টি করে । ঈশ্বর প্রণিধান বা প্রণব জপ দ্বারা এই সব বিঘ্ন দূর করা যায় । এইজন্য যখন যখন আমাদের অন্তঃকরণে দেবাসুর সংঘর্ষে প্রবৃত্ত হয় , তখন তখন আমরা বিঘ্নকে পরাজিত করতে এবং যোগসিদ্ধি প্রাপ্ত করতে বলের অধিষ্ঠাতা পরমেশ্বরকে আহ্বান করি ।
অ॑ষ্ট॒ধা যু॒ক্তো বহ॑তি॒ বহ্নি॑রু॒গ্রঃ পি॒তা দে॒বানাং॑ জনি॒তা ম॑তী॒নাম্। ঋ॒তস্য॒ তন্তুং॒ মন॑সা মি॒মানঃ॒ সর্বা॒ দিশঃ॑ পবতে মাত॒রিশ্বা॑। তস্য॑ দে॒বস্য॑ ক্রু॒দ্ধস্যৈ॒তদাগো॒ য এ॒বং বি॒দ্বাংসং॑ ব্রাহ্ম॒ণং জি॒নাতি॑। উদ্বে॑পয় রোহিত॒ প্র ক্ষি॑ণীহি ব্রহ্ম॒জ্যস্য॒ প্রতি॑ মুঞ্চ॒ পাশা॑ন্ ॥
[ অথর্ববেদ ১৩l৩ l১৯ ]
পদার্থঃ (অষ্টধা) আট প্রকারে [ যম, নিয়ম, আসন, প্রাণায়াম, প্রত্যাহার, ধারণা, ধ্যান ও সমাধি−যোগে অষ্ট অঙ্গ দ্বারা ] (যুক্তঃ) ধ্যানকৃত , (উগ্রঃ) প্রচণ্ড (বহ্নিঃ) বাহক , (দেবানাম্) গতিমান [পৃথিবী আদি ] লোকসমূহের (পিতা) পিতা [রক্ষক ] এবং (মতীনাম্) বুদ্ধিমানগণের (জনিতা) উৎপাদক [পরমেশ্বর, সংসারকে ] (বহতি) ধারণ করে নিয়ে যান । (ঋতস্য) সত্যজ্ঞানের (তন্তুম্) সূত্রসমূহ [শ্রেণী] -কে (মনসা) স্বীয় বিজ্ঞান দ্বারা (মিমানঃ) পরিমাপকারী , (মাতরিশ্বা) আকাশে গতিশীল [পরমেশ্বর] (সর্বাঃ) সকল (দিশঃ) দিকে (পবতে) গমন করেন [ব্যাপিত হন ] । (তস্য) সেই (ক্রুদ্ধস্য) ক্রুদ্ধ (দেবস্য) প্রকাশমান [ঈশ্বর] -এর জন্য ... [ম০ ১]
ভাবার্থ: যে পরমেশ্বর সর্বস্বামী,সর্বব্যাপক, সর্বান্তর্যামী,সর্ব কিছুর নিয়ন্ত্রণকর্তা, সব মানুষ যোগের মাধ্যমে তার উপাসনা করে আনন্দ পাক ।
পরি ত্যং হর্য়তং হরিং বভ্রুং পুনন্তি বারেণ।
য়ো দেবাম্বিশ্বাং ইৎপরি মদেন সহ গচ্ছতি ॥৮॥
[ সামবেদ ০৫৫২ ]
যোগসাধনাকারীগণ (ত্যম্) সেই (হৰ্ষতম্) আকাঙ্ক্ষিত (বক্রম্) শরীরের ভরণ-পোষণকর্তা [বিভর্তীতি বভ্রুঃ, ডুভূঞ্ ধারণপোষণয়োঃ স উ০ ১।২২] (হরিম্) নিজ আত্মাকে (বারেণ) দোষ-নিবারক যম, নিয়ম প্রভৃতি এবং ঈশ্বরপ্রণিধান দ্বারা (পুনন্তি) শুদ্ধ করেন, (য়ঃ) যেই আত্মা যোগসিদ্ধ হওয়ার পর (মদেনসহ) আনন্দের সাথে (বিশ্বান্ ইৎ) সকল (দেবান্) প্ৰাণ, মন, বুদ্ধি, চিত্ত, অহংকার, ইন্দ্রিয় প্রভৃতি সমূহকে (পরিগচ্ছতি) ব্যাপ্ত করে ফেলে l
