আমাদের দেশ ভারত একটি কৃষিপ্রধান দেশ। ছয়টি ঋতুর মধ্যে প্রধানত বছরের দুটি ঋতুই দেশবাসীকে প্রাচুর্য, ধন ও শস্যের যোগান দিয়ে আনন্দিত করে। আমাদের ঋষিরা সকলের জীবনদাতা ও দেহ রক্ষাকারী নতুন খাদ্য কখন উত্তোলন ও ভোগ করবেন তার নির্দিষ্ট ক্ষণ ও তিথি নির্ধারণ করেছেন এসব বৈজ্ঞানিক গবেষণাকে জ্যোতিষ বলা হয়। যেমন কার্তিক মাসের অমাবস্যা অর্থাৎ দীপমালিকা উৎসব এবং শরৎকালের রোপিত প্রাপ্ত খাদ্যের জন্য বসন্ত ঋতুর ফাল্গুন মাসের পূর্ণিমার দিন "বাসন্তী নবসস্যোষ্ঠী উৎসব"।
এ দিন খাদ্য প্রাপ্তির জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
আমাদের সংস্কৃতি অন্যকে দেওয়ার পরে নিজেরাই গ্রহণ করতে শিক্ষা দেয়। শস্যের পুষ্টির জন্য সর্বপ্রথম গম, যব ইত্যাদি ঈশ্বরকে সমর্পণ করে,অগ্নিদেবকে নিবেদন করা হয়।
![💐](https://static.xx.fbcdn.net/images/emoji.php/v9/te3/1/16/1f490.png)
![💐](https://static.xx.fbcdn.net/images/emoji.php/v9/te3/1/16/1f490.png)
অর্থাৎ, যে স্বয়ং অন্ন ভক্ষণ করে,তিনি কেবল পাপই ভক্ষণ করে।
অগ্নিদেব হলেন সমস্ত শক্তির উৎস এবং তা হতেই আমাদের দান করার ক্ষমতা প্রদান হয়। ভাল-মন্দ, বন্ধুত্ব-শত্রুতা,সক্ষমতা-অক্ষমতা প্রকৃতি দ্বারাই ভাগ করা উপহার। কেউ তা প্রত্যাখ্যান করতে পারে না। এই সত্যটি মাথায় রেখে প্রকৃতির নিমিত্তে অগ্নিতে নতুন খাদ্যশস্য নিবেদন করা হয় এবং তারপর অগ্নিতেই অবশিষ্ট খাদ্যশস্য পাক করে নিজেরাই পুষ্ট হই।
এ যেন এক কৃতজ্ঞতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
![🔥](https://static.xx.fbcdn.net/images/emoji.php/v9/t50/1/16/1f525.png)
"যদ অকৃত্বা আগ্রয়ণং নবস্য অশ্নীয়াত,
দেবানাং ভাগং প্রতিক্লূপ্তম্ অদ্ধান।।"-(গো.ব্রা. ২/১/১৭)
অর্থাৎ, যিনি ঈশ্বরের কৃপাশিষ্ট শস্যকে উৎসর্গ না করে নতুন শস্য নিজেই প্রথমে ভক্ষণ করেন, তিনি স্বয়ং ঈশ্বর অস্তিত্বকেই অস্বীকার করেন।
তাই এই পবিত্র উৎসবে আমাদের পূর্বপুরুষেরা মহা আনন্দে ঈশ্বরের গুণগান গেয়ে এসেছেন।কারণ একমাত্র তার কৃপায় আমরা কঠোর পরিশ্রমের পর অন্ন পাই এবং নতুন অন্ন দিয়ে বিশাল জীবন যজ্ঞের আয়োজন করে চলেছি।তাই, ফাল্গুন মাসের পূর্ণিমা তিথিতে পালিত হওয়া উৎসবের নাম বাসন্তী নবসস্যোষ্ঠী উৎসব।
আষাঢ়
শস্য (মালায়) এর ভারতের সকল ফসলের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ট৷ এটি সকলের মথার
মুকুট মানা হয়৷ ভারতে অকাল পড়লে মালায় অনেক কম মারা যায়৷ এটি শুধু
ক্ষুদার্থ ভারতেরই পেট ভরে না, প্রত্যুত পূর্ব কালে ইউরোপ প্রভৃতি ধনী
বিদেশী দেশে কোটি কোটি মণ খাদ্যশস্য সরবরাহ করত। এইরকম জীবনধারণ সর্বপালক
শস্যের আভাই কৃষকের মন, যারা আষাঢ় থেকে শুরু করে বছরে কঠোর জুতাই করে নিজের
খেতের তৈরি করেছেন, আনন্দে কেনো নাচবে না৷ এই অবসরে তাদের আনন্দোৎসব করা
স্বাভাবিক৷
এটি শুধু ভারতবর্ষেরই
বিশেষতা নয়, প্রত্যুত অন্য দেশেও নবশস্যের প্রবেশে এবং উৎসব করা হয়৷
ঋক্ষরাজ রুসের হিমাচ্ছাদিত দেশে ফসল কটার পরে কৃষক নিজের ইষ্টমিত্রকে মদ্য
এবং পক্বান্ন দ্বারা পরিতৃপ্ত করে উৎসব করে৷ ভুবনভাস্করের ভূমি জাপানেও,
যখন ধান কাটে তখন ধানের সুরা এবং চালের রুটির সহভোজ হয় এবং গান-বাজনা
পূর্বক পর্ব পালন করা হয়। ইউরোপে 'সেন্ট ভ্যালেন্টাইন দিবস' এবং
ইংল্যান্ডে 'মে-পোল' উৎসবও এই ধরনের হয়। আসলে এই ধরনের উৎসব গ্রামের কৃষক
জনতার মধ্যে জাগ্রত। সাদা-সিধে মহলের জীবন-প্রণালীর মধ্যেই তাদের আদর হয়।
ভারতীয় উৎসব শুধু আমোদ প্রমোদের সাধন নয়। ধর্মপরায়ণ ভারতীয়দের
প্রতিটি কথার মধ্যে ধার্মিকতা এবং বৈজ্ঞানিকতার সংযোগ বিদ্যমান। যেমন বর্ষা
ঋতুর চাতুর্মাসের(চার মাসে) পরে বিকৃত গৃহসমূহের পরিমার্জনের জন্য তথা শরৎ
কালের প্রবেশের ফলে, তৎকালীন আবির্ভূত রোগসমূহের প্রতিকারের জন্য হোম-যজ্ঞ
দ্বারা বায়ুমন্ডলের সংশুদ্ধি, নবপ্রবিষ্ট শীতকালের প্রতিরোধমূলক পোশাকের
পরিবর্তন এবং নব্যপ্রাপ্ত শ্রাবণের শস্যের নবীন অন্ন,ধানের শিষের জন্য
শারদীয় নবসস্যেষ্টি(দীপাবলী) উৎসবের জন্য স্থির করা হয়, সেই ভাবে শীতকালীন
বর্ষার অনন্তর- মূহাসাকেও এক ধরনের চৌমাসাই মনে করা হয়। বাসস্থানের
পরিষ্কারের জন্য তথা নতুন ঋতু বসন্তের পরিবর্তনের ফলে অস্বাস্থ্যের
প্রতিরোধের জন্য হবন দ্বারা বাতাবরণের সংস্কারার্থ, নবাগত গ্রীষ্মের
উপযুক্ত হালকা পাতলা সাদা বস্ত্রের পরিবর্তন এবং নতুন আসা আষাঢ়ী ফসলের
যব(বার্লি) দ্বারা দেবযজ্ঞ করার জন্য আষাঢ়ী নবসস্যেষ্টির অভিপ্রেত।
সংস্কৃতে অগ্নিতে দগ্ধ আধাপাকা অন্নের ‘হোলক’ বলা হয়।