সরলার্থঃ যোগসাধনাকারীগণ সেই আকাঙ্ক্ষিত, শরীরের ভরণ-পোষণকর্তা নিজ আত্মাকে দোষ-নিবারক যম, নিয়ম প্রভৃতি এবং ঈশ্বরপ্রণিধান দ্বারা শুদ্ধ করেন যে আত্মা যোগসিদ্ধ হওয়ার পর আনন্দের সাথে সকল প্রাণ, মন, বুদ্ধি, চিত্ত, অহংকার, ইন্দ্রিয়প্রভৃতি সমূহকে ব্যাপ্ত করে ফেলে l
গীতা মধ্যে দুঃখের বিয়োগকেই যোগের সঙ্গা দেওয়া হয়েছে -
তং বিদ্যাদ্দুঃখসংযোগ বিয়োগং বিয়োগং যোগসঙ্গিতম্।
স নিশ্চয়েন যোক্তব্যো যোগহনবর্ব্বিণ্নচেতসা।।
(গীতা ৬।২৩)
অর্থাৎ দুঃখ সংযোগের বিয়োগ কে যোগ বলে জানবে । এই প্রকার অধ্যাবসায় সহকারে যোগাভ্যাস করা কর্তব্য ।
যোগ কে সর্বশ্রেষ্ঠ বলে যোগেশ্বর শ্রী কৃষ্ণ অর্জুন কে যোগী হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন -
তপস্বিভ্যোহধিকোযোগী জ্ঞানিভ্যোহপিমতোহধিকঃ।
কর্ম্মিভ্যশ্চা ধিকাযোগী তস্মাদযোগী ভবার্জ্জুন।।
(গীতা ৬।৪৬)
অর্থাৎ যোগীগণ তপস্বী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ, জ্ঞানীগণ অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ, কর্মিগণ অপেক্ষাও শ্রেষ্ঠ, ইহাই আমার মত । অতএব যে অর্জুন তুমি যোগী হও ।
- অষ্টাঙ্গযোগ —
যোগসাধনায় সিদ্ধিলাভ করার জন্য যােগদর্শনে আট প্রকার যোগাঙ্গের কথা বলা হয়েছে ; যা একত্রে অষ্টাঙ্গযোগ নামে পরিচিত ।
অষ্টাঙ্গযোগের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে যোগদর্শনে বলা হয়েছে -
যোগাঙ্গনুষ্টানশুদ্ধিক্ষয়ে জ্ঞানদ্বীপ্তিরাবিবেকখ্যাতে। (যোগ০— ২/২৮)অর্থ= যোগাঙ্গসমূহ বা অষ্টাঙ্গযোগের অনুশীলন করার ফলে অশুদ্ধির নাশ হয়ে জ্ঞানের প্রকাশ বিবেকখ্যাতি পর্যন্ত হয়ে যায় ।

যোগাঙ্গগুলো হলো —
'যম-নিয়মাসন-প্রাণায়াম-প্রত্যাহার-ধারণা-ধ্যান-সমাধয়ো-হষ্টাবঙ্গানি। '
যোগদর্শন (২/২৯)।।
অর্থ= যম, নিয়ম, আসন, প্রাণায়াম, প্রত্যাহার, ধারণা, ধ্যান ও সমাধি । এগুলো হচ্ছে যোগসাধনার আটটি অঙ্গ ।
এদের মধ্যে যম, নিয়ম, আসন, প্রাণায়াম, প্রত্যাহার এই পাঁচটিকে বহিরঙ্গ সাধনা এবং ধারণা ধ্যান ও সমাধি এই তিনটিকে অন্তরঙ্গ সাধনা বলা হয়েছে ।
যোগের এই অষ্টাঙ্গ যথা- যম, নিয়ম, আসন, প্রাণায়াম, প্রত্যাহার, ধারণা, ধ্যান ও সমাধি অনুশীলনের মাধ্যমে চিত্তের মলিনতা নষ্ট হয় এবং জ্ঞানের দীপ্তি বৃদ্ধি পায় ।
- যোগাঙ্গসমূহ (অষ্টাঙ্গযোগ) এবং তাদের শাখাসমূহের বিস্তারিত ব্যাখ্যা—