“তৃণাগ্নিভ্রষ্টার্দ্ধপক্বশমীধান্যং হোলকঃ। হোলা ইতি হিন্দী
ভাষা”
-শব্দকল্পদ্রূমকোশঃ
অর্দ্ধপক্বশভীধান্যৈস্তৃণভ্রষ্টৈশ্ব হোলকঃ।
হোলকঽল্পানিলো, মেদঃ কফদোষশ্রমাপহঃ।।
ভবেদ্ যো হোলক যস্য স তত্তহুণো ভবেৎ। (ভাব প্রকাশ নিঘণ্টু )
অর্থ-খড়ের অগ্নিতে দগ্ধ আধাপাকা শমীধান্যের ‘হোলক’ বলে। হোলা স্বল্পবত
এবং মেদ(চর্বি), কফ এবং শ্রমের (ক্লান্তি) দোষসমূহ দূর করে।যে যে অন্নের
হোলা হয়, তাতে সেই অন্নের গুণ বিদ্যমান। এমন মনে করা হয় যে আদিতে
তৃণাগ্নিতে দগ্ধ আষাঢ়ীর প্রতিটি অন্নের জন্য ‘হোলক’ শব্দ ব্যবহৃত হত;
কিন্তু পরবর্তীতে সে শমীধান্যের হোলো সমূহের জন্যই প্রচলিত হয়ে পরেছিল।
হিন্দীতে প্রচলিত ‘হোলা’ শব্দ এরই অপভ্রংশ।
হোলোৎসবের আরেকটি বিষয় হোলিকা পুড়ানো বা নেড়া পুড়ানো। রাস্তাঘাটে বা শহর ও গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকায় আশেপাশের থেকে সংগ্রহ করা কাঠের স্তূপ ও গোবরের পিঠা,শুকনো কাঠ,মাছিয়া,গাছ ইত্যাদি দিয়ে হোলি পোড়ানোর প্রাচীন একটি প্রচলন রয়েছে। তবে তা কোনোভাবেই পুরাণে বা কাব্য প্রবন্ধে উল্লেখিত ঘটনা নয়।
নবসস্যোষ্টীর ইষ্টিপোড়ার তৎসম রূপ হলো যজ্ঞ আর তদ্ভব রুপ হলো ইষ্টপোড়া বা হোলিকাদহন।। শুকনো বা মরা কাষ্ঠ সহযোগে, সুগন্ধিজাত পর্দাথ সহযোগে যজ্ঞোৎসব
বর্তমানে হোলির দিনে গালাগালি, উশৃঙ্খলতা করে, অশ্লীল শব্দ উচ্চারণ করে এবং অশালীনভাবে নিম্নমানের কৃত্রিম রং ব্যবহার করে, একে অপরের মানুষের সংবেদনশীল অঙ্গ ও মুখে কেমিক্যাল রঙ দিয়ে এবং এর কাদা ছুঁড়োছুড়ি করে,তা কোনভাবেই প্রাচীন ঋষিদের হোলিকা বা হোলোৎসব নয়। প্রাণীবাদী প্রকৃতির পৈশাচিক রুপের এটি একটি ইঙ্গিত,মানব প্রকৃতির নয়।
এ ধরনের কাজ শুধু কাণ্ডজ্ঞান বিবর্জিত ও নৃশংসই নয়, বরং জাতীয় অপচয়ের কারণও বটে।সাথে পশুপাখির বাসস্থান ও খাদ্যের উৎস এবং প্রকৃতির উপর করা অত্যাচারও বটে। উচ্চস্বরে গানবাজনা, আতশবাজি, পটকা, উশৃংখলতার বশবর্তী হয়ে প্রাকৃতিক সম্পদ নষ্ট করা,মাদকতার নামে স্বেচ্ছাচারিতা ও অবাধ স্বাধীনতা ভোগবাদী উৎসবেরই প্রতিফলন, বৈদিক সিদ্ধান্তের নয়।
তাই এই উৎসব উপলক্ষে একে অপরের গায়ে চন্দন, সুগন্ধি ছিটিয়ে এবং গোলাপ আদি সুগন্ধিজাত প্রভৃতি ফুলের মৃদু রঙের তিলক লাগিয়ে আনন্দ উপভোগ করা উচিত। সকলের সাথে একই সাথে পানাহার ও প্রকৃতির সকল উপাদানকে উফভোগ করা উচিত,যাতে সকল জীবকুল,প্রাণীকূল নিরাপদ থাকে। সামাজিক মূল্যবোধ ও নৈতিকতার যাতে অবক্ষয় না ঘটে।
"হোলি" আমাদের জাতীয় উৎসব, তবে এটি কৃতজ্ঞতা ও সেবার চেতনায় পরিপূর্ণ হওয়া উচিত। এই উৎসবকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট বীভৎস ও পশুসুলভ আচরণ দেখে অনেক চিন্তাবিদরা ও বিধর্মীরা এই উৎসবকে শূদ্রদের উৎসব বলে ঘোষণা করেন।অথচ এই উৎসব থেকে এমন কোন স্পষ্ট তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায় না যে এটি মূর্খ শূদ্রদের উৎসব। এই উৎসব জনজীবনের সাথে সম্পর্কিত একটি উৎসব। চারবর্ণ ও চার আশ্রমে আবদ্ধ প্রতিটি মানুষেরই খাদ্যের প্রয়োজন হয়, তাই এই উৎসবের বৈদিক ও আসল নাম 'বাসন্তী নব্যস্যোষ্ঠী'।
![🏵️](https://static.xx.fbcdn.net/images/emoji.php/v9/t1a/1/16/1f3f5.png)
![🌻](https://static.xx.fbcdn.net/images/emoji.php/v9/t1a/1/16/1f33b.png)
"ফাল্গুন মাসের পূর্ণিমা তিথিতে অত্যাচারী রাক্ষস রাজা হিরণ্যকশ্যপ তার শত্রু বিষ্ণুর ভক্ত পুত্র প্রহ্লাদকে তার মায়াবী বোন হোলিকার কোলে বসিয়েছিলেন এবং তাকে জ্বলন্ত চিতায় রেখেছিলেন। কিন্তু ভগবানের কৃপায় প্রহ্লাদ রক্ষা পান।তবে হোলিকা রাক্ষসী রেহাই পায়নি,ভস্মীভূত হয়ে যায়, তখন থেকেই এই হোলিকোৎসব জনপ্রিয় হয়ে ওঠে বলে জানা যায়।"
তর্কের খাতিরে এখানে এটা জানা দরকার যে, প্রাচীন সাহিত্য ও পুরাণ কাহিনীতে এরকম রূপক বর্ণনা আছে, যার সাথে বৈদিক হোলি উৎসবের বিন্দুমাত্র কোনো সম্পর্কও নেই।আগুনের গুণ হল তাপ,যা দহন ধর্মবিশিষ্ট ও প্রকৃতিজাত। ভগবানের ভক্ত বা অভক্ত যাকে তাতেই রাখা হোকনা কেন, সে অবশ্যই পুড়ে যাবে।না পুড়লে প্রকৃতি প্রশ্নবিদ্ধ হবে। আর অনাদি সত্তা প্রকৃতি,পুরুষ কখনোই তার ধর্ম হতে বিচ্যুত হয়না।
এই উপকথায়, আধ্যাত্মিক ভক্তির অনুপ্রেরণা দেওয়া হয়েছে। যেমন:
হিরণ্যকশিপু = হিতাহিতজ্ঞানশূন্য কাজে নিয়োজিত ভোগে আসক্ত ব্যক্তি।
হোলিকা = সে ভোগাসক্ত মানুষের লালসা,মানসিক প্রবৃত্তি।
চিতা = ঈশ্বরের ধ্যান।
প্রহ্লাদ = ভোগ্যরুপী আত্মা।
নৃসিংহ = ঈশ্বর।