(১) যম —
'যম' শব্দটি দ্বারা মূলত সংযমের কথা বোঝানো হয়েছে । যোগদর্শনে মহর্ষি পতঞ্জলি বলেছেন -
অহিংসাসত্যাস্তেয়ব্রহ্মচর্য্যাপরিগ্রহা যমাঃ।।
যোগ০- (২/৩০)
অর্থাৎ : অহিংসা, সত্য, অস্তেয়, ব্রহ্মচর্য এবং অপরিগ্রহ- এই পাঁচটি সাধনকে একসঙ্গে বলা হয় যম ।
পাঁচ প্রকার যমের বর্ণনা—
(i) অহিংসা :
অহিংসা হলো সর্বপ্রকারে, সর্বদা, সর্বভূতের প্রতি হিংসা থেকে থেকে বিরত থাকা । হিংসা বলতে কায়িক, বাচিক ও মানসিক- তিনপ্রকার হিংসার কথাই বলা হয়েছে । এই তিনপ্রকার হিংসাই বর্জনীয় । অর্থাৎ কোনো ভাবেই অপরকে আঘাত করা বা অপরকে ব্যথা দেয়া যাবে না । এককথায় মনকে সবসময় বিদ্বেষভাব থেকে দূরে রাখা ই হলো অহিংসা ।
যোগদর্শনে অহিংসা ব্রত পালনের বিধি—

“জাতিদেশকালসময়ানবচ্ছিন্নাঃ সার্বভৌমা মহাব্রতম্” ৷৷
(যোগ০— ২|৩১)
অর্থ= অহিংসা ইত্যাদি মহাব্রত জাতি, স্থান, কাল ও নিয়ম বিশেষ দ্বারা অবাধিত অর্থাৎ সব অবস্থায় পালনীয় ।

বিতর্ক যেভাবে সংঘটিত হয় তার বর্ণনায় যোগদর্শনে বলা হয়েছে -
“বিতর্কা হিংসাদয়ঃ কৃতকারিতানুমোদিতা লোভমোহাক্রোধপূর্ব্বিকা মৃদুমধ্যাধিমাত্রা
(যোগ০—২/৩৪)
অর্থ— যম নিয়মের বিরোধী হিংসাভাবকে বিতর্ক বলা হয় । এটি তিনভাবে সংঘটিত হয় যেমন ব্যাক্তি নিজে করলে, কারো দ্বারা করালে এবং অনুমোদন করলে বিতর্ক লোভ, ক্রোধ, এবং মোহ থেকে উৎপন্ন হয় । এটি(বিতর্ক) আবার তিন মাত্রার হয়ে থাকে যেমন, মৃদু(কম), মধ্য(মাঝারি) এবং অধিক মাত্রার (তীব্র) ।
বিতর্ক বা হিংসাভাব যেভাবে দমন করা উচিত —
যোগদর্শন অনুসারে বলা যায়, যোগীর পক্ষে বিতর্কের ভাবকে প্রতিপক্ষ ভাবনা দ্বারা দমন করা উচিত । যেমন বিতর্কের ভাবে ভাবিত হয়ে যম নিয়ম ইত্যাদি ভঙ্গ করলে যোগ মার্গে অনেক বড় হানি হয়ে যাবে এমন চিন্তা করে বিতর্কভাব ত্যাগ করা উচিত । এ বিষয়ে বলা হয়েছে,
‘বিতর্কবাধনে প্রতিপক্ষভাবনম্’।
(যোগ০— ২/৩৩)
অর্থ = যম নিয়ম ইত্যাদি পালনের সময় বিতর্ক দ্বারা বাধা উৎপন্ন হলে বিরুদ্ধ পক্ষের ভাবনা করা উচিত ।
বিরুদ্ধ পক্ষের ভাবনা বা প্রতিপক্ষ ভাবনা কিভাবে করা উচিত তা এর পরের সূত্রে বর্ণিত হয়েছে । যেমন,
…...“দুঃখাজ্ঞানানন্তফলা ইতি প্রতিপক্ষভাবনম্”।।
(যোগ০—২/৩৪)