এর অর্থ হল হিরণ্যকশিপু সেই ব্যক্তির প্রতিনিধি যিনি ধনসম্পদে আশীর্বাদপ্রাপ্ত অর্থাৎ মায়ার অধিপতি। হোলিকা হল সে মায়ায় আটকা পড়া ব্যক্তির আকাঙ্ক্ষা ও লোভ,যা তার মনোভাব এবং যার দ্বারা সে সবকিছুকে পেতে চাই, করায়ত্ত করতে চায়। অন্ত্যোষ্টিরুপ চিতা হল ঈশ্বরের ধ্যান, যা সময় বা কালের রূপ হয়ে মানুষের তৃষ্ণা-ঈপ্সা নিবারণ করে। তৃষ্ণা বা লোভ বিনষ্ট হলে ক্ষুধার্ত ব্যক্তির আত্মা যে আনন্দ অনুভব করে তা হল প্রহ্লাদ। এই আত্মা পুত্র রূপী।
![🔥](https://static.xx.fbcdn.net/images/emoji.php/v9/t50/1/16/1f525.png)
"আত্মা বৈ পুত্রনামাসি।" (জৈ: গৃ:১/১৮,নিরুঃ৩/১/৪) অর্থাৎ আত্মা অবশ্যই পুত্র রূপে রুপায়িত।
আধ্যত্মিক চিন্তাতে ব্যাখ্যা করলে বলা যায়,
হিরণ্যকশিপুর(আসক্ত) পুত্র(অতৃপ্ত আত্মা) স্বীয় আত্মা হয়ে, দহন হতে গিয়ে, লোভ-কামনা(হোলিকা), অগ্নিভস্মীভূত(চিতা) হয়ে যে সুখ লাভ করে তাই হলো প্রহ্লাদ(তৃপ্ত আত্মা)।
পৌরাণিক দৃষ্টিতে দেখলে হোলিকা উৎসবের সাথে এ ঘটনা এভাবে সম্পর্কিত হয়-
হিরণ্যকশিপু = "হিরণ্যয়ং পশ্বতীতি হিরণ্যকশপঃ"
অর্থাৎ হিরণ্যকশিপু একজন কৃষক।
হোলিকা = কৃষকের হতাশা; চাষাবাদ হবে নাকি হবে না?
চিতা = ভগবানের কৃপা যা হতাশা দূর করে।
প্রহ্লাদ = কৃষকের সুখ যা ফসল প্রস্তুত হলে সে পায়।
নৃসিংহ = ঈশ্বর।
এই অলঙ্কারের অর্থ হরিণ রূপে ধান্য ও শস্য দেখার আকুলতা নিয়ে কৃষক হলেন হিরণ্যকশিপু। হোলিকা তার অনিশ্চিত ভবিষ্যতের হতাশা এবং বিভ্রান্তির অনুভূতি যা একজন কৃষক বপনের পরে অনুভব করেন। কৃষকের হতাশা ভগবানের কৃপায় সিংহের আকারে চিতারূপে ধ্বংস হয়, অর্থাৎ ঈশ্বরের কৃপা হতাশার চিতা। নৈরাশ্য নাশের পর। ফসল পেয়ে কৃষক খুশি হয়ে প্রহ্লাদ হয়; তার খুশির সীমা নেই।
সুতরাং, উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটা স্পষ্ট যে এই 'বসন্তী নবসস্যোষ্ঠী', যা 'হোলিকা উৎসব' নামেও পরিচিত, এটি সম্পদ ও শস্য অর্জনের উৎসব এবং এটি একটি জাতীয় উৎসব। এই উৎসব উপলক্ষে, আমাদের পারস্পরিক ভালবাসা, সম্প্রীতি, সাম্য এবং ঐক্যের অঙ্গীকার করা উচিত এবং আমাদের প্রাচীন ঐতিহ্যের মর্যাদা বজায় রাখা উচিত, কারণ ভারতীয় উৎসবগুলি সামাজিক উদযাপনের একটি রূপ হলেও মানব জীবনের একটি অত্যন্ত গুঢ় রহস্য রয়েছে।ভারতীয় জীবনের তরঙ্গে প্রবাহিত সেই রহস্যের মধ্যে রয়েছে আনন্দের অসীম উৎস, এর কৃতিত্ব ও পদ্ধতি নিহিত রয়েছে উৎসবের পবিত্রতা এবং পারস্পরিক আনন্দ ও আনন্দ প্রদানের মধ্যে এবং এই অর্জনই উৎসবের তাৎপর্য।
![🌺](https://static.xx.fbcdn.net/images/emoji.php/v9/t99/1/16/1f33a.png)
![🌻](https://static.xx.fbcdn.net/images/emoji.php/v9/t1a/1/16/1f33b.png)
![🌷](https://static.xx.fbcdn.net/images/emoji.php/v9/t6f/1/16/1f337.png)
![🌼](https://static.xx.fbcdn.net/images/emoji.php/v9/t9b/1/16/1f33c.png)
![🏵️](https://static.xx.fbcdn.net/images/emoji.php/v9/t1a/1/16/1f3f5.png)
![🏵️](https://static.xx.fbcdn.net/images/emoji.php/v9/t1a/1/16/1f3f5.png)
উষসস্তে কল্পন্তামহোরাত্রাস্তে কল্পন্তামর্ধেমাসাস্তে কল্পনাং মাসাস্তে কল্পন্তামৃতবস্তে কল্পন্তাঙসংবৎসরস্তে কল্পনাম্।
প্রেত্যাৎএত্যৈ সং চাঞ্চ প্র চ সারয।সূবর্ণ চিদসি তযা দেবতযাঙ্গিরসদ ধ্রুব সীদ।।![🌼](https://static.xx.fbcdn.net/images/emoji.php/v9/t9b/1/16/1f33c.png)
![🌼](https://static.xx.fbcdn.net/images/emoji.php/v9/t9b/1/16/1f33c.png)
![🌼](https://static.xx.fbcdn.net/images/emoji.php/v9/t9b/1/16/1f33c.png)
![🌼](https://static.xx.fbcdn.net/images/emoji.php/v9/t9b/1/16/1f33c.png)
(যজুর্বেদ ২৭.৪৫)
অনুবাদ-হে আলোকিত মনুষ্যগণ তোমরা নতুন বছরে নতুন করে জেগে ওঠ,বিগত বছরের সকল জীর্ণতা ঝেড়ে ফেল।তোমাদের নতুন ভোর কর্মাত্মক হোক,বছরের সব দিনগুলো শুভ হোক,প্রতিটা মাস,অর্ধমাস শুভ হোক,ঋতুগুলো শুভ হোক।দিনে দিনে অগ্রসর হও,শক্তিমান হও,প্রাণবায়ুকে স্থির করে গুণযুক্ত হও।
![🏵️](https://static.xx.fbcdn.net/images/emoji.php/v9/t1a/1/16/1f3f5.png)
![🌿](https://static.xx.fbcdn.net/images/emoji.php/v9/t1e/1/16/1f33f.png)
শুনাসোরা হবিষা তোশামানা সুপিপ্পলা ঔষধী কর্তমস্মৈ।।![🌱](https://static.xx.fbcdn.net/images/emoji.php/v9/t69/1/16/1f331.png)
![💐](https://static.xx.fbcdn.net/images/emoji.php/v9/te3/1/16/1f490.png)
![🌱](https://static.xx.fbcdn.net/images/emoji.php/v9/t69/1/16/1f331.png)
![💐](https://static.xx.fbcdn.net/images/emoji.php/v9/te3/1/16/1f490.png)