অর্থ= বিতর্ক ভাবনার ফল অত্যাধিক দুঃখ এবং অজ্ঞানদায়ক হয় এরকম বিবেচনা করে সকল প্রকার বিতর্ক ভাবের নিরোধ করা উচিত ।
এভাবে যোগী যখন অহিংসার আচরণে দৃঢ় স্থিতি লাভ করেন তখন সকল প্রানীরা তাঁর সান্নিধ্যে থেকে বৈরিভাব ত্যাগ করে ।
“অহিংসাপ্রতিষ্ঠায়াং তৎসন্নিধৌ বৈরত্যাগঃ”।।
(যোগ০- ২|৩৫)
অর্থ= অহিংসার আচরণে দৃঢ় স্থিতি হয়ে গেলে সেই যোগীর সান্নিধ্যে এসে সকল প্রাণীরা বৈরীভাব ত্যাগ করে ।
(ii) সত্য- সদা সত্য কথা বলা, সত্যের পথে চলা এবং কখনো মিথ্যার আশ্রয় না নেওয়াকে সত্য বলা হয় । সত্য হলো কোনোভাবেই মিথ্যাচার না করা । যোগী ব্যাক্তি কোনও বিষয়কে যেমন দেখেছেন, যেমন শুনেছেন, এবং যেমন উপলব্ধি করেছেন তেমনটাই ব্যক্ত করবেন। কোনো কথাকে অতিরঞ্জিত করে বলবেন না । এবং কখনো মিথ্যার আশ্রয় নিবেন না । যোগীর এমন আচরণকে বলা হয় সত্য ।
সত্যাচরণে দৃঢ় স্থিতি লাভ হলে যোগীর কর্ম উত্তম ফলদায়ী হয় এবং তাঁর অধীন হয়ে যায় । এ সম্পর্কে যোগদর্শনে বলা হয়েছে,
“সত্যপ্রতিষ্ঠায়াং ক্রিয়াফলাশ্রয়ত্বম্”।
(যোগ০ -২/৩৬)
অর্থ = মন বাণী ও শরীর দ্বারা সত্যাচরণে দৃঢ় স্থিতি হলে যোগীর কর্ম এবং ফল একটি সীমা পর্যন্ত তাঁর অধীন হয়ে যায় ।
(iii) অস্তেয়— চুরি করা, অন্যের বস্তুকে অবৈধভাবে নিজের করে নেওয়া ইত্যাদি অপরাধমূলক কর্মকে বলা হয় "স্তেয়"। এবং এসব থেকে দূরে থাকাই হলো "অস্তেয়"। এক কথায় সর্বোতভাবে চৌর্যবৃত্তির পরিত্যাগই হলো "অস্তেয়" । অস্তেয় তে দৃঢ় স্থিতি হলে সকল প্রকার উত্তম বস্তু প্রাপ্ত হওয়া যায়। অস্তেয়র ফল বর্ণনায় যোগদর্শনে বলা হয়েছে,
‘অস্তেয়প্রতিষ্ঠায়াং সর্ব্বরত্নোপস্থানম্’।
(যোগ০ -২/৩৭)
অর্থ= সম্পূর্ণরূপে চৌর্যবৃত্তি ত্যাগ হলে সমস্ত রত্নই প্রাপ্ত হওয়া যায় ।
ব্যাখ্যা - এখানে সর্বরত্ন বলে সকল উত্তম বস্তুকে/ সৌভাগ্যকে বোঝানো হয়েছে । যখন যোগী চুরিকে সম্পূর্ণভাবে পরিত্যাগ করেন তখন অসৎ উপায়ে জীবিকা নির্বাহের চিন্তা তাঁর মনে স্থান পায় না । তখন তিনি পরিশ্রমী হন এবং পরিশ্রমের ফলে অবশ্যই উত্তম ফল প্রাপ্ত হন ।
কথায় আছে পরিশ্রমই সৌভাগ্যের চাবিকাঠি । এ সম্পর্কে বেদেও বলা হয়েছে "উৎক্রাম মহতে সৌভগায়" (যজু০ ১১|২১) অর্থ= মহান সৌভাগ্যের জন্য কঠোর পরিশ্রম করো ।
(iv) ব্রহ্মচর্য – জননেন্দ্রিয়কে সংযত রাখা, বীর্যরক্ষা করা, সকল প্রকারে অশ্লীলতাকে ত্যাগ করা, যেমন- অশ্লীল কর্ম ও অষ্টবিধ মৈথুন না করা, অশ্লীল দৃশ্য না দেখা, অশ্লীল কথা চিন্তা না করা, অশ্লীল বাক্য না বলা । সর্বোপরি কায় মন ও বাক্যে সংযত থাকাকেই ব্রহ্মচর্য বলা হয় ।
মহর্ষি স্বামী শ্রীমদ্দয়ানন্দ সরস্বতী তাঁর সত্যার্থ প্রকাশ গ্রন্থে ব্রহ্মচর্য পালনের বিধি সম্পর্কে লিখেছেন, “স্ত্রী/পুরুষ দর্শন, স্পর্শন, একান্ত সেবন, সম্ভাষণ, বিষয়ালাপ,পরষ্পর ক্রীড়া, বিষয়ের চিন্তা, এবং সঙ্গ এসব ত্যাগ করা উচিত ।
ব্রহ্মচর্য প্রতিষ্ঠার ফল বর্ণনায় যোগদর্শনে বলা হয়েছে-
‘ব্রহ্মচর্য্য প্রতিষ্ঠায়াং বীর্য্যলাভঃ’।
(যোগ০-২/৩৮)
অর্থ = যখন ব্যক্তি মন, বাণী এবং শরীর দ্বারা ব্রহ্মচর্য পালনে দৃঢ় হয়ে যায় তখন তার বৌদ্ধিক এবং শারীরিক বলের প্রাপ্তি হয় ।

(v) অপরিগ্রহ—বিষয়ের উপার্জন, সংগ্রহ ইত্যাদিতে হিংসা ইত্যাদি দোষ দেখে নিজের সুখের জন্য প্রয়োজনের অধিক বস্তু, গ্রহণ না করা এবং ধনসম্পদ সঞ্চয়ের জন্য চেষ্টা না করাকে অপরিগ্রহ বলা হয় । যোগসাধনাকালে উপলব্ধি করতে হবে যে, বিষয় অর্জন করলে দুঃখ, বিষয়ের রক্ষণে দুঃখ, বিষয়ের ক্ষয়ে দুঃখ এবং বিষয়ের গ্রহণেও দুঃখ অবশ্যম্ভাবী । ভোগবিলাসে মেতে থাকলে যোগসাধনায় সিদ্ধিলাভ অসম্ভব হয়ে পড়ে । এজন্য যোগীর পক্ষে সকল প্রকার ভোগ বিলাস করা উচিত। অপরিগ্রহে দৃঢ় স্থিতি লাভ হলে যোগী নিজের অতীত ও ভবিষ্যৎ জন্ম সম্পর্কে অবগত হন। যোগদর্শনে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে,
অপরিগ্রহস্থৈর্য়ে জন্মকথন্তাসম্বোধঃ।।
(যোগ০ —২|৩৯)
অর্থ= যখন যোগী হানিকারক এবং অনাবশ্যক বস্তুকে তথা হানিকারক এবং অনাবশ্যক বিচারকে দৃঢ়তা পূর্বক ত্যাগ করে দেয় তখন তার ভূত,ভবিষ্যৎ এবং বর্তমান জন্ম সম্বন্ধী জিজ্ঞাসা এবং জ্ঞান হয় ।
ব্যাখ্যা - অপরিগ্রহ পালন করলে যোগীর পূর্ব জন্মের, বর্তমান জন্মের এবং ভবিষ্যৎ জন্মের জিজ্ঞাসা উৎপন্ন হয় । যেমন- আমি কে ? কেমন ছিলাম ? কেমন হব ? এই শরীর কি ? কোথা থেকে উৎপন্ন হয়েছে ? এরকম জিজ্ঞাসা উৎপন্ন হলে সেটির সন্ধান করতে গিয়ে যোগী নিজের ভূত ভবিষ্যৎ ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে পারেন ।