(অথর্ববেদ ৩.১৭.৫)
অনুবাদ- কৃষক আমাদের দেয় পুষ্টির জোগান,যেন সে সমৃদ্ধির সাথে ভূ্মির চাষ করতে পারে।সেচের ষাঁড় ও ঘোড়াগুলো থাকুক সযত্নে।যজ্ঞের প্রার্থনায় সূর্য ও বায়ু আমাদের পূর্ণ করুক খাদ্যে ও শস্যে,ফুলে ও ফলে।
আষাঢ়ী নবান্নেষ্টির মধ্যে নবাগত আধাপাকা যবসমূহের হোমের জন্য তাকে ‘হোলকোৎসব’ বলত। তখন হোলক বা হোলে ব্যাপকভাবে খাওয়া হত এবং ছাতুর ব্যবহারও এই উৎসবে আরম্ভ হয়েছিল। ছাতু গ্রীষ্মের বিশেষ আহার এবং পিত্তাদি দোষ সমূহের দূর করে । বঙ্গদেশে আবীরোৎসব অনুষ্ঠিত হয় রাধাকৃষ্ণ যুক্ত করে যা অনুচিত, অবিহিত ও বর্জনীয় । যাজ্ঞিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে শস্যকে উপযোগ করে শ্লীলভাবে আবীর জাতীয় আনন্দোৎসব গ্রহণ করা যাবে ।
![▪️](https://static.xx.fbcdn.net/images/emoji.php/v9/t4c/1/16/25aa.png)
বৃহৎযজ্ঞের পূর্ণাহুতির আগে শারদীয় নবশস্যেষ্টির ৮-৩৮ নং আহুতি । সংক্ষিপ্তভাবে করতে চাইলে বিকল্প আহুতি -
ও৩ম্ যৎপুরুষেণ হবিষা দেবা যজ্ঞমতন্বত । বসন্তোস্যাসীদাজ্যঙ্গ্রীষ্মঽইধ্মঃ শরদ্ধবিঃ স্বাহা॥১॥ [যজুর্বেদ ৩১।১৪]
ও৩ম্ যেন বহসি সহস্রঁয়েনাগ্নে সর্ববেদসম্ । তেনেমঁয়জ্ঞন্নো নয় স্বর্দেবেষু গন্তবে স্বাহা ॥২॥ [যজুর্বেদ ১৮।৬২]
ও৩ম্ বাজস্যেমম্প্রসবঃ সুষুবে গ্রে সোমঁ রাজানমোষধীষ্বপ্সু । তাঽঅস্মভ্যং মধুমতীর্ভবন্তু বয়ঁ রাষ্টে জাগৃয়াম পুরোহিতাঃ স্বাহা ॥৩॥ [যজুর্বেদ ৯।২৩]
ও৩ম্ বাজঃ পুরস্তাদুত মধ্যতো নো বাজো দেবান্হবিষা বর্ধয়াতি । বাজো হি মা সর্ববীরঞ্চকার সর্বাঽআশা বাজপতির্ভবেয়ম্ স্বাহা ॥৪॥
ও৩ম্ বাজস্য নু প্রসবে মাতরং মহীমদিতিং নাম বচসা করামহে । যস্যামিদঁবিশ্বম্ভুবনমাবিবেশ তস্যান্নো দেবঃ সবিতা ধর্ম সাবিষৎ স্বাহা ॥৫॥
ও৩ম্ ব্রীহয়শ্চ মে যবাশ্চ মে মাষাশ্চ মে তিলাশ্চ মে মুদ্রাশ্চ মে খল্বাশ্চ মে প্রিয়ঙ্গবশ্চ মে ণবশ্চ মে শ্যামাকাশ্চ মে নীবারাশ্চ মে গোধূমাশ্চ মে মসূরাশ্চ মে যজ্ঞেন কল্পন্তাম্ স্বাহা ॥৬॥
ও৩ম্ সত্যং চ মে শ্রদ্ধা চ মে জগচ্চ মে ধনং চ মে বিশ্বং চ মে মহশ্চ মে ক্রীডা চ মে মোদশ্চ মে জাতং চ মে জনিষ্যমাণং চ মে সূক্তঞ্চ মে সুকৃতং চ মে যজ্ঞেন কল্পন্তাম্ স্বাহা ॥৭॥ [যজুর্বেদ ১৮।৩৪,৩০,১২,৫]
© বাংলাদেশ অগ্নিবীর